মুখোমুখি

মুখোমুখি 

হোটেল সুকর্ণের ক্যান্টিন। মেরিলিনা একটা ডিম পোচ আর দুইটা ব্রেড অর্ডার করে একেবারে কোনার একটা টেবিলে বসেছিল। তখন প্রথম দেখাতে মেরিলিনার মনে হয়েছিল, ভদ্রলোক তার পূর্বপরিচিত। যেন বহু বছর ধরে সে এই ভদ্রলোককে চেনে। আজ হঠাৎ দেখা। দীর্ঘাঙ্গ। তামাটে বর্ণের মসৃণ ত্বক। লম্বাটে মুখ। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। চোখে আয়তাকার রোদ চশমা। ভদ্রলোক যখন বাঁকা ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বললেন, “আপনি কি ২০২ এ উঠেছেন?” তখন কিছুক্ষণের জন্য মেরিলিনা সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। প্রশ্নটা যেন তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে মেরিলিনার যেন কয়েক যুগ সময় লেগে গেল। 

“কেন বলেন তো?” 

“আসলে, আমাকে মাফ করবেন। এভাবে প্রশ্ন করাটা বেয়াদপি জানি। কিন্তু আমি যখনই বহরমপুরে আসি এই হোটেলের ঐ রুমটাতেই উঠি। ওটা আমার লাকি রুম বলতে পারেন।” 

মেরিলিনা আবার ভাষা হারিয়ে ফেলল। তিনটা কথা বলা যায়। ও আচ্ছা বলে এই আলাপচারিতা এইখানেই শেষ করা যায়। কিছু কঠিন কথা বলা যায়। হোটেলে এইভাবে অপরিচিত একজন মেয়েকে কেউ এইভাবে কেন প্রশ্ন করবে? এটা অবশ্যই বেয়াদপি। সে যেই হোক। অথবা প্রশ্ন করা যায়, কেন ২০২ তার জন্য লাকি? 

কৌতূহলের কাছে অ্যাডাম আর ঈভ হার মেনেছিল। মেরিলিনাও হার মানল। 

“কেন? লাকি কেন?” 

“আমার সব থেকে বড় বড় দুটো বিজনেস ডিল সাইন হয়েছিল এই রুমে থেকেই। এই রুম আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আরও বেশি কিছু।” 

আরও কৌতূহলী হয়ে মেরিলিনা মন্ত্রমুগ্ধের মত প্রশ্ন করল, “কি?” 

পুরো ক্যান্টিনটা সকালের রোদে ভেসে যাচ্ছিলো। ভদ্রলোকের মুখে একটা কালো ছায়া নেমে এলো। ভদ্রলোক আস্তে করে একটা চেয়ার টেনে তাতে বসতে বসতে বললেন, “শুনলে আপনার মন খারাপ হবে। দরকার কি? আমি ২০২-এই উঠতে চাইলাম। রিসিপশান থেকে বলল রুমটা বুক হয়ে গিয়েছে।” 

মেরিলিনা মন্ত্রমুগ্ধের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল লোকটার দিকে। মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন। কিসের ব্যবসা করেন ভদ্রলোক? কি হয়েছিল ২০২ নম্বর রুমে? প্রশ্নগুলো মেরিলিনাকে উষ্ণ আলোক সন্ধানী পতঙ্গের মত টানতে লাগল। 

ভদ্রলোক একটা তেল ছাড়া পরোটা আর দুটো ডিম পোচ অর্ডার করে বললেন, “আমার এখন শিপইয়ার্ডের ব্যবসা আছে। কিন্তু আজ থেকে চার বছর আগে আমি ছিলাম ডেস্ট্রাকশান কন্ট্রাক্টর।” 

“মানে পুরাতন বাড়ি ঘর ভাঙতেন এইতো?” 

“হ্যাঁ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটা বুলডোজার আর একটা ক্রেন কিনেছিলাম। প্রথমে তো কন্ট্রাক্ট তেমন পেতাম না। একবার সরকারি দরপত্র ডাকা হয়। আমি আমার স্ত্রীর গয়না বেঁচা টাকা নিয়ে প্রথম এই হোটেলের ২০২ নাম্বার রুমে উঠি। আর সেইবারই প্রথম আমি আমার প্রথম সরকারি কন্ট্রাক্ট পাই। তারপরে আমাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আর তারপরে একটা শিপইয়ার্ডের নিলামে আসি। সেবারও ২০২ নাম্বার রুমেই উঠি। আর নিলামটা জিতে যাই।” 

দুজনেরই নাস্তা চলে এলো। একইভাবে কথাগুলো বলে গেল লোকটা। তারপর পরোটা আর ডিম পোচের প্লেট দুইটা টেনে নিল। মেরিলিনা লক্ষ্য করল, লোকটার ভেতরে আলগা ভদ্রতা দেখানোর স্বভাবটা নেই। যেটা অনেক পুরুষরাই মেয়েদেরকে মুগ্ধ করার জন্য করে থাকে। লোকটা মেরিলিনার খাওয়া শুরু অপেক্ষা না করে নিজেই খুব ছোট ছোট পরোটার টুকরা ছিঁড়ে মুখে দিতে থাকে। 

মেরিলিনা ভদ্রতা ভুলে নিজেই প্রশ্ন করে বসল, “তাহলে এই রুম আপনার কাছ থেকে কি যেন কেড়ে নিয়েছে বলছেন যে।” 

“হ্যাঁ। আমার স্ত্রী। মিতুল। মিতুল জান্নাতি। মিতুলের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমি মিতুলকে সারিয়ে তোলার। সিঙ্গাপুরে যখন নিয়ে গেলাম তখন ওখানকার ডাক্তারেরা বলল, কোন আশা নেই। আমি ভেঙে পড়িনি। ওকে নিয়ে এই হোটেলের ২০২ নাম্বার রুমটাই উঠি। আমার বিশ্বাস ছিল। এই রুমটা মিতুকেও ফিরিয়ে দেবে।” 

ভদ্রলোকের নীরবতা দেখে বোঝা গেল, ২০২ নাম্বার রুমটা মিতুকে ফিরিয়ে দেয়নি। মেরিলিনার বুকের ভেতরে কান্নার বাষ্প জমতে শুরু করল। মনে পড়ে গেল বাবার সেই হঠাৎ অন্তর্ধান। চোখের সামনে ভেসে উঠল মায়ের ঝুলন্ত শরীরটা। মেরিলিনা মনে মনে খুব করে চাচ্ছিল, লোকটা যেন তার কথাগুলো শুনতে চায়। কিন্তু সে যদি কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে? নাহ থাক। কিন্তু কথাগুলো না বলেও মেরিলিনার শান্তি হচ্ছে না। কেন জানি তার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হল। ২০২ নাম্বার রুমে উঠে সে যেন অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছে। কিছু একটা বলে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছা করল মেরিলিনার। নিজের কথাগুলো বললে যদি অপরাধবোধ কমে, যদি ভদ্রলোক বোঝে যে সেও অনেক কিছু হারিয়ে এই রুমে উঠেছে- তাহলে হয়ত ভদ্রলোক ব্যাপারটা বুঝবে। 

অনেক অন্তর্দ্বিধা পার করে মেরিলিনা বলল, “আমি আসলে এদেশে থাকি না ভাইয়া। ইতালিতে থাকি। আমার বাবাকে খুঁজতে এখানে এসেছি। অনেক লম্বা ঘটনা। ওই রুমটা তো আমি ইচ্ছা করে উঠিনি। তাছাড়া আমার ব্যাগটা কাল অটোতে ভুলে ফেলে এসেছি। সেই ব্যাগ এখনও পাওয়া যায়নি। ব্যাগে আমার সব কিছু ছিল। তাই হোটেল থেকে কোথাও যেতেও পারছি না। আমি জানি আপনার খারাপ লাগছে।” 

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল মেরিলিনা। তারপর কিছুক্ষণ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “আপনি ইচ্ছা করলে রুম এক্সচেঞ্জ করতে পারেন।” 

ভদ্রলোক মিষ্টি হেসে বলল, “আরে না না। রুমটা কিছু না। রুমের স্মৃতিটাই সব। কতদিন আছেন আর?” 

মেরিলিনা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, হঠাৎ রিসিপশন থেকে ডাক এলো। মেরিলিনার ফোন এসেছে। নিশ্চয় থানা থেকে। মেরিলিনা তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন ধরল। 

“হ্যালো খাইরুল সাহেব নাকি?” 

“মেরিলিনা। হোটেলের রুম থেকে একদম বের হবেন না। একদম না। আমি আসছি।” 

“কিন্তু আমি তো…” 

মেরিলিনার কথা শেষ না হতেই লাইনটা কেটে গেল। হোটেল থেকে বের হওয়া তার পক্ষে সম্ভবও না। তার হাত একেবারে খালি। টাকা পয়সা যা ছিল ঐ ব্যাগে। খালি হাতে সে কোথায় যাবে? আর খাইরুল অম হুড়োহুড়ি করে কেন কথা বললেন বুঝতে পারল না ও। বেশ কিছুক্ষণ খয়েরি রঙের টেলিফোনটার কাছে দাঁড়িয়ে থাকল। একটু আশা। যদি আবার খাইরুল ফোন দেন।” 

খাইরুল ফোন দিলেন না। মেরিলিনা নিজের নাস্তা শেষ করতে ক্যান্টিনে ফিরে গেল। দেখল, ভদ্রলোক ফোনে কথা বলছেন। মেরিলিনা আসতেই কেটে দিলেন। 

মেরিলিনা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, “সরি। একটা জরুরী ফোন এসেছিল।” 

ইটস ওকে। ভদ্রলোক টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন। তারপর টিস্যুর দলাটা শূন্য প্লেটের ওপরে ফেলে বললেন, “নাম কি আপনার বাবার?” 

“বশির জামান।” 

“হুম। আপনার বাবা জানেন যে আপনি আসছেন?” ভদ্রলোক নির্লিপ্তভাবে বলল। তারপর হাতের ইশারায় বেয়েরাকে ডাকল। 

“না। মানে, আমার বাবা পাঁচ বছর আগে আমাকে না জানিয়ে, মানে আমাকে আর মাকে না জানিয়েই এদেশে চলে আসে।” 

“হুম।” 

“আপনি চেনেন নাকি আমার বাবাকে?”

ভদ্রলোক হো হো করে হেসে বলল, “আমি কিভাবে আপনার বাবাকে চিনব। না না। সরি। আমি এই নামে কাউকে চিনি না। চিনলে আপনার উপকার করতে পারতাম। কিন্তু আমি সত্যিই খুব সরি।” ভদ্রলোক হাসি থামালেন। কিন্তু অনেকক্ষণ হাসিটা তার ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকল। মেরিলিনা মুগ্ধ হয়ে সেই লেগে থাকা হাসির রেশ দেখল। সুন্দর হাসি সে অনেক দেখেছে। কিন্তু হাসির রেশ যে এত সুন্দর হতে পারে সেটা মেরিলিনার জানা ছিল না। 

মেরিলিনার খাওয়া শেষ হতেই দুই কাপ চা এলো। এক কাপ দুধ চা। আরেককাপ লিকার চা। সে যে লিকার চা খায় এই ভদ্রলোক কিভাবে জানলেন? তাছাড়া ভদ্রলোক কখন চায়ের অর্ডার দিলেন সেটাও সে খেয়াল করেনি। নাহ, এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। মেরিলিনা মনে মনে কথা সাজাতে লাগল। কি বলা যায়। 

ঠিক তখনই হোটেলের দরজা খুলে এক লোক ঢুকল। মনে হল সে ওদের টেবিলের দিকেই আসছে। কিন্তু একটু পরে যখন সে একটু দুরে একটা আলাদা টেবিলে বসল, তখন মেরিলিনার ভুল ভাঙল। লোকটাকে দেখে মেরিলিনার ঠিক মনে হল না। খুব অস্থির লাগছিল লোকটাকে। 

একটু পরেই খাইরুল ঢুকলেন। মেরিলিনা তাকে দেখেই হাত নাড়ল। খাইরুল দেখলেন। মেরিলিনা এক ভদ্রলোকের সাথে বসে আছে। তার ভীষণ মেজাজ খারাপ হল। অপরিচিত একটা লোকের সাথে মেরিলিনা কেন বসে থাকবে? বিরক্তিটা চাপা দিলেন খাইরুল। অপেশাদারের মত কিছু করা যাবে না। 

খাইরুল মেরিলিনার টেবিলের কাছাকাছি আসতেই মেরিলিনা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার শার্টে রক্ত কিসের!” 

খাইরুল বললেন, “কিছু না। পরে বলছি।” 

খাইরুল আসতেই একটু দূরে বসা লোকটা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতে লাগল। তার ডান হাতটা আস্তে আস্তে হোলস্টারে রাখা রিভলভারের দিকে যাচ্ছে। ব্যাপারটা মেরিলিনার চোখ এড়ালেও মেরিলিনার সামনে বসে থাকা ভদ্রলোকের চোখ এড়ালো না। তিনি তাড়াতাড়ি হাতের কাছের গ্লাসটা উল্টে রাখতেই লোকটা বসে পড়ল। পুরো ব্যাপারটা মেরিলিনা, খাইরুল কেউই খেয়াল করলেন না। 

একটুর জন্য তিনটা প্ৰাণ বেঁচে গেল। 

মেরিলিনা বলল, “ইনি থানার ওসি। আর ওসি সাহেব, ইনি একজন ব্যবসায়ী। নাম…” 

“আরে বসেন বসেন।” ভদ্রলোক উঠে দাঁড়তে দাঁড়াতে বললেন, “আমাদের এর আগে পরিচয় হয়েছে বলে মনে হয় না।” করমর্দনের হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। খাইরুলের বিরক্তি আরও বেড়ে গেল। মেরিলিনা তার নাম ভুলে গিয়েছে? ওসি সাহেব ছাড়া তার কি আর কোন পরিচয় নেই? খাইরুল অনিচ্ছায় ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের সাথে করমর্দন করলেন। কিন্তু বসলেন না। বললেন, “আজ একটু তাড়া আছে। আরেকদিন কথা হবে।” 

খাইরুল মেরিলিনাকে নিয়ে রিসিপশনে গেলেন। বললেন, “আমার সাথে চলেন।” 

মেরিলিনা বলল, “কোথায় যাব? আমার ব্যাগের খবর কি? পেয়েছেন?” 

খাইরুল নিচু স্বরে বললেন, “আপনার চাবিটা পেয়েছি।”

“সত্যি! কিভাবে? কেমন করে? কখন! আমার ব্যাগ পেয়েছেন?”

“ব্যাগ পাইনি। চাবিটা পাওয়া গিয়েছে। সবকিছু বলছি। আগে চলেন।”

“কেন? কোথায় যাব?” 

এই প্রশ্নের উত্তর খাইরুলও জানেন না। তিনি নিজে থাকেন একটা দুইরুমের ভাড়া বাসায়। অবিবাহিতা একজন মেয়েকে তিনি নিজের কাছে রাখতে পারেন না। তার কোন পরিচিত আত্মীয়স্বজনও নেই। কোথায় নিয়ে রাখবেন মেরিলিনাকে? কোন পরিচয়ে? অতকিছু ভাবার সময় নেই। খাইরুল বললেন, “চলেন। দেখা যাবে। কিন্তু আপনি দয়া করে অপরিচিত কারও সাথে আপাতত কথা বলবেন না। প্লিজ।” 

“কিন্তু কেন?” 

খাইরুল নিজের অজান্তেই মেরিলিনার হাত ধরে ফেলেছিলেন। মেরিলিনা মুহূর্তের জন্য ইতস্ততবোধ করে হাত সরিয়ে নিল। খাইরুল বিব্রতবোধ করলেন। এতটা কর্তৃত্ব ফলানোর তিনি কেউ না। থানার একজন সামান্য ওসি। 

দুজন হোটেল থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় মেরিলিনা ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে একবার দেখে নিল। যদি আর দেখা না হয়। হঠাৎ তার মনে হল, ভদ্রলোকের নামটা জানা হয়নি। 

খাইরুল সাহেবের মাথার ভেতরে তখন মল্লিকের চিন্তা ঘুরঘুর করছে। মল্লিক একটা লোকের কথা বলছিল। লোকটা কে? মল্লিক সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করা যাচ্ছে না। কালো রঙের টয়োটার খোঁজ চলছে। 

ছদ্মবেশী ফিরোজ নিজের মনে মনে বললেন, বশিরের কোন মেয়ে আছে তা তো জানতাম না। এই মেয়েটা মিথ্যা বলছে কিনা সেইটাও বুঝতে পারছি না। 

ফিরোজ যেন নিজেকে নিজেই কথাগুলো বললেন। তারপর নকল ফ্রেঞ্চকাট দাড়িটা খুলতে খুলতে রঞ্জনকে ডাকলেন। ফিরোজ বললেন, “তুমি কি রিভলভার বের করতে যাচ্ছিলে? 

রঞ্জন বলল, “হ্যাঁ স্যার। ভেবেছিলাম লোকটা আপনার কিছু করে ফেলে কিনা।” 

“এরকম আর করবে না। আমি গ্লাস না উল্টালে তো কেলেঙ্কারি করে ফেলতে।” 

রঞ্জন টেবিল ছেড়ে উঠে এসে ফিরোজের টেবিলে বসলেন। রঞ্জন বললেন, “এই মেয়েটাকে ব্যবহার করেই বশিরকে খুঁজে বের করা যাবে স্যার। বশিরকে কোনভাবে জানাতে হবে যে তার মেয়ে তাকে খুঁজছে। যদি বশির এই মেয়ের ডাকে সাড়া দেয়। তাহলে বুঝতে হবে মেয়েটা সত্যি বলছে। আর যদি না দেয়, তাহলে বুঝতে হবে মেয়েটার অন্য কোন স্বার্থ আছে।” 

কী স্বার্থ থাকতে পারে? ফিরোজ শূণ্য চায়ের কাপটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রঞ্জন খারাপ বলেনি। কিন্তু বশির জামানকে জানাবেন কিভাবে যে তার মেয়ে তাকে খুঁজছে? 

পরিকল্পনাটা ফিরোজের পছন্দ হল। 

“স্যার”- মেজর রঞ্জন আবার বললেন, “আরেকটা ঝামেলা হয়ে গিয়েছে। বড় ঝামেলা। আপনার চাবিটা পাওয়া যাচ্ছে না।” 

ফিরোজ নির্লিপ্তভাবে মাথা নাড়লেন। কিছুটা বিরক্ত হলেও বাইরে সেটা প্রকাশ করলেন না। চাবিটা এখন আর কোন বড় বিষয় না। তিনি অত বোকা নন যে একটা অটোওয়ালার কাছ থেকে তাকিয়া মহলের চাবি পাওয়ার পরে বাড়িটা ওভাবেই রেখে আসবেন। পুরো বাড়িটা সিল করা আছে। চাবিটা এখন মোটামুটি অকেজো। তিনি বললেন, “ওসি খাইরুলকে ফলো কর। মেয়েটাকে খুঁজে বের কর আজকের ভেতরে। মেয়েটা এখন আমাদের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। চাবিটা না।” 

এটা রঞ্জন প্রত্যাশা করেননি। তিনি নীরবে মাথা নাড়লেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *