মাদাম কুরি ও ঝন্টুমামা
আলোগ্রাফার ঝন্টু সেনের দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। গুছিয়ে কথা বললে সেটা আবার নিলয়ের পছন্দ হয় না। দড়াম করে সত্যি কথা বলার ব্যাপারে ওর জুড়ি নেই।
নিলয় বলল, সোজা কথা আকাল। ঝন্টুমামার এখন রীতিমতো পয়সার টানাটানি।
কথাটা শুনতে যতই খারাপ লাগুক, অস্বীকার করার উপায় নেই। আদিদাস আসার পর মনটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। ও-ই বলল, ঝন্টুমামা এখন দু-বেলা শুধু আসগরের দোকানের কাবাব খেয়েই কাটাচ্ছেন। বাড়ি থেকে বড় একটা বেরোনও না।
সেই বছর তিনেক আগে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিকের জন্য আফ্রিকার গ্যাবোতে ছবি তুলে ফেরার পর থেকে হাতে আর কাজ নেই বললেই চলে। কাজ নেই মানে অর্থকরী কাজ। দাঁতব্য ও কার্যকলাপ বন্ধ নয়। এবং সব কিছুর জন্য দায়ী একা ঝন্টুমামা। টুকটাক এধার ওধার তো প্রায়ই ডাক পড়ত। বিশেষ করে কলকারখানার ছবি তোলার কাজ অনবরতই আসত। কিন্তু কুড়ল তো তিনি নিজেই মেরেছেন।
আদিদাসের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সব মনে পড়ে যাচ্ছিল। বাজোরিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঝন্টুমামাকে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দেয়।
নিলয় বলল, ঝন্টুমামা যদি কাজটা করতো তাহলে দশ বছর ওই টাকায় বসে বসে খেতে পারত।
আমি বাধা দিয়ে বললাম, কাজটা করেনি বলা ঠিক নয়। কাজ একটা করেছিল, কিন্তু অপকর্ম–মানে, মালিকের চোখে
অত সাফাই গাইবার দরকার নেই। ঝন্টুমামা মোটেই ঠিক করেনি। নিলয় ভুরু কুঁচকে বলল, ভেবে দেখ, আমি তোকে আমার ছবি তুলতে ডাকলাম আর তুই আমার বাড়ির চাকরটার ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে খবরের কাগজে ছেপে দিলি। বললি, আট বছরের ছেলেকে দিয়ে কাজ করানো অপরাধ! কে সহ্য করবে বল?
উপমাটা খারাপ দেয়নি নিলয়। ঠিক তা-ই করেছিলেন ঝন্টুমামা। বাজোরিয়াদের বিভিন্ন কারখানার ভেতরকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিশুশ্রমিক নিয়োগ ইত্যাদির ভয়াবহ সব ছবি তুলে একটা খবরের কাগজে ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কাগজের মালিক কানোরিয়া আবার বাজোরিয়াদের প্রতিপক্ষ। সেটা অবশ্য ঝন্টুমামা জানতেন না।
কিন্তু সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং, ঝন্টুমামার পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকর ব্যাপারটা ঘটল এর পরে। এই রিপোর্ট ছাপার পরেই প্রথমেই চাকরি গেল রিপোর্টারের। তার পরেই নিশ্চয় কোনও রুদ্ধদ্বার কক্ষে কলকাতার বড় বড় কারখানার মালিকরা অলিখিত সিদ্ধান্ত নিলেন। যে, ঝন্টু সেনকে সবাই মিলে পুরোপুরি বর্জন করা দরকার। ঝন্টুমামার জন্যই কানোরিয়া বাজোরিয়াদের দুই প্রজন্মের ঝগড়াও মিটে গেল। কানোরিয়া বোকা নয়, সে বুঝেছিল যে, ঝন্টু সেন তার কারখানার ছবি তুললে ঘটনাটা এর চেয়েও সিরিয়াস হতে পারত।
ঝন্টু সেনের স্বরচিত দু-দিনের এই পটভূমি। কিন্তু শুধু ইতিহাসচর্চা করে তো চলবে না। একটা কিছু প্র্যাকটিক্যাল ব্যবস্থা তো করতে হবে। কিন্তু ঝন্টুমামা যদি ঘুণাক্ষরেও টের পায় যে, আমরা তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি–কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। হয়তো আর কোনও দিন আমাদের মুখদর্শনও করবেন না।
চল-না, ঝন্টুমামার ডেরায় একবার হানা দিই। ভালো করে খাবারদাবার নিয়ে এই রবিবারে দুপুরবেলায় একেবারে যাকে বলে বডি ফেলে দেওয়া। প্রস্তাব দিলাম আমি।
আদিদাস তো এক পায়ে খাড়া। নিলয়েরও আপত্তি নেই।
চীনে রেস্টোরান্ট থেকে খাবারের প্যাকেট বেঁধেছেদে হাতে ঝুলিয়ে ঝন্টুমামার বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই প্রায় সাড়ে এগারোটা।
সদর দরজা পেরিয়ে উঠোনের বাঁদিকে দু-চার পা ফেলতেই একটা অলৌকিক শব্দ কানে এল। আমি তো স্তম্ভিত। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, নিলয় চোখ পাকিয়ে আদিদাসকে ভস্ম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে বেচারাও হকচকিয়ে গেছে। আদিদাসকে যে যা-ই দোষ দিক, সে অভিনয় করতে পারে, ভান করতে পারে, এটা তার সেরা শত্রুরও মাথায় আসবে না। মাথাটাই আদিদাসের উইক পয়েন্ট।
শব্দটা টেলিফোনের। এবং সেটা নির্ঘাত–অবশ্যই-সার্টেনলি ঝন্টুমামার ঘরে বাজছে। প্রায় তিন বছর যার কোনও ইনকাম নেই, সে হঠাৎ টেলিফোন কানেকশন নিল..
নিলয় অনেকটা আপন মনেই যেন বিড়বিড় করে বলল, হয়তো বছর চার-পাঁচ আগে অ্যাপ্লাই করেছিল…
টেলিফোনের রিং বন্ধ হওয়ামাত্র ঝন্টুমামার গলা শোনা গেল। শুধু শোনা গেল নয়, ঝন্টুমামার হ্যালোগুলো যেন হুংকারের মতো। ঝন্টুমামা যতই গলা চড়ান, অপর প্রান্তে তার কোনও প্রভাব পড়ছে না।
আমরা ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ঠিক তখুনি বেজায় রেগে ঝন্টুমামা রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন।
ধুস–আর ঘোল খাব না।–আমাদের উপস্থিতি টের পাওয়ার আগেই ঝন্টুমামার স্বগতোক্তি।
ঘোল!-নিলয়টা এত নিরেট বলা যায় না। প্রায় এক হপ্তার পর একজন মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তা-ও আবার লোকটা আছে নানা ঝঞ্ঝাটে। সশব্দে ঘোল বলে কেউ শুরু করে?
ঝন্টুমামা চমকে তাকালেন। পরক্ষণেই জুলপি অবধি ছড়িয়ে পড়ল হাসি, আয়। আয়! এত দিন দেখা নেই কেন!
নিলয় তবু সেই ঘোলেই আটকে আছে, ঝন্টুমামা, ঘোল না কী বললেন যেন?
আর বলিসনি। আজকালকার টেলিফোনগুলো এত পলকা!
আমি প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি বলে উঠি, ফোনটা একেবারে নতুন মনে হচ্ছে?
আর বলিসনি। একেই বলে ব্যাড লাক। পরশু দিন পেয়েছি। কিন্তু প্রথম কল পাওয়ার পরেই একেবারে ঘোল খেয়ে গেছে। আমি সব শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না।
কী ঘোল-ঘোল করছ, একটু খুলে বলো-না! অধৈর্য হয়ে পড়ে নিলয়।
ঘোল মানে ঘোল। সত্যিকার দই আর জলের ঘোল। বলিনি তোদের, আমি এখন শুধু ঘোল আর কাবাবের ওপর আছি। এর চেয়ে বৈজ্ঞানিক, পুষ্টিদায়ক এবং লঘু ব্যয়–নাঃ! তোরাও শুরু করে দে।
কিন্তু টেলিফোনের সঙ্গে ঘোলের সম্পর্কটা যে এখনও ঘোলাটে রয়ে গেল ঝন্টুমামা! নিলয় রীতিমতো উদবিগ্ন।
প্রথম কলটা ধরার সময়েই ওই মাউথপিসের মধ্যে একটু পড়ে গিয়েছিল–মানে, ঘোল। জীবনের প্রথম ফোন-মানে, নিজের ফোন বলে কথা। ফল্ট হতেই তো পারে, কী বলিস? ব্যাস! ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে গণ্ডগোল। সবচেয়ে মুশকিল হচ্ছে, টেলিফোনের লোকেরা দু-বার ঘুরে গেছে। কিছু বুঝতে পারছে না। বলছে, এরকম কেস এই প্রথম। ওদিকে সেনগুপ্ত তাতাচ্ছে। এত টাকা খরচ করে ফোন আনিয়ে তাহলে লাভ কী!
সেনগুপ্ত? নিলয় আর আমি একসঙ্গেই বলে উঠি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেনগুপ্ত। কিন্তু সেনগুপ্ত যা-ই বলুক, ফোনটা খুব উপকারী। এই যে ফোন করল, বুঝলে, আমি বাড়ি আছি। যদিও আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না। তবু, কাজ তো হল। বিশ্বাস করছিস না, দেখ-না, মিনিট পনেরোর মধ্যেই সেনগুপ্ত যদি হাজির না হয় তো কী!
কে সেনগুপ্ত, কীসের এত দরকার, হঠাৎ টেলিফোন কেন–কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেননি ঝন্টুমামা। কায়দা করে এড়িয়ে গেছেন। আসুক-না, সবই তো জানতে পারবি। তার আগে সুন্দর গন্ধগুলোর দিকে বরং মন দেওয়া যাক। গন্ধ উড়ে গেলে খাবারের টেস্ট নষ্ট হয়ে যায়। চিলি চিকেন আর ফ্রায়েড রাইস তো? শুঁকেই বলে দিতে পারি।
আদিদাসেরই শুধু তখনও কাজ সাজ হয়নি, সেনগুপ্ত এসে পড়লেন। পাটভাঙা ধুতি, মাথা-গলানো ডোরাকাটা শার্টের হাত দুটোর বোতাম লাগানো নেই। ব্যাকব্রাশ-করা কাঁচাপাকা চুল। এমন খাঁটি দেশি চেহারা সত্ত্বেও ভদ্রলোককে দেখলেই সেনগুপ্ত সাহেব বলে মনে হয়। একটা বনেদিয়ানা আছে।
ঝন্টুমামা আমাদের পরিচয় দেওয়ার পর বললেন, বুঝলি আমি এখন অশোকবাবুর অ্যাডভাইজার। ফোনের কথা বলছিলি, উনিই ব্যবস্থা করেছেন। কাজের প্রয়োজনে। অশোকবাবু কলকাতার সেরা কালেক্টর। মানে পুরাদ্রব্য সংগ্রহ করেন–অ্যান্টিক নিয়ে কারবার। আর এসব লাইনে কখন যে কী দরকার পড়ে, কেউ বলতে পারে না। আমি মাঝেসাঝে ছবিটবি তুলি, একটু-আধটু পরীক্ষা-টরিক্ষা দরকার। সবচেয়ে বড় সমস্যা, কী কিনব আর কত দামে কিনব–তা-ই না অশোকবাবু?
ঠিক বলেছেন। সেই জন্যে ছুটে আসছি। একটা অদ্ভুত খবর এসেছে। ভালো কথা, আপনি কি অল্পস্বল্প ফরাসি জানেন?
ঝন্টুমামা ঘাড় নেড়ে বললেন, পড়তে পারি, বলতে পারি না।
চমৎকার! তাহলেই তো অনেকটা সুরাহা হয়ে গেল। একটা পুরোনো ফরাসি ডায়েরি এসেছে। পুরোনো মনে ১৯২৭-২৮ সালের। ফ্যান্টাস্টিক দাম হেঁকেছে। এবং সত্যি বলতে সেই জন্যেই আমার কৌতূহল হয়েছে। কার না কার লেখা ডায়েরির এত দাম! ব্যাপার কী? কালই সকালে সাড়ে আটটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছি। গ্র্যান্ড হোটেলে। মালটা আছে এক বিদেশি ট্যুরিস্টের কাছে।
ঝন্টুমামা জিজ্ঞেস করলেন, ডায়েরিটা কার লেখা তা-ই জানেন না?
আসলে খোদ মালিকের সঙ্গে তো দেখা হওয়ার উপায় নেই। বুঝতেই পারছেন যে, এর মধ্যে অনেক দু-নম্বরি ব্যাপার আছে। ওদের সব দালাল থাকে। তারাই যোগাযোগ করে জেনুইন ডিলারদের সঙ্গে। আমার সঙ্গে যে কথা বলেছে, তাকে আমি বহু দিন চিনি। একেবারেই মূর্খ। ওই যে বললাম–কনট্যাক্ট। আরও একটা কথা, চেনাজানা যতই থাক, মাল কেনার রিস্ক কিন্তু সম্পূর্ণ আমার। লোকটা ডায়েরি লেখকের একটা নাম অবশ্য বলেছিল, কিন্তু সে আমি জন্মেই শুনিনি।
মনে আছে নামটা?
মানিয়া সক্লোদে (Manys Sklodevsks) না কী যেন বলল।
কী! ঝন্টুমামার হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা খসে পড়ল। আমরা সবাই ঘুরে তাকালাম। ঝন্টুমামা যেন কিছুতেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
অশোকবাবুর মুখেই হাসি, আপনার বিস্ময় থেকেই বুঝতে পারছি জিনিসটা খুবই মূল্যবান। কী, ভুল বললাম?
উত্তেজনায় ঝন্টুমামার কথা একটু জড়িয়ে যায়, তুমি-আপনি–জানো এটা কার ডায়েরি! মানিয়া মানেই মারিয়া…।
ঝন্টুমামা কথা থামিয়ে আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, মাদাম কুরি–মেরি কুরির ওইটাই আসল নাম।
কয়েক মুহূর্ত সবাই চুপ। শেষে অশোকবাবু বললেন, টাকার জোগাড় আমি করেছি। এক লক্ষ ক্যাশ চেয়েছে। সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে। ওইখানেই ডিসিশন নিতে হবে, নেব কি নেব না।
ঝন্টুমামা বললেন, ঠিক আছে। আমি তৈরি থাকব।
আমি বললাম, আমরা কি সঙ্গে যেতে পারি?
অশোকবাবু বললেন, সেটা ওরা অ্যালাউ করবে না। একজন এক্সপার্ট অবধি ঠিক আছে।
ঝন্টুমামা বললেন, অশোকবাবু, আপনি এদের একটু বাড়িতে পৌঁছে দিন এখন। আমাকে এখুনি একটা কাজে বেরোতে হবে।
সাড়ে আটটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট জেনেও ন-টার মধ্যেই আমি আর নিলয় ঝন্টুমামার বাড়ি হাজির। ফেরামাত্র ধরতে হবে। বেশিক্ষণ বসতে হয়নি। সাড়ে নটা নাগাদ ফিরলেন দু জনে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মুখে কাজ হাসিলের হাসি।
পেয়েছেন ডায়েরিটা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
নিলয় বলল, এক লাখই লাগল?
অশোকবাবু ও ঝন্টুমামা আরেকবার নিজেদের মধ্যে হেসে নিলেন।
অশোকবাবু বললেন, বিনি পয়সায় পাওয়া গেছে। কিছু লাগেনি।
তার মানে? জিনিসটা ভুয়ো নাকি?
মোটেই না। কিন্তু রবিনসনকে আমরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছি যে ডায়েরিটা জাল। সে কনভিন্সড়। শুধু তা-ই নয়, এই ডায়েরি যাতে অন্য কোথাও বেচতে না পারে, তার জন্যেই সেটা হস্তগত হয়েছে।
ঝন্টুমামাকে থামিয়ে দিয়ে নিলয় বলল, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল জোচ্চোররা অতি নির্বোধ হয়।
অশোকবাবু বললেন, আজ্ঞে না। অতি ধড়িবাজ। রবিনসনও এই কারবারের মাথা নয়। চুনোপুঁটি। সে-ও দালাল। বারবার তাকে আসতে হয় কলকাতায়। সে-ও ঠিক জানে না। ডায়েরিটা ভুয়ো কি না। সত্যি ভুয়ো হলে, সে কথা জানাজানি হোক, মোটেই চাইবে না সে।
কিন্তু ভুয়ো বলে বোঝলেন কী করে?
ঝন্টুমামা হাসলেন। পকেট ক্যালকুলেটরের মতো একটা যন্ত্র বার করে বললেন, এটা একটা আধুনিক গাইগার কাউন্টার। এর শুড়টা যে-কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থের সামনে ধরলেই যন্ত্র সচল হয়ে তেজস্ক্রিয়তার মান জানিয়ে দেয়।
বুঝলাম। কিন্তু তাতে কী হল?
হল এইটাই যে, ডায়েরির সঙ্গে গুঁড়টা ঠেকিয়ে দেখিয়ে দিলাম সেটা তেজস্ক্রিয় নয়। আসলে একটা চোরা সুইচ টিপে তখনকার মতো যন্ত্রটাকে অচল করে রেখেছিলাম। তারপর একটা বই খুলে দেখিয়ে দিলাম যে, মেরি কুরির মৃত্যুর কারণ ছিল তেজস্ক্রিয়তা এবং তাঁর ডায়েরিও যে তেজস্ক্রিয়, সে কথাও স্পষ্ট করে লেখা আছে।
তারপর?
তারপর আর কী! ভয় দেখানো হল। জাল ডায়েরিটা নিয়ে অন্যদের বধ করবে, তা চলবে না। সুড়সুড় করে দিয়ে দিল।
ঝন্টুমামা চামড়া দিয়ে মোড়া ডায়েরিটা সন্তর্পণে টেবিলের ওপর রেখে গাইগার কাউন্টারের শুড় ঠেকাতেই সবুজ ডিজিটাল হরফগুলো দেখা দিতে শুরু করল পর্দার ওপর।
ঝন্টুমামা বললেন, অশোকবাবু, কালই তাহলে এটা প্যারিসের ইন্সটিটিউট অব রেডিয়ামে ফেরত পাঠানো দরকার। এখান থেকেই কেউ-না-কেউ এটা হাতসাফাই করেছিল।
অশোকবাবু বললেন, একশোবার। তবে তার আগে একটা ভালোমতো ইনশিয়োর করিয়ে নিতে হবে।
নিলয় আমার দিকে তাকাল। বুঝলাম, ও বলতে চাইছে যে, এতক্ষণে বোঝা গেল, সেনগুপ্তর সঙ্গে ঝন্টুমামার এত জমেছে কেন! এরা করবে ব্যাবসা!
[কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, জানুয়ারি ১৯৯১]