মৌর্য – ২৭

২৭

সাম্রাজ্যের দাপ্তরিক কাজ শুরু করার আগে চন্দ্রগুপ্ত তাঁর আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে গেলেন। ভদ্ৰবাহু তখন ব্যস্ত উপসংঘাম স্ত্রোত্রের নিবিড় প্রার্থনায়। তাঁর শিষ্যরা ঘিরে আছেন তাঁকে। সম্রাটের আগমনে এঁরা সরে গিয়ে সম্রাটকে আসন গ্রহণের জায়গা করে দিলেন। সঙ্গে এসেছেন চাণক্যও। এতে প্রার্থনা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ভদ্রবাহু বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে স্মিত হেসে বললেন, সম্রাট ও মহামন্ত্রীর আগমনে ভালোই হলো। উপসর্গ স্ত্রোত্র একটি রাজকীয় মাত্রা পেল।

সম্রাট বললেন, আমি জানতাম না, আচার্য, এ রকম একটি প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। বিঘ্ন ঘটায় ক্ষমা করবেন।

মহামান্য সম্রাট, আমরাও এ প্রার্থনায় যোগ দিতে পারি, কারণ, সমস্যাটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে, বললেন চাণক্য।

২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শবনাথের প্রতি উপাসনামন্ত্রের উদ্যোক্তা আচার্য ভদ্রবাহু। তাঁর উদ্দেশ্য সব আপদ থেকে মানুষদের রক্ষা করা।

আজ বরং আমরা সম্রাটকে সময় দিই, আগামী দিন উপাসনা করব, বললেন ভদ্রবাহু। সম্রাট বললেন, আচার্য, তা-ই হোক। আমরা গ্রিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান পরিচালনার পুনঃপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। বিষয়টি আপনাকে অবহিত করার জন্য এখানে আসা।

মহামন্ত্রী চাণক্য আমাকে আগেই ব্যাপারটা সম্পর্কে আভাস দিয়েছেন। এ নিয়ে আমি ভেবেছি। যুদ্ধের ফলাফল মৌর্যদের পক্ষে যাবে। তবে এই যুদ্ধটাও বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চাণক্য বললেন, আমরা যতটা সম্ভব যুদ্ধের সময় কমিয়ে আনতে চাইব। কারণ, গ্রিকদের মধ্যে এখন যে আন্তঃকলহ, যুদ্ধের সময় বিলম্বিত হলে তাদের মধ্যে আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্য তৈরি হয়ে যেতে পারে। তাদের ঐক্য বা মিলিত শক্তির মুখে লড়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

শত্রুর শত্রু মিত্র। আমরা এন্টিগোনাসের সঙ্গে মৈত্রীর কথা ভাবছি না কেন?

সম্রাটের এ প্রশ্নের জবাবে চাণক্য বললেন, আমাদের সীমান্তবর্তী নয় বলে মৈত্রীর পথে তা একটি বড় বাধা। আমাদের গোয়েন্দারা সেখানে আছে। তাদের মনোভাব বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভদ্রবাহু বললেন, মৈত্রীর চাইতে বড় প্রয়োজন হচ্ছে শত্রুকে দুর্বল করে রাখা। আমার কাছে সংবাদ আছে, এখানকার কেউ কেউ সেলুকাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা নাকি এখানে ওদের স্বাগত জানাতে চায়।

আচার্য, এ সংবাদ আমিও পেয়েছি। আপনি মনে হয় রাক্ষসপত্নী সর্বাণী দেবীর কথা বলছেন।

না, আমার কাছে সংবাদ, মলয়কেতু সেদিকে হাত বাড়িয়েছেন।

সম্রাট বললেন, আচার্য মহামন্ত্রী, ব্যাপারটা গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

এখন মলয়কেতু খুবই দুর্বল, তবু লোক লাগাচ্ছি আমি। তবে আমার কাছে সংবাদ হচ্ছে, তাঁর সেনাপতি রাক্ষসের পত্নীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সম্ভবত এখনো সে স্বপ্ন দেখছেন। মলয়কেতুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।

দুর্বল মানুষ হালে জল লাগলে সবল হয়ে ওঠে। মলয়কেতুকে বিশ্বাস করা যায় না। তাঁর দিকেও দৃষ্টি দিন, আচার্য, বললেন সম্রাট।

.

এদিকে দিদাইমেইয়া কর্নেলিয়াকে নিয়ে আফ্রোদিতের মন্দিরে গেছেন। দেবীমূর্তির সামনে বসে পুরোহিতকে মাঙ্গলিক আরাধনার অনুরোধ জানালেন। এখানে যুবতী মেয়েরা কেন আসে, পুরোহিত তা ভালোভাবেই জানেন। তিনি সে রকম আরাধনা করে প্রেম ও ভালোবাসার বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য দেবতার কাছে বর চান। সম্রাটের পরিবারের সদস্য হলে পুরোহিতের মাঙ্গলিক আরাধনার মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কর্নেলিয়ার দাদা অ্যাপোলোর সন্তান বলে দাবি করতেন। তাই দিদাইমেইয়া সেখান থেকে অ্যাপোলোর মন্দিরে গেলেন। যাওয়ার পথে কর্নেলিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, চন্দ্রগুপ্তের ধর্ম কী রে?

জানি না, পিসি। ভারতীয় ধর্ম একটা হবে, হয়তো হিন্দুধর্ম।

না জেনে কথা বলবি না। ভারত হচ্ছে এক অদ্ভুত জায়গা। কত ধর্ম ও বর্ণের লোকজন সেখানে আছে, তা হিসাব করে বলা শক্ত। আলেকজান্ডার বহু উলঙ্গ দার্শনিককে তাঁর সভায় উপস্থিত করেছিলেন।

সম্রাট পত্রে হিন্দু দেব-দেবীর কথা লিখেছিলেন। আমাদের মতো নাকি ওঁদেরও অনেক দেব- দেবি আছে।

কর্নেলিয়াদের ধর্ম গ্রিক পলিথিজম। দেবরাজ জিউস হচ্ছেন তাঁদের প্রধান দেবতা। হিন্দু সনাতন ধর্মে যেমন দেবরাজ ইন্দ্র। দুই ধর্মেরই আছেন আরও বহু দেবতা।

অ্যাপোলোর কাছে চন্দ্রগুপ্তের জন্য আশীর্বাদ চাইবি। অ্যাপোলো আমাদের নিজস্ব দেবতা, বললেন দিদাইমেইয়া।

কর্নেলিয়া দেখলেন, পিসি একেবারে চন্দ্রগুপ্তের পক্ষে চলে গেছেন।

পিসি, ওর জন্য কেন আশীর্বাদ চাইব, সে তো সত্য লুকিয়েছে যে সে বিবাহিত। সম্রাটদের একাধিক স্ত্রী থাকতে বাধা নেই, অবশ্য তুই যদি চাস।

পিসি, তুমি কী বলতে চাচ্ছ, বুঝতে পারছি না। সেদিন বললে ভুলে গেলে ভালো হয়। আর আজ…

কারও মঙ্গল চাইতে তো বাধা নেই। নিজের পাশাপাশি অন্যের মঙ্গল চাওয়া উত্তম, এতে দেবতারা খুশি হন।

.

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত ও মহামন্ত্রী চাণক্য প্রাসাদে ফিরে এসেছেন। যথারীতি সম্রাটকে ঘিরে রেখেছে নারী নিরাপত্তাকর্মীরা। সম্রাট ভাবলেন, যুদ্ধে যাওয়ার আগেই হেলেনকে বড় করে একটা পত্র লিখে যাবেন। কী কী লেখা যায়, তার টোকা নিচ্ছেন। ঠিক এ সময় বরাহ মিহিরের প্রেত উপস্থিত হলো।

মহামান্য সম্রাট!

কে তুমি?

আমাকে চিনতে পারলেন না, সম্রাট, আমি আচার্য বরাহ মিহির।

সব নারী রক্ষী ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কী করবে এরা বুঝতে পারছে না। সম্রাট বললেন, তুমি তো মারা গেছ, এখানে এলে কী করে? বাইরে কেউ তোমাকে বাধা দেয় নি?

সম্রাট, আমি সব বাধা-ধরার ঊর্ধ্বে। ক্ষমা করবেন, সমস্যা হচ্ছে, আমি বলেকয়ে আসতে পারি না।

কী চাও তুমি?

বিচার চাই। ভদ্রবাহুর বিচার, মৃত্যুদণ্ড।

তার অপরাধ কী?

সে আমাকে ঠকিয়ে শ্রুতকেবলী হয়েছে।

তিনি তোমাকে ঠকাবেন কেন? উপযুক্ত বিবেচনায় গোবর্ধন আচার্য তাঁকে শ্রুতকেবলী পদে অধিষ্ঠিত করেছেন।

আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী।

মোটেই না, তুমি তোমার মিথ্যাচারের জন্য মরেছ। তুমি মিথ্যে বলে সম্রাজ্ঞী ও আমাকে মিথ্যে আশায় আশান্বিত করেছ, আবার গভীর হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছ।

এর জন্য আমি না, ভদ্ৰবাহু দায়ী।

কে দায়ী, তা এখন স্পষ্ট, তুমি যাও, কখনো এখানে আসবে না।

আমি অবশ্যই আসব। আপনারা ভদ্রবাহুর বিচার না করা পর্যন্ত আসব। শ্রুতকেবলী হওয়ার জন্য আমার তৃষিত আত্মা বারবার আসবে।

এ কথা বলে মিলিয়ে গেল মিহিরের প্রেতাত্মা।

সম্রাট চিন্তায় পড়ে গেলেন। ডেকে পাঠালেন মহামন্ত্রীকে। আচার্য এলেন তাঁর শিষ্য সুবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে।

সম্রাটের কথা শুনে চাণক্য বললেন, তার প্রেতাত্মা আমার কাছেও ভদ্রবাহুর মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। উৎপাত করছে সে সর্বত্র। তাই ভদ্রবাহু ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা গিয়ে তাঁকে একদিন পিছিয়ে দিলাম।

ভদ্রবাহুর কাছে আপনি সুবন্ধুকে পাঠান। আজই যেন তিনি ব্যবস্থা নেন। এ উৎপাত আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করবে। যুদ্ধযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাবে।

জানমালেরও তো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, বলে চাণক্য একটি ছোট্ট পত্র লিখে সুবন্ধুকে ভদ্রবাহুর কাছে পাঠালেন।

.

সেলুকাস গেলেন হেরাক্লিসের মন্দিরে। হেরাক্লিস শক্তির দেবতা, বীরদের আরাধ্য। নতজানু হয়ে বসে হেরাক্লিসের কাছে যুদ্ধজয়ের বর চাইলেন তিনি। অতপর গেলেন যুদ্ধদেবতা এরিসের কাছে। এরিস জিউস ও হেরার সন্তান। কিন্তু সেলুকাসরা অ্যাপোলোর ভক্ত, হেরার সন্তানের কাছে যাওয়ায় অ্যাপোলোর মা লেতু দারুণ ক্ষুব্ধ হতে পারেন বলে সেলুকাসের ভেতর একটি সংস্কার বা আশঙ্কা কাজ করছে। এরিসের সঙ্গে এথেনারও বিরোধ আছে। দেবী এখনো বীরদের পৃষ্ঠপোষক। যুদ্ধ পরিকল্পনায় তার সমকক্ষ কেউ নেই। যুদ্ধেরও দেবী বলা তাঁকে। সেলুকাস ভাবলেন, তাঁকেও খুশি করতে হবে।

এথেনার মন্দিরে যেতেই একটা হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়লেন তিনি। যৌবনকালে এ ঘটনাকে তিনি তুচ্ছ জ্ঞান করতেন, তাঁর ভেতর কোনো অমঙ্গল আশঙ্কা কাজ করত না, এ বৃদ্ধ বয়সে করছে। এথেনা মন্দিরের পুরোহিতকে ঘটনাটা বললেনও তিনি। পুরোহিত একটু ভেবে নিয়ে বললেন, সম্রাট এথেনা আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন, যাতে আপনি সতর্ক থাকেন।

তবু সম্রাটের মধ্যে কেমন যেন একটা আশঙ্কার কাঁটা বিদ্ধ হয়ে আছে। যুদ্ধের আগে প্রতিবারই তিনি দেবতাদের কাছে যান যুদ্ধজয়ের অভিপ্রায়ে। কখনো অবশ্য এমনটি হয় নি। তবু তিনি মন শক্ত করলেন। দেবতা অ্যাপোলোর ইচ্ছায় জয় গ্রিকদেরই হবে।

সুবন্ধুর কাছে সম্রাটের ইচ্ছার কথা জানতে পেরে আচার্য ভদ্রবাহু স্থুলভদ্রকে ডাকলেন। পরামর্শ করলেন জ্যেষ্ঠ আচার্য ও শিষ্যদের সঙ্গে।

স্থুলভদ্র জানালেন, উপসর্গ স্তোত্রের কোনো সময় নির্ধারণ করা নেই। ভদ্রবাহু বললেন, তা নেই, কিন্তু নৈশকালীন উপসর্গ স্তোত্রের কোনো দৃষ্টান্তও নেই। যা-ই হোক, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে আপদ তাড়াতে হলে দিবারাত্রির মধ্যে পার্থক্য করলে চলবে না।

আবার শুরু হলো উপসংঘাম মন্ত্রপাঠ। মন্ত্রের সুরমূর্ছনা এবং মন্ত্রের আধ্যাত্মিক শক্তিতে বরাহ মিহিরের দুষ্ট প্রেত হাজির হয়ে গেল এবং চিৎকার করে বলতে থাকল, ভদ্রবাহু, তুমি আমাকে ধ্বংস করতে পারবে না। আমি তোমাকে ও তোমার অনুসারীদের ধ্বংস করে দেব।

স্থুলভদ্র এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন, অতৃপ্ত প্রেতাত্মা, আমরা তো তোমাকে ডেকে আনি নি। তোমার শেষ পরিণতি দেখার জন্য নিজেই এসেছ। সহ্য করতে পারবে তো?

ভদ্রবাহু হাতের ইশারায় স্থুলভদ্রকে থামিয়ে দিলেন। উপাসনা উচ্চমন্ত্র উচ্চারণে প্রায় প্রলয়ঙ্করী রূপ লাভ করেছে। স্বর্গ-মর্ত-পাতাল এক হয়ে যাওয়ার অবস্থা। বরাহ মিহিরের ক্ষতিকর আত্মা প্রথমে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হইচই করতে শুরু করল। পরে একেবারে নত হয়ে এল এবং পৃথিবীতে থাকার জন্য কাকুতি-মিনতি শুরু করল। বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিন, মহামুনি, আমি ভুল করেছি। এ ভুল আর কখনো হবে না।

তোমাকে জ্বালিয়ে ছাই করব না, মিহির, নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেব, যাতে তুমি অন্য কোনো পুণ্যবান ব্যক্তির আত্মায় রূপান্তরিত হতে পারো, বললেন ভদ্রবাহু। কিছুক্ষণের মধ্যেই বরাহ মিহিরের আত্মা বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে গেল মুক্ত বিহঙ্গের মতো

(উপসংঘাম স্তোত্র একটি শক্তিশালী মন্ত্র বলে এখনো জৈনরা বিশ্বাস করেন এবং সংকটকালে এ মন্ত্রপাঠের উপাসনার ব্যবস্থা করেন। মন্ত্রটি অবশ্য তার দুটি পঙ্ক্তি হারিয়ে ফেলেছে।)

এই উপাসনায় জৈনদের মধ্যে শান্তি ফিরে এল। ভদ্রবাহু স্বস্তিবোধ করলেন। সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করলেন চাণক্য। তিনি মিহিরকে নিয়ে প্রায়ই মজা করতেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল, মিহিরের প্রেত তাঁর বেশ ক্ষতি করতে পারে। ভাবলেন, এবার নিশ্চিন্তে যুদ্ধে যাত্রা করা যাবে। সম্রাট স্বয়ং তাঁর আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে এসে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানালেন। সাম্রাজ্যে মহামারি আকারে যে প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে, এর নিরাময়ের জন্য আশীর্বাদ চাইলেন।

এরই মধ্যে কিছু মানুষের ক্ষতি হয়ে গেছে, সম্রাট তাঁর মহামন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বললেন।

চাণক্য বললেন, প্রজাদের সাহায্য না দিয়ে অর্থ বা ধান-চাল ধার দেওয়া উত্তম।

(সন-তারিখ ছাড়া একটি শিলালিপিতে এ তথ্য পাওয়া যায়।

সম্রাট তাতে বিরক্ত হলেন, কিন্তু চাণক্যকে বুঝতে দিলেন না। বললেন, শুধু ফসলের ক্ষতি হলে ধারে ধান-চাল দেওয়া হয়, জানমালের ক্ষতি হলে সাহায্য দেবেন, অনুদান দেবেন।

চাণক্য আর কথা বাড়ালেন না। চাণক্য কর বাড়ানোর পক্ষপাতী। অনুদান দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর অনীহা সর্বজনবিদিত। এখনো কর বাড়ানোর প্রসঙ্গ তুললেন। বললেন, যুদ্ধে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আপনি অনুমতি দিলে কর্মান্তিক (পরিচালক) গোপদের (রাজস্ব কর্মকর্তা) বলুক কর বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দিতে।

আমাদের নন্দরাজ্য জয়ের পর স্বর্ণসহ বহু সম্পদ হস্তগত হয়েছে। ওই সম্পদের হিসাব নেওয়া হয় নি নানা ঝামেলায়। আপনি বরং সামানধর্তকে (কোষাধ্যক্ষ) বলুন একটি পরিপূর্ণ হিসাব পেশ করতে। তারপরও প্রয়োজন হলে কর বাড়ানো যাবে

যুদ্ধের আগে সব বিষয়েই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। চাণক্য অন্ত পাল, অন্তরবিংশক দৌবারিক, পৌরব্য বাহারিক ও প্রদেশত্রিদের নিয়ে বসলেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিলেন তাঁদের। এঁরা চলে গেলে চাণক্য পাচককে ডেকে পাঠালেন। পাচক মাথা নিচু করে দাঁড়াল। চাণক্য বললেন, বিষের মাত্রা বাড়াবে। খাদ্যের স্বাদ যাতে নষ্ট না হয়। আর সম্রাট যেন সে কথা কখনো জানতে না পারেন। অন্য কেউও জানবে না। এ খাদ্য ভুলেও অন্য কাউকে দেবে না।

জি আচ্ছা, বলে পাচক বিদায় হলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *