মৃত্যুক্ষুধা – ২৭
পাড়ার প্রায় শতাধিক ক্ষুধাতুর শিশুকে পরিপাটি করে মেজোবউ খাইয়ে-দাইয়ে বিদায় করে যখন লতিফার বাড়ি এসে দাঁড়াল, তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। বাইরে রুবির প্রকাণ্ড মোটরকার দাঁড়িয়ে।
কী যেন এক নিবিড় প্রশান্তিতে আজ মেজোবউয়ের বুক ভরে উঠেছে। ওই সব ক্ষুধাতুর শিশুদের খাওয়াতে, তাদের প্রত্যেকেরে আদর করতে কোলে করতে করতে তার মনে হচ্ছিল, তার খোকা হারাইনি! সে এই ক্ষুধাতুর শিশুদের মাঝেই শত শিশুর রূপ ধরে এসেছে! তাদের আদর করে খেয়ে চুমু খেয়ে বুকে চেপে তার সাধ যেন আর মিটতে চায় না। যে খোকাকে দেখে, তার মুখেই সে তার খোকার মুখ দেখতে পায়! আজ যেন সে জগজ্জননি!
সন্ধ্যাতারার দিকে তাকিয়ে তার মনে হল ও তারা নয়, ওর খোকা! ওই দূরলোকে থেকে তার মাকে ফিরে পেয়ে হাসছে। ওই আকাশের মতো বিরাট উদার খোকার মায়ের কোল।
এক আকাশ-মাতার কোলে শত-সহস্র তারা—খোকা-খুকি!
সন্ধ্যাতারার পাশেই চতুর্থী তিথির চাঁদ। ও যেন খোকার বাঁকা হাসি। ও যেন খোকার ডিঙ্গি। খোকা বাণিজ্যে বেরিয়েছে – তার মাকে রাজরানি করবার দুঃসাহসে মণিমাণিক্য আনতে শূন্যে পাড়ি দিয়েছে। না, না – ও যেন খোকার হাতে ছেনি-দা! দুষ্টু ছেলে দা হাতে গহন বনে পালিয়েছে, তার দুঃখিনি মায়ের জন্য কাঠ কেটে আনবে। না, না— ও মায়ের জন্যে ওই শূন্যে ঘর তুলছে মেঘের ছাউনি দিয়ে! আকাশে আকাশে সারাদিন খেলা করে ফিরবে, পালিয়ে বেড়াবে, তারপর সন্ধ্যাবেলায় ওইখানটিতে ওই উঠোনে দাঁড়িয়ে বলবে, ‘আমি এসেছি, আমি হারিয়ে যাইনি।’
মেজোবউয়ের চোখ জলে ঝাপসা হয়ে উঠতেই তার মনে হল, ওই তারার চোখও যেন ঝিকমিক করে উঠেছে! খোকার চোখে জল! না, না, আর কাঁদবে না সে! ও যে সকল দেশের সকল লোকের সকল মায়ের খোকা সে! ও কি কারুর একলার? এক মার কাছে এসেছিল, আদর পায়নি, আর এক মায়ের কাছে চলে গেছে! তবু তো সে আছে! ওই তারা, ওই চাঁদে, ওই আকাশের কোথাও না কোথাও সে আছেই আছে! যেখানে খুঁজি, সেখানেই যে ওকে দেখতে পাই! দুষ্টু ছেলে, কখনও ভিখারিনির কোলে খিদের ছল করে কাঁদে, কখনও পিতৃমাতৃহীনের ছল করে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে করে বেড়ায়, কখনও মারহাট্টা মায়ের ওপর রাগ করে পথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে, কখনও দুলালি মায়ের কোলে সোনাদানা পরে হাসে। ও কি খোকা, ও যে সর্বগ্রাসী, রাক্ষস! সমস্ত বিশ্বকে ও যে ওর রূপ দিয়ে ছেয়ে ফেলেছে।…
মেজোবউ হাসতে হাসতে বসে পড়ে বলল, “এই মাত্তর খোকাদের খাইয়ে এলুম। ওদের খাওয়াতে বড্ড দেরি হয়ে গেল ভাই, তাই আজ আর আসতে পারিনি! যা সব দুষ্টু ছেলে!”
একী অপূর্ব কণ্ঠস্বর। এ কী প্রশান্ত গভীর স্নেহ! সকলের মন যেন জুড়িয়ে গেল।
মেজোবউ এমন করে কথগুলি বলল পারল না! শুধু রুবির চোখে ফেটে জল এল! সে মনে মনে মেজোবউকে নমস্কার করে বলল, “তোমার আর ভয় নেই। তুমি ভয়ের সাগর উতরে গেছ!”
লতিফা বিমূঢের মতো প্রশ্ন করে বসল, “কার খোকা মেজোবউ?”
রুবি জোরে লতিফার হাত টিপে দিতেই তার হুঁশ হল। সে ভুলেই গেছিল যে আজ মেজোবউ তার খোকার নামে পাড়ার খোকাদের খাওয়ালে! তার এই অমার্জনীয় ভুলের জন্য সে নিজেকেই ধিক্কার দিতে লাগল মনে মনে। না জানি মেজোবউয়ের শোকার্ত মাতৃহৃদয়ে কত ব্যথাই সে দিয়েছে। তাড়াতাড়ি এদিক থেকে মন ফেরাবার জন্য সে বোকার মতো বলে উঠল, “আজ দাদাভাইয়ের চিঠি পেলাম কি-না ভাই, তাই মনটা কেমন যেন হয়ে গেছে! তাই হুঁশ ছিল না।”
মেজোবউ শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল, “ওঁর খুব অসুখ বুঝি?”
লতিফা অবাক হয়ে বলে উঠল, “হাঁ, তা তুমি কী করে জানলে?”
মেজোবউ হেসে বলে উঠল “ভয় নেই, তিনি আমায় চিঠি দিয়ে জানাননি, এমনি কেন যেন মনে হল।”
রুবির চোখ নিমেষের তরে যেন জ্বলে উঠল। সে লতিফার কাছে শুনেছিল, মেজোবউয়ের নাকি ওদিক দিয়ে একটা গোপন দুর্বলতা আছে। কিন্তু সে শিক্ষিতা মেয়ে! কাজেই তার জ্বলে-ওঠা চোখকে এক নিমিষে নিবিয়ে ফেলতে দেরি হল না। তার ওপর শোকার্ত মাতৃহৃদয়কে এদিক দিয়ে আঘাত করবার মতো নির্মমতাও তার ছিল না।
রুবি কিছু বলবার আগেই মেজোবউ বলে উঠল, “আমি ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সকাল-সন্ধ্যে একটু করে পড়াব মনে করেছি তা তুমি তো ভাই ম্যাজিস্টর-এর মেয়ে, তোমার বাবাকে বলে এই পাড়াতেই একটা ছোটো ঘর তুলে দিতে বলো না। অবশ্য ঘর না পেলে আপাতত আমাকে আমাদের উঠানের সামনে বাগানটাতেই পাঠশালা বসাতে হবে। কিন্তু বর্ষা এলে তখন কী করা যাবে?”
রুবির মনের ঝাঁঝটুকু কেটে গেল, এই হতভাগিনির এই সান্ত্বনা খোঁজার ছল দেখে। তার বুঝতে বাকি রইল না যে, ও সকল ছেলেকে ভালোবেসে নিজের ছেলের শোক ভুলতে চায়। সে খুশি হয়ে বলল, “নিশ্চয়ই বলব আব্বাকে। আর তিনি যদি কিছু না-ই করেন, আমি তোমার পাঠশালার ঘর তুলে দেব। শুধু ঘর তোলা নয়, নিজে এসে সাহায্যও করে যাব হয়তো!”
মেজোবউ বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলে না। কিন্তু তার চোখ জলে ভরে এল। সে একটু চুপ করে থেকে দুই হাত তুলে ললাটে ঠেকালে। সে-নমস্কার তার রুবিকে, না কাকে উদ্দেশ করে তা বোঝা গেল না!
লতিফা বিস্ময়-বিমূঢ়ের মতো এতক্ষণ বসেই ছিল। ও যেন এর কিছুই বুঝতে পারছিল না। ওর মন ছিল ওর ঘর-ছাড়া দাদুটির চিন্তায় – তার জন্য বেদনায় ভরপুর। মেজোবউ এসে পড়ার পর থেকে যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল রুবির সঙ্গে তা এমন হঠাৎ চাপা পড়ল দেখে সে একটু ছটফট করতে লাগল – অবশ্য মনে মনে। তার ওপর, ছেলে মরার শোক ও জানে না, কিন্তু না জেনেই ওর ভীতু মন ও শোকের কথা ভাবতেও যেন মূর্ছিত হয়ে পড়ে। ও শোকের যেন কল্পনাও করা যায় না। সে আর থাকতে না পেরে যেন এই শোকাবহ প্রসঙ্গটাকে চাপা দেওয়ার জন্যই বলে উঠল, “আচ্ছা, মেজোবউ! তুমি একটা বুদ্ধি বাতলে দিতে পার? অবশ্য তোমার কাছে পরামর্শ চাওয়ার সময় এ নয়। তবু মনে হয়, তুমি যেন এর একটা মীমাংসা করতে পারবে।”
মেজোবউ নীরবে জিঞ্জাসু দৃষ্টি তুলে লতিফার দিকে চাইল।
লতিফা বলে যেতে লাগল, “আজ সকালে দাদাভাই-এর একখানা চিঠি পেয়েছি রেঙ্গুন জেল থেকে। সেই নিয়েই রুবির সঙ্গে আলোচনা চলছিল। যাক, চিঠিখানা তুমি দেখোই না, তাহলে সব বুঝতে পারবে।”
মেজোবউ চিঠি নিয়ে পড়তে লাগল—।
রেঙ্গুন সেন্ট্রাল জেল
চিরআয়ুষ্মতীসু!
স্নেহের বুঁচি। পাঁচ-ছ মাস পরে তোদের চিঠি দিচ্ছি। সব কথা লিখতে পারব না – লিখবার অধিকার নেই! লিখলেও উপরতলার তাকে এমন করে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন যে, স্যার জগদীশ বসুও কোনো বৈজ্ঞানিক উপায়ে তার উদ্ধারসাধন করতে পারবেন না। তা ছাড়া আমার স্বভাব তো জানিস, আমি বলে যেতে পারি অনর্গল, কিন্তু লিখতে হয় অর্গলবদ্ধ হয়ে। তাতে করে মন আর হাত দু-ই ওঠে হাঁপিয়ে। অবশ্য হাঁপানি আমার এখনও আরম্ভ হয়নি – যদিও বুকে টিউবারকিউলোসিসের জার্ম্ কিছুদিন থেকে তার নীড় রচনা করেছে। সে-খবর অনেক আগেই খবর-কাগজের মারফতে হয়তো প্রচার হয়ে গেছে এবং তা তোরও শুনতে বাকি নেই।
তুই তো শুধু আমার বোনাই নস, তাই বন্ধু। তাই আজ তোকে এমন অনেক কথা বলব, যা তোর কাছেও কোনোদিন বলিনি।
তুই তো জানিস, আমার বুকে পোকার খাবার মতো কোনো খাদ্য ছিল না। কিন্তু ওটা যে সংক্রামক, তাও আমার অজানা ছিল না। একদিন পোকা-খাওয়া বুকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়ে গেল। শুনলাম, সে-পোকা নাকি আমারই কাঁটার বেড়া থেকে উড়ে গিয়ে সেখানে বাসা বেঁধেছে।
বড়ো দুঃখ হল। কিন্তু আমার কোনো হাত ছিল, না! থাকলেও সে-হাত বন্ধক রেখেছিলাম পুলিশের হাত-কড়ার কাছে, কাজেই ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকতে হল।
কিন্তু প্রভুভক্ত পোকা আমায় ভুলতে পারলে না। এত সি. আই. ডি., এত পুলিশ প্রহরীর নজর এড়িয়ে – সমুদ্দুর ডিঙিয়ে পোকা আমার বুকে ফিরে এল। অন্যের বুক কতটা খেয়ে এসেছে, তা তার হৃষ্টপুষ্ট চেহারা এবং সতেজ দংশন থেকেই বুঝতে পারলাম।
অবশ্য আমার আর কোনো পোকাকেই ভয় নেই। বিলিতি পোকা, দিশি পোকা, বুকের পোকা, দুঃখের পোকা – তা সে যে পোকাই হোক। কিন্তু আমার না থাকলেও কর্তাদের আছে। তাঁরা আমায় নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়েছেন। সাপের ছুঁচো গেলা-গোছ – ছাড়তেও পারে না, গিলতেও পারে না।
আজ ঘুম থেকে উঠেই খোশ-খবর শোনো গেল। আমায় নাকি কাল ছেড়ে দেওয়া হবে। অবশ্য ছেড়ে দেওয়া মানে, দম নিতে দেওয়া। মরিস যদি বাবা, তো ঘরে গিয়ে মর, আমাদের দায়ি করে যাসনে – এই মনোভাব আর কী!
এরা সত্যই সিংহের জাত। পশু হয়েও পশুরাজ স্পেসিসের। আধ-মরা রোগ-জীর্ণ শিকার এরা খায় না।
আবার পুরুষ্টু হয়ে উঠলেই ক্যাঁক করে ধরবে!…
আমি ঠিক করেছি, ছাড়া পেলেই ওয়ালটেয়ারে ছুড়ে যাব। আমি চাই – এই বন্ধনের পরে নিঃসীম মুক্তি। মাথায় অনাবৃত আকাশ, চোখের সামনে কূলহারা তটহারা জলধি, মনের সামনে নিরবিচ্ছিন্ন অনন্ত একা – একা আমি!
মাঝে মাঝে মনে হয় –মনে হয় ঠিক না, লোভ হয় – যাওয়ার আগে এই অদ্বিতীয় মনের দ্বিতীয় জনকে দেখে যাই – জেনে যাই! আমার মরুভূমির ঊর্ধ্বে সাদা মেঘের ছায়া নয়-কালো মেঘের ছায়া-ঘন মায়া দেখে যাই।
তোরই চিঠিতে জেনেছি, সে-মেঘ নাকি তোরই দেশে গিয়ে জমেছে। তোর হাতের কাছে যদি খুব খানিকটা উত্তুরে হাওয়া থাকে, দিতে পারিস তাকে দক্ষিণে পাঠিয়ে? তুই হয়তো বলবি এবং শুনে মেঘও হয়তো বিদ্যুৎহাসি হেসে বলবে, হাতের কাছে যার থাকবে সমুদ্দুর, সে চায় দু-ফোঁটা মেঘের জল! সংস্কৃত কবিদের একটা চির-চলিত উপমার কথা মনে পড়ছিল, তা আর লিখলাম না! না লিখলেও বুঝবি বলে।
মানুষ যখন প্রগলভ হয়-অর্থাৎ সোজা কথায় বিকারগ্রস্ত হয়ে বকতে থাকে, তখন তার যে মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে – এ-কথা ডাক্তার না বললেও সকলে বোঝে। আমার বেলায়ই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন?
আমার যাবার বেলায় আমার শেষ কথা বলে গেলাম এইজন্যে যে, বলবার অসর জীবনে হয়তো আর হবে না।
আমি জীবনে কোনো-কিছুতেই নিরাশ হইনি। জীবনের বেলাতেও হতাম না – যদি না বুঝতাম যে, বাঘে ধরেও যাকে উগলে দেয় – তার দুরবস্থা কতদূর গিয়ে পৌঁচেছে! রক্ত মাংসের পরিমাণ তার কত কমে এসেছে! – কিন্তু এ কী ক্ষুধা আমার? এই কি মৃত্যু-ক্ষুধা?
আমি যদি না-ই ফিরি, দুঃখ করিসনে ভাই। আমরা তো ফেরার সম্বল নিয়ে বেরোইনি। তাই ফেরারি আসামি হয়েই কাটিয়ে দিলাম। আমাদেরই পথের পথিক যারা রয়ে গেল – তাদের মাঝেই আমায় দেখতে পাবি। এই কারায়, এই ফাঁসিমঞ্চে আমরা তো আজই এসে দাঁড়াইনি, আমাদের কন্ঠে শত লাঞ্ছনার রক্ত-লেখা হয়তো আজও মুঝে যায়নি। নইলে এমন সুখের নীড়ে আমার মন বসল না কেন? পিঞ্জরের দ্বার ভেঙে মুক্ত লোকের ঊর্ধ্বে উড়ে গান গাওয়ার এ সাধ কেন জাগল? জীবনকে আমরা জীবিতের মতোই ব্যয় করে গেলাম, মৃতের মতো কার্পণ্য করে কাক-শকুনের খাদ্য করিনি! আমার যা সম্ভবনা, তা যেন কোনোদিন তোর অগৌরবের না হয়ে ওঠে।
অন্যলোকে গিয়ে যদি এ-লোকের প্রিয়জনকে মনে রাখবার মতো অবসর থাকে, সেথা গিয়ে অনশন-কারাবন্দী না হই, তাহলে বিশ্বাস করিস – তুই আমার মনে থাকবি।
খোকাদের চুমু দিস! নাজির সাহেবকে ফাইন্যাল গুঁতো! তুই আদর-আশিস নে। রুবি ও মেজোবউ আমার নমস্কার জানাস। ইতি –
তোর দাদু
চিঠি পড়ে মেজোবউ যে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলে, তা মানুষের মুখ নয়। ও যেন ঝরার একটু আগের শিশির-সিক্ত রক্ত-কমল!
লতিফা মুগ্ধনয়নে দেখতে লাগল। রুবির চোখ যেন পুড়ে গেল!
মেজোবউয়ের কিছু বলবার আগেই রুবি লে উঠল, “আমি ঠিক করেছি বুঁচি, আমি ওয়ালটেয়ারে যাব। মা আমায় বলেন উল্কা। উল্কাই যদি হই, তাহলে শূন্যে আর ঘুরতে পারিনি! ধরায় যে মানুষ আমায় নিরন্তর টানছে, মুখ থুবড়ে তার দেশেই পড়বে নিবে। তবু ওই আমার মহান মৃত্যু! – কী বল মেজোবউ? তুমি আমার সঙ্গে যাবে? লুকিয়ে পালাতে হবে কিন্তু। অভিসারিকা সেজে, বুঝেছ?
রুবির চোখ যেন সোনার আংটিতে বসানো রুবির মতোই জ্বলতে লাগল।
মেজোবউ একটুও অপ্রতিভ না হয়ে বলে উঠল, “আমার যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তোমার বহু আগেই সেখানে গিয়ে উঠতাম ভাই রুবি বিবি! দু মাস আগে এ-খবর পেলে কী করতাম জানি না? কিন্তু আজ আর আমাকে নিয়ে আমার কোনো ভয়-ডর নেই। খোকাকে যদি না হারাতাম, এই খোকাদের যদি না পেতাম, তাহলে আমি সব-আগে গিয়ে তাঁকে সেবা করে ধন্য হতাম।”
রুবি মেজোবউয়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে, উঠল, “অর্থাৎ তুমি রুবি হলে এতক্ষণ বেরিয়ে পড়তে।”
মেজোবউ হেসে ফেলে বললে, “হুঁ। তুই।”
রুবি এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বললে, “ভাই মেজোবউ, তুমি একটু আগে আমায় উদ্দেশ করেই বোধ হয় নমস্কার করেছিলে, আমার প্রতি-নমস্কার নাও। তুমিই আমায় পথ দেখালে।”
বলেই লতিফার দিকে চেয়ে বললে, “ভাই বুঁচি, সময় হয়েছে নিকট, এখন বাঁদন ছিঁড়িতে হবে। আমার পথের সন্ধান পেয়েছি। ভাই মেজোবউ, আমি বুঁচির কাছে পাঠিয়ে দেব তোমার খোকাদের পাঠশালা তৈরির খরচা, গ্রহণ কোরো।”
মেজোবউ, লতিফা কিছু বলবার আগেই রুবির কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “সোফার! গাড়ি লে আও!”