৬৭
ভদ্রবাহুর মুখে গ্রিক বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও লৌকিক আচারের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলেন চন্দ্রগুপ্ত। বললেন, বিয়েটা হবে গ্রিক রীতিতে।
দিদাইমেইয়া, লাউডিস ও নিকোমেডেস উচ্ছ্বাসের হাসি হাসলেন। দিদাইমেইয়া বললেন, গ্রিক বিয়ের রীতিকে সম্মান জানিয়ে সম্রাট আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। তবে আমার একটা অনুরোধ আছে। আমরা ভারতীয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও দেখতে চাই এ বিয়েতে তাহলে গ্রিস ও ভারতের রিচুয়াল মেলবন্ধনে এক ঐতিহাসিক মাত্রা যুক্ত হবে। এ ছাড়া আমরা ভারতীয় রীতিটা উপভোগ করতে পারব।
সম্রাট বললেন, বেশ, তাই হবে। আমাদের পণ্ডিতাচার্য মহামন্ত্রী চাণক্য লৌকিক এবং আচার্য ভদ্ৰবাহু উভয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সমন্বয় ঘটাবেন।
সেলুসিয়া থেকে আমাদের একজন পুরোহিতকে আনাতে হবে। তার আগে এখানে স্থাপন করতে হবে একটি দুই বা ত্রিমাত্রার গ্রিক বহু ঈশ্বরবাদী মন্দির, যাতে দেবতা আর্টেমিস এবং আফ্রোদিতের বিগ্রহও সংরক্ষিত থাকবে।
দিদাইমেইয়ার কথায় সম্রাট প্রসন্নতার সঙ্গে সম্মতি দিয়ে বললেন, প্রিন্সেস যে ধর্ম খুশি পালন করতে পারবেন এবং তিনি যদি চান, একই মন্দির আমি রাজধানী পাটালিপুত্রে স্থাপন করব।
সম্রাটের উদারতায় ধন্য আমরা। বললেন লাউডিস। দিদাইমেইয়া বললেন, অ্যাপোলো হচ্ছেন আমাদের আরাধ্য দেবতা। পাটালিপুত্রে চাইলে আপনি অ্যাপোলো মন্দির স্থাপন করতে পারেন। আমরা এই দেবতারই সন্তান।
তাই হবে। আচার্য, আপনি গ্রিস থেকে কারিগর আনিয়ে এ মন্দির নির্মাণের ব্যবস্থা নিন I কথাটা মহামন্ত্রীর উদ্দেশে বললেন চন্দ্রগুপ্ত।
মহামন্ত্রী সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। ভদ্রবাহু বললেন, তাহলে আগামী শীতের প্রথম পূর্ণিমায় বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়ে থাকল।
এ কথায় সম্রাটের প্রসন্নতা কেটে গেল। দিদাইমেইয়া তা লক্ষ করে বললেন, কোথাও কোথাও শীত শুরু হয় আরও আগে। মৌর্য সাম্রাজ্যের যে স্থানে শীত আগে আসে, সেখানেই অনুষ্ঠানের সূচনা করা যায়। তা শুধু মাঙ্গলিক দিকটার বিবেচনায়। আচার্য ভদ্রবাহু এমন স্থানের প্রথম পূর্ণিমা রাতকে বিয়ের জন্য নির্ধারণ করতে পারেন।
এবার সম্রাটের চোখেমুখে আবার প্রসন্নতা ফুটে উঠল। আচার্য ভদ্রবাহু বললেন, প্রিন্সেসের ঘনিষ্ঠজনেরা সময় সমস্যার যেভাবে সমাধান করে দিয়েছেন, তা আমাদের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এখন জরুরি কাজ হচ্ছে গ্রিক পুরোহিত আনিয়ে নেওয়া এবং মন্দির নির্মাণ করে দেওয়া। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তক্ষশীলায় শীত নেমে আসবে।
কিন্তু চাণক্য একটি প্রশ্ন তুললেন, গ্রিক সৈন্যদের প্রত্যাহার না করেই কি বিয়ের অনুষ্ঠান হবে?
সম্রাটের চোখে বিরক্তির ছায়া নেমে এল। অথচ সবার দৃষ্টি এখন তাঁর দিকে। সম্রাট কিছু বলার আগেই নিকোমেডেস বলল, শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে পর্যায়ক্রমে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চাণক্য আবার প্রশ্ন করলেন, সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যেই কি তাহলে বিয়ের উৎসব হবে? যে দেশের কন্যা, সে দেশের সৈন্যদের তাড়িয়ে দেওয়ার সময় বিয়ের উৎসব কতটা তাদের কাছে কাঙ্ক্ষিত হবে, তা-ও বিবেচনায় রাখার অনুরোধ করছি।
লাউডিসের মনে কথাটা রেখাপাত করল। কারণ, কমান্ডার হিসেবে জেনারেল কিউকেকাসকে তাঁর সৈন্যদের সঙ্গে চলে যেতে হবে। তাঁকে রেখে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। তাই তিনি দিদাইমেইয়ার দিকে তাকালেন।
দিদাইমেইয়া কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। নিকোমেডেস বলল, গ্রিক রীতিতে পাঁজি দেখে বিয়ের দিন ধার্য করার কথা কনেপক্ষের পুরোহিতের। তাঁর আসার পরই তারিখ ধার্য হতে পারে। আর গ্রিক সৈন্যরা প্রস্তুত, চাইলে এক-দুই দিনের মধ্যে প্রত্যাবর্তন শুরু করা যাবে।
লাউডিসের অর্থপূর্ণ চাহনির অর্থ কেউ বুঝতে পারল না। তাই নিজেই বললেন, জেনারেল কিউকেকাসকে বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকতে হবে।
দিদাইমেইয়া বললেন, অবশ্যই।
তাহলে তারিখটা এখনই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না, বললেন আচার্য ভদ্রবাহু।
সম্রাট চাইছিলেন এ পর্যায়ে বুদ্ধিদীপ্ত মহামন্ত্রী কিছু বলুন, তাঁর দিকে চাতক পাখির দৃষ্টিতে তাকালেনও। কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। তাই মন্ত্রীর মনে কী আছে, তা নিয়ে সম্রাট চিন্তিত হলেন। তা দেখে ভদ্রবাহু আবার বললেন, গ্রিক পুরোহিতই এখন সমস্যার সমাধান। বাকিটা পরে দেখা যাবে।
নিকোমেডেস বলল, গ্রিস থেকে গ্রিক পুরোহিত আনার দরকার নেই। সেলুসিড সেনাবাহিনীতেই পুরোহিত আছে। সে দিদাইমেইয়ার দিকে তাকিয়ে আরও বলল, আমার জানামতে, এরা দেবতা অ্যাপোলোপন্থী গ্রিক পলিথিজমের প্রবক্তা।
তাহলে তো পুরোহিতের সঙ্গে আজই কথা বলা যায়, বললেন দিদাই মেইয়া।
ফিলেকাস ও কিউকেকাস সেলুসিড আর্মিদের প্রত্যাবর্তনের সব ব্যবস্থা পাকা করে সম্রাট সেলুকাসকে জানালেন যে ডিপার্চার প্যারেডের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। মহামান্য সম্রাট অনুমতি দিলেই তার আয়োজন করা হবে।
সেলুকাস বললেন, হায় জিউস, তা-ও ভাগ্যে ছিল। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে প্রত্যাবর্তন!
ফিলেকাস বললেন, গ্লানিকর বটে, মহামান্য সম্রাট, কিন্তু সম্ভাবনা শেষ নয়। আমরা আপনার নেতৃত্বে আবার যুদ্ধ জয় করব। হতে পারে ভারতবর্ষে, হতে পারে এন্টিগোনাসের রাজ্যে কিংবা এসব ছাড়িয়ে আরও কোনো ভূখণ্ডে
সেলুকাস তাতে উদ্দীপ্ত বোধ করলেন। বললেন, ফিলেকাস, আমার বয়স হয়েছে বটে, কিন্তু আমি যুদ্ধে জয়লাভ করা ছাড়া মরতে পারি না। পরাজয় নিয়ে মারা যাব, এ কেমন কথা? মোলনকে সংবাদ পাঠাও, আমরা সেলুসিয়ায় পৌঁছেই এন্টিগোনাসকে আক্রমণ করব। তা প্রমাণ করবে আমরা শেষ হয়ে যাই নি, আমাদের সৈন্যরা নতুনভাবে তাদের শক্তি ফিরে পাবে। যুদ্ধই সৈনিকের জীবন। যুদ্ধ নেই তো জীবনের প্রবাহ নেই, মরা গাঙের মতো বিবর্ণ ও চলনশক্তিরহিত।
কিউকেকাস এতক্ষণ চুপ করেছিলেন। এবার বললেন, যুদ্ধের লক্ষ্য কী, তা নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া অর্থহীন। একটি রাজ্যে সৈন্য থাকবে সে রাজ্যকে বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য, সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য নয়।
কিউকেকাস, তুমি বুঝতে পারছ না, সীমান্তে শত্রু রেখে শান্তিতে ঘুমোনো যায় না।
এন্টিগোনাস একজন গ্রিক। তার সঙ্গে সমঝোতা করে আমরা শান্তিতে থাকতে পারি। আমি নিশ্চিত যে আমরা উসকানি না দিলে ভারতবর্ষ থেকেও কখনো আক্রমণ করা হবে না। তাহলে আর যুদ্ধ কেন?
তুমি তাকে বোঝাও ফিলেকাস, আমরা বিজয়ী জাতি। যুদ্ধে জয়লাভই আমাদের ব্রত।
আক্রমণ আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উচ্চাকাঙ্ক্ষার লড়াই নয়।
আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যই গ্রিসের বাইরে রাজ্য বিস্তার করতে পেরেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।
মহামান্য সম্রাট, আপনি নিশ্চয়ই একসময় আমার কথার মর্ম উপলব্ধি করবেন। তবে আমি আমার মত প্রকাশ করেছি মাত্র। আপনার কমান্ড মানাই আমার কাজ। তার কোনো ব্যত্যয় হবে না।
আপনি তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করে দিন। সে মোতাবেক সেন্য প্রত্যাহার শুরু হবে, বললেন ফিলেকাস।
তিন দিন পর ভোর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে। সব ব্রিগেড ও ইউনিটকে জানিয়ে দাও। সব সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হলেই আমি ফিরে যাব। যে কথা তুমি আমাকে বলেছিলে, সৈন্যরা যাতে কোনো গোলযোগ তৈরি না করে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। পরিকল্পনামতো তুমি পর্যায়ক্রমে তাদের পাঠাও।
মৌর্য সেনাপতিকে কি জানানো হয়েছে, কিউকেকাসের প্রশ্নের জবাবে ফিলেকাস বললেন, আজই জানানো হবে।
সেলুকাস বললেন, ভালো কথা বলেছ, কিউকেকাস, এটা একবারও মনে হয় নি। তাদেরও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। না হয় প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করবে কেমন করে।
.
মৌর্য সেনাপ্রধান গ্রিকদের প্রস্তাব নিয়ে চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে সম্রাট আগে জানতে চাইলেন গ্রিকদের গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দাদের মতামত কী?
সেনাপ্রধান বললেন, মহামন্ত্রীর কাছে গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো জমা করা হয়েছে।
সম্রাট মহামন্ত্রীকে সংবাদ পাঠালেন। ইত্যবসরে প্রধান সেনাপতিকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে ওরা কী বলেছে?
প্রত্যাহারের অনুমতি চেয়েছে এবং সহযোগিতা প্রার্থনা করেছে।
তাঁদের নিজেদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই তো?
দৃশ্যত তা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকা দরকার এবং সে ব্যবস্থা আমি করেছি।
মহামন্ত্রী গোয়েন্দাদের রিপোর্টগুলো নিয়ে এসেছেন। সম্রাট বললেন, আচার্য, গুপ্তচরদের মুখ থেকে আমি কথা শুনতে চাই। এরা কি এখন এখানে আছে?
দু-চারজন আছে।
তাদের ডেকে পাঠান।
মহামন্ত্রী এদের ডেকে আনার জন্য লোক পাঠালেন এবং বললেন, প্রধান সেনাপতি আপনাকে হয়তো অবহিত করেছেন যে তিন দিনের মধ্যে ওরা সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে দেবে। জানিয়েছে। কিন্তু এত সৈন্য প্রত্যাহারে সময় লাগবার কথা। আমরা কি সময় বেঁধে দেব? সময় বেঁধে দিলেই উত্তম হয়।
তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করুন।
গুপ্তচরেরা একে একে উপস্থিত হলো। প্রথম গুপ্তচর দেবতারূপী। দেবপ্রতিমার বেশ ধরে শত্রুছাউনির পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শত্রুসৈন্যদের কথোপকথন শুনেছে। গ্রিক সৈন্যরা খুবই হতাশাগ্রস্ত। পরাজয়ের গ্লানির পাশাপাশি এরা অর্থসংকটে ভুগছে।
সম্রাট বললেন, কী রকম?
গুপ্তচর সেলুসিড আর্মির কথোপকথন তুলে ধরল : সৈনিক ১, আমার জানামতে গ্রিকরা এই প্রথম পরাজিত হলো। রাগে আমার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে। কাউওয়ার্ড জেনারেলরাই আমাদের ডুবিয়েছে।
সৈনিক ২, গ্রিকরা জাহান্নামে যাক, বেতন নেই, যুদ্ধে লুটপাট নেই, বাকি জীবন কি আঙুল চুষে চলব? আমি সুযোগ পেলেই হাটবাজারে হানা দেব।
সৈনিক ১, তা ঠিক হবে না।
সৈনিক ২. গ্লানিকর জীবন নিয়ে খালি হাতে ফেরার চেয়ে মৃত্যুই ভালো।
সম্রাট গুপ্তচরকে বললেন, তুমি যাও। দ্বিতীয়জনকে পাঠাও
এই গুপ্তচর জাদুবিদ্যা বিশারদ।
মহামন্ত্রী বললেন, তুমি কোথায় কী শুনেছ?
সে বলল, গ্রিকদের একটি ছাউনি রয়েছে জলাশয়ের ধারে। জলাশয়টি বেশ বড়। পাড়ে গাছগাছালি আছে, বড় মনোরম দৃশ্য। বাতাস কী সুন্দর ঢেউ তোলে।
আচার্য বিরক্ত হয়ে কর্কশ স্বরে বললেন, তোমার কাছে কাব্য শুনতে চাইছে কে? আসল কথা বলো।
থতমত খেয়ে গুপ্তচর সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল, আমি জল নিরোধক বস্ত্রাদি পরিধান করে তার ওপর কাঁকড়া, কুমির, শুশুক ও উদ্রমাছের তৈল লেপন করে সে জলাশয়ে বিচরণ করছিলাম। স্নানরত কয়েকজন গ্রিক সৈন্য বলাবলি করছিল, খালি হাতে দেশে ফিরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রদের কী জবাব দেবে। রাত্রে জনবসতিতে এরা হানা দিয়ে স্বর্ণ-রৌপ্য লুট করবে। একজন বলল, জেনারেল জানতে পারলে গর্দান নেবে। অপরজন বলল, এ গর্দানের ওপর অসম্মানের মস্তক রেখে কী ফায়দা হবে? আমি বরুণ দেবতার কন্যার বেশ ধরে তার স্বরে বললাম, অহিত কর্মে প্রবৃত্ত হওয়া অনুচিত। ওরা বলল, কে কে? আমি জাদুবিদ্যার মাধ্যমে মুখ থেকে ধোঁয়া ও অগ্নি নির্গমন করে ডুব দিয়ে জলের ভেতর প্রবেশ করলাম।
তুমি যাও। কথা বেশি বলো। পরের জনকে পাঠাও, বললেন মহামন্ত্রী। এই গুপ্তচর হস্তরেখাবিদ ও জ্যোতির্বিদ। বলল, ওরাই আমাকে ডেকে নিয়েছিল। ভাগ্য জানতে চেয়েছে। মানসিকভাবে বেশ দুর্বল। তাই ভবিষ্যৎ জানতে চায়।
তাদের ভবিষ্যৎ আমরা জানতে চাই না। আমাদের সম্পর্কে তাদের কোনো পরিকল্পনার কথা জানা থাকলে বলো। সম্রাটের কথায় একটু নড়েচড়ে উঠল এ গুপ্তচর। একজন জেনারেলের হাত দেখছিলাম আমি। তার ধারণা, ভারতীয় জ্যোতিষীরা ভূত-ভবিষ্যৎ সব বলে দিতে পারে। হাত দেখাকালে তার অতীতের দু-চারটি ঘটনা, যা পূর্বে জেনে নিয়েছিলাম, বললাম, মিলে গেলে আমার প্রতি তার আস্থা স্থাপিত হলো। তার চোখ দেখে এ কথা মনে হতেই আমি বললাম, যদিও স্বদেশের প্রতি আনুগত্যহীনতা, আমার মনে হচ্ছে, আপনারা এখানে থেকে না গেলেও পারতেন। গ্রিকদের শাসনাধীনে আমরা ভালোই আছি।
কার না ইচ্ছা হয় বলো অন্য দেশ দখলে রাখতে।
তাই করুন না কেন, এত সৈন্য আপনাদের। কালচক্র বলছে, আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং এ দেশে গ্রিকদের অবস্থানের সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ।
আমরা চেষ্টা করছি না, তা নয়। সম্রাট সেলুকাসও তা চাচ্ছেন। কিন্তু জেনারেল কিউকেকাস এবং প্রিন্সেস কর্নেলিয়া তা চাচ্ছে না। এ ছাড়া সম্রাট সেলুকাস নিজের ভুল বুঝতে পেরে এখন মৌর্যদের হারাতে মরিয়া।
কী ভুল?
হঠাৎ এত সৈন্যসামন্ত নিয়ে আত্মসমর্পণ করা।
সন্ধিচুক্তিতে তিনি তো স্বাক্ষর করেছেন।
তাতে কী হয়েছে?
এত কথা জেনারেল তোমাকে বললেন, সন্দেহের প্রশ্ন মহামন্ত্রীর।
তাকে আমি সংবেশন (হিপনোটাইজ) করে নিয়েছিলাম। তার সব কার্যকলাপ আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আচ্ছা, তুমি যাও। আরেকজন…
মহামন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আর শুনবার প্রয়োজন নেই, আচার্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদের সিন্ধু অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করুন। আমাদের সৈন্যদের সতর্ক করে দিন। এরা যেন সদা প্রস্তুত থাকে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
সম্রাট, আমি বলছিলাম তাদের অস্ত্রগুলো নিয়ে নিতে।
তা ঠিক হবে না, আচার্য, অস্ত্র নিয়েই এরা ফিরে যাবে। আমাদের কড়া নজর থাকবে তাদের ওপর। প্রধান সেনাপতি, তুমি তোমার পদক্ষেপ গ্রহণ করো। কোনো ভুল করলে আমি ক্ষমা করব না।