মানসী

মনে নেই, বুঝি হবে অগ্রহান মাস,
            তখন তরণীবাস
                ছিল মোর পদ্মাবক্ষ-‘পরে।
            বামে বালুচরে
    সর্বশূণ্য শুভ্রতার না পাই অবধি।
            ধারে ধারে নদী
কলরবধারা দিয়ে নিঃশব্দেরে করিছে মিনতি।
    ওপারেতে আকাশের প্রশান্ত প্রণতি
        নেমেছে মন্দিরচূড়া-‘পরে।
    হেথা-হোথা পলিমাটিস্তরে
            পাড়ির নিচের তলে
        ছোলা-খেত ভরেছে ফসলে।
অরণ্যে নিবিড় গ্রাম নীলিমার নিম্নান্তের পটে;
    বাঁধা মোর নৌকাখানি জনশূণ্য বালুকার তটে।

        পূর্ণ যৌবনের বেগে
নিরুদ্দেশ বেদনার জোয়ার উঠেছে মনে জেগে
        মানসীর মায়ামূর্তি বহি।
ছন্দের বুনানি গেঁথে অদেখার সাথে কথা কহি।

        স্লানরৌদ্র অপরাহ্নবেলা
পাণ্ডুর জীবন মোর হেরিলাম প্রকাণ্ড একেলা
    অনারদ্ধ সৃজনের বিশ্বকর্তা-সম।
            সুদূর দুর্গম
        কোন্ পথে যায় শোনা
    অগোচর চরণের স্বপ্নে আনাগোনা।
প্রলাপ বিছায় দিনু আগন্তুক অচেনার লাগি,
    আহ্বান পাঠানু শূন্যে তারি পদপরশন মাগি।

        শীতের কৃপণ বেলা যায়।
            ক্ষীন কুয়াশায়
                অস্পষ্ট হয়েছে বালি।
        সায়াহ্নের মলিন সোনালি
                পলে পলে
    বদল করিছে রঙ মসৃণ তরঙ্গহীন জলে।

    বাহিরেতে বাণী মোর হল শেষ,
অন্তরের তারে তারে ঝংকারে রহিল তার রেশ।
    অফলিত প্রতীক্ষার সেই গাথা আজি।
কবিরে পশ্চাতে ফেলে শূণ্যপথে চলিয়াছে বাজি।
            কোথায় রহিল তার সাথে
    বক্ষস্পন্দে-কম্পমান সেই স্তব্ধ রাতে
                সেই সন্ধ্যাতারা।
            জন্মসাথিহারা
কাব্যখানি পাড়ি দিল চিহ্নহীন কালের সাগরে
                কিছুদিন তরে;
            শুধু একখানি
                সূত্রছিন্ন বাণী
        সেদিনের দিনান্তের মগ্নস্মৃতি হতে
                    ভেসে যায় স্রোতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *