মোটেল

মোটেল

বটুকদা যখন হঠাৎ জুয়ো খেলা ছেড়ে দিয়ে, শ্বশুরের কাঠগুদামের ব্যবসায় দস্তুরমতো পয়সা দিয়ে মোটা শেয়ার কিনে, সভ্যভব্য হয়ে কাজকর্ম নিয়ে দিন কাটাতে শুরু করলেন, তখন ওঁর বুড়ি মা, বৌ আর আত্মীয়স্বজনরা যত খুশি হলেন, বন্ধুরা ততটা হননি। এ আমার ছোটমামার নিজের মুখে শোনা। আগে তিনিই ছিলেন বটুকদার যাকে বলে বুজুম ফ্রেন্ড। এখন বটুকদা তাঁকে একরকম ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন। তাতে খুব ক্ষতিও হয়নি, কারণ আগেকার সেই কথায় কথায় বাজি-ধরা আমুদে বটুকদা আর নেই। ছোটমামার কাছে যেমন শুনলাম, ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। নাকি স্বয়ং বটুকদাকে জেরা করে তিলে তিলে সংগ্রহ করা। সেই কথাই বলি।

বছর দুই আগে জাত-জুয়াড়ি বটুকদা জুয়ো খেলে খেলে দেউলে হয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন। তাই বলে কোপ্‌নি পরে ছাই মেখে সাধু সেজে পথ নেননি। ওসব বটুকদা ঘৃণা করতেন। নিউম্যাটিক স্লিপিং ব্যাগ, টর্চ, ওয়াটার বটল, খুদে হ্যাভারস্যাকে যা-নইলে চলে না এমনি কয়েকটা জিনিস আর যৎসামান্য পথ-খরচা নিয়ে, হাইকার সেজে নৈনিতালের কাছে কাঠগুদামে শ্বশুরের বাংলো থেকে গোপনে বেরিয়ে পড়লেন। লাখ খানেক টাকা জমিয়ে তবে এদের মুখ দেখবে এই প্রতিজ্ঞা।

সারা সকাল হাঁটলেন। দুপুরে টুরিস্ট বিভাগের একটা আস্তানা থেকে একটা আঞ্চলিক ম্যাপ আর রুটি মাখন তাজা চিজ আর ডিম সিদ্ধ কিনে, বোতলে জল ভরে আরো ঘণ্টাখানেক হাঁটবার পর, পায়ের গুলি যখন পাকিয়ে উঠল আর পেট কামড়াতে লাগল তখন দেখলেন একটা ঘন বনের মধ্যে গিয়ে পৌঁছেছেন। অগত্যা একটা বড় বড় পাতাওয়ালা গাছতলায় পা ছড়িয়ে বসে পায়ের গুলি দুটোকে কিঞ্চিৎ ম্যাসাজ করতে বাধ্য হলেন। ভারি আরাম লাগল।

পেট ব্যথাটাও কিছু নয়, স্রেফ খিদের জন্যে। তাছাড়া কালীঘাটের পেটব্যথার মাদুলীও ছিল। তাতেই পেটব্যথা কিছুটা কমল। বাকিটা চলে গেল পেটে কিছু পড়তেই। গাছতলায় পাকা ন্যাসপাতি পড়েছিল। সে যে কী মিষ্টি আর রসাল। এক দিকে একটু বাদুড়ে খুবলানো, সেটুকু পুরোনো পেন-নাইফ দিয়ে কেটে ফেললেই হল। খাবার পর হ্যাভারস্যাক মাথায় দিয়ে একটু বিশ্রাম। পায়ে মিষ্টি রোদ লাগছিল।

বিশ্রাম মানেই ঘুম। সে ঘুম যখন ভাঙল, তখন গাছের ছায়া লম্বা হয়ে এসেছে। রোদটা আর গরম নেই। জলের বোতল থেকে রুমালে একটু জল ঢেলে চোখেমুখে লাগিয়ে, গা ঝেড়ে চাঙা হয়ে উঠে, বটুকদা আবার হাঁটা দিয়েছিলেন। এর আগেই কখন যে পথটা পাহাড়ে উঠতে শুরু করেছিল তা টের পাওয়া যায়নি। এখন নীচে তাকিয়ে বোঝা গেল। অতক্ষণ ঘুমনো ঠিক হয়নি।

এ পথে গাড়ি যায়, অন্তত জিপ যায়। চাকার দাগ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু রাস্তাটা পিচ-ঢালা নয়। হয়তো হিমালয়ে যাবার কোনো বিকল্প পথটথ হবে। কিংবা সাময়িক কিছু। তাহলে এ-পথে কোনো মোটেল বা হোটেল, বা ট্যুরিস্ট হস্টেল থাকার সম্ভাবনা নেই। মনটা একটু দমে গেল। পথে একটা লোক দেখা যাচ্ছিল না; একটা কুঁড়েঘর পর্যন্ত নেই; নেড়ি-কুত্তার ডাক নেই; গোরুর হাম্বা নেই; সবজি-বাগান বা মাকাইক্ষেত নেই! এদিকে আলো কমে আসছে, রাত কাটাবার সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট ক্যান্টিনে এক বুড়ো সায়েব তার কাঁটাওয়ালা বুট সাফ করছিল, সেও বলেছিল এটা পুরনো মিলিটারি পথ। যত তাড়াতাড়ি পার হয়ে যাওয়া যায়, ততই ভালো। আরো ওপরে গেলে একটা “হিন্ডু পিলগ্রিম প্লেস” আছে। সেখানে প্রায় বিনা খরচায় থাকা-খাওয়া মেলে। কিন্তু ম্যাপে পথটাকে চিনতে পারা গেল না।

পাহাড় চড়বার সময় এক কিলোমিটারকে চার কিলোমিটার মনে হয়। কাজেই কতখানি হাঁটা হল বোঝা গেল না। কিন্তু এটুকু বোঝা গেল যে বটুকদা আর হাঁটতে পারছেন না। পথের ধারে একটা পাথরে বসে ভাবলেন, বাকি খাবারটুকু শেষ করে, তলানি জলটুকু গলায় ঢালা যাক, তারপর যা থাকে কপালে। বেশি খিদে পেলে মনে কেমন একটা বেপরোয়া ভাব এসে যায়, এ কথা ভ্রমণকারী মাত্রেই জানে। বটুকদারও তাই হল।

খাবারটা একটা কার্ডবোর্ডের বাক্সে ছিল। সেটা বের করতেই, পাশের ঝোপটা একটু নড়ে উঠল। একটা লোমশ কালো কুচকুচে হাত বেরিয়ে এসে টুপ করে বাক্সটি তুলে নিয়ে আবার ঝোপের মধ্যে ঢুকে গেল। ঝোপ থেকে বিশ্রী কচরমচর শব্দ হতে লাগল। বটুকদা আর বসলেন না।

আগে যদি মনে আশা থাকে, তাহলে সেটা হারালে তবে নিরাশা আসে। বটুকদার সে-সব জিনিস ছিল না। কিন্তু ভয় ছিল, সায়েব বলেছিল বুনো জানোয়ার থেকে সাবধান। ক্লান্তি, খিদে, তেষ্টা, ঘুম— এসবও ছিল। চারদিকের একটানা ঘন বন কোথাও একটু পাতলা হয়ে এসেছে— সেইরকম একটা জায়গায় পৌঁছে, বাঁক ঘুরেই বটুকদা থমকে দাঁড়ালেন। সামনেই একটা বাজপড়া মরা ঝাউ গাছ। আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, লাল টিনের ছাদের একটা দোতলা মোটেল! সারি সারি আলোকিত জানলা দেখে বটুকদা বুকে বল পেলেন। শুধু আলো নয়, লোকজনের হেঁড়ে গলায় হাঁকডাকও কানে এল। এসব জায়গায় হাইকাররাই ওঠে। তাদের গলার স্বর খুব মিষ্টি হয় না।

সদর দরজার ওপর একটা ফুলন্ত লতাগাছ। তার নিচে একটা চারকোণা লণ্ঠন প্যাটার্নের তেলের বাতি ঝুলছিল। ওপরে হয়তো একটা নামও লেখা ছিল, তবে পড়া যাচ্ছিল না। তাছাড়া বটুকদার মাথা বোঁ বোঁ করছিল, পড়বার ক্ষমতাই ছিল না। খোলা জানালা দিয়ে কানে এল মানুষের গলা, নাকে এল রান্নার সুগন্ধ। দরজাটা ভেজানো।

কোনোমতে ধুঁকতে ধুঁকতে, হোঁচট খেতে খেতে, হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকেই বটুকদা মুচ্ছো যান আর কী! এমন সময় কানে এল, “দশটা রূপোর টাকা বাজি, এক মিনিটের মধ্যে লোকটা ভির্মি যাবে! কে বাজি ধরবে?” “ডান্ (DONE)!” বলে বটুকদা মুণ্ডু ঝেড়ে কান-বোঁ বোঁ সারিয়ে, হাত পাতলেন। সব কথাই যে ইংরিজিতে হচ্ছে খেয়াল করলেন না।

“ও মাই গড!” বলে লোকটা পকেট থেকে দশটা টাকা বের করে তাঁর হাতে দিয়ে দিল। অন্যরাও টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে, চারদিকে ঘিরে দাঁড়াল। বটুকদা পেছনের কাঠের বেঞ্চিতে বসে পড়লেন। পায়ে জোর পাচ্ছিলেন না।

লোকগুলো সব বিদেশি হিপি। কারও মুখে বড় চুরুট, কারও বাঁকা পাইপ। লম্বা চুল ঘন জুলপি তার চেয়েও বেশি গোঁপ, কারো কারো দাড়ি। রংচং-এ ওয়েস্টকোট, শার্টের হাত গুটোনো। চিমনিতে কাঠের আগুন জ্বলছিল, কেমন একটা ধুনো ধুনো গন্ধ বেরুচ্ছিল। টেবিলে চাদর নেই, খাটের ওপর এলুমিনিয়ম মগে মোদো গন্ধওয়ালা কিছু আর জোড়া জোড়া তাস, বড় বড় সাদা রঙের ডাইস।

মনটা আনচান করে উঠল। মা-কালী তা হলে ঠিক জায়গাতেই এনে ফেলেছেন! জুয়াড়ির জুয়াড়ি চিনতে দেরি হয় না! হিপিরা ওঁর পিঠ চাপড়ে, হাঁকডাক করতে লাগল, কোই হ্যায়! খানা লাও!” দেখতে দেখতে খানাও এসে গেল। চাকলা চাকলা মাংস রোস্ট, আলু, গোল গোল পাঁউরুটি, তাল তাল মাখন। পুডিং। পানীয়। হিপিরা খায়দায় ভালো। বটুকদা আগেও শুনেছিলেন ওদের অবস্থা ভালো, ব্যবহার ভদ্র। অন্তত বন্ধুলোকের সঙ্গে। এখন তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলেন। খাওয়াদাওয়ার পর বটুকদা সরু মনিব্যাগ বের করে দাম দিতে গেলেন। দলের পাণ্ডা ওঁর হাত সরিয়ে দিয়ে পকেট থেকে এক মুঠো মোহর বের করে চ্যাপ্টামুখ মালিকের হাতে গুঁজে দিল। এ কথা কেউ বিশ্বাস না করলে আর কী করা যায়! চকচকে সোনার মোহর, বটুকদা স্বচক্ষে দেখলেন। সোনা-বাঁধানো দাঁতওয়ালা আধা-চীনে মালিক, পকেট থেকে চামড়ার বটুয়া বের করে ভরল। বটুকদার চোখ থেকে রাজ্যের ঘুম বিদায় নিল। মনের মতো সঙ্গী পেলে অমনি হয়। তিনি ঘরের চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন, সরাইয়ের মালিক ঐ আধা-চীনে হতে পারে না। এখানে রুচির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। দেয়ালে চমৎকার সব বিলিতী ছবির রঙিন প্রিন্ট— পাখি মারার, মাছ ধরার, ঘোড়ায় চড়ার। মেলা খরচ করে এগুলো বিলেত থেকে আনাতে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।

শিরার রক্ত টগবগ করে ফুটতে লাগল। বটুকদা হাঁক পাড়লেন, “আপেলের ছবির নিচেকার সাদা টিকটিকি আরও পিছু হটবে, এই আমি বলে দিলাম।” লাল-চুলে বাঁকা-পাইপ গর্জে উঠল, “কালোর কাছে সাদা হটবে! নেভার! একশো রূপোর টাকা বাজি, সব কালোর মতো এ কালোও আগে হটবে!”

ঠিক যেন ওর কথা শুনতে পেয়ে সাদা টিকটিকি পিছু ফিরে সুড়সুড় করে ছবির পেছনে লুকোল। বটুকদা হাসি চাপলেন। ঘরে কোনো শব্দ নেই! তারপরেই টেবিল চাপড়ে লাল-চুল বলল, “ভাগ্যদেবীকে হাত করেছ দেখছি!” বটুকদার হ্যাভারস্যাকে একশো টাকা উঠল।

এতক্ষণ চুপ করে ছিল পাকা-চুল আধ-বুড়ো। এবার সে বলল, “বড় জানলার কাচে দু-ফোঁটা জল। একশো টাকা বাজি, ডাইনেরটা আগে গড়াবে।” বটুকদা বলে বসলেন, “বাঁ দিকেরটা আগে গড়াবে।” সঙ্গে সঙ্গে হলও তাই! আরো একশো টাকা জমল। এবার সায়েবগুলো একটু বেপরোয়া হয়ে উঠল। যা-তা বাজি ধরতে লাগল আর প্রত্যেকবার বটুকদা জিতলেন।

ঘরের আবহাওয়া আর ওদের মেজাজ ক্রমে গরম হয়ে উঠতে লাগল। সব জাত-জুয়াড়ি। পয়সাকড়িও আছে। টাকা খোয়াবার চেয়ে হেরে যাবার লজ্জা বেশি। সঙ্গে সঙ্গে টাকা শোধ করে দেয়। শেষকালে লাল-চুলে বলল, “শুধু চান্সে এমন হয় না! কিছু জাদুকর্ম করেছ নিশ্চয়!” বটুকদা তখনো অবস্থাটা বোঝেননি। হেসে বলেছিলেন, “জাদুটাদু নয় বন্ধু, মা-কালী আমাকে জিতিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কে পারবে!”

শুনে ওদের চুল-দাড়ি খাড়া। “হোয়াট! ওকে কেউ সাহায্য করছে! তাই বলি শুধু চান্সে একটা নেটিভ কখনো এত জিততে পারে! ওকে তল্লাসী করা হোক। ওর কাছে কোনো শয়তানের কল আছে কি না দেখা যাক! হরিড আগলি ফেলো! যা-তা খায়!”

ওঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সব। বোতাম ছিঁড়ে, পকেট ফেড়ে চুলচেরা তল্লাসি। কিচ্ছু পেল না। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে শার্ট টেনে বের করেই পৈতে চোখে পড়ল। তাতে একটা চাবি আর মা-কালীর পেটব্যাথার মাদুলী বাঁধা। “ও-ও-ওঃ! যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই! ওই দেখ! ডেভিলের কারচুপি! এরি সাহায্যে এতক্ষণ জিতেছে! ছুঁয়ো না! পুড়িয়ে ফেল! মারো ব্যাটাকে।”

অত কষ্টে জোগাড় করা মাদুলীটা আগুনে দেয় আর কী! বটুকদার শরীরে অমানুষিক বল এল। মাদুলী গেলে পেট-ব্যথা কে সারাবে শুনি। হেঁচকা টানে পৈতে ছাড়িয়ে, চাবি আর মাদুলী হাতে চেপে ধরে, সেই শীতের রাতে জিনিসপত্র ফেলে টেনে দৌড়!

পেছনে একটা হৈ-হৈ-রৈ-রৈ, তারপর সব চুপ। নিজের বুকের হাপরের শব্দ ছাড়া কিচ্ছু শোনা গেল না। হাঁপাতে হাঁপাতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাত বারোটায় যখন পাহাড় চূড়োর মঠে গিয়ে পৌঁছলেন, তখন সেখানে জনমানুষের সাড়া নেই। মন্দিরের দরজা চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে। পাথরের মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বলে। তারি সিঁড়িতে গিয়ে আছড়ে পড়লেন। আবছা মনে হল মন্দির থেকে দু-চার জন কম্বলমুড়ি দেওয়া বুড়ো মানুষ “ই ক্যারে!” বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন। তারপর আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান হল পরদিন সকালে, সূর্য ওঠার অনেক পর। দেখলেন কে তাঁর জুতো ছাড়িয়ে, কোট ছাড়িয়ে, লেপ-কম্বল চাপা দিয়ে দিয়েছে। সব কষ্ট দূর হয়েছে।

বটুকদাকে উঠে বসতে দেখে একজন সাধু এসে তাঁকে বড় এক গেলাস মিষ্টি দুধ খাইয়ে, হাসিমুখে বললেন, “ভালো বোধ করছ তো, বাবা?” ধড়মড় করে বটুকদা পৈতে হাতড়ালেন, নাঃ, চাবি আর মাদুলী ঠিকই আছে।

খুব আদর যত্ন করলেন সাধুরা। এখানে তীর্থযাত্রী কম আসে। লোকে ভয় পায়। এখানকার শিব নাকি যার ওপর চটেন তাকে নাকাল করেন; যার ওপর খুশি হন তাকে অজস্র দেন। সবই হল, কিন্তু কাল রাতের কথা ওঁরা বিশ্বাস করলেন না। বললেন, “বেশি ক্লান্ত হলে মানুষ ভুল দেখে। খাওয়াদাওয়ার পর চল জায়গাটা দেখেই আসা যাক। তোমার ভুলও ঘুচবে আর জিনিসপত্রও উদ্ধার হবে।”

সে বিষয়ে বটুকদার যথেষ্ট ভয় ছিল। গেলেন সবাই। বাজপড়া ঝাউগাছ চিনতে খুব অসুবিধা হল না। তার পেছনে শ্যাওলা ধরা পুরনো বাড়ির ভাঙা ভিতের খানিকটা দেখা যাচ্ছে। খানিকটা আগাছায় ভরা সমান জায়গা। তার ওপর দিয়ে একটা ফুলন্ত লতা গাছ। বাড়িটাড়ির চিহ্ন নেই।

এতক্ষণ পরে বটুকদার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। আগাছার মধ্যিখানে বটুকদার নিউম্যাটিক বেডিং-ব্যাগ আর হ্যাভারস্যাক পাশাপাশি রাখা আছে।

বড় সাধু হেসে বললেন, “যা বলেছিলাম, এই অবধি এসে ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়েছিলে। মনও ভালো ছিল না। বাকি সব স্বপ্ন দেখেছ। এবার চল, ক’দিন আমাদের কাছে কাটিয়ে যাও। তারপর কী করবে দেখা যাবে।”

জিনিসগুলো বড্ড ভারি মনে হচ্ছিল, শরীরটা তখনো ধাতস্থ হয়নি। হ্যাভারস্যাকটা সাধুদের একজন তুলে নিলেন।

মঠে পৌঁছে হ্যাভারস্যাক খুলে বটুকদার চক্ষুস্থির! তার মধ্যে রাশি রাশি মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মুখ-দেওয়া বড় বড় রুপোর টাকা! বড় সাধু বললেন, “বলিনি আমাদের দেবতা যার ওপর খুশি হন, তাকে কোল ভরে দেন। কাল রাতে ঘুমের ঘোরে ঘরের কথা অনেক বলেছিলে বাবা।” “কিন্তু— কিন্তু এ ত পুরনো টাকা!” “তাতে কী! দেবতাদের ট্যাঁকশালের তারিখ থাকে না।”

পনেরো দিন ছিলেন ওখানে বটুকদা। তারপর কাঠগুদামে ফিরে গেলেন। তার আগে মঠের দরিদ্র ভাণ্ডারে একশো রুপোর টাকা দিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো পাহাড়তলীর জহুরী পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিলেন। তিনিও মঠের ভক্ত। বাকি টাকাগুলোও তিনি নিলেন। বটুকদাও নিশ্চিন্ত হয়ে কাঠগুদামে শ্বশুরের ব্যবসায় শেয়ার কিনে, কাজকর্মে মন দিলেন। জুয়োখেলাও চিরকালের মতো ছেড়ে দিলেন। প্রতি বছর পুজোর সময় ওঁরা পায়ে হেঁটে মঠে যান। আমার ছোটমামাও নাকি এবার সঙ্গে যাবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *