মৃত্যু উপত্যকা – ৯

নয়

কেলটন টিলার গোড়ায় সামনে পেছনে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে তার আচরণ উদ্ভট মনে হলেও জিম স্পষ্ট বুঝতে পারল সুচিন্তিত কোন পরিকল্পনা আছে কেলটনের।

আন্দাজ করল শর্টি। ‘চলে যাওয়া লোকগুলো আমাদের পেছনে হাজির হবে সে অপেক্ষায় আছে লোকটা।’

‘চালাকি করছে,’ সায় দিল জিম। ‘চাইছে আমরা ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি।’

‘ও কি আমাদের এত বোকা মনে করে যে ভাবছে আমরা আন্দাজ করব না ওর লোকরা আমাদের পেছনে এসে হাজির হতে পারে?’

টিলার মাথাটা সমতল। বারো ফুট পেছনে হটে পেছন দিকে নজর বুলাল শর্টি। ওদিকেই আছে ঝর্নাটা। ওখানেই প্রথমে শর্টির সঙ্গে দেখা হয়েছিল জিমের।

ঘাড় ফিরিয়ে শর্টিকে দেখল জিম। ওর চোখের কোণে একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। শর্টির ঠিক দু’ফুট দূরে পাথরের পেছন থেকে উঁকি দিল একমাথা কালো চুল। এবার দেখা গেল কাঁধ। কালো দু’চোখ থেকে ঝরছে নগ্ন বিদ্বেষ। পাথরের পেছন থেকে একটা হাত বের করে আনল। হাতে সিক্সগান। শর্টিকে খতম করার মতলব। সিক্সগান তাক করল সে। ট্রিগার টেপার আগেই হাত থেকে পড়ে গেল অস্ত্রটা।

লোকটার ঠিক চেহারা লক্ষ্য করে গুলি করেছে জিম। নাকের ফুটো দুটো এক হয়ে গেল বুলেট আঘাত করায়। ছিটকে পেছনে হটল মাথাটা। লোকটার লাশ ঢাল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে, নুড়ি পাথরের আওয়াজ শুনে বোঝা গেল।

চমকে ফিরে তাকাল শর্টি। ব্যাপার বুঝতে পেরে জিমের দিকে পা বাড়াল। পিস্তল সরাল না জিম, তৈরি। দ্বিতীয় কেউ এলে তারও একই পরিণতি হবে। প্রথমজনের অবস্থা দেখে অন্যদের শিক্ষা হয়ে গেছে। কেউ আর ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করল না।

দ্বিতীয় লোকটা অন্যদিক দিয়ে উঠল। পাথরের ওপর দিয়ে প্রথমে দেখা গেল তার একটা হাত। দৌড়ে তার কাছে চলে গেল শর্টি। মাত্র চেহারা দেখা দিল লোকটার। কপালে গুলি খেয়ে সঙ্গীর সঙ্গে দোজখে দেখা করতে চলে গেল কিছু বোঝার আগেই।

‘এদিকে আরও চারজন,’ বলল জিম। ‘ওদিকে ছয়।’

‘দৌড়ে পালাতে হলে আমার বুটের পালিশ নষ্ট হয়ে যাবে,’ অভিযোগের সুরে জানাল শর্টি। ভ্রূ কুঁচকে আকাশের দিকে তাকাল। ‘ব্যাপারটা কী! সূর্য কি আমাদের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করে দিল? এখনও ডোবে না কেন! আট-দশ ঘণ্টা হয়ে গেল আকাশের একই জায়গায় ঝুলছে!’

‘এখানে এসেছি আমরা এক ঘণ্টাও পুরো হয়নি,’ শুধরে দিল জিম। ‘এখন আমাদের প্রথম চিন্তা হওয়া উচিত আঁধার নামলে এখান থেকে সরব কীভাবে। সমস্ত পথে প্রহরা বসাবে ওরা। একটা মাত্র পথে আমরা নিরাপদ থাকব। পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে যদি প্রেয়ারিতে নেমে যেতে পারি তো বাঁচোয়া। ঘোড়া নিয়ে নামা যাবে না। বড় বেশি খাড়া।’

টিলার মাথায় আটকা পড়ে গেছে ওরা। দু’দিকে অবস্থান নিয়েছে কেলটনের লোকরা। পুবদিকে তাকাল জিম। ঝর্নার উল্টোপাশে টিলার গা খাড়াভাবে নেমে গেছে কয়েকশো ফুট। ওখানে সরু একটা উপত্যকা আছে, টিলার সঙ্গে সমান্তরালে এগিয়েছে, তবে নিচে নেমেছে ক্রমেই।

‘সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত বেঁচে থাকার সামান্য দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে আমাদের,’ বেশ খুশি খুশি শোনাল শর্টির গলা। ‘ওই পর্যন্ত বাঁচতে-পারলে তখন ভাবা যাবে আমরা নামতে পারব কিনা।’

‘ভুল বললে,’ জানাল জিম। ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করব না আমরা।’

জিমের চোখে তাকাল শর্টি। ‘পাগল নাকি তুমি?’

‘পাগল না হলেও তোমার বন্ধু তো। পাগলের বাড়া। বদ্ধ উন্মাদ। …বাজি ধরে বলতে পারি কেলটন ভাবছে আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানেই আটকে বসে থাকব। তা আমরা থাকছি না। ওর লোকরা ট্রেইলের ধারে ফাঁদ পেতে বসে থাকবে। তা থাকুক। ওপথে যাব না আমরা।’

‘তা হলে কী করছি? পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে নামার মতলব করেছ নাকি তুমি!’

‘না। ঘোড়া নিয়েই নামব। দেরি করার কোন মানে হয় না। যদি পিছলে পড়েও যাই তাও কেলটনের হাতে মারা পড়ার চেয়ে ভাল। চলো তা হলে। এক্ষুণি চেষ্টা করে দেখা যাক।’

‘জানতাম তুমি উন্মাদ,’ গম্ভীর চেহারা শর্টির। ‘আমরা কি টিকটিকি নাকি যে খাড়া দেয়াল বেয়ে নামতে পারব? ঠিক আছে, চলো। রাতে ঘেরাও হয়ে মরার চেয়ে পাহাড় থেকে পড়ে মরাই বোধহয় ভাল।’

অস্ত্রটা রিলোড করে নিল শর্টি, হ্যাট থেকে তাজা কার্তুজগুলো বের করে পকেটে পুরল। মাথায় হ্যাট চাপানোর পর আবার তাকাল জিমের দিকে। তাগাদা দিল, ‘দেরি করছ কেন!’

কেলটনের দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে পাথরের পেছন থেকে সরল জিম। কেলটন এখনও টিলার গোড়ায় আপাত উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোড়া আগুপিছু করছে। পিস্তলের রেঞ্জের বাইরে আছে লোকটা।

জিম বলল, ‘টিলা থেকে নামার পর যদি বদমাশগুলোর সঙ্গে দেখাও হয় তো তাদের নির্দেশ দেয়ার জন্যে কেলটন উপস্থিত থাকবে না। আমরা নামার আগে টিলায় উঠতে পারবে না ও।’

‘বলো আমরা মরার আগে টিলায় উঠতে পারবে না ও,’ দ্বিমত পোষণ করল গম্ভীর শর্টি। ‘টিলার গায়ে যদি বরফ আর তুষার থাকত তা হলে পিছলে নেমেও বাঁচার একটা আশা ছিল। এখন কোন আশা নেই।’

‘চলো তা হলে।’ পা বাড়াল জিম।

ঝর্নার ধারে বোল্ডারগুলোর মাঝে চলে এল ওরা, পাথরের সঙ্গে বাঁধা ঘোড়াটা খুলে স্যাডলে উঠে বসল দু’জন।

ট্রেইলটা আড়াআড়ি পার হয়ে গাছের সারির ভেতরে ঘোড়াটাকে ঢোকাল জিম।

‘এক মিনিট,’ হঠাৎ বলে উঠল শর্টি।

ঘোড়াটা থামার পর নামল সে, একটা ঝোপ ছিঁড়ে ধুলোর ওপর বুলাতে শুরু করল, খুরের চিহ্ন মুছে দিচ্ছে। কাজটা শেষ করে আবার উঠল স্যাডলে। বেশ খুশি দেখাল তাকে।

‘দেখা যাক ইণ্ডিয়ান কৌশল কাজে দেয় কিনা। কি মনে করো, ওরা আমাদের চিহ্ন খুঁজে অনুসরণ করতে পারবে?’

‘ঘোড়ার খুরের চিহ্ন তুমি মুছেছ ঠিক, কিন্তু নিজের বুটের চিহ্ন রেখে এসেছ। এভাবেই তোমাকে কৌশল খাটাতে শিখিয়েছে ইণ্ডিয়ানরা?’

‘ধুশালা!’ বিড়বিড় করল লজ্জিত শর্টি, পর মুহূর্তে মান বাঁচানোর জন্যে বলল, ‘যাকগে, ওটা আমার বুটের দাগ সেটা ওরা বুঝবে কী করে! চলো, এগোনো যাক।’

প্রায় খাড়া ঢালের দিকে অনিচ্ছুক ঘোড়াটাকে পরিচালিত করল জিম।

সামনে গাছের সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। চারপাশে আর সামনে শুধু পাথর। নুড়ি থেকে শুরু করে আস্ত কেবিনের সমান বড় পাথরও আছে তার মধ্যে। ঢাল এতই বেশি যে ঘোড়াটার প্রতি কদমে হড়হড় করে নিচে পিছলে নামছে পাথর, যাবার পথে আরও পাথর সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। ঘোড়াটা অতি সতর্ক হয়ে উঠেছে, প্রতি কদম দেখেশুনে ফেলছে, তারপরও নাক দিয়ে ভয়ের আওয়াজ বের হচ্ছে ওটার অজান্তে। পিঠে দু’জন আরোহী থাকায় ওটার কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

আঁকাবাঁকা পথে ঘোড়াটাকে পরিচালিত করছে জিম, যাতে অপেক্ষাকৃত সহজে নামতে পারে ওটা, পিছলে এক দেড়শো ফুট নিচে গিয়ে না পড়ে।

গড়িয়ে নামা পাথরের আওয়াজ নিশ্চয়ই অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে।

‘আওয়াজটা আমাদের ক্ষতি করে দিচ্ছে,’ শর্টির গলায় অভিযোগের সুর। ‘তোমার ঘোড়াটাকে বলো পায়ের বুড়ো আঙুলে ভর করে এগোতে।’

মাত্র কথাটা শেষ করেছে শর্টি, ওর মাথার ওপর দিয়ে শিস কেটে বেরিয়ে গেল একটা বুলেট। রাইফেলের গর্জনটা এত কাছে যে মনে হলো পিঠের কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। দ্বিতীয় একটা রাইফেল গর্জে উঠল। পরমুহূর্তেই আগের জন লিভার টেনে তৃতীয় গুলিটা করল। তিনটে গুলিই এত কাছ দিয়ে গেল যে উত্তেজনায় টানটান হয়ে গেল পলায়নপর জিম আর শর্টির স্নায়ু।

ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকাল শর্টি, পেছনটা দেখে নিয়ে বলল, ‘দু’জন। আওয়াজ পেয়ে হাজির হয়েছে। আরও তাড়াতাড়ি এগোও!’

বিরাট একটা বোল্ডার পাশ কাটাল জিম, আপাতত ওরা নিরাপদ। কিন্তু এখানে থামা যাবে না। কেলটনের লোকরা তা হলে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে ফেলবে। ইতিমধ্যেই ওদের অবস্থান আন্দাজ করে দু’দিক থেকে গুলি শুরু হয়ে গেছে। পাথরে পিছলে তীক্ষ্ণ আওয়াজ করে ছিটকে যাচ্ছে গুলি।

‘টাইট করে ধরো!’ চেঁচাল জিম। ‘যাচ্ছি আমরা!’

স্পারের খোঁচা খেয়ে লাফ দিয়ে সামনে বাড়ল ওর ঘোড়াটা। ঘোড়ার কানের কাছে মাথা নিয়ে রাশ টেনে ওটাকে দিক নির্দেশ করছে জিম। প্রতিটা বড় পাথর বেড় দিয়ে এগোচ্ছে সামান্যতম আড়াল পাবার জন্যে।

ঢালের মাঝামাঝি প্রায় পৌঁছে গেছে ওরা। সামনে একদিকে একটা সরু উপত্যকা, পরবর্তী ঢালের গায়ে গিয়ে মিশেছে। প্রায় ওখান পর্যন্ত চলে যেতে পারল ওরা, তারপর ঘোড়াটার সামনের পায়ের নিচে পড়ল গোল একটা ফুটবলের সমান পাথর। হোঁচট খেয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল ঘোড়াটা, পিছলে এগোল।

হঠাৎ গতি রুদ্ধ হওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে ঘোড়ার মাথার ওপর দিয়ে ছিটকে পাথুরে জমিতে চিত হয়ে পড়ল জিম, শরীরটা গড়াতে শুরু করল ওর, একটা বড় বোল্ডারে ধাক্কা খেয়ে থামল।

এক পাশে কাত হয়ে ঘোড়ার রাশ হাতে নিল শর্টি। ততক্ষণে সামলে নিয়েছে ঘোড়াটা। পিছলে নিচে নামা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণ হাতে করে ছোটার মতলব ছিল ওটার, রাশ টাইট করে ধরে থামাল শর্টি। উঠে দাঁড়িয়েছে জিম, খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘোড়াটার দিকে এগোল।

চোট পাওয়ায় ডানদিকের সামনের পা জমিতে ঠিক মত ফেলতে পারছে না ঘোড়াটা।

পেছন থেকে ভেসে এল উৎফুল্ল চিৎকার। নতুন উদ্যমে গোলাগুলি শুরু হলো। ঢালের মাথায় ঘোড়া থেকে নেমেছে কেলটনের লোকরা, এখন গুলি করতে করতে সাবধানে ঢাল বেয়ে নামছে, সুযোগ পেলেই আড়াল নিচ্ছে বড় বড় বোল্ডারের। ঢালটা এমনই যে ঘোড়ায় না চেপে পায়ে হাঁটলেই দ্রুত এগোনো যায়।

জিমের শার্টের বাম হাতাটা পুরো ছিঁড়ে গেছে। পিস্তলটাও পড়ে গেছে হোলস্টার থেকে। ওটা তুলতে উবু হলো ও, ঠিক সেই মুহূর্তে অস্বাভাবিক শক্তিতে ধাক্কা লাগল ওর শরীরে। ঝটকার চোটে পেছনের পাথরের ওপর আবার পড়ে গেল ও।

ব্যথা নেই কোন, কিন্তু ওর মনে হলো বামহাত বা বামকাঁধ বলতে কিছু নেই ওর। হঠাৎ খুব অবসন্ন বোধ করল, বিবশ ঠেকল শরীর।

এক মুহূর্ত চুপ করে শুয়ে থাকল ও, উঠতে ইচ্ছে করছে না।

পেছনের এক লোক বোল্ডারের আড়াল নেবার আগেই শর্টির গুলি খেয়ে পড়ে গেল। ঘোড়া থেকে নেমে দৌড়ে জিমের কাছে চলে এল শর্টি।

‘খারাপ আঘাত?’

দেখতে পেল জিমের শার্টে খয়েরী-লাল ছোপ ক্রমেই বাড়ছে। বামকাঁধ থেকে ছড়াচ্ছে রক্ত।

হাতটা নড়ানোর চেষ্টা করল জিম। একচুল নড়াতে পারল না।

‘জানি না,’ দুর্বল স্বরে বলল জিম। ‘ওঠাও আমাকে।’

ডানহাত ধরে জিমকে উঠতে সাহায্য করল শর্টি, হাঁটিয়ে নিয়ে ঘোড়াটার পাশে দাঁড় করিয়ে দিল।

‘পা ঢোকাতে পারবে স্টিরাপে?’

পা নাড়ল জিম। শুধু বামদিকটা অবশ হয়ে গেছে ওর।

জিমের অস্ত্রটা নিয়ে খাপে পুরে দিল শর্টি। ভাল হাতে স্যাডল হর্ন খামচে ধরে ওঠার চেষ্টা করল জিম। শর্টি সাহায্য করায় ঘোড়ার পিঠে উঠে বসতে পারল। এখনও কোন ব্যথা অনুভব করছে না ও। কিন্তু আস্তে আস্তে অসুস্থতার একটা স্রোত যেন ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। বুঝতে পারছে আঘাতটা কাঁধে হলেও মারাত্মক।

‘টিকে থাকতে পারবে তো?’ উদ্বিগ্ন শোনাল শর্টির গলা। ‘এক মিনিট টিকে থাকো, তা হলেই ওদের আওতার বাইরে চলে যেতে পারব।’

ঘোড়াটাকে সামনে বাড়াল শর্টি, চলে এল র‍্যাভিনের গোড়ায়। র‍্যাভিনটা দুটো টিলাকে বিচ্ছিন্ন করেছে মাঝখান থেকে। বেশ গাছ জন্মেছে এখানে।

মোটামুটি ঘন বন। ভেতরে ঢুকে পড়ল শর্টি, আপাতত সরে যেতে পারল ওরা কেলটনের লোকদের চোখের আড়ালে।

‘টিকে থাকতে হবে আমাকে, কিছুক্ষণ পর বলল জিম। ‘কেলটনের অপরাধ প্রমাণ হয়ে গেছে। নিজের চামড়া বাঁচানোর একটা মাত্র উপায় আছে ওর, সেটা হচ্ছে খবরটা অন্য র‍্যাঞ্চারদের জানানোর আগেই তাদের খুন করা

‘কী হবে যদি তুমি জ্ঞান হারাও?’ জিজ্ঞেস করল চিন্তিত শর্টি। ‘সেক্ষেত্রে আমাকে কী করতে হবে?’

‘জ্ঞান হারানোর বিলাসিতা করতে পারব না। যেভাবে হোক সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু যদি না পারি, তা হলে সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর কাছে চোরাই গরুর খবরটা পৌঁছে দেবে তুমি। উডফোর্ডদের ওখানে যেয়ো। পুবদিকে ওদের র‍্যাঞ্চ। ওরাই সবচেয়ে কাছে থাকে। কী জেনেছি সেটা ওদের জানালে ওরা বুঝবে কী করতে হবে। যদি বিশ্বাস করতে না চায় তা হলে ওদের নিয়ে এসে গরুর পাল দেখিয়ে দিয়ো, সন্দেহের কোন অবকাশ থাকবে না।’

র‍্যাভিনের গোড়ার দিকে চলে এসেছে ওরা। ক্রমেই সমতল হয়ে আসছে ভূমি, এগোনো সহজ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল শর্টি, ‘এখন কেমন বোধ করছ? ব্যথা শুরু হয়েছে?’

ভাল হাতটা দিয়ে স্যাডল হর্ন আঁকড়ে ধরে আছে জিম, তারপরও শরীরটা বারবার দুলে দুলে কাত হয়ে পড়ে যেতে চাইছে।

‘শুরু হয়েছে, তবে সহ্য করার মত।’

পরের প্রশ্নে শর্টির গভীর উদ্বেগ প্রকাশ পেল। ক্লান্ত লাগছে, মনে হচ্ছে যা ইচ্ছে ঘটুক, কিছু যায় আসে না?’

‘খানিকটা,’ স্বীকার করল জিম।

‘জানি। এমনই হবার কথা। জীবনে বেশ কবার গুলি খেয়েছি তো! যখন মনে হবে ঘোড়ার পিঠে আর টিকে থাকতে পারবে না তখন বলে ফেলো। নিচে নেমে প্রতিরোধ করা যাবে ব্যাটাদের।’

‘আমি যদি জ্ঞানও হারাই তা হলেও ওই কাজ করতে যেয়ো না ভুলেও। যে করে হোক উডফোর্ডদের কাছে খবর পৌঁছে দিতে হবে।

তর্ক করল না শর্টি, কিন্তু নীরবে স্যাডলে বসে রইল ওর পেছনে। দু’হাত জিমের দু’পাশে শক্ত করে রেখে ওকে সিধে বসে থাকতে সাহায্য করছে।

এক সময় পাহাড়ী ঢাল পেরিয়ে এল ওরা, প্রবেশ করল ঘন বনে। ধীর গতিতে এগিয়ে চলল জিমের র‍্যাঞ্চ লক্ষ্য করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *