মৃত্যুঘণ্টা – ১২

বারো

পরিত্যক্ত এক বাড়ির পেছনের এক ঘরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চুপ করে বসে আছে জুবায়ের। নির্দেশ মত কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আনতে পারেনি বিজ্ঞানীর স্যাম্পল বা ডকুমেণ্ট। কোনও মতে পালিয়ে এসেছে জান হাতে নিয়ে।

পচা আবর্জনার ভেতর অন্ধকারে শিউরে উঠল জুবায়ের। সেইন নদী থেকে ওঠার কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেছে ভেজা পোশাক, কিন্তু মনের শক দূর হতে সময় লাগবে।

সবই তো হারিয়ে বসেছে। বন্ধুরাও মরে গেল। এবার ঠিকই ওকে খুঁজে বের করবে পুলিশ। জীবনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সব আশাই শেষ। সংগঠনের প্রভু শাস্তি দেবে ওকে। সম্ভবত খুন করে ফেলা হবে।

প্যান্টের পকেট থেকে লাইটার বের করে আগুন জ্বালল।

বাতি দেখে কিচকিচ শব্দ তুলে নোংরা দেয়ালের গর্তে লুকিয়ে পড়ল কয়েকটা ইঁদুর।

আগুনের কমলা আলোয় চারপাশ দেখল জুবায়ের। মেঝেতে চাপ চাপ ময়লা ও প্রস্রাবের কটু গন্ধ। ভারী লাগছে বামহাতে রাখা পিস্তল। প্রথম যখন ওই অস্ত্র দিল মার্ডক, তখন কত হালকা মনে হয়েছিল। তখনও কাউকে খুন করেনি। রক্ত লাগেনি হাতে। এখন জীবনটাও খুব ওজনদার লাগছে।

পিস্তলটা মেঝেতে নামিয়ে রাখল জুবায়ের। ওর মনে আছে কোন্ নম্বরে ফোন করতে হবে। মোবাইল ফোন বের করে নম্বর টিপল। কয়েক সেকেণ্ড পর ওদিক থেকে সাড়া দিল মাৰ্ডক। তার প্রশ্নের জবাবে নিচু স্বরে বলল জুবায়ের, ‘আমি ব্যর্থ।’

স্পিকারে খুব শান্ত স্বরে বলল মার্ডক, ‘তুমি কোথায় আছ, জুবায়ের?’

‘আবারও ফিরেছি লে কুখনেইভ-এ, পুলিশ খুঁজছে আমাকে।’

‘হ্যাঁ, খুঁজবে,’ বলল মার্ডক। ক’ সেকেণ্ড কী যেন ভেবে নিল। ‘কিন্তু ওদের আগেই তোমার কাছে পৌঁছব আমি।

কথাটা শুনে বুক কেঁপে গেল জুবায়েরের। বেসুরো কণ্ঠে বলল, ‘আপনি কি আমাকে খুন করবেন?

কর্কশ হাসল মার্ডক। অন্ধকার ঘরে প্রতিধ্বনিত হলো ওই আওয়াজ। ভীষণ ভয় লাগল জুবায়েরের। একবার মনটা চাইল রেখে দেবে ফোন। দৌড়ে পালিয়ে যাবে দূরে কোথাও। কিন্তু যাবে কোথায়? শীতল মেঝেতে পড়ে থকা পিস্তলটা দেখে ভাবল, দেব নাকি সব শেষ করে? তা হলে আর অসহ্য নির্যাতন করে খুন করতে পারবে না মার্ডক।

‘যতটা ভেবেছি, তার চেয়ে ভাল করেছ,’ বলল মার্ডক। ‘তোমার কাজে খুশি প্রভু। মামবা, আমরা তোমাকে ফেলে চলে যাচ্ছি না।’

ক্ষণিকের জন্যে আতঙ্ক কমল জুবায়েরের। চুপ করে আছে অন্ধকারে। একটু আগে ভাবছিল, কীভাবে শেষ করবে নিজের জীবন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বাঁচার চেষ্টা করা উচিত। হ্যাঁ, মাফ করে দিয়েছেন প্রভু। খুন করবে না মার্ডক। মামবা আর একা নয়। বিষাক্ত সাপকে সরিয়ে নেয়া হবে নিরাপদ কোথাও।

‘যেখানে আছ, ওখানেই থাকো,’ বলল মার্ডক, ‘একটু পর তোমাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাব। ‘

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *