৭৪
একটি উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছে থর মরুভূমিতে। কিছু দূরে আরও একটি। নানা স্থানে প্রহরা। সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী আসবেন এখানে। প্রহরীদের মধ্যে, রাজ অমাত্যদের মধ্যে, কানাঘুষা সম্রাট বাসররাতে উন্মুক্ত মরুভূমিতে কেন?
চতুরাশ্ব যানে চড়ে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী যাচ্ছেন মরুভূমির দিকে। সম্রাটের নারী নিরাপত্তারক্ষী খুব কাছে থেকে এবং পুরুষ রক্ষীরা কিছু দূরে থেকে সম্রাটের নিরাপত্তার্থে চলেছে তাঁদের পাশাপাশি।
সম্রাজ্ঞী বললেন, মহামান্য সম্রাট, এসব কী? ওদের চলে যেতে বলুন। আমরা চাঁদনিরাতে নির্জন মরুতে বাঁশি শুনব, নির্জনতা উপভোগ করব। একান্তভাবে আমি আর আপনি সময় কাটাব। এ রকম কথাই তো ছিল।
চন্দ্রগুপ্ত হেসে দিয়ে বললেন, হেলেন, তা-ই হবে। ওরা পৌঁছে দিয়ে চলে যাবে। আমরা ধবল জ্যোৎস্নার ধু ধু মরুভূমিতে সারা রাত কাটাব বাঁশি শুনতে শুনতে।
নিকোমেডেস আর ফাওলিনের কাছে ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। এরাও যাচ্ছে আরেকটি অশ্বযানে চড়ে। অপর মঞ্চটি ওদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
পরিকল্পনাটি এ রকম: বাঁশিওয়ালা আড়ালে থেকে বাঁশি বাজাবে, তাকে দেখা যাবে না। কোথা থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসছে, তা কেউ জানবে না। চাঁদ থেকে জ্যোৎস্না ঝরছে, তা সবাই দেখবে কিন্তু বাঁশির সুরের উৎস দেখা যাবে না।
রাজপ্রাসাদের বিবাহবাসর ছেড়ে সম্রাট-সম্রাজ্ঞী মরুভূমিতে, মহামন্ত্রী চাণক্যও একে পাগলামি ছাড়া আর কিছু মনে করেন না। তাঁর মতো এ রকম মনে করা লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি। বিবাহবাদ্য নয়, ঢাকঢোল নয়, সামরিক যন্ত্রসংগীত নয়, মরুভূমিতে বাঁশি— এ পাগলামি ছাড়া আর কী?
হেলেনের এ পাগলামি প্রস্তাবটায় প্রথমে সম্রাট কী মনে করেছিলেন, তা এখন বলা শক্ত। তবে যুদ্ধের আগে বাঁশির সুর তাঁকে শক্তি জুগিয়েছিল। সে কথা মনে হয়েছিল যুদ্ধজয়ের পর। এখন একটা অজানা আগ্রহ তাঁকেও পেয়ে বসেছে। বাঁশিওয়ালাকে খুঁজে পেতে অবশ্য অনেক বেগ পেতে হয়েছে। যুদ্ধের ঘনঘটায় সে পালিয়েছিল। সিন্ধু নদীর পাড় ঘেঁষে চলে যায় বহু দূর। নদীর স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে হাঁটতে বাঁশি বাজাতে বাজাতে মৌর্য সাম্রাজ্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসে মৌর্য সৈন্যরা।
ভয়ে সে কুঁকড়ে গেছে। মৌর্য সৈন্যরা কেন তাকে ধরে নিয়ে যাবে? সে তো যুদ্ধাপরাধী নয়। কিন্তু মৌর্য সৈন্যরা যখন তাকে সম্মান করল, ভালো ব্যবহার করল, সে সাহস ফিরে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছ কেন?
সম্রাট তার কারণ বলতে পারবেন, আমরা নই, বলল সৈন্যদের একজন।
সম্রাটের সামনে হাজির করা হলে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়াল বাঁশিওয়ালা। তোমার নাম কী? সম্রাটের প্রশ্নে মায়া ছিল, প্রশ্রয় ছিল। সে নির্ভয়ে বলল, নিখিল নাগার্সি।
নিখিল, তোমাকে জ্যোৎস্নারাতে বাঁশি বাজিয়ে শোনাতে হবে। সম্রাজ্ঞী ঊষর থর মরুভূমিতে তোমার বাঁশি শুনবেন। যুদ্ধের আগে যে সুর বাজিয়েছিলে, তা-ই বাজাবে।
মহামান্য সম্রাট, কী সৌভাগ্য আমার।
এ কয় দিন বিবাহের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকব আমরা। তুমি রাজকীয় অতিথি হয়ে থাকবে। রাজপ্রাসাদেই থাকবে।
নিখিল বলল, কী মহিমা সম্রাটের, কী অভিরুচি সম্রাজ্ঞীর!
সম্রাট তাঁর লোকদের বললেন, নিখিল এখানে আছে, তা গোপন রাখতে হবে। আর তার যত্ন-আত্তির যেন কোনো কমতি না হয়।
এখন কি বাজাব, সম্রাট? খুব আনন্দ হচ্ছে।
না, তুমি বিয়ের রাতেই বাজাবে। এখন খাওদাও, আনন্দ করো। তোমার জন্য রাজকীয় পোশাকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
আপনাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে, সম্রাট।
বেশ, দেখবে। তবে পরিচয় গোপন রাখবে। অনুষ্ঠানে তুমি রাজকীয় পোশাক পরে যাবে, যাতে কেউ চিনতে না পারে।
রাজকীয় পোশাক পরে রাজা রাজা ভাব এসে গেল নিখিলের। পাতার বাঁশিটা বেমানান লাগছে তার কাছে।
সে ঘুরে ঘুরে দেখছে ধর্মীয় ও রাজকীয় বিবাহের আচার-অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সে কোনো বিশেষত্ব খুঁজে পায় নি। অবাক হয়ে গেছে বিবাহমঞ্চ আর মণ্ডপ দেখে। কী বানিয়েছে এরা! কে বানিয়েছে, তাকে খুঁজছে সে। জিজ্ঞেস করতে করতে পেয়ে গেল। ভবদানব ভাবল, রাজপুরুষ আবার কী জানতে চায়। নিখিল বলল, একি বানিয়েছ তুমি, আমার সুরের পঞ্চম রাগে শুধু তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। ভবদানব কিছু বুঝবার আগেই সম্রাটের লোকজন তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল।
নিখিলের আরেকটি বিষয় ভালো লেগে গেল, সরোজের ছবি আঁকা। সে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সরোজ তাকে রাজপুরুষ ভেবে প্রণাম করে বলল, মহাশয়, আপনার কি কোনো পরামর্শ আছে?
না, পরামর্শ নেই, বিস্ময় আছে। অদ্ভুত আঁকো তুমি। খুবই চমৎকার। আমার সুরের উৎস আছে এতে। তুমি আঁকো, আমি দেখি।
সামনে যে বিবাহ অনুষ্ঠান, তা-ই আঁকছে সে। এর প্রতি কৌতূহল হাতে গোনা দুয়েকজনের। শিশুরা ভিড় করেছে, আর নিখিল। নিখিল কী খুঁজে পায়, কে জানে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে সে কিছু খায়ও নি, খেতে ভুলে গেছে। সরোজের আঁকাআঁকিতে ডুবেছিল সারাক্ষণ।
পরিকল্পনা হচ্ছে দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে বাঁশি বাজাবে সে, যেমনটি বাজিয়েছিল যুদ্ধের সময়। তার জন্যও একটা সুন্দর মঞ্চ করা হয়েছে। এ মঞ্চে বসে সে বাঁশি বাজাবে। রাজকীয় পোশাক পরে এসেছে। নিরাপত্তা দেওয়া লোকজন ছাড়া অবশ্য তার এ পোশাক দেখার কেউ নেই।
পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে আকাশে। আকাশের ঐশ্বর্যটা আসলে চাঁদই ছড়ায়। চাঁদ নেই তো ঐশ্বর্য নেই। অসহায় মনে হয় মিটিমিটি তারাগুলোকে, অভিভাবকহীন। জ্যোৎস্নারাতের বন, জ্যোৎস্নারাতের মরুভূমি, জ্যোৎস্নারাতের নদী কিংবা জ্যোৎস্নারাতের সমুদ্র প্রাকৃতিক মহাসৌন্দর্যের ভিন্ন ভিন্ন মনোগ্রাহী রূপ। নির্জনতার মধ্যে এসব সৌন্দর্যের সঙ্গে মানবমনের যে সম্পর্ক তৈরি হয়, তা হৃদয়কে উদ্বেলিত করে, অন্তরকে জাগিয়ে দেয়, কখনো কখনো পাগল করে তোলে। তার মধ্যে যদি মনকাড়া বাঁশি বেজে ওঠে কিংবা কোনো সুর মনের গহিনে প্রবেশ করে, তাহলে অমৃতের স্বর্গের সঙ্গে একটি যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়।
সারা দিনের প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা চন্দ্রগুপ্ত ও হেলেনের। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সে ক্লান্তি নেই। এখন একান্তভাবে একে অন্যের পাশে! তাই উজ্জীবিত এবং নতুন সম্পর্কের কারণে মানসিকভাবে কিছুটা এলোমেলোও।
সম্রাট-সম্রাজ্ঞী মঞ্চে উপবেশনের পর বাঁশিওয়ালা নিখিলের কাছে সংবাদ পাঠানো হবে। সে তখন বাঁশি বাজাতে শুরু করবে।
সম্রাট-সম্রাজ্ঞী মঞ্চে উপবেশন করার পর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল।
আরেকটি মঞ্চে এসে বসেছে নিকোমেডেস ও ফাওলিন। দুজনের প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। পরে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। নিকো বলল, চলো মঞ্চে বসে না থেকে আমরা হেঁটে বেড়াই।
হেলেনের অবস্থাও তাই। চন্দ্রগুপ্তকে বললেন, এ মঞ্চে বসে থাকা যাবে না। এত সুন্দর প্রকৃতির ওপর মঞ্চটা চাঁদের কলঙ্ক যেন, চলুন আমরা দূরে গিয়ে বালিতে বসে পড়ি।
আমিও তা ভাবছিলাম।
দূরে গিয়ে এরা বালিতে বসে পড়লেন।
মরুচর পাখি ও পোকামাকড়ের শব্দ ভেসে আসছে। মন্দ লাগছে না। তবে এ শব্দ তাদের আনন্দ না কান্নার, বোঝার উপায় নেই। আনন্দেরই হবে। এ ভর জ্যোৎস্নায় কান্না আসার কথা নয়।
হেলেন বালি নিয়ে খেলছেন শিশুদের মতো। চন্দ্রগুপ্ত দেখছেন। হেলেন বালির স্তূপ, গাছ, পশুপাখি আর মানুষ বানাচ্ছেন বালি সাজিয়ে। ব্যাপারটা অবশ্য বিমূর্ত।
নিখিলের কাছে সংবাদ গেছে। সে বাঁশিতে ফুঁ দিল। কিন্তু সুবিধে হচ্ছে না তার। বাঁশি থেমে গেল। একধরনের অস্বস্তি বোধ করছে সে। বাঁশি তার কথা শুনছে না। বাতাস তার নিয়ন্ত্রণে নেই।
বাঁশির সুর শুনে উৎকর্ণ হলেন সবাই। কিন্তু থেমে যাওয়ায় একটু হতাশ হলেন। চন্দ্রগুপ্ত বললেন, মনে হয় পরীক্ষা করে দেখছে। শিল্পীরা সংগতের আগে টুকটাক পরীক্ষা করে নেয়।
নিখিল বাঁশি বাজানোর জন্য মঞ্চ থেকে নিচে নেমে এল। জুতো খুলল। রাজপোশাক ছাড়ল। মঞ্চ থেকে দূরে গিয়ে বালির ওপর বসে গেল পদ্মাসনে। তারপর বাঁশিতে আবার ফুঁ দিল। এবার হয়েছে। মনোযোগ দিতে পারছে সে। বাঁশিও এবার তার কথা শুনছে। বাতাস আনুগত্য মেনে নিয়েছে।
হেলেনের বালির মূর্তি বানানো থেমে গেছে। নিকোমেডেসরা হাঁটতে হাঁটতেই বসে গেল বালির ওপর। দূর থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসছে। একসময় মনে হলো চাঁদ, জ্যোৎস্না, মরুভূমি— সবই ভাসছে।
চন্দ্রগুপ্ত হেলেনের ডান হাতটা নিজের দুহাতের মুঠোয় টেনে নিলেন। কথা সব থেমে গেছে। মরুপাখি, কীটপতঙ্গ—সবাই নিশ্চুপ বাঁশি শুনছে। কিন্তু হেলেন যেন আর বাঁশির সুর শুনছেন না। মহাকালের অন্য এক আলোয় ভেসে বেড়াচ্ছেন। নিমগ্ন অন্য কোথাও। যেখানে কর্ণে শব্দ-সুর কিছুই পৌঁছায় না।
ফাওলিনের ব্যাপারটা ভিন্ন। বাঁশির সুর শুনছে আর নিকোমেডেসের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। এ রকম একটা পরিবেশ তার কাছে স্বর্গীয়। কিন্তু সে বাসরঘর ছেড়ে এখানে অবশ্যই আসত না। বিয়েটা স্বর্গীয় ব্যাপার নয়, মর্তের মানুষদের মর্ত্যের নিয়মে বিয়ের রাতে বাসরঘরেই থাকা উচিত।
নিকোমেডেস শুনে হাসল। বলল, জগতে ব্যতিক্রম তো কিছু আছেই। সবাই কি আর এক রকম? ভোগে-উপভোগে যে তফাত, মানুষে মানুষেও সে তারতম্য আছে।
কর্নেলিয়া কি সন্ন্যাসিনী হয়ে থাকবে?
তা থাকবে কেন?
তাহলে?
এটা তার খেয়াল। এতেই হয়তো সে আনন্দ খুঁজে পায়।
সম্রাট তা মানবেন কেন?
ভালোবাসা থাকলে মানতে সমস্যা হয় না, বরং এতেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়।
আমাদের ভালোবাসায় যেন এ আনন্দ না থাকে। সন্ন্যাসী মানুষকে আমি পছন্দ করি না।
নিখিলের বাঁশি আর থামছে না। পরিবেশটা বাঁশির খুব অনুকূল, তা-ই নয়, তার মাথায় বিশ্ব সৌন্দর্যের এই উৎসবে আজ আরও দুটি বিষয় যুক্ত—একটি ভবদানবের মঞ্চ, অপরটি সরোজ পটুয়ার চিত্রকর্ম। এ দুটো বিষয় তার শিল্পীসত্তায় এমন এক নাড়া দিয়েছে যে তার আলোড়ন এখনো যায় নি, বরং বাঁশির সুরে এসে মিশে শিল্পসৌকর্য অন্য এক মাত্রা যুক্ত করেছে।
আচার্য ভদ্রবাহু ও মহামন্ত্রী চাণক্যও এসেছেন বাঁশি শুনতে। তবে গোপনে এসেছেন। দুজন একসঙ্গে আছেন। মরুভূমিতে বাঁশির সুর দূর থেকে শোনা যায়। তাই এরা দূরে অবস্থান করছেন। যা-ই বলুন, বাঁশি কিন্তু সে ভালো বাজায় আর পরিবেশটা বেছে নেওয়া অসাধারণ হয়েছে। আচার্য ভদ্রবাহুর কথায় সায় দিয়ে চাণক্য বললেন, এখানে না এলে আমার ভুল ধারণাটা থেকে যেত। এখন আমি একে পাগলামি মনে করছি না। জগতে এমন অনেক কিছু আছে, যা পাণ্ডিত্য কিংবা ঋষিত্ব দিয়ে লাভ করা যায় না। আপনি জোর না করলে আমার এ অভিজ্ঞতা কখনো হতো না। ধন্যবাদ আপনাকে।
আচার্য ভদ্ৰবাহু হেসে দিয়ে বললেন, একা ধ্যান করা যায়। রস উপভোগের জন্য চাই সমান সমঝদার ব্যক্তি। আপনি না এলে আমার আসাটা মাটি হয়ে যেত।
চাণক্য বললেন, মরুভূমিতে জ্যোৎস্না তো অসাধারণ ব্যাপার। বনভূমির জ্যোৎস্নায় গেছি আমি। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার সময় জলের মধ্যে ঝিলিমিলি জ্যোৎস্নার খেলা দেখেছি। সে সময় সংগীত কিংবা বাঁশি ছিল না। তাহলে উপলব্ধিটা ভিন্ন রকম হতো। এখন মনে হচ্ছে এসবের মধ্যে কোথাও একটা যোগসূত্র রয়েছে। তক্ষশীলায় যখন রাজপুত্রদের শিক্ষাদান করতাম, তখন চৌষট্টি কলার একটি সংগীতের শাস্ত্রজ্ঞান দিতেন একজন পণ্ডিত। যত দূর জানি, রাজপুত্রদের সংগীতজ্ঞান তো বাধ্যতামূলক ছিল। আমার কাছে এসব অর্থহীন মনে হতো। মনে হতো রাজপুত্ররা শিখবে রাজ্য পরিচালনার কৌশল, অর্থনীতি, বিচার-আচার, নীতি-দুর্নীতি, যুদ্ধবিদ্যা, সন্ধির কলাকৌশল—এসব। সংগীতের জ্ঞান কেন?
এখন কী মনে হচ্ছে, আচার্য?
জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য সংগীতজ্ঞান এবং প্রকৃতিজ্ঞানেরও প্রয়োজন আছে। এদিক থেকে আপনি পরিপূর্ণ
আবার আমাকে টানছেন কেন?
টানছি না, উপলব্ধি করছি। আপনাকে পরিমাপ করছি।
আপনার মধ্যেও তা আছে। তবে সুপ্ত অবস্থায়।
সুপ্ত, তবে ক্ষীণ অবস্থায় বলুন।
আজকের পর তাতে জোয়ার জাগবে।
কী জানি! জীবনটা মনে হয় পাথুরে নদী।
আবার এরা বাঁশিতে মনোযোগ দিলেন। কিছুক্ষণ পর ভদ্রবাহু বললেন, মুশকিল হলো বাঁশিওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় অন্যলোক থেকে সুরটা ভেসে আসছে।
লোকটাকে দেখলে তার বাঁশি হয়তো এত ভালো লাগত না। নাগার্সিরাই তো বাঁশি বাজায়, তাদের বড় বড় তৈলাক্ত চুল থাকে। পোশাকে-আশাকে ভালো দেখায় না।