1 of 2

মাথার বালিশ – উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়

মাথার বালিশ – উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়

অভিমান রসজাতীয় পদার্থ, যা অল্প একটু নাড়া পেলে মাত্রা ছাড়িয়ে ফেনিয়ে ওঠে। নাড়া যদি পায় এক, ত’ ফেনিয়ে ওঠে আট। আর মন্থনদণ্ডটি যদি কল্পনার অবাস্তব কাঠে তৈরি হয় তা হলে তো কথাই নেই। কঠিন মৃত্তিকার ওপর অট্টালিকা নির্মাণ করতে হলে অনেক মাল-মশলা, কাঠ-খড়, অনেক শ্রম এবং সময়ের প্রয়োজন; আকাশ-সৌধ রচনার কার্যে ভিত খোঁড়ার বালাই নেই, ফুঁয়ের মুখেই সৌধ আপনা-আপনি গজিয়ে ওঠে।

অপলার মনে সেই রকম একটা অকারণ অভিমানের মেঘ আবির্ভূত হয়ে ধীরে ধীরে তার সমস্ত অন্তরকে ধূসর করে দিতে উদ্যত হয়েছে। কিছুদিন থেকে সে মনে করতে আরম্ভ করেছে, স্বামীর জীবনের হিসেবের খাতায় সে শুধু একটা খরচের অঙ্ক, না দিতে পারলে স্বামীর বংশে একটি সন্তান, না আনতে পারলে স্বামীর সংসারে কিছু অর্থ। সে শুধু ব্যয় করাবারই যন্ত্র, উৎপাদন করবার নয়।

সন্তানের বিষয়ে অপলা তার সাতাশ বৎসরের বয়সে একেবারে হতাশ হয়নি; চল্লিশ বৎসর বয়সেরও কাছাকাছি প্রথম সন্তান উৎপাদন করেছে এমন দু-একটি স্ত্রীলোকের কথা তার জানা আছে। আর সে কথা কখনও যদি বা ওঠে, স্বামী শঙ্করনাথ এক ফুৎকারে তা উড়িয়ে দেয়। একবার সে বলেছিল, ‘শোন পলা, এ কুণ্ঠা তুমি অকারণ ভোগ কর। তুমি যে আমার সংসারে বেগুনগাছ হয়ে না এসে গোলাপগাছ হয়ে এসেছ, সে জন্যে আমার মনে কোনও ক্ষোভ নেই। গোলাপফুলের চেয়ে বেগুনভাজা আমার ভাল লাগে, আমাকে এত বড় পেটুক মনে করলে আমার প্রতি গুরুতর অবিচার করা হবে।’

আর একবার বলেছিল, ‘বংশলোপের দুর্ভাগ্যের কথা তুমি তুলেছ, কিন্তু বংশ মানে বাঁশও হয় সে কথা ভুলো না। সুতরাং সন্তান যদি শুধু বংশধর না হয়ে বংশধারীও হন, তা হলে বংশ হয়তো রক্ষা পায়, কিন্তু পূর্বপুরুষের মাথা চুরমার হয়ে যায়। তোমার মেজ পিসেমশায়ের একমাত্র বংশধরের কথা মনে করো। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ছিল ভাল, একথা তোমার মেজ পিসেমশায় হাড়ে হাড়ে বুঝছেন।’

এ সব কথা ঠিক, এ সব কথা অপলা নিজেও খানিকটা বোঝে। তা ছাড়া, সন্তান-উৎপাদনের বিষয়ে এখনও সে একেবারে হতাশ হয়নি। কিন্তু অর্থ সংক্রান্ত যে বেদনা তার অন্তরকে উত্তরোত্তর আচ্ছন্ন করে চলেছে, তা থেকে মুক্তিলাভের কোনও পথ সে খুঁজে পাচ্ছে না। আয়ু যদি দীর্ঘ হয় তা হলে এখন বহুকাল অন্নবন্ত্রের জন্য স্বামীর কাছে হাত পাতা ছাড়া উপায় থাকবে না। স্বামী অকরুণ হলেও পাততে হবে।

একথা বিশেষ করে মনে হয় স্বামীর দুটি বন্ধুপত্নী অনীতা ও আরতির কথা ভেবে। অনীতা টাটার কলকাতা অফিসে চাকরি করে, আর আরতি কলকাতার একটা কলেজের অধ্যাপিকা। তাদের দুজনেরই মাসিক আয় দুশো টাকার কম নয়। মাসে মাসে কতই বা তাদের পিছনে খরচ হয়; পঞ্চাশ, ষাট, আশি, একশো; বড় জোর দেড়শো? তবু প্রতি মাসে তাদের স্বামীদের পঞ্চাশ টাকার কৃতজ্ঞতা বহন করতে হয়। অনীতা-আরতিদের সংসার চলে যৌথ বল্গার তাড়নায়। আর, তাদের?

তাদের সংসার-রথে একটি ঘোড়া, এক সারথি। আর সেই রথের মধ্যে স্বর্ণে-রত্নে-ভূষিতা বিনা টিকিটের এক কুণ্ঠিতা যাত্রিণী।

স্বামীর প্রতি একটা তীক্ষ ক্রুদ্ধ অভিমানে অপলার অন্তরিন্দ্রিয় পীড়িত হয়ে ওঠে। তুমি যখন অনীতা-আরতি আর তাদের স্বামীদের উপযুক্ত বিদগ্ধ অভিজাত সমাজের মানুষ, তা হলে কেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে একটা নন-ম্যাট্রিক মেয়েকে ধরে এনে তোমার সংসারে অনুগ্রহপীড়িতা আশ্রিতা করে রেখে এমন নিঃস্বত্ব করে দিচ্ছ?

প্রশ্নটা একদিন অপলা শঙ্করনাথের কাছে সরাসরি উত্থাপিত করল।

শঙ্করনাথের কাঠের বিস্তৃত কারবার। মধ্য-ভারতের একটা সেগুনবনের ইজারা চুক্তি নিয়ে সমস্ত দিন বাদানুবাদে কেটেছে। তবুও সুবিধামত শর্তে ইজারা পাওয়া গিয়েছে বলে মনটা আছে প্রফুল্ল।

অফিস থেকে ফিরে চা-খাবার খেয়ে সে যথারীতি দক্ষিণ দিকের বারান্দায় একটা ইজি-চেয়ারে হেলান দিয়ে সিগার ধরিয়েছিল। অপলা এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তার কাছে বসল।

খাড়া হয়ে উঠে বসে স্নিগ্ধ কণ্ঠে শঙ্কর বললে, ‘এস।’

এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অপলা বললে, ‘একটা কথার উত্তর দেবে?’

পাশের টিপয়ের উপর অ্যাশট্রের খাঁজে সিগারটা স্থাপন করে শঙ্কর বললে, ‘নিশ্চয় দোব।’

‘আচ্ছা, কিসের জন্যে তুমি আমাকে বিয়ে করেছিল?’

‘একটি সুন্দরী সুলক্ষণা মেয়ের আঁচলে সংসারের চাবি বেঁধে দিয়ে নিশ্চিন্ত হবার জন্যে।’

মাথা নেড়ে অপলা বললে, ‘সে কথা বলছিনে; কী দেখে করেছিলে?’

‘যা দেখে করেছিলাম, তা তো তুমি আয়নার সামনে দাঁড়ালেই দেখতে পাও।’

‘সেইখানেই ভুল করেছিলে; তুমি গুণী মানুষ, গুণ দেখে তোমার বিয়ে করা উচিত ছিল। তোমার বন্ধু বিপিনবাবুর স্ত্রী অনীতার মতো একটি বউ হলে তুমি সুখী হতে।’

‘কিন্তু অনীতার মতো বউ না হওয়ায় আমি যে আরও সুখী হয়েছি।’

মাথা নেড়ে অপলা বললে, ‘হওনি। তুমি অতিশয় ভদ্র আর মহৎ, তাই বলছ কিংবা ভাবছ, হয়েছ। আসলে হয়েছ অসুখী।।’

অল্প একটু হেসে শঙ্কর বললে, ‘তুমি যখন আমার বিষয়ে আমার নিজের চেয়ে বেশি জান আর বোঝ, তখন কী আর বলব বল? কিন্তু আমি অসুখী, সে কথা তুমি জানলে কী করে?’

‘অনীতার বিষয়ে তোমার বিশেষ একটা শ্রদ্ধার ভাব দেখে। সে শ্রদ্ধা নিশ্চয়ই অনীতা উপার্জনশীল আর আত্মনির্ভরক্ষম বলে।’

‘বিপিন তোমাকে শ্রদ্ধা করে?’

‘করেন।’

‘কিসের জন্যে?’

‘আমি তোমার স্ত্রী বলে।’

‘সে শ্রদ্ধার কি কোনও মূল্যই তুমি দাও না?…আচ্ছা, না হয় নাই দিলে চাকরি করে অনীতা কি খুব সুখী?’

‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই সুখী; তার কথাবার্তা থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।’

‘বিপিন?—বিপিন সুখী?’

‘হিসেবমত তো তাঁর সুখী হবারই কথা।’

মৃদু হেসে শঙ্কর বললে, জীবনের হিসেব অত সরল নয় পলা। যে অক্ষম লোকের উপার্জন যথেষ্ট বেশি নয় বলে ট্রামে-বাসে ঠেলাঠেলি করে আপিস গিয়ে দশটা-পাঁচটা কলম পেযার দুর্ভোগ থেকে স্ত্রীকে রেহাই দিতে পারে না, সে কোন হিসেবে সুখী হয় বল? সুখী আমি,—কারণ সারাদিন আপিসে খেটে-খুটে ঝালাপালা হয়ে বাড়ি এসে তোমার তাজা মুখের মিষ্টি হাসি দেখে জুড়তে পারি। সাতটার সময়ে বাড়ি ফিরে আমাকে যে শুনতে হয় না রাত নটা পর্যন্ত টাটা কোম্পানিতে তুমি ওভারটাইম করবে বলে তখনও বাড়ি ফেরনি, সে জন্যে আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।’

এ কথার উত্তর না দিয়ে অপলা চুপ করে রইল।

শঙ্করনাথ পুনরায় কথা আরম্ভ করলে; বললে, ‘আমি কি তোমাকে উপেক্ষা অনাদর করি বলে মনে কর অপলা?’

মাথা নেড়ে অপলা বললে, ‘না। বরং আদরের বাড়াবাড়িই কর।’

‘তবে?’

‘সে বাড়াবাড়ির মধ্যে আমি তোমার করুণারই পরিচয় পাই, শ্রদ্ধার পাইনে।’

উত্তর শুনে চিন্তিত হল শঙ্করনাথ। এ তো সহজ বাতিক নয়, এ থেকে আর এক পা বাড়ালেই হয়তো বাতুলতা। পাগল হবার একটা পথ হচ্ছে এই রকম দুরপনেয় অপচিন্তার বাতিক, সে কথা সে ভাল করেই জানে। বললে, ‘আচ্ছা, তুমি যদি হঠাৎ এমন উপার্জনশীল হয়ে ওঠ যে, শুধু অনীতার কেন, আমার উপার্জনকেও বহু গুণে ছাড়িয়ে যাও, তা হলে আমার আদরের বাড়াবাড়ির মধ্যে শ্রদ্ধার পরিচয় পাবে ত?’

অপলা বললে, ‘আশা করি, পাব। কিন্তু এ রূপকথা সম্ভব হবে কী করে?’

শঙ্করনাথ বললে, ‘বেশি দেরি হবে না, কালই সম্ভব হতে পারে। তুমি জান, আলো-ছায়া সিনেমা স্টুডিওর মালিক ইন্দ্র আইচ আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তোমাকে তার স্টুডিওর বাঁধা আর্টিস্ট করে দিলে হাজার টাকা মাসোহারা আর ছবি প্রতি বিশ-পঁচিশ হাজার টাকা—এ আমি তোমাকে লিখে দিতে পারি। দশ বছরের কন্ট্রাক্ট করিয়ে দোব।’

‘সাতাশ বছরের বুড়িকে ইন্দ্র আইচ অত টাকা দিয়ে সিনেমা-আর্টিস্ট করবে কেন?’

‘সাতাশ বছর তোমার বয়েস, দেখায় তোমাকে বাইশ বছরের মতো, মেক-আপ করলে তোমাকে দেখাবে সতের বছরের তরুণী। সিনেমা-গগনে তোমার উদয় হলে অনেক তারকা অস্তমিত হবে। বল তো কালই তোমাকে হাজার টাকা আগাম এনে দিই। তুমি বলছিলে এবার অনীতার টাকায় অনীতারা পুজোর ছুটিতে দীঘায় যাবে। চল, তোমার টাকায় আমরা কাশ্মীরে বেড়িয়ে আসি। …ব্যবস্থা করব?— করবে সিনেমা।”

প্রবলভাবে মাথা নেড়ে অপলা বললে, ‘মরে গেলেও না।’

প্রফুল্ল মুখে শঙ্করনাথ বললে, ‘উঃ, বাঁচিয়েছ পলা। তুমি যদি বলতে করবে, তা হলে আমাদের সংসারে একটা বিপর্যয় ঘটে যেত।’

সকৌতূহলে শঙ্করনাথের প্রতি দৃষ্টিপাত করে অপলা জিজ্ঞাসা করলে, ‘কী বিপর্যয়?’

‘আমার সাধের গোলাপগাছ বেগুনগাছে পরিণত হত।’

অপলা বললে ‘অ্যাশট্রের ওপর তোমার সিগারটা নিভে গেছে, ধরিয়ে নাও।’ বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

অ্যাশট্রে থেকে সিগারটা তুলে নিয়ে শঙ্কর বললে, ‘শোন পলা, তুমি আমার একটা ভার, তুমি আমার জীবনে খরচের অঙ্ক, তুমি অর্থ উপার্জন করো না বলে তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধার অভাব—এই সব কথা যে তুমি আমাকে মাঝে মাঝে শোনাও—এ সব কথা একেবারে বাজে। তুমি আমার অত্যন্ত ভালবাসার আর আদরের স্ত্রী, তোমার প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। শ্রদ্ধার সঙ্গে যত্নের সঙ্গে তোমাকে পালন করতে ধৰ্মত আমি বাধ্য। তুমি ভুলে যাও, বিয়ের রাতে ঐ মন্ত্র পড়ে ঐ শর্তে আমি তোমাকে গ্রহণ করেছি।’

অপলা বললে, ‘ও সাবেক-কেলে মন্ত্র, এ কালের নতুন মন্ত্রের কাছে অচল।’

অপলা প্রস্থান করলে সিগারটা ধরিয়ে শঙ্করনাথ পুনরায় চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল। মনে করলে, মুখে অপলা যাই বলুক না কেন, আজকের বাদানুবাদে কিছু পরিবর্তন হয়তো হবে।

পরিবর্তন অবশ্য হল, কিন্তু অতির দিকে। অপলা আরও স্তব্ধ, আরও অসাড় হয়ে গেল; মনের মাপকাঠিতে সে ক্রমশ দূর হতে দুরান্তরে সরে যেতে লাগল। আহারে রুচি নেই, মুখে হাসি নেই, চোখে ঘুম কম।

শঙ্করনাথ চিন্তিত হল।

একদিন অপলাকে মিলের কোরা কাপড় পরে থাকতে দেখে বললে, ‘এ কী পলা! এ কাপড় পরেছ কেন?’

অপলা বললে, ‘কেন, এ কাপড় মন্দ কী? তাঁতের শাড়ির চেয়ে জোড়া-পিছু দশ বারো টাকা দাম কম।”

মাস-কাবারে দুধের হিসেব করতে গিয়ে শঙ্করনাথ দেখে প্রতি মাসে দুধের যে পরিমাণ টাকা লাগে, তার চেয়ে বারো-তেরো টাকা কম। অপলাকে ডাকিয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে।

অপলা বললে, ‘আমার জন্যে যে দিনে আধ সের করে দুধ নেওয়া হত, গত মাস থেকে আমি সেটা বন্ধ করে দিয়েছি।’

‘কেন?’

‘তবু তো সংসারের কিছু খরচ কমল।’

‘ও।’ গোয়ালার খাতাখানা টেবিলের ওপর স্থাপিত করে শঙ্কর বললে, ‘ওই চেয়ারটায় একটু বোস। কথা আছে।’

চেয়ারে উপবেশন করে অপলা উৎসুক নেত্রে শঙ্করের দিকে চেয়ে রইল।

শঙ্কর বললে, ‘তুমি তো মন্ত্রকে সেকেলে বলবে, ন্যায়-নীতিকে মানবে না; কিন্তু আধুনিকতম উপায়ে যদি প্রমাণ পাও, সে প্রমাণকে স্বীকার করবে তো?’

‘কিসের প্রমাণ?’

‘তোমার খোরাক-পোশাক ভরণ-পোষণের জন্যে যে অর্থটা আমি মাসে মাসে খরচ করি, সেটা আমার অনুগ্রহ নয়, তোমার আপন পাওনা,—তার প্রমাণ।’

‘কী করে সে প্রমাণ পাব?’

‘তুমি আমার নামে আদালতে জুডিশিয়াল সেপারেশনের নালিশ করে খোরাক-পোশাকের মাসোহারা দাবি কর, তা হলেই প্রমাণ পাবে। যে টাকা তোমার আইনসম্মত পাওনা বলে আদালত স্থির করে দেবে, তুমি দেখবে সে টাকাটা, আমি যা তোমার বাবদ মাসে মাসে খরচ করি তার চেয়ে কম হবে না, বরং বেশিই হবে। আর সে টাকা যখন মন্ত্রপড়ার জোরে নয়, সম্পূর্ণ আধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আদায় করা টাকা, তখন তা নিতে তোমার কুণ্ঠা হবে না।…এ রকম আপন ঘরে পরের মতো পাহাড় সমান সঙ্কোচ নিয়ে বাস করার কোনও মানে হয় না পলা। দাও তুমি জুডিশিয়াল সেপারেশনের দরখাস্ত দায়ের করে।’

‘জুডিশিয়াল সেপারেশন কী? বিবাহ-বিচ্ছেদ?’

ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে শঙ্করনাথ বললে, ‘না, না, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ঠিক বজায় থাকবে, শুধু স্বাধীনভাবে আলাদা আলাদা থাকা চলবে।’

‘পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা থাকবে?’

‘থাকতে পারে, তবে খুব সংযত ভাবে। এই ধর, তখন আর আমার তোমাকে পলা বলে ডাকা চলবে না।’

‘তা হলে কী বলে ডাকবে?’

‘মিসেস চ্যাটার্জি বলে ডাকলেই ভাল হবে; নইলে অপলা দেবী, বড় জোর অপলা।’

‘আর, আমি তোমাকে কী বলে ডাকব? মিস্টার চ্যাটার্জি?’

‘তাই ডাকলেই দেখতে-শুনতে ভাল হবে,—তবে ‘ওগো’ বলে ডাকা কিছুতেই চলবে না। জুডিশিয়াল সেপারেশনের পর ‘পলা’ আর ‘ওগো’ একই ভাবে অচল।’

এক মুহূর্ত মনে মনে কী চিন্তা করে অপলা বললে, ‘ধর, আমি যদি জুডিশিয়াল সেপারেশনের জন্যে দরখাস্ত করি, তুমি কোনও রকম আপত্তি তুলবে না?’

অল্প একটু হেসে শঙ্করনাথ বললে, ‘জুডিশিয়াল সেপারেশন তো সামান্য কথা, তুমি যদি ডাইভোর্সের জন্যে মামলা কর, তা হলেও আমি আপত্তি তুলব না।’

‘কেন?’

‘তুমি চাইলে, অদেয় আমার কিছুই নেই, বোধ হয় সেই জন্যে।’ এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে শঙ্কর বললে, ‘ও আর কথা নেই পলা, দরখাস্ত দায়ের করে দাও। তোফা নিজ নিজ খেয়াল-খুশিমত বাস করা যাবে, পরস্পরের ওপর তম্বি করা আর চলবে না।…তোমার তো কোনও অসুবিধে নেই এ ব্যাপারে।’

‘কেন?’

‘দেবেনকে বল, অতুলবাবুকে দিয়ে সে সব ব্যবস্থা করে দেবে।’

দেবেন অপলার ছোট ভাই, আলিপুরের উকিল অতুলকৃষ্ণ চক্রবর্তীর মুহুরি।

ভূমিতলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মৃদুকণ্ঠে অপলা বললে, ‘দেখি।’

দিন পাঁচেক পরে সন্ধ্যার পর শঙ্করনাথ দক্ষিণ দিকের বারান্দায় বসে সিগার ধরিয়েছে, অপলা এসে কাছে বসল।

অপলার দিকে দৃষ্টিপাত করে শঙ্কর বললে, ‘কী খবর পলা? দেবেন দরখাস্তের ব্যবস্থা কিছু করলে?’

মৃদুস্বরে অপলা বললে, ‘করেছে। অতুলবাবু রাজি হয়েছে।’ একমুহূর্ত অপেক্ষা করে বললে, ‘তুমি সেদিন বলেছিল, দেবেন আছে—আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু কী অসুবিধে যে তাকে নিয়ে হয়েছিল তা আর কী বলব!’

‘কেন?’

‘তোমাকে সে কত ভালবাসে জান তো! দরখাস্তের কথা শুনে প্রায় কেঁদেই ফেললে। এ ব্যাপারে বোধহয় আমার চেয়ে সে বেশি কাতর হয়েছে।’

‘তোমার চেয়ে বেশি কাতর হয়েছে? তা হলে তুমিও খানিকটা কাতর হয়েছ না কি?’ হা-হা করে উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠে শঙ্করনাথ বললে, সাবধান পলা! বাদিনী হতে চলেছ, প্রতিবাদীর সঙ্গে সাবধানে কথা কয়ো। যে কথা তুমি বললে সে কথা কোনও রকমে মামলার নথিপত্রে ঢুকলে তোমার মামলা খানিকটা দুর্বল হবে। তোমার বলা উচিত ছিল, আমার জায়গায় অন্য কোনও লোক হলে তার যতটা কাতর হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়েও কাতর হয়েছিল দেবেন।’

নিঃশব্দে শঙ্কর সিগার টানতে লাগল।

ক্ষণকাল পরে অপলা বললে, ‘আমার কিছু টাকার দরকার। তুমি দেবে?—ধার? পরে শোধ করে দোব।’

‘কেন, টাকার এমন কী দরকার পড়ল যে, ধার করতে হবে?’

‘দরখাস্ত করতে হবে, তার খরচ আছে।’

‘সে আর কত! তোমার নিজের নামে ব্যাঙ্কে তো হাজার দুয়েক টাকা আছে, তাই থেকে তো করতে পার।’

‘সে টাকা তোমার অ্যাকাউন্টে জমা করে দিয়েছি।’

‘ও!…তা হলে কত দোব? পাঁচশো?’

মাথা নেড়ে অপলা বললে, ‘না, না, অত দরকার হবে না। শ দুয়েক হলেই হবে।’

শঙ্কর বললে, ‘দু শ টাকায় কুলোতে পারবে না। যত সামান্যই হক না কেন, করতে চলেছ মামলা। বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা। প্রতি হাতে টাকা খরচ করতে হবে। মামলা ছাড়া অন্য খরচও তো আছে। পরে সুবিধেমত মাসে মাসে পঁচিশ টাকা করে দিয়ে টাকাটা শোধ কোর।’

‘আচ্ছা।’

যথাসময়ে অপলার জুডিশিয়াল সেপারেশনের দরখাস্ত দায়ের হয়ে গেল আদালতে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদী শঙ্করনাথের জবাবও। জবাবে শঙ্করনাথ দরখাস্তের সব-কিছুই মেনে নিয়েছিল, আপত্তি করেছিল শুধু বাদিনীর প্রার্থিত আড়াই শ টাকা মাসোহারার পরিমাণে।

মকদ্দমার তারিখের দিন সকালে শঙ্করনাথ অপলাকে বললে, ‘আজ মামলার তারিখ, মনে আছে তো?’

অপলা উত্তর দিলে, ‘আছে।’

‘তোমার উকিল অতুলবাবু যা-যা বলতে বলেছেন, বেশ গুছিয়ে বোল; বোল, স্বামীর দুর্ব্যবহারে আমার জীবন দুর্বহ হয়ে উঠেছে, আর কিছু দিন একত্রে থাকলে দম আটকে মারা যাব। খবরদার, বেফাঁস কোনও কথা বোল না। কাজটি গুছিয়ে নিয়ে তারপর অন্য কথা।’

কোনও কথা না বলে অপলা চুপ করে রইল।

শঙ্কর বললে, ‘আর দেখ, লজ্জা-মান-ভয় তিন থাকতে নয়। জবানবন্দি দিতে কাঠগড়ায় উঠে ও তিন বালাইকে একদম বাদ দিয়ে চোল।

চকিত হয়ে উঠল অপলা: ‘আমাকে কাঠগড়ায় উঠতে হবে না কি?’

স্মিতমুখে শঙ্করনাথ বললে, ‘তা একটু হবে বইকী। পল্টন হবে অথচ লাইনে যাবে না, এ কী রকম করে হয়?…আর দেখ, কাঠগড়ায় থাকার সময়ে সত্যিমিথ্যে বলে কিছু থাকে না, যা সুবিধের তাই সত্যি। একথা মনে রাখলে বিবেক অক্ষত থাকবে।’

অপলা বললে, ‘কটার সময়ে যেতে হবে?’

‘ঠিক দশটার সময়ে। তার আগে নাওয়া-খাওয়া করে প্রস্তুত থেকো মিসেস চ্যাটার্জি।’

ফিকা হাসি হেসে অপলা বললে, ‘এরই মধ্যে নাম ছেড়ে দিলে? এখনও ত—’

শঙ্কর বললে, ‘অনুশীলন করছি, সময়ে ভুল না হয়।’ একটু থেমে বললে, ‘যা হচ্ছে, খুব ভালই হচ্ছে। বিশ্বাস ভেঙে গেলে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে থাকা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। মিষ্টত্বই যখন গেল, তখন তিক্তের কারবার করে লাভ কী বল? হৃদয়ের ক্ষেত্রে সকলের মধ্যে রফা চলে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চলে না।’

অপলা কোনও কথা কইলে না, শুধু একবার শঙ্করের দিকে চেয়ে দেখলে।

অপলাকে নিয়ে শঙ্কর যখন আলিপুর কোর্টে পৌঁছল, তখন ঠিক সাড়ে দশটা।

শঙ্কর গাড়ি থেকে নামার পর অপলা ফুটবোর্ডে পা ফেলেছে, এমন সময়ে দেবেন ছুটে এসে বললে, “দিদি, তুমি এখন গাড়িতেই বোস। অতুলবাবু কোর্টে এলে এখানে এসে তোমার সঙ্গে দু-চারটে কথা কইবেন। মামলা উঠতে এখনও দেরি আছে।’

শঙ্কর বললে, ‘তোমার নিজের মক্কেলের ব্যবস্থা তো খাসা করলে দেবু, কিন্তু তোমার প্রতিবাদী-মক্কেল বেচারা এখন কী করবে? মাঠে চরে বেড়াবে না কি?’

স্মিতমুখে দেবেন বললে, ‘আপনিও না-হয় গাড়িতে উঠে বসুন।’

শঙ্কর বললে, ‘ক্ষেপেছ! বাদিনী আর প্রতিবাদীকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখলে হাকিম তোমার দিদির দরখাস্ত নামঞ্জুর করে দেবে। বলবে, বাদী-প্রতিবাদী হলে কী হয়, ওদের মধ্যে বাদবিসম্বাদের কোনও লক্ষণ নেই।’

ইতিমধ্যে অপলা গাড়ি থেকে পা বাড়াতে উদ্যত হয়েছে; বললে, ‘তুমি গাড়িতে বোস, আমি নেমে যাচ্ছি।’

অপলাকে বাধা দিয়ে শঙ্করনাথ বললে, ‘ভয় পেয়ো না অপলা, আমিও উঠে বসছি। হাকিম ও-কথা তুললে বলব—হুজুর, বাদিনীর পাশে বসে ওঁর সঙ্গে শেষ দুর্ব্যবহার করে নিচ্ছিলাম।’ বলে হেসে উঠল।

‘ইন ক্যামেরা’ বিচার হল হাকিমের খাস কামরায়, শুধু বাদিনী, প্রতিবাদী ও উভয়ের নিজ নিজ উকিলের উপস্থিতিতে।

হাকিম বললে, ‘মিস্টার চ্যাটার্জি, আপনি তো আপনার স্ত্রী মিসেস চ্যাটার্জির দাবি একরকম পুরোপুরি মেনে নিয়েছেন। কনটেস্ট করছেন শুধু মাসোহারার পরিমাণে?’

শঙ্করনাথ বললে, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ সার।’

‘আপনার মতে মাসোহারা কত হতে পাবে?’

একমুহূর্ত চিন্তা করে শঙ্কর বললে, ‘সওয়া দুশো টাকার বেশি নয়।’

বিস্মিত কণ্ঠে হাকিম বললে, ‘মাত্র পঁচিশ টাকার জন্যে আপনার আপত্তি?’

উত্তর দিলে অপলার উকিল অতুল চক্রবর্তী; বললে, ‘ওটা নামকাওয়াস্তে আপত্তি হুজুর। উনি বিরাট কারবারী মানুষ, হিসেবপত্র ভাল রকমই বোঝেন, উনি জানেন, যে-স্টাইলে উনি ওঁর স্ত্রীর ব্যয়ভার বহন করেন সে হিসেবে মাসিক আড়াইশো টাকার রেহাই পেয়ে উনি লাভবানই হবেন।’

শঙ্করনাথ বললে, ‘আমি লাভবান হতে চাইনে, লোকসান করতেও ইচ্ছে করিনে; আইন এবং আদালতের মতে যদি আড়াইশো টাকাই ন্যায্য হয়, আমার তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই।’

দু-চার মিনিট বাদানুবাদের পর অপলার মাসোহারা আড়াইশো টাকাই নির্ধারিত হল।

হাকিমের খাস কামরা থেকে নির্গত হয়ে অপলা শঙ্করনাথের মোটরকারের নিকট উপস্থিত হল। ড্রাইভার তাড়াতাড়ি এসে দরজা খুলে দিয়ে সরে দাঁড়াল।

ভিতরে প্রবেশ করে অপলা এক পাশে সরে বসল।

শঙ্কর জিজ্ঞাসা করলে, ‘এখন কোথায় যাবে তুমি?’

অপলা বললে, ‘বাড়ি যাব।’

‘কোন্ বাড়ি?’

‘কেন, আমাদের বাড়ি?’

‘না, বাপের বাড়ি যেতেও পারতে।’

‘ডিক্রি পেয়েছি, সেই সুসংবাদ দিতে?’

‘না, এমনি।’

এক মুহুর্ত গভীরভাবে চিন্তা করে অপলা বললে, ‘ও! তোমার বাড়িতে আমার বুঝি আর যাওয়া চলবে না?

‘পাগল। খুব চলবে। বাপের বাড়িতে থাকলে তোমার কষ্ট হবে। আগে সুবিধামত একটা ফ্ল্যাট-ট্যালট যোগাড় হোক, তারপর কথা।’

শঙ্কর ও অপলার মধ্যে কথাবার্তা আরম্ভ হতে ড্রাইভার দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। শঙ্কর বললে, ‘ড্রাইভার, মাকে বাড়ি নিয়ে যাও।’ বলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলে।

ব্যগ্রকণ্ঠে অপলা বললে, ‘তুমি যাবে না?’

হাসিমুখে শঙ্কর বললে, ‘আমার অফিস নেই? এখান থেকে অফিস যাব। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরব।’

অপলা বললে, ‘বেশ তো, তোমাকে আমি অফিসে নামিয়ে দিয়ে যাই।’

মাথা নেড়ে শঙ্কর বললে, ‘না। এখানে একটা কাজ সেরে তারপর যাব।’

‘কিসে যাবে?’

‘ট্যাক্সিতে।’

মামলা হয়ে যাওয়ার দিন দশেক পরে একদিন শঙ্কর অপলাকে বললে, ‘একটা ফ্ল্যাট যোগাড় করেছি।’

অপলা জিজ্ঞাসা করলে, ‘কোথায়?’

‘গোয়াবাগানে।’

‘অত দূরে আমি যাব না।’

‘কিন্তু তোমার বাপের বাড়ির ত খুব কাছে।’

‘তা হোক, ও-দিকে আমি যাব না।’

‘কোন দিকে চাও?’

‘বালিগঞ্জে হলেই ভাল হয়; বড় জোর ভবানীপুর।’ এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে অপলা বললে, ‘দেখ, আমার শরীরটা ভেতরে ভেতরে ভারি খারাপ হয়ে গেছে। আমি তো একেবারে সবচেয়ে দূরের ঘরে আমার ব্যবস্থা করে নিয়েছি, তবে তোমার এত তাড়া কেন? এক বাড়িতে থাকা কি খুব খারাপ দেখাচ্ছে?

মাথা নেড়ে শঙ্কর বললে, ‘না, না, একটুও খারাপ দেখাচ্ছে না। তাড়া নেই, তুমি থাক।’

দিন পাঁচেক পরে সন্ধ্যার পর অফিস থেকে শঙ্করনাথ যথানিয়মে দক্ষিণ দিকের বারান্দায় বসে সিগার ধরিয়েছে, অপলা এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।

তার প্রতি দৃষ্টিপাত করে শঙ্কর বললে, ‘কী খবর মিসেস চ্যাটার্জি?’

অপলা বললে, ‘আজ বিকেলে দেবু ডিক্রির নকল দিয়ে গেছে।’

শঙ্কর বললে, ‘ভাল কথা। দরকারী জিনিস, সাবধানে রেখো। ডিক্রি জারি করতে হলে দরকার হবে।’

‘জারি কী?’

‘এই ধর, আমি যদি তোমার মাসোহারা না দিই, অথবা দিতে দেরি করি, তা হলে এই ডিক্রির জোরে আমার সম্পত্তি যতটুকু দরকার নিলাম করিয়ে তুমি তোমার পাওনা আদায় করতে পারবে।’

‘ও।’

ক্ষণকাল নিঃশব্দে বসে থেকে অপলা ধীরে ধীরে প্রস্থান করলে।

রাত এগারটা। একটা ইংরেজি ম্যাগাজিন পড়া শেষ করে শঙ্কর সবেমাত্র শুয়েছে, এমন সময় দরজায় টক টক করে কয়েকবার টোকা পড়ল।

‘কে?’

বাইরে থেকে গলার শব্দ শোনা গেল, কিন্তু কার তা ঠিক বোঝা গেল না।

তাড়াতাড়ি আলো জ্বেলে দরজা খুলে শঙ্কর দেখে, অপলা দাঁড়িয়ে—বাঁ হাতে মাথার বালিশ।

শঙ্কর বললে, ‘কী ব্যাপার বল তো?’

আর্তকণ্ঠে অপলা বললে, ‘দেখ ও-ঘরে আমার ঘুম হয় না। আজ তো নটা থেকে এ পর্যন্ত একবারও চোখের পাতা বুজতে পারিনি।’

‘হাতে বালিশ কেন?’

‘এ ঘরে শুতে এলাম।’

‘শুতে এলে? কিন্তু এ ঘরে যে পালং একটা।’

‘এক পালংয়েই তো আমরা শুতাম।’

‘তা শুতাম। কিন্তু এখন শুলে তোমার ডিক্রির প্রতি একটু অসদাচার করা হবে না কি?’

‘ডিক্রি আমি পুড়িয়ে এসেছি।’

শঙ্করের মুখ উৎফুল্ল হয়ে উঠল।

‘পুড়িয়ে এসেছ? বালাই গেছে।’

অপলার হাত থেকে বালিশ টেনে নিয়ে সে শয্যার দিকে অগ্রসর হল।

অপলাও পিছনে পিছনে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলে।

১০ আগস্ট ১৯৫৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *