মোগলমারিতে উৎখনন ও ড. অশোক দত্ত – সূর্য নন্দী
২০০৪-এর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্কুল যাওয়ার পথে নরেন স্যারের সাথে দেখা। দাঁতন হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। আমার মাস্টারমশায়। এখন আমি ওই স্কুলে শিক্ষকতা করি। সাইকেলে চেপে যাচ্ছিলাম স্কুলে। দেখা হয়ে গেল স্যারের সাথে। নামতেই হল। স্যার বললেন:
জানো সূর্য, আমি একটা বড়ো কাজ করেছি। দাঁতনের ইতিহাস এবার উন্মোচিত হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক দত্ত দলবল নিয়ে এসেছেন মোগলমারিতে প্রত্নখনন করতে। ওঁরা সবাই সেচ বাংলোতে আছেন। একবার যেও আলাপ করে এসো।
স্যারের সাথে কথা বলে ক্রমে বুঝলাম, বছর দুয়েক আগে নরেনবাবুর সাথে ড. অশোক দত্তের আলাপ হয়েছিল হঠাৎ-ই। কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন দাঁতনের মোগলমারি গ্রামে একটি বড়ো MOUND আছে। তারপর কোনো এক সময় তিনি নিজে এসে দেখে গিয়েছিলেন। প্রত্নসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখে বুঝেছিলেন মোগলমারির এই ঢিবি প্রত্ন-সন্ধানের এক অন্যতম আকরক্ষেত্র। তারপর অশোকবাবু সব ব্যবস্থা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সদলবলে এসেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে উৎখনন করতে।
আমি খুব উৎসাহ বোধ করলাম, রোমাঞ্চিত হলাম। আমার সামান্য অনুধ্যানে, পড়াশোনা করে জেনেছি দাঁতন অতি প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহ্যপূর্ণ। দাঁতনের প্রায় সব গ্রামেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রত্ননিদর্শন অতীতের সেই গৌরবকে নির্দেশ করে। মোগলমারি-কাকরাজিত-এক্তারপুর-তকিনগর (সাতদেউলা)-উত্তর রায়বাড়-কৃষ্ণপুর-ভবানীপুর-জয়পুরা-চাউলিয়া-শরশঙ্কা-মনোহরপুর প্রভৃতি বহু গ্রাম আজও অসংখ্য প্রত্ননিদর্শন বহন করে চলেছে। অতীতের ইতিহাস খুঁজে পেতে আমার তো খুব ভালো লাগে। ইতিমধ্যে ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতির সান্নিধ্যে থেকে, তাঁর সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে এসব ব্যাপারে উৎসাহ আরও বেড়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কিছু কাজ আমরা শুরুও করেছিলাম। আমাদের এবং সায়ক পত্রিকায় ও অন্যান্য পত্রিকায় আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক কিছু কিছু লেখা প্রকাশ পাচ্ছিল। সুতরাং বেশ কয়েকবছর ধরে আমাদের আগ্রহ বাড়ছিল। মোগলমারি উৎখননের এই সংবাদে বেশ ভালো লাগল।
পরদিন সন্ধ্যায় দাঁতনের উপকন্ঠে সেচ বাংলোতে গেলাম। বাংলোর সামনের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি তাঁবু, প্রত্যেক তাঁবুতে দু-টি করে ক্যাম্প খাট, অস্থায়ী রান্নাঘর, খাবার ঘর প্রভৃতি। বাংলোর ১টি ঘরে ড. অশোক দত্ত, বাকি ঘরগুলিতে মহিলারা থাকেন। ২ জন অধ্যাপক, ১ জন অধ্যাপিকা, ৭ জন টেকনিক্যাল স্টাফ আর প্রায় ২০/২২ জন ছাত্রছাত্রী সহ রিসার্চ স্কলাররা এসেছেন শুনলাম। সেই সময় নরেনবাবু সেখানে উপস্থিত ছিলেন—একটি তাঁবুতে বসে অশোকবাবুর সঙ্গে গল্প করছিলেন। আমি পৌঁছোতে নরেন স্যার আমাকে অশোকবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে উঠলেন রিক্সাতে বাড়ি ফেরার জন্য। আমি সঙ্গে করে আমাদের এবং সায়ক পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা, দাঁতন থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকা প্রভৃতি নিয়ে গিয়েছিলাম। অশোকবাবুর হাতে সেগুলি তুলে দিলাম। তিনি বেশ খুশি হলেন। তারপর অনেকক্ষণ ধরে বসে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমাদের দাঁতন এলাকার ভূগোল-ইতিহাস-সংস্কৃতি-পুরাতত্ত্ব বিষয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন। আমার সীমিত ধারণা থেকে উত্তরগুলি দেওয়ার চেষ্টা করলাম বটে, কিন্তু মন ভরল না। তাঁর গভীর জ্ঞানের মুখোমুখি হয়ে আমি সংকোচ-ই বোধ করছিলাম। তবে সেই প্রথম দিনের সাক্ষাৎ-সান্নিধ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাঁর অপার পান্ডিত্যের সঙ্গে আন্তরিকতার অমল মিশ্রণ অনুভব করেছি সেদিন। তাঁর জ্ঞান-গরিমার কাছে আমি অতিক্ষুদ্র, বয়সেও তাঁর থেকে আমি ছোটো। তবু তিনি আমাকে ‘আপনি’ ‘আপনি’ করে সম্বোধন করতে থাকলেন। সেই যে তিনি ‘আপনি’ বলা শুরু করলেন বরাবরই বলতে থাকলেন। আমি তাঁকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতাম। আমাকে ‘তুমি’ করে বলার জন্য অনুরোধ করেছি কয়েকবার, তিনি শোনেননি। যাইহোক, সেদিনের সেই প্রথম সাক্ষাৎ ও দীর্ঘ আলোচনা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছিল। মোগলমারি প্রত্নক্ষেত্রে খননের কাজ শুরু হয়েছে, ওখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন।
দু-একদিন পর এক সন্ধ্যায় বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতিকে সঙ্গে নিয়ে চললাম সেচ বাংলোর ক্যাম্পে ড. অশোক দত্তের কাছে। সঙ্গে প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ ঘোষ, উৎসাহী দেবাশিস দাস। সেদিনও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা। বঙ্কিমবাবু অশোকবাবু দু-জনেই পন্ডিত মানুষ। তাঁদের দু-জনের পান্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা আমাদেরকেও ঋদ্ধ করল, উৎসাহিত করল। নন্দীগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক বঙ্কিমবাবু। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সমীক্ষার কাজে এবং নিজের গবেষণাপত্রের প্রয়োজনে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন অঞ্চল তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কথায় কথায় জানালেন ওইসব অঞ্চলে বোল্ডারপাথর আগুনে গলিয়ে লোহা তৈরি করার প্রাচীন কৌশল—তার নিদর্শনস্বরূপ বড়ো আকারের চুল্লি তিনি দেখেছেন। বৃদ্ধ মানুষদের জিজ্ঞেস করে তিনি জেনেছেন তাঁদের পূর্বপুরুষরা ওই পদ্ধতিতে লোহার মন্ড তৈরি করতেন, ওইসব চুল্লিতে। কথাটা শুনে অশোকবাবু দারুণ আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমাদের বললেন, ‘চলুন একবার দেখে আসি।’ তারপরেও কয়েকবার বলেছেন, সঠিক সন্ধান জানতে। ওই প্রাচীন মোগলমারির উৎখনন প্রসঙ্গও এসেছিল। এই ক-দিনে মোগলমারির যেটুকু খননকার্য হয়েছে তাতেই পাওয়া যাচ্ছে ইটের তৈরি বিশাল দেওয়াল। তাঁর কথাবার্তায় সেদিন দেখেছিলাম বেশ উৎসাহ আর উচ্ছ্বাস। আমাদের সকলকে মোগলমারি Mound-এ খননকার্য দেখতে যেতে সাদরে আহ্বান জানালেন।
দু-একদিন পরেই আমরা গেছি Mound-এ। বঙ্কিমবাবু সঙ্গে ছিলেন। ওখানে পৌঁছতেই অশোকবাবু আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সমস্তটা দেখিয়েছেন, অনর্গল বলে বুঝিয়েছেন। গোটা গ্রামটাই একটি প্রত্নক্ষেত্র, বিস্ময়কর! দারুণ ব্যাপার! এসব তাঁর মুখেই শুনেছি। টেকনিক্যাল স্টাফ, ছাত্রছাত্রী সকলেই ওই Mound-এ যে-যার নিজের কাজে ব্যস্ত। অশোকবাবু তদারকি করছেন। ছাত্রছাত্রীরা কিছু জিজ্ঞেস করলে দরদ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পোশাক-আশাক নিয়ে তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। খুবই সাধারণভাবে তাঁর ওঠা-বসা, হাঁটা-চলা। প্রথম বৈশাখের প্রচন্ড রোদে গায়ে মাথায় নিয়ে ঘামছেন। তবু তিনি নির্বিকার।
কোনো প্রত্নতাত্ত্বিককে কাছ থেকে দেখিনি এমনভাবে। প্রথম দেখলাম অশোকবাবুকে। ২০০৪ থেকে ২০১২—প্রায় ৯ বছর তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেছি। আমার সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠেছিল। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। দাঁতনের অনেকের সাথে তাঁর সহজ ও সরল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমি জানি। কিন্তু কেন জানি না, আমার সঙ্গে যেন দাদা-ভাই-এর সম্পর্ক। দাঁতনে আসার হলে আমাকেই ফোন করে জানাতেন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বিস্তারিত বলতেন। আমার বাড়িতেও অনেকবার এসেছিলেন। কোনো কোনোবার সঙ্গে নরেনবাবু থাকতেন। আমরাও সপরিবারে একবার তাঁর বাড়িতে, কলকাতার বেহালায় গিয়েছিলাম। তিনি ও বৌদি দু-জনে মিলে সেদিন আমাদের সকলকে আন্তরিকভাবে আপ্যায়িত করেছিলেন, কোনোদিন ভুলব না।
এই ক-বছর মোগলমারি উৎখনন তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল। যথার্থ অর্থে তিনি ছিলেন উৎখননের প্রাণপুরুষ। অথচ বেশ কয়েকবার তাঁকে নানাধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগেরও কেউ কেউ মোগলমারিতে প্রত্নখননের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ফলস্বরূপ, ২০০৪-এ খননের পর ২ বছর কাজ বন্ধ ছিল। বিষয়টি অশোকবাবু আমাকে জানিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ২০০৬-এ আমাদের এবং সায়ক পত্রিকার শারদ সংখ্যায় আমার একটি লেখা ‘প্রত্নসন্ধানের একটি ক্ষেত্র : দাঁতনের মোগলমারি’ প্রকাশিত হয়েছিল। আমি ওই লেখাটি সহ একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী নন্দগোপাল ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছে। অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যাতে মোগলমারিতে প্রত্নখননের কাজটি চালিয়ে যায় সেব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে। মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় (দাঁতনের বিধায়ক) যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। শেষবারেও খননকার্যে এসে, সেচ বাংলোতে বসে অশোকবাবু আমাকে বলেছিলেন—‘আপনার সেই পাঠানো চিঠি, মন্ত্রী নন্দবাবুর চিঠি আমার কাছে আছে।’ যাই হোক, মাননীয় মন্ত্রীর অনুরোধে, মাননীয় উপাচার্যের নির্দেশে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় মোগলমারিতে প্রত্নখনন চালু হয়। উপাচার্যের নির্দেশ পেয়ে আনন্দের সেই সংবাদ আমার বাড়িতে টেলিফোন করে জানিয়েছিলেন অশোকবাবু।
২০১১ খ্রিস্টাব্দেও পঞ্চমবারের খননকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে বেশি সময় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল অশোকবাবুর। অনেক টালবাহানার পর সম্ভবত ৯ ফেব্রুয়ারি সব মালপত্র লরিতে নিয়ে টেকনিক্যাল স্টাফ দাঁতনের সেচ বাংলোতে পৌঁছোন। স্থানীয় মানুষ ও মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ কিছু প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি—খনন করা হোক, আপত্তি নেই। তবে খননের পর উৎখনিত প্রত্ননিদর্শনকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রাপ্ত প্রত্নদ্রব্যগুলি স্থানীয় ভিত্তিতে মিউজিয়াম গড়ে তুলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। অশোকবাবুকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। পরে জানলাম, এই বিষয় নিয়ে আদালতে একটি মামলাও রুজু করা হয়েছে। এটা ঠিক, সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না হওয়ায় ইতিমধ্যে অনেককিছু নষ্ট হয়ে গেছে। কলকাতা থেকে অশোকবাবু আমাকে ফোন করে জানালেন, সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বললেন। আমি ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তৎকালীন বিডিও তিলকমৌলি রক্ষিত মহাশয়ের বাসায় গেলাম। কেন জানি না তিনি এ ব্যাপারে ভীষণ বিরক্ত ছিলেন। আমি সব পক্ষকে ডেকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলাম। শেষমেশ তিনি রাজি হলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁরই কার্যালয়ে বসা হল। মোগলমারি ক্লাবের কর্মকর্তাগণ, মোগলমারি গ্রামের ভূমিপুত্র তৎকালীন হাওড়া জেলার উপজেলাশাসক অশোক দাস, প্রত্নখননের ডিরেক্টর ড. অশোক দত্ত, বিডিও তিলকমৌলি রক্ষিত উপস্থিত ছিলেন। আমি ছিলাম ওই সভায়। সমস্ত কিছু আলোচনার পর ঠিক হয়—খননের কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে। উত্থাপিত শর্তগুলি পূরণের ব্যাপারেও অশোকবাবু কার্যকরী উদ্যোগ নেবেন বলে জানালেন। পরবর্তীকালে দেখেছি—তাঁর উদ্যোগ আন্তরিক ছিল।
মোগলমারিতে প্রত্নখননের কাজ করতে এসে তাঁকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আমি জানি। বিশ্ববিদ্যালয়েরই কতিপয় অধ্যাপক তাঁর মতের বিরুদ্ধ মত পোষণ করতেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয়বার খননের পর প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শন সহযোগে অশোকবাবু প্রমাণ করতে চাইলেন এটি একটি বৌদ্ধ স্থাপত্য। সপ্তমবার পর্যন্ত খননে যা পাওয়া গেল তাতে করে তাঁর অভিমত আরও দৃঢ়ভাবে সুনিশ্চিত হল যে, এটি একটি বৌদ্ধবিহার ছিল। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বৌদ্ধবিহার। কিন্তু তাঁর এই মতের বিরুদ্ধবাদী কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতেন। ব্যাপারটা কুৎসার পর্যায়ে নেমে এসেছিল মনে হয়। এইসব কারণে তিনি মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিলেন। শেষের দিকটাতে আরও বিধ্বস্ত থাকতে দেখেছি। অথচ তিনি মোগলমারি-অন্ত প্রাণ ছিলেন। খোলামনে খুঁড়তেই চাইছিলেন। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) মোগলমারিকে অধিগ্রহণ করুক, প্রত্নখনন করুক এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক—এটাই তিনি আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে চিঠিপত্রে ও টেলিফোনে অনেকটাই যোগাযোগ করেও ছিলেন। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দাঁতন স্পোর্টস এণ্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন-এর পক্ষ থেকে সভাপতি অলোক নন্দী কেন্দ্রের কতিপয় মাননীয় মন্ত্রীসহ ASI-এর নিকট একটি চিঠি দিয়েছিলেন—যাতে ASI-এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তার উত্তরে ASI-এর কলকাতা সার্কেলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে যা জানানো হয়েছিল, তার মর্মকথা এই যে, মোগলমারির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নক্ষেত্র অধিগ্রহণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ছাড়পত্র (Clearance Certificate) পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ASI। অশোকবাবুকে সেই চিঠির কপি দেখিয়েছিলাম।
মোগলমারি প্রত্নক্ষেত্র নিয়ে অশোকবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে কত কী করেছেন আমি সবটা জানি না। তবে দাঁতনের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-অধ্যাপক বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের মনে ইতিহাস-সচেতনতা গড়ে তুলতে ও মোগলমারির আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধবিহারের অতীত গৌরব অনুধাবন করাতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তিনি শিক্ষক ও প্রচারকের ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইনটারনেট ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন এই সংবাদ। অশোকবাবুর জন্যই দাঁতন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের মন এই অসাধারণ বিষয়ে আন্দোলিত হয়েছে। প্রথমবার খননের পর তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলাম ১০ এপ্রিল, ২০০৪ দাঁতন টাউন লাইব্রেরীতে একটি সভায়। তারপর প্রায় প্রত্যেকবারই খননের পর সেমিনার করেছেন সানন্দে, কখনো মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগারের উদ্যোগে ওই Mound-এ, কখনো দাঁতন-১ ব্লকের কার্যালয় অডিটোরিয়ামে। ২০১০-এর জানুয়ারিতে দাঁতন গ্রামীণ মেলার উন্মুক্ত বিশাল মঞ্চেও একবার তিনি বিস্তারিত বক্তব্য রেখেছিলেন। ২০১১-র ডিসেম্বরে দাঁতন কলেজে এসেছিলেন বক্তব্য রাখতে। সর্বত্রই প্রধান বক্তা ড. অশোক দত্ত। অসাধারণ তাঁর বাগ্মিতা, তাঁর বাচনভঙ্গী। এমন চমৎকারভাবে এই নীরস বিষয়কে তিনি উপস্থাপন করতেন যে, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনতেন। এমনকী Mound-এ পরিদর্শক যে-কাউকে তিনি বলতেন ও বোঝাতেন খুব সুন্দরভাবে। আমাদের ইতিহাস আছে, সে-ইতিহাসের গৌরবও আছে—নতুন করে আমরা উপলব্ধি করলাম ড. অশোক দত্তের জন্যই। ২০০৪ থেকে ২০১২—এই ৯ বছর অশোকবাবুর সংস্পর্শে রয়েছিলাম। আমি দেখেছি, মোগলমারি উৎখনন নিয়েই তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সত্যি বলতে কি, মোগলমারি নামের সমার্থক হয়ে উঠেছিলেন ড. অশোক দত্ত।
মোগলমারি গ্রামের সাথে, গ্রামের মানুষের সাথেও অশোকবাবুর একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। একদিন গিয়ে দেখি, সাইকেল চালিয়ে গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে যেখানে প্রত্নকাজ হচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্লাবের সম্পাদক গৌরীশঙ্কর মিশ্র, তাঁর পিতা কালিপদ মিশ্র, প্রণতি জানা, অতনু প্রধান, সঞ্জয় দাস, খোকন দে, দেবাশিস চন্দ প্রমুখের সাথে তাঁর সহজ সদ্ভাব ছিল। গ্রামের সকলের সাহায্য পেয়েছিলেন—সকলকে আপন করে নিয়েছিলেন বলেই। আর-একটা ব্যাপারে আশ্চর্য হয়েছি—অতনু-সঞ্জয়-খোকন-দেবুসহ সাধারণ মানুষও প্রত্নবিজ্ঞানের ভাষা বেশ বুঝে নিয়েছিলেন।
প্রত্যেকবার প্রত্নখননে অশোকবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আসতেন। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেকলমে শেখানোর প্রয়োজনেই সঙ্গে আনতে হত। শুধু মোগলমারিতে আটকে থাকতেন না। দাঁতন তো পুরাতত্ত্বের আকরক্ষেত্র। প্রত্নবস্তু দেখাতে, প্রত্নজ্ঞান অর্জনে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বেরোতেন দাঁতনের বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে। তাঁর আন্তরিক আহ্বানে সঙ্গে আমাকে যেতে হত। শ্যামলেশ্বর মন্দির-উত্তর রায়বাড়-কৃষ্ণপুর-কাকরাজিত-মনোহরপুর শরশঙ্কা-সাতদেউলা (এক্তারপুর তকিনগর) প্রভৃতি জায়গায় প্রত্ননিদর্শন দেখতে ও দেখাতে ভীষণ উৎসাহ ছিল তাঁর নিজের। দাঁতনের পাশাপাশি প্রত্নস্থলেও গিয়েছেন। সুবর্ণরেখার ওপারে উড়িষ্যার রাইবনিয়া দুর্গ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ। যাওয়ার সময় লক্ষ্মণনাথ রাজবাড়িতে রক্ষিত প্রত্নসামগ্রী দেখে নেওয়া হয়েছিল। মনে আছে, রাজবাড়ির বর্তমান প্রতিনিধি সৌরীন্দ্রনারায়ণ রায় মহাশয় আমাদের সকলকে আপ্যায়িত করেছিলেন। উড়িষ্যার বিখ্যাত প্রাবন্ধিক-গবেষক ড. শ্রীকান্তচরণ পাত্র, স্থানীয় বিশেষজ্ঞ নারায়ণ দাস ও অন্যান্যরা রায়বনিয়া দুর্গ ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছিলেন। ওই প্রত্নস্থল দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকারী অধ্যাপক রজত সান্যাল। রায়বনিয়া নিয়ে প্রত্নকাজ করার, গবেষণা করার সুপ্ত বাসনা সেই দিনই তাঁর মনে জেগেছিল। পরবর্তীকালে শুনেছি অশোকবাবুর অধীনে কেউ একজন রিসার্চ স্কলার কাজ করছেন। সেই কাজে ওখানে তাঁর আবারও যাওয়ার কথা ছিল। এইভাবে তিনি কেশিয়াড়ির কুরুমবেড়া দুর্গ ও অন্যান্য প্রত্নস্থল এবং নারায়ণগড় ব্লকের প্রত্নস্থলও পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তাঁকে সাহায্য করেছেন শিক্ষিকা মৌসুমি মুখোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই হ্যারিসনের রিপোর্টে আমরা জেনেছি—মোগলমারি ও সাতদেউলা থেকে ২৬ লক্ষ ইটপাথর নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজঘাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরির জন্য। কিন্তু সাতদেউলা কোথায়? আমার নিজের গ্রাম এক্তারপুর-তকিনগর-ই প্রাচীন সাতদেউলা। প্রবীণ লোকেদের মুখে মুখে এখনো সাতদেউলা শোনা যায়। আমাদের এই গ্রামেও নানা প্রত্নসামগ্রী ও নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। প্রথমবারে, ২০০৪-এর এপ্রিলের ১১ তারিখে অশোকবাবুর দুই সহকারী তপন দাস ও শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়দের আমার গ্রামে নিয়ে আসি। তাঁরা এসব দেখে নিশ্চিত হন, এই গ্রামই সাতদেউলা। পরে অশোকবাবু নিজে এসে ঘুরে দেখেন প্রত্ননিদর্শন। নিশ্চিত হন তিনিও। গ্রামের স্বপন ঘোষেদের পুকুরের একদিকের পাড়—পুরোটাই পুরোনো ইটের দেয়াল। ওই পাড়ের কাছেই একটি জায়গায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তিনি একটি Trail Trench খুঁড়তে উদ্যোগী হয়েছিলেন। নানান কারণে সেকাজ আর হয়ে ওঠেনি!
দাঁতন সম্পর্কে অশোকবাবুর বিশাল কৌতূহল ছিল। দন্ডভুক্তি রাজ্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল যে বর্তমানের দাঁতন—তা-ই প্রমাণ করা তাঁর অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। তাই তিনি দাঁতনের সমস্ত প্রত্নস্থল দেখে নিতে ও বুঝে নিতে চেয়েছিলেন। আমার খুব ইচ্ছে ছিল, সরাইবাজার চকের পশ্চিমদিকে দাঁতন হাইস্কুলের খেলার মাঠটি অশোকবাবুকে দেখানোর। সপ্তমবার মোগলমারি খননকার্যে এসেছিলেন ৬ থেকে ২৩ মে। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি গাড়িতে করে ২১ মে বিকেলে অশোকবাবুকে হাইস্কুল মাঠে নিয়ে আসি। সঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। মাঠের চারপাশের ভূপ্রকৃতি, ভূমির গড়ন প্রত্যক্ষ করে, পূর্বদিকের নীচু অংশের জমি থেকে কিছু ‘পটারি’ পর্যবেক্ষণ করে তিনি নিশ্চিত হলেন এই স্থানটিও উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থল। নরেনবাবুও আমাকে কথা দিলেন—এর পরের বার দাঁতনে এলে এই মাঠের একপাশে একটি Trail Trench খুঁড়বেন। আমাকে বললেন, ব্যবস্থা করে রাখতে। এমনই তিনি দাঁতন বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন।
মোগলমারিতে প্রত্নখননে এলে সদলবলে দাঁতন শহরের উপকন্ঠে সেচ বাংলোতে থাকতেন। খননকার্য চলার সময় Mound-এ যেমন যেতাম, তেমনি প্রায়ই মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় বাংলোতেও যেতাম। সঙ্গে বিশ্বজিৎ ঘোষ বা তরুণ সিংহ মহাপাত্র। বাদামভাজা, মুড়ি আর চা আসত আমাদের জন্য অশোকবাবুর নির্দেশে। তিনি নিজে সিগারেট টানছেন। চা আর সিগারেট ছিল তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। আমি একা থাকলে একান্তে অনেক কথা হত। তিনি খোলামেলা বলতে পারতেন আমাকে। কিছু কথা তিনি বলেছেন এমনই—যা প্রকাশ করা শোভনীয় হবে না। ১০/৩/১২ থেকে ২৫/৩/১২ মোগলমারিতে ষষ্ঠ পর্যায়ের খনন হয়েছে। ২৬/৩/১২-তে সেমিনার। সেবারের খননকার্যের আত্যন্তিক সাফল্যে তিনি বেশ তৃপ্ত ছিলেন। নালন্দার সমসাময়িক কালের এই বৌদ্ধবিহারের গর্ভগৃহের বাইরের দেওয়ালে স্টাকোর তৈরি বোধিসত্ত্ব, জাঙ্গুলি, অবলোকিতেশ্বর প্রভৃতি ১৩টি মূর্তি ও একটি ধর্মচক্র রয়েছে। বেশ কয়েকটি ‘ভোটিভ ট্যাবলেট’ (১০সেমি ব্যাসবিশিষ্ট)-সহ বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গেছে। তাই সেবছর বৈদ্যুতিন মাধ্যম ও সংবাদপত্রগুলিতে মোগলমারির এই বৃহৎ বৌদ্ধবিহার বেশ ফলাও প্রচার পেয়েছে। বেশ তৃপ্ত দেখেছি তাঁকে। তবু একান্তে কথা বলে জেনেছি এই আবিষ্কারের আনন্দের মধ্যেও কোথাও যেন একটু অস্বস্তি, একটু অসন্তোষ তাঁকে ক্রমাগত বিঁধে যাচ্ছিল।
মাটির তলা থেকে দাঁতনের ইতিহাসকে উন্মোচিত করার প্রথম প্রচেষ্টা ড. অশোক দত্তের। মোগলমারির এই বৌদ্ধবিহারকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ অবদানকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। এতই গুরুত্ব ও গৌরব অর্জন করেছে মোগলমারি যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে তথ্যচিত্রে সংরক্ষণ করে রাখতে চেয়েছে। ২০০৭-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে দিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। ২০০৯-এ পরিচালক গৌতম ঘোষকে দিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন এশিয়াটিক সোসাইটি। ড. অশোক দত্তের সম্পাদনায় এশিয়াটিক সোসাইটি ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে একটি মূল্যবান পুস্তকও প্রকাশ করেছেন Excavations at Moghalmari. ২০১১-এর মার্চে ইউজিসি-র একটি দল মোগলমারিতে ৩দিন থেকে তথ্যচিত্র তৈরি করে নিয়ে গিয়েছেন। দূরদর্শনের ‘আকাশ বাংলা’ চ্যানেল থেকেও ২০১২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। মেদিনীপুরের সৌম্যেন্দু দে মোগলমারিকে নিয়ে তুলনামূলক একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। মোগলমারির এই গুরুত্ব অর্জন ও গৌরব প্রকাশ সম্ভব হয়েছে ড. অশোক দত্তের জন্যই।
এত কথা, এত আয়োজন—উৎখনন-বিশেষণ যাঁকে কেন্দ্র করে তিনি আচার্য, তিনি আবিষ্কারক, তিনি প্রেরণাপুরুষ ড. অশোক দত্ত। ২০১২-এর ৩১ মার্চ তিনি অবসরগ্রহণ করলেন। তবু তিনি চাইছিলেন মোগলমারিতে আরও খননকাজে যুক্ত থাকতে। এই বৌদ্ধবিহারের নাম কী ছিল? সেই নাম অভিধাযুক্ত সিল প্রত্নক্ষেত্রে পাওয়া জরুরি ছিল। তা পেলে তাঁর আবিষ্কার পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করত। তাই, দাঁতন ভট্টর কলেজের ‘বৌদ্ধ বিদ্যাচর্চাকেন্দ্র’ সপ্তমবার খননের আর্থিক ব্যয়ভার গ্রহণের কথা জানালে তিনি রাজি হয়ে যান। তাঁর নেতৃত্বে সপ্তমবার খনন হল ৬/৫/২০১২ থেকে ২৩/৫/২০১২ পর্যন্ত।
সেই শেষবার অশোকবাবুর আসা ও যাওয়া। ২৪ মে দাঁতন ছেড়ে চলে গেলেন। তারপরেও টেলিফোনে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। আমাদের এবং সায়ক পত্রিকার মোগলমারি বিশেষ সংখ্যা করার ব্যাপারে তাঁর সাথে বিশদ আলোচনাও করেছি। এই ৯ বছরে উৎখননের ইতিহাস, মোগলমারির উপর পূর্ণাঙ্গ একটি লেখা তিনি লিখে দেবেন বলেছিলেন। ২৫ জুলাই, দুপুরে তিনি ফোন করে জানালেন, তাঁর লেখা সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে—৩১ জুলাই-এর মধ্যে আমার ই-মেলে লেখাটি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ৩১ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ৯-১৫ মিনিটে একজন অধ্যাপক আমাকে ফোন করে জানালেন, অশোকবাবু প্রয়াত হয়েছেন। আমি বিশ্বাসই করতে চাইনি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম তাঁর প্রিয়পাত্র অধ্যাপক রজত সান্যালকে। তিনি খবরটির সত্যতা স্বীকার করলেন—মোগলমারি উৎখননের প্রাণপুরুষ ড. অশোক দত্ত আর নেই।
১২/৮/২০১২ তারিখে তাঁর শ্রাদ্ধবাসরে উপস্থিত থাকতে বৌদি রীতা দত্ত আমাকে আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছিলেন। গিয়েছিলাম। বেহালার ‘তরুণতীর্থ’ ক্লাবে আয়োজিত ওই পারিবারিক শ্রাদ্ধবাসরে ড. অশোক দত্তের চন্দনচর্চিত-পুষ্পশোভিত প্রতিকৃতির সামনে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে অনুভব করলাম—তিনি নেই। থেকে গেল তাঁর স্বপ্নের মোগলমারি!