মানস-বধূ
যেমন ছাঁচি পানের কচি পাতা প্রজাপতির ডানার ছোঁয়ায়, ঠোঁট দুটি তার কাঁপন-আকুল একটি চুমায় অমনি নোয়ায়। জল-ছলছল উড়ু-উড়ু চঞ্চল তার আঁখির তারা, কখন বুঝি দেবে ফাঁকি সুদূর পথিক-পাখির পারা, নিবিড় নয়ন-পাতার কোলে, গভীর ব্যথার ছায়া দোলে, মলিন চাওয়া (ছাওয়া) যেন দূরের সে কোন্ সবুজ ধোঁয়ায়। সিঁথির বীথির খসে-পড়া কপোল-ছাওয়া চপল অলক পলক-হারা, সে মুখ চেয়ে নাচ ভুলেছে নাকের নোলক। পাংশু তাহার চূর্ণ কেশে, মুখ মুছে যায় সন্ধে এসে, বিধুর অধর-সীধু যেন নিঙড়ে কাঁচা আঙুর চোয়ায়। দিঘল শ্বাসের বাউল বাজে নাসার সে তার জোড়-বাঁশিতে, পান্না-ক্ষরা কান্না যেন ঠোঁট-চাপা তার চোর হাসি সে। ম্লান তার লাল গালের লালিম, রোদ-পাকা আধ-ডাঁশা ডালিম, গাগরি ব্যথার ডুবায় কে তার টোল খাওয়া গাল-চিবুক-কুয়ায়। চায় যেন সে শরম-শাড়ির ঘোমটা চিরি পাতা ফুঁড়ি, আধফোঁটা বউ মউল-বউল, বোলতা-ব্যাকুল বকুল কুঁড়ি বোল-ভোলা তার কাঁকন চুড়ি ক্ষীরের ভিতর হিরের ছুরি, দু-চোখ-ভরা অশ্রু যেন পাকা পিয়াল শালের ঠোঙায়। বুকের কাঁপন হুতাশ-ভরা, বাহুর বাঁধন কাঁদন-মাখা, নিচোল বুকের কাঁচল আঁচল স্বপন-পারের পরির পাখা। খেয়াপারের ভেসে-আসা গীতির মতো পায়ের ভাষা, চরণ-চুমায় শিউরে পুলক হিমভেজা দুধ-ঘাসের রোঁয়ায়। সে যেন কোন্ দূরের মেয়ে আমার কবিমানস-বধূ; বুকপোরা আর মুখভার তার পিছলে পড়ে ব্যথার মধু। নিশীথ-রাতের স্বপন হেন, পেয়েও তারে পাইনে যেন, মিলন মোদের স্বপন-কূলে কাঁদনভরা চুমায় চুমায়। নামহারা সেই আমার প্রিয়া, তারেই চেয়ে জনম গোঁয়ায়।
দৌলতপুর, কুমিল্লা
জ্যৈষ্ঠ ১৩২৮