মৌর্য – ৯৫

৯৫

সেলুকাস বসেছেন তাঁর জেনারেলদের নিয়ে। জেনারেল ফিলেকাস, জেনারেল কিউকেকাস, জেনারেল ক্লদিয়াস ও জেনারেল সারিকাস এতে যোগ দিয়েছেন। নতুন জেনারেল হয়েছেন একজন, তিনিও উপস্থিত আছেন। নাম ফিলিপ ফিলেটেইরোস।

তাঁদের সামনে দুটো অপশন দিয়েছেন সম্রাট সেলুকাস। একটি মিসর অভিযান, পরেরটি গ্রিস বিজয়। জেনারেলরা চুপ করে আছেন। তিনি আবার বললেন, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কোনো জেনারেল আর জীবিত নেই। সবার দখল করা জায়গা এখন আমার দখলে। মিসরের ফারাও টলেমির কাছে নানা কারণে আমি কৃতজ্ঞ ও ঋণী। এখন তিনিও নেই। আমার মনে হয় তাঁর সন্তান মিসরের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। আমি নিজেও তাকে সাহায্য করতে চাই না। আমি চাই মিসরও আমার দখলে আসবে। গ্রিসে অভিযান চালাতে হলে মিসর জয় করা জরুরি

ক্লদিয়াস বললেন, আমরা কি এশিয়া ছেড়ে যাচ্ছি?

সম্রাট বললেন, না, যাচ্ছি না। এন্টিওকাসকে এশিয়ার শাসনভার দিয়ে যাচ্ছি। আমার ইচ্ছা গ্রিস দখল করে মেসিডোনিয়ায় রাজধানী স্থাপন করে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।

এ সময় এক বার্তাবাহক এসে জানাল, রানি আরসিনোয় এসেছেন, তিনি সম্রাটের সাক্ষাৎপ্রার্থী। আরসিনোয় এশিয়া মাইনরের একাংশের রানি। স্বামী লাইসিমেকাসের মৃত্যুর পর শিশুসন্তানদের সিংহাসনে না বসিয়ে নিজেই সিংহাসনে বসেছেন। মিসরের বর্তমান সম্রাট তাঁর সত্তাই। তাঁর সৎভাই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, উদ্দেশ্য এশিয়া মাইনরও তাঁর কুক্ষিগত করা।

সম্রাট তাঁর কথা শুনে এসে জেনারেলদের সঙ্গে এ নিয়ে মতবিনিময় করলেন।

জেনারেল ফিলেকাস বললেন, তিনি কী ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন?

নিজের রাজ্য রক্ষা। তিনি তা-ও বললেন যে মিসর তাঁর বাবার রাজ্য। ওতে তাঁরও অধিকার আছে। আমি তাঁকে সহযোগিতা করতে চাই।

জেনারেল কিউকেকাস বললেন, তাঁকে সহযোগিতা করলে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে কি না, তা-ও ভেবে দেখতে হবে।

সম্রাটের নারীর প্রতি দুর্বলতা আছে। কিউকেকাস রানি আরসিনোয়কে চেনেন। মধ্যবয়সে বিধবা হয়েছেন। যৌবন ধরে রাখার কৌশলও ভালো জানেন। রানি ও রাজ্য দুয়ের প্রতি সম্রাটের লোভ আবার কোনো ক্ষতি বয়ে আনবে না তো? এ জন্যই তিনি আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন তুলেছেন।

জেনারেল সারিকাস সম্রাটের পরিকল্পনা জানতে চাইলেন।

সম্রাট বললেন, আরসিনোয়কে আমরা সাহায্য করব। পরিকল্পনাটা তুমি সেভাবে সাজাও। রানি আজ আমার অতিথি হয়ে রাজকীয় অতিথিশালায় থাকবেন। সেখানে তাঁকে পরিকল্পনাটা জানাতে হবে। তোমরা পরিকল্পনাটা নিয়ে ভাবো, আমি এখনই আসছি।

সম্রাট আবার রানি আরসিনোয়ের কাছেই যাবেন।

এখানে জেনারেলরা নিজেদের মধ্যে কথা বললেন। জেনারেল কিউকেকাস বললেন, এ রানি সন্তানকে হত্যার পরও একবার এসেছিলেন। তাঁকে তখন কোনো সাহায্য করা হয় নি, তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হলো। এখন তাঁকে সাহায্য করতে চান।

জেনারেল ফিলেকাস বললেন, কখন কী করতে হবে, সময়ই তা বলে দিচ্ছে। সম্রাটের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। ক্লদিয়াস বললেন, সম্রাটের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। কিন্তু অন্তর্গত কোনো উদ্দেশ্য যদি বাহ্যিকভাবে উদ্দিষ্টকে প্রভাবিত করে, তা হবে বুমেরাং। তাই আমাদের ভাবতে হবে।

ভাবতে হবে ঠিক আছে, কিন্তু সম্রাটের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া যাবে না। তাঁর ইচ্ছার মধ্যেই আমাদের ভাবতে হবে।

সর্বকনিষ্ঠ জেনারেল ফিলিপ বললেন, আমি কিছু বলতে চাইছিলাম।

ফিলেকাস বললেন, বলো।

বলছিলাম আমাদের পরিকল্পনাটা এমন হবে, যেন দুদিকই রক্ষা হয়। সম্রাটের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে এবং মিসর জয়ের লক্ষ্যও অর্জিত হবে।

জেনারেল সারিকাস বললেন, আমি সে কথাই ভাবছি। সম্রাটের রানি আরসিনোয়কে সাহায্য করা এবং মিসর অভিযান একসূত্রে গাঁথা। আমাদের বুঝতে হবে কেরাউনোসের সঙ্গে সম্রাটের ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে। কেরাউনোসের সৎবোন যখন ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাহায্য চাইতে এসেছেন, সম্রাট তাঁকে সাহায্য করবেনই, তার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাক বা না থাক।

.

সম্রাট আরসিনোয়ের কাছে এলেন। তাঁর মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। তিনি যখন টলেমির অধীনে নৌ অ্যাডমিরাল ছিলেন আরসিনোয়ের সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগ ছিল। সে কথা মনে হওয়ায় অস্থিরতাটা আরও বেড়ে গেছে। আরসিনোয় তখন ছোট ছিলেন।

সম্রাট তাঁর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন। গল্প তো ঠিক নয়, স্মৃতিচারণা। আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সময় তাঁর চার জেনারেল সঙ্গে ছিলেন। এঁরা হাইডেসপেস (ঝিলাম) নদী পার হচ্ছিলেন একই নৌকায়। পারডিকাস, টলেমি, লাইসিমেকাস ও তিনি নিজে। পরে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল হাইপাসপিসতাই বা সিলভার শিল্ডের দায়িত্ব। তিনি এ পদাতিক সৈন্যদের নিয়েই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রাজা পুরুকে পরাজিত ও বন্দী করে নিয়ে আসেন আলেকজান্ডারের কাছে। তাঁদের যুদ্ধটা ছিল ফ্যালানক্স রীতির। পুরুর ছিল অনেক হাতি। এসব হাতিদের মাটিতে লুটিয়ে দিয়ে তবেই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হয়েছে। সেদিন টলেমি ও লাইসিমেকাস অনেক অভিনন্দন জানান তাঁকে। নিজের ছেলেকে হত্যা করে অনেক বড় ভুল করেছে লাইসিমেকাস, আমার পুত্রকে দেখো, কত বড় অন্যায় করেছে সে। আমি চাইলে হত্যা করতে পারতাম। করি নি, সন্তান তো, আপামার বড় প্রিয় ছিল। লাইসিমেকাস ভুল করেছে, বড় ভুল, তাই আমি তাকে শাস্তি দিয়েছি।

এসব কথা শুনে আরসিনোয় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি কাঁদছেন।

সেলুকাস কাছে এসে আরসিনোয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি যখন তোমার বাবার নৌবাহিনীতে, তিনি আমাকে একশ জাহাজ আর আট শ সৈন্য দিয়েছিলেন। এন্টিগোনাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এ জেনারেল বরাবরই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। যুদ্ধে যাওয়ার সময় আমি তোমার বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফিরছি। তুমি দৌড়ে এলে আমার কাছে। আমি থমকে দাঁড়ালাম। কী বলতে চেয়েছিলে যেন, তুমি ছোট ছিলে বলে তোমাকে উপেক্ষা করে চলে আসি। পরে অবশ্য তোমার কথা আমি অনেক ভেবেছি।

এবার কথা বললেন আরসিনোয়, ছোটবেলায়ই দেখেছি বীরপুরুষের মতো শারীরিক গঠন আপনার। আপনাকে ভালো লেগে যায় আমার। আমি আপনার স্বপ্ন দেখতাম। হায়, সে এন্টিগোনাস, তার বিরুদ্ধে লাইসিমেকাসকে হাতে রাখতে বাবা টলেমি তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন আমায়। আপনি সবই জানেন। পুত্র হত্যার বিচার চাইতেই আপনার কাছে গিয়েছিলাম। আগে গেলে হয়তো পুত্রের জীবন রক্ষা পেত। লাইসিমেকাসের মৃত্যুর জন্য আমার কোনো কষ্ট নেই। কিন্তু সবই হারিয়ে এসেছি আপনার কাছে। নিঃস্ব নিজেকে নিয়ে এসেছি। দেওয়ার তো কিছুই বাকি নেই।

এ কথায় সেলুকাস আবেগতাড়িত হয়ে আরসিনোয়কে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর ভেতর ভীষণ আবেগ-ঝড়। মাথা যেন এলোমেলো। নব্বই ছুঁই-ছুঁই বয়স। শরীর কাঁপছে। আর সিনোয় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাত ধরে সেলুকাসকে পাশে বসালেন। বললেন, আপনার শরীর ভালো নেই, ভাই। আপনি একটু বিশ্রাম নিন।

সেলুকাস বললেন, আমার কী হয়েছে জানি না, সামান্যতেই ইমোশনাল হয়ে পড়ি, তখন শরীরে কাঁপুনি ধরে। এ জন্য স্ট্রেটোনিস খুবই বিরক্ত।

কষ্টের মধ্যেও হাসলেন আরসিনোয়। বললেন, বয়স হয়েছে, সে কথা ভুলে গেলেন?

তোমার হাসিটা বড় সুন্দর। সেই ছোটবেলার মতোই। প্রাণজুড়ানো হাসি। একেবারে মুগ্ধ করে দেয়। আমি তোমার পাশে আছি। ওর বিরুদ্ধে অভিযান হবে। সে স্ট্রেটোনিসের দিকেও দৃষ্টি দিয়েছিল। আমি তার চোখ তুলে নেব। বলে আবার কাঁপতে থাকেন সেলুকাস।

আপনি উত্তেজিত হবেন না। আমরা দুজন মিলে তাকে শায়েস্তা করব।

বাইরে সেন্ট্রিদের মধ্যে ভয় আর উত্তেজনা। জেনারেলরা খবর পাঠিয়েছেন কতক্ষণ আর অপেক্ষা করবেন এঁরা। কিন্তু ভেতরে যেতে কোনো সেন্ট্রির সাহস হচ্ছে না। এ রকম অবস্থায় ভেতরে যেতে নেই, এরা সবাই জানে।

.

দিদাইমেইয়া লাউডিসদের বাড়িতে এসেছেন। সঙ্গে এসেছে নিকোমেডেস ও ফাওলিন। নিকোমেডেস টলেমির নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এবং ফাওলিনকে বিয়ে করেছে। হারমিজ এরই মধ্যে বড় হয়ে গেছে। অনেক কিছুই বদলে গেছে। হারমিজ আর আগের মতো চপলা চঞ্চল নয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রে স্থিরতা এসেছে। ব্যক্তিত্ব তৈরি হচ্ছে। কথা বলে কম।

হারমিজ তো অনেক বড় হয়ে গেছে, লাউডিস।

ও কি ছোটই থাকবে, পিসি।

তা থাকবে না, কিন্তু আমাদের মন চাইছে সে আগের মতো ছোট্টটি থাকুক, বলে খুব হাসলেন দিদাইমেইয়া। পাটালিপুত্রের দিনগুলো খুব মজার ছিল, তাই না? আবার যদি যাওয়া সম্ভব হতো।

ওরা কেমন আছে খবর-টবর পাও, বলল নিকোমেডেস।

লাউডিস বললেন, কর্নেলিয়া যেন কেমন হয়ে গেছে। চিঠিপত্র নেই, যোগাযোগ নেই। মানুষ যেন কেমন হয়ে যায়।

আমরা আবার ভারতবর্ষে যাই, বলল নিকোমেডেস।

দিদাইমেইয়া বললেন, রাগ করিস না, লাউডিস। এখন সে বিরাট এক সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী। কত দায়িত্ব তার। সেলুকাসের সঙ্গে নাকি চন্দ্রগুপ্তের ভালো যোগাযোগ আছে।

এন্টিওকাসের ওপর খুব বিরক্ত সে। মাকে তো দেখতেই পারে না। হয়তো এ জন্য অভিমান করে আছে, বলল লাউডিস!

সে সুখে থাক, এটাই আমরা চাই, বললেন দিদাইমেইয়া। লাউডিস, তুই এ জন্য একটুও মন খারাপ করবিনে। ভারতবর্ষের মানুষগুলো অনেক ভালো রে, দেখবি কর্নি খুব সুখেই থাকবে। চন্দ্রও চমৎকার মানুষ। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আচার্য ভদ্রবাহুকে। কী অদ্ভুত প্রকৃতির এক মানুষ তিনি। সবদিকেই খোঁজখবর রাখেন।

মা, লাউডিস না গেলেও চলো আমরা আবার ভারতবর্ষ ঘুরে আসি, বলল নিকোমেডেস।

লাউডিস বললেন, আমাকে বাদ দিলি কেন?

ফাওলিন বলল, বাদ দিই নি তো।

.

দিদাইমেইয়া এখানে আছেন শুনে আরসিনোয় এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। একজন রানি যখন আসেন, তখন অনেকেই আসে তাঁর সঙ্গে। রানি দিদাইমেইয়া ও নিকোমেডেসের পরিচিত। তাই রাজকীয় মর্যাদায় তাঁকে বরণ করা হলো।

আরসিনোয় বোনের গলায় জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ভাগ্য আমায় রানি বানিয়েছে। কিন্তু এমন রানি আমি হতে চাই নি। আমার এমন দুর্ভাগ্য, স্বামীর হত্যাকারী আমার চাচাতো ভাই। আমার মিত্র। আমার স্বামী আমার প্রিয় পুত্রের হত্যাকারী। আমার সৎভাই আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি সম্মত না হলে আমার পুত্রদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমার বাবা লাইসিমেকাসের সঙ্গে কেন বিয়ে দিয়েছিলেন, তা আপনি জানেন।

দিদাইমেইয়া সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, দেবতা অ্যাপোলোর বংশধর আমরা। তিনি যা করেন, ভালোর জন্যই করেন, এ বিশ্বাস রেখো। আর হ্যাঁ, তুমি আজকে আমার সঙ্গে অ্যাপোলো মন্দিরে যাবে। সেখানে প্রার্থনা হবে।

অ্যাপোলোর চিহ্ন তো আমরা সবাই ধারণ করি। করি না? তাহলে কেন এ বিপর্যয়?

শান্ত হও আরসি। দেবতা নানাভাবে তাঁর ভক্তকে পরীক্ষা করেন।

কঠিন সে পরীক্ষা, খুব কঠিন।

নিকোমেডেসকে দেখে বললেন, তোমাকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।

দিদাইমেইয়া বললেন, ও আমার ছেলে। টলেমির নৌবাহিনীতে ছিল।

এখন নেই?

না। তোমার সৎভাইকে পছন্দ করে না সে, তাই চাকরি ছেড়ে চলে এসেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে আরসিনোয় বললেন, তুমি আমার নৌবাহিনীতে কাজ করবে। আমি চাই তুমি আমার সঙ্গেই যাবে।

নিকোমেডেস হাসি হাসি ভাব নিয়ে বলল, আমাকে একটু ভাবতে সময় দিন, রানি। আপনি আপনার নৌবাহিনীর পুরো একটা চিত্র দেবেন।

বাববাহ্! পাকা ঝানু অফিসার। এ রকম অফিসারই আমি চাচ্ছি।

দিদাইমেইয়া ফাওলিনকে দেখিয়ে বললেন, নিকোর বউ। টলেমির এক নৌ অ্যাডমিরালের মেয়ে।

কার মেয়ে?

ফাওলিন নাম বলল।

তা বলো। বাবার খুব বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অ্যাডমিরাল ছিলেন।

আমি খুব খুশি হয়েছি তোমাদের দেখে। কিন্তু এ কে?

লাউডিসের মেয়ে হারমিজ।

বাহ্, চমৎকার তো দেখতে।

লাউডিসের স্বামী কিউকেকাস একজন জেনারেল, বললেন দিদাইমেইয়া।

আমাদের চাচির নামও ছিল লাউডিস।

দিদাইমেইয়া বললেন, হ্যাঁ, আমাদের মা। লাউডিসও সে রকমটি হয়েছে।

আরসিনোয় বললেন, কর্নেলিয়ার কী অবস্থা? শুনেছিলাম সে ভারতীয় এক রাজাকে বিয়ে করেছে।

হারমিজ বলল, রাজা না, সম্রাট। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।

তাই? কিন্তু কেন সে ভারতীয়দের বিয়ে করবে?

সে অনেক কথা, আরসি। তোমার তো এসব জানার কথা। কেন লাইসিমেকাস তোমাকে কিছু বলে নি?

দিদাইমেইয়ার কথার জবাবে রানি শ্লেষমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, সেলুকাসের চিরকালের বন্ধু, বলাই তো উচিত ছিল। তা কেমন আছে কর্নি?

এখন সম্রাজ্ঞী, ভালোই আছে। আর ভারতীয়দের সম্পর্কে যে ধারণা আমাদের, সবটাই ভুল। মানবসভ্যতায় অনেক অগ্রসর ওরা। প্রাচ্যের আলো পাশ্চাত্যে পৌঁছে না বলেই ভারত সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে।

ভালোই করেছে ও। না হয় এখানকার কোনো বুড়ো রাজা কিংবা জেনারেলই ওর ভাগ্যে জুটত, বলে হাসলেন রানি। পরে বললেন, তোমাদের কেউ গেছ ভারতবর্ষে?

নিকোমেডেস বলল, আমরা সবাই গেছি।

সবাই? কেমন দেখলে?

স্বপ্নে দেখা ছবির মতো সুন্দর রাজধানী নগরী পাটালিপুত্র। চৌষট্টিটা তোরণ সে নগরীর সমানসংখ্যক স্তম্ভ। সব কটিতেই কারুকাজ করা। রুপোর লতানো গাছে সর্বত্র সোনার পাখি বসে আছে বিভিন্ন ভঙ্গিতে। সম্রাটের পুরো প্রাসাদ যেন স্বপ্নপুরী। পৃথিবীর সব মণিমুক্তোর কারুকাজ সেখানে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও সেরা সাধুসন্তরা সেখানে আছেন। শ্রদ্ধায় যাঁদের কাছে মাথা নোয়াতেই হয়। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতটা অগ্রসর এরা, ভাবা যায় না।

এবার যখন যাবে, আমাকেও নিয়ে যাবে, নিকোমেডেসের কথার জবাবে বললেন আরসিনোয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *