মোগলমারির আবিষ্কৃত বৌদ্ধমহাবিহার : প্রত্নকথা
উৎখননের ইতিবৃত্ত ও সংবাদ শিরোনামে মোগলমারি
ইতিহাস ও পর্যটন
বৌদ্ধ প্রভাব

মোগলমারি : আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক

মোগলমারি : আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক – সন্তু জানা

বৈচিত্র্যময় মেদিনীপুর জেলার শাল-মহুয়ার জঙ্গলময় প্রাচীন মৃত্তিকার কাঠিন্য এবং নীলাধার সাগর ও নদীবিধৌত পলিমৃত্তিকার নম্রতা মিলেমিশে একাকার হয়ে সৃষ্টি করেছে এক ঐতিহ্যের পথ, যার বিস্তার বৌদ্ধ তাম্রলিপ্ত থেকে শুরু করে প্রাচীন দন্ডভুক্তি (দাঁতন) পর্যন্ত এবং অতঃপর কলিঙ্গ (উড়িষ্যা) অভিমুখে যাত্রা। মেদিনীপুরের মধ্যে দিয়ে উৎকল-প্রদেশে প্রবেশের একটি প্রাচীন পথ বিরাজমান ছিল। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের এক চৈত্রমাসের প্রাতঃকালে নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্যদেব এই জগন্নাথ সড়ক ধরেই নীলাচলে যাত্রা করেন জগন্নাথ দর্শনার্থে। জগন্নাথ মিশ্র লিখেছেন—

শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য দেবনদ পার হৈঞা
উত্তরিলা তাম্রলিপ্তে সেয়াখাল দিঞা।
অন্যত্র দাঁতন, জলেশ্বর পার হঞা
উত্তরিলা . . .

দীর্ঘ কয়েকশো বছর ধরে কালে কালে এই অঞ্চলে জৈন, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের প্রভাবে শিল্প-স্থাপত্যের অভিনব নির্মাণ ঘটেছে। যুগ যুগ ধরে প্রাচীনত্বের মশাল প্রজ্জ্বলন করে আলোকিত হয়েছে দন্ডভুক্তির তথা দাঁতনের ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট উপাদান হল ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে ড. অশোক দত্তের তত্ত্বাবধানে সংগঠিত খননকার্যে প্রাপ্ত মোগলমারির বৌদ্ধবিহার। মোগলমারির গর্ভে সঞ্চিত এই বিপুল ও বিশাল প্রত্নসম্পদ প্রমাণ করেছে স্বর্ণাভ সুবর্ণরেখা নদীর নির্মল পবিত্র প্রবহমান জলরাশির কলকল ধ্বনিতে কোনো এককালে মুখরিত হয়েছিল—‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি। ফাসিয়ান (ফা-হিয়েন), সুয়ান জাং, ইৎ-সিং প্রমুখ বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধির কথা লিখেছেন এবং আরও অনেকগুলি বৌদ্ধ সংঘারাম-এর পরিচয় তাঁরা দিয়েছেন। তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের নিকটেই অবস্থিত দাঁতনের মোগলমারির বৌদ্ধবিহার অবশ্যই তাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধবিহার আমাদের দেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে নিশ্চয়ই। দীর্ঘকাল চাপা থাকা মোগলমারি আঞ্চলিকতার বেড়া টপকে আন্তর্জাতিক স্তরে কীভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল আমরা জেনে নিতে চাই। এই নিবন্ধে আমরা দেখব কীভাবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে মোগলমারির এই বৌদ্ধবিহার, কীভাবে হয়ে উঠেছে দেশ-বিদেশের সাহিত্য, ইতিহাসচর্চা ও গবেষণার এক অন্যতম বিষয়বস্তু। বিভিন্ন ভাষার সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকা অন্যান্য গণমাধ্যমগুলিতেও যে অতুলনীয় আলোড়ন তুলেছে তাও আমাদের অনুধাবনের বিষয়।

প্রথম পর্ব

ইতিহাসের পাতায় মোগলমারি

ক. দাঠাবংস (Dáthávamsa)

বৌদ্ধ সাহিত্য ব্যতীত ভারতীয় সাহিত্য ভাবাই যায় না। পালি ভাষায় রচিত ‘ইতিহাস’ (chronicle) বা ‘বংস’ (vamsa)-গুলি তাই বৌদ্ধ সাহিত্যের আকর গ্রন্থ হিসেবে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে প্রাচীনত্ব ও মহত্ত্ব প্রদান করেছে। পালি শব্দ ‘vamsa’ কথার অর্থ হল—জাতি, বংশ, নিয়ম ও ধর্মপ্রচারকদের ইতিহাস। প্রথম এই ‘vamsa’-গুলি রচনা করেন শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধভিক্ষুরা। ইতিহাসকে বহু ক্রোশ পেছনে টেনে নিয়ে গিয়ে আদি অনন্তকালকে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা করে যেসব বৌদ্ধ ‘vamsa’, সেগুলি হল—Thupavamsa, Mahávamsa, Culavamsa, Dipavamsa, Mahabodhivamsa, Dáthávamsa, Viharavamsa এবং Sásanavamsa প্রভৃতি। আমাদের আলোচ্য বিষয় হল দাঠাবংস। এই অংশটি মোট ৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত এবং বুদ্ধদন্ত পরিক্রমণের রোমাঞ্চকর কাহিনি নিয়ে রচিত। তথাগত বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর একটি দাঁত কীভাবে কলিঙ্গরাজ্যের যুবরাজ দন্তকুমার কতৃক সিংহলে পৌঁছোল তা সত্যি বিস্ময়ের। এই দাঁত এখনও শ্রীলঙ্কায় পূজিত হয়।

বৌদ্ধভিক্ষু ধর্মকৃত্তি (Dhammakritti) কতৃক রচিত দাঠাবংস (Dáthávamsa) মূল পালি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন R D Rhys Davids ও R Morris, JPTS (১৮৮৪)। এই ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে বলা যায় যে, ঐতিহাসিক দন্তপুর থেকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের মাধ্যমে বুদ্ধের একটি দাঁত কলিঙ্গ যুবরাজ দন্তকুমার পৌঁছে দেন সিংহলে :

Dáthávamsa founded on an older, and … no longer extant Dalada-vamsa in Sinhalese, by Dhammakritti of pulasti-putra … in the latter part of the 12th Century AD, tells a pseudo-historical tale of the miraculous transfer of the tooth relic of Buddha from Kalinga to Srilanka by Hemalata and Danta Kumar from the port of Tamralipta: Agamum-aturita te pattanam Tamalittim.

পরবর্তীকালে দন্তপুর বা দন্তপুরী শহরের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে দাঠাবংস-এ উল্লেখিত আছে—

‘Dantapure Kalingassa Brahmadattassa rajino’ নামের মিলের জন্য বিভিন্ন ঐতিহাসিকেরা বলেছেন যে, দন্তপুর হল আজকের আধুনিক দাঁতন। মোগলমারিতে আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার এ বিষয়ে আরও জোরালো সওয়াল করে। অনেকে অন্ধ্রপ্রদেশের ‘রাজমহেন্দ্রী’-কে ‘দন্তপুর’ বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু ঐতিহাসিক যোগেশচন্দ্র বসু তাঁর মেদিনীপুরের ইতিহাস গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে মত পোষণ করেছেন যে, যদি ‘রাজমহেন্দ্রী’ ‘দন্তপুর’ হবে তাহলে নিকটবর্তী বন্দর ‘পুরী’ হতে পারত, অবশ্যই কয়েকশো মাইল দূরের ‘তাম্রলিপ্ত’ হবে না। বরং তাম্রলিপ্তের নিকটবর্তী দাঁতন হতে পারে প্রাচীন ‘দন্তপুর’।

খ. সি-য়ু-কি— (Si-Yu-Ki)

চৈনিক পরিব্রাজক সুয়ান জাং (xuan xang, c. 596-664) ভারত পরিভ্রমণে এসে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বিকাশের ধারা বর্ণনা করেন Si-Yu-Ki গ্রন্থে। মূল চীনা থেকে বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন Samuel Beal, নাম দেন—si-yu-ki: Buddhist Records of the Western World (১৮৮৪)। এই অমূল্য ইতিহাস গ্রন্থের vol.2, Book-x (পৃষ্ঠা – ২০০-২০১) —‘Ta-mo-li-ti’ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে প্রাচীন তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধি ও তৎসংলগ্ন ১০টি বৌদ্ধ সংঘারামের কথা। তমলুকের কাছেই অবস্থিত মোগলমারি তারই অন্যতম হতে পারে। si-yu-ki অনুসারে—

This country is 1400 or 1500 li in circuit, the capital about 10 li. It borders on the sea, the ground is low and rich; it is regularly cultivated… The men are hardy and brave. There are both heretics and believers. There are about 10 ‘sangharamas’ with about 1000 priests. The deva temples are 50 in number, in which various sectaries dwell mixed together. The coast of this country is formed by recess of the sea; the water and the land embracing each other. Wonderful articles of value and gems are collected here in abundance and therefore the people of the country are in general rich.

By the side of the city is a ‘stupa’ which was built by Asoka-raja by the side of it are traces where the four past Buddhas sat and walked. Going from this North-West 700 li or so, we come to the country ‘Kie-lo-na-su-fa-la-na (‘Karnasuvarna’).

গ. আইন-ই-আকবরি (Ain-I-Akbari)

ভারতে মোগলযুগের তৃতীয় পুরুষ আকবরের রাজত্বকালের একমাত্র সরকারি ইতিহাস আকবরনামা রচনা করেন সভাকবি আবুল ফজল। এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি মোট তিনটি খন্ডে বিভক্ত। শাসনকার্য (administrative report) সম্পর্কিত তৃতীয় খন্ডের নাম ছিল আইন-ই-আকবরি। রচনাকাল ১৬ শতকের শেষভাগ এবং পরিসমাপ্তি ঘটে ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীকালে, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতাস্থিত ‘Asiatic Society’-র বিখ্যাত ‘Bibliotheca Indica’ সিরিজের অন্তর্গত এই ঐতিহাসিক দলিলের মূল ফারসি থেকে সরাসরি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন Heinrich Blochmann। Blochmann-এর লেখা Ain-I-Akbari by Abul-fazl Allami গ্রন্থের vol-1 (পৃষ্ঠা ৩৭৬) থেকে আমরা ‘মোগলমারির যুদ্ধ’-এর ইতিহাস জানতে পারি।

Now from the facts that the battle took place soon after the Imperialists had left Chittua which lies a little E.E.N. of Medinipur and that after the victory Rajah Todar Mall, in a pursuit of several days, pushed as far as Bhadrak, I was led to conclude that the battle must have taken place near ‘Jalesar’ (Jellasore) and probably north of it as Abul-fazl would have mentioned the occupation of so large a town. On consulting the large Trigonometrical of Orissa lately published, I found on the road from Medinipur to Jalesar the village ‘Mogulmaree’ (Mughalmari, i.e. Mughal’s fight), and about seven miles southwards, halfways between Mughalmari and Jelasar, and two miles from the left bank of the Soobanreeka river, the village of Tookaroe.

According to the map the latitude of Mughalmari is 22o, and that of Tookaroe, 21o53’ nearly. There can be no doubt that the ‘Tookaroe’ is the ‘Takarai’ of the ‘Akbar-namah’. The battle extended over a large ground. Badaoni speaks of three, four kos, i.e. about six miles and thus the distance of Takaroi from Mughalmari is accounted for.

ঘ. রিয়াজু-স-সালাতিন (Riyáju-s-sálátin)

এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি প্রাচীন বাংলার মুসলিম শাসনের ওপর আধারিত প্রথম সম্পূর্ণ ইতিহাস। পারসি ভাষায় এটি রচনা করেন Ghulam Hossain Salim Zaidpuri। ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজির বাংলা (নদিয়া) আক্রমণ ও জয়লাভ থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিরাজের ইংরেজবিরোধী ‘পলাশির যুদ্ধ’ পর্যন্ত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে এই অমূল্য গ্রন্থে। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ‘Asiatic Society’-র বদান্যতায় Maul Avi Abdus Salam সর্বপ্রথম এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। বইটি থেকে, বাংলার দক্ষিণে আফগান কতৃত্বের অবসান ও মোগলদের রাজ্যবিস্তারের এক সন্ধিক্ষণের প্রেক্ষাপটে আমরা মোগলমারি-র কথা জানতে পারি (পৃষ্ঠা ১৬) —

The complete defeat of the Hindus took place in 1567-68 A.C. when Suleiman karrani, King of Bengal, with a large army under his famous general kálápahar advanced into Orissa and defeated the last independent Rajah Makand Deo under the walls of Jajpur and Katak when subsequently in Akbar’s time the Afghan Kingdom of Bengal was supplanted by Mughals, the Afghans in large numbers migrated into Orissa. In 1575 A.C. a great battle took place between Mughals and Afghans (at Bajhura, Badaoni, P.193) at Moghalmari, near Jaleswar in Balasore in which Daud, the last Afghan king was defeated and flanked to Orissa practically shortly after (1592 A.C.) became a Mughal province, administered by the Mughal viceroy of Bengal.

ঙ. বাংলা জেলা গেজেটিয়ার্স, ১৮৭৩ মেদিনীপুর (Bengal District Gazetteers : 1873)

১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট তারিখে প্রকাশিত হয় Bengal District Gazetteers: Midnapore, no. 207। এই গ্রন্থে তৎকালীন মেদিনীপুরের জেলা কালেক্টর Harrison তাঁর মূল্যবান তথ্য সংবলিত লেখা ‘Report on the Archaeology of the District of Midnapore’-এ দক্ষিণ মেদিনীপুরে অবস্থিত ‘মোগলমারি’-র প্রাচীনত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করে লিখেছেন:

On the occasion of excavating earth to get out bricks and stones for the use of Rajghat road under construction several magnificent remains of old buildings have been discovered at ‘Satadaulla’ and ‘Mughalmari’ and brick and stones, it is estimated have been dug out numbering about 26 laks and some crores yet lie buried under the ground. From these it appears that the above place were once the residence of the ancient Rajas and exceedingly populous.

চ. বাংলা জেলা গেজেটিয়ার্স : মেদিনীপুর ১৯১১ (Bengal District Gazetteers : 1911)

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ‘The Bengal Secretariat Book Depot’ থেকে প্রকাশিত হয় Bengal District Gazetteers : Midnapore। রচনা করেন বেঙ্গল গেজেটিয়ার্সের প্রকৃত জনক LSSO’ Malley। ম্যালী গেজেটিয়ার্সের ২৯-৩০ পাতায় ঐতিহাসিক ‘Battle of Mughalmari’-র তথ্য প্রদান করেছেন এবং ২৫৬নং পৃষ্ঠায় লিখছেন—

Mughalmari : a village in the Midnapore subdivision situated about two miles north of Dantan. The name means the slaughter of the Mughals … . Remains of old buildings have been found, the numerous old bricks and stones unearthed, during the excavations made for the Rajghat road.

ছ. আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ময়ূরভঞ্জ, ১ম খন্ড (Archaeological Survey of Mayurbhanja, Vol. 1)

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ রাজ্যের অধিপতি প্রকাশ করলেন Archaeological Survey of Mayurbhanja, vol. 1। গ্রন্থখানি রচনা করলেন ঐতিহাসিক নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়। দাঁতন-সংলগ্ন অঞ্চল পূর্বে উড়িষ্যার অন্তর্গত থাকার দরুন এই গ্রন্থে ‘মোগলমারি’ প্রসঙ্গও এসেছে। সূচিপত্রে ‘Ruins of Cacisena at Mughalmari’ নাম দিয়ে চিহ্নিত হয়েছে, পৃষ্ঠা নং ১১২। মোগলমারি ‘সখিসোনার পাঠশালা’ থেকে দাঁতনের ‘সাত-দেউল’ অথবা রাজা বিক্রমজিৎ থেকে জাগ্রত শ্যামলেশ্বর জিউ মন্দির—প্রাচীন দাঁতন ইতিহাসের পুরো প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে এই গ্রন্থে। প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর ভাষায়—

In the south of the village is the temple Chandanecvara Mahadeva. There is a tradition current here to this effect that this Chandanecvara is ‘Sayambhu (self-evolved) linga’ and it was installed by the queen of Vikramjit. Daily she came there to worship this God, while her husband went daily to Dantan to offer his homage to the famous image of Cyamalecvara. At that time the principal gate of Mughalmari was close to the Sat-deul of Dantan.

By the side of the entrance into Mughalmari from the side of Dantan is a mound generally called ‘pathcala of Cacisena’. Completely lost in ruins now, it was at one time a big structure of oblong shape, measuring 120 ft. from east to west 110 from north to south. Hidden under its debris, and scattered all around are to be found heaps of large bricks; and elderly natives assert that formerly a much larger quantity of this material was lying about in heaps which the people of the adjacent villages have since utilized for their private purposes. Even now over and along the road, half a mile in length, which runs from the ‘gada’ of cacisena to the ruins of the palace of Vikramjit in the heart of the village are to be found remnants of brick-built structures. These bricks are like thin tiles in construction and measure about 1´ × 11˝ each.—

এই গ্রন্থ থেকেই জানা যায় যে, তৎকালীন পুরী রোডের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই ‘সখিসোনার পাঠশালা’-কে ঘিরে ছিল তিনটি সুবিশাল দীঘি তথা পশ্চিম দিকে ‘পালদীঘি’, দক্ষিণ পার্শ্বে ‘ধনদীঘি’ এবং উত্তর প্রান্তে ছিল ‘বড়োদীঘি’। শ্রদ্ধেয় নগেন্দ্রনাথ এক্ষেত্রে স্বীকার করেছেন যে, ‘প্রাচীন ময়ূরভঞ্জ’ রাজ্যের অবস্থান ও প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কারের এই পর্বতপ্রমাণ কর্মে তাঁকে যথাযোগ্য সাহায্য করেছিলেন তৎকালীন সময়ের দ্য এশিয়াটিক সোসাইটির মুখ্য ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত ভাষাবিদ এ জি গ্রিয়ারসন এবং মহামহোপাধ্যায় পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়।

জ. রুলারস অফ ইন্ডিয়া; আকবর (Rulers of India; Akbar)

London-এর ‘Oxford University Press’ থেকে প্রকাশিত মোগল যুগে ভারত সম্পর্কিত আকর ইতিহাস গ্রন্থ—Rulers of India : Akbar রচনা করেন George Bruce Malleson এবং সম্পাদনা করেন Sir William Wilson Hunterz। এই গ্রন্থে ‘মোগলমারি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে:

The early part of the following year 1575, was occupied with the pursuit of Daud and the conquest of Orissa. I have already stated how the Afghan prince was defeated at ‘Bajhura’, midway between Mughalmari and Jaleswar, and how pursued to and invested in Cuttack, he had surrendered. The treaty concluded with him provided that he should govern the province of Orissa in the name and on behalf of the emperor Akbar.

ঝ. হিস্টরি অফ মিদনাপুর, তৃতীয় খন্ড (History of Midnapur Vol. 3)

কেবলমাত্র ইতিহাসের সূত্র ধরে এগিয়ে চলা নয়, ‘মোগলমারি’-র ‘সখিসোনার ঢিবি’ আবার প্রাচীন জনশ্রুতি ও কিংবদন্তি গল্পগাথার এক আশ্চর্য মেলবন্ধনও বটে। ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস রচনা সমিতি’ কতৃক প্রকাশিত, নরেন্দ্রনাথ দাস কতৃক রচিত History of Midnapur ইতিহাস গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডে অন্তর্ভুক্ত ‘Report on the Archaeology of the District Midnapore’ নিবন্ধে তাই আমরা ঐতিহাসিক দাঁতন-কে কেন্দ্র করে কিংবদন্তি গল্পে পেয়ে যাব, দাঁতন-সংলগ্ন ‘মোগলমারি’, ‘শরশঙ্কা’, ‘সাতদেউলা’ বা ‘রায়বনিয়া’-র কথা। এসবের সঙ্গে অবশ্যই মোগলমারির বৌদ্ধবিহারের যোগ আছে। কারণ ইতিহাস হল অতীত, আর অতীত লুকিয়ে থাকে জনশ্রুতিতে:

Dantoon is about 36 miles south of Midnapur, and midway between it and Balasore. It was a large caravan serai for pilgrims of Juggernath, about a mile in length, and containing about five hundred inhabitants … the learned pundit Jadunandan about 300 years ago on the occasion of introducing himself to Muktimandup in Juggernath has given the history (of Shyamaleswara Shiva), from which it would appear that Dantoon is a village of old standing … Mogulmari is a village about two miles north of Dantoon … This Mogulmari was anciently called Amarabati puri. Its Rajah was known by the name of Bikramkesari. He had a daughter by the name of Shashisena … this lad (Ahimanik) of Rajah’s minister was sent to the same pathsala with shashisena. It was called the Shashisena’s pathsala just close to Mogulmari, and is still known by that name … They married privately (Gandharba vivaha) and fled one night on horseback … The distance between Satdaulla and Mugulmari is only five miles … Rajah Madhab Chandra was the king of Satdaulla. His capital was at Raibuni, six miles north of satdaulla.

ঞ. মেদিনীপুরের ইতিহাস: যোগেশচন্দ্র বসু

বাংলা ১৩২৮ বঙ্গাব্দে (ইং-১৯২১ খ্রিস্টাব্দে) বিখ্যাত ইতিহাসবিদ যোগেশচন্দ্র বসুর গবেষণামূলক ইতিহাসগ্রন্থ মেদিনীপুরের ইতিহাস প্রকাশিত হয় কলকাতার ‘কালিকা’ প্রেস থেকে। এই গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে মোগলমারি সম্পর্কিত যে-তথ্য আমরা পাই, তা হল—

 …দাঁতনের দুই মাইল উত্তরে অবস্থিত মোগলমারি…গ্রামে একটি মৃত্তিকা ও ইষ্টকস্তূপ ‘শশিসেনার পাঠশালা’ বলিয়া অদ্যাপি অভিহিত হইয়া থাকে। জনশ্রুতি ওইস্থানে রাজা বিক্রমকেশরীর কন্যা শশিসেনা বা সখিসোনার সহিত অহিমানিকের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। শশিসেনা নানা বিদ্যায় ও নানা শাস্ত্রে সুশিক্ষিতা ছিলেন। তাঁহার বিদ্যাবত্তার অনেক কাহিনি এতদঞ্চলে প্রচলিত আছে।

ট. পুরাকীর্তি সমীক্ষা : মেদিনীপুর : তারাপদ সাঁতরা

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারি বিশিষ্ট আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তারাপদ সাঁতরা-র পুরাকীর্তি সমীক্ষা : মেদিনীপুর নামক অমূল্য গ্রন্থটি প্রকাশ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিকার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মেদিনীপুর জেলার শতাধিক বছরের প্রাচীন ও উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল ও পুরাবস্তুর প্রায় যাবতীয় বিবরণ পরিবেশিত হয়েছে এই আকর গ্রন্থে। সমীক্ষকের মতে—রাজেন্দ্র চোলের তিরুমলয় লিপি-তে (১১শ শতক) এবং সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত-এ (১১শ-১২শ শতক) যথাক্রমে ‘তন্ডবুত্তি’= দন্ডভুক্তি ও দন্ডভুক্তিমন্ডল-এর উল্লেখ আছে। এই দন্ডভুক্তি বর্তমান মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ; বর্তমান দাঁতন দন্ডভুক্তির স্মৃতিবহ। ‘মোগলমারি’ প্রসঙ্গে তিনি ৮০-র দশকের কথা লিখেছেন অত্যন্ত সুচারুভাবে।

 গ্রামটিতে প্রবেশ করতে গেলেই সামনে পড়ে এক সুউচ্চ ইটের গাঁথনিযুক্ত মাটির ঢিবি। পুরা ঢিবির দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ২ একর ও উচ্চতায় প্রায় ১৫´ (৪.৬মি)। সমগ্র গ্রামটিতেই ইতস্তত ইটের গাঁথনি ও অসংখ্য খোলামকুচি দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে মাটি খোঁড়ার সময় একটি ক্ষুদ্রাকার ঋষভনাথের মূর্তিও এখানে পাওয়া যায়। অনুমান করা যায়, হয়তো এ গ্রামে একদা প্রতিষ্ঠিত ছিল কোনো প্রাচীন মন্দির বা সৌধ। তবে সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন বাঞ্ছনীয়।

দাঁতন থানার এলাকাধীন মোগলমারি গ্রাম (জে এল নং ৭৩) প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের এহেন অনুমান সমীক্ষকের প্রত্যক্ষ দূরদৃষ্টির পরিচায়ক।

ঠ. দাঁতনের ইতিহাস : ললিতমোহন সামন্ত

‘প্রতিকথার’ পক্ষ থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে দাঁতন থেকে প্রকাশিত হল সাহিত্যবিনোদ ললিতমোহন সামন্তের লেখা দাঁতনের ইতিহাস। এই গ্রন্থে সেই কবে ১৯৫২খ্রিস্টাব্দেই তিনি লিখে গিয়েছিলেন মোগলমারির ‘সখিসোনার পাঠশালা’ নামক ঢিবিতে সঞ্চিত প্রত্নসম্ভাবনা ও কিংবদন্তি গল্পকথা। সদ্য স্বাধীন ভারতবর্ষের বুকে দাঁড়িয়ে তিনি লিখে গিয়েছিলেন দাঁতনের ইতিহাস, যা সদ্য গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেল। ‘মোগলমারির’ প্রসঙ্গে লেখক লিখেছেন:

দাঁতন হইতে দুই মাইল উত্তরে উড়িষ্যা ট্রাঙ্ক রোড হইতে অনতিদূরে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ মোগলমারি গ্রামটি অবস্থিত। ইহার প্রাচীন নাম অমরাবতী। দন্ডভুক্তির রাজা কর্ণকেশরীর পর বিক্রমকেশরী নামে এক ক্ষুদ্র সামন্ত রাজা এই প্রাচীন অমরাবতী নগরীতে রাজত্ব করেন। ইঁহার রাজত্ব মেদিনীপুরের তিন ক্রোশ উত্তরে কর্ণগড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাজা বিক্রমকেশরীর একমাত্র কন্যার নাম শশিসেনা বা সখিসোনা। ইনি পিতার একমাত্র কন্যা হেতু পিতার আগ্রহে নানা শাস্ত্রে প্রভূত জ্ঞানার্জন করেন। অহিমানিক নামে কোনো এক দেশের রাজকুমার হঁহার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হইয়া হঁBহাকে বিবাহ করেন। প্রায় তিনশত বৎসরের আরও পূর্বে বর্ধমানের এক কবি, নাম ফকিররাম ইঁহাদের দাম্পত্য প্রণয়কাহিনি অবলম্বনে একটি কাব্য লিখিয়া অমর হইয়াছেন। রাজা বিক্রমকেশরীর সম্বন্ধে আর বিস্তৃত কোনো বিবরণ পাওয়া যায় নাই। মোগলমারির বর্তমান ‘স্তূপ’-কে কেহ কেহ শশীসেনার বিরাট পুস্তকাগার বলিয়াছেন। এবং সুবোধ ঘোষ মহাশয় তাঁহার কিংবদন্তীর দেশে গ্রন্থে ‘সখিসোনার পাঠশালা’ নামক গল্পে তা লিখিয়া গিয়াছেন।

কথিত আছে যে, রাজা বিক্রমকেশরীর রাজধানী প্রাচীন অমরাবতীনগর মুসলমান রাজত্বকালে বদলে ‘মোগরমারি’ হয় এবং আরও পরে হয় ‘মোগলমারি’। প্রাচীন অমরাবতী প্রসঙ্গে লেখকের অভিমত হল—

অমরাবতী যে অতিপ্রাচীন শহর তাহার ভগ্নস্তূপ ও প্রত্নদ্রব্যগুলি দেখিলে বেশ প্রতীতি হয়। সম্ভবতঃ ইহা অশোকের কলিঙ্গ বিজয়ের পর বৌদ্ধমঠরূপে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই অমরাবতী বা বর্তমান মোগলমারি গ্রামের একটি ভগ্নস্তূপের সামান্য অংশমাত্র খননকালে একটা ৭ইঞ্চি পরিমিত বুদ্ধমূর্তি ও একটি শিবলিঙ্গ আবিষ্কৃত হইয়াছিল। উক্ত আবিষ্কৃত বুদ্ধমূর্তি দাঁতন সাধারণ পাঠাগারে সংরক্ষিত আছে। এমনকী মোগলমারি পার্শ্ববর্তী ঝরি, জয়রামপুর, সাতদৌলা প্রভৃতি ইহার চতুপার্শ্বস্থ গ্রামগুলিতে অনেক ভগ্ন, অভগ্ন প্রাচীন প্রস্তর- মূর্তির সন্ধান পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের অনুসন্ধিৎসার জন্য উহা দৈনিক বসুমতী, স্বরাজ ও সংগঠন প্রভৃতি পত্রিকায় লেখক কতৃক প্রচারিত হইয়াছিল।

সত্যি, লেখকের এরূপ অনুমান দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে হয়। বইটি থেকে আরও জানা যায় যে, আকবর যখন দিল্লির সিংহাসনে আসীন তখন রাঢ়ের শাসনকর্তা ছিলেন আফগান পাঠান সুলেমান কররানী (১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে)। পরে সুলেমানের পুত্র দায়ুদ খাঁ বিরাট ভারত সাম্রাজ্য জয়ের দুরাশায় মত্ত হয়ে সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। পরবর্তী বহু যুদ্ধবিগ্রহের পরে আকবর সেনাপতি টোডরমল পাঠানদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করলে দাউদ খাঁ হতাশাগ্রস্ত হয়ে ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে পরাজয় স্বীকার করেন এবং মোগলদের সঙ্গে সন্ধি করে কটকে পলায়ন করেন। মোগল-পাঠানের এই রক্তক্ষয়ী মহাসংগ্রামের স্থান আকবরের আইন-ই-আকবরি-তে নির্দেশিত হয়েছে। এই যুদ্ধক্ষেত্র ‘টকারুই’ নামক স্থানে ৬ মাইলব্যাপী বিস্তৃত ছিল। ‘টকারুই’-র বর্তমান নাম ‘তুরকা’ বলে অনুমান করা যায় এবং এর ৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে মোগলমারি নামক স্থানে অবস্থিত যা ইতিহাসখ্যাত ‘মোগলমারির যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। প্রথিতযশা ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকারের মতানুসারে প্রকৃতপক্ষে, বাংলা-উড়িষ্যা সীমান্ত অঞ্চলের বিখ্যাত মোগল-পাঠান যুদ্ধটি মোগলমারি থেকে ৬ মাইলের মধ্যে ‘নহঞ্জরা’ নামক গ্রামে হয়েছিল। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে যুদ্ধটি তিনটি ভাগে সম্পন্ন হয়েছিল বলে মনে করা হয়—প্রথমে ‘টকারুই’, দ্বিতীয়ত মোগলমারিতে মোগলদের পরাজয় এবং অতঃপর ‘নহঞ্জরা’ নামক স্থানে ‘পাঠানদের শেষ ভাগ্য নিরূপিত হয়’।

এ ছাড়াও অন্যান্য বহু ইতিহাস গ্রন্থে মোগলমারির ঐতিহাসিক, প্রাচীন জনশ্রুতি এবং কিংবদন্তি গল্পকথার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। সেইসব গ্রন্থের একটি তালিকা নিম্নে প্রদান করা হল—

 ১. দাঁতনের ইতিহাস—পন্ডিত যদুনন্দন, আনুমানিক ১৬৬৫।

 ২. মেদিনীপুরের ইতিহাস—ত্রৈলোক্যনাথ পাল, ১৮৯৫।

 ৩. বাঙ্গালার ইতিহাস—রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯০৮।

 ৪. বাঙ্গালীর ইতিহাস—ড. নীহাররঞ্জন রায়, ১৯৫০, দে’জ।

 ৫. মেদিনীপুর জেলার প্রত্নসম্পদ—প্রণব রায়, প্রত্নতত্ত্ব অধিকার, প. ব. সরকার, ১৯৮৬।

 ৬. মেদিনীপুর সম্পদ—হরিসাধন দাস, ১৯৮৭।

 ৭. মেদিনীপুরের স্থাননাম এবং—ড. বঙ্কিম মাইতি, ২০০২।

 ৮. দক্ষিণ মেদিনীপুরের পুরাকীর্তি—তারাপদ সাঁতরা, ২০০১।

 ৯. হাঁটাপথে কলিঙ্গ—তারাপদ সাঁতরা, ২০০২।

 ১০. বঙ্গসাহিত্য পরিচয়—দীনেশচন্দ্র সেন, প্রভৃতি।

দ্বিতীয় পর্ব

গণমাধ্যমে মোগলমারির বৌদ্ধবিহার

বিস্মৃত যত নীরব কাহিনী স্তম্ভিত হয়ে বও

ভাষা দাও তারে হে মুনি অতীত, কথা কও কথা কও।

কালের অন্তস্রোতে বয়ে চলা ইতিহাস এভাবেই নীরবে নিভৃতে প্রবহমান। মোগলমারির গর্ভে সঞ্চিত ইতিহাসের আকরিক এভাবেই ছিল অপেক্ষমান। অতঃপর একদিন উন্মোচিত হল সেই ইতিহাস, প্রকাশিত হল অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অতীত, কথা বলে উঠল ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মোগলমারির এই প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। মানুষের বিস্ময়ের সীমানা অতিক্রম করে আলোড়িত হল সমগ্র দেশকাল। আর এর দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হল পত্রপত্রিকা সংবাদপত্রসহ সমগ্র সাহিত্যকুল। আমরা এবার দেখে নেব দেশবিদেশের গণমাধ্যমকে কীভাবে ছুঁয়ে গেল মোগলমারির প্রাচীনতা—

সাহিত্য :

সাহিত্য
সাহিত্য
সাহিত্য
সাহিত্য
সাহিত্য
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *