১০
পরদিন সকালবেলায় চাণক্য রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হলেন। তাঁর সঙ্গে প্রধান সেনাপতি। সম্রাটের জন্য অপেক্ষা করছেন এঁরা। চাণক্য প্রধান সেনাপতিকে বললেন, আমি যা বলেছি, মনে আছে তো, বিজয়গুপ্ত?
সব মনে আছে, মাননীয় মহামন্ত্রী। আপনার কথায় জোর সমর্থন দিতে হবে।
মনে থাকে যেন।
জি।
সম্রাট এলে উভয়ে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন। সম্রাট তাঁদের বসতে ইঙ্গিত করলেন।
চাণক্য বললেন, মহামান্য সম্রাট, আমাদের গোয়েন্দারা পূর্ব থেকেই নন্দরাজ্যের খোঁজখবর নিচ্ছিল। একবার পরাজয়ের পর নন্দরাজ শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
তাহলে কী বলতে চান? অভিযান বন্ধ করতে হবে?
না সম্রাট, অভিযান বন্ধ করা যাবে না। তবে একটা কাজ করতে হবে।
ওদের সৈন্যবলের অবস্থা তো জানালেন না।
এটা প্রধান সেনাপতি বলুন।
মহামান্য সম্রাট, আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, ওদের হস্তী, অশ্ব, রথী ও পদাতিক মিলে প্রায় এক শ সহস্রাধিক সৈন্য রয়েছে। এ ছাড়া তাদের একটি মিত্র জোট রয়েছে, যারা যুদ্ধে পরস্পরকে সহায়তা করতে চুক্তিবদ্ধ।
আচার্য, এবার আপনি বলুন কী বলতে চাচ্ছিলেন।
সম্রাট, আমি বলতে চাচ্ছিলাম প্রতিবেশী রাজ পর্বতেশ্বরের সঙ্গে আমরা মৈত্রী ও জোট গঠন করি না কেন।
পর্বতেশ্বর মানে পুরু? তিনি যুদ্ধে কেন আমাদের মিত্র হবেন? তাঁর কী লাভ?
তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তি হবে আমাদের।
শর্ত কী?
শর্ত কয়েকটি থাকবে। প্রধান শর্ত হবে নন্দরাজ্যের ভাগাভাগি। অর্ধেক পর্বতেশ্বর নেবেন, অর্ধেক আমরা।
তিনি কি রাজি হবেন?
আমি রাজি করাব।
আমাদের একক শক্তিতে জয় করা সম্ভব নয়?
প্রধান সেনাপতি বললেন, সম্ভাবনা খুবই কম, মহামান্য সম্রাট।
সম্রাট কিছুটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, তুমি একটা ভিতুর ডিম। সেনাপ্রধান হয়েছ, সাহস রাখো না। তোমাকে সেনাপ্রধান করাই ভুল হয়েছে।
ক্ষমা করবেন, মহামান্য সম্রাট, সে ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারে নি, আমি বলছি। যুদ্ধের মাঠে যাওয়ার আগে সঠিক তথ্য, নির্ভুল পরিকল্পনা এবং শত্রুর শক্তি ও দুর্বলতা না জানলে যুদ্ধ জয় করা যায় না। আমরা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে শত্রুর প্রকৃত শক্তির অবস্থাও জানতে পেরেছি। এখন আমাদের পরিকল্পনা এমন এক শক্তিধর মিত্রকে যুক্ত করতে হবে, যার সহযোগিতায় আমরা নিশ্চিতভাবে যুদ্ধ জয় করতে পারব।
পর্বতেশ্বরের সৈন্য সম্পর্কে কোনো তথ্য নিয়েছেন?
নিয়েছি সম্রাট। আলেকজান্ডারের সঙ্গে পরাজয়ের পর তিনি প্রচুর সৈন্যশক্তি জোগাড় করেছেন। তাঁর সেনাবাহিনীতে বাহলিক, কিরাত, পারসিক, কম্বোজ, শক, যবন—সব রকমের সৈন্য রয়েছে।
তবে তিনি সাহসী এক রাজা। আলেকজান্ডারের সৈন্যরা তাঁকে বন্দী করে নিয়ে গেলে আলেকজান্ডার প্রশ্ন করেন, রাজাকে বন্দী করে নিয়ে আসার অর্থ মৃত্যুদণ্ড অথবা বশ্যতা স্বীকার করা। তুমি কী চাও আমার কাছে?
তিনি নির্ভীক বীরের মতো বললেন, আমি কিছুই চাই না। শুধু রাজার কাছে আরেকজন রাজার মর্যাদা চাই।
তাঁর নির্ভীক জবাবে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। সৈন্যদের বললেন, রাজার হাতের বাঁধন ছেড়ে দাও। তাঁকে সসম্মানে আমার দরবারে নিয়ে এসো। পুরু দরবারে এলে তাঁকে হৃত রাজ্যই শুধু ফিরিয়ে দিলেন না, ‘ফাই ফান্সিস’ রাজ্যের শাসনকর্তাও (রাজা) বানিয়ে দিলেন। (গ্রিক ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর গ্রিক জেনারেল ইউদেমাস পুরুকে হত্যা করেন। কিন্তু এদেশীয় ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতেরা মনে করেন, পুরু নিহত হন নি, পালিয়ে গিয়ে পার্বত্য এলাকায় রাজ্য গঠন করেছেন। উল্লেখ্য, এক পার্বত্য উপজাতি সন্তান ছিলেন পুরু।
তিনি সম্মানের সঙ্গে মুক্তি পেলেন। আমি নিজে ওই দৃশ্য দেখেছি। আচার্য, আপনি মৈত্রী প্রস্তাব নিয়ে যান। তাঁকে আমার ভক্তিও জানাবেন। আশা করি যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সাক্ষাৎ ঘটতে যাচ্ছে।
প্রধান সেনাপতিকে নিয়ে চাণক্য বের হয়ে এলেন। পরদিন পর্বতেশ্বরের রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করলেন। নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া সঙ্গে নির্জলাকে নিয়ে গেলেন। নির্জলা আজ চাণক্যের স্ত্রী সেজে সঙ্গী হয়েছে। চাণক্যের নিরাপত্তা রক্ষীরা কিছু বলার আগেই চাণক্য স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, শুধু দেখে যাও, কোনো প্রশ্ন করবে না। সব বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখবে।
রাজা পর্বতেশ্বর চন্দ্রগুপ্ত ও চাণক্যকে ভালোভাবেই জানেন। বয়স হয়েছে। অভিজ্ঞতাও অনেক। বললেন, মাননীয় মন্ত্রীপ্রবর, আপনি যেসব শর্তের কথা বলছেন, তা মেনে চলবেন, তার নিশ্চয়তা কী?
মাননীয় মহারাজা, শর্তের খেলাপ হবে না, এই আমার স্ত্রীকে আপনার কাছে জিম্মি রেখে গেলাম।
রাজা পুরু অবাক হয়ে গেলেন। এ রকম ঘটনা তিনি জীবনেও দেখেন নি বা কারও মুখে শোনেন নি। তিনি বললেন, আচ্ছা, প্রস্তাবটা মন্দ নয়।
চাণক্য বললেন, একটি অনুরোধ, মহারাজ।
বলুন, কী অনুরোধ?
তাঁর সম্ভ্রম রক্ষা…
বুঝতে পেরেছি, তিনি আমার ব্যক্তিগত নজরদারিতে থাকবেন। চাণক্য তা-ই চাচ্ছিলেন, এখানকার নিত্যদিনের খবর তাঁর জানা চাই। বললেন, আমি কি যাওয়ার সময় একান্তে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি?
নিশ্চয়। আপনি স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, এতে আপত্তি থাকবে কেন?
চাণক্য নির্জলাকে এখানকার কাজ বুঝিয়ে দিলেন, বললেন, কোনো ভয় নেই। আর আমি শুধু তোমার ওপরই নির্ভর করতে পারি।
চাণক্য চলে গেলে নির্জলা কান্নার অভিনয় করল। রাজা বললেন, ভয় নেই আপনার, আপনি এখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন, সব বিষয়ে আপনি নিরাপদ।
রাজকীয় অতিথিশালায় তার স্থান হলো।
রাজা পুরু স্বস্তির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে দিলেও নতুন ঝামেলায় পড়লেন। রানি পরদিনই রাজাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাজকীয় অতিথিশালায় মেয়েটি কে? এই বুড়ো বয়সে তোমার কী ভীমরতি ধরেছে?
রাজা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, রানি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি কিছু শুনতে চাই না, তুমি তাঁকে বিদায় করো। এত দিন শান্তিতে ছিলাম, তুমি আর শান্তিতে থাকতে দিলে না।
রাজা কাঁচুমাচু করে বললেন, মহারানি, প্রিয়তমা আমার, আমাকে ভুল বোঝো না। একটু কথা বলতে দাও।
বলো তুমি কী বলবে। মিথ্যে বললে আমি বাপের বাড়ি চলে যাব। তোমার রাজ্যে আগুন লাগিয়ে দেব।
আচ্ছা আচ্ছা, তা দিয়ো। এ মহিলা নন্দরাজ্যের পুরো অর্ধেক।
কী বলছ তুমি ছাইভস্ম। এক নারী একটি রাজ্যের অর্ধেক হয় কী করে?
বলছি শোনো, কাউকে জানাবে না যেন, মন্ত্রী, সেনাপতি–কাউকে না। রাজা আদ্যন্ত সব ঘটনা বললেন।
মহারানি বললেন, মন্ত্রীকে আটকে রাখলে না কেন? তোমরা শুধু নারীদের শাস্তি দিতে পারো। বেচারির কী অসুবিধাই না হচ্ছে।
তুমি কী করতে চাচ্ছ?
তোমার কিছু করতে হবে না, মন্ত্রীপত্নী রাজপ্রাসাদেই থাকবেন।
এ সংবাদ চাণক্যকে অনাবিল আনন্দ এনে দেয়।
সব কাজে পটু নির্জলার অভিনয় করছিল দারুণ। একবার রানি প্রশ্ন করলেন, মন্ত্রীপত্নী, আপনি এখনো যুবতী রয়ে গেছেন, তার রহস্য কী?
নির্জলা একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, মহারানি, সবই ললাটলিখন। বড় বোনের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব নিতে আমাকে মন্ত্রীর সংসারে আসতে হয়। বড় বোনের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান চৌদ্দ বছর ছয় মাস!
ক্ষমা করবেন, ব্যথা দিলাম আপনাকে।
চাণক্য মহাব্যূহপতি, ব্যূহপতি, প্রধান সেনাপতি, সান্ধিবিগ্রহিক, অন্তপাল এবং নগর বিচারকের নেতৃত্বাধীন সামরিক কমিটি নিয়ে যুদ্ধ পরিকল্পনায় বসলেন। এই কমিটির অধীনে পাঁচটি বিভাগ রয়েছে, পরিকল্পনা সভায় বিভাগীয় প্রধানদেরও ডাকা হয়েছে। এই বিভাগীয় প্রধানরা মূলত যুদ্ধের কমান্ডার। সম্রাট এই কমান্ডারদের কার্যক্রম যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারেন। গোয়েন্দাদের সভায় ডাকা হয়েছে, তবে এরা বাইরে থাকবে। প্রয়োজনে ভেতরে আসবে।
সম্রাট অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন। শেষের দিকে সভায় যোগ দেবেন। যুদ্ধবিগ্রহের ব্যাপারটা বরাবরই মন্ত্রী চাণক্য দেখে আসছেন। সম্রাটের বিবেচনায় তিনি এ কাজে অতীতে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তাঁর ওপর নির্ভর করা চলে।
সম্রাট মন্দাকিনীকে ডেকে পাঠিয়ে রাজকুমারীকে লেখা পত্রটি বার কয়েক পাঠ করলেন। টুকটাক পরিবর্তনও করলেন।
মন্দাকিনী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সম্রাট তার হাতে পত্রটি দিয়ে বললেন, দ্রুত অনুবাদ করে পাঠাবে। আরেকটি কথা, তুমি এখন থেকে আমাকে গ্রিক ভাষা শেখাবে। পারবে না?
মন্দাকিনী বুদ্ধিমতী মেয়ে, আগে থেকেই জানত একদিন সম্রাট এ রকম ইচ্ছার কথা বলবেন। সে ঠিক করেই রেখেছিল তার জবাবে কী বলবে। মহামান্য সম্রাট, এ তো আমার সৌভাগ্য। আপনি যখনই চাইবেন, আমি আসব।
তাকে বিদায় করে সম্রাট দরবার হলে উপস্থিত হলেন। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। সম্রাট সবাইকে বসার ইঙ্গিত দিয়ে চাণক্যকে উদ্দেশ করে বললেন, আচার্য, কতটুকু অগ্রসর হলো পরিকল্পনা?
চাণক্য দাঁড়িয়ে বললেন, মহামান্য সম্রাট পর্বতেশ্বরের সঙ্গে সন্ধির কথা আপনাকে আগেই বলেছি। এটি আমাদের যৌথ অভিযান। আপনারা দুজন যুদ্ধের প্রধান নেতৃত্বে থাকবেন, আপনি আমাদের এবং পর্বতেশ্বর তাদের সৈন্যদের অধিনায়ক। যুদ্ধের মাঠে দুটি শিবির থাকবে। দুই শিবিরের অবস্থান থাকবে কাছাকাছি। একটি মানচিত্রে স্থানগুলো চিহ্নিত করা আছে। চাণক্য একটি কাঠি দিয়ে সম্রাটকে স্থানগুলো দেখালেন। আমরা দুদিক থেকে আক্রমণ করব। শত্রুসৈন্যরা বুঝতেই পারবে না কোথা দিয়ে কী ঘটতে যাচ্ছে। আমরা তাদের পালিয়ে যেতেও দেব না। সচরাচর হস্তীবাহিনী, অশ্ববাহিনী, রথী, পদাতিক বাহিনী, নৌবাহিনী, সরবরাহ বিভাগ এবং যন্ত্রী, ছত্রী প্রভৃতি দলের যে রকম অবস্থান থাকে, তা-ই থাকবে। গজ ও অশ্বারোহী বাহিনীর রাজকীয় সুস্থির ও চৌকস একটি দল (ইউনিট) আপনার সঙ্গে থাকবে। শিবিরে ও যুদ্ধের মাঠে এরা আপনার নিরাপত্তা বিধান করবে।
নিজেকে রক্ষা করার বিদ্যা শিখিয়েও আপনি বাইরে থেকে নিরাপত্তা বিধান করছেন, আচার্য? তার দরকার হবে না।
আমি জানি দরকার হবে না, কিন্তু দৌবারিক রাষ্ট্রীয় প্রথায় রাজা-মহারাজা ও সম্রাটদের চিরাচরিতভাবে রক্ষাকবচের কাজ করেছে। এই প্রথার লঙ্ঘন সম্ভব নয়, সম্রাট।
বেশ, বেশ, তাই হোক।
সেনা বিন্যাসটা একটু দেখুন, সম্রাট।
সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে বললেন, সেনাদের যেভাবে সাজিয়েছেন, তাতে মনে হয় আমলাতান্ত্রিক সংস্কার প্রস্তাবের পরীক্ষা হতে চলেছে।
চাণক্য হেসে দিয়ে বললেন, ঠিক ধরেছেন, মহামান্য সম্রাট। যাচাই না করে কোনো কিছু চূড়ান্ত করা উচিত নয়।
মহাক্ষপটলিক, অর্থকড়ির কী অবস্থা?
মহাক্ষপটলিকের কিছু বলার আগেই চাণক্য বললেন, মহামান্য সম্রাট, সেই স্বর্ণমুদ্রার মজুত এখনো আছে। এ নিয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
সম্রাট বললেন, হুম।
তারপরও চাণক্য হিরণ্য সমুদায়িকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, রাজকোষে স্বর্ণের মজুত ঠিক আছে তো?
যথেষ্ট আছে, মাননীয় মহামন্ত্ৰী।
সম্রাট বললেন, তাদের বিদায় করে দিন।
প্রধান সেনাপতি ও ব্যূহপতি থাকুক, সম্রাট?
না, এরা গিয়ে কাজ করুক। আপনি আর আমিই কথা বলব দণ্ডশক্তি খোলদের সঙ্গে। এরা মূলত গোয়েন্দা। সবাই চলে যাওয়ার পর সম্রাট বললেন, প্রধান সেনাপতি একটা গর্দভ।
প্রধান সেনাপতি গর্দভ থাকাই ভালো, সম্রাট, তাতে সম্রাট নিরাপদ থাকেন। বেশি চতুর সেনাপতিরা উচ্চাভিলাষী হয়, রাজ্যক্ষমতা দখল করতে চায়।
তাই এ ব্যবস্থা আপনার!
দণ্ডশক্তি খোলদের ডাকা হলো।
সম্রাট বললেন, এবার কিন্তু দুরকম দায়িত্ব। শত্রুদের সংবাদ ও মিত্রদের সংবাদ সরবরাহ। চাণক্য বললেন, সম্রাট, এ কয় দিন তাদের উত্তমরূপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে গোয়েন্দা কেন, কীভাবে গোয়েন্দাদের যোগাযোগ তৈরি করতে হয়। তাদের সংকেতের ভাষা শেখানো হয়েছে। মহড়ায় সাজানো হয়েছে সাধু-সন্ত, বনতপস্বী, পাচক, ভিক্ষুক, ডাক্তার, জ্যোতিষী, সংসারত্যাগী নারী-পুরুষ, দিগম্বর সন্ন্যাসী, পাগল, বিনোদনকারী, নৃত্যশিল্পী, বৃদ্ধ মহিলা, দিগম্বর আদিবাসী, এ ছাড়া যখন যা প্রয়োজন। শত্রুদেরও কিছু তথ্য দিতে হবে তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য।
আবার শত্রুদের পক্ষে যেন চলে না যায়।
তার অর্থ সাক্ষাৎ মৃত্যু। বৈরী পর্যেষণা সামরিক গোয়েন্দাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। বিশ্বাসঘাতকদের কেউই পছন্দ করে না। যাদের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা, এরাও না। যুদ্ধে রটনা বা গুজব ছড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ সম্পর্কেও তাদের ব্যাপক ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সম্রাট এবার হেসে দিয়ে বললেন, আলেকজান্ডারের বাহিনীতে এ কাজটিই করেছি আমি। আচার্য, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে।
চাণক্য সম্রাটের কথায় হাসলেন।
এ গোয়েন্দা তৎপরতার রূপরেখাও দেখছি সংস্কার প্রস্তাবের অনুরূপ, আচার্য। এত সব পরীক্ষার ঝুঁকি নেই তো?
ঝুঁকি কিছুটা আছে, সম্রাট, মোকাবিলার উপায়ও আছে।