৮২
হেলেনকে নিয়ে চন্দ্রগুপ্ত রাজধানী পাটালিপুত্রে যাচ্ছেন। বিরাট এক লটবহর সঙ্গে। সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীর জন্য মোটরকেটে চৌষট্টি সুসজ্জিত হস্তী, অজস্র অশ্বযান, রথ, বৃষযান পদাতিক সৈন্য, পতাকাবাহী রেজিমেন্ট, যন্ত্রীদল ও নারী-পুরুষের মিলিত নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। সবাইকে উত্তমরূপে সাজসজ্জা করতে বলা হয়েছে।
প্রাচীন ইতিহাসে তক্ষশীলা থেকে প্রাচ-প্রতীচ্যে যে সিল্করোডের কথা রয়েছে, তা পাটালিপুত্রকে স্পর্শ করে আরও পূর্ব দিকে গেছে, তা অবশ্য বাণিজ্যিক কারণে নির্মাণ করা হলেও মৌর্যদের বিশাল সাম্রাজ্যের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে।
এই সিল্করোড ধরেই চন্দ্রগুপ্তের বহর এগিয়ে চলেছে। পথে পথে অবশ্য বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। মহামাত্যরা তাঁদের এলাকায় আরামদায়ক সব বিশ্রামাগার নির্মাণ করে সম্রাট আর নতুন সম্রাজ্ঞীকে স্বাগত জানানোর বিপুল আয়োজন করে রেখেছেন।
একটি অত্যন্ত সুসজ্জিত হস্তীর ওপর আরামদায়ক আসন বসানো হয়েছে। এতে সম্রাট আর সম্রাজ্ঞী বসেছেন। বহর এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় হেলেন বললেন, শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি অথচ বাবা- মা, আত্মীয়স্বজন কোনো গ্রিক বিদায় জানাতে এল না।
চন্দ্রগুপ্ত হেসে দিয়ে বললেন, আমাদের ভারতবর্ষে বাবা-মা কাঁদতে কাঁদতে কন্যাকে বিদায় দেয়। কন্যাও খুব কান্নাকাটি করে। দুঃখ হয়, আমি এ রকম কান্নাকাটির দৃশ্য দেখতে পেলাম না।
মজা করছেন, সম্রাট?
আপনার সঙ্গে পিসি, বোন ও ভাইয়ের সাক্ষাৎ হবে পাটালিপুত্রে।
তা হবে। কিন্তু বিদায় বেলায় তাদের নয়, মা-বাবাকেই বেশি মনে পড়ে। এত দিন মনে হয় নি, আজ মনে হচ্ছে, এদের সবাইকে সত্যিই ছেড়ে যাচ্ছি আমি। সেলুসিট সাম্রাজ্য ছেড়ে যাচ্ছি। ছোটবেলার সে ব্যাবিলন, আজকের সেলুসিয়া ছেড়ে যাচ্ছি আমি। জন্মস্থান ছেড়ে যাচ্ছি আমি। ছেড়ে যাচ্ছি।
যে ব্যথা এত দিন মনে আসে নি, যে কথা এত দিন মনের ভেতর উদয় হয় নি, আজ যেন কোথা থেকে অজস্র ধারায় এসে প্লাবিত করে যাচ্ছে হেলেনের হৃদয়কে। হেলেনের দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।
চন্দ্রগুপ্ত তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। কী বলে সান্ত্বনা দেবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। হেলেন বললেন, গান্ধারা প্রাসাদে মনে হচ্ছিল বিয়ে নয়, স্বপ্নে পুতুল খেলছি আমরা। আজ মনে হচ্ছে সত্যিই সবকিছু ছেড়েছুড়ে যাচ্ছি। অথচ এই গ্রিস, এই সেলুসিয়া কত কষ্টই না আমাকে দিয়েছে। একটা গ্রিকবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছিল আমার। অথচ আজ সে গ্রিকদের ছেড়ে যেতেই যেন হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে। আমি আমার ভাইয়ের দেওয়া কষ্টটা মনে করতে পারলে ভালো হতো, মায়ের দেওয়া কষ্টটা মনে করতে পারলে ভালো হতো। মনে করতে পারছি না চন্দ্র, আমার হৃদয় ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে।
হেলেন, এ রকমটা সব মেয়েরই হয়। বাবা-মা ও মাতৃভূমির সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন রয়েছে। ছেড়ে যেতে সে বন্ধনে টান পড়বেই। আপনি যদি চান, আমি আপনার জন্মভূমি, মাতৃভূমি দখল করে আপনাকে উপহার দিতে পারি।
না না সম্রাট, তা আপনি করবেন না। তাহলে পিতৃরাজ্য তো হারিয়ে যাবেই, আমার শৈশব- কৈশোরের স্মৃতিও হারাব। সেটি আমি আমার বুকের ভেতর ধারণ করে রাখতে চাই, বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
মাতৃভূমি, মাতা-পিতা, শৈশব-কৈশোরকে হয়তো আপনি ফিরে পাবেন না, হেলেন, কিন্তু নতুন এক সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হিসেবে বিশাল সাম্রাজ্য পাবেন, স্বামী পাবেন, নতুন করে এমন অনেককে পাবেন, যা জীবনের নানা বাঁক বদলালে পাওয়া যায়। মানুষের জীবন তো সবটা এক রকম নয়, শৈশব আছে, কৈশোর আছে, যৌবন আছে, প্রৌঢ়ত্ব আছে, বার্ধক্য আছে—এক একটা সময়ে এক একটা অধ্যায় তৈরি, এক এক অধ্যায়ের চিত্র থাকে এক এক রকম, ধরন আলাদা, দায়িত্ব আলাদা, ভালো লাগা-মন্দ লাগা আলাদা—সবকিছু বদলে যায়, সময় বদল করে দেয়, আপনি-আমিও বদলে যাব, হয়তো অগোচরে অথবা দেখতে দেখতে–এই তো নিয়ম। একসময় আজকের অনুভূতি-আবেগও স্তিমিত হয়ে যাবে, নতুনভাবে আমরা আবার জীবন শুরু করব।
ঠিক বলেছেন, সম্রাট। আমি নিজেই তো অনেক বদলে গেছি। হয়তো আরও বদলে যাব।
.
এঁদের বহরটি তক্ষশীলা পার হয়ে চলে এসেছে বেশ কিছুটা দূরে। এখানে পুরু ও আশপাশের রাজাদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত উদ্বাস্তুরা বসতি পেয়েছে। গ্রিকদের আক্রমণে এরা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসে।
এই উদ্বাস্তু পল্লিটা চন্দ্ৰগুপ্ত চেনেন। এদের পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। তিনি তাঁর বহরকে থামতে বললেন। নিজে নামলেন। সম্রাজ্ঞীকে নামতে সাহায্য করলেন। নারী নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত এলাকাটা ঘিরে ফেলল। সম্রাট উদ্বাস্তু পল্লিতে প্রবেশ করলেন।
সম্রাটের বহর দেখে রাস্তাঘাট থেকে পালাচ্ছিল লোকজন। অভয় পেয়ে সবাই আবার উদ্বাস্তু পল্লিতে ফিরে এল। একটা জটলা তৈরি হলো। সম্রাট তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিলেন। একজন বলল, মহামান্য সম্রাট, আমরা কৃতজ্ঞ নিজ চোখে আমাদের দেখতে এসেছেন।
সম্রাট বললেন, তোমাদের সামনে দুটি বিকল্প। এখন যদি নিজের ভিটেতে ফিরে যেতে চাও, সে ব্যবস্থা করব, আর যদি মনে করো এখানেই থাকবে, তাহলে বসতবাটি এবং চাষের জমি, ব্যবসার পুঁজি দেব। আমি অনেকগুলো গ্রাম বসতি সৃজন করেছি, তোমাদের জন্যও সে রকম গ্রামের পত্তন ঘটবে।
উদ্বাস্তুদের মধ্যে মতামতের দিক থেকে দুটি ভাগ হয়ে গেল। কেউ বলল, বসতবাড়িতে ফিরে যাবে, কেউ বলল, এখানেই এরা থাকবে।
সম্রাট হেসে দিয়ে বললেন, বেশ, সবার ইচ্ছেমতো ব্যবস্থা হবে–যারা যেতে চায় যাবে, যারা থাকতে চায়, থাকবে। সবার জন্যই সম্রাটের সহায়তা থাকবে।
কিছুদূর যাওয়ার পর হেলেন জিজ্ঞেস করলেন, এরা উদ্বাস্তু কী কারণে?
আলেকজান্ডারের আক্রমণ ও সেলুসিড আর্মি বিনোদন প্রাসাদ নির্মাণ করাকালে সেখানকার অধিবাসীরা বাস্তুচ্যুত হয়। এদের স্থানীয় রাজারা পুনর্বাসন করেন। কিন্তু তা অনিশ্চয়তার মধ্যে ও সাময়িকভাবে।
ঝিলামের বিনোদন প্রাসাদ নির্মাণকালে?
ওই সব এলাকাসহ আশপাশের সবাইকে উচ্ছেদ করা হয়।
বিনোদন প্রাসাদ বানানোর জন্য উচ্ছেদ?
ঘনবসতিপূর্ণ ছিল বলে নিরাপত্তার জন্য তাদের সেনাবাহিনী সরিয়ে দেয়। যুদ্ধ মানবভাগ্যে নানা বিপর্যয় আনে। যুদ্ধকালে এসবের প্রতি দয়ার্দ্রভাব দেখানো চলে না।
আপনারা যুদ্ধকালে এভাবে মানবভাগ্যের পরিবর্তন ঘটান?
এভাবে হয়তো হয় না, কিন্তু সেনাছাউনি নির্মাণকালে কারও কারও ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে যায়। অবশ্য আমরা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করি।
যদি শত্রুরাজ্যের প্রজা হয়?
আমরা সে রাজ্য জয় করলে এরা তো আমাদের প্রজাই হয়ে যায়। তখন আমরা এদের নতুন গ্রাম সৃজন করে পুনর্বাসন করি।
এ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব আমি নিতে চাই।
সম্রাট শুধু হাসলেন। এ নিয়ে কিছু বললেন না। পরে বললেন, আমরা প্রথম যাত্রাবিরতি করব পুণ্ড্রনগরে। এখানে রাত্রি যাপন করা হবে।
পুণ্ড্রনগর?
পবিত্র নগরী। এই পুণ্ড্রবর্ধনেই আচার্য ভদ্রবাহুর জন্ম। ঐশ্বর্যনগরী পুণ্ড্রনগর। আপনার গায়ে যেসব অলংকার, এগুলোয় ব্যবহার করা সব হিরে ও দামি পাথর আচার্য ভদ্রবাহু পুণ্ড্রবর্ধন থেকে সংগ্রহ করেছেন। আচার্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও এখানকার দামি হিরের কথা বলা হয়েছে। এখানে আমাদের একজন মহামাত্য আছে। সে এখানকার নগরপ্রধান।
আচার্য ভদ্রবাহুর জন্মভূমি এটা? আপনি সত্যিই আমাকে পুণ্যস্থানে নিয়ে এসেছেন।
এখানে সম্রাটকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিশাল আয়োজন। পাহাড়পুর বৌদ্ধমন্দির এলাকায় হয়তো মন্দিরস্থানেই একটি চতুর্মুখ জৈন মন্দির ছিল। এই মন্দিরের পাশে পুণ্ড্রনগরের অতিথিশালা। তার পাশে দক্ষিণমুখী এক বিরাট প্রাসাদ। এই প্রাসাদের সামনে বিশাল চত্বর সম্রাটকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য পুণ্ড্রবর্ধনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়েছেন। উপস্থিত আছেন অন্তপাল, অন্তর ভীমসক ও দৌবারিক।
মহা-অমাত্য সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
চন্দ্রগুপ্ত বললেন, দেবকোট থেকে কে এসেছেন?
একজন বৃদ্ধমতো লোক এগিয়ে এসে বললেন, মহামান্য সম্রাট, আপনি বোধ হয় আমাকেই খুঁজছেন।
আপনি?
আমি পোংডবর্ধনীয়ার গোদাসগনীয় ভিক্ষুপ্রধান
হ্যাঁ, আমি আপনাকেই খুঁজছি। আচার্য আমাকে আপনার কথাই বলেছেন। আপনি আমার ভক্তি গ্রহণ করুন, বলে ভক্তি জানালেন।
আমার বড় ইচ্ছা ছিল গোদাসগনীয় ভিক্ষুগণের অপর তিন শাখার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার। কিন্তু এ যাত্রায় সম্ভব নয়। আপনি তাম্রলিপ্তিয়া, কোডিবর্ষিয়া ও খব্বতিয়াদের কাছে আমার ভক্তি পৌঁছে দেবেন।
এ সময় ষড়বর্গীয় সম্প্রদায়ের ভিক্ষুগণ রাজদর্শনে এগিয়ে এলেন। এঁরা বৌদ্ধ হলেও বৌদ্ধের বিনয়শাসন মানেন না। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত তাঁদের রাজদর্শনের উচ্ছ্বাস দেখে অভিভূত হলেন। বহুসংখ্যক ষড়বর্গীয় ভিক্ষু চন্দ্রগুপ্তের আগমনকে উৎসবে রূপ দিলেন। কাছেই ছিল আজীবিক ভিক্ষুদের সমাবেশ। এঁরাও সম্রাটকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন।
সম্রাজ্ঞী হেলেন সমভাবে অভ্যর্থনা পেলেন। সম্রাট বললেন, আমি যাদের ভক্তি করেছি, এরা আচার্য ভদ্রবাহুর শিষ্য। এখানে বৌদ্ধদের নানা সম্প্রদায় রয়েছে। রয়েছে আজীবিকরা। আমাদের মহামন্ত্রী আচার্য চাণক্য এ ধর্মে দীক্ষা নিয়েছেন।
ভারতবর্ষ এক বিচিত্র দেশ, সম্রাট। আমি যতই দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি, বললেন হেলেন।
এরপর সম্রাট পৌঁছে গেলেন নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমাবেশে। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন মহামাত্য, পৌরব্যবাহারিক, কর্মান্তক গোপ, করণিক, অধ্যক্ষ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, নাগরিক, সামনিধরত প্রমুখ। এঁরা জানেন, চন্দ্রগুপ্ত ভদ্রবাহুর ভক্ত। তাই সবাই সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর পাশাপাশি আচার্য ভদ্রবাহুর স্তুতিগান করলেন।
জবাবে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, এটি সাধারণ কোনো স্থান নয়, মহাস্থান। আজ থেকে এ স্থানকে মহাস্থান বলে জানবে লোকজন। আচার্যের জন্মস্থান মহাস্থান না হয়ে পারে না। আমি শুনেছি, পুরি আখের দেবতা পৌণ্ড্রর নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। পুণ্ড্রবর্ধন নামের পাশে তাই একে মহাস্থানও বলবে লোকজন। মৌর্য সাম্রাজ্যের আলোকিত নগর হয়ে থাকবে এটি। সব ধর্মের মানুষের জন্য অবাধ স্বাধীন বসবাসের জায়গা মৌর্য সাম্রাজ্য, এ মহাস্থানও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি রাজা পৌণ্ড্রক বাসুদেবের কথা জানি। তিনি এ ঐশ্বর্যময় নগরীকে সাজিয়েছিলেন অনিন্দ্যসুন্দর এক নগরীরূপে। সে স্মৃতিচিহ্ন এখনো রয়েছে। বিশ্বাসঘাতকেরা তাঁকে হত্যা করেছে। মহাভারতের এই অধ্যায় গৌরবের নয়। বীর যুদ্ধ করবে সামনাসামনি, পেছনে ছুরি মারবে না, বুকে আঘাত করবে।
এই মহাস্থান মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর আমরা এখানে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত লোক ও প্রশাসক নিয়োজিত করেছি। মৌর্য সাম্রাজ্যের সুশাসন প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাবে। প্রজাগণের নিরাপত্তা ও সুখে-শান্তিতে বসবাসের জন্য আমরা জনকল্যাণমূলক শাসন কায়েম করেছি। আমার বিশ্বাস এই মহাস্থানের প্রজাগণও সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে এখানে বসবাস করছে।
অভ্যর্থনার পর চন্দ্রগুপ্ত একটি পত্র পেলেন। পত্রটি নিয়ে এসেছে সেলুকাসের এক দূত। হেলেনের উদ্দেশে বললেন, সম্রাট সেলুকাসের পত্র। এন্টিগোনাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে লিখেছেন। আপনার জন্য এ চিঠি। আমার জন্য চিরকুট।
চিঠিতে সম্রাট লিখেছেন, সৈনিকের ব্রত হচ্ছে যুদ্ধ। সম্রাট হলেও তিনি যুদ্ধের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। কারণ, যুদ্ধজয়ের মধ্যেই গৌরব নিহিত। আর সৈনিক বীরের মতো যুদ্ধ করে মরবে, তা-ও গৌরবের। কর্নেলিয়া, তুমি তেমন একজন সৈনিকরাজের কন্যা। আমি বিশ্বাস করি, আমার যুদ্ধজয়ে কিংবা যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করলে গৌরববোধ করবে। অ্যাপোলো যুদ্ধদেবতা নন, কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁরই ঔরসজাত। তাই আমাদের পরাজয় নেই। এই অ্যাপোলো ট্রয়ের যুদ্ধে গ্রিকদের পক্ষ নিয়ে একিলিস হত্যায় প্যারিসকে সাহায্য করেছিলেন। আমরাও এ যুদ্ধে তাঁর সহায়তা পাব। আমার হাতে রয়েছে তির-ধনুক। অ্যাপোলো লক্ষভেদী তির ছুড়তে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আমি তাঁকে অনুসরণ করে সেরা তিরন্দাজের মুকুট পরতে চাই। তুমি, লাউডিস ও দিদাইমেইয়া অ্যাপোলোর কাছে যাবে উপাসনা ও যুদ্ধজয়ের বর চাইতে। আমি শুনেছি, চন্দ্রগুপ্ত তোমাদের জন্য একটা চমৎকার অ্যাপোলো মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে। ভেবো না অ্যাপোলো সহায় থাকলে আমাদের জয় অনিবার্য।
চন্দ্রগুপ্তের চিরকুটে লিখেছেন, আপনি চারশ যুদ্ধহস্তী পাঠিয়ে আমাকে মিত্রদের কাছে সম্মানিত করেছেন। তবে আপনাকে স্মরণ করছি এ জন্য যে যুদ্ধযাত্রাকালে বিজয়ী বীরদের স্মরণ করলে তার ফল খুব ভালো হয়।
চিরকুট পাঠ করে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, সম্রাট চাইলে আমি সৈন্য দিয়েও তাঁকে সহায়তা করতে পারি।
মনে হয় তার প্রয়োজন হবে না। বাবা জয়ের মুডে আছেন।
তবু আমি প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।