মাত্র একখানা থান ইট – আশাপূর্ণা দেবী
মাত্র মিনিটপাঁচেক আগে, যখন সকালের প্রথম চায়ের পেয়ালাটায় একটা চুমুক দিয়েই বঙ্কু হাঁক পেড়ে বলে উঠেছিল, “কী বউদি, চা-টা কি আজ ভুল করে চিরতার জলে ভিজিয়ে ফেলেছিলে?”… তখন কি দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিল, পাঁচ মিনিট মাত্র পরেই সে আচমকা একটা খুনের আসামি হয়ে বসে সারা পৃথিবীটাকে ফুলে-ভরা সরষের খেত ভেবে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে চোঁ চোঁ দৌড় মারবে সরষের খেত-বিহীন অন্য কোনও পৃথিবীতে গিয়ে আছড়ে পড়বার আশায়!
হ্যাঁ, আচমকা ওই খুনটা ঘটে যাওয়ার পরই দৌড় মেরেছিল বঙ্কু, আর মনে হচ্ছিল তার পিছু পিছু ধেয়ে আসছে একটা তাজা রক্তের স্রোত, বঙ্কুকে গ্রাস করে ফেলবার জন্য। ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু—
খুনটা হল কে?
ওঃ। ভাবা যায় না।
একেবারে চিরকালের পাশের প্রতিবেশী গগন গাঙ্গুলি! তিনপুরুষে পাশাপাশি বাস করার সূত্রে বঙ্কুর বাবা সত্যহরি সরকার যাঁকে ‘দাদা’ বলে এসেছেন, আর বঙ্কুবিহারী জ্ঞানাবধিই ‘জেঠু’ ডেকে এসেছে। সত্যহরি নেই, তাঁর বিয়োগ ঘটেছে। থাকলে কী বলতেন তাঁর পুত্ররত্নটিকে?
কিন্তু বঙ্কুর কি কখনও খুন করবার কোনও মোটিভ ছিল?… জেঠুকে, অথবা আর কাউকে?… বঙ্কুর জানা জগতে কেউ কখনও ভাবতেই পেরেছে, বঙ্কু হেন ছেলে, এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে?
অথচ সেটাই ঘটল। আর পালিয়ে বেড়ানো বঙ্কু অহরহ মনে মনে ভেবে চলেছে, স্বর্গে চলে যাওয়া জেঠু বঙ্কুকে কি তাই ভাবছেন, না? ছিল তেমন কোনও মোটিভ!… ভাববেন নাই বা কেন?…বারে বারে কি তিনি বঙ্কুকে ওয়ার্নি-বেল দেননি? বলেননি, “ওরে বঙ্কা, ফের সেই গোঁয়ার্তুমি? তোর কপালে দেখছি খুনের দায়ে ফাঁসি যাওয়া লিখন রয়েছে।”
আর সেই তাঁকেই বঙ্কু—উঃ!
আহা, তিনি এখন আছেন কোথায়! স্বর্গে, না ইয়ে নরকে?… আঃ, ছি ছি! গগন গাঙ্গুলির মতন লোক! কিন্তু পুরুতঠাকুর যে বলে, “অপঘাতে মড়ারা স্বর্গ পায় না।” তা হলে? স্বর্গ-নরক দুটোর মাঝখানে কোনখানটায় ঠাঁই পেলেন?…
তা অপঘাতই তো! আচমকা মাথায় একখানা থান ইট এসে পড়ায় রক্তগঙ্গা হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যা হওয়ার তা হয়ে গেলে সেটাকে অপঘাত বলতে হবে না?
উঃ! সেই ইটখানা মাথায় পড়া মাত্র কী আকাশ-ফাটানো চিৎকারটাই করে বসেছিলেন চিরকালের শান্ত মানুষটা। চিৎকারটা যে এখনও আকাশ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
রাস্তাতেই কি পড়েছিলেন গগন গাঙ্গুলি। তাকে কি রাস্তা বলে? গোয়াবাগান বাই লেনের এই ব্লাইন্ড গলিটাকে কি রাস্তা বলে! সবেমাত্র নিজের বাড়ির দরজাটি থেকে বেরিয়ে গলিতে পা ফেলামাত্রই পাশের বাড়ির ছাত থেকে সবেগে ধাঁই করে এসে তেল-চুকচুকে পাকা বেলের মতো টাক মাথাটিকে ফাটিয়ে চৌচির করে দিল!
সে ইট কার?
বঙ্কুর নয়?
গগনবাবুর গগনবিদারী চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্কু ছাত থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখল!… পরক্ষণেই হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি ভেঙে নেমে এসে নিজেদের বাড়ির দরজার খিলটা খুলে রকেটের বেগে ছুট মারল!
সেই বেগটা তাকে ছিটকে একেবারে এইখানে এসে ফেলেছে!… এখন যেখানে বসে রয়েছে বঙ্কু।
এখন? শুধু বসেই নেই। একটা অজ পাড়াগাঁর খোয়াখোঁদল মেঠো রাস্তার ধারে একটা হতবিচ্ছিরি চালাঘর-এর চায়ের দোকানের সামনে বাঁশের বেঞ্চিতে বসে, পলকাটা মোটা কাচের একটা ময়লা চায়ের গেলাসে করে নিমপাতার রসের আস্বাদযুক্ত চা খাচ্ছে, মুখটা সিঁটকে সিঁটকে।
এখন বঙ্কুর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। তাদের সেই গোয়াবাগান বাই লেনের সাতকেলে পুরনো বাড়িটার দালানে, কেঠো টেবিলটার ধারে একখানা হাতলভাঙা আরও কেঠো চেয়ারে বসে বউদির হাতের চা-টায় চুমুক দিয়ে ঠাট্টা করে বলেছিল, “চিরতার জলে ভিজিয়েছ নাকি?”
সেই বঙ্কু কি এই বঙ্কু?…
যে বঙ্কু কলকাতা থেকে কে জানে কত দূরে এই একটা দেহাতি জায়গায় বসে রামতেতো চা খাচ্ছে।
জায়গাটা স্রেফ অজ পাড়াগাঁর মতো দেখতে।
অতঃপর? পালাতে হবে।… পালাতে হবে।
এখান থেকে আরও দূরে-দূরান্তরে পালাতে হবে।
এখন বঙ্কুর একটাই স্বস্তি। এই রক্তগঙ্গাটা ঘটে বসবার আগেই বঙ্কুর বাইরে বেরোবার সাজসজ্জাটি হয়ে গিয়েছিল। কাজেই চেহারায় ভদ্রস্থতা রয়েছে। একটু আগে যখন ল্যাতলেতে পায়জামা আর পিঠে জানলা-দরজাওয়ালা গেঞ্জিটা পরে বেড়াচ্ছিল, তখন যদি অমন হঠাৎ চোঁ চোঁ দৌড়টা মারতে হত, তা হলে? সে অবস্থায় রাস্তায় দেখতে পেলেই তো পুলিশে ধরত!
এখন বহির্দৃশ্যে কোনও অসুবিধে নেই।… তা ছাড়া পকেটে টাকা-পয়সাও রয়েছে কিছু। অন্যদিনের চেয়ে বরং বেশিই কিছু। কারণ, আজ বঙ্কু তার নিজের অর্গানাইজেশন গোয়াবাগান বাই লেনের কচিকাঁচাদের ফুটবল টিমের নতুন ফুটবল কেনার জন্য টাকা নিয়ে বেরোচ্ছিল।
টাকাটা আছে। তাই আর-একটু দূরে পালাতে পারবার ভরসা হচ্ছে।… কিছু না হোক, দৈনিক দু’-এক কাপ চা খেয়ে খেয়েও দু’-চারদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়।
কিন্তু এখানে হঠাৎ এসে পড়ল কেন বঙ্কু?
কেন’র কিছু নেই। দিশেহারা হয়ে চেনা পাড়া থেকে সরতে সরতে কোনখানে যেন একটা বাস-গুমটিতে ঢুকে পড়েছিল।… দেখল, এ হচ্ছে দূরপাল্লার বাস-গুমটি।
একজন কনডাক্টর চেঁচিয়ে যাচ্ছিল, “ময়নাপুর… ময়নাপুর। … লক্ষ্মীশোল… লক্ষ্মীশোল… ঘাঁটুই… ঘাঁটুই।”
বঙ্কুর কানে প্রথমটাই ঢুকে পড়েছিল, আর ঢোকামাত্রই টার্মিনাসে বসে-থাকা প্রায়-খালি বাসটার মধ্যে সেঁধিয়ে পড়ে একখানা ময়নাপুর-এর টিকিট কেটে নিয়েছিল।
ময়নাপুর বলে কোনও জায়গায় বঙ্কুর চেনা-পরিচিত কেউ আছে, এমন মনে হল না।… অতএব আত্মগোপন করার পক্ষে সুবিধেজনক। এরপর তাক বুঝে একটা ছদ্মবেশ ধারণ করে ফেলতে পারলেই আশি পার্সেন্ট সেফ!
শ্যামবাজারের মোড় থেকে বাসটা ছাড়বার খানিকটা পর থেকেই বেশ যেন গ্রাম গ্রাম ভাব দেখতে লাগল। তবে খালি বাস আর খালি রইল না। পিলপিল করে লোক উঠছে, নামছে।
বঙ্কুর ধারণা ছিল, দিগদিগন্তর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক কলকাতাতেই এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ডেলি প্যাসেঞ্জার বাবুরা, বাজারু, হাটুরে সব লোকেরা মালপত্র নিয়ে। কিন্তু কলকাতা থেকে দৈনিক এত লোক মফস্সলে আসে? কী করতে?… এতক্ষণ বঙ্কুর কানে কোনও কথা ঢুকছিল না, হঠাৎ কানে এল, “আর কী দাদা! এবার আমাদের কারখানাটিতেও তালা ঝুলল বলে।”
বঙ্কুর খেয়াল হল, ওঃ। কলকাতা থেকে বস্তা বস্তা লোক যত সব কলকারখানায় ছোটে!
এত কথা কইছে সবাই। বাবাঃ। যেন কানের মধ্যে ড্রাম বাজছে। হঠাৎ কানে এল, “ঘাঁটুই। ঘাঁটুই… ঘাঁটুইয়ে কে নামবেন? চটপট নেমে পড়ুন!”
বঙ্কু হঠাৎ কী ভেবে, অথবা কিছু না ভেবে নেমে পড়ল এই ঘাঁটুইয়ে। যেখানে বঙ্কু বাঁশের বেঞ্চে বসে চালাঘর চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে।
নাঃ। এরকম জায়গায় পুলিশ-টুলিশ আছে বলে মনে হচ্ছে না। অতএব নিরাপদ।
কিন্তু পৃথিবী কি কোনও সময় কখনও আপদশূন্য হতে পারে?
কোনওখানে কিছু না, হঠাৎ একটা মুসকোমতো লোক সেই বেঞ্চিটাতেই এসে বসল প্রায় বঙ্কুর গা-ঘেঁষে। গা-ঘেঁষে ছাড়া উপায় কী? এমন কিছু আহামরি লম্বা তো নয় সেটা।…তা ছাড়া শেষ মুড়োর দিকে বাঁশের খোঁচখাঁচ।।
তা বসল, বসল, গায়ে পড়ে কথা বলতে আসা কেন? গলাখাঁকারি দিয়ে বলে উঠল, “এখেনে এই নতুন বুঝি? ছারকে তো কই আগে দেখি নাই? এই গুপের চায়ের দোকানের সব খদ্দেরই তো আমার চেনা।”
যাক, চেনা নয়।
বঙ্কু নিশ্চিন্তভাবে বলে, “না, আগে কখনও আসিনি।”
“তো কী বাবদ আসা হয়েছে ছার?”
“ছার?”
বঙ্কু এখন লক্ষ করে লোকটা গোড়া থেকে ‘ছার, ছার’ মতোই কী একটা বলছে। ‘ছার’ মানেটা কী? ধিক্কার না?
বলে ফেলল বঙ্কু, “ছার মানে?”
“আজ্ঞে, ওই ‘বাবু’ আর কী! আজকালের ইয়ার ছেলেরা আবার বাবু ডাকটা নাকি তেমন পছন্দ করে না। তাই ছার বলা। আমার ভাগনা পদা বলে, ইস্কুলে-টিস্কুলে নাকি সমসকৃত পণ্ডিতমশাইরা পর্যন্ত পণ্ডিতমশা’র বদলে ছার শুনতে চান।”
ওঃ। সার।
বঙ্কুর ধড়ে প্রাণ আসে। বলে, “কোনও কাজেটাজে আসিনি। এমনি ধরুন— গ্রাম দেখতে…”
“ধরব? ধরব কেন ছার? বলুন গেরাম দেখতে।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই! কলকাতার ছেলে, গ্রামট্রাম তো দেখা হয় না!”
“অ। তো এখন আর গেরামের কী দেখবেন? আগের কালের গেরামের সে শোভা সোন্দর্য আছে? এখন এ হচ্ছে না শহর না মফস্সল। খেরো খিচুড়ি। কী সব গাছগাছালি ছিল। আমবাগান, জামবাগান, কাঁঠালবাগান, জামরুল, পেয়ারা ফলের বেন্দাবন। আমরা তো ছার ছেলেবেলায় বাড়িতে গেরস্তর বরাদ্দ জলখাবার খেতে টাইম পেতুম না। হনুমানের মতো শুধু গাছে চড়ে চড়ে ফলপাকুড় খেয়ে পেট ভরিয়েছি। এখন? কেউ কারও বাগানের দিকে ঘেঁষুক দিকি! কড়া পাহারা। তা ছাড়া থাকছেই বা কোথা? সব তো কেটে সাফ করে আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাটবাড়ি বানাচ্ছে। একটা পেয়ারা জোটে না ছেলেপেলের।”
বঙ্কু আর কী বলে? বলে, “তাই বুঝি?”
“তাই তো। তা ছাড়া ছেলেপুলেরাও তো আর এখন বাচ্চা থাকছে না। এইটুকু বয়েস থেকেই আচ্ছা হয়ে উঠছে।… আবার ডেরাগ না ছাইপাঁশ কী যেন ধরে। পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় জমা দেয়। বাপ-মা গার্জেনরা টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এও একটা বেবসা হয়েছে পুলিশের। যেমন, লোকেদের মাঠে চরে বেড়ানো গোরুগুলোকে ধরে নিয়ে গিয়ে গাউন্ডে জমা দিয়ে বলে এল, ‘আমার বাগানের গাছপালা খেয়ে নষ্ট করেছে।’ গোরুর মালিক তখন টাকা দিয়ে গোরু ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য।… তো ছেলেপুলেও তো আজকাল…”
কিন্তু বঙ্কুর কানে কি এসব কথা ঢুকছে? বঙ্কুর কানে বোমা দেগেছে, পুলিশ! বঙ্কুর প্রাণের মধ্যে হাজারটা বিছে কিলবিল করে উঠেছে। বঙ্কু বলে ওঠে, “এখানে— মানে এই অজ পাড়াগাঁতেও?”
“কী? কী বলছন ছার?”
“মানে বলছি, এখানেও থানাটানা, পুলিশটুলিশ আছে? এতটুকু ছোট জায়গা?”
“শোনেন কথা! পুলিশ আবার কোথায় না থাকে? তবে দরকারের সময় কি আর আসে? অকাজের সময় আসে। তবে হ্যাঁ, থানাটা ঠিক এই ঘাঁটুইতে নেই। আছে সদরে। ময়নাপুরে। তো ওই যা বললুম, এই তো সেদিনকে সামান্য একটা ভাগের পাঁচিল তোলা নিয়ে, খুড়ো-ভাইপোর সংঘর্ষ! ভাইপো এই পাঁচিল গাঁথুনির একখানা থান ইট তুলে নিয়ে খুড়োর মাথায় বসিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে ফেরার।… পুলিশ এল পরদিন। খুড়ো তখন মর্গে। ভাইপো নো পাত্তা।”
এ কী?
এসব কথা শোনাচ্ছে কেন লোকটা বঙ্কুকে? বঙ্কুর মধ্যে যে দামামা বেজেই চলেছে।… ভাইপো! থান ইট! রক্তগঙ্গা।…ফেরার!… খুড়ো আর জ্যাঠায় তফাত কী? দুই তো আঙ্কেল।… লোকটা কে? গোয়েন্দার চর?… কিন্তু এক্ষুনি, এই ক’ঘণ্টার মধ্যে গোয়াবাগান বাই লেনের খবর গোয়েন্দা-পুলিশের কাছে চলে গিয়ে অ্যাকশান শুরু? এই ঘাঁটুইতে এসে গেছে? এত করিৎকর্মা এ-রাজ্যের পুলিশ? না কি কোনও প্রাইভেট গোয়েন্দা? যারা মুহূর্তে অসাধ্য সাধন করতে পারে। দোষীর মুখ দেখলেই চিনে ফেলতে পারে!
বঙ্কুর চোখের সামনে একটা ফাঁস-লাগানো ফাঁসির দড়ি ঝুলতে থাকে। সিনেমায় টিনেমায় যেমন দেখা যায়।
বঙ্কু হঠাৎ উঠে চোঁ চোঁ দৌড় মারে। দিগ্বিদিকজ্ঞান
হারিয়ে কাঁটাঝোপে পা ছড়ে গিয়ে, খানাখন্দে ঠোক্কর খেয়ে…
“কী হল? ও মশাই, কী হল? হঠাৎ ছুটলেন কেন?”
মুচকি হেসে বলে, “বুঝছেন না? হেড আপিসে গন্ডগোল। তা নয় তো, অমন ফিটফাট ধোপদুরস্ত চেহারার ছোকরা এই অভাগা গুপের দোকানে চা খেতে আসে? এস্টেশনে স্টল নাই? সিনেমা হাউসের ধারে রেস্টুরেন্ট নাই?”
তারপর? দিন কাটছে… রাত কাটছে সপ্তাহ কাটছে, মাস কাটছে, সেই দৌড় মারাই চলছে এখনও বঙ্কুর।
ক্রমশ সেই ধোপদুরস্ত চেহারা আর থাকে না। পকেটের পয়সাও জবাব দেয়।…বঙ্কু সর্বত্র পুলিশের ছায়া দেখে।…আর পালায়!
শুধু ছায়া কেন? কায়াই তো!
পানের দোকানে বসে ডলে ডলে খইনি খাচ্ছে পুলিশ! পাঞ্জাবির মাংস-পরোটার দোকানে বসে, মৌজ করে বিনি পয়সায় ভোজ চালিয়ে চলেছে পুলিশ! বাসে বিনা-টিকিটে চড়ে বসছে পুলিশ।
সারা জগৎটা যেন পুলিশে থিকথিক করছে! এদের মধ্যে কে যে কোন বিভাগের কে জানে! গোয়েন্দা-পুলিশ থাকতেই পারে। বঙ্কু এখন কী করবে?
বঙ্কুর তো এখন আর ছদ্মবেশেরও দরকার নেই। একমাত্র বঙ্কু প্রায়-ভিখিরির চেহারায় পৌঁছে গেছে।… আর যেই যেখানে-সেখানে আনাচে-কানাচে একটু ঘাপটি মেরে বসছে, কী চেয়েচিন্তে শালপাতায় করে একটু আলুকাবলি, কি ঘুগনি খেয়ে খিদে মেটাতে চেষ্টা করছে, কোথা থেকে একজন পুলিশ এসে হাজির হচ্ছে। “অ্যাই, এখানে কী হচ্ছে? কে তুই? মুলুক কাঁহা?… চোরি ওরি করে পালাচ্ছিস? না কি, ডাকাইতি? না খুনভি? চল থানায় ঘুষে দিই গে!”
বঙ্কু হঠাৎ ভাবতে থাকে, তবে নাকি দেশে পুলিশরা নিষ্ক্রিয়? কাগজে তো তাই লিখত! বঙ্কুর মতো একটা সামান্য প্রাণী, বেপোটে একটা খুন করে ফেলে, আত্মগোপন করে বেড়াতে যাওয়ায় বিশ্বভুবন পুলিশে ছেয়ে গেছে?… সর্বত্র তাদের জাল পাতা?
অথচ বঙ্কু সত্যিই কিছু আর কোনও মোটিভ নিয়ে জেঠুর তেল-চুকচুকে টাকটাকে লক্ষ্য করে থান ইটখানা ফেলেনি তিনতলার ছাত থেকে!…
ঘটনাটা আদ্যোপান্ত ভাবতে থাকে বঙ্কু।
ওই গোয়াবাগান বাই লেনের বাড়িটা সুয্যিঠাকুরের ছিল প্রায় ভাসুর-ভাদ্ৰবউ সম্পর্ক। রোদের মুখ দেখা যায় না সারাদিন।… কেবলমাত্র ভোর সকালে গলির দু’পাশের বৃহৎ বৃহৎ বাড়িগুলোর কোনও একটার ফাঁকফোকর ভেদ করে একচিলতে রোদ এসে পড়ে বঙ্কুদের বাড়ির ছাতে।… পাঁচিলের একটা কোনায় বঙ্কু ভোরবেলা জগিং সেরে এসে, চান করে। তখন তার রাতে পরা বাসি ছাড়া সিল্কের লুঙ্গিটা কেচে নিয়ে সেই চিলতে রোদটুকুর ওপর বিছিয়ে একখানা থান ইট চাপা দিয়ে শুকোতে দিয়ে নীচে নেমে যায় চা খেতে। তারপর সাজগোজ সেরে লুঙ্গিটাকে তুলে নিয়ে পাট করে নিজের ঘরে রেখে দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একদিন ভুলে গেলেই তো রাতে আর সহজে সেই লুঙ্গিকে খুঁজে পায় না। কে তুলেছে? কোন ঘরের আলনায় রেখেছে? দাদারটার সঙ্গে গুলিয়ে গেছে মনে হচ্ছে— এইসব বেয়াড়া ব্যাপার ঘটতে থাকে। মা রোগেরেগে বলেন, “তো রাতদুপুরে ওই লুঙ্গি লুঙ্গি করেই বা বাড়ি মাথায় করছিস কেন? আছে কোথাও! আর কিছু পরবার নেই তোর?…”
অতএব “আপন হাত জগন্নাথ। নিজের কাজ নিজেই করো!”
এদিকে ব্যাপারটা এই— বঙ্কু যখন ছাতে এসে রোদটুকুর সদ্ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে, ঠিক সেই সময়ই একেবারে পাশপাশি ছাতে গগন গাঙ্গুলি উঠে আসেন সূর্যপ্রণাম সারতে। আট ফুট গলির দু’ধারে সেকেলে ঢাউস ঢাউস দোতলা, তিনতলা বাড়িগুলোর কোনও একটু খাঁজ দিয়ে সূর্যের মুখটুকু একটু দেখতে পেলেই, উদাত্ত কণ্ঠে আওড়াতে শুরু করেন, “নমো জবাকুসুম সঙ্কাশং—”
চোখ বুজেই বলেন। তবু কেমন করেই যেন বঙ্কুঘটিত ঘটনা তাঁর চোখে পড়ে যায়। আর পড়লেই চেঁচিয়ে ওঠেন, “অ্যাই বঙ্কা, ওটা কী হচ্ছে? হঠাৎ জোর বাতাস এলে তোর সিল্কের লুঙ্গি উড়তে থাকলেই থান ইটখানা রাস্তায় পড়ে বসলে, কী কাণ্ড হবে খেয়াল নেই? খুনের দায়ে ফাঁসি যাবি রে যে আহাম্মক।”
সে-কথায় আমল দেয় না বঙ্কা। ভাবে, হুঁঃ। জোর বাতাস! এ গলিতে বলে, ‘মলয় বাতাসই বয় না, তো জোর বাতাস!’
অতএব নিজের পদ্ধতিটি চালিয়েই যায়।
কিন্তু? হঠাৎ আচমকা ঘটেই গেল সেই অঘটন।
তবে হাওয়ায় উড়ে নয়। বঙ্কুরই হাতের টানে৷ বেরোবার আগে তাড়াতাড়ি লুঙ্গিখানাকে তুলে রাখতে গিয়েই— সিল্কের লুঙ্গিটা কেমন ফ্যাঁস করে ফেঁসে গেল। আর ইটখানা ঠিক কাটা ঘুড়ির মতো যেন ফস করে নীচে নেমে গেল।
তার মানে, লুঙ্গিটা শুধু নিজেই ফাঁসল না, বঙ্কুকেও ফাঁসিয়ে দিল।
আজ ঠিক সেই মহামুহূর্তটিতেই গগন গাঙ্গুলির টাক-মাথাটি নিয়ে সেইখানটি দিয়েই যাওয়ার দরকার পড়ল কেন?
এ আর কিছু নয়। নিজের ভবিষ্যদ্বাণীটিকে ফলপ্রসূ করবার জন্যই। কেন? আর কয়েক সেকেন্ড আগে বা পরে ওর ওখান দিয়ে যাওয়া চলত না? সেই যে বলেছিলেন, “বঙ্কা, কোনওদিন খুনের দায়ে ফাঁসি যাবি।”
ব্যস! তদবধি বঙ্কু না-জ্যান্ত না-মরা হয়ে অজানা-অচেনা সব বিদঘুটে বিদঘুটে জায়গায় পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হদ্দ ভিখিরির অবস্থা।
একদিন একটা পানের দোকানে ঝোলানো আয়নায় নিজেকে দেখে বঙ্কু যেন হাঁ হয়ে গেল।
এ কে? বঙ্কু নামের সেই ছেলেটা?
গোয়াবাগান বাই লেনের কচিকাঁচাদের ক্লাবে ছেলেদের প্রাণের ঠাকুর বঙ্কুদা!
পাড়ার সক্কলের প্রিয়পাত্র পরোপকারী বাবা বঙ্কুবিহারী? ভাই বঙ্কু! ওঃ, না, না। এ অসম্ভব। বঙ্কু সত্যিই রাস্তার ভিখিরি বা পাগলার মতোই দোকানে পসারে এটা-ওটা চেয়ে চেয়ে খাচ্ছে! চালাকি করে হয়তো সত্যিই পাগলের ভান করছে!
কেন? না, প্রাণের ভয়ে?
ছি, ছি, ছি। প্রাণ এত দামি? ধ্যাত!
হঠাৎ বঙ্কুর মনের মধ্যে তার বড়পিসিমার একটা কথা যেন বেজে উঠল। বড়পিসিমা রাগটাগ হলেই যখন-তখন বলে ওঠেন, “গলায় দড়ি, গলায় দড়ি, এমন বাঁচনের থেকে মরণ ভাল।”
কথাটা মনে পড়তেই বঙ্কুর মনের মধ্যে একটি দিব্যজ্ঞানের উদয় হল। ঠিক! ঠিক! এমনভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভাল!… পুলিশের ভয়ে, অর্থাৎ ফাঁসি যাওয়ার ভয়ে যে বঙ্কু এই এত দিন কোথা থেকে না কোথা থেকে ছুটোছুটি করে আর পালিয়ে পালিয়ে একটা ভিখিরিতুল্য হয়ে পড়েছে, সে ঠিক করে ফেলল, এর চেয়ে মরাই ভাল!
কিন্তু মরব বললেই তো মরা হয় না? তার জন্যও তো উপকরণ চাই? গলায় দড়ি দিতে দড়ি চাই। বিষ খেতে বিষ চাই, পুড়ে মরতে হলে কেরোসিন চাই!
আছে সে-সবের কিছু বঙ্কুর নাগালে?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় এল, আছে! একটা জিনিস আছে!… ইউরেকা!
রেললাইন আছে।
তাতে গলা রেখে পড়ে থাকলেই ব্যস! কাজ হাসিল, কেল্লা ফতে।
আঃ, বিনা উপকরণের এই মোক্ষম ব্যবস্থাটি মনে পড়ে যাওয়ায় বঙ্কু নিজেকেই নিজে বাহাদুরি দিল।
এলোমেলোভাবে হাঁটতে হাঁটতে বঙ্কু এখন যেখানে এসে পড়েছে, সে-জায়গাটার নাম জানে না বঙ্কু। তবে দেখে কাছাকাছিই রেললাইন আছে। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ট্রেন আসা-যাওয়া করে।
ইলেকট্রিক ট্রেন।
শটাশট আসে, যায়। মনে হয়, যত সব ডেলিপ্যাসেঞ্জার বাবুরা চড়ে এতে। যায়, ফেরে। বঙ্কু সেই রেলের বাঁশি শুনতে পায়।
আপাতত বঙ্কু আস্তানা গেড়েছে একটা অতি পুরনো গায়ে ফাটল-ধরা কালী মন্দিরের পেছনে একটা বেলগাছতলায়। কালী মন্দিরটার নাম নাকি মহাকালীর মন্দির। পুরনো হলেও নিত্যপুজোর ব্যবস্থা আছে। আর বিশেষ বিশেষ দিনে খুব বোলবোলাও। অনেক ভক্ত আসে।
আর এতেই সুবিধে হয়েছে বঙ্কুর।
বৃদ্ধ পুরোহিত ঠাকুরটি পেছনের গাছতলায় পড়ে-থাকা পাগলটাকে দয়াধর্ম করে পুজোর প্রসাদ-ভোগের প্রসাদট্রসাদ দেন একটু।
তবে লোকে যেভাবে কুকুর-বেড়ালকে ডাকে, “এই আয়, আয়, তু তু!” সেইভাবে পাতায় মোড়া খাদ্যবস্তু হাতে নিয়ে ডাক দেন, “অ্যাই পাগলা আয়, আয়!”
তা হোক, পেট জুলে যাওয়া খিদের সময় খাদ্যবস্তু! ছাড়া যায়?
দিন কেটে যাচ্ছিল!
কিন্তু এ কি আবার বাঁচা?
হঠাৎই বঙ্কুর এই দিব্যজ্ঞানটি জন্মাল।
এর চেয়ে মৃত্যু ভাল। চুপিচুপি কাজটা সেরে ফেলা যাক।
তো দিনের আলোয় তো চুপিচুপি হয় না। রাতের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।
আজই সেই রাতটা হোক।
আজ সন্ধ্যায় পুরুতঠাকুর সন্ধেপুজো সেরে চলে গেলেই রেলগাড়ির শব্দ পেলেই ছুট মারবে বঙ্কু। আর ছুটে গিয়েই লাইনের ওপর গিয়ে ঝাঁপ দেবে।
আজ অবস্থা খুব অনুকূল। বোধহয় অমাবস্যাটস্যা কিছু হবে। সন্ধে থেকেই গভীর অন্ধকার! নী নী করছে চারদিক।
লাস্ট ট্রেনটা কখন ফিরবে কে জানে! যে বঙ্কুর হাতে সর্বদা ঘড়ি বাঁধা থাকত, সে আজ সময়জ্ঞান হারাল!
তবে শুনে শুনে আন্দাজ হয়েছে।
মনে হচ্ছে এইখান থেকে যতসব লোক গুড়ের নাগরির মতো ঠেসে কলকাতায় গিয়ে পড়েছিল, তারা এখন সেইভাবে ঠাসা হয়ে আবার ফিরছে। মাঝে মাঝেই থামে আর কিছু বস্তা লোককে নামিয়ে দিয়ে আবার ছুট মারে।
শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ট্রেন আসার শব্দ পেল বঙ্কু। শুনেই পড়ি তো মরি করেই ছুট মারল।
ট্রেনটা যেন না পালায়। আসছে। কাছে আসছে।
বঙ্কু ছুটে এসে লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
কিন্তু এ কী! আসতে আসতে প্রায় এসে কাছে আসার সময় হঠাৎ খ্যাঁচ করে থেমে গেল যে!
বঙ্কু পড়ে থেকেই দেখতে পেল, অনেক লোক ওই বে-জায়গাতেই নেমে পড়ে বলাবলি করছে: “হয়ে গেল! কারেন্ট অফ হয়ে গেল। এখন দেখুন, কতক্ষণ অচল অধম হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে থাকে। ও কী! ওখানে কী? অ্যাঁ। গোরুটোরু না কি।”
ও বাবা। বঙ্কুর বুক কাঁপে।
এইদিকেই আসছে মনে হচ্ছে। একজনের হাতে আবার টর্চ। তার মানে লাইনে গলা দিয়ে পড়ে থাকা বঙ্কুকে দেখতে পাবে। আর পেলেই রেলপুলিশকে খবর দেবে।
বঙ্কু আবার উঠে পড়ে পাঁই পাঁই ছুট মেরে সোজা সেই মন্দিরের পেছনের বেলগাছতলায়। বুক ধড়ফড় করছে।
আর ঠিক সেই সময়ই যেন বৃষ্টি এল মনে হচ্ছে।
হায়। একেই বলে অভাগার কপাল। সামান্য একটু মরা। তাও হয় না। বেশ বিনি পয়সায় হয়ে যাচ্ছিল। মা কালী। এই তোমার ব্যবহার!
বঙ্কু মন্দিরের পেছন থেকে ঘুরে সামনের দিকে এল মন্দিরের সামনের চাতালে। রাত হলেই গাছতলা থেকে এখানেই এসে শোয়। মাথাটা তো ঢাকা এখানে।
কিন্তু এ কী? এসে এ কী দেখল বঙ্কু?
অ্যাঁ। কাকে দেখল?
এখনও যে মন্দিরের দরজা খোলা। ভেতরে কে বসে?
বঙ্কু সেইদিকে তাকিয়ে… “ভূ-ভূ-ভূ” করে লটকে পড়ল!
আর শুনতে পেল, পুরুতঠাকুরের গলার স্বর, “ও কিছু না! একটা পাগলা থাকে এদিকে। বিষ্টি এল বলে মন্দিরের চাতালে উঠে এসেছে। আপনি পুজো চালিয়ে যান। এই মহাযজ্ঞ সমাপ্ত হলেই দেখবেন আপনার অভীষ্ট পূর্ণ হবে। হারানো মানিক ফিরে আসবে।”
কিন্তু বঙ্কুর যে সর্বাঙ্গ শিথিল হয়ে যাচ্ছে। বঙ্কুর যে বড্ড ভূতের ভয়। জেঠু কোথা থেকে আসবে? চন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে।
জেঠু শেষে কিনা ভূত হয়ে গিয়ে কালী মন্দিরে! তা হতেই পারে। যত সব ভূত-প্রেত-ডাকিনী-যোগিনী তো মা কালীর সঙ্গী।
বঙ্কুকে তা হলে এখন জেঠুর ভূতের মুখে পড়তে হবে৷
আর ছুট মারবার উপায়ও নেই। দারুণ বৃষ্টি নেমে গেছে। ছাঁট আসছে।
পুরুতমশাই একটা জ্বলন্ত প্রদীপ ধরে কাছে এসে নিচু হয়ে বলে ওঠেন, “এই পাগলা! এদিকে সরে আয়? গায়ে ছাঁট আসছে?”
কিন্তু ততক্ষণে?
ততক্ষণে ভূতটা যে বঙ্কুকে দুহাতে জাপটে, “এই হতভাগা, লক্ষ্মীছাড়া বঙ্কা। এতদিন ছিলি কোথায়? চল তো আমার সঙ্গে—”
তার মানে, ভূত নয়। জেঠু-সাজা গোয়েন্দা। এত দূরে এসেও বঙ্কুকে খুঁজে বের করেছে?
বঙ্কু সেই গোয়েন্দা অথবা ভূত অথবা জেঠুর জাপটানি থেকে কিছুতেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারল না।
কী করে পারবে? টেকো মাথায় গোটা কতক স্টিচ পড়লেও চেহারাটি তো যে জাঁদরেল সেই জাঁদরেল। আর বঙ্কু? চিরকেলে টিংটিঙে, তায় আবার এখন এই অ্যাতদিন না-খেয়ে না-শুয়ে স্রেফ নেংটি ইঁদুর!
চিঁ চিঁ করে বলল, “জে-জেঠু, তুমি বেঁ-চে আছ?”
জেঠু সদর্পে বলেন, “আলবাত আছি, থাকব না তো কী, পাড়ার লোকে তোর পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে খুনের দায়ে ফেলবে, তাই দেখব? ফুঃ! মাত্র তো একখানা থান ইট! তাতে এই গগন গাঙ্গুলি ঘায়েল হবে?… চল, এখন তোকে তোর থানায় জমা দিই গে, তারা তোকে লক আপ-এ পুরুক!”
২৩ ডিসেম্বর ১৯৯২
অলংকরণ: বিমল দাস