মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি
১
আমি ঔপন্যাসিক। কেবল এইটুকু বললেই সব বলা হয় না। আমি উপন্যাস লিখে টাকা রোজগার করি— অর্থাৎ আমি যদি উপন্যাস না লিখি তাহলে আমার পেটও চলবে না। অর্থাৎ উপন্যাস লেখা হচ্ছে আমার পেশা।
কিন্তু এ পেশা বুঝি আর চলে না। বাড়িতে রোজ এত লোকের ভিড়— মাসিকপত্রের সম্পাদকদের তাগাদা, চেনা-অচেনা লোকের আনাগোনা, বন্ধুবান্ধবদের তাস-দাবার আড্ডা, এইসব সামলাতে সামলাতেই প্রতিদিন কেটে যায়। যখন একলা হওয়ার সময় পাই তখন আসে ঘুমের সময়।
কাজেই কিছুদিনের জন্যে কলকাতা ছাড়তে হল। স্থির করলুম অন্তত একখানা উপন্যাস না-লিখে আর কলকাতায় ফিরব না। বিদেশে নিশ্চয়ই বাসায় এত চেনা-অচেনা লোকের ভিড় হবে না।
সিধে চলে গেলুম ঝাঁঝা জংশনে। একখানি ছোটোখাটো বাংলো ভাড়া নিলুম। সকালে ও বিকেলে বেড়িয়ে বেড়াই, দুপুর ও সন্ধ্যা বেলাটা কেটে যায় উপন্যাস লেখায়।
ভিড়ের ভয়ে বিদেশে পালিয়ে এলেও মানুষের সঙ্গ বিনা মানুষের প্রাণ বাঁচে না। ঝাঁঝায় এসেও তিন-চারজন লোকের সঙ্গে আমার অল্পবিস্তর ঘনিষ্ঠতা হল। একজন হচ্ছেন মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি। তিনি বিধবা, তাঁর স্বামী পেশোয়ারে কাজ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি ঝাঁঝায় এসে বাস করছেন। তাঁর সন্তানাদি কেউ নেই। ধর্মে তিনি খিস্টান।
আমার আর একজন নতুন বন্ধুর নাম অমূল্যবাবু। এ ভদ্রলোকের বয়স হবে বছর পঞ্চাশ। কলকাতার কোনো কলেজে প্রোফেসারি করতেন, এখন অবকাশ নিয়ে এইখানে বসেই লেখাপড়া নিয়ে দিন কাটিয়ে দেন। অমূল্যবাবু পরলোক-তত্ত্ব নিয়ে সারাজীবনই যথেষ্ট আলোচনা করেছেন, মৃত্যুর পরে জীবের কী অবস্থা হয় তাঁর মুখে সর্বদাই সেই কথা শুনতে পাওয়া যায়।
এখানকার রেলের ডাক্তার গোবিন্দবাবুর সঙ্গেও আলাপ হল। তিনি খুব সাদাসিধে ভালোমানুষ লোক এবং সন্ধ্যা হলেই ভূতের ভয়ে কাতর হয়ে পড়েন। সূর্যাস্তের পর তিনি প্রাণান্তেও অমূল্যবাবুর বাড়ির চৌকাঠ মাড়াতে রাজি হন না। কারণ, পাছে তাঁকে কাছে পেয়ে অমূল্যবাবু দু-চারটে পরলোকের কাহিনি শুনিয়ে দেন।
২
সেদিন সন্ধ্যার কিছু আগে আমি অমূল্যবাবুর সঙ্গে বসে বসে গল্প করছিলুম। কথা হচ্ছিল পৃথিবীতে সত্য-সত্যই পিশাচের অস্তিত্ব আছে কিনা?
অমূল্যবাবুর বিশ্বাস, পৃথিবীতে সেকালেও পিশাচ ছিল, একালেও আছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘পিশাচ কাকে বলে?’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘প্রেতাত্মাদের আমাদের মতো দেহ নেই— একথা তুমি জানো। দেহ না থাকলেও দুষ্ট প্রেতাত্মাদের আকঙ্ক্ষা প্রায়ই প্রবল হয়ে থাকে। কিন্তু দেহের অভাবে তারা সে আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে না। তাই অনেক সময় দুষ্ট প্রেতাত্মারা মানুষের অরক্ষিত মৃতদেহের ভিতরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন সেই মরা মানুষ জ্যান্ত হয়ে উঠে জীবিত মানুষদের ধরে রক্তশোষণ করে। এই জীবন্ত মৃতদেহগুলোই পিশাচ নামে খ্যাত।’
অমূল্যবাবু এমন দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলি বললেন যে, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
আমি বললুম, ‘প্রায়ই শুনতে পাই অমুক লোক রক্তস্বল্পতা রোগে মারা গিয়েছে। আপনি কি বলতে চান যে পিশাচরাই তাদের মৃত্যুর কারণ?’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘অনেক সময় হতেও পারে, অনেক সময় না-ও হতে পারে।’
ঠিক এই সময়ই মিসেস কুমুদিনী অমূল্যবাবুর বাইরের ঘরে এসে ঢুকলেন। ঢুকেই তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘কীসের গল্প হচ্ছে?’
আমি বললুম, ‘অমূল্যবাবু আমাকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছেন।’
কুমুদিনী একখানা চেয়ারের ওপর বসে পড়ে বললেন, ‘ও, ভূতের গল্প বুঝি? বেশ, বেশ, ভূতের গল্প শুনে ভয় পেতে আমি ভালোবাসি। অমূল্যবাবু, আমাকে একটা ভয়ানক ভূতের গল্প বলুন না!’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘ভয়ানক ভূত কাকে বলে আমি তা জানি না। তবে আজ আমি পিশাচের গল্প করছিলুম বটে।’
কুমুদিনী খানিকক্ষণ নীরবে অমূল্যবাবুর মুখের পানে তাকিয়ে রইলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘আচ্ছা অমূল্যবাবু, পিশাচের কথা সত্যিই আপনি বিশ্বাস করেন কি?’
অমূল্যবাবু গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘সত্যি বিশ্বাস করি। খালি তাই নয়, আমার ধারণা সম্প্রতি এই ঝাঁঝাতেই বোধ হয় পিশাচের উপদ্রব শুরু হয়েছে।’
আমি সচমকে অমূল্যবাবুর মুখের দিকে মুখ তুলে তাকালুম।
কুমুদিনীরও মুখ ভয়ে ম্লান হয়ে গেল। কিন্তু সে-ভাবটা সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘আপনার এমন গাঁজাখুরি ধারণার কারণ কী শুনি?’
অমূল্যবাবু স্থিরভাবেই বললেন, ‘সম্প্রতি এখানে রক্তস্বল্পতা রোগে মৃত্যুর হার বড়ো বেড়ে উঠেছে। এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।’
কুমুদিনী উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘বেশ তো অমূল্যবাবু, আপনি একটা পিশাচকে বন্দি করবার চেষ্টা করুন না!’
অমূল্যবাবু শুষ্কস্বরে বললেন, ‘হুঁ। সেই চেষ্টাই করব।’
ভূত না মানলেও ভূতের ভয় যে ছাড়ে না, অমূল্যবাবুর ওখান হতে সেদিন আসতে আসতে সে প্রমাণটা ভালো করেই পেলুম। সন্ধ্যার অন্ধকারের ভিতর দিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রত্যেক আনাচে-কানাচে মনে হতে লাগল, যেন সত্য-সত্যই কোনো জীবন্ত মৃতদেহ আমার দিকে লক্ষ স্থির করে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে!
৩
অমূল্যবাবু প্রতিদিন সকালে আমার বাসায় এসে চা পান করতেন।
সেদিন সকালেও বাংলোর বারান্দায় বসে আমরা দুজনে চা পান করছি। এমন সময়ে দেখলুম সামনের পথ দিয়ে ডাক্তার গোবিন্দবাবু কোথায় যাচ্ছেন।
আমি চেঁচিয়ে তাঁকে এক পেয়ালা চা পান করবার জন্যে আহ্বান করলুম।
গোবিন্দবাবু কাছে এসে বললেন, ‘চা পান করতে আমি রাজি আছি, কিন্তু ভায়া, শিগগির! আমার একটুও দেরি করবার সময় নেই!’
আমি বললুম, ‘কেন, আপনার এত তাড়াতাড়ি কীসের?’
গোবিন্দবাবু বললেন, ‘মিসেস কুমুদিনী চৌধুরির মালীর ছেলের ভারি অসুখ! বোধ হয় বাঁচবে না।’
জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কী অসুখ?’
গোবিন্দবাবু বললেন, ‘রক্তস্বল্পতা— অর্থাৎ অ্যানিমিয়া।’
অমূল্যবাবু চা পান করতে করতে হঠাৎ পেয়ালাটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে বললেন, ‘ডাক্তার, ঝাঁঝায় এত অ্যানিমিয়ার বাড়াবাড়ির কারণ কি বলতে পারো?’
গোবিন্দবাবু বললেন, ‘না। কিন্তু এই রোগের এতটা বাড়াবাড়ি দেখে আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেছি!’
অমূল্যবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মিসেস কুমুদিনী চৌধুরির মালীর ছেলেকে আমি জানি। তার নাম গদাধর, সে রোজ আমাকে ফুল দিয়ে যায়। তিনদিন আগেও আমি তাকে দেখেছি, জোয়ান সোমত্ত ছেলে! আর তুমি বলছ ডাক্তার, এরই মধ্যে তার অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে! অ্যানিমিয়া রোগে এত তাড়াতাড়ি কারুর অবস্থা খারাপ হয় না। চলো ডাক্তার, তোমার সঙ্গে আমরাও গিয়ে গদাধরকে একবার দেখে আসি।’
আমার বাংলো থেকে মিসেস চৌধুরির বাংলোয় যেতে চার-পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। মিসেস চৌধুরির বাগানের এক কোণে মালীর ঘর। আমরা সকলে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হলুম।
ঘরের ভিতরে একপাশে বুড়ো মালী মাথায় হাত দিয়ে ম্লানমুখে বসে আছে। গদাধর শুয়ে আছে একখানা চৌকির ওপরে। তার মুখ এমন বিবর্ণ ও রক্তশূন্য যে দেখলেই মনে হয়, মৃত্যুর আর বেশি দেরি নেই।
ডাক্তারবাবু তাকে পরীক্ষা করে চুপি চুপি আমাদের বললেন, ‘আজকের রাত বোধ হয় কাটবে না।’
অমূল্যবাবু গদাধরের পাশে গিয়ে বসলেন। তারপর রোগীর গায়ের কাপড়টা খুলে তীক্ষ্নদৃষ্টিতে কী দেখতে লাগলেন। খানিকক্ষণ পরে গদাধরের গলা ও বুকের মাঝখানে একটা জায়গার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, ‘ডাক্তার, এটা কীসের দাগ?’
গোবিন্দবাবু বললেন, ‘ওটা ক্ষতচিহ্ন বলেই মনে হচ্ছে। যা নোংরা ঘর, ইঁদুর-টিদুর কামড়েছে বোধ হয়!’
অমূল্যবাবু গদাধরের বাপকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার ছেলেকে সেবা করে কে?’
বুড়ো মালী বললে, ‘বাবু, গিন্নিমা (অর্থাৎ মিসেস চৌধুরি) গদাধরকে বড়ো ভালোবাসেন, ঠিক নিজের ছেলের মতন। ওকে দেখাশুনো করেন তিনিই। ওর জন্যে দিনে তাঁর বিশ্রাম নেই রাতে তাঁর ঘুম নেই!’
অমূল্যবাবু উঠে দাঁড়িয়ে দৃঢ়স্বরে বললেন, ‘রোগীর ভালোরকম যত্ন-সেবা হচ্ছে না। গদাধরকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে যাব! ডাক্তার, তোমার রেলের দু-চারজন কুলিকে ডাকো, গদাধরকে তারা এখনি আমার বাড়িতে নিয়ে চলুক। আমার বিশ্বাস একে আমি নিশ্চয় বাঁচাতে পারব।’
অমূল্যবাবুর এই অদ্ভুত বিশ্বাসের কারণ কী আমরা বুঝতে পারলুম না। রোগ হয়েছে, রোগীর দেহে, এ-বাড়ি থেকে ও-বাড়ি নিয়ে গেলে তার কী উপকার হতে পারে? যাক, কথা মতোই কাজ করা হল।
গদাধরকে যখন বাগানের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেইসময় মিসেস কুমুদিনী তাঁর বাংলোর বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাদের দেখে নেমে এসে তিনি বিস্মিত স্বরে বললেন, ‘একী ব্যাপার, গদাধরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘আমার বাড়িতে। এখানে ওর ঠিকমতো সেবা আর চিকিৎসা হচ্ছে না।’
কুমুদিনীর দুই চোখে একটা ক্রোধের ভাব ফুটে উঠেই আবার মিলিয়ে গেল। ধীরে ধীরে তিনি বললেন, ‘বেশ, আপনারা যা ভালো বোঝেন করুন। গদাধর সুস্থ হলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না।’
৪
সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি নামল। গাছপালার আর্তনাদ ও মেঘের গর্জনের সঙ্গে-সঙ্গে পাহাড়ের ওপর থেকে হড়হড় করে বৃষ্টিধারা নেমে আসার শব্দ শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়লুম।
অনেক রাতে আচম্বিতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। অন্ধকারে ধড়মড়িয়ে বিছানার ওপর উঠে বসে মনে হল, জানলার শার্সির ওপরে বাইরে থেকে কে যেন ঠকঠক করে আওয়াজ করছে।
প্রথমটা ভাবলুম আমারই মনের ভুল। বাইরে তখনও সমান তোড়ে বৃষ্টি ঝরছে, বাজ ডাকছে ও ঝড় হই-হই করছে। এমন দুর্যোগে শার্সির ওপরে করাঘাত করতে আসবে কে?
হয়তো ঝোড়ো হাওয়া ঘরের ভিতরে ঢুকতে চায়!
আবার বিছানার ওপরে শুয়ে পড়লুম, কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গে তখনই শার্সির ওপরে আবার শব্দ হল— ঠক ঠক ঠক। ঠক ঠক ঠক। ঠক ঠক ঠক।
সবিস্ময়ে বিছানার ওপর থেকে লাফিয়ে পড়লুম! আর তো কোনোই সন্দেহ নেই! কে এল? এই বন-জঙ্গল-পাহাড়ের দেশে এই ঝড়-বৃষ্টি-অন্ধকারে কে আমার ঘরের ভিতরে ঢুকতে চায়?
অজানা বিদেশে বলে শোবার সময় বালিশের তলায় রোজই একটা ‘টর্চ’ রেখে দিতুম। টপ করে ‘টর্চ’টা তুলে নিয়েই জ্বেলে জানলার ওপরে আলোটা ফেললুম! সেই তীব্র আলোকে দেখলুম, বন্ধ শার্সির ওপরে দুই হাত ও মুখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত মূর্তি! ঝোড়ো হাওয়ায় রাশি রাশি কালো কালো লম্বা চুল এসে তার সারা মুখখানাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে এবং সেই চুলের ফাঁকে ফাঁকে আগুনের মতন দপদপ করে জ্বলছে তার দুটো বিস্ফারিত চক্ষু!
পরমুহূর্তে মুখখানা আলোকরেখার ভিতর থেকে সাঁৎ করে সরে গেল!
এ কী দুঃস্বপ্ন! ভয়ে মুষড়ে আলো নিবিয়ে বিছানার ওপরে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়লুম।
আতঙ্কে সারারাত আর ঘুম হল না। কেবলই মনে হতে লাগল, শার্সির কাচ ভেঙে ওই বুঝি এক অমানুষিক মূর্তি ঘরের ভিতরে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে!
৫
জানলা দিয়ে সকালের আলো ঘরের ভিতরে এসে পড়েছে, কিন্তু তখনও আমি জড়ভরতের মতো বিছানার ওপরে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছি। এমনসময় বাইরে থেকে শুনলুম আমার নাম ধরে ডাকছেন অমূল্যবাবু। আশ্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিলুম।
অমূল্যবাবু ঘরের ভিতরে এলেন।
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ‘এত ভোরে আপনি যে! গদাধরের অসুখ বেড়েছে নাকি?’
অমূল্যবাবু বিছানার ওপর উঠে বসে হাসিমুখে বললেন, ‘অসুখ বেড়েছে কী, এই অল্প সময়েই গদাধর প্রায় সেরে উঠেছে!’
আমি সবিস্ময়ে বললুম, ‘বলেন কী! কী করে সারল?’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘গদাধরের কোনো অসুখ তো হয়নি, সে পড়েছিল পিশাচের পাল্লায়।’
চেষ্টা করেও আমি হাসি থামাতে পারলুম না। কৌতুকভরে বললুম, ‘আপনি কি চারিদিকেই এখন পিশাচের স্বপ্ন দেখছেন?’
অমূল্যবাবু অটলভাবেই বললেন, ‘তোমার যা-ইচ্ছা হয় বলো, আমি কোনোই প্রতিবাদ করব না। গদাধর কেন বেঁচেছে জানো? কাল দিন-রাত তার শিয়রে বসে আমি পাহারা দিয়েছি বলে। কারুকে তার ত্রিসীমানায় আসতে দিইনি! কাল রাতে আবার কেউ যদি তার রক্ত শোষণ করত, তা হলে আজ আর তাকে জীবিত দেখতে পেতে না।’
আমি সবিস্ময়ে বললুম, ‘রক্তশোষণ! অমূল্যবাবু, কী আপনি বলছেন? কে তার রক্তশোষণ করত?’
অমূল্যবাবু কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘তোমার ও-কথার কোনো জবাব আগে আমি দেব না। কাল রাতে আমি স্বচক্ষে কী দেখেছি তোমার কাছে আগে সেই কথাই বলতে চাই। তুমি জানো, আমার বাড়ি দোতলা। গদাধরকে আমি দোতলার ঘরেই শুইয়ে রেখেছিলুম। পাহারা দেওয়ার জন্যে তার পাশে বসে কাল সারারাত আমি কাটিয়ে দিয়েছি। কালকের রাতের ঝড়-বৃষ্টির কথা তুমি টের পেয়েছ বোধ হয়। মাঝরাত্রে ঝড-üবৃষ্টির বেগ অত্যন্ত বেড়ে ওঠে। সেই সময় বই পড়তে পড়তে হঠাৎ আমি মুখ তুলে দেখি— জানলার ঠিক বাইরেই একটা স্ত্রী-মূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে! দোতলার ঘর, মাটি থেকে সেই জানলাটা অন্তত বিশ ফুট উঁচু, সেখানে কোনো স্বাভাবিক মানুষের মূর্তির আবির্ভাব যে সম্ভবপর নয়— একথা তুমি বুঝতেই পারছ! আমি অবাক হয়ে তার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলুম। ঘরের আলো তার মুখের ওপরে গিয়ে পড়েছিল, তাকে দেখেই আমি চিনতে পারলুম। কে সে, কিছু আন্দাজ করতে পারো?’
আমি হতভম্বের মতো ঘাড় নেড়ে জানালুম, ‘না।’
অমূল্যবাবু বললেন, ‘সে মূর্তি হচ্ছে মিসেস কুমুদিনী চৌধুরির!… কুমুদিনী খুব হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমি তাঁকে দেখেই উঠে দাঁড়ালুম। তারপর শার্সি খুলে খড়খড়ির পাল্লা দুটো বন্ধ করে দিলুম সজোরে! আমাকে বাধা দেওয়ার জন্যে মূর্তিটা তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল, কিন্তু বাধা দিতে পারলে না। আমার মনে হল, জানলা বন্ধ করবার সময় তার ডান হাতখানা পাল্লার তলায় পড়ে চেপটে গেল! তারপরেও জানলার ওপরে আরও কয়েক বার করাঘাতের শব্দ শুনতে পেলুম, কিন্তু সেদিকে আমি আর ভ্রুক্ষেপও করলুম না। এখন বলো, আমার কথা পাগলের গল্প বলে মনে হচ্ছে?’
আমি রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠলুম, ‘অমূল্যবাবু, অমূল্যবাবু! আপনি কী বলছেন! মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি—’
অমূল্যবাবু বাধা দিয়ে বললেন, ‘শোনো। টেলিগ্রামে আমি আর এক খবর আনিয়েছি। পেশোয়ারে মিসেস কুমুদিনী চৌধুরির স্বামী মারা যান অ্যানিমিয়া রোগে। আর মিসেস কুমুদিনী চৌধুরিও তাঁর মৃত্যুর পনেরো দিন আগে দেহত্যাগ করেছেন!’
আমার সর্বশরীর কেমনধারা করতে লাগল, টেবিলের একটা কোণ ধরে তাড়াতাড়ি চেয়ারের ওপরে বসে পড়লুম।
অনেকক্ষণ পরে নিজেকে সামলে নিয়ে অমূল্যবাবুর কাছে আমিও কাল রাত্রে যা দেখেছি, সেই ঘটনাটা খুলে বললুম।
অমূল্যবাবু কী বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলেন।
ফিরে দেখলুম, বাংলোর সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় এসে উঠলেন মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি! তাঁকে দেখেই সর্বপ্রথমে আমার চোখ পড়ল তাঁর ডান হাতের দিকে। তাঁর ডান হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা!
কুমুদিনীও আসতে আসতে অমূল্যবাবুকে আমার ঘরে দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাঁর মুখে-চোখে এমন একটা অমানুষিক বিশ্রী ভাব জেগে উঠল যা কোনোদিন কোনো মানুষেরই মুখে আমি লক্ষ করিনি!
তারপরেই দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে তিরের মতন তিনি বারান্দার ওপর থেকে নেমে গেলেন এবং সেইরকম বেগেই সামনের দিকে ছুটে চললেন।
আমি দ্রুতপদে এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলুম, ‘মিসেস চৌধুরি, সাবধান! ট্রেন, ট্রেন—’
কিন্তু আমার মুখের কথা মুখে রইল; আমার বাংলোর সামনে দিয়ে যে রেলপথ চলে গেছে, কুমুদিনী তার ওপরে গিয়ে দাঁড়াতে-না-দাঁড়াতেই, একখানা ইঞ্জিন হুড়মুড় করে একেবারে তাঁর দেহের ওপর এসে পড়ল—
ভয়ে আমি দুই চোখ বুজে ফেললুম— সঙ্গে-সঙ্গে শুনলুম, তীক্ষ্ন এক মর্মভেদী আর্তনাদ! তারপরেই সব স্তব্ধ।
খানিকক্ষণ আচ্ছন্নের মতন দাঁড়িয়ে রইলুম। আমার চারিদিকে পৃথিবী যেন ঘুরতে লাগল এবং সেই অবস্থাতেই শুনলুম অমূল্যবাবু বললেন, ‘স্থির হও ভাই, স্থির হও! ট্রেনে যে চাপা পড়ল, ও কোনো মানুষের দেহ নয়, ও হচ্ছে কোনো পিশাচের আশ্রিত দেহ!’
৬
ঝাঁঝার গোরস্থানে মিসেস কুমুদিনী চৌধুরির দেহ কবর দেওয়া হল।
তারপর মাস খানেক কেটে গেল। এই ভীষণ ঘটনার ছাপ আমাদেরও মনের ওপর থেকে ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হয়ে আসতে লাগল। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত একটা বিষয় সম্বন্ধে এখনও আমাদের মনের ধাঁধা ঘুচল না।
ঝাঁঝায় রক্তস্বল্পতা রোগের বাড়াবাড়ি এখনও কমল না কেন, তাই নিয়ে প্রায়ই আমাদের মধ্যে অলোচনা হয়।
অমূল্যবাবু পর্যন্ত ধাঁধায় পড়ে গেছেন। তিনিও মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে বলেন, ‘তাই তো হে, রক্তস্বল্পতা রোগটা এখানে সংক্রামক হয়ে দাঁড়াল নাকি? এর কারণ তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’
কিছুদিন পরে একদিন নদীর ধার থেকে ফিরতে আমার রাত হয়ে গেল। সে রাতটা ছিল চমৎকার, পরিপূর্ণ পূর্ণিমা নদীর জলকে যেন মেজে-ঘষে রুপোর মতো চকচকে করে তুলেছে এবং চারিদিক ধবধব করছে প্রায় দিনের বেলার মতো। এই পূর্ণিমার শোভা দেখবার জন্যেই এতক্ষণ আমি নদীর ধারে অপেক্ষা করছিলুম।
বিভোর হয়ে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে বাসার পথে ফিরে আসছি। গভীর স্তব্ধতার ভিতরে ঝিল্লীরব ছাড়া আর কোনো কিছুরই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। পথও একান্ত নির্জন।
প্রাণে হঠাৎ গান গাইবার সাধ হল— এমন রাতের সৃষ্টি তো গান গাইবার জন্যেই!
কিন্তু গান গাইবার উপক্রম করতেই সামনের দিকে তাকিয়ে যা দেখলুম, তাতে আমার বুকের রক্ত যেন হিম হয়ে গেল!
পথের একটা মোড় ফিরে প্রায় আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি!
আমার দেখবার কোনো ভ্রম হয়নি। তেমন উজ্জ্বল পূর্ণিমায় ভ্রম হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।
ভাগ্যে কুমুদিনী অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাই আমাকে তিনি দেখতে পেলেন না। আমি তাড়াতাড়ি একটা গাছের আড়ালে সরে গেলুম।
কুমুদিনী সেই পথ ধরে একদিকে অগ্রসর হলেন। আমি স্তম্ভিত নেত্রে লক্ষ করলুম, তাঁর দেহ যেন মাটির ওপর দিয়ে পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে না— শূন্য দিয়ে ভেসে যাচ্ছে একখানা মেঘের মতন!
পথের বাঁকে সেই অদ্ভুত ও ভীষণ মূর্তি অদৃশ্য হয়ে গেল এবং আমিও ছুটতে লাগলুম রুদ্ধশ্বাসে আতঙ্কে ও বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে!
ছুটতে ছুটতে একেবারে অমূল্যবাবুর বাড়িতে। অমূল্যবাবু বৈঠকখানায় একলা বসে বই পড়ছিলেন। হঠাৎ আমাকে সেইভাবে সেখানে গিয়ে পড়তে দেখে নির্বাক বিস্ময়ে আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে রইলেন।
আমি প্রায় রুদ্ধস্বরে বলে উঠলুম, ‘মিসেস চৌধুরি, মিসেস চৌধুরি! অমূল্যবাবু, এইমাত্র মিসেস চৌধুরির সঙ্গে আমার দেখা হল!’
অমূল্যবাবু সিধে হয়ে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, ‘তার মানে?’
আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললুম, ‘নদীর পথ দিয়ে ফিরে আসছিলুম, মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি প্রায় আমার পাশ দিয়ে এইমাত্র চলে গেলেন!’
‘তুমি ঠিক দেখেছ?’
‘আপনাকে যেমন ঠিক দেখছি, তাঁকেও ঠিক তেমনি দেখেছি।’
‘ওঠো, ওঠো! আর দেরি নয়, এখনি আমার সঙ্গে চলো! এখন কোনো কথা জিজ্ঞাসা করো না!’
অমূল্যবাবু হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে দ্রুতপদে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তারপর বাগানের কোণ থেকে একটা শাবল ও একখানা কোদাল তুলে নিয়ে কোদালখানা আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘এসো!’ আমি যন্ত্রচালিতের মতন তাঁর সঙ্গে চললুম।
আবার সেই নদীর পথ। চারিদিক তেমনি নীরব ও নির্জন। আকাশে তেমনি স্বপ্নময় চাঁদের হাসি। নিবিড় বনজঙ্গল ও পাহড়ের পর পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে যেন ছবিতে আঁকা। কিন্তু সে সব দৃশ্য দেখবার মতো মনের অবস্থা তখন আমার ছিল না। আমার প্রাণ থেকে সমস্ত কবিত্ব তখন কর্পূরের মতন উবে গিয়েছিল। ঘাসের ওপরে বড়ো বড়ো গাছের ছায়া নড়ছে আর আমি চমকে চমকে উঠছি। নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে একটা পেঁচা চেঁচিয়ে উঠল, শিউরে উঠে আমি ভাবলুম, ঝোপে-ঝাপে আড়ালে-আবছায়ায় যে-সব অশরীরী দুষ্ট আত্মা রক্ততৃষায় উন্মুখ হয়ে আছে, ওই নিশাচর পাখিটা যেন তাদেরই সাবধান করে জানিয়ে দিলে— তোমরা প্রস্তুত হও, পৃথিবীর শরীরী প্রাণী আসছে।
ওই তো ঝাঁঝার গোরস্থান! কবরের পর কবর সারি সারি দেখা যাচ্ছে। তাদের ওপরে ইটের বা পাথরের গাঁথুনি। পাশ থেকে নদীর জলের তান ভেসে আসছে অশ্রান্ত তালে। আমার মনে হল, এতক্ষণ ওই সব কবরের পাথরের ওপরে যে-সব ছায়াদেহ বসে বসে রাত্রিযাপন করছিল, আচম্বিতে জীবিত মানুষের আবির্ভাবে অন্তরালে গিয়ে নদীর সঙ্গে স্বর মিলিয়ে তারা ভয়াবহ কানাকানি করছে!
একটা ঝোপের ভিতরে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে অমূল্যবাবু বললেন, ‘এইখানে স্থির হয়ে লুকিয়ে বসে থাকি এসো। সাবধান, কোনো কথা কোয়ো না।’
সারারাত সেইখানে আড়ষ্ট হয়ে দুজনে বসে রইলুম। সেদিনকার সে-রাতটাকে আর পৃথিবীর রাত বলে মনে হল না, ইহলোকে থেকেও আমরা যেন পরলোকের বাসিন্দা হয়েছি!
চাঁদ পশ্চিম আকাশের শেষ প্রান্তে। পূর্বদিকে ধীরে ধীরে যেন মৃত রাত্রির বুকের রক্ত ঝরে পড়তে লাগল। ভোর হচ্ছে।
হঠাৎ অমূল্যবাবু আমরা গা টিপলেন। চমকে ফিরে দেখি, নিবিড় বনের ভিতর থেকে মেঘের মতো গতিতে এক অপার্থিব নারীমূর্তি বাইরে বেরিয়ে আসছে— মিসেস কুমুদিনী চৌধুরি!
অমূল্যবাবু আমার কানে কানে বললেন, ‘আজকের রাতের মতো পিশাচীর রক্তপিপাসা শান্ত হল।’
মিসেস চৌধুরির দেহ ধীরে ধীরে গোরস্থানের ভিতরে গিয়ে ঢুকল। একটা কবরের ওপরে গিয়ে এক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়াল। তারপর আচমকা শূন্যে দুই হাত তুলে এমন প্রচণ্ড তীক্ষ্নস্বরে হি-হি-হি-হি-হি-হি-হি-হি করে অট্টহাস্য করে উঠল যে আমার সমস্ত বুকটা যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল! সে কী পৈশাচিক শীতল হাসি!… তারপর দেখলুম, তার দেহটা ধীরে ধীরে মাটির ভিতরে নেমে যাচ্ছে! খানিক পরেই সে একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গেল!
পূর্ব আকাশে সূর্যের প্রথম ছটা জেগে উঠল। অমূল্যবাবু এক লাফে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, ‘আর অপেক্ষা নয়! শিগগির আমার সঙ্গে এসো!’
আমরা মিসেস চৌধুরির কবরের ওপরে গিয়ে দাঁড়ালুম। অমূল্যবাবু বললেন, ‘আমি শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ি আর তুমি কোদাল দিয়ে মাটি তোলো!’
তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের কারণ কী জিজ্ঞাসা করলুম না, কারণ আমি তখন আচ্ছন্নের মতো ছিলুম। তিনি যা বলেন, আমি তাই করি।
অল্পক্ষণ পরেই কফিনটা দেখা গেল। অমূল্যবাবু বললেন, ‘দেখ, এইবারে আমি কফিনের ডালাটা খুলব, তারপর আমি যা করব তুমি তাতে আমাকে বাধা দিও না। খালি এইটুকু মনে রেখো, কফিনের ভেতরে যে দেহ আছে তা কোনো মানুষের দেহ নয়!’
অমূল্যবাবু দুই হাতে টেনে কফিনের ডালাটা খুলে ফেললেন। আমি স্তম্ভিত চক্ষে দেখলুম কফিনের ভেতর শুয়ে আছে মিসেস চৌধুরির পরিপূর্ণ দেহ! সে দেহ দেখলে মনে হয় না তা কোনো দিন ট্রেনে কাটা পড়েছিল! সেটা একমাস আগে কবর দেওয়া কোনো গলিত মৃতদেহও নয়! তার তাজা মুখ অত্যন্ত প্রফুল্ল, তার ওষ্ঠাধরের চারপাশে তরল রক্তধারা লেগে রয়েছে এবং তার জীবন্ত চোখ দুটো সহাস্য দৃষ্টিতে আমার মুখের পানে তাকিয়ে আছে!
অমূল্যবাবু দুই হাতে শাবলটা হঠাৎ মাথার ওপরে তুলে ধরলেন, তারপর সজোরে ও সবেগে শাবলটা মৃতদেহের বুকের ওপরে বসিয়ে দিলেন!
ইঞ্জিনের বাঁশির আওয়াজের মতো এক তীব্র দীর্ঘ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস পরিপূর্ণ হয়ে গেল! তারপর সব চুপচাপ।