মৃত্যু? দুই সেকেন্ড দূরে!
এক.
২০১৫ সালের কথা। বর্ষা আসতে তখনো কয়েকটা দিন বাকি। জীবনের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে খুব কাছের এক ভাই একদিন স্বীকার করে বসলেন তার পর্ন-আসক্তির কথা। বিস্তারিত বললেন কীভাবে দিনের পর দিন পর্ন দেখে হস্তমৈথুন করে আসছেন সেই পিচ্চিকাল থেকে। চটিগল্প পড়ে নিকটাত্মীয়াদের নিয়ে সেক্স ফ্যান্টাসিতে ভুগছেন। কথা শুনতে শুনতে কখন যে অন্তরজুড়ে কালো মেঘ করে এল আর ভারি ব্যাপক বৃষ্টি ভিজিয়ে দিলো আমার পুরোটা, টেরও পেলাম না। পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে শখের লেখালিখি শুরু করেছি কেবল তখন। বই পড়ি আর টুকটাক লিখি। পর্নোগ্রাফি, হস্তমৈথুন, চটিগল্পের ভয়াবহতা কত ব্যাপক সে সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। দিন যত গড়িয়েছে, যত ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, ততই বিস্মিত হয়েছি। বিস্মিত হতে হতে একসময় আমার বিস্মিত হবার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
নিজের চোখের সামনে স্কুলের প্রাণের দোস্ত”কে পর্নোগ্রাফির থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঝরে পড়তে দেখেছি। ভার্সিটি লাইফের আরেক ভীষণ মেধাবী বন্ধু–একটু সিরিয়াস হলেই “আরামসে” ফ্যাকাল্টি হতে পারত–কাছ থেকেই দেখেছি পর্ন, হস্তমৈথুন আর গাঁজার নেশী কীভাবে তিলে তিলে তাকে শেষ করে দিলো। আমি নিজের চোখে ২৭ শে রমাদ্বানের রাতে মসজিদের উঠোনে পাড়ার ছোটভাইদের দেখেছি পর্ন দেখতে। দেখেছি কয়েকদিন আগে দুধের দাঁত উঠেছে এমন বাচ্চাদের পর্ন আর নারী দেহ নিয়ে রসালো আলোচনা করতে।
পর্ন-আসক্তির ওপরে বাংলাদেশে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি বললেই চলে। ২০১২ সালে কয়েকটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির কিছু ছাত্রছাত্রীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৭৬ জন শিক্ষার্থীর নিজের ফেীন আছে। বাকিরা বাবা মার ফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে :
–৮২ শতাংশ সুযোগ পেলে মোবাইলে পর্ন দেখে।
— ক্লাসে বসে পর্ন দেখে ৬২ শতাংশ।
–৭৮ শতাংশ গড়ে ৮ ঘণ্টা মোবাইলে ব্যয় করে।
–৪৩ শতাংশ প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ব্যবহার করে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, বেসরকারি এক হিসাবে দেখা গেছে, ফটোকপি আর মোবাইল ফোনে গান/রিংটোন ভরে দেয়ার দোকানগুলো থেকে দেশে দৈনিক ২.৫ কোটি টাকার পর্ন বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এক মাসে গুগলে “পর্ন” শব্দটা সার্চ করা হয়েছে ০.৮ মিলিয়ন বারেরও বেশি। বিশ্বব্যাপী সংখ্যাটা হচ্ছে ৬১১ মিলিয়ন বার! “সেক্স” শব্দটা বাংলাদেশ থেকে সার্চ করা হয়েছে ২.২ মিলিয়ন বার। বিশ্বব্যাপী করা হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন বার। অন্যান্য পর্নোগ্রাফিক শব্দের ক্ষেত্রে অবস্থাও অনেকটা এমন। ৩০ জুলাই ২০১৩, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (BSS) পর্নোগ্রাফির ওপর। একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, ঢাকার সাইবার ক্যাফেগুলো থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা যে পরিমাণ পর্ন ডাউনলোড করে তার মূল্য ৩ কোটি টাকার মতো।
“মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, পর্ন ভিডিওতে আসক্ত রাজধানীর ৭৭ শতাংশ কিশোর। অবস্থার ভয়াবহতা ফুটে ওঠে সময় টিভির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটি স্টাডিজের (সিএমএসএস) যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রেভম্যান ক্যাম্পেইন’ এর অংশ হিসেবে স্কুল পর্যায়ে শিশু-কিশোরদের পর্নগ্রাফির প্রতি আসক্তি এবং এ থেকে উত্তরনের উপায় বের করতে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের স্কুলগামী কিশোরদের ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ পর্নগ্রাফিতে আসক্ত।
২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের (২০১৮ সাল) মে পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনী, নাটোর ও কক্সবাজারের স্কুলগামী ১১ থেকে ১৫ বছর। বয়সী ৯০০ ছেলের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণার ফলাফল তৈরি করা হয়।
সিএমএমএস এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ জানাচ্ছেন, “১৮ বছরের নীচে স্কুলগামী ছেলেদের মধ্যে শতকরা ৮৬.৭৫ ভাগ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং শতকরা ৮৪.২২ ভাগ ইন্টারনেটের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।”
গবেষণার উপাত্তে দেখা যায়, স্কুলগামী ছেলেদের শতকরা ৬১.৬৫ ভাগ পর্নগ্রাফি দেখে আর ৫০.৭৫ ভাগ ছেলে ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি খোঁজে।
আর পর্নগ্রাফিতে আসক্ত ছাত্রদের শতকরা ৬৩.৪৫ ভাগ প্রথম মোবাইলে পর্নগ্রাফি দেখেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এছাড়া স্কুলগামী যেসব কিশোর পর্নগ্রাফি দেখে তাদের শতকরা ৭০.৫৫ ভাগ মেয়েদের শারীরিকভাবে উত্যক্ত করতে চায় বলেও উল্লেখ করেন সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ।
.
দুই
কোনো বাবা-মাই বিশ্বাস করতে চান না, তাদের সন্তান পর্ন দেখার মতো এতটা নিচে নামতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানি Bitdefender এর গবেষণা অনুযায়ী, পর্ন সাইটে যাতায়াত করা প্রতি দশ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স দশ বছরের নিচে। আর এই দুধের বাচ্চাগুলো রেইপ পর্নর্জাতীয় জঘন্য জঘন্য সব ক্যাটাগরির পর্ন দেখছে।
লা হাউলা ওয়ালা কুউ’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ!
NSPCC ChildLine এর সাম্প্রতিক সময়ের জরিপ অনুসারে ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ১০ জন এই ভেবে ভীত যে, তারা পর্নে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছে চাইলেও আর পর্ন দেখা বন্ধ করতে পারবে না।”
২০০৮ সালে ১৪-১৭ বছর বয়সীদের ওপরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কিশোরেরা প্রতিসপ্তাহে অন্তত একবার হলেও পর্ন দেখে।
পর্ন ভিডিওর সঙ্গে প্রথমবার পরিচিত হবার গড় বয়স ১১! সবচেয়ে বেশি পর্ন আসক্ত ১২-১৭ বছর বয়সীরাই!৬ আঁতকে ওঠার মতো আরও অনেক পরিসংখ্যান আছে। সব লিখতে গেলে ঢাউস বই হয়ে যাবে।
শিশুদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও Childnet 97 PRO 97 UK Safer Internet Centre 93 4767a/ ডাইরেক্টর উইল গার্ডনার মন্তব্য করেন, “মা-বাবার জন্য এটা বিশ্বাস করা খুবই কষ্টকর যে তাদের ছেলেমেয়েরী পর্ন দেখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখনকার সময়ে পর্নোগ্রাফি খুবই সহজলভ্য এবং বাচ্চারা খুবই অল্পবয়সেই পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচিত হয়ে যায়।
.
তিন
পর্ন-আসক্তি শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে যৌনতার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে। এ নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। কিন্তু তার আগে শিশু-কিশোরদের ওপর পর্ন ভিডিওর অন্যান্য ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক।
পর্ন-আসক্তির কারণে অ্যাকাডেমিক রেসাল্টের বারোটা বেজে যায়। ২০১৫ সালের এক গবেষণা থেকে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, “টিনেইজারদের পর্ন দেখা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে, ছয় মাসের মধ্যেই তারা পরীক্ষায় খুবই খারাপ রেসাল্ট করা শুরু করে।”
২০০৮ এ জার্মানির একদল গবেষক জানান পর্ন-আসক্তি কলেজ ছাত্রদের অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্সের উন্নয়নে বড় একটা বাধা। পর্ন ভিডিও দেখে এমন ছাত্ররা খুব একটা হোম ওয়ার্ক করতে চায় না, ক্লাস পালায়, ঠিকমতো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয় না। আসলে কেউ পর্ন বা হস্তমৈথুনে আসক্ত হলে তাকে এগুলোর পেছনে অনেক সময় এবং এনার্জি ব্যয় করতে হয়। এগুলো করার পরে আবার খারাপ লাগে। অন্তরের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে যায়। কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। শুয়ে বসে, ঝিমিয়ে, ঘুমিয়ে দিন পার করতে ইচ্ছে করে।
পর্ন দেখার সময় ব্রেইনে খুব শক্তিশালী কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় (বইয়ের শুরুতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে)। কেউ এতে আসক্ত হলে তার সব মনোযোগ এতেই কেন্দ্রীভূত হয়; কবে ম্যাথ এক্সাম হবে বা কবে কোন অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে তার কিছুই মনে থাকে না। তার পক্ষে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। মাথায় ঘুরতে থাকে পর্ন ভিডিওর দৃশ্যগুলো। পনের ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকতেই সে পছন্দ করে, পড়াশোনাকে মনে হয়। কাঠখোট্টী, নীরস। ফলাফল পরীক্ষায় ডাব্বি, মারা। পর্ন-আসক্তি জন্ম দেয় হতাশা আর উদ্বেগের। অল্প বয়সেই নারী-পুরুষের দৈহিক রসায়ন জেনে ফেলায় নিষ্পাপ, নির্ভাবনার শৈশব-কৈশোরে ভর করে জটিলতা, জমে অবসাদ আর গ্লানির পাহাড়।
যে বয়স ছিল দুরন্তপনার, মাঠ-ঘাট দাপিয়ে বেড়ানোর, সে বয়সে অন্ধকার ঘরে পর্ন দেখ কিশোরদের মনে বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে অযথা ভয় ঢুকিয়ে দেয়। সে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে। বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই মানুষজন থেকে একটু দূরে দূরে থাকার প্রবণতা কাজ করে, পর্ন-আসক্তি সেটা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। কিশোরেরা হয়ে পড়ে অসামাজিক মানুষজনের সামনে যেতে লজ্জা পায়, পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। চরম একাকিত্বে ভোগী শুরু হয়। এই হতাশী, অস্থিরতা, একাকিত্ব থেকে শুরু হয় ড্রাগের নেশী; সিগারেট, মদ-গাঁজা, ইয়াবা, হিরোইন বাদ যায় না কিছুই।
শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ চরমভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। পর্ন-আসক্তির কারণে খুব অল্প বয়স থেকেই হস্তমৈথুনে আসক্ত হয়ে পড়ে। হস্তমৈথুন ছোট্ট জীবনটাকে করে ফেলে দুর্বিষহ। পর্ন আর হস্তমৈথুনে আসক্তির যুগলবন্দী ধীরে ধীরে নষ্ট করে। দেয় কিশোরদের যৌনক্ষমতা। তবে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি অমার্জনীয় এক অপরাধ করেছে ভালোবাসার সংজ্ঞা বদলে দিয়ে। মিডিয়া কিশোর-তরুণদের খুবই প্রভাবিত করে। তাদের জীবনদর্শন, বিশ্বাস, আচার-আচরণ, আবেগ মিডিয়া খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।১০১ পর্ন-আসক্ত শিশু-কিশোরদের বিশ্বাস, আচার-আচরণ, আবেগ সবকিছুই পর্দায় দেখী দৃশ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, এটা বলাই বাহুল্য। এসব শিশু কিশোরের যৌনতা সম্পর্কে চিন্তার হাতেখড়ি হচ্ছে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে।
যৌনতা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় পর্ন ভিডিওর বিকৃত যৌনতাকেই তারা যৌনতার আদর্শ মাপকাঠি ভেবে নেয়।
“এভাবেই বোধহয় সঙ্গিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে হয়, ভালোবাসা বোধহয় একেই বলে, এভাবেই বুঝি সঙ্গিনীকে ভালোবাসলে তারা পরিতৃপ্ত হয়, সঙ্গিনী অন্তরঙ্গ হতে চাচ্ছে না মানে সে আসলে বোঝাতে চাচ্ছে আমার ওপর একটু জোর খাটাও, তুমি একটু রাফ হও।” কোনটা যে বিকৃত ফ্যান্টাসি আর কোনটা সত্যিকারের অন্তরঙ্গতা, ভালোবাসা, সেটা ওরা বুঝতে পারে না।
পর্ন ভিডিও শিশু-কিশোরদের এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে নারী কেবল একটা যৌনবস্তু, পুরুষের শরীরের ক্ষুধা মেটানোর জন্যই যার পৃথিবীতে আগমন। নারীও যে মানুষ, তারও মন আছে, একজোড়া চোখ আছে, সে চোখের ভেতরে একটা আকাশ আছে, এ বাস্তবতা অনুধাবনের শক্তি নষ্ট করে দেয় পর্ন-আসক্তি। নারী যেন শুধু একটা মাংসপিণ্ড যা নিয়ে উদ্দাম ফুর্তি করা যায়, রাত কাটানো যায়; কিন্তু ভালোবাসা যায় না, চোখের তারায় হারিয়ে যাওয়া যায় না, সম্মান করা যায় না।
এর ফল হয় মারাত্মক! পর্ন-অভিনেত্রী আর সিনেমার নায়িকারা তো আছেই, ছোট্ট মস্তিষ্ক সমস্ত শক্তি দিয়ে আশেপাশের সব নারীকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগা শুরু করে দেয়। সমানে চলে হস্তমৈথুন। সেক্স ফ্যান্টাসি চলতে থাকে কাযিন, ক্লাসমেট, টিচার, পাশের বাসার আন্টি, পাড়ার বড় আপু, ভাবি, চাচি, মামি, ফুপু, খালামনি, এমনকি নিজের বোনকে নিয়েও! বাদ যায় না কেউই।
পর্ন ভিডিও শিশু-কিশোরদের ভুলিয়ে দেয় যে, যৌনতার পূর্বশর্ত বিয়ে। খুব অল্প বয়সেই ওরা নিজেদের পবিত্রতা হারিয়ে ফেলে। কলুষতার চাদর জড়িয়ে নেয় গীয়ে। যৌনতার বিকৃত ধারণা নিয়ে ওরা বেড়ে ওঠে, যার প্রভাব পড়ে নিজেদের যৌনতায়। একসময় পর্ন দেখে, হস্তমৈথুন করে নিজেকে আর ঠান্ডা করা যায় না। খুব অল্প বয়সে যৌনতায় মেতে ওঠে। একজন সঙ্গী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না, ঘন ঘন পার্টনার বদলাতে থাকে, কেউ কেউ হয়তো হয় এক রাতের পার্টনার। বিশ্বস্ত, নিঃস্বার্থ সম্পর্কে আবদ্ধ হবার চেয়ে “যৌন স্বার্থের” চুলচেরা হিসেব নিকেষের জটিল সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যায় ওরা। পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো অনুকরণ করে। সঙ্গিনী রাজি না হলে জোর করে।
অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্স, গ্রুপ সেক্সসহ ঝুঁকিপূর্ণ সব পদ্ধতিতে এরা যৌনমিলন করে, কোনো ধরনের প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই নানা বিকৃত যৌনমিলনের কারণে আক্রান্ত হয় যৌনবাহিত নানা রোগে। উদ্দাম যৌনজীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে মদ, গাঁজা, ইয়াবা সেবন।
শিশু-কিশোরেরা যত বেশি পর্ন-আসক্ত হয়, যত বেশি হার্ডকোর পর্ন দেখে তত বেশি বিকৃত যৌনতায় মেতে ওঠে। অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, বাদ যায় না যৌনতার সময় সঙ্গিনীকে মারধোর করা, গলা টিপে ধরা, খিস্তিকেউর করা, জোর-জবরদস্তি করা, গ্রুপ সেক্স, এমনকি অনেকের ক্ষেত্রেই শিশুকাম, অজাচীর, পশুকাম…আর বলীর প্রবৃত্তি হচ্ছে না।
যৌন-সহিংসতাকে তীব্রভাবে উৎসাহিত করা হয় পর্ন ভিডিওগুলোতে। পর্ন-আসক্ত শিশু-কিশোররা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে একসময় পরিণত হয় যৌননিপীড়কে। ধর্ষণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। হাতের কাছে যাকে পায় তাকে দিয়েই লালসা মেটাতে চায়। ব্রিটেনের ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে ইন্টারনেট পর্ন কীভাবে শিশু-কিশোরদের ধর্ষকে পরিণত করে। ইংল্যান্ডে মাত্র ৪ বছরে ১৭ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ। যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগীয় মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে ২০১৫ সালে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ১২০ জন শিশু! ২০১১ সালের তুলনায় যা প্রায় ৭৪ শতাংশ বেশি।
বিচার মন্ত্রী ফিলিপ লি শিশুদের দ্বারা শিশুদের ওপর সংঘটিত যৌন-নিপীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শিশু-কিশোরদের এ অধঃপতনের জন্য দায়ী করে অনলাইন পনকে।
অস্ট্রেলিয়ান সাইকোলজিকাল সোসাইটির ধরণী অনুযায়ী ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ধর্ষণের জন্য দায়ী কিশোরেরা এবং শিশুদের চালানো যৌন-নিপীড়নের ৩০-৫০ শতাংশ জন্য দায়ী এই কিশোরেরা। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিশুনিরাপত্তা-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রিডা ব্রিগস দাবি করেন, “ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফি শিশুদের পর্দার যৌননিপীড়কের একদম কার্বন কপি বানিয়ে ফেলছে। পর্দায় যা দেখছে, তারা অন্য শিশুদের ওপর সেটাই করার চেষ্টা করছে।”
পর্ন ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শিশুরাই অন্য শিশুদের যৌননিপীড়ন করছে–এ রকম অসংখ্য ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের জন্য আমরা কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি।
১) ইংল্যান্ডে ১২ বছরের বালক পর্ন ভিডিওর অনুকরণে নিজের ৭ বছর বয়সের বোনকে ধর্ষণ করেছে।
২) ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিরাজনগর এলাকার ৭ বছরের শিশুকন্যা ফারজানা নিখোঁজ হয় ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। পরদিন চাচা রহমত আলীর বাড়ির পেছনে পাওয়া যায় তার হাত-পা বাঁধা লাশ। নিষ্পাপ শিশুটিকে কে হত্যা করল?
তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে, সাপ নয় একেবারে জলজ্যান্ত কুমির! শিশু ফারজানার-ই নিকটাত্মীয়, নবম শ্রেণির এক কিশোর মোবাইল পর্ন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফারজানাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। ফিল্মি কায়দায়। পুলিশের চোখে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না।
৩) পর্ন দেখে দিশেহারা হয়ে ১৪ বছরের কিশোর ১০ বছরের শিশুকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে।
৪) ১৫ বছরের কিশোর ১৪ বছরের বালিকাকে চেয়ারে বেঁধে পর্ন ভিডিওর অনুকরণে নির্যাতন চালিয়েছে।
প্রতিনিয়ত এ রকম অজস্র ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশে, আমরা টেরও পাই না। বীভৎস এ ঘটনাগুলোর খুব অল্পসংখ্যকই মানুষের সামনে আসে। বীভৎস একটি ব্যাপার হলো পর্ন-আসক্ত শিশু-কিশোরেরা সমকামিতায়ও লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। পর্ন ভিডিও দ্বারা প্রোগ্রামড কিশোর তরুণদের কাছে অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্স খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক যৌন আচরণ। বন্ধুবান্ধব মিলে একসঙ্গে পর্ন দেখার সময় উত্তেজনা সামলাতে না পেরে এবং নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতার সুযোগ না থাকার কারণে এরা অনেক সময়ই পর্ন দেখার সঙ্গীসাথিদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে যায়।
মেয়েদের মধ্যেও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পর্ন-আসক্তি।
১১,০০০ কলেজ-পড়ুয়া তরুণীদের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, শতকরা ৫২ জন ১৪ বছরে পা দেবার আগেই পর্ন দেখে ফেলেছে। আরেকটি সার্ভেতে দেখা গেছে প্রতি ৩ জন নারীদের মধ্যে ১ জন সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও পর্ন দেখে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন সাইটগুলোর মধ্যে একটির দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি পর্ন দেখা হয় তাদের মধ্যে ইন্ডিয়ার স্থান চার নাম্বারে। আর এই ইন্ডিয়া থেকে যত মানুষ এ সাইটে পর্ন দেখে তার এক চতুর্থাংশই মহিলা। এসব মেয়েদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ লেসবিয়ান (নারী সমকামিতা) এবং গে (পুরুষ সমকামিতা) পর্ন। সংগত কারণেই উক্ত সাইটের রেফারেন্স দেয়া হলো না। মেয়েদের এই ক্রমবর্ধমান পর্ন-আসক্তি বদলে দিচ্ছে তাঁদেরও যৌন উপলব্ধি। দিন দিন বিকৃত যৌনাচার, যৌন-সহিংসতা, ধর্ষণ তাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। কিশোরী-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে গ্রুপ সেক্সে লিপ্ত হবার প্রবণতা।
.
চার
হাইস্কুলের প্রেম! কখন যে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া বালক ফ্রক পরা বালিকার প্রেমে পড়ে যায়, ঠিক বোঝা যায় না! কোচিং ফাঁকি দিয়ে, বালক হেঁটে বেড়ায় বালিকার বাসার আশেপাশের অলিগলিতে। হয়তো কোনো এক দুর্লভ মুহূর্তে বালিকা ব্যালকনিতে আসবে, দক্ষিণের বাতাসে ভাসিয়ে দেবে বেণি খোলা চুল। ক্ষণিকের দেখা পাওয়া! এতটুকুই তো চাওয়া! এতেই বালকের রাতের ঘুম শেষ! অঙ্কে ভূরি ভূরি ভুল, বিজ্ঞানের ক্লাসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা!
দিন যেতে থাকে। বালক বালিকার পেছনে আঠার মতো লেগে থাকে। কোনো একদিন বালিকারও ভালো লাগে যায় বালককে। সদ্য গোফের রেখা গজানো, শার্টের বোতাম খোলা বালককে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। বালিকা কলমের ক্যাপ কামড়িয়ে বাঁকা করে ফেলে। কিছুতেই মন বসে না পড়ার টেবিলে।
একদিন মুখোমুখি দাঁড়ায় দুজন।
কিছুক্ষণের জন্য নেমে আসে মহাজাগতিক নীরবতা।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শত বার রিহার্সেল দিয়ে আসা কথাগুলো ওলোট-পালোট হয়ে যায়। বালক তোতলাতে শুরু করে। গলা শুকিয়ে যায়। নার্ভাস লাগে। বালিকা বালকের করুণ অবস্থা বুঝে ফেলে নিমিষেই। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় একটুকরো হাসি ঝুলিয়ে রেখে বালিকা কঠিন স্বরে বলে, “এই ছেলে এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমি কি বাঘ? খেয়ে ফেলব?”
বালক আরও নার্ভাস হয়ে যায়।
বালিকা ফিক করে হেসে ফেলে… বয়ঃসন্ধিকালীন প্রেমের জটিলতা, অস্থিরতা, জীবন ধ্বংসের অন্যান্য আরও দিক খুব সযত্নে লুকিয়ে গল্প-উপন্যাস, মুভি-সিরিয়ালে রোমান্টিসিযমের চাদরে মুড়িয়ে একে খুবই ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। প্রথম ভালোলাগা, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম কাছে আসা, প্রথম স্পর্শ… সব মিলিয়ে যেন নিদারুণ সুখের এক কমপ্লিট প্যাকেজ। মেয়েদের উপস্থাপন করা হয় “রানী” হিসাবে। ছেলেরা প্রজা, ছেলেরা দাস। কিশোরী, তরুণীদের পটানোর জন্য ছেলেরা পাগলামি করে বেড়াচ্ছে, কবিতা লিখছে, গান বাঁধছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে দূর আকাশের চাঁদটাও চুরি করে আনার। শেষমেষ হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসার কথা জানাচ্ছে।
কিশোর, তরুণদের সকল প্রচেষ্টা, সকল কর্মকাণ্ড ঘটছে কিশোরী, তরুণীদের হৃদয় দখলকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের চোখে ধুলো দেয়া সম্ভব হলেও আজকের চরম যৌনায়িত সমাজে ঠিকই বের হয়ে এসেছে এ প্রেমের আসল চেহারা। পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে এর বীভৎস অবস্থা। আগেই আলোচনা করেছি পর্ন-আসক্তি খুব দ্রুত শিশু-কিশোরদের বাস্তব জীবনে যৌনতার দিকে ঠেলে দেয়। আর এর ফলে মেয়েদের ওপর তীব্র চাপ পড়ে। কিশোরেরা অন্তরঙ্গতার জন্য কিশোরীদের চাপ দিতে থাকে। রাজি না হলে কিশোরীদের নিয়ে রসালো মন্তব্য করা হয়, কিশোরীদের পবিত্র থাকার আকুতিকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, ঠাট্টা-উপহাস করা হয়।১২১ বয়ফ্রেন্ড খেলা করে গার্লফ্রেন্ডের আবেগ নিয়ে। ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে “যদি আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসো, তাহলে আমাকে তোমার টপলেস একটা ছবি পাঠাও। “ টপলেস ছবি প্রযুক্তির কল্যাণে ঘুরতে থাকে অন্য ছেলেদের ফোনেও, ছবি দেখে শুরু হয় লাগামহীন ফ্যান্টাসি, চলে হস্তমৈথুন। অন্য ছেলেরা এসব ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হিসেবে। গার্লফ্রেন্ড বিছানায় যেতে রাজি না হলে কিশোরেরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
মেয়েরাও টপলেস ছবি না পাঠালে বা বিছানায় যেতে আগ্রহী না হলে, অন্য ছেলেদের কাছে পাত্তা পায় না। শেষমেষ বাধ্য হয়ে ছেলেদের প্রস্তাব মেনে নিতে হয়। নিজের শরীর তুলে দিতে হয় ক্ষুধার্ত ছেলেদের পাতে। গত ৬০ বছরে কুমারিত্ব হারানোর বয়স ১৯ থেকে নেমে এসেছে ১৬-তে। ডলি ম্যাগাযিনের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে ৫৬% কিশোর-কিশোরী মাত্র ১৩-১৫ বছর বয়সেই নিজেদের দেহকে তুলে দিয়েছে অন্যের হাতে। অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণা অনুযায়ী, মেয়েদের জীবনের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয়েছে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে। গড় বয়স ছিল ১৪ এর কাছাকাছি। সেই সাথে বাড়ছে গভপাত জন্মের ছাড়পত্র। না পেয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য শিশুর জায়গা হচ্ছে রাস্তার ডাস্টবিন আর টয়লেটের কমোডে। বিছানায় বয়ফ্রেন্ডের যেকোনো আবদার মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে মেয়েরা–হোক সেটা অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্স বা গ্রুপ সেক্সের মতো বিকৃত যৌনাচার।
হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির কল্যাণে কিশোরদের কাছে অ্যানাল সেক্স ও ওরাল সেক্স খুবই জনপ্রিয়। Journal of Adolescent Health এ প্রকাশিত গবেষণার তথ্যমতে, ১৬-১৮ বছর বয়সীদের মধ্যেই অ্যানাল সেক্স ও ওরাল সেক্স সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি ১০ জন কিশোরীদের একজনের অ্যানাল সেক্সের অভিজ্ঞতা থাকত, সেখানে বর্তমানে প্রতি ৫ জন কিশোরীর মধ্যে ১ জনের অ্যানাল সেক্সের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অ্যানাল সেক্সের এ নাটকীয় উত্থানের জন্য দায়ী পর্নোগ্রাফি।
কিশোরী-তরুণীরা সাধারণত অ্যানাল বা ওরাল সেক্সের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। বেশ ব্যথা পায়, সচরাচর এগুলো পছন্দ করে না। কিন্তু বয়ফ্রেন্ডের জোরাজুরিতে এ ধরনের যৌনাচারে বাধ্য হয়।
অনেক সময় ছেলেরা কৌশলের আশ্রয় নেয়, “তুমি রাজি হও, ব্যথা পাবে না শিউর। “ “আসলে আমি এ রকম করতে চাইনি, ভুলে হয়ে গেছে” ইত্যাদি ইত্যাদি…
তাদের চিন্তাই এমন হয়ে গেছে যে, অ্যানাল সেক্সে মেয়েরা ব্যথা পাচ্ছে তাতে কী? একটু না হয় পেলই, কিন্তু ছেলেরা তো মজা পাচ্ছে, সঙ্গীর জন্য না হয় মেয়েরা একটু কষ্ট করলই, ব্যথা পেলই।
ছেলেরা অ্যানাল সেক্স নিয়ে অন্য ছেলেদের কাছে গর্ব করছে, “আমি এত এত বার অ্যানাল সেক্স করেছি।”
পর্ন-আসক্ত কিশোর-তরুণদের চাহিদার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা কিশোরী তরুণীদের জীবন ‘ছ্যাড়ৗব্যাড়া করে ফেলেছে। পর্দার পর্ন অভিনেত্রীদের মতো দেহ ছাড়া তারা ছেলেদের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না; “তুমি উগ্র পোশাক-আশাক পরো না, তোমার শরীর পর্ন অভিনেত্রীদের মতো না। তার মানে তুমি কুৎসিত, তোমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবে না।” নিরুপায় হয়ে তারা পর্ন অভিনেত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। খেয়ে না-খেয়ে, ডায়েট পিল খেয়ে, সার্জারি করে চেষ্টা করছে পর্ন অভিনেত্রীদের মতো হবার।
এক দশকের একটু বেশি সময়ে ১৫-২৪ বছর বয়সীদের অপারেশনের মাধ্যমে যৌনাঙ্গের গঠন পরিবর্তন করার প্রবণতা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। কিশোরী তরুণীরা শিখছে নিজেদের শরীরকে ঘৃণী করতো বাড়ছে প্লাস্টিক সার্জারি, বাড়ছে সিলিকন জেল দিয়ে বক্ষ স্ফীতকরণের পরিমাণ।
অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের মাধ্যমে কিশোরীরা দৈহিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মলাশয়ের টিস্যু ছিঁড়ে যাচ্ছে, প্রস্রাব ও মলত্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে, এমনকি তাদের কলোস্টমি ব্যাগ৩° ব্যবহার করতে হচ্ছে। ওরাল সেক্সের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে HPV ভাইরাসে। গলায় ক্যান্সার হবার কারণে। অনেককেই সার্জারির আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
কিশোরীরা-তরুণীরা ভুগছে অস্থিরতা, উদ্বেগ, হতাশী আর বিষণ্ণতায়। বাড়ছে মাদকের ব্যবহার, আত্মহত্যা। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১১-১৩ বছর বয়সী কিশোরীদের মানসিক সমস্যা বেড়ে গেছে বহুগুণ যা Jottrnal of Adolescents Health এর বিশেষজ্ঞদের পর্যন্ত বিস্মিত করে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশেও তরুণী মডেল, উপস্থাপক ও অভিনেত্রীদের মধ্যেও বিষণ্ণতা, মাদকের ব্যবহার এবং আত্মহত্যার প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। ১৫ বছরের এক কিশোরীকে তার প্রথম অন্তরঙ্গতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জানতে চাওয়া হয়েছিল তার অভিজ্ঞতা। নিরীহ মুখে সে জবাব দিয়েছিল, “আমার মনে হয় আমার সঙ্গী ব্যাপারটা উপভোগ করেছে। ও যেমন আশা করে, আমার শরীর ঠিক তেমনটাই ছিল!”
চিন্তা করুন, একবার পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতা সম্পর্কে! পর্ন ভিডিও এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যেখানে কিশোরী-তরুণীদের নিজের সম্মান, এমনকি সুখ নিয়ে চিন্তারও সময় নেই। তাদের প্রধান চিন্তা সঙ্গীকে সুখ দেয়া। এ পর্ন প্রভাবিত, অতি যৌনায়িত সমাজে কিশোরী-তরুণীরা খুব অল্পদিনেই ধরে ফেলছে সমাজের মূল মেসেজটা–”তুমি নারী, পৃথিবীতে তোমার আগমন ঘটেছে শুধুই পুরুষের শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য। সে তোমাকে যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করবে। তুমি তোমার নিজের সুখের ব্যাপারে চিন্তা করতে পারবে না, তোমার সকল চিন্তাভাবনা আবর্তিত হবে সঙ্গীকে শারীরিক সুখ দেয়াকে কেন্দ্র করে।”
কিশোরী-তরুণীদের চাওয়া তো খুব বেশি ছিল না, একজন আন্তরিক, যত্নবান স্বামী; যে তাঁকে বুঝতে পারবে, তাকে ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে রাখবে, যার কাঁধে পরম নির্ভাবনায় মাথা রাখা যাবে। যৌনতা-তাড়িত এই সমাজ তাদের সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে, ভালোবাসার ফানুস ওড়াতে ইন্ধন দিয়ে বের করে নিয়ে এল ঘরের বাইরে। ছলে বলে কৌশলে কাপড় খুলে নিয়ে, পরিবেশন করল খোলা বাজারে, পুরুষের প্লেটে। এক আকাশ স্বাধীনতার প্রলোভন দেখিয়ে বানিয়ে ফেলল পুরুষের যৌনদাসী! ছেলেরা যখন থেকে মেয়েদের সঙ্গীর বদলে “Slave” হিসেবে দেখা শুরু করল, যখন থেকে এই সমাজ মেয়েদের যৌনদাসী বানিয়ে ফেলল, তখন থেকেই মেয়েরা বুঝে ফেলল, তার শরীর তার সম্পদ, তীর পুঁজি। প্রতিকূল এ পরিবেশে লড়াই করার একমাত্র হাতিয়ার। মেয়েরা তাদের শরীর ব্যবহার শুরু করল, হতে থাকল লাস্যময়ী। যেন যৌবন জ্বালায় বিকারগ্রস্ত ছেলেদের চরকির মতো ঘোরানো যায়! নেয়া যায় সুযোগ-সুবিধা! ছেলেদের সামনে মেয়েরা দাঁড়িয়ে গেল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। যে সম্পর্ক হবার কথা ছিল ভালোবাসার, পবিত্রতার, বিশ্বস্ততার, সহযোগিতার, সেই সম্পর্ক হয়ে গেল প্রতিদ্বন্দ্বিতী, স্বার্থপরতা, প্রতারণা, ছলাকলার আর লেনদেনের!
.
পাঁচ.
বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের অবস্থা কী? আমাদের সমাজে পর্নোগ্রাফি কতটা গভীরে প্রভাব বিস্তার করেছে? বিস্তারিত আলোচনার আগে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক ড. ভিক্টর বি. ক্লাইনের সাথে। ড. ক্লাইন ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহর ইমেরিটাস প্রফেসার। নিজে পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি থেকে। সাইকোলজির ওপর পিএইচডি। পড়াতেনও সাইকোলজি। পর্নোগ্রাফির প্রভাব নিয়ে ড. ভিক্টর আজীবন গবেষণা চালিয়ে গেছেন। ড. ভিক্টর বি. ক্লাইনের মতে পর্ন-আসক্তির সূচনা থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়।
ধাপগুলো হচ্ছে : 1) Addiction –আসক্তি ২) Escalation– আসক্তির ক্রমবর্ধন। ৩) Desensitization– সংবেদনশীলতা হ্রাস পাওয়া ৪) Acting Out– ফ্যান্টাসির বাস্তবায়ন।
যদিও ড. ক্লাইনের এ মডেল “ব্যক্তিকেন্দ্রিক”, অর্থাৎ একজন ব্যক্তির পর্ন আসক্তির ধাপগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য, তবুও আমরা মনে করি এই মডেল দিয়ে বাংলাদেশের সমাজে পর্নোগ্রাফির সামগ্রিক প্রভাব ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
মহামারি আকারে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের পর্ন-আসক্তির সূচনা হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হবার আগে তরুণরা পর্ন দেখত সিঁড়ি ভাড়া করে। ২০০৫ এর দিক থেকে এমপি-ফোর, এমপি ফাইভের মতো গান শোনা এবং ভিডিও দেখার ডিভাইসগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। সে সময় কম্পিউটারের দোকান থেকে টাকা দিয়ে এসব ডিভাইসে পর্ন লোড করে নিত কিশোর-তরুণরা। কিন্তু তখনো পর্ন-আসক্তি মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেনি। ২০০৭ এর দিকে মাল্টিমিডিয়া ফোন সহজলভ্য হতে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে পর্ন-আসক্তি। কিন্তু তখনো এখনকার মতো মহামারি হয়নি। ২০১০ ২০১১ সালের দিকে সহজলভ্য হওয়া শুরু হয় ইন্টারনেট। সবার হাতে হাতে পৌঁছে যায় মাল্টিমিডিয়া ফোন। সেই সাথে বলিউডে ব্যাপকভাবে শুরু হয় ‘আইটেম সং’ কালচার। এই সময়ে থেকেই মূলত পর্ন-আসক্তি শহর-বন্দর, গ্রামেগঞ্জে মহামারি আকার ধারণ করে।
ড. ক্লাইনের মডেলের প্রথম ধাপে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ পুরোটা সময় জুড়ে পর্ন-আসক্তরা যেমন মানসিকভাবে দিন দিন বিকৃত হয়েছে, নির্লজ্জ আর বেহায়া আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, একই সাথে সাথে পর্ন ভিডিওতে দেখা জিনিসগুলো বাস্তব জীবনে পরখ করতে গেছে। অর্থাৎ ড. ক্লাইনের মডেলের তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপে পা ফেলেছে।
২০১২-২০১৪, এ সময়টাতে সামষ্টিকভাবে বাংলাদেশ পার করে ফেলে ড. ক্লাইনের মডেলের ২ নম্বর ধাপট। অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং হাইস্পিড ইন্টারনেট একদম সহজলভ্য হয়ে ওঠে। ইন্টারনেট পৌঁছে যায় সবার হাতে হাতে। “আইটেম সং” প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। নাটক, সিনেমা আরও অশ্লীল, আরও যৌন উত্তেজক হতে থাকে। প্রথম আলোর মতো পত্রিকাগুলো ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক “বিশেষ পর্ন অভিনেত্রীর” খবর, ঘন ঘন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাপাতে থাকে। বাঁধভাঙা প্লাবনের মতো শিশু, কিশোর, তরুণদের ভাসিয়ে নেয় পর্নোগ্রাফি। কিন্ডারগার্ডেনের বাচ্চারাও পর্ন ভিডিওর খোঁজ পেয়ে যায়; ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চারাও হয়ে পড়ে পর্ন-আসক্ত। অনেকের বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য থাকার কারণেই এ হৃদয়বিদারক সত্যগুলো বলতে হচ্ছে।
ডিসেন্সেটাইযড হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু পর্নোগ্রাফি আসক্তি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেট পর্ন ও বলিউড আইটেম সংয়ের (বাই ডেফিনেশান আইটেম সংও একধরনের পর্ন। সফটকোর, কিন্তু পর্ন) সহজলভ্যতার কারণে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী তথা সামগ্রিক সমাজের যৌন-মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি এবং অশ্লীলতাকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্ন দেখা এবং নারীদের নিয়ে “ছিনিমিনি খেলা পৌরুষের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে যত নীচে নামতে পারবে, যার “প্লে-বয়” ইমেজ যত বেশি সে তত বেশি “আসল পুরুষ”। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে, উঠতি বয়েসী কিশোর-তরুণদের মধ্যে দুর্লভ যে কজন নারীদের আসলেই সম্মান করে–নারীর শরীরটা নয় বরং তার মনটাকে, তার সামগ্রিক সত্তাকে যারা প্রাধান্য দেয়–তাদের নিয়ে চলে রসিকতা,ব্যঙ্গ বিদ্রূপ। বলা হয় নপুংসক, হিজড়া…।
পর্ন প্রভাবিত মিডিয়া এবং যৌনতা-তাড়িত সমাজ মেয়েদের শিখিয়ে দিলো কীভাবে পোশাক-আশাক পরলে, কীভাবে চলাফেরা করলে তুমি যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে। তুমি থাকবে পুরুষের নজর আর আকর্ষণের কেন্দ্রে। বেড়েছে জিনস, টপস, টিশার্ট, আঁটসাঁট পোশাক আর উগ্র মেইক আপ। অভিভাবকেরা চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছে মেয়েদের সন্ধ্যার পর ঘরে ফেরা, ছেলেবন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেলে জড়াজড়ি করে ঘুরে বেড়ানো, রিকশায়-পার্কে “মেইকআউট”। সমাজ নীরবে মেনে নিয়েছে রাস্তাঘাটের অশ্লীলতা। স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করেছে। সমাজের মানসিকতা এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে, নৈতিকতার বাঁধন এতটাই ঢিলে হয়ে গেছে যে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে “আইটেম সং” দেখতেও কারও বাধছে না। “আইটেম গার্ল”, “পর্নস্টার”রা ঘরের মানুষ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ এখন পা ফেলেছে ড. ক্লাইনের মডেলের চতুর্থ ধাপে–Acting Out. ফ্যান্টাসির বাস্তবায়ন। গত ক-বছরে পর্ন ভিডিওর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি, ধর্ষণ, বেড়েছে ব্যাপক আকারে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা অল্প বয়সে লিটনের ফ্ল্যাট আর “রুম-ডেইটের” খোঁজ করছে। ফুলে ফেঁপে উঠেছে ফার্মেসির ব্যবসা, ডাস্টবিনে প্রায় প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। বাড়ছে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও করে রাখার প্রবণতা, আর এ ভিডিও দিয়ে চলছে ব্ল্যাকমেইল। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে, ভুক্তভোগীরা ঝুলে পড়ছে সিলিংএ।
যৌনতার পদ্ধতি বদলে গেছে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অ্যানাল আর ওরাল সেক্সের পরিমাণ। চিপায়চাপায়, আড়ালে-আবডালে, এমনকি ক্লাসরুমে কিংবা সি-বীচেও ওরাল সেক্সে লিপ্ত হতে দ্বিধাবোধ করছে না কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা। রিকশীর হুডের নিচে, লোকাল বাসের পেছনের সিটে, রেস্টুরেন্ট নভোথিয়েটার আর সিনেমা হলের আলো-আঁধারির “ক্লাসিক্যাল লুইচ্চামি” তো রয়েছেই। যৌন উত্তেজক মাদক ইয়াবার ব্যাপক সহজলভ্যতা ও ব্যবহার প্রভাব ফেলেছে তরুণসমাজের সামগ্রিক যৌন বিকৃতিতে। হস্তমৈথুন। আসক্তির পরিমাণ ভেঙে ফেলেছে আগের সব রেকর্ড। যৌন অক্ষমতা, যৌন অতৃপ্তি, যৌন অসন্তুষ্টি বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরকীয়া, ব্যভিচার, পতিতাগমন, বিবাহ-বিচ্ছেদ।
বাংলাদেশে পর্ন-আসক্ত মানুষের বর্তমান সংখ্যাটা কোটি পার হয়ে যাওয়াও অসম্ভব না। প্রতিনিয়ত অজস্র নতুন মানুষ ড. ক্লাইনের মডেলের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপে পা ফেলছে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ বোধহয় আছে তৃতীয় ধাপে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মানসিকভাবে বিকৃত হয়ে গেছে, বিকৃত যৌনচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে অসংখ্য মানুষের মাথায়। সুযোগ এবং প্রাইভেসি পেলে এরা যেকোনো সময় যে কারও সাথে, যেকোনো শর্তে বিছানায় চলে যাবে। এ মানুষগুলো যখন তিন নম্বর ধাপ পেরিয়ে চার নম্বর ধাপে পা দেবে, তখনকার কথা চিন্তা করলে রক্ত হিম হয়ে আসে।
গত তিন বছরের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ এক জাহান্নামের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছু মানুষ নিজ হাতে জাহান্নামের দরজা খুলে ঝাঁপ দিয়েছে আগুনে, অগণিত মানুষ ঝাঁপ দেয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অবস্থার যদি উন্নতি না হয়, যদি পর্ন-আসক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে না তোলা হয়, যদি পর্ন-আসক্ত হবার কারণগুলো বন্ধ না করা হয়, তাহলে আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থা ধসে পড়বে, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। প্রচলিত মূল্যবোধ, মহৎ রীতিনীতি, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা সবকিছুই বিলুপ্তির পথ ধরবে।
সবকিছু চলে যাবে নষ্টদের অধিকারে!