মিস্টার আরেকটু খান এবং এ বি কাকু
চল্লিশের দশকে যখন স্কুলের নিচু ক্লাসে পড়ি তখন থেকেই বাবার সঙ্গে ১ নম্বর চৌরঙ্গির কে সি বিশ্বাস অ্যান্ড কোম্পানিতে যেতাম। বিরাট বন্দুক—রাইফেলের দোকান।
কে সি বিশ্বাস কোম্পানি পরে ইস্ট ইন্ডিয়া আর্মস হয়ে যায়। পারিবারিক অঙ্কটা জানার মতো বড় তখনও আমি হইনি। সেটা সম্ভবত ঘটে পঞ্চাশের দশকে। সেই দোকানের দেখাশোনা করতেন প্রশান্ত বিশ্বাস এবং অনন্ত বিশ্বাস। এই অনন্ত বিশ্বাস, ছোট ভাই—ই, সংক্ষেপে এ বি। সকলেই, তাঁর শ্বশুরবাড়ির সকলে, এমনকী তাঁর নিজের দাদাসুদ্ধু তাঁকে এ বি বলেই ডাকতেন। এই এ বি কাকুই ছিলেন কটকের বিখ্যাত রায়বাহাদুর নরেন্দ্রনাথ শূরের একজন প্রিয় জামাই। ওড়িশার জঙ্গলে আমার যাওয়ার সূত্র ছিলেন তিনিই।
ওড়িয়াতে জামাইবাবুকে বলে জুঁইবাবু। যদিও এ বি কাকু আমার চেয়ে আট—ন বছরের বড়, ওঁর সঙ্গে ওঁরই সমবয়সি ওঁর বড় সম্বন্ধী ফুটুদা (প্রভাতকুমার শূর) এবং তাঁর জঙ্গলের সঙ্গী চাঁদুবাবুর সঙ্গে আমার অসমবয়সি বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে খুবই ভালবাসতেন এবং ভাল শিকারি হিসেবেও স্বীকৃতি দিতেন। নরেনবাবু এবং তাঁর স্ত্রীও খুবই স্নেহ করতেন আমাকে।
প্রতি বছর নিলামে জঙ্গল নেওয়া হলেই কটক থেকে ট্রাঙ্ককল আসত এ বি কাকুর কাছে, কোথাকার জঙ্গল—কেমন জঙ্গল, কবে রাস্তা করা শেষ হবে, ক্যাম্প বানানো শেষ হবে আর কবে আমরা যেতে পারি ইত্যাদি তথ্য ও জ্ঞাতব্য দিয়ে। এ বি কাকু সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বলতেন কালই সময় করে চলে এসো একবার—অনেক কথা আছে। অতএব উত্তেজিত হয়ে চলে যেতাম পরদিনই ডায়েরি পকেটে করে ইস্ট ইন্ডিয়া আর্মস—এর দোকানে, যাওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করতে।
ওঁদের সঙ্গে বাবার কী সম্পর্ক ছিল বলতে পারব না, তবে আমার দৃঢ় ধারণা যত ও যতরকম গুলি ওঁরা আমাদের দিতেন তার একটির জন্যেও টাকা নিতেন না। ভাবখানা এমন, যেন দোকানটি আমাদেরই। আর বন্দুক রাইফেল কি একরকম? এইট বোর ডাকগান থেকে টোয়েন্টি বোর ইংলিশ টলি—লেডিস গান—বাবা বরিশালের সাহেব জজ—এর কাছ থেকে কিনেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর বন্দুক ছিল ওটি, পাখি মারার। সরু সরু মেয়েদের আঙুলের মতো ফিকে গোলাপি ইলি কোম্পানির গুলি আসত বিলেত থেকে। সেই বন্দুক দিয়েই নানা পাখি মেরে বরিশালে আমার শিকারের হাতেখড়ি হয়। তখন আমি ক্লাস ফাইভ—এ পড়ি। রাইফেলও ছিল অনেক। চেকোস্লাভাকিয়ান পয়েন্ট টু—টু থেকে হাতি—মারার ফোর সেভেন্টি ফাইভ ডাবল—ব্যারেল পর্যন্ত। আফ্রিকান হোয়াইট হান্টার জন টেইলর সাহেব (পন্ডোরো) লিখেছিলেন যে ওই বোরের রাইফেল দিয়ে হাতির লেজ—এর গোড়াতে গুলি করলে সেই গুলি সারা শরীর পেরিয়ে গিয়ে হাতির মস্তিষ্কে পৌঁছে হাতিকে ধরাশায়ী করতে পারত। তবে বাবা হাতি শিকারের প্রচণ্ড বিরোধী ছিলেন। বলতেন, হাতি মারার চেয়ে ঘুঘু মারা কঠিন। তবে গুন্ডা হাতির কথা আলাদা—চঞ্চল সরকার যেমন হাতি মারেন।
বাবা এবং বাবার বন্ধুবান্ধবেরাও শিকারে গেলে শিকারটা গৌণ থাকত, মুখ্য হত খাওয়াদাওয়া। সুন্দরবনের অথরিটি, রসিকশ্রেষ্ঠ গোপেন্দ্রকিশোর বাগচি, আমাদের মক্কেল এবং বাবার দাদাস্থানীয়। একবার আমাদের সঙ্গে নামনি আসামের সংকোশ নদীর উপত্যকার যমদুয়ারে শিকারে গিয়ে ফিরে আসার সময়ে আমাকে ফিসফিস করে বলেছিলেন (কোনও দুর্বোধ্য কারণে উনি আমাকে ‘লালাবাবু’ এবং ‘আপনি’ বলতেন), ‘লালাবাবু, এবারে কিছু যাত্রাগান হল—তবে ভারি ভাল জঙ্গল, এখানে একবার শিকারে আসতে হবে, বুঝলেন।’ বাবার টিম—এ প্রশান্তকাকু (এ বি কাকুর দাদা) এবং দুর্গাকাকু ছিলেন কোয়ার্টার মাস্টার। সকাল থেকে উঠে কী ব্রেকফাস্ট হবে, দুপুরে কী দিয়ে কী রান্না হবে এইই ছিল তাঁদের আলোচনার প্রধান বিষয়। আর বাবা ছিলেন যাত্রা দলের অধিকারী। দুপুরের খাওয়া হজম হওয়ার আগেই রাতে কী খাওয়া হবে তা নিয়ে মিটিং বসত। আর খাওয়ার কী পরিমাণ! আজকালকার ডায়েটিসিয়ানরা শুনেই হার্টফেল করবেন।
বাবা মদ খেতেন না এবং মদ খাওয়া একেবারেই পছন্দ করতেন না। তাই নানা বন—বাংলোর বাবুর্চিখানাতে দুর্গাকাকু আর প্রশান্তকাকু ভলান্টিয়ার পাচকের ভূমিকাতে অবতীর্ণ হয়ে খিচুড়ি রাঁধার অছিলাতে বারংবার গিয়ে সেখানে লুকিয়ে—রাখা বোতল থেকে চুমুক দিয়ে ফিরে আসতেন।
একবার বাগচিবাবুর মোটর লঞ্চে করে (ওঁর লঞ্চ বানাবার কারখানা ছিল, ক্লেব্যাক বোট কোং। সুন্দরবনে ওঁর অনেক লঞ্চ তখন নিয়মিত চলত) সুন্দরবনে শিকারে গেছি। আমাদের সঙ্গে কেনেথ জনসনও গেছেন। তখন কেনেথ পশ্চিমবঙ্গের একনম্বর আয়কর কমিশনার। তখন চিফ—কমিশনারের পোস্ট ছিল না—এক নম্বরই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হেড ছিলেন। প্রশান্তকাকু সকালে ও রাতে জনসন সাহেবকে খাওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড পীড়াপীড়ি করতেন আর বলতেন : ‘প্লিজ! আর একটু খান, আর একটু।’ কলকাতায় ফেরার দুদিন পরে ওঁর ঘরে গেছি, উনি বললেন, মাই গুডনেস! ‘দ্যা সিনিয়র বিসওয়াস ইজ মোর ডেঞ্জারাস দ্যান দ্যা সুন্দরবন টাইগার। প্লিজ টেল হিম দ্যাট আই হ্যাভ নেমড হিম ‘মিস্টার আরেকটু খান।’
এ বি কাকুরও নানা বিশেষত্ব ছিল। ছ ফিট লম্বা, গৌরবর্ণ, সুদর্শন মানুষটি সব সময়ে তাঁতের ধুতি পরতেন মোটা পাড়ের। ঊর্ধ্বাঙ্গে ফুল—শার্ট কিন্তু দু—হাতেরই হাত গোটানো থাকত। ওঁদের একটি ক্যামেরার দোকানও ছিল চৌরঙ্গিতেই। সে দোকানের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এক গোরা সৈন্য ওঁকে ‘ব্লাডি ইন্ডিয়ান’ বলাতে তাকে এক ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। ওই দোকানের দৌলতে সেই চল্লিশের দশকেই রোলিফেক্স, রোলিকর্ড, কনটাক্স ইত্যাদি ক্যামেরার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। জার্মান রোলিফ্লেক্স—এর দুরকম লেন্স আসত। ‘জেনার’ আর ‘টেসার’। সেই সময় থেকেই বন্দুক রাইফেলের দিকে বেশি না ঝুঁকে যদি ক্যামেরার দিকে ঝুঁকতাম তবে আজ লাভ হত অনেক বেশি। এরকম অনেকবারই হয়েছে। পালামৌ—এর মুন্ডুর জঙ্গলে একবার মাচাতে বসে আছি, দিনের বেলা, হাঁকোয়ার শেষে হাঁকোয়াওয়ালাদের পায়ে পায়ে লেপার্ড বেরিয়েছে, যেমন বাঘ ও লেপার্ডের অভ্যেস। বড় বড় লাফ মেরে সে এগিয়ে আসছে। আমার ঠিক সামনেই একটি বড় গাছ এবং তার নিচ দিয়ে গেম—ট্রাকটি দু—ভাগ হয়ে ডাইনে—বাঁয়ে দু—দিকে চলে গেছে। আমার সামনে রিভিয়েরা এইট মিমি মুভি ক্যামেরা, ডানদিকে লোডেড ৩৬৬ সিঙ্গল ব্যারেল রাইফেল এবং বাঁদিকে দোনলা বারো বোরের বন্দুক মাচার ওপরে শোয়ানো আছে। কিন্তু সেই মুহূর্তে ক্যামেরাতে হাত না দিয়ে রাইফেলই তুলে নিয়ে গুলি করেছি। লেপার্ড আহত হয়ে বিদ্যুৎ গতিতে পাশের ঝাঁটি জঙ্গলে ভরা টিলাতে দৌড়ে উঠে গেছে। হাঁকোয়া শেষে সেই আহত লেপার্ডকে অনুসরণ করে মারা সে যে কী হ্যাপা এবং বিপজ্জনক হ্যাপা তা বলার নয়। যাঁরা জানেন, তাঁরাই জানেন। আরেকবার হয়েছিল সুন্দরবনে। বাগচিবাবু আগেই বলে রেখেছিলেন যে এখন যে খালে ঢুকছি তাতে একটি বিরাট কুমির দেখা যাবে। সেই কুমির প্রায় প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর মতো বড় ছিল। তাকে বাবা গুলি করেন এবং মিস করেন। কিন্তু আমার হাতে মুভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও ছবি তোলা হয়নি।
যা বলতে চাইছিলাম, সেই প্রথম যৌবন থেকে বন্দুকধারী না হয়ে ক্যামেরাধারী হলে হয়ত অনেকই ভাল হত। কিছুদিন আগে ওয়াইল্ড—লাইফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পৃথিবী বিখ্যাত ওয়াইল্ড—লাইফ ফোটোগ্রাফার ড. নরেশ বেদির সঙ্গে এই আলোচনাই হচ্ছিল। ক্যামেরা দিয়ে ওঁরা, মানে উনি, ওঁর ভাই, ওঁর ছেলে ও বেলিন্ডা রাইট যে সব কবিতা লেখেন, সে সব কবিতা বারবার পড়ে বা দেখেও পুরনো হয় না।
এ বি কাকু তাঁর ছেলেবেলাতে যখন গাড়ি চালাতে শিখেছিলেন, সম্ভবত ত্রিশের দশকের গোড়ায়, তখন শিখেছিলেন খালি পায়ে। তারপর সারাজীবন উনি নগ্নপদ না হয়ে গাড়ি চালাতে পারতেন না। পায়ের পাম্প—শুটি খুলে অ্যাকসিলারেটর এবং ক্লাচে পা রেখে গাড়ি চালাতেন। তাঁর আরেকটি ট্রেড—মার্ক ছিল গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের সিটে—বসা যাত্রীর সঙ্গে সমানে কথা বলে যেতেন। তখন কলকাতা যে কী সুখের শহর ছিল তা আর কী বলব! আজকের দিনে এ বি কাকুর ড্রাইভিং—এর মতো সর্বনাশা ড্রাইভিং—এর কথা ভাবা পর্যন্ত যায় না।
জঙ্গলে গিয়ে এ বি কাকু তাঁর দাদা প্রশান্তকাকু ওরফে ‘মিস্টার আরেকটু খান’—এর ভূমিকাতে অবতীর্ণ হতেন। সঙ্গে থাকতেন বড় সম্বন্ধী ফুটুদা। সকাল থেকে শালা—ভগ্নীপতি মিলে ব্রেকফাস্টে কী মেনু হবে তাই ঠিক করতেন। ব্রেকফাস্ট শেষ হতে না হতে দুপুরবেলাতে কী হবে না—হবে তার আলোচনাতে বসতেন। জঙ্গলে প্রথম রাত বিশ্রাম নেওয়ার পর থেকেই কিছু না কিছু বড়—ছোট জানোয়ার ও পাখ—পাখালি শিকার তো হতই। বসন্তের শেষে গেলে জঙ্গলের ‘পনস’ অর্থাৎ এঁচড় তো থাকতই।
শুয়োর, কোটরা হরিণ বা বার্কি ডিয়ার বা গুরান্টি বা মাউস ডিয়ার বা খরগোশ বা শজারু মারা হলে তা দিয়ে চাঁদুবাবু বা বিমলবাবুর সুপারভিশনে ক্যাম্পফায়ারের মধ্যে ডবা বাঁশের একদিক ফুটো করে তার মধ্যে মাংসর টুকরো এবং মাংস রান্নার মশলার সঙ্গে মিশিয়ে ফুটো—করা মুখটি কাদা দিয়ে বন্ধ করে আগুনে ফেলে দেওয়া হত। মাঝে মাঝে বারবিকিউ—এর মতো নেড়েচেড়ে দিতে হত। তারপর এক সময়ে ফট শব্দ করেই সেই বাঁশ ফেটে গেলে তা আগুন থেকে বের করে ফাটিয়ে প্লেটে সেই কাবাব ঢেলে নুন দিয়ে খেতে হত। নুন আগে দিলে কিন্তু সব পণ্ড। কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া হত সম্ভবত নুন দিলে। জঙ্গলের সেই ‘নলাপোড়ার’ স্বাদ মুখে এখনও লেগে আছে। যদিও নলাপোড়া করা শিখেছিলাম ওড়িশার জঙ্গলেই কিন্তু ভাল বাঁশ পাওয়া গেলে অন্যান্য জঙ্গলেও নলাপোড়া করেছি এবং অন্যদেরও করতে শিখিয়েছি। এখন বহু মানুষে নলাপোড়া খেয়ে থাকেন। শহরের মটন এবং পর্ক দিয়েও নলা—পোড়া হয়। তবে শহরে ওইরকম মোটা বাঁশ পাওয়া যায় না বলেই মোটা বাঁশ যেখানে পাওয়া যায় তেমন জঙ্গলে যেতে হয়।
বিমলবাবু, বিমল ঘোষ ছিলেন ফুটুবাবুদের ম্যানেজার। ছোট্টখাট্টো রোগা পাতলা কালো—কোলো মানুষটি। কিন্তু একজন আশ্চর্য মানুষ। তাঁর কথা পরে বলব আলাদা করে।
এ বি কাকু বা ফুটুদা শিকারে খুব উৎসাহী ছিলেন না কোনওদিনই। তবে আমাদের কখনও নিরুৎসাহ করতেন না। এবং শিকার আমরা করতে পারলে খুশি হতেন। শিকারি বলতে চাঁদুবাবু ও আমি। ওঁরা বলতেন, আমরা তোমাদের ধুয়ো ধরতে আসি। আমি বলতাম, আপনারা ধুয়াধার।
পুরুনাকোটে যে রোগ বাইসনটিকে আমি মেরেছিলাম, তার শিঙের জন্যে বনবিভাগের সঙ্গে মামলা করে সেই শিং আমাকে পাইয়ে দিয়েছিলেন ফুটুদার বাবা নরেনবাবু।
এ বি কাকুর দৌলতে যেমন ওড়িশার অনেক জঙ্গলে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, এ বি কাকুকে ও চাঁদুবাবুকে আমিও কিছু জংলি জায়গাতে নিয়ে গেছি। যেমন পালামৌ, ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, মণিপুরের ইম্ফল, বার্মার (এখন মিয়ানমার) প্রথম গ্রাম তামু। এ অঞ্চলের সেগুন গাছের গুণমান বার্মার পৃথিবী—বিখ্যাত সেগুনের মতোই ছিল। ভারতের শেষ গ্রাম ‘মোরে’, বার্মা সীমান্তে। মণিপুর ছাড়াও নাগাল্যান্ডের কোহিমা, ডিমাপুর এবং আসামের কাজিরাঙ্গা এবং শিলং।
যখন আমরা ইম্ফল থেকে কোহিমাতে যাই গাড়িতে আশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পথ ধরে। তখন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মিস্টার হোক্কেকে সেমা। তিনি কলকাতার ইস্ট ইন্ডিয়া আর্মসের খরিদ্দার ছিলেন। নিয়মিত বন্দুক রাইফেল ও গুলি কিনতেন। অধিকাংশ পাহাড়ি মানুষই শিকার—প্রিয় হন দেখেছি। মুখ্যমন্ত্রীকে এ বি কাকু ফোন করতেই তিনি পরদিন আমাদের সকলকে ব্রেকফাস্টে ডাকলেন তাঁর বাড়িতে। তখন নাগা পাহাড়ে খুবই সন্ত্রাস চলছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি তো নয়, যেন দুর্গ। রাতে আমরা এম এল এ হস্টেলে ছিলাম। পরদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ব্রেকফাস্ট করে ডিমাপুরের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। মুখ্যমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্রেটারিই ফোন করে আমাদের জন্যে ফরেস্ট বাংলো বুক করেছিলেন। ডিমাপুরের সেই বাংলোতে একজন বদরপুরী মুসলমান বাবুর্চি ছিল। বহুদিন আগের কথা, তার নাম ভুলে গেছি। দারুণ বাবুর্চি। যেরকম নানা কন্টিনেন্টাল পদ রান্না করত সে, আর তেমনই সুইট ডিশ। আমরা দিন তিনেক ছিলাম ওই বাংলোতে।