‘মমী’র দেহ বালুর তিমির জাদুর ঘরে লীন-
‘স্ফীঙ্ক্স-দানবীর অরাল ঠোঁটের আলাপ আজি চুপ!
ঝাঁ ঝাঁ মরুর ‘লু’য়ের ফুঁয়ে হচ্চে বিলীন-ক্ষীণ
মিশর দেশের কাফন্ পাহাড়-পিরামিতের স্তুপ!
নিভে গেছে ঈশিশের রই বেদীর থেকে ধূমা,
জুড়িয়ে গেছে লক্লকে সেই রক্তজিভার চুমা!
এদ্দিনেতে ফুরিয়ে গেছে কুমিরপূজার ঘটা,
দুলছে মরুমশান শিরে মহাকালের জটা!
ঘুমন্তদের কানে কানে কয় সে-ঘুমা ঘুমা!
ঘুমিয়ে গেছে বালুর তলে ফ্যারাও, ফ্যারাওছেলে-
তাদের বুকে যাচ্চে আকাশ বর্শা ঠেলে ঠেলে!
হাওয়ার সেতার দেয় ফুঁপিয়ে মেম্ননেরই বুক,
ডুবে গেছে মিশররবি-বিরাট বেলের ভুখ
জিহ্বা দিয়ে জঠর দিয়ে গেছে তোমার জ্বেলে!
পিরাপিডের পাশাপাশি লালচে বালুর কাছে
স্থবির মরণ-ঘুমের ঘোরে মিশর শুয়ে আছে!
সোনার কাঠি নেই কি তাহার? জাগবে না কি আর!
মৃত্যু সে কি শেষের কথা? শেষ কি শবাধার?
সবাই কি গো ঢালাই হবে চিতার কালির ছাঁচে!
নীলার ঘোলা জলের দোলায় লাফায় কালো সাপ।
কুমিরগুলোর খুলির খিলান, করাত দাঁতের খাপ
উর্ধ্বমুখে রৌদ্র পোহায়; ঘুমপাড়ানির ঘুম
হানছে আঘাত-আকাশ বাতাস হচ্ছে যেন গুম্!
ঘুমের থেকে উপচে পড়ে মৃতের মনস্তাপ!
নীলা নীলা—ধুক্ধুকিয়ে মিশরকবর পারে
রইলে জেগে বোবা বুকের বিকল হাহাকারে
লাল আলেয়ার খেয়া ভাসায় রামেসেসের দেশ!
অতীত অভিশাপের নিশা এলিয়ে এলোকেশ
নিভিয়ে দেছে দেউটি তোমার দেউল-কিনারে!
কলসি কোলে নীলনদেতে যেতেছে ঐ নারী
ঐ পথেতে চলতে আছে নিগ্রো সারি সারি
ইয়াঙ্কী ঐ ঐ য়ুরোপী-চীনে-তাতার মুর
তোমার বুকের পাঁজর দ’লে টলতেছে হুড়মুড়্-
ফেনিয়ে তুলে খুন্খারাবি, খেলাপ, খবরদারি!
দিনের আলো ঝিমিয়ে গেল-আকাশে ঐ চাঁদ!
চপল হাওয়ায় কাঁকন নীলনদেরই বাঁধ!
মিশর ছুঁড়ি গাইছে মিঠা শুড়িখানার সুরে
বালুর খাতে, প্রিয়ের সাথে—খেজুরবনে দূরে!
আফ্রিকা এই, এই যে মিশর-জাদুর এ যে ফাঁদ!
ওয়েসিসের ঠান্ডা ছায়ায় চৈতি চাঁদের তলে
মিশরবালার বাঁশির গলা কিসের কথা বলে!
চলছে বালুর চড়াই ভেঙে উটের পরে উট-
এই যে মিশর-আফ্রিকার এই কুহকপাখাপুট!
—কী এক মোহ এই হাওয়াতে—এই দরিয়ার জলে!
শীতল পিরামিডের মাথা-গীজের মুরতি
অঙ্কবিহীন যুগসমাধির মূক মমতা মথি
আবার যেন তাকায় অদূর উদয়গিরির পানে!
মেম্নেনের ঐ কন্ঠ ভরে চারণ-বীনার গানে!
আবার জাগে ঝান্ডাঝালর—জ্যান্ত আলোর জ্যোতি!