৯১
তক্ষশীলায় আচার্য কৃষ্ণমান রাজকুমারদের প্রতি রাজা বা সম্রাটের সম্পর্ক ও দায়িত্ব সম্পর্কে পাঠদান করছিলেন। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তপুত্র বিন্দুসার মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন। আচার্য কৃষ্ণমান বললেন, আচার্য ভারদ্বাজ বলেছেন, জন্মলগ্ন থেকেই রাজাকে রাজকুমারদের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। কাঁকড়া যেমন জন্মদাতাকে ভক্ষণ করে থাকে, তেমনি রাজকুমাররাও রাজাকে সাবাড় করে দিতে পারে। তাই পিতৃস্নেহ উন্মেষের আগেই রাজা তাদের হত্যা করবেন।
আচার্য বিমলাক্ষ বলেছেন, বিনা অপরাধে নিষ্পাপ কুমারদের হত্যা করাটা নিষ্ঠুরতার শামিল। তাই তাদের হত্যা না করে অন্তঃপুরে অবরুদ্ধ করে রাখাই শ্রেয়। আচার্য পরাশরের অনুসারীরা মনে করেন, রাজকুমারদের রাজ-অন্তঃপুরে রাখা মোটেই ঠিক নয়, তা হবে বিষধর সর্পের সঙ্গে রাজার বসবাস। রাজার প্রতি রাজপুত্রের এতে ক্ষুব্ধ হওয়ারই কথা। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই রাজপুত্রদের অবরুদ্ধ না রেখে বসবাসের জন্য দূরবর্তী কোনো সীমান্ত রক্ষকের কাছে প্রেরণ করা মঙ্গলকর।
আচার্য পিশুন এ মতের বিরোধিতা করে বলেন, এ পন্থা অবলম্বন করা হলে তা হবে মেষভয়তুল্য। সমতটের রাজপুত্র বিক্রম সেন বললেন, মেষভয়টা কী, আচার্য?
মেষের লড়াই দেখেছে রাজকুমার, দুটি মেষ পরস্পরকে আক্রমণের জন্য প্রথমে দূরে সরে যায়। অতঃপর প্রবল বিক্রমে ছুটে এসে একে অন্যকে আঘাত করে। দূরবর্তী অবস্থানের জন্য রাজকুমারও তা-ই করবে। সীমান্ত রক্ষকের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করে প্রবল বিক্রমে রাজার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। তাই দূরবর্তী সীমান্ত নয়, বরং রাজ্যের অভ্যন্তরে সীমান্তরাজের তত্ত্বাবধানেই রাজকুমারদের রাখা শ্রেয়।
আচার্য কৌণপদন্ত (ভীম) বলেন, এমত অবলম্বন করা হবে গোশাবককে প্রদর্শন করে দুগ্ধদোহনতুল্য। সামন্তরাজ রাজপুত্রকে অবলম্বন করে রাজার কাছ থেকে পুনঃপুন অর্থ-সম্পদ দোহন করতে থাকবে। তার চেয়ে বরং রাজকুমারদের মাতৃস্থানীয় আত্মীয়ের কাছে রাখা ভালো।
আচার্য বাতব্যাধি বলেন, আচার্য কৌণপদন্তের মত ঠিক নয়। তার অর্থ দাঁড়াবে এই, মাতৃস্থানীয় আত্মীয়রা তখন দেবতার প্রতিকৃতি প্রদর্শনপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত অদিতি এবং সর্পচিহ্ন দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত কৌশিকদের ন্যায় রাজকুমারদের প্রদর্শন করে অর্থ সংগ্রহে মনোনিবেশ করবে। এ কারণে অন্য কোথাও না রেখে কুমারগণকে স্বাভাবিক জীবনের কামভোগ ও বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুললে এরা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না।
আচার্য কৌটিল্য এ ধরনের মতবাদের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপন রাজকুমারদের জন্য মৃত্যুতুল্য। ঘুণ পোকায় ভক্ষিত কাষ্ঠ যেমন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সামান্য আঘাতেই ভেঙে পড়ে, তেমনি ভোগ-বিলাসে নিমজ্জন রাজকুমারদের দুর্বল করে দিতে পারে। যুদ্ধে এর জন্য সহজেই এরা পরাভূত ও পরাস্ত হয়ে পড়বে। আচার্য কৌটিল্য পরামর্শ দেন। রাজকুমারদের রাজ্য পরিচালনার জন্য উপযুক্তরূপে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শুরুটা করতে হবে রাজমহিষী ঋতুবতী হওয়ার পর ইন্দ্র ও বৃহস্পতি দেবতাদ্বয়ের সমীপে যজ্ঞ প্রদানের মাধ্যমে। যজ্ঞে সুসন্তান কামনা করতে হবে। মহিষী গর্ভবতী হলে কৌমার কামনা করতে হবে। মহিষী গর্ভবতী হলে কৌমারভৃত্য এবং শিশু চিকিৎসক নিয়োগের মাধ্যমে তার পরিচর্যা করাতে হবে। সন্তান জন্মলাভের পর পুরোহিতের মাধ্যমে নানা পূজা-উপচার এবং সৎকর্ম ও সংস্কার কার্য সম্পন্ন করে শিশুর মঙ্গল চাইতে হবে। অতঃপর শিক্ষা গ্রহণের উপযুক্ত হলে সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকসমৃদ্ধ শিক্ষালয়ে পাঠাতে হবে। চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং সব বিদ্যায় পারদর্শিতা একজন রাজকুমারকে যোগ্য উত্তরাধিকার করে তোলে। তার মধ্যে পিতৃহত্যা করে রাজ্যলাভের লোভ জাগ্রত হবে না। শিক্ষা তাদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে।
আম্ভি আচার্যগণ অবশ্য চারিত্রিক নিষ্কলুষতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সত্রীশ্রেণির গুপ্তচরদের রাজপুত্রদের পেছনে লাগিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
আচার্য কৃষ্ণমানের বক্তব্য শ্রবণ করে বিন্দুসার একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। মাতৃহীন এ সম্রাটতনয় প্রায় শৈশব থেকেই তক্ষশীলায় গুরুগৃহে আছে। পিতার কাছ থেকে দূরে অবস্থান করে বিদ্যালাভে ব্রতী বলে রাজকর্ম পরিজ্ঞান নয়। তবে যখন রাজপ্রাসাদে আসে, আচার্য চাণক্য পূর্ব অভ্যাসবশত এই সম্রাটপুত্রকে কিয়ৎ শিক্ষা প্রদানে সচেষ্ট হন। যে রাজকুমার ধর্ম ও অস্ত্রশাস্ত্রে প্রজ্ঞা লাভ করেন এবং তদনুযায়ী কাজ করেন, তিনিই বুদ্ধিমান। আর যিনি এসব প্রজ্ঞার অধিকারী হয়েও তদনুযায়ী আচরণ করেন না, তিনি আহার্যবুদ্ধি পুত্র। যে পুত্র ধর্ম ও অস্ত্রশাস্ত্রের প্রতি অনীহ ও বিদ্বেষপ্রবণ, প্রমোদলীলায় আসক্ত, সে দুর্বুদ্ধিপুত্র। দুর্বুদ্ধিপুত্ৰ সিংহাসন লাভের উপযুক্ত নন।
শুরু থেকেই বিন্দুসার সুপুত্র বা বুদ্ধিমান রাজকুমার হতে চেয়েছে। অন্য রাজকুমারদের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে আলাদা করে রেখেছে। কারণ, সে জানে, মহান মৌর্য সাম্রাজ্যের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তাই বলে দূরেও কাউকে সরিয়ে রাখে নি। সবাই তো রাজপুত্র কিংবা অভিজাত কোনো ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় সন্তান। মেলামেশায় বাধা নেই। তাদের ভালোটা সে গ্রহণ করেছে। পিতার উপদেশও সে রকমই ছিল। রাজপুত্রদের সঙ্গে মিশবে। কারণ, এরাই তো রাজা হবে। ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। ভবিষ্যতে তুমি সম্রাট হলে তা কাজে লাগবে। তবে নিজেকে বিকিয়ে দেবে না। মনে রাখতে হবে, তুমি সম্রাটপুত্র, রাজপুত্র নও।
বিন্দুসার মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও পিতৃস্নেহ পেয়েছেন অকাতরে। আর হেলেন? গ্রিক এই রমণী খুবই বুদ্ধিমতী। বিন্দুসারকে এমনভাবে টেনেছেন যে বিন্দুসার বুঝতেই পারেন নি এটি তার সত্মা। কায়দা করে শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি গ্রিক ভাষাটাও শিখিয়ে দিয়েছেন। এই হেলেনের কারণে গ্রিকদের প্রতি বিন্দুসারের মস্তবড় এক শ্রদ্ধার ভাব তৈরি হয়েছে। বাবা বিন্দুসারের বন্ধু হতে পারেন নি, কিন্তু হেলেন পেরেছেন। দুই আচার্য—চাণক্য ও ভদ্ৰবাহু বিন্দুসারকে গড়তে সম্রাটের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁরাও জানেন, সম্রাটের দুর্বল জায়গা হচ্ছে এটিই, পুত্রবাৎসল্য। তবে চাণক্যকে সতর্ক করে দিয়েছেন আচার্য ভদ্ৰবাহু। বলেছেন, আচার্য, এটি বড় স্পর্শকাতর জায়গা। আপনি এ সম্রাটতনয়কে বাঁচিয়েছেন, তার চেয়েও বড় কথা এ কারণেই সম্রাটতনয় মাতৃহীন হয়েছেন। চাণক্য মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ব্যাপারটা মাথায় রাখছেন। কারণ, রাজতন্ত্রে শত্রুর অভাব নেই। সুবন্ধু তো আছেনই। কাজেই মহামন্ত্রীর জন্য এটা এক কঠিন পরীক্ষাও। অবশ্য আচার্য ভদ্রবাহু বলেন, আপনি এ পরীক্ষায় পাস করে যাবেন, আচার্য।
বিন্দুসারকে ভাবনার মধ্যে দেখে আচার্য কৃষ্ণমান বললেন, বিন্দুসারের কি কিছু জিজ্ঞাস্য আছে?
বিন্দুসার সংবিৎ বলল, আচার্য, রাজপুত্রদের সম্পর্কে আচার্যরা এত কথা বলেছেন যে আমি ভেবে পাই না এরা এভাবে রাজপুত্রদের দেখছেন কেন? আচার্য কৌটিল্যই যথাযথ পরামর্শ দিয়েছেন, অন্য কেউ নন।
বিন্দুসার, তুমি ঠিক বলেছ। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলেছেন আচার্যরা। উচ্চাভিলাষী কিংবা বখে যাওয়া রাজকুমাররা পিতার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এসব পাঠ নানা প্রকরণে তোমাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
পরক্ষণেই বিন্দুসারের মনে হলো, দীর্ঘ সময় বাড়ি যাওয়া হয় না, বাড়িতে একবার যাওয়া দরকার।
তক্ষশীলা তাদের দ্বিতীয় রাজধানী। স্থানীয় মহামাত্য রাজপুত্রের খোঁজখবর রাখেন, সুবিধা- অসুবিধা দেখেন। বিন্দুসার তাকে পাটালিপুত্রে যাওয়ার আয়োজন করতে বললেন।
রাজপুত্রের শিক্ষা ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের ভার মহামন্ত্রী চাণক্যের ওপর। মহামন্ত্রী চাণক্য জানেন, ভদ্রবাহু চন্দ্রগুপ্তের আধ্যাত্মিক গুরু হলেও রাজকুমার তাঁকেই গুরু মান্য করে। আজীবিক ধর্মের অনুশাসন, যা এখন চাণক্য মান্য করেন, তার ভালো লাগে, আধ্যাত্মিকতার চাইতে পার্থিব জ্ঞান ও রণনৈপুণ্যের দিকে রাজপুত্রের আগ্রহ বেশি। তাই মহামাত্য বললেন, মহামন্ত্রীর কাছে লোক পাঠাই, রাজকুমার?
পাঠিয়ে দিন। তাঁর জানা দরকার, আমি পাটালিপুত্রে যাচ্ছি।
হেলেনের মন খারাপ। দিদাইমেইয়ারা সবাই আজ চলে যাচ্ছেন। নিকোমেডেসকে বললেন, তোরা থেকে যা।
অনেক দিন তো থাকলাম। বুড়ো নিশ্চয়ই খেপে আছে।
বুড়ো মানে মিসরের ফারাও টলেমি। এতগুলো যুদ্ধ গেছে, পরাজয় গেছে, নৌসেনা অফিসার নিকোমেডেসকে সাথে পান নি নেই।
ফাওলিন বলল, বাবাও নিশ্চয়ই খেপে আছে। সেনাপতিদের মেজাজের কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
অভিমানের সুর কণ্ঠে চেপে হেলেন বললেন, তাহলে যাও।
চন্দ্রগুপ্ত মৃদু হেসে মজা করে বললেন, অনেক উড়েছে, পাখিদের তো এখন শাখায় বসার সময় হয়েছে। বাসাও বাঁধতে হবে।
ফাওলিন বলল, আমরা তো আপনার নগরীর স্তম্ভে থাকা সোনার পক্ষী নই, মহামান্য সম্রাট, নিতান্তই মাটির পাখি, যাদের খড়কুটোর বাসা লাগে।
মিসরের রাজপ্রাসাদে কি সে বাসা আছে?
তা নেই, রাজপ্রাসাদে আমরা যাবও না, নীল নদের ধারে কোনো বটের শাখা বেছে নেব।
তাই ভালো। লোকশ্রুতি, ‘বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে, আমার বন্ধের মায়া তেমন রে’।
পাটালিপুত্রে বটবৃক্ষ নেই?
কেন? এখানে বাসা বানাবে?
না, মাঝেমধ্যে দুজন ছদ্মবেশে বটবৃক্ষের নিচে গিয়ে বসবেন।
হেলেন বললেন, সম্রাট, ওরা গ্রিক মেয়ে। ওদের সঙ্গে কথায় পারবেন না।
তাই তো দেখছি। আর তুমিও মনে করিয়ে দিলে যে তুমি একজন গ্রিক।
সম্রাটের কথায় সবাই হেসে উঠলেন।
দিদাইমেইয়া চন্দ্রগুপ্ত ও হেলেনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। গৃহগত এমনি পরিবেশে চন্দ্রগুপ্তের মনে হলো মায়ের স্নেহ তিনি পান নি, মায়েদের স্নেহ বুঝি এমনই হয়। বহু কষ্টে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করলেন। আর সম্রাজ্ঞী হেলেন পেছনে ফিরে বিদায় অশ্রু গোপন করলেন। লাউডিস বোনের পাশে দাঁড়ালেন। তাদের গ্রিসেও সে প্রবাদ আছে, নদীর সঙ্গে নদীর দেখা হয়, কিন্তু বোনের সঙ্গে বোনের দেখা হয় না। অনেক কষ্টে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। লাউডিসের কন্যা হারমিজ বেশ আনন্দে আছে। আনন্দের কারণ, বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে তার। হেলেন এগিয়ে এসে কাছে টেনে নিলেন তাকে। বললেন, আমার কথা ভুলে যাবে?
না, একেবারেই না। বাবার সঙ্গে দেখা হলেই ফিরে আসব আবার। ওই সংগীতগুরুর কাছে সংগীত শিখতে হবে না?
এবার আর হেলেন অশ্রু গোপন করতে পারলেন না। হারমিজকে জড়িয়ে ধরলেন। দিদাইমেইয়া কৃত্রিম হেসে হেলেনের মাথায় বারবার হাত বোলাতে থাকলেন এবং বললেন, ভালো থাকিস, তুই ভালো থাকিস।
প্রাসাদ থেকে বাইরে পা বাড়ালেন এঁরা। প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন আচার্য ভদ্রবাহু ও মহামন্ত্রী চাণক্য। হারমিজ দৌড়ে এসে ভদ্রবাহুকে বলল, তোমার কথা খুব মনে পড়বে, দাদু।
চাণক্য বললেন, আমার কথা মনে পড়বে না?
হারমিজ মাথা নেড়ে বলল, পড়বে।
দিদাইমেইয়া বললেন, খুব ভালো হলো আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে। বিদায় নিতে পারলাম। আপনাদের সঙ্গে দিনগুলো খুব ভালো কেটেছে।
ভারতীয় কায়দায় হাত জোড় করে নমস্কার জানাল নিকোমেডেস ও ফাওলিন। তাদের নমস্কারের জবাবে হাত তুলতে গিয়ে কণ্ঠরোধ হয়ে এল আচার্য ভদ্রবাহুর। আচার্য চাণক্য বলতে পারলেন, ভালো থেকো। সবার সঙ্গে খুব ভালো সময় কেটেছে।
এরই মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে আচার্য ভদ্রবাহু বললেন, গ্রিস আর ভারতের সম্পর্কের সেতুবন্ধনটি যেন অটুট থাকে, এই প্রার্থনা করছি। আবার আসতে হবে সবাইকে।
সম্রাট-সম্রাজ্ঞী থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তিন শিল্পী। ভবদানবের কিছু দেওয়ার নেই ভালোবাসা ছাড়া। নিখিল হারমিজকে একটা বাঁশি দিতে চায়। আর চিত্রশিল্পী নিয়ে এসেছে এঁদের নিয়ে আঁকা কিছু জলছবি। তাদের দেখে দিদাইমেইয়া শকট থেকে নেমে এলেন। অন্যরাও তাঁকে অনুসরণ করল। নিখিল বাঁশি এবং চিত্রশিল্পী চিত্রগুলো তাঁদের হাতে তুলে দিল। দূর থেকে সম্রাট- সম্রাজ্ঞী তা দেখে পরস্পরের প্রতি চাওয়াচাওয়ি করলেন। তাঁদের চেহারায় একধরনের প্রীতিবোধ ফুটে উঠেছে।
চতুরাশ্বযান তৈরি। রাজকীয় শকট। আচ্ছাদিত সুবিধা আর আরামের কমতি নেই। ঘোড়াগুলো প্রস্তুত। প্রস্তুত রাজকীয় নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। ঘোড়ায় আরোহণ করে আছে এরাও। সামনে-পেছনে। দিদাইমেইয়ারা শকটে উঠে বসলেন। পাশে এসে চন্দ্রগুপ্ত ও হেলেন বিদায় জানালেন। হাত নেড়ে তার জবাব দিল হারমিজ। অন্যরা সবাই চুপচাপ। কথা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। সম্রাটের ইশারায় কোচোয়ান ঘোড়াদের মৃদু আঘাত করতেই ছুটে চলল এরা। সেলুসিয়া কম দূরে নয়। মাঝখানে ঝিলামের বিনোদন প্রাসাদে যাত্রাবিরতি। প্রাসাদটি একসময় তাঁরা নির্মাণ করেছিলেন। এখান মৌর্যদের অধিকারে।