3 of 3

মা

মা

ও মা! বেশ আছি মা। যখন যা হচ্ছে—সুখ, দুঃখ, আঘাত, যন্ত্রণা, মানুষের কথার কাটা-ছেঁড়া, ছুটে গিয়ে বলে আসছি আপনাকে। ‘মা এই হয়েছে।’ বলার পর অপার শান্তি। পৃথিবীর জীবনচক্রান্ত! কি করবে আমার? আমার মা আছে। দুঃখ, যন্ত্রণা সহ্য করার অপার শক্তি তাঁর কাছে আছে। আমার মায়ের কাছে আছে। সুখ তো ভোরের শিশির! আর, সুখ কাকে বলে? সঠিক কোন সংজ্ঞা নেই, কারণ সুখে সুখ নেই। সুখ আছে সহ্য করার সাধনায়। সুখ আছে ত্যাগে, সেবায়। মা আমাকে শিখিয়েছেন—”পৃথিবীর মতো সহ্যগুণ চাই।

পৃথিবীর ওপর কত রকমের অত্যাচার হচ্ছে, অবাধে সব সইছে।”

ঠাকুর যে তিনটির ওপর জোর দিয়েছিলেন, মা সেই তিন অস্ত্রকে আরো পালিশ করে আমাদের হাতে দিয়ে গেলেন—সাধনা, প্রেম, ভক্তি।

‘সাধনা’ কাকে বলে মা? জপ, ধ্যান, পূজা?

আরো এক ধাপ এগোও। চলে যাও দক্ষিণেশ্বরের নবতে। দেখে এসো আমার ঘরখানি। কত বড়? ওরই মধ্যে সবরকম ভাঁড়ারের জিনিস—কাঠ, উনুন, জলের জালা, কাঠের সিন্দুক, পোর্টমেন। সেইখানে আমার বাস। আমার বয়স তখন বাইশ কি তেইশ। সঙ্গে আছে ঠাকুরের ভাইঝি—লক্ষ্মী। তোমাদের ‘লক্ষ্মী-দিদি’। তার বয়স তখন চোদ্দ কি পনের। সে ছিল আমার কাজের সহকারী। ঐ সঙ্কীর্ণ আস্তানায় মাঝে মাঝে গোলাপ-মা, যোগীন-মা, মাস্টারমশাইয়ের স্ত্রী, গৌরী-মা, চুনিলালের স্ত্রী—যার যেমন সুবিধে এসে থাকতেন। নবতের সরু বারান্দা দরমা দিয়ে মাথার ওপর পর্যন্ত ঘেরা ছিল। তার মধ্যেই আমাদের বসবাস। ঠাকুর বলতেন, খাঁচার পাখি—শুক-সারি। তাঁর ঘরে কত কীর্তন, কত গান! নবতের দিকের দরজাটা খুলে রাখতে বলতেন। বলতেন : “এখানে কত ভাব-ভক্তি হবে। ওরা সব দেখবে না? শুনবে না। কেমন করে তবে শিখবে!” দরমার চাটাইয়ের মধ্যে আঙুল-প্রমাণ সরু ছেঁদা। সেই ছেঁদা দিয়ে আমরা ঠাকুরের ঘরের ভিতর সব দেখতাম। উত্তরের দরজাটা প্রায় খোলা থাকত। কত গান, কীর্তন, নাচ, সমাধি আর ভক্তদের নিয়ে কী আনন্দ! একদিন সেই ছেঁদা একটু বেড়ে গেছে দেখে ঠাকুর হাসতে হাসতে রামলালকে বললেন : “ওরে রামনেলো, তোর খুড়ীর পরদা যে ফাঁক হয়ে গেল।” সারাদিন কত রকমের রান্না! ঠাকুরের ছেলেদের জলখাবার, ডাল- ভাত, তরকারি, রাত্রিতে ঘন ডাল ও বড় বড় রুটি। ঠাকুরের জন্য ঝোলভাত। আর আমাদের প্রায়ই ভাতে-ভাত যা হয় হতো। এর ওপর কোন ভক্ত বেলায় এসে গাড়ি থেকে নামবার সময় হয়তো হেঁকে বললেন, আজ ছোলার ডাল খাব। সঙ্গে সঙ্গে ছোলার ডাল চেপে গেল।

এই তো সাধনা! ধরে থাক, ধরে থাক। মা ভবতারিণী মন্দিরে। শ্রীশ্রীরাধাকান্ত হাসছেন, ঠোঁটে বাঁশি। দ্বাদশ শিবমন্দিরে ঠাকুরের পূজিত শিব চাঁদনি। পোস্তা। পঞ্চবটী। বেলতলা। শত শত ভক্তের আসা-যাওয়া। স্নান, নামকীর্তন, নাটমন্দিরের পাঠ, শাস্ত্র আলোচনা। কোথায় মা! মা কি পট্টবস্ত্র পরিধান করে জপের মালা হাতে বসে আছেন সেখানে! তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, সেবা, পূজা সেই জীবন্ত বিগ্রহের—শ্রীরামকৃষ্ণের। তিনিই শিব, তিনিই কালী, তিনিই কৃষ্ণ, তিনিই রাম।

কত যত্নে সারদাকে তৈরি করলেন তিনি! আর একজন শ্রীরামকৃষ্ণ! আমি থাকব না, তুমি থাকবে, আরো অনেক দিন থাকবে। জেনেছ নিশ্চয়, তোমার গদাধর বড় নিষ্ঠুর। তোমাকে খাঁচায় ভরে ভিতরের আকাশ খুলে দিয়েছি। সমাধির সময় আমার হাতের ভঙ্গি লক্ষ্য করেছ তুমি, সসীম আর অসীমের যোগসেতু শ্রীরামকৃষ্ণ। অনন্তকে গুটিয়ে আন অন্তরে। তোমাকে আমি কতভাবে যোগ-অভ্যাস করিয়েছি! ‘অভ্যাসযোগ’। রাতে তো আমার ঘুম ছিল না। শেষ রাতে তিনটের সময় ঝাউতলায় শৌচে যাবার সময় তোমার নবতের পাশে এসে প্রভাতের জাগরণী হাঁক মেরে যেতুম : “ও লক্ষ্মী, ওঠরে ওঠ। তোর খুড়ীকে তোলরে। আর কত ঘুমুবি? রাত পোহাতে চলল। গঙ্গাজল মুখে দিয়ে মার নাম কর, ধ্যান-জপ আরম্ভ করে দে।” তুমি কতক্ষণই বা ঘুমোবার সময় পেতে সারদা! দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার বাতাসে শীতে তোমাদের বিছানাটাই বা কি ছিল! একখানা মাদুর, আরেকটা কাঁথা। সেই কাথার তলায় ঘুমের আমেজে জড়সড় হয়ে লক্ষ্মীকে তুমি মাঝে মধ্যে বলতে ফিসফিস করে : “সাড়া দিসনি, সাড়া দিসনি। চুপ করে শুয়ে থাক। ওঁর চোখে ঘুম নেই। এখনো ওঠবার সময় হয়নি। কাক কোকিল ডাকেনি। সাড়া দিসনি।” সাড়া না দিলে কি হতো সারদা?

রামকৃষ্ণের দুষ্টুমি! তোমাদের দরজার নিচে জল ঢেলে দিয়ে পালিয়ে আসতুম। তখন সব ভিজে যাওয়ার ভয়ে তোমাদের হুটোপাটি। ওঠ, ওঠ, ওঠ লক্ষ্মী, জল ঢেলে দিয়েছেন! লক্ষ্মী এসে বলত, এই শীতে আমাদের বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছেন! আমি অমনি গান গাইতুম—”প্রেমের ঢেউ লেগেছে গায়, শান্তিপুর ডুবুডুবু, নদে ভেসে যায়।” তোমার আমার প্রেম, বলো, কে বুঝবে তায়! তুমি যে আমার সখী। একটি বালক, একটি বালিকা। আবার মা ও সন্তান। আবার মা ভবতারিণী ও তাঁর সেবক। আমি জেগেছি, তুমি শুয়ে থাকবে! তা কি কখনো হয়! দেখ, কামটাকে সরাতে পারলে যে-প্রেম আসে সেটা স্বৰ্গীয়। এই বার্তা সাধারণ গৃহীদের কাছে রেখে যাবার জন্যই আমার বিবাহ করা। আমি তোমার জন্য এসেছিলুম, তুমি আমার জন্য। শুধু রামকৃষ্ণে কি হতো! দপ্ করে জ্বলা, দপ্ করে নিভে যাওয়া। কয়লা জ্বালালেই কি শক্তি পাওয়া যায়? আধার আর অগ্নি একত্রিত না হলে গতি আসে না। ইঞ্জিন চলে না।

শিব আর শক্তি। শক্তি ছাড়া শিব শব। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সমস্ত শক্তি তাঁর শক্তিতে সঞ্চিত করে গেলেন। আবার সারদার শক্তিতে প্রস্ফুটিত হলেন গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ। মা যদি অকাতরে সেবা না করতেন, সুরে সুর মিলিয়ে যদি প্রেমসে বাজতে না পারতেন, তাহলে কি হতো? স্পষ্ট বলা যেতে পারে, তিনি একজন বড় সন্ন্যাসী হতেন, কিন্তু ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’ হতেন না। অভিনব এক অবতার! ধর্মের ধারায় দেখা যায় সন্ন্যাসী যোষিৎসঙ্গ বর্জন করবেন। সঙ্গ তো দূরের কথা, চিত্রপট দর্শন করাটাও পাপ। শ্রীরামকৃষ্ণ সন্ন্যাসের এই কঠিন পথ, ব্রহ্মচর্যের এই সুদৃঢ় বিধান সমর্থন করে গেছেন। কাষ্ঠনির্মিত নারীমূর্তিও সংযমের এই বাঁধ ভেঙে দিয়ে সন্ন্যাসধর্মে ভ্রষ্টাচার আনতে পারে।

শ্রীরামকৃষ্ণ যে অবতার! অভূতপূর্ব অবতার! তাঁর কোন কিছুই কোন কিছুর সঙ্গে মেলে না। বাদ্যযন্ত্রের যে-পর্দাতেই হাত দিচ্ছেন প্রকাশিত হচ্ছে সঠিক সুর। সাধনপথের ধারানুযায়ী একের পর এক গুরু আসছেন, সাধন-শেষে তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন শিষ্য হয়ে!

“আমি কিন্তু বিবাহিত!”

তোতাপুরী বললেন : “ভালই তো! তোমার বেদান্ত পরীক্ষা করে নাও। আত্মার কোন লিঙ্গ নেই। কামজয়ীর স্ত্রী-পুরুষ ভেদ থাকে না। তুমি ব্ৰহ্মাসীন, মায়া তোমার কি করবে!” বেশ! সেই পরীক্ষাই হোক। কামারপুকুরে গেলেন ঠাকুর, মা এলেন জয়রামবাটী থেকে। আট মাস ঠাকুরের সঙ্গে একই শয্যায় শয়ন। মানুষ কত রাতই তো দেখে! দেখতে দেখতে জীবনের রাত নেমে আসে। এ-রাত যে মহানিশা! শিব-শক্তির চৈতন্যলীলা। বাইরের অন্ধকারে, গাছের পত্রক্রোড়ে জোনাকির নাকছাবি। আকাশের অন্ধকারের আলোয় কক্ষ ভরাট। একটি শয্যা। মুখোমুখি দুই কালী!

এ বড় আশ্চর্য খেলা! শিব খেলেন, কি কালী খেলেন! কেবা শিব, কেবা কালী! ঠাকুর চলে গেছেন ঊর্ধ্বলোকে। যেখানে মায়ার জগৎ মহামায়ায় মিশে গেছে। যেখানে রূপের শেষ, অরূপের লীলা। হাত-দুটি জোড় করে বসে আছেন সারদা ষোড়শী। দেহ-মন-বুদ্ধি, বিচার পরিবেশ-সংস্কার চূর্ণ-বিচূর্ণ। সেই মহানিশায় জননীর বিকাশ।

উভয়ের পরীক্ষা। পঞ্চভূতের দেহকে নস্যাৎ করতে পেরেছি কি? “তাদৃশ সমাধির এক বিরামক্ষণে তিনি পার্শ্বে শায়িতা শ্রীমায়ের রূপযৌবনসম্পন্ন শ্রীঅঙ্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপপূর্বক বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন—’মন, এরই নাম স্ত্রীশরীর। লোকে একে পরম উপাদেয় ভোগ্যবস্তু বলে জানে এবং ভোগ করবার জন্য সর্বক্ষণ লালায়িত হয়। কিন্তু একে গ্রহণ করলে দেহেই আবদ্ধ থাকতে হয়, সচ্চিদানন্দঘন ঈশ্বরকে লাভ করা যায় না। ভাবের ঘরে চুরি করো না; পেটে একখানা, মুখে একখানা রেখো না। সত্য বল, তুমি একে গ্রহণ করতে চাও, অথবা ঈশ্বরকে চাও? যদি একেই চাও, তো এই তোমার সুমুখে রয়েছে, নাও।’ এইরূপ বিচারপূর্বক ঐ অঙ্গস্পর্শনের জন্য হস্তপ্রসারণ করিবামাত্র মন সহসা কুণ্ঠিত ও উচ্চ সমাধিপথে ধাবিত হইয়া বিলীন হইয়া গেল, সে-রাত্রে আর সাধারণ ভূমিতে নামিয়া আসিল না। পরদিন বহুক্ষণ ঈশ্বরের নাম শ্রবণ করাইয়া তাঁহাকে ব্যবহারিক জগতে নামাইয়া আনা সম্ভব হইল।” [শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ— স্বামী সারদানন্দ]

অগ্নিপরীক্ষা অবশ্যই। তবে ঠাকুর স্বয়ং স্বীকার করলেন, একার চেষ্টায় পরীক্ষা পাশ করা যেত না হয়তো! “ও যদি এত ভাল না হতো, আত্মহারা হয়ে তখন আমাকে আক্রমণ করত তাহলে সংযমের বাঁধ ভেঙে দেহবুদ্ধি আসত কিনা, কে বলতে পারে? বিয়ের পরে মাকে (জগদম্বাকে) ব্যাকুল হয়ে বলেছিলাম, ‘মা, আমার পত্নীর ভেতর থেকে কামভাব এককালে দূর করে দে।” ওর সঙ্গে একত্রে বাস করে এই কালে বুঝেছিলাম, মা সে-কথা সত্যসত্যই শুনেছিলেন। [শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ— স্বামী সারদানন্দ]

শ্রীরামকৃষ্ণ যেন বিশাল এক ঈগল পাখি, পত্নী সারদাকে ঠোঁটে নিয়ে উড়ে চলেছেন জীবনের ঊর্ধ্ব অনুভূতির দিকে। এ এক অদ্ভুত ‘ইলংগেসান’! প্রসারিত হও। পা থাক মাটিতে। বাস্তব ভুললে চলবে না। আমরা ব্রহ্মে থাকলেও আমাদের বসবাস মায়াতে। শ্রীশ্রীঠাকুর কি কারণে অনন্য, কেন স্বামীজী বলছেন, ‘অবতারবরিষ্ঠ’? কারণ, একমাত্র তিনিই বলতে পেরেছেন— ব্রহ্ম সত্য, জগৎও সত্য। জগৎ কখন মিথ্যা—যখন তোমার আমিটা থাকবে না।

শ্রীরামকৃষ্ণ এই ভয়ঙ্কর পৃথিবীতে এসেছিলেন আমাদের এই শেখাতে— অমৃতের পুত্রগণ, কুকুর-বেড়ালের মতো কেঁউ-কেঁউ, মিউমিউ করতে করতে মরে গিয়ে তোমার অমরত্ব ঘোষণা করো না। এ-জায়গাটা অনিত্যের। ঈশ্বর ছাড়া কেউ নিত্য নয়। জগৎ তাঁর ছায়া! একটা জিনিস তোমরা পারতে পার, সেটা হলো ‘স্বর্গকোণ’ রচনা। শিবের সংসার। নিমেষে যিনি ব্রহ্মলীন হয়ে যান, তিনি পত্নী সারদাকে সংসার শেখাচ্ছেন। প্রথমে ধর্ম। তুমি কে? আমি কে? আবিষ্কার! স্বরূপ উদ্ঘাটন। অতঃপর নিষ্ঠা। ধর্ম এলেই নিষ্ঠা আসবে। গৃহবাসী যখন, গৃহস্থালী কর্মও তোমার পূজার অঙ্গ। গৃহই তো মন্দির। সাধকের আবির্ভাবকেন্দ্র, সাধনদুর্গ। সেখানে নারীর ভূমিকাই তো সব। গৃহ যে গৃহিণী- নির্ভর! তাহলে আদর্শ নারীর কর্তব্য? দেব-দ্বিজ-অতিথির সেবা। গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, কনিষ্ঠদের প্রতি স্নেহপরায়ণতা, পরিবারের সেবায় আত্মসমর্পণ। এইবার মন্ত্রটা শুনে নাও—যখন যেমন তখন তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন, যাহাকে যেমন তাহাকে তেমন।

মা সারদা কত কষ্ট করেছিলেন, কত নিগ্রহ, কত যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন— এপ্রসঙ্গ পাশে থাক। ঠাকুর যাঁর দেহ হরণ করে নিয়েছেন তাঁর দেহ, দেহগত মন দুটোই ঘুচে গিয়েছিল। সারদা-শরীরে মা জগদম্বাকে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন। ‘রামকৃষ্ণ দর্শন’কে যদি দর্শন করতে চাও সারদাকে দর্শন কর। পৃথিবীতে একটি শব্দই বিশ্বজনীন—’মা’। সতেরও মা, অসতেরও মা। জীবজগতে সমস্ত প্রাণীর একটিই আর্তস্বর—মা! মা সারদা জানতেন ঠাকুরের পরিকল্পনা। মা বলছেন : “বাবা, জান তো ঠাকুরের জগতের প্রত্যেকের ওপর মাতৃভাব ছিল। সেই মাতৃভাব জগতে বিকাশের জন্য আমাকে এবার রেখে গেছেন। আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয়—সত্য জননী।”

ঠাকুর সূর্য, মা চন্দ্র। একই আকাশে সূর্য আর চন্দ্র দৃশ্যমান থাকে না। অপ্রাকৃত সমন্বয়। সেই অলৌকিক লীলা—’রামকৃষ্ণ-সারদা’। একই আকাশে রবি শশী হাসে।

মায়ের দিকে তাকিয়ে বলি, মা! চারটে লাইন তুমি শোন। বড় সুন্দর!

“The bravest battle that ever was fought;
Shall I tell you where and when?
On the maps of the world you will find it not;
It was fought by the mothers of men.”

[The Bravest Battle-J. Miller]

তুমি আমাদের সেই মা—জননী সারদা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মা

মা

মা

যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই।

হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব সন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে রন নাহি খেয়ে,
শত দোষে দোষী তবু মা তো ত্যজে না।

ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোটো বুক
যখন ভাঙিয়া যেত, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরামহীন
দোলা দিয়ে শুধাতেন, ‘কী হল খোকন?’

আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু অসুখ হলে জাগেন মাতা,
সবকিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমারে নিয়ে
কত আকুলতা যেন জগন্মাতা।

যখন জনম নিনু
কত অসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোনো কিছু,
ওঠা বসা দূরে যাক –
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু মা-র পিছু পিছু!

তখন সে মা আমার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কী ব্যথা হত,
বলো কে এমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়!

তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়ো,
কত না সুন্দর
এ দেহ এ অন্তর
সব মোরা ভাই বোন হেথা যত পড়।

পাঠশালা হতে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
‘কত আজ লেখা হল, পড়া কত পাতা?’

পড়ে লেখা ভালো হলে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে!
বলে, ‘মোর খোকামণি।
হিরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারও!’ শুনে বুক ভরে!

গা-টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে জাদু কী হয়েচে বল!’
কত দেবতার ‘থানে’
পিরে মা মানত মানে –
মাতা ছাড়া নাই কারও চোকে এত জল।

যখন ঘুমায় থাকি
জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কীসে হবে ঘুম!
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানিরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম!’

দিবানিশি ভাবনা
কীসে ক্লেশ পাব না,
কীসে সে মানুষ হব, বড়ো হব কীসে;
বুক ভরে ওঠে মার
ছেলেরই গরবে তাঁর,
সব দুখ সুখ হয় মায়ের আশিসে।

আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা-র;
মার বড়ো কেউ নাই –
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *