মালঞ্চ ০২


নীরজা ডাকল, “রোশনি!”
আয়া এল ঘরে। প্রৌঢ়া, কাঁচা-পাকা চুল, শক্ত হাতে মোটা পিতলের কঙ্কণ, ঘাঘরার উপরে ওড়না। মাংসবিরল দেহের ভঙ্গিতে ও শুষ্ক মুখের ভাবে একটা চিরস্থায়ী কঠিনতা। যেন ওর আদালতে এদের সংসারের প্রতিকূলে ও রায় দিতে বসেছে। মানুষ করেছে নীরজাকে, সমস্ত দরদ তার ‘পরেই। তার কাছাকাছি যারা যায় আসে, এমন-কি, নীরজার স্বামী পর্যন্ত, তাদের সকলেরই সম্বন্ধে ওর একটা সতর্ক বিরুদ্ধতা।
ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলে, “জল এনে দেব খোঁখী?”
“না, বোস।” মেঝের উপর হাঁটু উঁচু করে বসল আয়া।
নীরজার দরকার কথা কওয়া, তাই আয়াকে চাই। আয়া ওর স্বগত উক্তির বাহন।
নীরজা বললে, “আজ ভোরবেলায় দরজা খোলার শব্দ শুনলুম।”
আয়া কিছু বললে না; কিন্তু তার বিরক্ত মুখভাবের অর্থ এই যে, “কবে না শোনা যায়।”
নীরজা অনাবশ্যক প্রশ্ন করল, “সরলাকে নিয়ে বুঝি বাগানে গিয়েছিলেন?”
কথাটা নিশ্চিত জানা, তবু রোজই একই প্রশ্ন। একবার হাত উলটিয়ে মুখ বাঁকিয়ে আয়া চুপ করে বসে
রইল।
নীরজা বাইরের দিকে চেয়ে আপন মনে বলতে লাগল, “আমাকেও ভোরে জাগাতেন, আমিও যেতুম বাগানের কাজে, ঠিক ঐ সময়েই। সে তো বেশিদিনের কথা নয়।”
এই আলোচনায় যোগ দেওয়া কেউ তার কাছে আশা করে না, তবু আয়া থাকতে পারলে না। বললে, “ওঁকে না নিলে বাগান বুঝি যেত শুকিয়ে?”
নীরজা আপন মনে বলে চলল, “নিয়ু মার্কেটে ভোরবেলাকার ফুলের চালান না পাঠিয়ে আমার একদিনও কাটত না। সেইরকম ফুলের চালান আজও গিয়েছিল, গাড়ির শব্দ শুনেছি। আজকাল চালান কে দেখে দেয় রোশনি।”
এই জানা কথার কোনো উত্তর করল না আয়া, ঠোঁট চেপে রইল বসে।
নীরজা আয়াকে বললে, “আর যাই হোক, আমি যতদিন ছিলুম মালীরা ফাঁকি দিতে পারে নি।”
আয়া উঠল গুমরিয়ে, বললে, “সেদিন নেই, এখন লুঠ চলছে দু হাতে।”
“সত্যি নাকি।”
“আমি কি মিথ্যা বলছি। কলকাতার নতুন বাজারে ক’টা ফুলই বা পৌঁছয়। জামাইবাবু বেরিয়ে গেলেই
খিড়কির দরজায় মালীদের ফুলের বাজার বসে যায়।”
“এরা কেউ দেখে না?”
“দেখবার গরজ এত কার।”
“জামাইবাবুকে বলিস নে কেন।”
“আমি বলবার কে। মান বাঁচিয়ে চলতে হবে তো? তুমি বল না কেন। তোমারই তো সব।”
“হোক না, হোক না, বেশ তো। চলুক না এমনই কিছুদিন, তার পরে যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনি পড়বে ধরা। একদিন বোঝবার সময় আসবে, মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। চুপ করে থাক না।”
“কিন্তু তাও বলি খোঁখী, তোমার ওই হলা মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া যায় না।”
হলার কাজে ঔদাসীন্যই যে আয়ার একমাত্র বিরক্তির কারণ তা নয়, ওর উপরে নীরজার স্নেহ অসংগতরূপে বেড়ে উঠছে এই কারণটাই সব চেয়ে গুরুতর।
নীরজা বললে, “মালীকে দোষ দিই নে। নতুন মনিবকে সইতে পারবে কেন। ওদের হল সাতপুরুষে
মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড়া বিদ্যে, হুকুম করতে এলে সে কি মানায়। হলা ছিষ্টিছাড়া আইন মানতে চায় না, আমার কাছে এসে নালিশ করে। আমি বলি কানে আনিস নে কথা, চুপ করে থাক্‌।”
“সেদিন জামাইবাবু ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিল।”
“কেন, কী জন্যে।”
“ও বসে বসে বিড়ি টানছে, আর ওর সামনে বাইরের গোরু এসে গাছ খাচ্ছে। জামাইবাবু বললে, “গোরু তাড়াস নে কেন।” ও মুখের উপর জবাব করলে, “আমি তাড়াব গোরু! গোরুই তো তাড়া করে আমাকে। আমার প্রাণের ভয় নেই।”
শুনে হাসলে নীরজা, বললে, “ওর ঐরকম কথা। তা যাই হোক, ও আমার আপন হাতে তৈরী।”
“জামাইবাবু তোমার খাতিরেই তো ওকে সয়ে যায়, তা গোরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। এতটা আবদার ভালো নয়, তাও বলি।”
“চুপ কর রোশনি। কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি সে কি আমি বুঝি নে। ওর আগুন জ্বলছে বুকে। ঐ যে হলা মাথায় গামছা দিয়ে কোথায় চলেছে। ডাক্‌ তো ওকে।”
আয়ার ডাকে হলধর মালী এল ঘরে। নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “কী রে, আজকাল নতুন ফরমাশ কিছু আছে?”
হলা বললে, “আছে বৈকি। শুনে হাসিও পায়, চোখে জলও আসে।”
“কী রকম, শুনি।”
“ঐ-যে সামনে মল্লিকদের পুরোনো বাড়ি ভাঙা হচ্ছে ঐখান থেকে ইটপাটকেল নিয়ে এসে গাছের তলায় বিছিয়ে দিতে হবে। এই হল ওঁর হুকুম। আমি বললুম, রোদের বেলায় গরম লাগবে গাছের। কান দেয় না আমার কথায়।”
“বাবুকে বলিস নে কেন।”
“বাবুকে বলেছিলেম। বাবু ধমক দিয়ে বলে, চুপ করে থাক্‌। বউদিদি, ছুটি দাও আমাকে, সহ্য হয় না
আমার।”“দেশ থেকে চিঠি এসেছে বড়ো হালের গোরুটা মারা গেছে।” ব’লে মাথা চুলকোতে লাগল।
নীরজা বললে, “না, মারা যায় নি, দিব্যি বেঁচে আছে। নে দুটো টাকা, আর বেশি বকিস নে।” এই বলে টিপাইয়ের উপরকার পিতলের বাক্স থেকে টাকা বের করে দিলে।
“আবার কি।”
“বউয়ের জন্যে একখানা পুরোনো কাপড়। জয়জয়কার হবে তোমার।” এই বলে পানের ছোপে কালো-বর্ণ মুখ প্রসারিত করে হাসলে।
নীরজা বললে, “রোশনি, দে তো ওকে আলনার ঐ কাপড়খানা।”
রোশনি সবলে মাথা নেড়ে বললে, “সে কি কথা, ও যে তোমার ঢাকাই শাড়ি!”
“হোক-না ঢাকাই শাড়ি। আমার কাছে আজ সব শাড়িই সমান। কবেই বা আর পরব।”
রোশনি দৃঢ়মুখ করে বললে, “না, সে হবে না। ওকে তোমার সেই লালপেড়ে কলের কাপড়টা দেব। দেখ্‌ হলা, খোঁখীকে যদি এমনি জ্বালাতন করিস বাবুকে বলে তোকে দূর করে তাড়িয়ে দেব।”
হলা নীরজার পা ধরে কান্নার সুরে বললে, “আমার কপাল ভেঙেছে বউদিদি।”
“কেন রে, কী হয়েছে তোর।”
“আয়াজিকে মাসি বলি আমি। আমার মা নেই, এতদিন জানতেম হতভাগা হলাকে আয়াজি ভালোবাসেন। আজ বউদিদি, তোমার যদি দয়া হল উনি কেন দেন বাগড়া। কোরো দোষ নয় আমারই কপালের দোষ। নইলে তোমার হলাকে পরের হাতে দিয়ে তুমি আজ বিছানায় প’ড়ে!”
“ভয় নেই রে, তোর মাসি তোকে ভালোই বাসে। তুই আসবার আগেই তোর গুণগান করছিল। রোশনি, দে ওকে ঐ কাপড়টা, নইলে ও ধন্না দিয়ে পড়ে থাকবে।”
অত্যন্ত বিরস মুখে আয়া কাপড়টা এনে ফেলে দিলে ওর সামনে। হলা সেটা তুলে নিয়ে গড় হয়ে প্রণাম করলে। তার পরে উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “এই গামছাটা দিয়ে মুড়ে নিই বউদিদি। আমার ময়লা হাত, দাগ লাগবে।” সম্মতির অপেক্ষা না রেখেই আলনা থেকে তোয়ালেটা নিয়েই কাপড় মুড়ে দ্রুতপদে হলা প্রস্থান করলে।
নীরজা আয়াকে জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছা আয়া, তুই ঠিক জানিস বাবু বেরিয়ে গেছেন।”
“নিজের চক্ষে দেখলুম। কী তাড়া। টুপিটা নিতে ভুলে গেলেন।”
“আজ এই প্রথম হল। আমার সকালবেলাকার পাওয়া ফুলে ফাঁকি পড়ল। দিনে দিনে এই ফাঁকি বাড়তে থাকবে। শেষকালে আমি গিয়ে পড়ব আমার সংসারের আঁস্তাকুড়ে, যেখানে নিবে-যাওয়া পোড়া কয়লার জায়গা।”
সরলাকে আসতে দেখে আয়া মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল।
সরলা ঢুকল ঘরে। তার হাতে একটি অর্‌কিড। ফুলটি শুভ্র, পাপড়ির আগায় বেগনির রেখা। যেন ডানা-মেলা মস্ত প্রজাপতি। সরলা ছিপছিপে লম্বা, শামলা রঙ, প্রথমেই লক্ষ্য হয় তার বড়ো বড়ো চোখ, উজ্জ্বল এবং করুণ। মোটা খদ্দরের শাড়ি, চুল অযত্নে বাঁধা, শ্লথবন্ধনে নেমে পড়েছে কাঁধের দিকে। অসজ্জিত দেহ যৌবনের সমাগমকে অনাদৃত করে রেখেছে।
নীরজা তার মুখের দিকে তাকালে না, সরলা ধীরে ধীরে ফুলটি বিছানায় তার সামনে রেখে দিলে।
নীরজা বিরক্তির ভাব গোপন না করেই বললে, “ কে আনতে বলেছে।”
“আদিতদা।”
“নিজে এলেন না যে?”
“নিয়ু মার্কেটের দোকানে তাড়াতাড়ি যেতে হল চা খাওয়া সেরেই।”
“এত তাড়া কিসের।”“কাল রাত্রে আপিসের তালা ভেঙে টাকা-চুরির খবর এসেছে।”
“টানাটানি করে কি পাঁচ মিনিটও সময় দিতে পারতেন না।”
“কাল রাত্রে তোমার ব্যথা বেড়েছিল। ভোরবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলে। দরজার কাছ পর্যন্ত এসে ফিরে গেলেন। আমাকে বলে গেলেন দুপুরের মধ্যে যদি নিজে না আসতে পারেন এই ফুলটি যেন দিই তোমাকে।”
দিনের কাজ আরম্ভের পূর্বেই রোজ আদিত্য বিশেষ বাছাই-করা একটি করে ফুল স্ত্রীর বিছানায় রেখে যেত। নীরজা প্রতিদিন তারই অপেক্ষা করেছে। আজকের দিনের বিশেষ ফুলটি আদিত্য সরলার হাতে দিয়ে গেল। এ কথা তার মনে আসে নি যে, ফুল দেওয়ার প্রদান মূল্য নিজের হাতে দেওয়া। গঙ্গার জল হলেও নলের ভিতর থেকে তার সার্থকতা থাকে না।
নীরজা ফুলটা অবজ্ঞার সঙ্গে ঠেলে দিয়ে বললে, “জান মার্কেটে এ ফুলের দাম কত? পাঠিয়ে দাও সেখানে, মিছে নষ্ট করবার দরকার কী।” বলতে বলতে গলা ভার হয়ে এল।
সরলা বুঝলে ব্যাপারখানা। বুঝলে জবাব দিতে গেলে আক্ষেপের বেগ বাড়বে বৈ কমবে না। চুপ করে রইল দাঁড়িয়ে। একটু পরে খামখা নীরজা প্রশ্ন করলে, “জান এ ফুলের নাম?”
বললেই হত, জানি নে, কিন্তু বোধ করি অভিমানে ঘা লাগল, বললে, “এমারিলিস।”
নীরজা অন্যায় উষমার সঙ্গে ধমক দিলে, “ভারি তো জান তুমি; ওর নাম গ্র্যাণ্ডিফ্লোরা।”
সরলা মৃদুস্বরে বললে, “তা হবে।”
“তা হবে মানে কী। নিশ্চয়ই তাই। বলতে চাও, আমি জানি নে?”
সরলা জানত নীরজা জেনেশুনেই ভুল নামদিয়ে প্রতিবাদ করলে। অন্যকে জ্বালিয়ে নিজের জ্বালা উপশম করবার জন্যে। নীরবে হার মেনে ধীরে ধীরে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিল, নীরজা ফিরে ডাকল, “শুনে যাও। কী করছিলে সমস্ত সকাল, কোথায় ছিলে।”
“অর্‌কিডের ঘরে।”
নীরজা উত্তেজিত হয়ে বললে, “অর্‌কিডের ঘরে তোমার ঘন ঘন যাবার এত কী দরকার।”
“পুরোনো অর্‌কিড চিরে ভাগ করে নতুন অর্‌কিড করবার জন্যে আদিতদা আমাকে বলে গিয়েছিলেন।”
নীরজা বলে উঠল ধমক দেওয়ার সুরে, “আনাড়ির মতো সব নষ্ট করবে তুমি। আমি নিজের হাতে হলা মালীকে তৈরি করে শিখিয়েছি, তাকে হুকুম করলে সে কি পারত না।”
এর উপর জবার চলে না। এর অকপট উত্তরটা ছিল এই যে, নীরজার হাতে হলা মালীর কাজ চলত ভালোই, কিন্তু সরলার হাতে একেবারেই চলে না। এমন-কি, ওকে সে অপমান করে ঔদাসীন্য দেখিয়ে।
মালী এটা বুঝে নিয়েছিল যে, এ আমলে ঠিকমত কাজ না করলেই ও-আমলের মনিব হবেন খুশি। এ যেন কলেজ বয়কট করে পাস না করার দামটাই ডিগ্রি পাওয়ার চেয়ে বড়ো হয়েছে।
সরলা রাগ করতে পারত কিন্তু রাগ করলে না। সে বোঝে বউদিদির বুকের ভিতরটা টনটন করছে। নিঃসন্তান মায়ের সমস্ত হৃদয় জুড়েছে যে বাগান, দশ বছর পরে আজ এত কাছে আছে, তবু এই বাগানের থেকে নির্বাসন। চোখের সামনেই নিষ্ঠুর বিচ্ছেদ। নীরজা বললে, “দাও, বন্ধ করে দাও ঐ জানলা।” সরলা বন্ধ করে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “এইবার কমলালেবুর রস নিয়ে আসি।”
“না, কিছু আনতে হবে না, এখন যেতে পারো।”
সরলা ভয়ে ভয়ে বললে, “মকরধ্বজ খাবার সময় হয়েছে।”
“না, দরকার নেই মকরধ্বজ। তোমার উপর বাগানের আর কোনো কাজের ফরমাশ আছে নাকি।”
“গোলাপের ডাল পুঁততে হবে।”
নীরজা একটু খোঁটা দিয়ে বললে, “তার সময় এই বুঝি! এ বুদ্ধি তাঁকে দিলে কে শুনি।”
সরলা মৃদুস্বরে বললে, “মফস্বল থেকে হঠাৎ অনেকগুলো অর্ডার এসেছে দেখে কোনোমতে আসছে বর্ষার আগেই বেশি করে গাছ বানাতে পণ করেছেন। আমি বারণ করেছিলুম।”
“বারণ করেছিলে বুঝি! আচ্ছা, আচ্ছা, ডেকে দাও হলা মালীকে।”
এল হলা মালী। নীরজা বললে, “বাবু হয়ে উঠেছ? গোলাপের ডাল পুঁততে হাতে খিল ধরে! দিদিমণি তোমার অ্যাসিস্টেন্ট মালী নাকি। বাবু শহর থেকে ফেরবার আগেই যতগুলো পারিস ডাল পুঁতবি, আজ তোদের ছুটি নেই বলে দিচ্ছি। পোড়া ঘাসপাতার সঙ্গে বালি মিশিয়ে জমি তৈরি করে নিস ঝিলের ডান পাড়িতে।” মনে মনে স্থির করলে এইখানে শুয়ে-শুয়েই গোলাপের গাছ সে তৈরি করে তুলবেই। হলা মালীর আর নিষ্কৃতি নেই।
হঠাৎ হলা প্রশ্রয়ের হাসিতে মুখ ভরে বললে, “বউদিদি, এই একটা পিতলের ঘটি। কটকের হরসুন্দর মাইতির তৈরি। এ জিনিসের দরদ তুমিই বুঝবে। তোমার ফুলদানি মানাবে ভালো।”
নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “এর দাম কত।”
জিভ কেটে হলা বললে, “এমন কথা বোলো না। এ ঘটির আবার দাম নেব! গরিব আমি, তা বলে তো ছোটোলোক নই। তোমারই খেয়ে-পরে যে মানুষ।”
ঘটি টিপাইয়ের উপর রেখে অন্য ফুলদানি থেকে ফুল নিয়ে সাজাতে লাগল। অবশেষে যাবার-মুখো হয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বললে, “তোমাকে জানিয়েছি আমার ভাগনীর বিয়ে। বাজুবন্ধর কথা ভুলো না বউদিদি। পিতলের গয়না যদি দিই তোমারই নিন্দে হবে। এতবড়ো ঘরের মালী, তারই ঘরে বিয়ে, দেশসুদ্ধ লোক তাকিয়ে আছে।”
নীরজা বললে, “আচ্ছা তোর ভয় নেই, তুই এখন যা।” হলা চলে গেল। নীরজা হঠাৎ পাশ ফিরে বালিশে মাথা রেখে গুমরে উঠে বলে উঠল, “রোশনি, রোশনি, আমি ছোটো হয়ে গেছি, ওই হলা মালীর মতোই হয়েছে আমার মন।”
আয়া বললে, “ও কী বলছ খোঁখী, ছি ছি!” নীরজা আপনিই বলতে লাগল, “আমার পোড়া কপাল আমাকে বাইরে থেকে নামিয়ে দিয়েছে, আবার ভিতর থেকে নামিয়ে দিলে কেন। আমি কি জানি নে আমাকে হলা আজ কী চোখে দেখছে। আমার কাছে লাগালাগি করে হাসতে হাসতে বকশিশ নিয়ে চলে গেল। ওকে ডেকে দে। খুব করে ওকে ধমকে দেব, ওর শয়তানি ঘোচাতে হবে।”
আয়া যখন হলাকে ডাকবার জন্যে উঠল, নীরজা বললে, “থাক্‌ থাক, আজ থাক্‌।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *