মৌর্য – ৭১

৭১

প্রিন্স এন্টিওকাস জেনারেল মোলনকে তলব না করে নিজেই এন্টিগোনাসের সীমান্তের সেলুসিড সেনাছাউনিতে উপস্থিত হলেন। মোলনের প্রস্তুতি ছিল না। তাই কোনো সামরিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই এন্টিওকাসকে স্বাগত জানাতে হলো। মোলন এখনো বিশ্বাস করেন, এই প্রিন্সই সেলুসিড সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট। এ বিশ্বাস মাথায় রেখে জেনারেল মোলন সব রকম রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। আজ ব্যতিক্রম হলো বলে এন্টিওকাসের উদ্দেশে বললেন, মহামান্য প্রিন্স, আপনার আগমনের কথা জানতে পারলে রাজকীয় প্যারেডের ব্যবস্থা করা হতো।

আমি এভাবেই তোমাদের এখানে আসতে চেয়েছি। তুমি আমাকে সম্রাটের সর্বশেষ অবস্থান জানাও।

আমার জানা মতে তিনি সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে গান্ধারা প্রাসাদে অবস্থান করছেন। ওই প্রাসাদেই প্রিন্সেসের বিয়ে হবে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে। সব আয়োজন শেষ করা হয়েছে।

প্রিন্স এন্টিওকাস মুখমণ্ডলে একটা ঘৃণার ভাব প্রকাশ করে তাচ্ছিল্যভরে কর্কশ কণ্ঠে প্রায় চিৎকার করে বললেন, বিয়ে? কিসের বিয়ে? এ বিয়ে দেখার জন্য সম্রাট সেলুকাস গান্ধারা প্রাসাদে বসে আছেন? বৃদ্ধ হলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারায় জানতাম, মর্যাদাবোধও হারিয়ে ফেলে, এই প্রথম শুনলাম।

যত দূর জানি, বিয়েটা প্রিন্সেসের ইচ্ছাতেই হচ্ছে।

সে আমার বোন। এ রকম ইচ্ছা তার থাকতেই পারে না। তুমি ভুল শুনেছ, অথবা ভুল বলছ। সে কি ভাবছে তার উপযুক্ত পাত্রের অভাব আছে? সেলুসিড আর্মিতেই তার উপযুক্ত সুদর্শন পাত্র রয়েছে। এ ছাড়া টলেমির আর্মিতে বনেদি গ্রিকদের সন্তানেরা রয়েছে। আমি এ বিয়ে মানি না। তুমি চলো, আমি গান্ধারা প্রাসাদে যাব।

ক্ষমা করবেন, প্রিন্স। আমি সীমান্ত ছেড়ে কোথাও যেতে পারছি না। এখানে বড় বেশি উত্তেজনা। এ ছাড়া যুদ্ধ-প্রত্যাবর্তনকারী জেনারেলদের এখানে আসার কথা রয়েছে।

প্রিন্স এন্টিওকাস আগ্রহ প্রকাশ করে বললেন, কখন আসছে এরা?

আগামীকাল জেনারেল ফিলেকাসসহ অন্যরা সীমান্তগুলো ভিজিট করবেন।

তাদের সঙ্গে আমারও সাক্ষাৎ হওয়া প্রয়োজন। সীমান্ত ভিজিট করবে কেন?

জেনারেল ফিলেকাসই তা জানেন।

তার সঙ্গেই আমি কথা বলব। অবশ্য কাউয়ার্ডটার সঙ্গে আমার কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। সে পরাজিত জেনারেল।

মোলন বলতে যাচ্ছিলেন পরাজিত বলা যায় না। কিন্তু তা বললেন না। প্রিন্সের উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে না। অন্য কথা বললেন, তাহলে আপনার থাকার ব্যবস্থা করি?

করো।

প্রিন্সের সঙ্গী তাঁর সচিব বললেন, কাল আপনাকে প্রিন্সেসের জন্মদিনে থাকতে হবে।

স্ত্রীর কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় মোলনকে উদ্দেশ করে বললেন, কাল হবে না, আমি পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসব। তখন গান্ধারা প্রাসাদে যাওয়া হবে। বিয়ের তারিখ হয়েছে?

পরবর্তী শীত পূর্ণিমায়।

অসভ্য ভারতীয়দের সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে আবার ওসব গ্রিক রীতি-রেওয়াজও মানছে নাকি?

মোলন এ কথার কোনো জবাব দিলেন না। মনে মনে বললেন, গ্রিক সভ্যতার মুখে তো আপনিই চুনকালি মাখিয়েছেন, প্রিন্স। ভারতীয়দের বলছেন অসভ্য!

এন্টিওকাস আবার বললেন, যে জন্য তোমার কাছে আসা, বলছি শোনো, সম্রাটের পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

আমি জানি না, প্রিন্স।

তুমি ভেবে বলো, তোমার ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস।

কোনো বিষয় নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেন নি 1

তুমি না বললেও আমি জেনে যাব। আমার লোকজন তোমার পেছনে লাগানো আছে। আমি মনে করি তুমি বুদ্ধিমান। ভবিষ্যৎ দেখতে পাও।

এবার মোলন হেসে দিয়ে বললেন, আপনার লোকজন নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে আপনাকে জানায়।

তুমি চৌকস জেনারেল, এ কথাই ওরা আমাকে বলে। আমি তোমার সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।

আমিও আপনাকে যোগ্য প্রিন্স মনে করি। আপনার কাজে আসতে পারলে কৃতার্থ বোধ করব।

গ্রিকরা গ্রিসের বাইরে একরকম জোর করে রাজ্য চালাচ্ছে। সেলুসিয়ার বড় এক অংশ, এন্টিগোনাসের দখলকৃত এলাকা কিংবা টলেমির মিসর—সর্বত্রই তাদের উপনিবেশ। স্থানীয় অধিবাসীরা এসব শাসককে পছন্দ করে না, নিরুপায় হয়ে অধীনতা মেনে চলে। গ্রিকরা যদি এন্টিওকাসের শাসনাধীনে থাকত, তাহলে সবাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াত। এসব দেশে যেসব গ্রিক ব্যবসা কিংবা অন্য পেশাসূত্রে আছে, এরাও সবচেয়ে অপছন্দ করে এন্টিওকাসকে, কিন্তু প্রকাশ করে না। এরা মনে করে, এসব দেশের লোকদের মতো এরাও দুর্ভাগা, একজন দুর্জনের দুঃশাসন তাদের মাথা পেতে নিতে হচ্ছে। মোলন তার ব্যতিক্রম নন, তাঁর কষ্ট আরও বড়, তিনি এই লোকটিকেই সেলুসিয়ার সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ সিংহাসনে দেখতে পাচ্ছেন। অনুচ্চ স্বরে বললেনও, কী দুর্ভাগ্য!

প্রিন্স চলে যাওয়ার পর মোলন আগামীকালের জেনারেলদের আগমনসূচি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। প্রিন্সের মনোভাব নিয়েও ভাবলেন। প্রিন্স সমস্ত সেলুসিড সাম্রাজ্যজুড়ে তাঁর প্রতি ভয় ও ঘৃণার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছেন, তা সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছে।

.

বড় একটা কারুকাজ করা বাক্সে করে আনা মূল্যবান উপহারসামগ্রী এন্টিওকাস তাঁর স্ত্রীর সামনে রেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। একজন দাসশ্রেণির মহিলা বাক্সের ডালাটা তুলে ধরলে দেখা গেল, এতে রয়েছে মহামূল্যবান রত্ন বসানো কতগুলো রাজকীয় গয়না। রাক্ষসপত্নীর মতো এই ভদ্রমহিলারও গয়নার খুব শখ। মন্ত্রিপত্নীর অবশ্য গয়না সরবরাহকারী বন্ধু ছিল, যে কিনা গয়না প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি। কত গয়না রাক্ষসপত্নীকে সরবরাহ করেছিল, তা শুধু চতুর্থ শতকের নাট্যকার বিশাখা দত্তই জানেন, আমরা জানি মহা এক যুদ্ধের খরচের জন্য তিনি গয়নাগুলো সেলুকাসকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এন্টিওকাস-পত্নীর গয়নার স্তূপে একটি রাজকোষ পরিপূর্ণ। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামীদামি গয়নার প্রতি তাঁর লোভ সীমাহীন। এ কথা মনে রেখে এন্টিওকাস তাঁর বিজনেস মেগনেট ভাইকে দিয়ে এবার মহেঞ্জোদারো সভ্যতা যুগের রত্নখচিত প্রাচীন কিছু গয়না আনিয়ে তাঁকে উপহার দিলেন। ভেবেছিলেন বড় চমক দেওয়া হলো।

এন্টিওকাস-পত্নী কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কাপড়ে আঁকা একটি ছবি স্বামীর চোখের সামনে মেলে ধরলেন এবং বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার এই জন্মদিনে এটি উপহার দেবে।

এন্টিওকাস কাপড়ে আঁকা ছবিটি নিজের হাতে নিয়ে একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। পরে বললেন, তুমি আমার সম্রাজ্ঞী হবে, সম্রাজ্ঞীর মুকুট মাথায় পরবে, এই চাওয়া খুবই কাঙ্ক্ষিত।

কিন্তু তুমি কী করছ? বৃদ্ধটাকে সিংহাসনে বসিয়ে রাখতে হবে? সে এখন পরাজিত, এখনই তাকে ধাক্কা মেরে সিংহাসন থেকে নিচে ফেলে দেওয়া দরকার।

ধৈর্য ধরো প্রিয়। এ সাম্রাজ্যের তুমিই তো ভবিষ্যৎ সম্রাজ্ঞী।

আর ধৈর্য ধরা যাবে না। তুমি ব্যবস্থা নাও।

আমি কালও মোলনের কাছে গেছি। মোলন হচ্ছে সম্রাটের বড় শক্তি। তাকে হাতে নিতে হবে। যুদ্ধ থেকে যেসব জেনারেল ফিরে এসেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাব জানতে হবে। তুমি ভেবো না আমি চুপ করে আছি।

আমি এসব কিছুই বুঝতে চাই না। আমি সম্রাজ্ঞীর মুকুট চাই, এটাই আমার শেষ চাওয়া তোমার কাছে।

নিশ্চয়ই তুমি এ মুকুট পাবে। আমাদের সামনে উত্তরাধিকারের সব পথ পরিষ্কার। সম্রাটের বড় ছেলে ব্যবসায়ী, বড় মেয়ে সংসারী, জেনারেলের স্ত্রী, এদের কেউই উচ্চাভিলাষী নয়। কর্নেলিয়া চন্দ্রগুপ্তের সম্রাজ্ঞী হতে যাচ্ছে। তাই ভাবনার কিছু নেই, সম্রাটকে এখন জোর করে সিংহাসনচ্যুত করতে চাইলে প্রায় ছয় লাখ সেনাকে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের সৈন্যসংখ্যা পঞ্চাশ হাজারও নয়। কোনো ভুল হলে মৃত্যুই হবে তার একমাত্র শাস্তি। খুব ভেবেচিন্তে এগোতে হবে।

বুঝতে পেরেছি, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমাকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কী করবে তুমি?

সময় হলেই জানতে পারবে, বলে এন্টিওকাস-পত্নী দ্রুত বের হয়ে গেলেন। এন্টিওকাস ভাবলেন অতীতের কথা। এই রমণীই একদিন সম্রাজ্ঞীর মুকুট হাতে বলেছিল, এই মুকুট আমি চাই না, শুধু তোমাকে চাই, তুমিই আমার মুকুট, আর এখন?

এন্টিওকাস বুঝতে পারেন, নারীর চাহিদার শেষ নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে স্ত্রীর উচ্চাভিলাষ একবিন্দুতে এসে মিশে গেছে। তাঁরও অভীপ্সা এবং প্রশ্ন এখন সম্রাট না হলে আর কবে? পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন তাড়া করছে তাঁকে, সে (স্ত্রী) কী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে? সবকিছু বুমেরাং হয়ে যাবে না তো? তাঁর ওপর নজর রাখা দরকার। টেনশন বাড়ছে স্ত্রীর চাপে।

.

পরদিন দুই জেনারেল ফিলেকাস ও সারিকাস জেনারেল মোলনের সঙ্গে মিলিত হলেন। সারিকাস পরিকল্পনায় পোক্ত। ফিলেকাস সব বিষয়ে সমরবিশেষজ্ঞ। সারিকাস যুদ্ধ পরিকল্পনা জানতে চাইলে মোলন বললেন, মৌর্যদের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে এখানে আমাদের অবস্থান ছিল প্রতিরক্ষামূলক। দুই রণাঙ্গনে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ সম্ভব ছিল না। সম্রাটের এ রকমই নির্দেশ ছিল।

ফিলেকাস আলেকজান্ডার-পরবর্তী জেনারেলদের অধিকৃত ও শাসনাধীন অন্য রাজ্যগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বললেন, প্রায় তিন বছর মৌর্যদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় পশ্চিমের এসব রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। তাদের অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন।

মোলন নিজে এবং গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এ অঞ্চলের খোঁজখবর রাখেন। সব তথ্য এই জেনারেলদের বলা যায় না। যুদ্ধনৈতিক বিষয়গুলো শেয়ার করা যায়। তিনি বললেন, এন্টিগোনাস-পুত্র দিমিত্রিয়াস চার বছর আগে মিসরে সালামির নৌযুদ্ধে টলেমিকে পরাজিত করে সাইপ্রাস দখল করে নেয়। এ যুদ্ধে টলেমির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সেটা আমরা জানি।

এ জয় এন্টিগোনাকে টলেমির সাম্রাজ্য থেকে আলাদা স্বাধীন রাজ্য গঠনে সাহায্য করে এবং উচ্চাভিলাষীও করে তোলে। তিনি বিশাল এক সৈন্যবাহিনী গঠন করেন এবং দিমিত্রিয়াসের অধীনেও আরেকটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। পরের বছর আপনারা যখন সিন্ধু অববাহিকায় যুদ্ধরত দিমিত্রিয়াস রোদেসকে আক্রমণ করে পরাজিত করেন, কারণ, সে টলেমির বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের সহায়তা করে নি। বছরখানেকের মধ্যে অবশ্য এক শান্তি চুক্তি হয় যে টলেমি ছাড়া আর সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রোদেস অঙ্গীকারবদ্ধ।

তাহলে রোদেস এন্টিওকাসের পক্ষে থাকবে, বললেন সারিকাস।

হিসাবটা অন্য রকমও হতে পারে।

কী রকম, প্রশ্ন করলেন ফিলেকাস।

টলেমি যদি যুদ্ধে আমাদের পক্ষে থাকেন, তাহলে রোদেস আমাদের বিপক্ষে থাকবে না। কিছুদিন আগে এন্টিগোনাস ও দিমিত্রিয়াস লাইসিমেকাসকে আক্রমণ করেছেন। এখন লাইসিমেকাস তাঁর বিরুদ্ধে। ফল দাঁড়াল এই, এ অঞ্চলের সবাইকে এন্টিগোনাস শত্রু বানিয়ে ফেলেছেন।

কাসানদারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়, আগেই শুনেছিলাম। সারিকাসের এ কথার জবাবে মোলন বললেন, শুরু থেকেই তাঁকে নানা সমস্যার মুখে রেখেছেন এন্টিগোনাস।

তাহলে আমাদের পরিকল্পনাটা সহজ হয়ে গেল।

ফিলেকাস বললেন, কী বলতে চাও তুমি?

আমরা সঙ্গে পাচ্ছি কাসানদার, টলেমি ও লাইসিমেকাসকে। সঙ্গে না পেলেও এরা এন্টিগোনাসকে কেউ সাহায্য করতে যাবে না।

তোমার ধারণা ঠিক। সম্রাটকে ব্যাপারটা জানাতে হবে। তিনি এসব রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ফিলেকাস মোলনের উদ্দেশে বললেন, তোমার সৈন্যদের অবস্থা বলো।

সৈন্যরা ঠিক আছে। এদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এখান থেকে রাজধানী সেলুসিয়া পর্যন্ত সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বজায় আছে। সর্বত্রই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে…

তবে কী?

প্রিন্স এন্টিওকাসকে বোঝা যাচ্ছে না।

কী রকম?

সম্রাট সেলুকাস পরাজিত হওয়ার পর তিনি ভেবেছিলেন সম্রাটকে বন্দী করে রাখা হবে অথবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বর্তমান অবস্থার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ভেবেছিলেন সম্রাট হয়ে গেছেন। সেলুসিয়ায় পৌঁছে ঘোষণা দেবেন।

এখন?

মানসিকভাবে অস্থির আছেন।

তাঁর অধীনে এখন কত সৈন্য আছে?

অশ্বারোহী আর পদাতিক মিলে চল্লিশ হাজারের কিছু বেশি।

আচ্ছা। তুমি প্রিন্সের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করবে। আর তাঁর কাছের লোকদের হাত করে নেবে। প্রতিদিনকার সংবাদ রাখবে। প্রয়োজনবোধে সম্রাটকে জানাবে। সম্রাট শীঘ্রই কমান্ড হাতে নেবেন।

কত সৈন্য ফিরে এসেছে, হিসাবটা এখনো পাই নি।

ধরো পাঁচ লাখের কিছু কম। সব সৈন্য এখন এখানে পাঠানো যাবে না। অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেকেই। ছুটিতে পাঠিয়েছি এক-দশমাংশকে।

কিন্তু এন্টিগোনাসকে আক্রমণের এটাই উপযুক্ত সময়।

সম্রাটকে বিষয়গুলো জানাতে হবে। তিনি আক্রমণের আদেশ দেবেন।

.

এদিকে সিরিয়ার এককালের প্রিন্সেস স্ট্রেটোনিস এন্টিওকাস-পত্নী রোদেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর প্রস্তাব শুনে রোদেস অবাক হয়ে বলেন, প্রিন্সেস, এটা কী করে সম্ভব?

সম্ভব নয় কেন? আপনার মাধ্যমে আমি এন্টিগোনাসের কাছে সাহায্য চাইছি। আপনি কিছু না বলতে চাইলে আমার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটিয়ে দিন, আমি নিজে তাঁর সঙ্গে কথা বলব।

দেখুন, টলেমি যে জোটে থাকবেন, আমি তাঁর বিরুদ্ধে যেতে পারব না। টলেমি-বিদ্বেষী এন্টিগোনাস এবং তাঁর পুত্র দিমিত্রিয়াসও তা মেনে নিয়েছেন।

আপনাকে আমাদের জোটে থাকতে হবে না। আমি শুধু এন্টিগোনাসের সাহায্য চাই। আমি আপনার সঙ্গে দিমিত্রিয়াসের আলাপ করিয়ে দিতে পারি, তার বেশি কিছু নয়।

বেশ, তাই করুন।

যা বলার দরকার আপনিই বলবেন।

ঠিক আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *