মৌর্য – ৪৪

৪৪

সম্রাটকে বিদায় জানিয়ে চাণক্য ভদ্রবাহুর তাঁবুতে গেলেন। সুবন্ধু সাথে সাথেই আছেন। ভদ্ৰবাহু চাণক্যকে স্বাগত জানিয়ে বললেন, আসুন, আসুন।

সম্রাট গান্ধারা রাজপ্রাসাদে গেলেন। তাঁকে বিদায় জানিয়ে এলাম, বললেন চাণক্য।

সঙ্গে যান নি কেন?

আমি গিয়ে কী করব?

আপনার এমনিতেও যেতে হবে।

কেন?

সে কথা পরে বলব। সম্রাট নিজেই দেখা করে বলে গেছেন তিনি গান্ধারা প্রাসাদে যাচ্ছেন।

সম্রাটের সাজসজ্জা দেখেছেন? এত সাজসজ্জা করতে কখনো দেখি নি।

সম্রাজ্ঞীর কাছে যাবেন, সাজসজ্জা তো করতেই হবে।

আপনি বলছেন, আচার্য? তা কী করছিলেন?

লিখছিলাম। কল্পসূত্রের একটা অংশ শেষ করেছি, শুনবেন?

শাস্ত্রকথা শুনলে পুণ্য হয়। কিন্তু কোনো পুণ্যই যে আমাকে রক্ষা করতে পারবে না।

পুণ্যকথা নয়, স্বপ্নের কথা। এ কথা শুনতে আপনার ক্লান্তি থাকার কথা নয়।

তাহলে শোনান, আচার্য, বলে পদ্মাসনে বসলেন চাণক্য। সুবন্ধু তাঁকে অনুসরণ করলেন।

রানি ক্ষত্রিয়াণী ত্রিশূলা স্বপ্ন দেখছেন। চৌদ্দটি স্বপ্ন। তার একটি এ রকম: সৌন্দর্যের দেবী হিমাবত পর্বতের শৃঙ্গে অবস্থিত পদ্মসরোবরের বিশাল এক পদ্মের ওপর শান্তভাবে বসে আছেন। হাতির শুঁড় থেকে যেন শক্তিশালী একটি জলধারা নেমে আসছে। দেবী সে জলধারা উপেক্ষা করে অভিজাত একটি আসনে উপবেশনরত। তাঁর পায়ের দুটি পাতা যেন দুটি স্বর্ণের কচ্ছপ, সাজিয়ে স্থাপন করে রাখা। রঙিন, মাংসল, উত্তল, পাতলা, লাল ও মসৃণ নখগুলো স্ফীত গোল যেন মাসুলে বসিয়ে দিয়েছেন দুষ্টু কোনো অলংকারশিল্পী। পদ্মের ডাঁটার মতো দুটি হাত, পদ্মপাপড়ির মতো কোমল মসৃণ। হস্ত ও পদ অঙ্গুলি নিটোল তুলতুলে। শৈল্পিকভাবে আঁকা যেন ‘কুরুবিন্দবার্তা’, সৌন্দর্যময়। হাঁটুতে পরা টোল অভাবনীয় দৃষ্টিনন্দন। মাংসল ঊরু, পেলব হস্তীশুঁড় কিংবা কদলীবৃক্ষ যেন। বিস্তীর্ণ কটিদেশ সুবর্ণ অঞ্চল, হেমপ্রভা হেমময় কোমরবন্ধনী। তাঁর শুভ্র-সুন্দর বক্ষনিম্ন প্রদেশ নাভিকুণ্ডকে আশ্রয় করে বৃত্তাকার সৌন্দর্য প্রকাশ করছে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পশমের নিম্নগামী একটি সরু রেখা মৌমাছি কিংবা মেঘেদের মতো উড়ে যাচ্ছে নিরুদ্দেশ দেশে। কটিদেশে তিনটি ভাঁজ প্রস্ফুটিত, এক হাত দ্বারাই বেষ্টন করা সম্ভব। বৃত্তাকারে শোভমান কুন্দফুলের মালায় ঢেকে থাকা পবিত্র বাটির মতো একজোড়া আদিম পাথর হলুদ আর লাল সুবর্ণ আলোকে উঁকিঝুঁকি মারছে। তাঁর শরীর অলংকারের মুক্ত আকাশ, ফুটে আছে নক্ষত্ররত্ন দামি পাথর সুবর্ণলাল হলুদ, রুপালি, সবুজ কিংবা মিশ্র তুলিতে আঁকা। গলদেশে শোভা পাচ্ছে মুক্তোর মালা। চতুর কোনো মতলববাজ শিল্পীর বোনা মুক্তো, মণি বসানো সাদা পাতলা বসন পরিধান করেছেন দেবী, দৃশ্যমান দেহের ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রত্নহার গলদেশ এবং কর্ণফুল স্কন্ধদেশ স্পর্শ করে আছে, যেন একে অন্যের সাক্ষাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। একে অন্যের প্রতি প্রভা বিস্তার করছে। কিন্তু সবটা মিলিয়ে এমন এক সৌন্দর্যমণ্ডল তৈরি হয়েছে, মনে হবে এসব অলংকার দেবীর সৌন্দর্য এবং আকর্ষণের অনুষঙ্গ মাত্র, আসল সৌন্দর্যটা দেবীর চোখ ও ঠোঁটে। তাঁর আকর্ষণীয় ডাগর ডাগর চোখ এত নিষ্পাপ যে মনে হবে পবিত্র জলে এইমাত্র ডুব দিয়ে উঠে মুক্তোঝরা হাসি হাসছে সদ্য ফোটা পদ্মফুল। দুহাতে দুটি শাপলা ছড়িয়ে রেখে দেবী মধুর ভণিতায় অঙ্গবিভঙ্গে নিজের সঙ্গে যেন মজা করছেন। মসৃণ কালো চিকন পেলব চুল ঝুলে আছে। স্কন্ধ ছুঁয়ে যেন খুঁজে পেয়েছে পুরোনো ঠিকানা। আবার, একদিন অন্ধকারে যে পথ হারিয়েছিল।

চাণক্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, এই কাব্যাংশ আপনি লিখেছেন, আচার্য?

কেন?

অবিশ্বাস্য। কী অসাধারণ, বলে শেষ করা যাবে না। একজন মহামুনি এতটা বাস্তব সৌন্দর্য মনে ধারণ করতে পারেন…হা ঈশ্বর, একেবারেই অবিশ্বাস্য। তারপর কী আছে?

শূন্য থেকে নেমে আসছে একটি ফুলবৃত্ত। নানা ফুলে সাজানো। এতে আছে সদ্য ফোটা তাজা মান্দার, চম্পা, অশোক, নাগ, পুন্নাসা, প্রিয়াংশু, শিরীষ, মদগরা, মল্লিকা, জাতি, যূথিকা, আনকোলা, কুরানতাতাক পত্র, ধর্মানকা, নবমল্লিকা, বকুল, তিলকা, বসন্তিকা, কুন্দ, অতিমুক্তা ও আম্রমুকুল। বিশ্বমণ্ডলের দশ দিকে দুর্লভ সৌরভ ছড়াচ্ছে ফুলগুলো। সে মনোমুগ্ধকর সৌরভে ছুটে আসছে নানা রকম মৌমাছি, মৌপাখি। তাদের কণ্ঠে মধুর সংগীত। কোন ফুলে ছুটে যাবে দিশা পাচ্ছে না, যেন মত্তপ্রায়। ফুলের বিচিত্র রংও প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে, তাই এরা বেসামাল, সংঘর্ষপ্রবণ হয়ে উঠেছে।

নিজের লেখা পাঠ করে ভদ্রবাহু চাণক্যের দিকে তাকালেন। চাণক্য বললেন, এত সুন্দর ফুলবৃত্ত শূন্যে ঝুলিয়ে রাখলেন, আচার্য? অথচ নিচে সৌন্দর্যের দেবী—শূন্য মাথায় বসে আছেন। আমি তাঁর মাথায় পরিয়ে দিলাম এই ফুলবৃত্ত।

অসাধারণ কাজ করেছেন, আচার্য। এবারেই দেবীর সাজ পরিপূর্ণতা পেল।

কিন্তু কী অসাধারণ কাজ আপনি করেছেন, আপনি বোধ হয় তা জানেন না। এত দিন আমি আপনাকে সংসারবিরাগী সন্ন্যাসীই ভেবেছি, কিন্তু আপনি কতটা বাস্তববাদী ও বস্তুনিষ্ঠ, এককথায় জীবনবাদী, এ কল্পসূত্র থেকে বুঝতে পারলাম।

ধন্যবাদ আপনাকে এ রকম মন্তব্য করার জন্য। সুবন্ধু, তুমি একটু ঘুরে এসো, আমরা কিছুক্ষণ আলাপ করি।

সুবন্ধু চলে গেলে চাণক্য বললেন, সম্রাটের মানসিকতার এত বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলেন?

ব্যাপারটা সহজ ছিল না।

কেন?

আগে বলুন বিচ্ছেদের ভাব কেন হলো তাঁর?

বিষণ্ণভাবের কথা জানি, বিচ্ছেদের ভাব হবে কেন?

কোনো সমস্যা হয়েছে, তা স্পষ্ট। আপনি খোঁজ নিন। আমি ভেবেছিলাম তা আপনার জানা আছে।

ঠিক এ সময়ই সুবন্ধু হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলেন। চাণক্যকে উদ্দেশ করে বললেন, মহামন্ত্রী, আপনাকে এখনই যেতে হবে।

দুর্ঘটনা কোনো?

সুবন্ধু বললেন, গেলেই দেখবেন, আচার্য।

চাণক্য ফিরে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক। দুজন গ্রিককে ধরে এনে বেঁধে রাখা হয়েছে। একজনকে তিনি চেনেন। প্রহরীকে বললেন, ওদের বাঁধন ছেড়ে দাও

প্রহরী তাই করল। চাণক্য বললেন, প্রিন্সেস, আপনি এখানে কী করে?

আপনি আমাকে চেনেন? আপনাকেও কোথায় যেন দেখেছি। আমরা আপনাদের সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। ওরা ধরে নিয়ে এল।

যুদ্ধাবস্থা চলছে, তাই ওরা ভুল করে নি, বলে হাসলেন চাণক্য। আপনার পরিচয় দেন নি এখনো, বললেন কর্নেলিয়া।

সুবন্ধু বললেন, তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের মহামন্ত্রী আচার্য চাণক্য।

প্রিন্সেস, আপনার পরিচয় আমি জানি, আপনার সঙ্গে যিনি এসেছেন, তিনি…

তিনি আমার কাজিন, নিকোমেডেস।

নিকোমেডেস এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। চাণক্য তাঁকে খাতির করে বসালেন। এবারে সুবন্ধু অন্য সবাইকে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বললেন এবং কক্ষে তাঁদের দুজনের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলেন।

নিকোমেডেস বসে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিল। সে আসলে বুঝতে দিতে চাচ্ছিল না যে সে একজন সামরিক অফিসার। চাণক্য ভাবলেন, সে-ও একজন সাধারণ কৌতূহলী প্রিন্স ছাড়া আর কিছু নয়।

কর্নেলিয়া বললেন, আমি বোধ হয় ঠিক জায়গায় এসেছি। আমার এখন সম্রাটের সঙ্গে

সাক্ষাৎ সহজ হবে।

নিশ্চয়ই হবে। তবে আপনারা অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। আপনাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।

আমরা তো যুদ্ধ করতে আসি নি। এখানে ব্যবসারত গ্রিকরা নেই, এমনও তো নয়, বলল নিকোমেডেস।

চাণক্য বললেন, অনেক গ্রিক এখানে আছে। তাদের পরিচয়ও আছে। অপরিচিত কেউ এলে তাকে বন্দী করা হয়। এ ছাড়া এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রিন্সেস কর্নেলিয়া বললেন, তা ঠিক। নিকো, তুই ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিস, বলে হাসলেন। আবার বললেন, যা-ই হোক, বিপদ কেটে গেছে। এখন মহামন্ত্রী, আপনি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করুন।

আমি ব্যবস্থা করছি। আপনারা বিশ্রাম নিন। তার আগে হালকা আহার্য গ্রহণ করুন। সম্রাট জানতে চাইতে পারেন কী নিয়ে আলাপ করতে চান। তখন কী বলব?

বলবেন, আমরা সেলুসিড সম্রাটের দূত। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সম্রাটের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।

কারণটা যৌক্তিক, বলে হাসলেন চাণক্য। সম্রাট কি যুদ্ধবিরতি চাইছেন?

আলোচনার ওপর নির্ভর করছে।

তা ঠিক, তা ঠিক। তবে আলোচনায় আমার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

বেশ তো, মানসিক প্রস্তুতি নিন, বলে আবার হাসলেন প্রিন্সেস। আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রচুর প্রশংসা শুনেছি।

কে করল এই প্রশংসা?

অনেকেই। নাম বলতে চাই না, কারণ, আপনার যারা শত্রু, এরা ওদের ক্ষতি করতে পারে।

সে-ই ভালো।

আমার জন্য কি আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

কী রকম পরামর্শ?

এই ধরুন, সম্রাটের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে কোন দিক রক্ষা করে বলতে হবে, কী বললে তিনি খুশি হবেন, আমি সুবিধা পাব—এসব আরকি। আবার ক্ষুব্ধ হয়ে যান, এ রকম কিছু বলবেন না যেন।

না, তা বলব না, আপনার পক্ষে যায়, এমন কথাই বলব। তবে এখানে নয়, আলোচনা অনুষ্ঠানে।

তার অর্থ আপনি আমাকে প্রস্তুতির সুযোগ দিচ্ছেন না।

না না, আমি আপনাকের প্রচুর সুযোগ দিচ্ছি। বিভ্রান্ত করছি না। কারণ, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তার নিয়ন্ত্রণ কার কাছে থাকবে, এখনই তা বলা সম্ভব নয়। আন্দাজ করে কিছু বললে আপনি বিভ্রান্ত হবেন।

আচ্ছা। বেশ, এখন আহার্য আনুন, খেয়ে বিশ্রাম করব। তারপর সম্রাট সন্দর্শনে যাব।

চাণক্য সুবন্ধুকে ডাকলেন। বললেন, এঁরা আমাদের রাজকীয় অতিথি। সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। এঁদের সবচেয়ে অভিজাত অতিথিশালায় রাখতে হবে। সেবায় যেন কোনো ত্রুটি না হয়। যেন যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

যুদ্ধক্ষেত্রের অতিথিশালা। এর আভিজাত্য সে রকমই। তবে পাহাড়ের ওপর বলে সিন্ধু নদীটা দেখা যায় স্পষ্টভাবে। উদার আকাশ যত দূর দৃষ্টি যায়। বাতাসটা শুধু শরীর নয়, হৃদয়টাও স্পর্শ করে। কর্নেলিয়ার জায়গাটা পছন্দ হলো। দাঁড়িয়ে দুহাত ছড়িয়ে, চোখ-মুখ বন্ধ করে দুরন্ত বাতাসে প্রবলভাবে নিঃশ্বাস নিলেন।

এতক্ষণ নিকোমেডেস কোনো কথা বলে নি। এখানে এসে বলল, তোর কি মনে হয় পেছনে চুলে টিকলি বাঁধা টাকওয়ালা মন্ত্রীটা তোকে সাহায্য করবে?

না, করবে না।

তাহলে?

যেটুকু সুবিধে পাওয়া গেছে, তাকে তুচ্ছ করে দেখিসনে। সে যে আমার সঙ্গে মজা করছিল, তা আমি বুঝে গেছি। পথটা আমাদেরই বের করতে হবে। প্রথমে জানতে হবে সম্রাটের অবস্থান কোথায়?

তুই ঠিক ধরেছিস।

কী সুন্দর জায়গা দেখেছিস। তুই যদি আমার প্রেমিক হতি না, এখন হৃদয়টা উজাড় করে দিতাম।

তোর হৃদয় উজাড় হয়ে গেছে। আমি তোর আচরণে সে রকম বিজয় আনন্দই দেখতে পাচ্ছি।

ইশ্, তুই যদি ফাওলিনকে এখানে নিয়ে আসতিস।

আমি তোর পাগলামিই এখন দেখছি।

তুই বুঝবিনে…আমার ভেতর কেন এত সমারোহ, আমিও বুঝতে পারছি না।

নিকোমেডেস তার কারণ হয়তো কিছুটা অনুধাবন করতে পারছে। কিন্তু বলছে না। তার আশঙ্কা, কর্নেলিয়া সম্রাটের সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করবেন, তা সামাল দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে কি না।

আহার্যের ব্যবস্থা হয়েছে, তাঁদের আহার্য গ্রহণের ডাক পড়েছে। হাতমুখ ধৌত করে আহারে বসতে হবে কি না।

তাদের আলাদা আলাদা টেবিলে খাবার খেতে বসানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে এটাই রীতি। পরবর্তী সময়ে মেগাস্থিনিসও সে কথা বলেছেন। কর্নেলিয়া বললেন, আমরা মুখোমুখি বসে খাবার খেতে অভ্যস্ত, সেভাবে টেবিল বসানোর ব্যবস্থা করুন।

সেভাবে টেবিল সাজানো হলো। খেতে খেতে কর্নেলিয়া বললেন, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কী সিদ্ধান্ত?

এখন বলা যাবে না, সময়-সুযোগ হলে জানাব।

সুবন্ধু ফিরে এলেন। চাণক্য বললেন, বসো, কথা আছে। ঠিকমতো প্রিন্সেস অতিথিশালায় পৌছে গেছে তো?

আচার্য, কোনো সমস্যা হয় নি।

বেশ, সেখানেই থাকুক।

গান্ধারা প্রাসাদে নিয়ে যাবেন না?

তোমার কী মনে হয়?

বুঝতে পারছি না।

সুবন্ধু, এখন যা বলব, কান দিয়ে শুনবে, কিন্তু অন্য কানে যাবে না এ কথা, হজম করে ফেলতে হবে। আমি যদি প্রিন্সেসকে সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিই, তাহলে দুটি ব্যাপার ঘটতে পারে। এক. সম্রাটের সঙ্গে গ্রিকদের একটি সমঝোতা হয়ে যেতে পারে সিন্ধু এলাকা গ্রিকদের দখলে রেখেই। দুই. সম্রাট প্রিন্সেসকে পেয়ে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দিতে পারেন। দুটিই অগ্রহণযোগ্য। তাই কোনো অবস্থায়ই সম্রাটকে প্রিন্সেসের উপস্থিতির কথা জানানো যাবে না।

তাহলে এদের হত্যা করার আদেশ দিই।

সর্বনাশ, তোমার মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই নাকি? প্রিন্সেসের মৃত্যু আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে, তা একবার ভেবেছ?

তাহলে বুঝিয়ে-সুজিয়ে গ্রিক এলাকায় পৌঁছে দিই।

না, তা-ও হবে না। সেলুকাসকে জব্দ করার জন্য প্রিন্সেস হবে তুরুপের কার্ড। আমরা এ সুযোগ কেন হারাতে যাব? তোমার এখন দায়িত্ব হচ্ছে প্রিন্সেসকে সবার অগোচরে এখানে আরাম-আয়েশে রাখা। বাকিটা আমি দেখছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *