৮৪
দীর্ঘদিন পর সুবন্ধু ও স্থুলভদ্রের মধ্যে সাক্ষাৎ ঘটল। সুবন্ধু যুদ্ধকালে সম্রাটের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। সে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা বলার মতো বন্ধু তাঁর স্থুলভদ্ৰই। দুজন একই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে অনেক স্বপ্ন দেখেন। হিসাব-নিকাশটা আগের মতোই। একসময় ভদ্রবাহুর জায়গায় সুলভদ্ৰ এবং আচার্য চাণক্যের স্থলে সুবন্ধু। সুবন্ধুর স্বপ্নটা বাস্তবের খুব কাছাকাছি এসেও মিলিয়ে গেছে। তাই যুদ্ধ জয়ের মধ্যেও একধরনের বিষাদের ছায়া তাঁর চোখেমুখে।
স্থুলভদ্র কেন যেন মহামন্ত্রীকে খুব একটা পছন্দ করেন না। সে জন্যও সুবন্ধুর সঙ্গে তাঁর নৈকট্য আরও বেশি। সুবন্ধুর মুখে মহামন্ত্রীর খাদে পড়তে পড়তে রক্ষা পাওয়ার কথা শুনে স্থুলভদ্রও যেন হতাশ হলেন, সুযোগ কি বারবার আসে? আসে না। তবু অপেক্ষায় থাকতে হবে। সুবন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, অপেক্ষা করুন। আপনার সময় আসবেই। আচ্ছা হাতটা দেখতে দিন তো।
সুবন্ধু ডান হাতটা উল্টো মেলে ধরলেন।
এভাবে না। তালু ওপরে রাখুন। হস্তরেখা কী বলে দেখব।
সুবন্ধু মৃদু হেসে বললেন, হস্তরেখা বলবে আমার কপালে কী আছে?
কেন, বিশ্বাস হয় না? মাথায় মগজ যতই থাকুক, এটা মাথার পেছনে থাকে, সম্মুখে থাকে কপাল। সে-ই মগজের সামনে সামনে যায়।
তাহলে ভাগ্যদেবতাদের পূজা করতে হবে?
মগজ থাকলে তা-ই করতে হবে। এবার হাত দেখান।
স্কুলভদ্র সুবন্ধুর হাত টেনে নিয়ে ভালো করে দেখলেন। ভাগ্যরেখা মূল রেখাকে ছুঁই-ছুঁই করছে। কিন্তু পার্শ্ব দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে সামনে মিলিত হওয়ার সুযোগ একটা দেখা যাচ্ছে এবং তা স্পষ্ট।
কী দেখলেন? পেলেন কিছু? যেন মজা করছেন সুবন্ধু।
সুলভদ্র এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জানতে চাইলেন, নন্দরাজ কেন আপনাকে ব্রাহ্মণদের সভার পৌরহিত্য করতে বলেছিলেন?
রাজা তো, নিশ্চয় তিনি রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন।
ক্ষত্রিয় রাজা, ব্রাহ্মণদের নিয়ে রাজনীতি?
বলুন লোভী ব্রাহ্মণ। যখন আপনি নীতি ও আদর্শ থেকে দূরে সরে আসবেন, আপনাকে নিয়ে সবাই খেলবে, শক্তিমান রাজা তো খেলবেনই। শ্রদ্ধার ব্যক্তি অশ্রদ্ধার কাজ করলে পতিত হওয়া অনিবার্য।
কার কথা বলছেন আপনি?
সর্বজনীন কথা বলছি, নির্দিষ্ট করে কারও কথা নয়। কিন্তু আপনি সে প্রসঙ্গের অবতারণা করছেন কেন?
দেখুন, আমরা কেউ সাধারণ ও স্বাভাবিক মানুষ নই। আপনি মাথায় টিকলি রেখে গোত্রীয় ব্রাহ্মণ, আমি দিগম্বর জৈন সন্ন্যাসী। স্বাভাবিক ও সাধারণ মানুষেরা এ রকম নয়। আমরা একশ্রেণির মানুষ। সৌভাগ্যবান বলতে পারেন। উল্টো পায়ের দুর্ভাগা বনবাসী মানুষগুলোর মতো নই, যাদের দেখলে মানুষ মনে করে, দিনটা খারাপ যাবে। তাই তাদের পাহাড়ের উল্টো দিকে জনমানবহীন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে কুষ্ঠ রোগীদের মতো। অথচ আমাদের দেখলে লোকজন ভক্তি করে এ জন্য যে এরা বিশ্বাস করে, আমাদের দেখলে তাদের যাত্রাই শুধু শুভ হয় না, পুণ্যও হয়।
এসবের সঙ্গে আমার প্রশ্নের সম্পর্ক কী?
স্থুলভদ্র বললেন, সরাসরি নেই বটে, তবে সম্পর্ক নেই অথবা একেবারে নেই, বলা যাবে না। আমরা ভাগ্যবান, আমি তা বোঝাতে চেয়েছি। আমাদের চেয়ে ভাগ্যবান মহামন্ত্ৰী চাণক্য এবং আচার্য ভদ্রবাহু। তবে ভাগ্যবানদের ভাগ্য এক জায়গায় আটকে থাকে না, তার বিকাশ ঘটে এবং একসময় তা পরিপূর্ণতা পায়। আবার তা বিপর্যয়েরও পথ দেখায়।
সে কথা বলছেন কেন, আচার্য?
আরে, আমি আচার্য নই। তবে আচার্যের শিষ্য হিসেবে এক নম্বরে আছি। আমার একটা স্বপ্ন আছে। আমি যখন শীর্ষ জৈন সন্ন্যাসীর দায়িত্ব পাব, আপনাদের মতো শ্বেতাম্বর জৈন সন্ন্যাসীর সম্প্রদায় সৃষ্টি করব।
কেন, কেন?
দিন পাল্টাচ্ছে, ব্রাহ্মণ।
মানুষ মানবে কেন?
সুবিধা পেলেই মানবে। আসতে থাকবে। দল ভারী হবে।
সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটে যাবে কিন্তু।
পরিবর্তনটা যে সময়ের দাবি।
আচার্য তা জানেন?
না, জানেন না।
আপনার মত জানাতে সমস্যা কোথায়?
তিনি বর্তমান থাকতে তা সম্ভব নয়।
সম্রাট তাঁকে দেবতা গণ্য করেন। পুরো গ্রিকরা তাঁর প্রতি আস্থাশীল। সম্রাজ্ঞীর কারণে তাঁর প্রভাব আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।
তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পেলে জৈনদেরই প্রভাব বাড়বে। একে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি।
সুবন্ধু বললেন, গ্রিক দূত মেগাস্থিনিসকে এখানে পাঠানো হয়েছে। কেন পাঠানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আমি শুনেছি, তিনি নিয়মিত সম্রাটের দরবারে যাচ্ছেন। এটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। মহামন্ত্রী চাণক্যও তা-ই মনে করেন। সম্রাট চাইছেন, তিনি নিয়মিত মহাসভায় যোগদান করুন।
কিন্তু তিনি মহাসভায় যোগ দেওয়ার চাইতে জৈন মহামন্দিরে যেতে আগ্রহী।
কেন? তিনি নিশ্চয় জৈনধর্ম পছন্দ করেন।
ধর্ম নয়, এক সন্ন্যাসিনীকে মনে হয় পছন্দ করেন। ওই সন্ন্যাসিনী গ্রিক জানেন।
হতে পারে তা-ই তাঁর আগ্রহের কারণ। কয়েকটি ব্যাপারে তাঁর কাছে আমাদের ভারতবর্ষ এক অদ্ভুত জায়গা।
তাই নাকি? কী কী ব্যাপার, শুনি।
আজকে শুধু একটিই বলব।
তা-ই বলুন।
সুবন্ধু বললেন, তিনি আমাদের হিমালয় পর্বতের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। তাঁর ভাষায় হিমালয় হচ্ছে ‘মাউন্ট হেমোডোস’। সিন্ধু নদকে বলছেন ইন্দোস। এ দেশের পাহাড়-পর্বত, ফলমূল আর পাখপাখালি তাঁর ভালো লেগে গেছে। এসব তিনি সম্রাটের মহাসভায়ই বলেছেন। কাল নাকি উল্টো পায়ের মানুষ দেখতে পাহাড়ে যাবেন।
তাহলে তো তাঁর কপালে দুঃখ আছে। লক্ষণ ভালো নয়। তাঁর দিকে লক্ষ রাখা জরুরি।
.
মেগাস্থিনিস যাচ্ছেন উল্টো পায়ের মানুষদের দেখতে। সঙ্গে তাঁর দোভাষী এবং দুজন স্থানীয় গাইড। (মেগাস্থিনিস তাঁর ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে এসব উল্টো পায়ের মানুষদের কথা বলেছেন। অবশ্য তাঁর গ্রন্থের সংকলক ও সমালোচক আরিয়ান বিষয়টাকে অলীক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।)
স্থানীয় দুজন গাইডের একজন অরিজিৎ। সে দোভাষীকে উদ্দেশ করে বলল, নুলো পর্বতের উল্টো দিকে ওরা থাকে। উল্টো দিকে আমরা যাব না। আপনিও যাবেন না। গ্রিকটাকে পাঠাবেন। ওদের দেখলে আপনারও অমঙ্গল হবে। বেটার অমঙ্গল হোক।
দোভাষী এদের মতোই কুসংস্কারে বিশ্বাসী। ভীষণ ভাবনায় পড়ে গেল সে। অমঙ্গল আশঙ্কায় তার মাথা ধরে গেছে। সে যেত না। কিন্তু তা সম্ভব নয়। মেগাস্থিনিস ওদের সঙ্গে কথা বলতে চাইবেন। সেখানে তার প্রয়োজন। লোকটি মনে মনে ঈশ্বরের নাম জপছে আর ভাবছে, যদি মেগাস্থিনিসকে ফিরিয়ে নেওয়া যেত। তা সম্ভব নয়, এই উজবুক যা ভাবে, তা-ই করে।
ভারতবর্ষের প্রকৃতি দেখে আবারও মুগ্ধ মেগাস্থিনিস। মাঝেমধ্যে ঘোড়া থামিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করেন। এটা-ওটা জিজ্ঞেস করেন। অদ্ভুত তাঁর কৌতূহলের ধরন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ দোভাষীর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সে বলল, উল্টো পায়ের মানুষগুলো ভীষণ হিংস্র। আমরা ওদের ভাষা বুঝি না। ওদের দূর থেকে দেখতে হবে। মানে নিরাপদ দূরত্ব থেকে প্রতি পায়ে আটটি করে আঙুল। হাতের আঙুলে লম্বা লম্বা নখ।
মেগাস্থিনিস বললেন, তাহলে তো ভালোভাবে দেখা হবে না।
কাছে থেকে ভালোভাবে দেখতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কি ঠিক হবে? এ ছাড়া মহামন্ত্রী ব্যাপারটা জানতে পারলে সমস্যা হয়ে যাবে। তাঁর অনুমতি ছাড়া আপনার নগরীর বাইরে যাওয়ার কথা নয়।
তুমি আমাকে ভাবনায় ফেলে দিলে, দোভাষী। আচ্ছা, তা-ই হবে।
আবার ঘোড়ায় চড়লেন মেগাস্থিনিস। নিরাপত্তার অজুহাতে চাণক্য তাঁর গতিবিধিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। তিনি কেন যেন গ্রিকদের কমই বিশ্বাস করেন।
অবশেষে নুলো পর্বতের পাদদেশে এসে থামলেন এঁরা। গাইডরা নিচে দাঁড়িয়ে রইল। দোভাষী পর্বতের চূড়ায় উঠল না, উল্টো দিকে উল্টো পায়ের মানুষের দেখা যায় না, এমন উচ্চতায় দাঁড়িয়ে রইল। মেগাস্থিনিস অতি দ্রুততার সঙ্গে চূড়ায় উঠে গিয়ে দোভাষীর দিকে নিচে তাকালেন। বললেন, উঠে এসো।
দোভাষী বলল, পায়ে কাঁটা ফুটেছে, আর ওঠা সম্ভব নয়, আপনি দেখুন ওদের। কাছে যাবেন না। আক্রমণ করতে পারে।
মেগাস্থিনিস দেখলেন, পর্বতের পাদদেশে বেশ একটা এলাকা জুড়ে কুঁড়েঘরে তাদের বসবাস। সবাই উল্টো পায়ের মানুষ। এরা উল্টো দিকে হাঁটে। তাঁর খুব ইচ্ছা হলো কাছে গিয়ে দেখেন, দু-চারটে কথা বলেন। তা সম্ভব হলো না। মৃত্যুভয়ে নয়, মহামন্ত্রী চাণক্যের ভয়ে। এখানে কোনো সমস্যা হলে তাঁকে কঠিন জবাবদিহি করতে হতে পারে। এমনকি পাটালিপুত্র থেকে বহিষ্কার হতে পারেন তিনি। বিনা অনুমতিতে স্পর্শকাতর এলাকায় ভ্রমণ তাঁর জন্য ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এমনিতেই মহামন্ত্রী চাণক্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তাই ওপর থেকেই তাদের গতিবিধি দেখলেন। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সব বয়সের লোকজনই আছে। সহযাত্রীরা এল না। এসবের রহস্য কী, মেগাস্থিনিস তা বুঝতেই পারছেন না। তিনি ভাবলেন, খোঁজখবর নিতে হবে। আচার্য ভদ্ৰবাহু বা শর্মিলা তাঁকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। ফিরে এলেন তিনি। ফিরতে ফিরতে ভাবনায় ডুবে গেলেন।
.
দিদাইমেইয়ারা বেশ নির্ভার এখন। সেলুকাস ইপসাসের যুদ্ধে জয় লাভ করেছেন। সেলুসিয়ায় উৎসব চলছে। এখানেও উৎসব হয়েছে। সম্রাটের অতিথিশালা থেকে প্রাসাদে স্থান হয়েছে তাঁদের। কাষ্ঠস্থাপত্যের বিশাল প্রাসাদ। যেদিকে তাকান, নয়ন জুড়িয়ে যায়। বেড়ান, গল্প করেন, মাঝেমধ্যে অ্যাপোলো মন্দিরে গিয়ে উপাসনা করে আসেন।
আজকের বিকেলটায় উপস্থিত হয়েছেন ভদ্রবাহুর প্রাসাদকক্ষে। ভদ্ৰবাহু স্থলভদ্রকে ডেকে নিয়ে মিহিরের অশান্ত আত্মার খোঁজখবর নিচ্ছেন।
দিদাইমেইয়াদের দেখে এ আলোচনা বন্ধ করে স্বাগত জানালেন তাঁদের। বললেন, নিকোমেডেসদের দেখছি না কেন?
দিদাইমেইয়া হাসি দিয়ে বললেন, ওরা ঘুরতে বের হয়েছে। বৃক্ষ উদ্যানটা চমৎকার। তাদের পছন্দের জায়গা।
এ কথা শুনে ভদ্রবাহু অর্থপূর্ণভাবে স্থুলভদ্রের দিকে তাকালেন। স্থুলভদ্র বললেন, আচার্য, আমি আসি!
এ সময়ই ঢুকলেন মেগাস্থিনিস। বললেন, ভালোই হলো, সবাইকে পাওয়া গেছে। আমি উল্টো পায়ের লোকদের পল্লি থেকে ঘুরে এলাম।
এ কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালেন ভদ্রবাহু। হারমিজ চোখমুখে পরিবর্তন এনে বলল, উল্টো পায়ের মানুষ?
মেগাস্থিনিস যা শুনেছেন তাঁর দোভাষী ও গাইডদের কাছ থেকে, যা দেখেছেন পাহাড়ের ওপর থেকে—এসব দিয়ে একটা গল্প বানালেন এবং তা-ই তাঁদের বললেন।
দিদাইমেইয়া হারমিজের মতোই অবাক হলেন। হারমিজ বলল, সে ওদের দেখতে যাবে। একজন গাইড বলেছিল ওরা মানুষের মাংস খায়। মেগাস্থিনিস আর একটু যোগ করে বললেন, তুমি যাবে না। ওরা ছোটদের মাংস খেতে খুব পছন্দ করে।
ওরা মানুষের মাংস খায়? দিদাইমেইয়া খুবই অবাক হলেন। লাউডিস যেন ব্যাপারটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। ভদ্রবাহুকে উদ্দেশ করে বললেন, আচার্য, আসলে ব্যাপারটা কী? আচার্য লাউডিসের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মেগাস্থিনিসের উদ্দেশে বললেন, মহামন্ত্ৰী আপনাকে সেখানে যেতে অনুমতি দিলেন?
এবার মেগাস্থিনিসের মনে হলো, এভাবে কথাটা বলা ঠিক হয় নি। তিনি শর্মিলার কাছ থেকেও অনেক কিছু জেনে নিতে পারতেন। বললেন, অনুমতি ছাড়াই গেছেন।
আচার্য ভদ্রবাহু এ ব্যাপারে চিন্তিত হলেন। বললেন, এটা ঠিক করেন নি, দূতপ্রবর। ভবিষ্যতে নগরীর বাইরে যেতে তাঁর সঙ্গে কথা বলে যাবেন।
হারমিজ এসব রাষ্ট্রাচারের মধ্যে নেই। সে বলল, আচার্য, বলুন না ওরা ছোটদের মাংস খায় কি না?
হারমিজ, আমি কখনো সেখানে যাই নি। তোমার মতোই শুনেছি ওরা নরমাংস ভক্ষণ করে। সত্য-মিথ্যা জানি না। এখানে একটা কুসংস্কার আছে, উল্টো পায়ের মানুষদের দেখা শুভ নয়। তাই এদের নুলো পর্বতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অদ্ভুত ব্যাপার এই যে ওই পর্বতটির নামও কেউ মুখে আনে না, এতেও নাকি অমঙ্গল হয়।
দিদাইমেইয়া বললেন, গ্রিসেও নানা কুসংস্কার চালু আছে। কুসংস্কার মানবসভ্যতার সমান্তরাল। বরং তার আবির্ভাবই আগে।
লাউডিস বলল, আপনি কি এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, আচার্য?
মানুষ বিশ্বাস করতে করতে এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে যে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে আনা কষ্টকর। তাই এ রকম উল্টো পায়ের সন্তানের জন্ম হলেও সেখানে রেখে দিয়ে আসা হয়। ওরাই এদের লালন পালন করে।
লাউডিস বললেন, মায়েরা মানে? এত নিষ্ঠুরতা।
নিষ্ঠুরতা সন্দেহ নেই। কিন্তু উপায় কী, বলুন?
মেগাস্থিনিস বললেন, আমি আবার যাব, এদের সঙ্গে কথা বলব।
এটি বড় স্পর্শকাতর বিষয়। আপনার আর না যাওয়াই ভালো। এ নিয়ে কেউ আর এখন প্রশ্ন তোলে না।