মানসী

আজি আষাঢ়ের মেঘলা আকাশে
        মনখানা উড়ো পক্ষী
বাদলা হাওয়ায় দিকে দিকে ধায়
        অজানার পানে লক্ষ্যি।
যাহা-খুশি বলি স্বগত কাকলি,
        লিখিবারে চাহি পত্র,
গোপন মনের শিল্পসূত্রে
        বুনানো দু-চারি ছত্র।
সঙ্গীবিহীন নিরালায় করি
        জানা-অজানার সন্ধি,
গর্‌ঠিকানিয়া বন্ধু কে আছ
        করিব বাণীর বন্দী।
না জানি তোমার নামধাম আমি,
        না জানি তোমার তথ্য।
কিবা আসে যায় যে হও সে হও
         মিথ্যা অথবা সত্য।
নিভৃতে তোমারি সাথে আনাগোনা
        হে মোর অচিন মিত্র,
প্রলাপী মনেতে আঁকা পড়ে তব
        কত অদ্ভুত চিত্র।
যে নেয় নি মেনে মর্ত শরীরে
        বাঁধন পাঞ্চভৌত্যে
তার সাথে মন করেছি বদল
        স্বপ্নমায়ার দৌত্যে।
ঘুমের ঘোরেতে পেয়েছি তাহার
        রুক্ষ চুলের গন্ধ।
আধেক রাত্রে শুনি যেন তার–
        দ্বার-খোলা, দ্বার-বন্ধ।
নীপবন হতে সৌরভে আনে
        ভাষাবিহীনার ভাষ্য।
জোনাকি আঁধারে ছড়াছড়ি করে
        মণিহার-ছেঁড়া-হাস্য।
সঘন নিশীথে গর্জিছে দেয়া,
        রিমিঝিমি বারি বর্ষে–
মনে মনে ভাবি, কোন্‌ পালঙ্কে
        কে নিদ্রা দেয় হর্ষে।
গিরির শিখরে ডাকিছে ময়ূর
        কবিকাব্যের রঙ্গে–
স্বপ্নপুলকে কে জাগে চমকি
        বিগলিতচীর-অঙ্গে।
বাস্তব মোরে বঞ্চনা করে
       পালায় চকিত নৃত্যে–
তারি ছায়া যবে রূপ ধরি আসে
        বাঁধা পড়ি যায় চিত্তে।
তারার আলোকে ভরে সেই সাকী
        মদিরোচ্ছল পাত্র,
নিবিড় রাতের মুগ্ধ মিলনে
        নাই বিচ্ছেদ মাত্র।
ওগো মায়াময়ী, আজি বরষায়
        জাগালে আমার ছন্দ–
যাহা-খুশি সুরে বাজিছে সেতার,
        নাহি মানে কোনো বন্ধ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *