মোবারক হোসেনের মহাবিপদ

মোবারক হোসেনের মহাবিপদ

ছেলেটা বড় যন্ত্রণা করছে।

মোবারক হোসেন হুংকার দিলেন, এ্যাঁও।

এটা তাঁর বিশেষ ধরনের হুংকার। বাচ্চারা খুব ভয় পায়। শব্দটা বেড়ালের ডাকের কাছাকাছি, আবার ঠিক বেড়ালের ডাকও নয়, বাচ্চাদের ভয় পাবারই কথা।

তবে এই বাচ্চা ভয় পাচ্ছে না। আগের মতোই লাফালাফি করছে। মনে হচ্ছে তার ধমক শুনতে পায়নি। এ যুগের টিভি-ভিসিআর দেখা বাচ্চা, এরা সহজে ভয় পায় না।

গত মাসে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন। সময় কাটে না। এইজন্যেই যাওয়া, অন্য কিছু না। সত্তর বছরের বুড়োরা চিড়িয়াখানায় যায় না। খানিকক্ষণ বাঁদরের লাফঝাঁপ দেখে গেলেন বাঘের খাঁচার সামনে। আলিশান এক রয়েল বেঙ্গল। দেখে যে-কোনো মানুষের পিলে চমকে যাবার কথা। আশ্চর্য কাণ্ড! ছোট বাচ্চাকাচ্চারা কেউ ভয় পাচ্ছে না। একটা আবার কান্না শুরু করে দিয়েছে, সে বাঘের লেজ ধরতে চায়। বাবা- মা শত চেষ্টাতেও কান্না সামলাতে পারছেন না। মিষ্টি মিষ্টি করে মা বুঝানোর চেষ্টা করছে।

বাঘমামার লেজে হাত দিতে নেই। বাঘমামা রাগ করবে।

হাত দেব। হাত দেব। উঁ উঁ।

মোবারক হোসেন সাহেব সত্তর বছর বয়সে একটা জিনিস বুঝে গেছেন— এ যুগের ছেলেমেয়ে বড়ই ত্যাঁদর। এরা ভূতের গল্প শুনলে হাসে। রাক্ষসের গল্প শুনলে হাসে। এরা ধমকেও পোষ মানে না। আদরেও পোষ মানে না।

এই যে ছেলেটা তখন থেকে তাঁকে বিরক্ত করছে একে ধমক-ধামক দিয়ে কিছু হবে বলে মনে হয় না। মুখ দিয়ে বিচিত্র শব্দ করে লাফ-ঝাঁপ দিয়েই যাচ্ছে। তিনি পার্কে এসেছেন বিশ্রামের জন্যে। শীতকালের রোদে পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে থাকতে বড় ভালো লাগে। শীতকালে পার্কে বিশ্রামের নিয়ম হলো, শরীরটা থাকবে রোদে, মাথাটা থাকবে ছায়ায়। ঘুম ঘুম তন্দ্রা অবস্থায় কিছুক্ষণ গা এলিয়ে পড়ে থাকা।

তাঁর যে বাড়িতে জায়গা নেই তা না। নিজের দোতলা বাড়ি আছে মগবাজারে কিন্তু সেই বাড়ি হলো মাছের বাজার। দিনরাত ক্যাঁও ক্যাঁও ঘ্যাঁও ঘ্যাঁও হচ্ছেই। একদল শুনছে ওয়ার্লড মিউজিক। একদল দেখছে জিটিভি। এখন আবার বড় মেয়ে এসেছে তার আণ্ডাবাচ্চা নিয়ে। দুটা ছেলেমেয়ে কিন্তু অসীম তাদের ক্ষমতা। দেড়শ ছেলেমেয়ে যতটা হইচই করতে পারে, এই দুজন মাশাআল্লাহ তার চেয়ে বেশি পারে। আর কী তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা! এক ভাই খাটের ওপর চেয়ার বসিয়ে তার ওপর মোড়া দিয়ে অনেক কষ্টে তার ওপর উঠে সিলিং ফ্যান ধরে ঝুলে পড়েছে, অন্য ভাই ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিয়েছে। এটা নাকি একটা খেলা। এই খেলার নাম, হেলিকপ্টার খেলা। যে বাড়িতে হেলিকপ্টার খেলা হচ্ছে সবচেয়ে কম বিপজ্জনক খেলা সে বাড়িতে দুপুরে বিশ্রাম নেয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। তিনি কদিন ধরেই পার্কের বেঞ্চিতে এসে কাত হচ্ছেন। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এখানেও বিশ্রাম নেয়া যাবে না। এই পিচকা বড়ই যন্ত্রণা করছে!

মোবারক হোসেন সাহেব উঠে বসলেন। কঠিন গলায় ডাকলেন, এই পিচকা, এদিকে শুনে যা।

ছেলেটা চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। তুই করে বলায় রাগ করেছে বলে মনে হয়। একালের ছেলেপুলের আত্মসম্মান জ্ঞান আবার টনটনে। তুই বলে পার পাবার উপায় নেই। ক্যাঁও করে ওঠার কথা।

ছেলেটা নরম গলায় বলল, আপনি কি আমাকে ডাকছেন?

হুঁ।

সে এগিয়ে এলো। বেঞ্চিতে তার পাশে বসল। বাহ, স্মার্ট ছেলে তো! এ যুগের ছেলেদের একটা গুণ আছে। এরা স্মার্ট। মোবারক হোসেন সাহেব লক্ষ করলেন ছেলের চেহারা খুব সুন্দর। দুধে-আলতায় রঙ বলতে যা বোঝায়, তাই। কোঁকড়ানো চুল। বড় বড় চোখ। চোখে মা বোধহয় কাজল দিয়েছে। সুন্দর লাগছে। এ-রকম সুন্দর একটা ছেলেকে তুই বলা যায় না। মোবারক হোসেন ঠিক করলেন তুমি করেই বলবেন। প্রথম খানিকক্ষণ ছোটখাটো দু’ একটা প্রশ্ন-টশ্ন করে শেষটায় কড়া করে বলবে, দুপুরবেলায় পার্কে ঘোরাঘুরি করছ কেন? বাসায় যাও। বাসায় গিয়ে হোমটাস্ক কর। কিংবা মার পাশে শুয়ে ঘুমাও। এখন খেলার সময় না। খেলতে হয় বিকেলে।

ছেলেটা পা দুলাতে দুলাতে বলল, আমাকে কী জন্যে ডেকেছেন?

তোমার নাম কী?

আমার নাম হলো শীশী।

শীশী!

মোবারক হোসেন সাহেবের মুখটা তেতো হয়ে গেল। আজকালকার বাবামারা ছেলেমেয়েদের নাম রাখার ব্যাপারে যা শুরু করেছে কহতব্য নয়। শীশী কোনো নাম হলো? আধুনিক নাম রাখতে হবে, আনকমন নাম রাখতে হবে। এমন নাম যে নামের দ্বিতীয় কোনো বাচ্চা নেই। কাজেই শীশী ফীফী।

মোবারক হোসেন সাহেব বললেন, কে রেখেছে এই নাম? তোমার মা?

জি না, আমার বাবা।

মোবারক হোসেন সাহেব এই আশঙ্কাই করেছিলেন। উদ্ভট নাম রাখার ব্যাপারে মাদের চেয়ে বাবাদের আগ্রহই বেশি। অন্যদের দোষ দিয়ে কি হবে, তাঁর নিজের বাড়িতেই এই অবস্থা। তাঁর মেজ মেয়ের ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে নু। তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী রকম নাম?

মেয়ে বলল, ছেলের বাবা শখ করে রেখেছে।

এর অর্থ কী?

অর্থ আমি জানি না বাবা। তুমি তোমার জামাইকে জিজ্ঞেস কর।

তিনি ঠিকই জিজ্ঞেস করলেন। কঠিন গলায় জানতে চাইলেন, তুমি এই নামটা আমাকে ব্যাখ্যা কর। কী ভেবে তুমি এই নাম রাখলে?

তাঁর মেয়ে-জামাই খুব উৎসাহের সঙ্গে বলল, ন হচ্ছে একটা কোমল বর্ণ। সেই কোমল বর্ণ ব্যবহার করে এক বর্ণের একটা নাম রেখেছি নু। সবাই দু অক্ষরের তিন অক্ষরের নাম রাখে। আমার ভালো লাগে না। নু নামটা আপনার কাছে ভালো লাগছে না?

তিনি কোনো উত্তর দিলেন না, তবে মনে-মনে বললেন, ন ছাড়াও তো আরো সুন্দর সুন্দর বর্ণ আছে। গ ও তো সুন্দর বর্ণ। গ দিয়ে গু রেখে ফেললে আরো ভালো হতো। মানুষের নাম হিসেবে খুব আনকমন হতো। এর আগে এই নাম কেউ রাখেনি। তবে মুখে কিছু বললেন না। এমনিতেই জামাইরা তাঁকে পছন্দ করে না। কী দরকার।

শীশী তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো তার পা দুলছে। মনে হয় স্থির হয়ে বসতে পারে না। এখনই একে একটা কড়া ধমক দেবেন কিনা মোবারক হোসেন সাহেব বুঝতে পারছেন না। ধমক খেয়ে কেঁদে ফেলবে কিনা কে জানে। কাঁদলে সমস্যা হবে।

ছেলেটা বলল, আপনি আমার সঙ্গে খেলবেন?

মোবারক হোসেন ছেলের স্মার্ট ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হলেন।

আমার সঙ্গে খেলতে চাও?

হুঁ।

কী খেলা?

আপনি যে খেলা জানেন সেই খেলাই খেলব। আপনি কোন কোন খেলা জানেন।

আমি অনেক খেলাই জানি, যেমন ধর হেলিকপ্টার খেলা…

মজার খেলা?

মনে হয় বেশ মজার। আমি সিলিং ফ্যান ধরে ঝুলে পড়ব, আর তুমি ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দেবে।

ছেলেটা মহাউৎসাহের সঙ্গে বলল, আসুন খেলি।

এখানে সিলিং ফ্যান নেই, এই খেলা খেলা যাবে না।

ছেলেটা হতাশ গলায় বলল, আর কী খেলা জানেন?

প্যারাসুট খেলা বলে একটা খেলা আছে। আমার দুই নাতি একবার খেলেছে। এটাও মন্দ না। এই খেলাতে একটা ভোলা ছাতার হাতল ধরে গ্যারাজের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামতে হয়।

খুব মজার খেলা?

মোটামুটি মজার তবে সামান্য সমস্যা আছে। হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে কিছুদিন থাকতে হয়। বড় নাতিটা প্রায় এক মাসের মতো ছিল।

ছেলেটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মোবারক হোসেন সাহেবের একটু মায়া হলো। বাচ্চা মানুষ খেলতে চাচ্ছে, খেলার বন্ধু পাচ্ছে না।

শোন খোকা! বিকেলে আসবে, তখন বাচ্চাকাচ্চারা থাকবে, ওদের সঙ্গে খেলবে। দুপুরবেলা খেলার সময় না।

দুপুরবেলা কীসের সময়?

দুপুর হচ্ছে হোম ওয়ার্ক করার সময়, কিংবা মার পাশে শুয়ে ঘুমুবার সময়।

ছেলেটা গম্ভীর হয়ে অবিকল বড়দের মতো বলল, ও আচ্ছা, আমি জানতাম না। আমি তো মানুষের ছেলে না, আমি হচ্ছি পরীদের ছেলে। এইজন্যে মানুষের নিয়মকানুন জানি না।

তুমি পরীদের ছেলে?

জি।

মোবারক হোসেন এই ছেলের বানিয়ে কথা বলার ক্ষমতায় চমৎকৃত হলেন। এ ছেলে বড় হলে নির্ঘাৎ কোনো রাজনৈতিক দলের লিডার হবে। দিব্যি বলে যাচ্ছে— আমি মানুষের ছেলে না, আমি হচ্ছি পরীদের ছেলে। ফাজিলের ফাজিল।

তুমি যখন পরীদের ছেলে তখন নিশ্চয়ই উড়তে পার।

জি পারি।

পাখা তো দেখছি না। পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে এসেছ বোধহয়।

মার কাছে রেখে এসেছি।

মার কাছে রেখে আসাই ভালো। তুমি বাচ্চা মানুষ, হারিয়ে ফেলতে পার। কিংবা ময়লা করে ফেলতে পার। তুমি থাক কোথায়? পরীর দেশে?

ছেলে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। বানিয়ে বানিয়ে কথা যে বলে যাচ্ছে তার জন্যে তার মধ্যে কোনো রকম বিকার দেখা যাচ্ছে না। মোবারক হোসেনের ইচ্ছা করছে মিথ্যা কথা বলার জন্যে ঠাস করে এর গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে।

তোমার পায়ের জুতা তো মনে হচ্ছে বাটা কোম্পানির। পরীর দেশেও তাহলে বাটা কোম্পানি দোকান খুলেছে?

জুতা আমার মা এখান থেকে কিনে দিয়েছে। পরীর দেশের ছেলেমেয়েরা জুতা পরে না। তারা তো আকাশে আকাশেই ওড়ে, তাদের জুতা পরতে হয় না।

মোবারক হোসেন সাহেব ছেলের বুদ্ধি দেখে অবাক হলেন। সুন্দর করে নিজেকে কাটান দিয়ে যাচ্ছে। এই ছেলে রাজনৈতিক দলের নেতা হবে না, নেতাদের এত বুদ্ধি থাকে না।

তুমি তাহলে পরীদের ছেলে, এখানে বেড়াতে এসেছ?

মানুষের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে এসেছি। ওরা কত সুন্দর সুন্দর খেলা জানে।

তুমি তাহলে প্রথম পরীর বাচ্চা যে মানুষের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে এসেছে।

না তো, আমরা সব সময় আসি।

সব সময় আস?

জি। ওদের সঙ্গে খেলি তারপর চলে যাই। ওরা বুঝতে পারে না।

তাই নাকি?

জি। যখনই দেখবেন একদল ছেলেমেয়ে খেলছে তখনই জানবেন ওদের মধ্যে অতি অবশ্যই দু-একজন পরীর ছেলেমেয়ে আছে।

পাখা ছাড়া আস কী করে?

আমাদের উড়তে পাখা লাগে না। পাখাটা হচ্ছে আমাদের এক ধরনের পোশাক। জন্মদিনে আমরা নতুন পাখা পাই। আবার দুষ্টুমি করলে মারা আমাদের পাখা নিয়ে নেন। আমার কটা পাখা আছে জানেন? সব মিলিয়ে সাতটা—সেভেন।

তুমি ইংরেজিও জানো? পরীর দেশে ইংরেজি চালু আছে?

আপনি আমার সঙ্গে এমন রেগে রেগে কথা বলছেন কেন?

মোবারক হোসেন সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, দেখ খোকা–কী যেন নাম তোমার?

শীশী।

দেখ শীশী। তোমার কথা শুনে রাগে আমার শরীর রি রি করছে। এই বয়সে তুমি যে মিথ্যা শিখেছ…

আপনার ধারণা আমি মিথ্যা কথা বলছি?

অবশ্যই মিথ্যা কথা বলছ। এই মিথ্যা বলার জন্যে তোমাকে কানে ধরে উঠবস করানো দরকার।

বাহ আপনাদের মিথ্যা বলার শাস্তিটা তো খুব মজার?

কানে ধরে উঠবস তোমার কাছে মজা মনে হলো?

অবশ্যই মজার। আমরা মিথ্যা বললে কী শাস্তি হয় জানেন? আমরা মিথ্যা বললে আমাদের পাখায় কালো দাগ দিয়ে দেয়া হয়। যে যত মিথ্যা বলে তার পাখায় ততই কালো দাগ পড়ে।

মোবারক হোসেন এই ছেলের গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতায় আরো মুগ্ধ হলেন। ছেলেটা পড়াশোনায় কেমন কে জানে। ভালো হওয়া তো উচিত।

শোন খোকা— তোমার রোল নাম্বার কত? রোল নাম্বার মানে কী?

ক্লাসে যে পড় তোমার রোল কত?

আমি ক্লাসে যাই না তো। পরীর বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হয় না। আমাদের যা শেখার আকাশে উড়তে উড়তে বাবামার কাছ থেকে শিখি…।

আমি অনেক মিথ্যুক দেখেছি, তোমার মতো দেখিনি। এই দেশের যেকোনো রাজনৈতিক নেতাকে তুমি মিথ্যা বলায় হারিয়ে দিতে পারবে।

আমি মিথ্যা বলছি না তো। এই দেখুন আমি উড়ছি…।

বলতে বলতে ছেলে তিন-চার ফুট উপর উঠে গেল। শূন্যে কয়েক বার ঘুরপাক খেল। আবার নেমে এলো নিজের জায়গায়। হাসিমুখে বলল, দেখেছেন?

মোবারক হোসেন কিছু বললেন না। তিনি দ্রুত মনে করতে চেষ্টা করলেন, সকালে কী নাশতা খেয়েছেন। অনেক সময় বদহজম হলে মানুষের দৃষ্টি বিভ্রম হয়।

আমার কথা কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে?

মোবারক হোসেন সাহেব এবারও জবাব দিলেন না। তার কপাল ঘামছে। পানির পিপাসা পেয়ে গেছে। শীশী বলল, আপনার সঙ্গে তো খেলা হলো না, আরেক দিন এসে খেলব। আজ যাই।

মোবারক হোসেন সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, যাবে কীভাবে? উড়ে চলে যাবে?

হুঁ।

তিনি হাঁ করে তাকিয়ে আছেন। তাঁর হতভম্ব চোখের সামনে দিয়ে ছেলে উড়ে চলে গেল।

বাসায় ফিরতেই তাঁর দেখা হলো বড় মেয়ের সঙ্গে। তিনি তাকে পুরো ঘটনা বললেন। বড় মেয়ে বলল, বাবা, তুমি বিছানায় শুয়ে থাক। আমি আসছি। তোমার মাথায় পানি ঢালব।

কেন?

রৌদে ঘুরে ঘুরে তোমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে, এইজন্যে।

তুই আমার কথা বিশ্বাস করছিস না?

ওমা! কে বলল বিশ্বাস করছি না? করছি তো।

রাতের মধ্যে সবাই জেনে গেল মোবারক হোসেন সাহেবের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজনে বাড়ি ভরে গেল। ডাক্তার এলেন, সাইকিয়াট্রিস্ট এলেন। হুলস্থুল ব্যাপার।

মোবারক হোসেন সাহেবের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসায় তেমন উন্নতি হচ্ছে। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন ঐদিন এক পরীর ছেলের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। দুপুর হলেই তিনি পার্কে যাবার জন্যে অস্থির হয়ে ওঠেন। মাঝে মাঝে চিৎকার-চেঁচামেচিও করেন। তাঁকে যেতে দেয়া হয় না। ছোট্ট একটা ঘরে তাঁকে সব সময়ই তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *