মারাঠার লিওনিডাস
চারশো আশি খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ। পারস্য করেছে গ্রিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা। পারস্যের বিপুল বাহিনীকে বাধা দেবার জন্য স্পার্টার রাজা লিওনিডাস এক হাজার মাত্র সৈন্য নিয়ে এগিয়ে এলেন।
সংকীর্ণ গিরিসঙ্কট থার্মপিলি। সংখ্যায় অসংখ্য হলেও পারস্যের সৈন্যরা একসঙ্গে দল বেঁধে সেই সংকীর্ণ গিরিপথের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলে না। নগণ্য গ্রিক সৈন্য নিয়ে লিওনিডাস অগণ্য শত্রু-সৈন্যকে বাধা দিলেন বহুক্ষণ ধরে। কিন্তু অসম্ভব হল না সম্ভবপর। অবশেষে লিওনিডাসকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে হল সদলবলে।
ইউরোপের লোকেরা এই ঘটনা আজ পর্যন্ত ভোলেনি। লিওনিডাসের জন্যে সারা ইউরোপ গর্ব অনুভব করে। সায়েবরা ইউরোপের বাইরে যেখানে গিয়েছে, সেইখানেই শুনিয়েছে লিওনিডাসের গল্প। তোমরাও নিশ্চয় ইশকুলের কেতাবে এই গল্প পাঠ করেছ। লিওনিডাস যে স্মরণীয় বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই; কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষেও যে লিওনিডাসের সঙ্গে তুলনীয় বীরের অভাব নেই, তোমাদের কয়জনে সে খবর রাখে?
ষোলোশো ষাট খ্রিস্টাব্দ। বিজাপুরের অধিপতি আলি আদিল শা করেছেন শিবাজির বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা। শিবাজি তখনও ছত্রপতি হননি। বিজাপুরের অধিপতি তখনও তাঁকে মনে করেন সামান্য এক বিদ্রোহী জায়গিরদারের মতো; কিন্তু বিজাপুরের সেনাপতি আফজল খাঁকে হত্যা করে তাঁর নাম তখন ছড়িয়ে পড়েছে মহারাষ্ট্রের দিকে দিকে। দলে দলে মারাঠি এসে সমবেত হয়েছে তাঁর পতাকার তলায়। তাদের সাহায্যে বারবার শত্রুদের পরাস্ত করে ইতিমধ্যেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি নাতিবৃহৎ স্বাধীন হিন্দুরাজ্য।
পানহালা হচ্ছে দুর্গের নাম। তার অবস্থান কোলাপুরে। শিবাজি নিজের কতক সৈন্য নিয়ে বাস করছিলেন সেইখানেই।
শিবাজির কয়েকখানি পুরাতন প্রতিকৃতি আছে। কিন্তু সেগুলি যে শিবাজির জীবনকালে তাঁকে চোখে দেখে আঁকা হয়েছিল, এমন কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই। খুব সম্ভব, জীবন্ত শিবাজিকে স্বচক্ষে দেখলেও শিল্পীরা এ ছবিগুলি এঁকেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পরে, নিজেদের স্মৃতির উপরে নির্ভর করে। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে, চিত্রাঙ্কিত মূর্তির সঙ্গে আসল শিবাজির মোটামুটি সাদৃশ্য আছে।
তবে পুরাতন চিঠিপত্রে শিবাজির চেহারার বর্ণনা পাওয়া যায়। শিবাজির বয়স যখন আটত্রিশ কি উনচল্লিশ, তখন Escaliot নামে এক ইংরেজ সুরাট শহরে তাঁকে দেখে লিখেছিলেন : ‘শিবাজির দেহ মাঝারি আকারের এবং সুগঠিত। তাঁর মুখ হাসি হাসি, দৃষ্টি চঞ্চল ও মর্মভেদী, তাঁর রং অন্যান্য মারাঠিদের চেয়ে সাদা।’
প্রায় ওই সময়েই Thevenot নামে এক ফরাসি ভ্রমণকারীও শিবাজিকে স্বচক্ষে দেখে বলেছেন : ‘রাজা মাথায় উঁচু নন। তাঁর গায়ের রং কটা। চঞ্চল দৃষ্টির ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায় সজীবতার প্রাচুর্য।’
ইংরেজ দূত Henry Oxinden শিবাজিকে ওজন হতে দেখেছিলেন। ওজনে তাঁর দেহ ছিল কিছু বেশি দুই মন।
পানহালাগড়ে শিবাজিকে আক্রমণ করতে এলেন বিজাপুরের সেনানী ফজল খাঁ ও তাঁর প্রধান পার্শ্বচর সিদ্দি হালাল। সঙ্গে তাঁদের পনেরো হাজার সৈন্য।
যে আফজল খাঁকে শিবাজি হত্যা করেছিলেন, এই ফজল খাঁ হচ্ছেন তাঁরই পুত্র। তিনি যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে এসেছিলেন, এটুকু সহজেই অনুমান করা যায়। তাঁর হাতে পড়লে শিবাজির আর রক্ষা নেই!
শিবাজির সৈন্যসংখ্যা পাঁচ-ছয় হাজারের বেশি ছিল না বটে, কিন্তু পানহালার মতো মস্তবড় ও সুরক্ষিত কেল্লার আশ্রয়ে থেকে তিনি আত্মরক্ষার সুযোগ পেলেন যথেষ্ট। উপরন্তু মাঝে মাঝে তাঁর সৈন্যরা হঠাৎ কেল্লা থেকে বেরিয়ে পড়ে এমনভাবে শত্রুসংহার করতে লাগল যে, বিজাপুরীর দল রীতিমতো ভয় পেয়ে নিরাপদ ব্যবধানে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হল। অবশ্য এটা বলা বাহুল্য, পিছিয়ে গিয়েও তারা চারিদিক থেকেই দুর্গকে বেষ্টন করে রইল।
তারপর ফজল খাঁ অবলম্বন করলেন এক নতুন কৌশল।
পানহালার কাছেই ছিল মারাঠিদের পানগড় নামে আর একটা কেল্লা। সেটি পানহালার মতো সুরক্ষিত না হলেও তার অবস্থিতি ছিল এমনধারা যে, পানগড় হারালে পানহালার মারাঠিদের খোরাকের অভাবে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায়ান্তর থাকবে না।
সুচতুর ফজল খাঁ প্রথমে পানগড়ের নিকটস্থ একটা ছোট পাহাড় দখল করলেন। তারপর পাহাড়ের টঙে কয়েকটা কামান টেনে তুলে একেবারে পানগড়ের ভিতর গোলা নিক্ষেপ করতে লাগলেন।
পানগড়ের ভিতর ছিল অল্প মারাঠি সৈন্য। তাদের অবস্থা হল শোচনীয়। দুর্গ-রক্ষক শিবাজির কাছে খবর পাঠালেন, ‘শীঘ্র সৈন্য পাঠিয়ে সাহায্য করুন, নইলে আমরা শত্রুদের আর ঠেকাতে পারব না।’
শিবাজি পড়লেন মহা সমস্যায়। তাঁর সঙ্গেও এত বেশি সৈন্য নেই যে, পানগড়কে সাহায্য করতে পারেন। অথচ লোকাভাবে পানগড়ের পতন হলে আহার অভাবে তাঁকেও করতে হয় আত্মসমর্পণ।
বেশি ভাবনারও সময় নেই। তাড়াতাড়ি না করলে পালাবার পথও বন্ধ হবে। শিবাজি হুকুম দিলেন, ‘শোনো সবাই! কতক সৈন্য পানহালাতেই থাকো। তারা যতক্ষণ পারে দুর্গ রক্ষা করুক। আজকের রাত্রি অন্ধকার। এই সুযোগে আমি বাকি সৈন্য নিয়ে শত্রুব্যূহ ভেদ করে অন্য কোথাও চলে যাই।’
সেই ব্যবস্থাই হল। সে রাত্রে চাঁদ ওঠেনি, অন্ধকারে মানুষের চোখ অন্ধ। মারাঠিরা বাঘের মতো বিজাপুরীদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এই আকস্মিক আক্রমণের জন্যে শত্রুরা প্রস্তুত ছিল না, তারা দস্তুরমতো হতভম্ব হয়ে গেল।
সেই ফাঁকে শিবাজি অদৃশ্য হলেন সদলবলে। তিনি সোজা ধরলেন তাঁর আর এক কেল্লা বিশালগড়ে যাবার পথ। সেখান থেকে বিশালগড়ের দূরত্ব সাতাশ মাইল।
কিন্তু শিবাজির অন্তর্ধানের কথা বেশিক্ষণ চাপা রইল না।
ফজল খাঁ গর্জন করে বললেন, ‘কোথায় পালাবে আমার পিতৃহন্তা? সিদ্দি হালাল, ডাক দাও আমার সৈন্যদের। এই পাহাড়ে-ইঁদুরকে গর্তে ঢোকবার আগেই বন্দি করা চাই! জলদি চলো—জলদি চলো!’
কালিমার ঘেরাটোপে ঢাকা রাত, মর্মর-আর্তনাদে ভরা গহন বন, অসমোচ্চ দুর্গম পাহাড়ে পথ।
কিন্তু মারাঠিদের অভিযোগ নেই। তাদের দেশের রাজা, প্রাণের রাজা শিবাজির নির্দেশে তারা চলেছে মৌনমুখে, সারে সারে।
কালো রাতের কোলে ফুটল আলোমাখা প্রভাতের নয়ন। সকলে এসে পড়েছে গজপুরে। এখনও আটমাইল দূরে বিশালগড়।
সেইখানেই প্রথম জানা গেল, বিজাপুরীরাও সারা রাত ধরে ছুটে আসছে মারাঠিদের পিছনে পিছনে। সংখ্যায় তারা অনেক বেশি।
সকলেই সচকিত! এখন উপায়? মুষ্টিমেয় মারাঠি সৈন্য নিয়ে শত্রুদের বাধা দেওয়া অসম্ভব। অথচ তাদের বাধা দিতে না পারলে এখানেই শিবাজির সমস্ত আশা-ভরসার অবসান!
সেখানে পথ গিয়ে পড়েছে এক অতি-সংকীর্ণ গিরিবর্ত্মের ভিতরে।
সেইদিকে তাকিয়েই শিবাজির চক্ষু প্রদীপ্ত হয়ে উঠল। তিনি ডাকলেন, ‘বাজি প্রভু!’
একজন মারাঠি যোদ্ধা তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল।
—’বাজি প্রভু, ওই সরু গিরি-পথটা দেখছ?’
—’আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজা!’
—’বিজাপুরীরা আসছে আমাকে বধ করতে। আমি তোমার অধীনে কয়েকজন লোক রেখে বিশালগড়ে যাত্রা করতে চাই বাকি সবাইকে নিয়ে। যতক্ষণ না আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই, ততক্ষণ তুমি ওই গিরিবর্ত্ম রক্ষা করতে পারবে কি?’
—’আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজা!’
—’বিশালগড়ে পৌঁছেই আমি তোপধ্বনি করে জানিয়ে দেব আমরা নিরাপদ। তারপরে তোমার কর্তব্য শেষ হবে।’
—’উত্তম!’
বাজি প্রভু তাঁর অনুচরদের নিয়ে গিরিবর্ত্ম জুড়ে দাঁড়ালেন। সকলেরই মুখে-চোখে এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞার ভাব যে, দেখলেই বুঝতে দেরি লাগে না, জীবনটাকে তারা বিক্রি করবে খুব চড়া মূল্যেই!
বিজাপুরীদের দেখা গেল। তারা ছুটে আসছে কাতারে কাতারে। যেন বাঁধভাঙা বন্যা!
কিন্তু গিরিবর্ত্মের সামনে এসেই তাদের অগ্রগতি হল রুদ্ধ! এই সরু পথের ভিতরে পাশাপাশি কয়েকজনের বেশি লোকের প্রবেশ করবার উপায় নেই।
ফজল খাঁ ক্রুদ্ধস্বরে চিৎকার করে বললেন, ‘অগ্রসর হও—অগ্রসর হও! ওই গোটাকয়েক কাফেরকে কেটে কুচি কুচি করে ফ্যালো!’
যে কয়জন বিজাপুরী বর্ত্মের মধ্যে গিয়ে ঢুকল, তাদের কেউ আর ফিরল না। মারাঠি বন্দুকধারী, ধনুকধারী, বর্শাধারী ও তরবারিধারী বীরদের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ল তাদের ক্ষতবিক্ষত জীবনহীন দেহগুলো।
ফজল খাঁ আবার গর্জে উঠলেন, ‘কুছ পরোয়া নেহি। আক্রমণ করো! যেমন করে পারো পথ সাফ করো!’
পিঁপড়দের মতো লম্বা সার বেঁধে বিজাপুরীরা গিরিবর্ত্মে প্রবেশ করে, কিন্তু খানিক পরে আর অগ্রসর হতে পারে না, তাদের দেহ হয় ‘পপাত ধরণীতলে!’
বর্ত্মের মধ্যে ক্রমেই উঁচু হয়ে উঠতে লাগল বিজাপুরীদের দেহের স্তূপ। মারাঠিরাও যে মরছিল না, এ কথা বলা যায় না। কিন্তু দু-একজন মারাঠি মরে তো বিজাপুরী মরে দশ-পনেরো জন।
মারাঠিরা সংখ্যায় ছিল অতি অল্প। বহু শত্রু বধ করে দু-একজন করে মরতে মরতেও মারাঠিরা দলে হয়ে পড়ল আরও হালকা; কিন্তু তবু যুদ্ধ চলে, তবু বিজাপুরীরা অগ্রসর হতে পারে না, যদিও তাদের বাহিনী তখনও বিপুল!
সর্বাগ্রে পথ জুড়ে অচল শিলামূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন বাজি প্রভু—তাঁর ঊর্ধ্বোত্থিত কৃপাণ রক্তাক্ত, তাঁর সর্বাঙ্গ রক্তাক্ত। মধ্যাহ্ন সূর্যের কিরণে সেই শাণিত কৃপাণ জ্বলে জ্বলে উঠছে সরল বিদ্যুৎশিখার মতো, তার প্রতাপে আজ নিবে গিয়েছে কত শত্রুর জীবনদীপ, সে হিসাব কেউ রাখেনি!
বাজি প্রভু ক্ষিপ্রহস্তে অস্ত্রচালনা করছেন আর দৃপ্ত কণ্ঠে বলছেন, ‘বাধা দাও, বধ করো! এখনও তোপধ্বনি হয়নি—এখনও মারাঠার রাজা নিরাপদ নন!’
ইতিহাস বলে, সূর্যোদয়ের পরে সুদীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টাকাল ধরে চলেছিল এই অভাবিত যুদ্ধ এবং গিরিবর্ত্ম পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল সাত শত মৃতদেহে!
বিজাপুরীরা ফিরে যায় এবং এগিয়ে আসে বারে বারে।
ফজল খাঁ থেকে থেকে বলে ওঠেন, ‘পিতৃহন্তার—পিতৃহন্তার মুণ্ড চাই! মুণ্ড চাই!’
আঘাতের পর আঘাতে বাজি প্রভুর আহত দেহ ক্রমেই অবসন্ন হয়ে আসে। সাগ্রহে উৎকর্ণ হয়ে তিনি গোনেন মুহূর্তের পর মুহূর্ত। কিন্তু তবু শোনা যায় না তোপধ্বনি! ওগো রাজা, তুমি কি ভুলে গেলে আমাদের কথা? আর যে পারি না! কোথায় তোমার কামানের ভাষা!
বিজাপুরীরা আবার এগিয়ে আসছে। খালের ভিতরে ঢুকছে যেন সমুদ্রের প্লাবন!
শোনা গেল ফজল খাঁর হুকুম : ‘গুলিবৃষ্টি করো-গুলিবৃষ্টি করো! কাফেররা আর বেশিক্ষণ আমাদের বাধা দিতে পারবে না!’
বাজি প্রভু হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ‘বাধা দাও! বধ করো। দেহে যতক্ষণ এক ফোঁটা রক্ত থাকবে—বাধা দাও, বাধা দাও, মারাঠার বীর সন্তান!’
গিরিবর্ত্মের মধ্যে বেগে ছুটে এল উত্তপ্ত গুলির ঝড়! তার পিছনে ধেয়ে আসছে শত্রুসৈন্যের অফুরন্ত শ্রেণি!
আবার আহত হয়ে রক্ত-পিছল পাহাড়ের উপরে আছাড় খেয়ে পড়লেন বাজি প্রভু! সেইখানে শুয়ে শুয়েই তিনি ক্ষীণ অথচ দৃঢ়স্বরে বললেন, ‘মারাঠার বীরগণ! জীবন শেষ হল, কিন্তু আমার কর্তব্য শেষ হল না। আমি চললুম, কিন্তু তোমরা রইলে। যতক্ষণ না তোপ শোনা যায়, বাধা দাও—বাধা দাও!’
তাঁর শেষ-নিশ্বাস যখন পড়ে পড়ে আচম্বিতে বিশালগড় থেকে ভেসে এল গুড়ুম করে শিবাজির তোপের আওয়াজ!
বাজি প্রভু বাক্যহীন হলেও তখনও সচেতন। তাঁর দুই চোখ হয়ে উঠল উজ্জ্বল এবং মুখে ফুটল স্বর্গের আনন্দ।
বাজি প্রভুর স্মৃতিই অমর হয়ে নেই, তাঁর অবিনশ্বর আত্মাও বিরাজ করছে এই মহাভারতের স্বাধীন জনতার মধ্যে!