মালতী বালা বিউটি পার্লার
মালতী দরজা খুলে দিতেই বয়স্ক ভদ্রমহিলা ঢুকেই আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নিলেন। ব্যাগটা হ্যাঙারে ঝোলাতে ঝোলাতে মালতী বললেন, “দিদি, ত্বকের যত্ন টত্ন নেওয়া কি একেবারে ছেড়ে দিয়েছ নাকি গো? এই বয়সে ত্বকের যত্নটা বেশি নিতে হয়। আর তোমার তো ত্বকের যত্ন নেওয়াটাই কাজ।”
ভদ্রমহিলা মুচকি হাসলেন। নাপিতের চোখ চুলের দিকে আর মুচির চোখ জুতোর দিকে। বললেন, “যত্ন নেওয়ার জন্য তো তুমি আছই। দাও গাউনটা দাও। চেঞ্জ করে আসি।”
মালতী পাশের দেরাজ থেকে কালো গাউনটা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, “নতুন একজন এসেছে দিদি। মেয়েটা কথা বলতে পারে না। কাজ কাম এমনিতে ভালোই করে যা দেখলাম।”
ভদ্রমহিলা নব্য নিয়োগপ্রাপ্তার ব্যাপারে তেমন একটা গুরুত্ব দিলেন বলে মনে হল না। গাউন নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।
বেরিয়ে এসে একজন দীর্ঘাঙ্গী যুবতীকে দেখতে পেলেন। যুবতী আয়নার সামনে রাখা প্রসাধনীর জিনিসপত্রগুলো গোছাচ্ছে। এটাই কি মালতীর নতুন কর্মচারী? ভদ্রমহিলার ভালো লাগল না কেন জানি। মেয়েটা তার দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে না। মুখ লুকাতে চাইছে যেন। তার ওপর মুখটা কেমন যেন পুরুষালী।
ভদ্রমহিলা অনেক দ্বিধা নিয়ে কালো রেক্সিনে মোড়া চেয়ারটাতে বসলেন। একবার ভাবলেন মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার কি হরমোনাল প্রবলেম আছে? পরে মনে পড়ল, মেয়েটা তো কথা বলতে পারে না।
ভদ্রমহিলার মুখে হারবাল ফেসিয়ালের স্ক্রাবার ঘষতে লাগল মেয়েটা।
মেয়েটা আয়নায় তাকিয়ে দেখতে পেল, একটা ছোট ছেলে ঘুমন্ত তরু আন্টিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। তরু আন্টির মুচকি মুচকি হাসিই বলে দিচ্ছে, তরু আন্টি ঘুমায়নি।
পুরুষালী গোছের ‘বোবা’ মেয়েটা স্ক্রাবার মাখা বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছল।
***
সামরিক হাসপাতাল।
স্ক্রিনের ইসিজি বলছে, এখনও বেঁচে আছেন মেজর জেনারেল মহিউদ্দিন হক ফিরোজ। হসপিটালের সাদা বেডটায় তিনি শুয়ে আছেন। বেডের পাশেই অনেকগুলো ফুলের তোড়া। একটা টিফিন ক্যারিয়ার। একটু আগেই শংকরের স্ত্রী ও কন্যা এসেছিল। ওরাই দিয়ে গিয়েছে। ফিরোজ খুব একটা কথা বলতে পারেননি ওদের সাথে।”কেমন আছ? ক্যাম্পাস কেমন চলছে? বৌদির বুটিক শপটা ভালো চলছে তো?”-এইসবের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। ওরা চলে যাওয়ার পরে হঠাৎ মনে পড়ল, আসল খবরটাই ওদেরকে জানানো হয়নি; শংকর বেঁচে আছে। সন্ধ্যায় আবার আসবে ওরা। তখন বলা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তফিসুল বারী এসেছিলেন। MRAU এখন থেকে সরকারি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী। ফিরোজের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভারও তিনি নিয়েছেন।
তিনি ফিরোজের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “তুমি আশফাক চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে পারোনি তাতে আমার কোন দুঃখ নেই। তুমি এইভাবে নিজের জীবন বাজি রেখে তাকে বাঁচাতে গিয়েছ, এটা আমার কাছে সব থেকে বড় সান্ত্বনা।”
ফিরোজ বললেন, “স্যার, জেনারেল কি দেশে ফিরেছেন?”
তফিসুল বারী বললেন, “তুমি শোননি?”
“কোন ব্যাপারে?”
“জেনারেলের লাশ পাওয়া গিয়েছে ইন্ডিয়ার একটা ফাইভ স্টার হোটেলে। মোসাব্বের শুধু বলছে যে তিনি পনেরো জনকে ভিসা দেওয়ার কথা বলেছেন। এরপর সে আর কিছুই জানে না। আমরা একটা ইনভেস্টিগেশান টিম পাঠাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি।”
ফিরোজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ জেনারেল আপনাকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিল।”
তফিসুল বারী যেন শুনেও বিশ্বাস করতে পারলেন না, “কি বলছ!”
“ঠিকই বলছি। আজ বিকালে এজেন্ট বরুণ আপনার অফিসে গিয়ে ফাইল দিয়ে আসবে। ওটাতে সব প্রমাণ আছে। আমার এজেন্টরা এগুলো সংগ্রহ করেছে। জেনারেল আর আশফাক চৌধুরী মিলে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। আপনি খুব দ্রুত ওই পনেরোজনের ব্যাপারে খোঁজ খবর করেন। যত দ্রুত সম্ভব। জানি না এই পনেরোজনের সাথে জেনারেলের কি সম্পর্ক আর কেনই বা জেনারেল খুন হলেন, কিন্তু এই পনেরোজন খুব বড় একটা বিপদ ডেকে আনবে। এরা যদি এতক্ষণে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে তাহলে আরও বড় বিপদ।”
তফিসুল বারী ফিরোজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, “অবশ্যই। অবশ্যই।” গম্ভীর মুখে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি।
বাইরে মিষ্টি রোদ উঠেছে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ। বশিরের মৃত্যু সংবাদ কাল রাতেই শুনেছেন। কে তাকে মারল- সেটা জানা যায়নি। তীলক এই ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে যে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে গোলাগুলি আর সেই গোলাগুলিতেই মৃত্যু। কিন্তু মেজর ইকবালের কি হল? আর ওই যে মেয়েটা যে আশফাক চৌধুরীর দেহের খণ্ডিতাংশ এনে দিয়েছিল? সেই ই বা কোথায়? তার থেকেও বড় কথা, মেরিলিনা কোথায়?
আর কিছু ভাবতে চান না ফিরোজ। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক থেকে। তিনি চোখ বন্ধ করলেন। তখনই একজন গার্ড এসে জানালো, তার সাথে মেজর ইকবাল দেখা করতে চান।
ফিরোজ এক মুহূর্ত ভাবলেন। এখন যে অবস্থায় তিনি আছেন, এর থেকে খুব বেশি কিছু হলে মৃত্যু হবে। আর কি? বললেন, “পাঠিয়ে দাও।”
দরজায় এসে যে দাঁড়ালো, সে শংকর। সানগ্লাস আর ছোট ছোট চুলের ছদ্মবেশেও শংকরকে চিনতে ভুল হল না ফিরোজের।
ফিরোজ অবাক হলেন না। বললেন, “বসেন শংকর।”
শংকর একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। কোন ভনিতা না করে বললেন, “আপনি সত্যিই জানেন সুলেখা আর সুতপা কোথায় আছে?
ফিরোজ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “ওরা একটু আগেই বেরিয়ে গেলেন। আপনি একটু বসেন শংকর। আপনার সাথে কথা আছে।”
শংকর কিছুটা শান্ত হলেন। চেয়ার টেনে বসলেন।”মেজর ইকবালের খবর কী? উনার আইডি কোথায় পেলেন।”
“আমি এই আইডি কার্ড কোথাও পাইনি। ব্ল্যাক মার্কেট থেকে বানিয়েছি। এটা ছাড়া আপনার সাথে দেখা করা হত না। আমি অন্য কোন নাম বললে আপনি দেখা করতেন না।”
“মেজর ইকবাল কি বেঁচে আছে?”
“কেন? প্রতিশোধ নেবেন?”
“না। কৌতূহল বলতে পারেন।”
“কৌতূহল?”
“হ্যাঁ। আমাকে কাল কে গুলি করেছিল জানেন কিছু? দেখেছেন?” শংকর কিছুক্ষণ নীরব থাকল। যেন অনেক হিসাব নিকাশ চলছে তার মাথার ভেতরে। তিনি বললেন, “জানি। অনুমান করছি আর কি।”
“কে?”
“খাইরুল ইসলাম। বহরমপুর থানার সাবেক ওসি।”
ফিরোজের বুকের ভেতরে ঘড় ঘড় করে উঠল। একটা কাশির দমক সামলে নিয়ে কিছুক্ষণ ধীরে ধীরে স্বাস নিলেন ফিরোজ। তারপর বললেন, “আমি তো ওকে খুন করার জন্য ঈশ্বর বাগচীকে বলে এসেছিলাম। ও বেঁচে আছে!”
“হ্যাঁ। ঈশ্বর বাগচী আমাকেই কাজটা দিয়েছিলেন। আমি খাইরুলকে খুন করতে পারিনি। কারণ, খাইরুলের বোনকে আপনি জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন। খাইরুল প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। তাছাড়া আমিও আপনাকে খুঁজছিলাম। আমরা দুইজন মিলেই আপনাকে ……. মানে…….”
“খুন করতে চেয়েছিলেন তাই তো? কিন্তু কেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি শংকর সাহেব। খাইরুলেরও এমন কিছু করিনি যাতে করে ও এমন সিদ্ধান্ত নেবে।”
“প্রতিশোধ নেব বলে। আপনার জন্য আজ আমি আমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন আর খাইরুল সাহেব তার একমাত্র বোনকে হারিয়েছেন। আমাকে যখন বশির বললেন যে আমাকে হত্যার হুকুম দিয়েছিলেন আপনি, আর আমার পরিবারকেও মেরেছেন আপনি-তখন আমার আর মাথা ঠিক ছিল না। আমি যতক্ষণ সুলেখা আর সুতপাকে না পাচ্ছি ততক্ষণ আমি কাউকেই বিশ্বাস করছি না।”
“প্রতিশোধ খুব খারাপ জিনিস শংকর। এটা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আপনার পরিবার খুব ভালোভাবেই আছে। ঠিকানা লিখে নেন। আপনি ইচ্ছা করলে এখানেই অপেক্ষা করতে পারেন। ওরা সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে।”
শংকর অপেক্ষা আর করতে চায় না। পাঁচ বছরের অপেক্ষা যথেষ্ট। আর না। শংকর একটা খাতা কলম নিয়ে ঠিকানা লিখে নিলেন। এখুনি গিয়ে দেখা করবেন। বলবেন, তিনি বেঁচে আছেন। তার ভেতরে সুলেখা আর সুতপার জন্য ভালোবাসাটুকুও বেঁচে আছে।
“আর শোনেন।” ফিরোজ বললেন।
“বলেন।”
“খাইরুলের বোন বেঁচে আছে।”
শংকর বুঝতে পারল না কথাটা কিভাবে নেবেন। কৌতুক? নাকি মিথ্যা আশ্বাস? শংকর বিভ্রান্তি ভরা হাসি হাসল।
“বিশ্বাস করছন না তো? খাইরুলের বোনের নাম জুঁই না? জিনাতুল তাসমিয়া জুঁই?”
“হ্যাঁ।” শংকরের কণ্ঠে বিস্ময়।
“মেয়েটা একটা মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গিয়েছিল। ওর ভাই দৌড়াদৌড়ি করছিল বটে, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল যে ভাইটা খুব বেশি কিছু করতে পারবে না। তাই আমি জুঁইকে একটা প্রস্তাব দেই। ওকে আমি বাঁচাবো। বদলে ওকে ওর অতীত জীবনের সব কিছু ভুলে যেতে হবে। ও রাজি হয়। ও খুব নিরাপদ একটা জায়গায় আছে। যেখানে ওকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।
“তাহলে জেল খানায় ওই মেয়েটা যে পুড়ে গেল?”
“ওটা কোন জীবিত মানুষ ছিল না। খুব কৌশলে জুঁইকে বের করে নিয়ে সেখানে একটা মৃতদেহ রাখা হয়েছিল। এবং সেটাতেই আগুন ধরানো হয়েছিল। আসল পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সেটাই আছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট কেউ দেখেনি।”
“মানে……মানে আমাকে আপনি মিথ্যাভাবে ফাঁসিয়েছেন?”
ফিরোজ খুব ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন। তার পেটে আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার। তিনি বললেন, “অতীত ভুলে যান শংকর সাহেব। আজকে থেকে যান। বৌদি আসবে। বৌদিকে রান্না করে আনতে বলেন। ফোন নাম্বার দিয়েছি না? নেন ফোন নাম্বার নেন। আর একটা কথা, প্রধানমন্ত্রীকে বলব আপনার ব্যাপারে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটা বুঝবেন।”
শংকর নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বললেন, “আর আপনি যে খাইরুলকে খুন করতে চেয়েছিলেন সেটা? সেটার ব্যাখ্যা কি?”
“আমি জানতাম না খাইরুলের বোন ছিল জুঁই। সে আমার প্রকল্পের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, তাই ওকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমি অবশ্য ঈশ্বরকে বলেছিলাম। নিজে কিছু করিনি। ওই যে বললাম না, প্রতিশোধ স্পৃহা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আমাকেও দিয়েছিল। খাইরুল কি বেঁচে আছেন?”
শংকর আমতা আমতা করে বললেন, “জানি না।”
ফিরোজ পেটের ক্ষতস্থান চেপে ধরে বললেন, “ওর সাথে দেখা হলে বলে দিয়েন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ওর বোনের সাথে হয়ত ওর আর দেখা হবে না। কিন্তু ওর বোন যেখানে আছে, যেই সমাজে আছে, এই সমাজের থেকে ভালো আছে।”
শংকর বললেন, “একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন ফিরোজ সাহেব? জুঁইকে কি আপনি ঈশ্বর বাগচীর হাতে তুলে দিয়েছেন?”
ফিরোজ কিছু বললেন না।
শংকর চলে গেলেন। আরেকটা বিদায়হীন প্রস্থান। ফিরোজ একবার ভাবলেন, বেডের পাশের লাল বাটনটা চাপেন। চাপলেই নার্স চলে আসবে।
ফিরোজ লাল বোতাম চাপলেন না। সাদা ব্যান্ডেজটা গোলাপী থেকে লাল হতে শুরু করল।
***
শহরে এখনও এখানে ওখানে আগুন জ্বলছে। বস্তিগুলোর বেশিরভাগ ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পুলিশ ভোরের ভেতরে সব লাশ সরিয়ে ফেললেও, শহরের আবহাওয়া এখনও থমথমে। এত অল্প সময়ের ভেতরে শহরের অবস্থা এত খারাপ আগে কখনও হয়নি। খবরের কাগজে আর সংবাদপত্রে সেটা এসেছে। কেউ লিখেছে দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই প্রায়শ্চিত্তমূলক রাজনৈতিক দাঙ্গা। কেউ লিখেছে শহরে অদ্ভুত মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব। কাল তাকিয়া মহলে কি হয়েছে, সৌভাগ্যজনক ভাবে সেটা আর মিডিয়াতে আসেনি। কখনও হয়ত আর আসবেও না।
শহরের অলিতে গলিতে শীতের মিষ্টি রোদ। হঠাৎ হঠাৎ উত্তুরে বাতাস। দেয়াল থেকে সব প্রায়শ্চিত্তমূলক দেয়াল লিখন মুছে ফেলা হচ্ছে। শংকর বুক ভরে একটা শ্বাস নিলেন। মুক্তির শ্বাস। এখন কোনরকমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলেই সুলেখা আর সুতপাকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। আচ্ছা, আসলে প্রায়শ্চিত্তটা কার হওয়া উচিৎ? যে পাপ করেছে? নাকি যে পাপ করিয়ে নিচ্ছে? পাপের দায়ভার আসলে কার ওপরে ঠিক কতটা বর্তায়।
নাহ। আর কিছু নিয়ে ভাবাভাবি না। এখন শুধু সুলেখা আর সুতপাকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া। ওদেরকে বুকের ভেতরে আঁকড়ে ধরে রাখা। ঠিকানা লেখা কাগজটা আরেকবার পড়লেন শংকর।
ভিড়ের ভেতরে শংকর নিজের ভেতরে জীবন খুঁজে পেলেন। মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন বলেই কি জীবনটাকে এত সুন্দর মনে হচ্ছে? কত মানুষ তার গা ঘেঁষে যাচ্ছে। সবার জীবনের আলাদা আলাদা গল্প আছে। শংকরের খুব ইচ্ছা হল, নিজের জীবনের গল্পটা কাউকে বলতে। অন্যদের জীবনের গল্পটা শুনবেন।
***
হঠাৎ শংকরের মনে হল, কি করছেন তিনি? তিনি একজন ফেরারী আসামী। পুলিশ এখনও তাকে খুঁজছে। এই অবস্থায় সুলেখা আর সুতপার কাছে ফিরে যাওয়া মানে ওদেরকেও বিপদে ফেলা। না। শংকর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করে সুলেখা আর সুতপার কাছে ফিরে যাবেন না। একজন অপরাধী হিসাবে কখনওই তিনি তার স্ত্রী সন্তানের সামনে দাঁড়াবেন না।
শংকর সিদ্ধান্ত বদলালেন। কিছুদুর গিয়ে ভিড়ের ভেতরে হারিয়ে গেলেন তিনি।