মোল্লা নসরুদ্দীনের অর্থনীতি

মোল্লা নসরুদ্দীনের অর্থনীতি 

“খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশ পাথর”; আমি খুঁজে বেড়াই অর্থনীতিবিদ্। মনের মানুষ খুঁজে পাওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন, তার চেয়েও অনেক বেশি শক্ত হল মনের মতন অর্থনীতিবিদের হদিস। অর্থনীতিবিদদের মতের ও পথের শেষ নেই। কথায় বলে, যেখানে দু’জন অর্থনীতিবিদ্ রয়েছেন, সেখানে দুটো নয় তিনটে মত দেখা যাবে। এমনকি যেখানে একজন অর্থনীতিবিদ্ রয়েছেন সেখানেও একাধিক মত দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান বলতেন, তিনি এমন অর্থনীতিবিদ্ চান না যার দুটো হাত রয়েছে; তাঁর দরকার এক হাতওয়ালা অর্থনীতিবিদ্। ট্রুম্যান সাহেবের এ অদ্ভুত বায়নার অবশ্য কারণ আছে। যখনই কোন সমস্যা সম্পর্কে তিনি অর্থনীতিবিদের মতামত জানতে চেয়েছেন তখনই তিনি জবাব পেয়েছেন, “On the one hand” (এক দিকে) এটা ঘটতে পারে, “On the other hand” (আর এক দিকে) অন্য রকমের সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রুম্যান সাহেব তাই মনে করতেন, অর্থনীতিবিদের দুটো হাত থাকলেই বিপদ, কেননা তার কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোন সুপারিশ পাওয়া যাবে না। 

অর্থনীতিবিদ্‌গণ শুধু দ্ব্যর্থক ও অস্পষ্ট উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হন না। তাঁদের অনেকেই ক্ষণে ক্ষণে মত বদলান। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বিংশ শতাব্দীর সেরা অর্থনীতিবিদ্ লর্ড কেইনস। এত ঘন ঘন মত বদলানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছিল। লর্ড সাহেব উত্তর দেন, তিনি নষ্ট ঘড়ির কাঁটা নন যা দিনে দু বার মাত্র সঠিক সময় দেয়। তিনি দাবি করেন, তিনি হচ্ছেন একটি চলন্ত ঘড়ি, তাঁর কাঁটাও তাই সেকেন্ডে সেকেন্ডে পরিবর্তিত হয়। লর্ড কেইনসের মত দ্রুত পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা আমার মত গোবেচারার পক্ষে কষ্টকর। লর্ড কেইনসের তুলনায় মোল্লা নসরুদ্দীনকে তাই আমার অনেক বেশি পছন্দ। কথিত আছে, এক ব্যক্তি মোল্লার কাছে তাঁর বয়স জানতে চেয়েছিল। মোল্লা বললেন যে, তাঁর বয়স চল্লিশ। উপস্থিত তৃতীয় ব্যক্তি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিল যে, দশ বছর আগেও মোল্লা বলেছেন তাঁর বয়স চল্লিশ; কাজেই দশ বছর পরে তাঁর বয়স চল্লিশ হওয়া সম্ভব নয়। মোল্লা জবাব দেন, তিনি এক কথার মানুষ; কয়দিন পর পর তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন না। কাজেই দশ বছর আগে তিনি যা বলেছেন আজও একই কথা বলছেন। এ ধরনের অর্থনীতিবিদ্রাই হলেন ট্রুম্যান সাহেবের এক হাতওয়ালা অর্থনীতিবিদ্। আমার মনের মতন অর্থনীতিবিদ্। 

সভ্যতার ইতিহাসের সুদীর্ঘ পটভূমিতে অর্থনীতি একটি অর্বাচীন শাস্ত্র। গণিত, দৰ্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি শাস্ত্র কমপক্ষে অর্থনীতির দু’হাজার বছর আগে জন্ম নিয়েছে। এডাম স্মিথের “An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nations” বইটির প্রকাশনার তারিখ ১৭৭৬ খৃস্টাব্দকে সাধারণত অর্থনীতির জন্মলগ্ন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এর প্রায় পাঁচশ বছর আগে অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুরস্কের খোর্তো গ্রামে নসরুদ্দীন খোজার জন্ম।[১] তিনি শুধু সুপণ্ডিত ও সুকবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন ধর্মশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ইমাম। পাশ্চাত্য জগতে তিনি তাই মোল্লা হিসাবে পরিচিত। ত্রয়োদশ শতকের মোল্লার পক্ষে আজকের অর্থনীতিবিদদের মত পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রণয়ন সম্ভব ছিল না। মোল্লার সময়ে শাস্ত্র হিসেবে অর্থনীতির জন্ম হয়নি বটে, কিন্তু অর্থনীতির মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে মোল্লার জন্মের অনেক আগেই দার্শনিকগণ চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। মোল্লার জন্মের আঠারো শ বছর আগে গ্রীক দার্শনিকগণ অর্থনীতির মৌল প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন। গ্রীক দার্শনিকগণ অর্থনীতি সংক্রান্ত যে সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি, মোল্লা নসরুদ্দীন তাঁদের অনেকগুলি সমাধান করেছেন। এরিস্টটলের কাছে বাজারের মূল্য নির্ধারণ-পদ্ধতি ছিল একটি প্রহেলিকা। তিনি বলতেন যে, জল-যার অপর নাম জীবন তা বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, অথচ হীরক – যার কোন প্রত্যক্ষ উপকারিতা নেই, বাজারে অতি চড়া দামে বিক্রি হয়। গ্রীক দার্শনিকদের মতে তাই বাজারের মূল্য-নির্ধারণ পদ্ধতি হল অন্যায্য। মোল্লা নসরুদ্দীনের কাছে মূল্য-নির্ধারণ ব্যবস্থা দুর্জ্ঞেয় রহস্য বলে মনে হয়নি। এ সম্পর্কে মোল্লা নসরুদ্দীনের একটি গল্প স্মরণ করা যেতে পারে। এক ব্যক্তি মোল্লা নসরুদ্দীনের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সত্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চায়। মোল্লা তাকে বললেন যে, সত্য সম্পর্কে জানতে হলে অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে। হবু শিষ্য বললেন যে, সত্য জানার জন্য কেন এত বেশি দাম দিতে হবে তা বুঝতে সে অক্ষম। মোল্লা তাকে বললেন, “সত্য হল দুষ্প্রাপ্য এবং সকল দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যই চড়া দামে কিনতে হয়।” 

অর্থনীতি সম্পর্কে মোল্লা নসরুদ্দীনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রাচীন ও আধুনিক – উভয় ধরনের অর্থনীতিবিদদের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। আধুনিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ হল গণিত—ভিত্তিক। প্রাচীন অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ ছিল দর্শনভিত্তিক। মোল্লা নসরুদ্দীন গণিতবিদ্‌ও ছিলেন না, আনুষ্ঠানিকভাবে দার্শনিকও ছিলেন না। তাঁর বক্তব্য বেঁচে আছে কতগুলি মস্কারা ও মজার গল্পে। অবশ্য হাসতে হাসতে মোল্লা যা বলে গেছেন আজকের অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা অনেক পরিশ্রম করেও তার চেয়ে খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি। 

অর্থনীতি সম্পর্কে মোল্লা নসরুদ্দীনের জ্ঞান ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত। পদ্ধতিগত দিক থেকে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মোল্লার আস্থা ছিল না, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জ্ঞান অর্জন করতেন। এ সম্পর্কে একটি সুন্দর কাহিনী রয়েছে। মোল্লা একবার একটি গলির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটি লোক ছাদ থেকে মোল্লার ঘাড়ের উপর পড়ে। যে লোকটি পড়ে তার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। মোল্লাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে মোল্লার অবস্থার উন্নতি হলে শিষ্যরা জানতে চান, এ ঘটনা থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। মোল্লা জবাব দেন, “কার্যকারণের অবশ্যম্ভাবিতায় বিশ্বাস করো না। ছাদ থেকে পড়লো লোকটা; ঘাড়টা ভাঙল আমার। ভবিষ্যতে এই ধরনের তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তে কখনও পৌঁছবে না, যে কোন লোক ছাদ থেকে পড়লেই তার নিজের ঘাড় ভাঙবে।” 

আধুনিক অর্থনীতিতে আমরা অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব শিখছি। কিন্তু এ সকল তত্ত্ব সবই মৌলিক তা মনে করা ঠিক হবে না। একজন দার্শনিক যথার্থই মন্তব্য করেছেন, মৌলিকতা হচ্ছে ধরা না পড়ে অন্যের ভাব চুরি করা। প্রকৃতপক্ষে সকল নতুন তত্ত্বেরই বীজ সংগৃহীত হয় পূর্ববর্তীদের নিকট থেকে। স্যার আইজাক নিউটন তাই বলতেন[২]: “If I have been able to see farther than others, it was because I stood on the shoulders of giants.” (আমি যদি অন্যদের চেয়ে বেশি দূরে দেখে থাকি, তার কারণ হল আমি অস্বাভাবিক বড় মাপের মানুষের কাঁধের উপর দাঁড়িয়েছিলাম।) আজকের অর্থনীতিবিদ্রাও তেমনি অনেক ধারণাই গ্রহণ করেছেন প্রাচীন ও মধ্যযুগের মানুষদের কাছ থেকে। মোল্লা নসরুদ্দীনের চুটকিগুলি বিশ্লেষণ করলে আমরা শুধু নির্মল আমোদই লাভ করি না, আমরা তাঁর ভূয়োদর্শন থেকেও জ্ঞান লাভ করি। ভালভাবে তলিয়ে দেখলে মোল্লা নসরুদ্দীনকে দু’ধরনের অর্থনৈতিক তত্ত্বের পথিকৃত বলে মনে হয়। প্রথমত, মোল্লা অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক মূল্যবান বক্তব্য রেখে গেছেন। দ্বিতীয়ত, মহাজনদের আচরণ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল গভীর। মহাজনদের আচরণ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য আজকের বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। মোল্লার হাসির গল্পগুলি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আচরণ সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে অতি সহায়ক। 

প্রথমে ঝুঁকি নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। ঝুঁকির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল risk ইংরেজী ভাষায় risk-এর শাব্দিক অর্থ হল সাহস করা। এ সাহস দেখানো হয় যা অজানা বা অনিশ্চিত তার ক্ষেত্রে। সবচেয়ে অনিশ্চিত হল ভবিষ্যত। প্রাচীনকালে সবাই মনে করত যে, ভবিষ্যত নিয়ে মানুষের কিছুই করার নেই। ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রিত হয় দেবদেবতাদের খেয়ালখুশিতে। যে সব দার্শনিক অজানা ভবিষ্যতের ঝুঁকির রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে এগিয়ে আসেন তাঁরা সত্যিই ছিলেন অত্যন্ত দুঃসাহসী তাত্ত্বিক। পিটার এল বার্নস্টাইন (Peter L. Bernstein) নামে একজন বিশেষজ্ঞ ঝুঁকি সম্পর্কিত তত্ত্বের একটি ইতিহাস লিখেছেন। বইটির তিনি নাম দিয়েছেন “Against the Gods : the Remarkable Story of Risk” (বিধাতার বিপক্ষে : ঝুঁকির অসামান্য কাহিনী)।[৩] বার্নস্টাইনের মতে গ্রীক লোককাহিনীর নায়ক প্রমিথিউস যেমন দেবতাদের অমান্য করে অন্ধকার থেকে আলো ছিনিয়ে এনেছে, ঝুঁকি সম্পর্কিত তাত্ত্বিকরা তেমনি তমসাবৃত ভবিষ্যতের রহস্য ভেদ করে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বার্নস্টাইনের ইতিহাসে ঝুঁকি সম্পর্কিত বিশ্লেষণের পথিকৃতদের তালিকায় মোল্লা নসরুদ্দীনের নাম নেই। তার তালিকা শুরু হয়েছে সপ্তদশ শতকের ফরাসী ভূস্বামী শেভালিয়ে দ্য মেয়ার (Chevalier de Mere)-এর নাম দিয়ে। এ তালিকায় রয়েছে সপ্তদশ শতকের পাসক্যাল ও ফারম্যাট, অষ্টদশ শতকের লাইবনিজ, আব্রাহাম দ্য মোয়াভ (Abraham de Moivre), ও বার্নোলি (Bernoulli)। ত্রয়োদশ শতকের মোল্লা নসরুদ্দীন কিন্তু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মূল বৈজ্ঞানিক সূত্রসমূহ অনেক আগেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিবিদ্ মার্কভিজ (Markowitz) ১৯৫২ সালে তাঁর পত্রকোষ বা portfolio তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। পত্রকোষ বা portfolio-এর শাব্দিক অর্থ হল একজন ব্যক্তির সকল কাগুজে সম্পদের (যথা শেয়ারের কাগজ) সংগ্রহ (যা সাধারণত একটি “পোর্টফোলিও” ব্যাগের মধ্যে রাখা হয়)। এ তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল, এক ধরনের সম্পদে বিনিয়োগ করা হলে যদি এ সম্পদের দাম কমে যায় তবে বিনিয়োগকারী ফতুর হয়ে যাবে। এক ঝুড়িতে সকল ডিম রাখা যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয় তেমনি এক ধরনের সম্পদে – যা আপাতদৃষ্টিতে যত লাভজনকই হোক না কেন, বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ। মার্কভিজের পরামর্শ হল সম্পদের বৈচিত্র্যায়ন (diversification) হচ্ছে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি সহজ পথ। এ তত্ত্ব পত্রকোষ বা portfolio theory নামেও পরিচিত। 

মার্কভিজের প্রায় সাতশ বছর আগে মোল্লা নসরুদ্দীন ঝুঁকি বৈচিত্র্যায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। মোল্লা নিজের জীবনেও তাঁর চর্চা করেছেন। মোল্লার দুই মেয়ে ছিল। তিনি একজনকে বিয়ে দেন চাষীর সাথে, অন্য মেয়ের বিয়ে দেন ইটের ভাটার মালিকের সাথে। ভালো বৃষ্টি হলে চাষীর ঘরণী আরামে থাকত। আর বৃষ্টি না হলে বা কম হলে ইটের ভাটার মালিকের স্ত্রীর থাকত রমরমা অবস্থা। বৃষ্টি কম হোক আর বেশি হোক মোল্লার এক কন্যা অন্তত ভাল অবস্থাতে থাকত। অবশ্য বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক পরিবারই মোল্লার চেয়েও অনেক বেশি চালাক। এ ধরনের পরিবার এক ছেলেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে ভর্তি করে আর অন্য ছেলেদের বিরোধী দলের সমর্থক করে রাখে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও কোন না কোন ছেলে ক্ষমতাসীন থেকে যায়। 

মোল্লা বৈচিত্র্যায়নে এত গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন যে, তিনি এ তত্ত্ব পরকালের ক্ষেত্রে পর্যন্ত প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। ইদ্রিস শাহ তাঁর “The Pleasantries of the Incredible Mulla Nasruddin” গ্রন্থে নিম্নরূপ কাহিনী বর্ণনা করেছেন[৪] : 

A theologian was ill. He had heard that Nasruddin was a mystic, and in his semidelirium convinced himself that there might be something in all this, after all. So he sent for The Mulla. 

“Prescribe a prayer which can ease me into the other world, Mulla”, he said, “for you have a reputation of being in communication with another dimension.” 

“Delighted”, said Nasruddin, “Here you are: God help me, Devil help me!” 

Forgetting his infirmity the divine sat bolt upright, scandalized. “Mulla, you must be insane!” 

“Not at all, my dear fellow, a man in your position cannot afford to take chances. Where he sees two alternatives, he should try to provide for either of them working out.” 

(একজন ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অসুস্থ ছিলেন। তিনি শুনেছিলেন যে নসরুদ্দীন একজন মরমি সাধক। অর্ধচেতন অবস্থায় তাঁর কাছে মনে হল এ খবর হয়ত সত্যি। তিনি মোল্লাকে ডেকে পাঠালেন। 

তিনি বললেন, “হে মোল্লা, আপনার সুনাম রয়েছে যে অন্য জগতের সাথে আপনার যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আমাকে এমন একটি মন্ত্র দিন যাতে আমি বিনা যন্ত্রণায় অন্য জগতে যেতে পারি।” 

নসরুদ্দীন বললেন, “এতো খুশির সাথেই করব। এই হল আপনার মন্ত্র : বিধাতা আমাকে সাহায্য কর, অসুর আমাকে মদদ্ দাও।” 

স্তম্ভিত হয়ে লোকটি তাঁর অসুখের কথা ভুলে গিয়ে সোজা হয়ে বসে পড়লেন। তিনি বললেন, “মোল্লা নিশ্চয়ই আপনার মাথা খারাপ হয়েছে।” 

মোল্লা জবাব দিলেন, “প্রিয় বন্ধু, আপনার কথা মোটেও সত্য নয়। আপনার যা অবস্থা, আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। যখন দুটি বিকল্প রয়েছে, তখন দুটি বিকল্পের জন্যই বন্দোবস্ত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।”)

স্পষ্টতই মোল্লা এখানে ঝুঁকি বৈচিত্র্যায়নের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে মোল্লা একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। পার্থিব বৈচিত্র্যায়ন তত্ত্ব পরকালের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সম্ভব নয়। যারা ধার্মিক তাদের কাছে পরকালে কোন বিকল্প নেই। কাজেই একই সাথে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। অবশ্য মোল্লা নিজে পরকাল সম্পর্কেও খুব নিশ্চিত ছিলেন না। মোল্লা মরার আগে নাকি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন যে, মরার পর তাঁকে নতুন কবরে সমাহিত না করে পুরাতন কবরে যেন তাঁর লাশ রাখা হয়। আত্মীয়-স্বজনরা তাঁর এই অদ্ভুত অনুরোধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, পুরানো কবরে ফেরেশতারা আসলে বলে দেওয়া সম্ভব হবে যে, কবরে সমাহিত ব্যক্তির ইতোমধ্যে সাজা হয়ে গেছে। কাজেই ফেরেশতারা শাস্তির ব্যবস্থা না করেই চলে যাবে। তাতে অন্তত কেয়ামত পর্যন্ত তিনি শাস্তির হাত থেকে বাঁচবেন। 

তবে মোল্লার ঝুঁকি-বৈচিত্র্যায়ন সম্পর্কিত পরামর্শ পরকালের জন্য প্রযোজ্য না হলেও ইহকালের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিনিয়োগ, ব্যবসা, বাণিজ্য এমনকি রাজনীতির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যায়ন ঝুঁকি হ্রাসের একটি কার্যকর উপায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, পরিবেশের জন্যও বৈচিত্র্যায়ন শুধু কল্যাণকরই নয় অত্যন্ত জরুরীও বটে।[৫] সম্প্রতি কৃষি ক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল বীজ চাষ করতে গিয়ে অল্প কয়েকটি জাতের ধান ও গম চাষ হচ্ছে। এ সব বীজের ফলন চিরাচরিত জাতের চেয়ে বেশি সন্দেহ নেই। কিন্তু অল্প কয়েকটি জাতের বীজের উপর নির্ভরশীলতা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন প্রজাতির বীজ বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। কাজেই নানাবিধ প্রজাতির বীজের চাষ করলে বন্যা ও খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ফসলের ক্ষতি কম হয়। এক ধরনের উচ্চ ফলনশীল বীজ চাষ করলে একবার কীট পতঙ্গের উপদ্রব হলে সকল ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভিন্ন ভিন্ন জাতের বীজ চাষ করলে এক ধরনের পোকা সব ধরনের ফসলের ক্ষতি করতে পারে না। বৈচিত্র্যায়নের মাধ্যমে সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকাই হল বুদ্ধিমানের কাজ। 

সাতশ বছর আগে মোল্লা যখন মারা যান তখন বিশ্ব ব্যাংক অথবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কথা কেউ কল্পনা করেনি। এমনকি ওয়াশিংটন শহরে –যেখানে প্রতিষ্ঠান দুটির সদর দফতর অবস্থিত–সেখানে কোন শহরই ছিল না, আদৌ কোন বসতি ছিল কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু মোল্লা বিশ্ব ব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল না দেখলেও অনেক মহাজন দেখেছেন। মহাজনদের আচরণ জানতে পারলেই এ দুটো প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতি আঁচ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মোল্লার একটি কাহিনী মনে পড়ছে। কথিত আছে মোল্লা নসরুদ্দীনের একটি হাতি দেখে খুবই পছন্দ হয়। তিনি হাতিটি কেনার অর্থ সংগ্রহের জন্য মহাজনের দোরে গিয়ে হাজির হলেন। মোল্লা মহাজনকে বললেন, “আমাকে কিছু টাকা ধার দিন।” মহাজন বললেন, “কেন?” মোল্লা জবাব দিলেন, “আমি একটি হাতি কিনতে চাই।” মহাজন প্রশ্ন করলেন, “তোমার যদি টাকা না থাকে তুমি হাতি পালবে কি করে?” মোল্লা আক্ষেপ করে বললেন, “আমি আপনার কাছে টাকার জন্য এসেছি, উপদেশের জন্য নয়।” 

যে কোন উন্নয়নশীল দেশের অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে মোল্লার আক্ষেপই শোনা যাবে। এইত কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে মস্কো যান। আলোচনার পর সাংবাদিকগণ রাশিয়ার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী প্রিমাকভের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। প্রিমাকভ সাংবাদিকদের জানান যে, তিনি আশা করেছিলেন, মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয় তাঁর ব্রীফ কেস ভর্তি করে ডলার নিয়ে এসেছেন; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁর ব্রীফ কেস ভর্তি করে নিয়ে এসেছেন শর্তের কাগজপত্র। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের শর্তাবলী স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অর্থমন্ত্রীদের সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন। একটু নমনীয় হলেও বিশ্ব ব্যাংকও একই পথের পথিক। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তসমূহকে শর্তনির্ভরশীলতা বা conditionality বলা হয়ে থাকে। শর্তনির্ভরশীলতাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নসিহত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একজন বিশেষজ্ঞের মতে শর্তনির্ভরশীলতা হল সে সব নীতি যা অনুসরণ করলে তহবিলের সাহায্য প্রদান করা হয়।[৬] মোল্লার মহাজনের উপদেশ না শোনার অধিকার ছিল, অনুন্নত দেশসমূহের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ না শোনার জো নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলে অন্য দাতাদের সাহায্যও কমে যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করে যে, তার নির্ধারিত শর্তাবলী শুধু সংশ্লিষ্ট দেশের জন্যই প্রযোজ্য নয়, এ সব শর্ত বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার জন্য সামগ্রিকভাবে হিতকর। অবশ্য মুদ্রা তহবিলের সমালোচকরা এ মতের সাথে মোটেও একমত নন। তাঁরা বলেন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সকল দেশের জন্য একই দাওয়াই দিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এ দাওয়াই রোগের চেয়ে খারাপ। শর্তাবলীর মধ্যে সাধারণত থাকে সরকারের ব্যয়-হ্রাস, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, কর-সংস্কার, বেসরকারীকরণ, বাণিজ্য সংস্কার এবং জ্বালানি ও কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি। সামগ্রিকভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের সংস্কার অর্থনৈতিক সংকোচনের জন্ম দেয়। অর্থনীতিবিদ্রা এ ধরনের ব্যবস্থাকে কল্যাণকর মনে করতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিবিদদের মতে এসব সংস্কার হচ্ছে রাজনৈতিক আত্মহননের শামিল। রাজনীতিবিদ্‌গণ তাই এ ধরনের তেতো ওষুধ গিলতে চান না। এর ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি নতুন দাওয়াই আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন প্রাক-কর্মসূচী শর্তনির্ভরশীলতা (upfront conditionality)। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে সম্মত কর্মসূচী গ্রহণের আগেই এ ধরনের শর্ত পালন করতে হয়। অবশ্য এ ধরনের শর্তনির্ভরশীলতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আবিষ্কার করেনি। এ ধরনের ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই মোল্লা সাহেব চিন্তা করে গেছেন। মোল্লা একবার একটি ছোট ছেলেকে একটি পাত্রে কুয়ো থেকে পানি তুলে আনতে বলেন। ছেলেটির হাতে পাত্রটি তুলে তিনি চিৎকার করে বললেন, “খেয়াল রেখো পাত্রটি যাতে কোন মতেই না ভাঙে” এবং তার পরেই ছেলেটিকে থাপ্পড় মারলেন। ঘটনার সময় অন্য এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তিনি মোল্লার কাছে জানতে চাইলেন যে, মোল্লা কেন বিনা কারণে ছেলেটিকে আঘাত করলেন। মোল্লা বললেন, “আহাম্মক, তুমি বুঝতে পারছ না, পাত্রটি ভাঙ্গার পর ছেলেটিকে শাস্তি দিয়ে কোন লাভ হবে না। কাজেই আগে শাস্তি দিলাম।” মোল্লার মত আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পাত্র ভাঙ্গার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয়, তারা আগেই স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে থাপ্পড় মারে। এর ফলে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নীতিমালার সাথে উন্নয়নশীল দেশগুলো কখনও একাত্ম হতে পারে না। এরা ভালো উপদেশ দিলেও উন্নয়নশীল দেশসমূহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে সন্দেহ করে। 

আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনও এ কথা স্বীকার করে না যে তারা মহাজন। কিন্তু মোল্লা মহাজনদের যে সব লক্ষণ বর্ণনা করেছেন তার সবই রয়েছে এ সব প্রতিষ্ঠানের। তাই এ সব প্রতিষ্ঠান দেখলে তিনি হয়ত মোটেও অবাক হতেন না। মাংস চুরি হওয়ার পর মোল্লা তাঁর স্ত্রীকে যে প্রশ্ন করেছিলেন হয়ত আজ বেঁচে থাকলে একই ধরনের প্রশ্ন তিনি করতেন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে। মোল্লার মাংস চুরির গল্পটি হচ্ছে নিম্নরূপ : 

বাজারে গিয়ে মোল্লা খুব ভালো মাংস পেয়ে খুশি হয়ে এক সের মাংস নিয়ে বাড়িতে আসেন। এসেই স্ত্রীকে মাংসটা ভালো করে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। মোল্লার স্ত্রী মাংস রান্না করলেন। কিন্তু রান্না করা মাংস চেখে তাঁর এত ভাল লাগল যে তিনি নিজেই পুরো মাংসটা খেয়ে ফেললেন। মোল্লা খেতে এসে যখন মাংস চাইলেন তখন তার স্ত্রী বললেন যে, মাংস বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। মোল্লা জিজ্ঞেস করলেন, “বিড়াল কি পুরো মাংসই খেয়েছে?” মোল্লার স্ত্রী বললেন যে, পুরো মাংসই বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। বিড়ালটা কাছেই ছিল। নসরুদ্দীন সেটাকে দাঁড়ি পাল্লায় চড়িয়ে দেখলেন যে বিড়ালটির ওজন ঠিক এক সের। “এটাই যদি সেই বিড়াল হয়”, মোল্লা বললেন, “তাহলে মাংস কোথায়? আর এটাই যদি সেই মাংস হয়, তাহলে বিড়াল কোথায়?” 

গত পঞ্চাশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উন্নয়নের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তা যদি মোল্লা দেখতে পেতেন, তাহলে তিনি হয়ত তৃতীয় বিশ্বের দিকে অঙ্গুলি দেখিয়ে বলতেন, “এই যদি উন্নয়ন হয়, তবে বিনিয়োগকৃত অর্থ কোথায়, আর এই যদি বিনিয়োগ হয়, তবে উন্নয়ন গেল কোথায়?” 

আজকের অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মোল্লা নসরুদ্দীনের গাল-গল্পকে অর্থনৈতিক তত্ত্ব হিসাবে মানতে চাইবেন না। পক্ষান্তরে মোল্লা যদি আজকে জীবিত থাকতেন তিনি ও হয়ত পেশাদারদের গাণিতিক অর্থনীতিকে বাস্তব হিসাবে স্বীকার করতেন না। তিনিও হয়ত গণিতজ্ঞ জি. এইচ. হার্ডি (G. H. Hardy)-এর সাথে সুর মিলিয়ে বলতেন, “A mathematician is someone who does not know what he is talking about and does not care.” (একজন গণিতজ্ঞ হচ্ছেন সে ধরনের ব্যক্তি যিনি কি সম্পর্কে বলছেন তা জানেন না ও তার পরোয়াও করেন না)। গণিতজ্ঞের কাজ হচ্ছে সঠিকভাবে অঙ্ক করা, ফলাফল নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই। গণিতজ্ঞের কোন লক্ষ্য নেই, কোন দায়দায়িত্ব নেই, পদ্ধতি সঠিক হলেই তিনি সন্তুষ্ট। যে সব অর্থনীতিবিদ্ গণিতের ভিত্তিতে তাঁদের তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে তুলছেন তাঁদের অনেকেই গণিতজ্ঞদের ত্রুটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের গণিত নির্ভুল হতে পারে; কিন্তু তাঁদের তত্ত্ব সঠিক নয়। 

আজকের আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনেক অর্থনীতিবিদ্‌ই মনে করেন যে, একমাত্র তাঁদের পেশাদারী জ্ঞান প্রয়োগ করলেই উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। অবশ্য তাঁরা ভুলে যান যে, টাইটানিক জাহাজ সে সময়ের শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা নির্মাণ করেছে এবং প্রথম সমুদ্র যাত্রাতেই জাহাজটি ডুবে যায়। আর হজরত নূহ (আঃ)-এর কিস্তি তৈরি করেছিল আনাড়িরা; নূহের কিস্তি কিন্তু শত ঝড় ঝঞ্ঝাতেও ডোবেনি। সেনাপতিদের সম্পর্কে যথার্থই বলা হয়ে থাকে যে, যুদ্ধ এত গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু সেনানায়কদের কাছে যুদ্ধ সম্পর্কে সকল সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। অর্থনৈতিক সমস্যাও এত গুরুত্বপূর্ণ যে তা শুধু পেশাদার অর্থনীতিবিদদের কাছে ছেড়ে রাখা সম্ভব নয়। মোল্লা নসরুদ্দীনের মত চিন্তাবিদদের আজকের দিনেও তাই আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। 

.

তথ্যসূত্র 

১. সৈয়দ মুজতবা আলী, চতুরঙ্গ (ঢাকা : ষ্টুডেন্ট ওয়েজ, ১৯৮৯), পৃষ্ঠা ২৮ 

২. Peter, Lawrence J., Peter’s Quotations (New York : Quill, 1977), p. 437

৩. Bernstein, Peter L., Against the Gods: The Remarkable Story of Risk (New York: John Wiley and Sons, 1996 ) 

৪. Shah, Idries, The Pleasantries of the Incredible Mulla Nasruddin (New York: E. P. Datton & Co, 1968), p. 91 

৫. Bright, Chris, Life Out of Bounds (New York: W. W. Norton & Company, 1998) 

৬. Guitian, Manuel, Fund Conditionaity (Washington : IMF, 1986) 

৭. উদ্ধৃত Gordon, Scott, The History and Philosophy of Social Science (New York: Routledge, 1993), p. 39 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *