১০.
দুপুরে মিসেস ভট্টাচার্য তার অফিস কামরায় একা একা বসে যখন হোটেলের হিসাবনিকাশ করছিলেন কিরীটী এসে অফিস ঘরে ঢুকল।
মিসেস ভট্টাচার্য।
মিঃ রায়? আসুন আসুন, বসুন।
কিরীটী একটা চেয়ার টেনে নিয়ে মিসেস ভট্টাচার্যের মুখখামুখি বসল।
মিসেস ভট্টাচার্য, কুড়ি নম্বর ঘরে কে ভদ্রলোক আছেন বলুন তো?
কেন বলুন তো? মিসেস ভট্টাচার্য সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন কিরীটীর মুখের দিকে।
উনি কি শরদিন্দু বোস?
আপনি ওঁকে চেনেন নাকি?
না, ঠিক চিনি না ওঁকে, তবে অনুমান করছি। উনি কাল রাত্রে আপনার ঘরে গিয়েছিলেন?
আপনি কি করে জানলেন?
জেনেছি। আপনার যদি বিশেষ কোন আপত্তি না থাকে তো যদি বলেন—কেন কাল রাত্রে উনি আপনার ঘরে গিয়েছিলেন?
না না, আপত্তি কি থাকতে পারে, ওঁর ধারণা, সেবারে জলে ড়ুবে ওঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়নি, তাই আর একবার ভাল করে ব্যাপারটা অনুসন্ধান করার জন্যই এখানে এসেছেন উনি, আর আমার সাহায্য চান বলেছিলেন, সেই ব্যাপারেই।
উনি এই দুই বৎসরের মধ্যে আর এসেছিলেন এখানে?
এলেও আমি জানি না। আমার এখানে ওঠেননি।
তা হঠাৎ দুবছর পরে তার মনের মধ্যে সন্দেহটা দেখা দিল কেন—কিছু বলেননি আপনাকে?
না, সে-সব কিছু বলেননি।
আপনি কি একটা কথা জানেন মিসেস ভট্টাচার্য, প্রথমা স্ত্রীর জলে ড়ুবে মৃত্যু হবার কয়েক মাস পরেই উনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেছিলেন?
তাই নাকি! না, জানি না তো!
হ্যাঁ, আর সে স্ত্রীরও সমুদ্রে ড়ুবে মৃত্যু হয়েছে একই ভাবে। কাজেই এ থেকে কি সহজেই মনে হয় না, প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর কথাটা একেবারেই তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, এমন কি দ্বিতীয়া স্ত্রীর জলে ড়ুবে মৃত্যুর পর যে কথাটা এতদিন তার মনে হয়নি, আজ হঠাই বা সে কথাটা তার মনে হল কেন? তবে কি মৃতদেহটা পাওয়া যায়নি বলে তার হঠাৎ ধারণা হয়েছে যে তাঁর প্রথমা স্ত্রীর জলে ড়ুবে মৃত্যু হয়নি? এবং সেটাই ভাল করে অনুসন্ধান করবার জন্য আবার এতদিন পরে পুরীতে ছুটে এসেছেন? কিরীটীর শেষের কথাগুলো কতকটা যেন নিম্নকণ্ঠে স্বগতোক্তির মত শোনাল।
কাল রাত্রে হঠাৎ—তা রাত তখন প্রায় বারোটা হবে, আমার ঘরের দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি উনি বললেন, আমাকে চিনতে পারছেন মিসেস ভট্টাচার্য?
বললাম, আপনাকে সেই দিনই চিনেছি, যেদিন আপনি এই হোটেলে এসে ওঠেন। তখন আমার কিছু কথা আছে আপনার সঙ্গে বলে উনি আমার ঘরে এসে ঢুকলেন। এবং বললেন, আমি যে কারণে এবারে এখানে এসেছি সে কথাটা গোপন রাখতে চাই এবং যাতে জানাজানি না হয় সেই কারণেই আপনার সঙ্গে এত রাত্রে দেখা করতে এসেছি। মিসেস ভট্টাচার্য, আপনার হয়ত মনে আছে বছর দুই পূর্বে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বেড়াতে এসে এই হোটেলেই কুড়ি নম্বর ঘরে উঠেছিলাম—এখানে আসার পাঁচ দিন পরে বিকেলের দিকে সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে আমার স্ত্রী জলে ড়ুবে যান—আমি বললাম, মনে আছে। তখন উনি বললেন, আপনি হয়তো জানেন না আমার স্ত্রী খুব ভাল সাঁতার জানত, তাই প্রথম থেকেই কেন যেন আমার ধারণা হয়েছিল যে, সে হয়তো জলে ড়ুবে যায়নি, আমি সেই কারণে সারাটা রাত ও পরের দিন সমুদ্রের ধারে ধারে তার অনুসন্ধান করি কিন্তু কোন সন্ধান পেলাম না, তখন পুলিসে ডাইরি করি।
উনি আর কি বলেছেন? কিরীটী শুধাল।
বললেন, যেটা আমার মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব জাগিয়েছিল সেদিন, পরে সেটাই একটা বদ্ধমূল ধারণায় পরিণত হয়েছে। মনে হয় সে আজও বেঁচে আছে—তাই আর একবার ব্যাপারটা ভাল করে অনুসন্ধান করবার জন্যই গোপনে আর একবার পুরীতে এসেছি। কিন্তু জায়গাটার সঙ্গে তো আমার বিশেষ তেমন একটা পরিচয় নেই, আপনারা দীর্ঘদিন এখানে আছেন—তাই মনে হল এ ব্যাপারে আপনি হয়তো আমাকে কিছু সাহায্য করতে পারেন।
আমি বললাম, আমি কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি মিঃ বোস?
মিঃ বোস বললেন, বাইরে থেকে এখানে আপনার হোটেলে এসে যারা থাকেন তাঁরা নন—এখানকার যেসব স্থানীয় লোক মধ্যে মধ্যে আপনার হোটেলে আসেন, তাঁদের সঙ্গে আপনার নিশ্চয় পরিচয় আছে তাদের কাছ থেকে আপনি যদি জানতে পারেন এই ফটোর সঙ্গে মিল আছে এমন কোন স্ত্রীলোককে তাঁরা দেখেছেন কিনা-বলে পকেট থেকে তার স্ত্রীর একটা ফটো বের করে আমাকে দেন।
ফটোটা আছে আপনার কাছে? কিরীটী প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ, এই যে দেখুন না-বলে মিসেস ভট্টাচার্য ড্রয়ার থেকে একটা ফটো বের করে কিরীটীর সামনে রাখল।
কিরীটী দেখল, ফটোটা মানসীরই ফটো। পরেশ নন্দী তাকে যে ফটোটা দিয়েছেন তার সঙ্গে হুবহু মিল আছে চেহারার।
আপনি আপনার এখানকার পরিচিত কাউকে ফটোটা দেখিয়েছেন?
না, এখনও সেরকম কেউ আসেননি বলে দেখাইনি। তবে আজ অবিনাশবাবুর আসার কথা আছে—আজ তো শনিবার—শনিবার শনিবার উনি সন্ধ্যার পর আমার সঙ্গে গল্প করতে হোটেলে আসেন।
কিরীটী বুঝতে পারে—অবিনাশবাবু হয়তো কোন এক সময় সুষমা ভট্টাচার্যর একজন গুণমুগ্ধ ছিলেন, তার রূপের পূজারী ছিলেন।
অবিনাশবাবু কি করেন?
এখানে মন্দিরের কাছে বাজারে তার বড় একটা কাপড়ের দোকান আছে। অবিনাশবাবু ছাড়াও আর একজনকে জিজ্ঞাসা করব ভেবেছিলাম।
সে কে?
উদয়—একজন মস্ত বড় সিনেমা আর্টিস্ট। ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করে। তার অনেক গুণমুগ্ধও আছে।
বয়স কত ভদ্রলোকের? কিরীটী প্রশ্ন করল।
চল্লিশ বিয়াল্লিশ হবে। বললেন মিসেস ভট্টাচার্য।
আপনার সঙ্গে তার কত দিনের আলাপ?
তা আজ প্রায় কুড়ি-বাইশ বছর তো হবেই-মিসেস ভট্টাচার্য বললেন।
কিরীটী বুঝতে পারে, উদয়ও হয়তো একদিন সুষমার গুণমুগ্ধদের একজন ছিল। এবং আজও সেই টানেই সুষমার কাছে হয়তো আসা-যাওয়া করে।
ঐ সময় একজন সুদর্শন ভদ্রলোক এসে ঘরে ঢুকলেন, হাতে তার একটা খাম।
বৌদি!
আরে এস এস উদয়বাবু—সুষমা ভট্টাচার্য সানন্দ সম্ভাষণ জানালেন।
কিরীটী তাকাল আগন্তুকের দিকে। মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। সুগঠিত দেহ, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ কোঁকড়া চুল সযত্ন-বিন্যস্ত। কিন্তু তার মধ্যে দু-একটা রূপালী চুল যেন চোখে পড়ে। চোখে শৌখীন সোনার-ফ্রেমের চশমা! পরনে দামী ট্রাউজার ও টেরিলিনের হাওয়াই শার্ট!
অনেক দিন পরে এলে উদয়বাবু-বৌদিকে ভুলে গিয়েছিলে বুঝি? মিসেস সুষমা ভট্টাচার্যর মৃদু অভিযোগ।
না না, তা নয় বৌদি, একটা ছবির শুটিং করতে কয়েক দিনের জন্য কোণারক গিয়েছিলাম। কিন্তু একে তো চিনলাম না বৌদি! বেড়াতে এসেছেন বুঝি?
তাই। বিখ্যাত লোক, নাম শুনে থাকবে হয়তো–কিরীটী রায়।
সত্যসন্ধানী কিরীটী রায়! উদয়বাবুর চোখে-মুখে একটা বিস্ময় ঝলসে ওঠে মুহূর্তে। কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল উদয়, আপনার নামই এতকাল শুনে এসেছি কিরীটীবাবু চাক্ষুষ এই প্রথম দেখলাম আপনাকে! কিরীটী মৃদু হাসল। কি বইয়ের শুটিং ছিল উদয়? মিসেস ভট্টাচার্য শুধালেন।
কলঙ্ক। জান বৌদি, সেই যে নতুন মেয়েটির কথা বলেছিলাম-কলঙ্ক ছবিতে সেকেন্ড হিরোয়িনের পার্ট করছেন। যদিও বাঙালী কিন্তু চমৎকার ওড়িয়া বলেন।
কথা বললে এবার কিরীটী, বাঙালী মেয়ে ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করছেন?
হ্যাঁ, আর এই তার প্রথম বই। চমৎকার ফটোজেনিক ফেস। আর অভিনয়ও করছেন চমৎকার। এই যে দেখুন না, গোটাকয়েক কপি আছে আমার সঙ্গে-বলে খাম থেকে গোটাতিনেক স্টীল বের করে সামনে এগিয়ে দিল উদয়।
কোণারকের সূর্যমন্দিরের এক অংশে হেলান দিয়ে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে কিরীটীর চোখের পাতা পড়ে না।
মিসেস ভট্টাচার্য ঐ সময় কিচেনের দিকে উঠে গেলেন এবং বলে গেলেন, বোসো, আমি কফির কথা বলে আসি।
ঘরের মধ্যে কিরীটী আর উদয়। কি আশ্চর্য রকমের মিল মানসীর মুখের সঙ্গে!
কিরীটী কিন্তু তার মনের বিস্ময় প্রকাশ করল না। কেবল উদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, মেয়েটির নাম কি উদয়বাবু?
লক্ষ্মী।
পদবী কি?
তা তো জানি না!
এখানকারই মেয়ে? মানে এই শহরেই থাকেন?
না, ভুবনেশ্বরে থাকেন শুনেছি।
বিবাহিত কি মেয়েটি?
বিবাহিত নন বলেই শুনেছি আর সিঁথিতে সিঁদুর দেখিনি।
আচ্ছা উদয়বাবু মেয়েটির সঙ্গে একবার দেখা করা যায়?
মেয়েটি অত্যন্ত রিজার্ভড় প্রকৃতির। কারও সঙ্গেই বড় একটা কথা বলেন না।
মেয়েটি সম্পর্কে আপনি আর কিছু জানেন উদয়বাবু?
নীলমণি-মানে আমাদের ডিরেক্টরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখে অ্যাপ্লাই করেছিল, নীলমণি ওঁকে ডেকে পাঠায়—আমিও সেদিন নীলমণির অফিসে উপস্থিত ছিলাম, নীলমণির পছন্দ হয়ে যায় মেয়েটিকে—ওঁর ক্যামেরা টেস্ট ভয়েস টেস্ট নিয়ে নীলমণির ভাল লাগে—সে কন্ট্রাক্ট সই করায়, নীলমণির মুখেই শুনেছি মেয়েটি ভুবনেশ্বরের কোথায় যেন থাকেন।
আপনাদের আবার শুটিং কবে উদয়বাবু?
দশ দিন একটানা শুটিং হয়ে গেল এই তো গত পরশু, আবার শুটিং দিন দশেক পরে।
লোকেশন কোথায়?
পুরীর সমুদ্রের আশেপাশে শুটিং হবে শুনেছি—আউটডোর, এই ছবির বারো আনা অংশই প্রায় আউটডোরে।
কথাটা তাহলে আপনাকে খুলেই বলি উদয়বাবু—কিরীটী বললে, আমার এক বন্ধু আসছে এখানে দুই-তিন দিনের মধ্যে। সে একটা চিত্র পরিচালনা করছে, স্ক্রিপ্ট রেডি, নায়কও ঠিক হয়ে গিয়েছে। এখন সে নায়িকার জন্যে সন্ধান করছে নতুন মুখ। আপনাদের বইয়ের ঐ। মেয়েটির ছবি দেখে মনে হচ্ছে হয়তো তার মেয়েটিকে পছন্দ হয়ে যেতে পারে।
ঠিক আছে, আমি নীলমণিকে বলব। সে নিশ্চয়ই লক্ষ্মীর ঠিকানা জানে।
বলবেন অনুগ্রহ করে। আর মেয়েটির সঙ্গে যদি একটিবার আমার বন্ধুর দেখা হয়ে যায়, তবে খুব ভাল হয়।
নিশ্চয়ই বলব, আমি কালই সকালে এসে আপনাকে জানিয়ে যাব।
সেই রাত্রেই কিরীটী ট্রাঙ্ককলে সুব্রতর সঙ্গে কলকাতায় কথা বলল।
সুব্রত, আমি পুরী থেকে কিরীটী বলছি।
কি ব্যাপার বল তো? সুব্রতর প্রশ্ন?
এখানে এলেই সব জানতে পারবে। গণেশবাবু—আমাদের গণেশ ঘোষকে চেনো তো, রেলে কাজ করেন, তাকে ধরলেই একটা রিজার্ভেশন পেয়ে যাবে। কালই চলে এস।
ঠিক আছে।
কিরীটী রিসিভারটা নামিয়ে রাখল।
পরের দিন সকালবেলা দশটা নাগাদ উদয়বাবু এলেন।
বললেন, সরি কিরীটীবাবু, লক্ষ্মীদেবী ভুবনেশ্বরে নেই!
নেই?
না, নীলমণি বললে তিনি নাকি কলকাতায় গিয়েছেন, ফিরবেন সেই শুটিংয়ের আগের দিন। গতকালই নাকি তিনি নীলমণিকে ফোনে জানিয়েছেন।
ঠিক আছে, আমার চিত্র পরিচালক বন্ধুকে কথাটা জানিয়ে দেব। আর একটা কথা আপনাকে জানিয়ে দিই উদয়বাবু, আপনার কথাও গতরাত্রে আমার বন্ধুকে জানিয়েছি, আপনার সম্পর্কেও সে ইন্টারেস্টেড!
সত্যি? উদয়বাবু সংবাদটায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন।
হ্যাঁ, আমার বন্ধুটি সবই নতুন মুখ খুঁজছেন।
কিরীটী উদয়বাবুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে ঠিকই টোপ ফেলেছে।
উদয়বাবুর কাছে গতকালই ফটোটা দেখার পর থেকে কিরীটী ফটোর মেয়েটার কথাই ভেবেছে। কেন যেন তার ধারণা হয়েছে ফটোর লক্ষ্মী আর মানসী অভিন্ন। অবিশ্যি এও তার মনে হয়েছে, লক্ষ্মী একান্তই যদি মানসী না হয়, কেবলমাত্র আশ্চর্য রকমের একটা মিল উভয়ের মধ্যে—তাহলেও তার কার্যসিদ্ধি হয়ে যাবে। নতুন একটা প্ল্যান তার মাথায় এসেছে।
ঐদিনই রাত্রে, রাত্রি তখন সোয়া এগারোটা হবে। হোটেলের সকলের খাওয়াদাওয়া চুকে গিয়েছে প্রায়। ঘরে ঘরে আলো নিভে গিয়েছে। কিরীটী তার ঘরে বসে একটা উপন্যাস পড়ছিল, বন্ধ দরজায় গায়ে মৃদু টোকা পড়ল। কিরীটী উঠে দরজা খুলে দিল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সুষমা ভট্টাচার্য।
মিসেস ভট্টাচার্য, আসুন!
কথা আছে–মিসেস ভট্টাচার্য ভিতরে ঢুকে বললেন।
বসুন–বলে কিরীটী ঘরের দরজার ভিতর থেকে খিল তুলে দিল।
কাল আপনাকে একটা কথা বলিনি কিরীটীবাবু। মিসেস ভট্টাচার্য বললেন, উদয়বাবুদের কলঙ্ক ছবিতে যে নতুন মেয়েটি অভিনয় করছে—মানে উদয়বাবু যে ফটোটা দেখালেন সেই ফটোর চেহারার সঙ্গে শরদিন্দুবাবু যে ফটোটা দিয়েছেন তার একটা আশ্চর্য রকমের মিল আছে চেহারায়–
লক্ষ্য করেছি। কিরীটী বললে, কিন্তু একটা কথা মিসেস ভট্টাচার্য, শরদিন্দুবাবুকে কি আপনি ঐ মেয়েটির কথা বলেছেন?
না—তবে ভাবছি বলব!
না, বলবেন না। আমাদের অনুমান শেষ পর্যন্ত যদি মিথ্যেই প্রমাণিত হয় ভদ্রলোক মনে অত্যন্ত আঘাত পাবেন। তার চেয়ে আগে আমি ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করি কথাবার্তা বলি, তারপর–
আচ্ছা আপনার কি মনে হয় কিরীটীবাবু, মানসী দেবীর সেদিন ঐভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবার পিছনে কারও কোন অদৃশ্য হাত ছিল?
ছিলই যে তা বলব না? তবে থাকলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
তবে কি মিসেস ভট্টাচার্য কিছুক্ষণ কিরীটীর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বললেন, সেদিন মানসী দেবীকে হত্যা করবার চেষ্টা করা হয়েছিল।
সেটা এখনই সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না বলে কিরীটী কথাটা এড়িয়ে গেল।
আরও কিছুক্ষণ পরে মিসেস ভট্টাচার্য বিদায় নিলেন কিরীটীর কাছ থেকে।