মাতৃপূজা

মাতৃপূজা

সন্ধ্যা আগত প্রায়।

বৃদ্ধ সান্যাল মহাশয় একলা বাহিরের বারান্দাটিতে একটা ইজিচেয়ারে বসিয়া আছেন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই সময়টায় বাড়ির রাস্তায় একটু হাঁটিয়া বেড়াইতেন, আর পারেন না, লাঠি ধরিয়া চলিতেও কষ্ট হয় এখন

ছেলেমেয়েরা বহুক্ষণ হইতে বাড়ির ভিতর গ্রামোফোন বাজাইতেছে। রাজবাড়ির অম্বিকাদ্য তেওয়ারির গান আর বশীর খাঁর সুরবাহার শুনিয়া যাঁহার জীবন কাটিল, এইসব নিক্তিতে ওজন করা আড়াই টাকা পৌনে তিন টাকার গানে তাঁহার মনের তন্ত্রীতে বেসুরা আঘাত দেয়। কোথায় অম্বিকাদ্য, কোথায়ই বা সুরবাহারী বশীর খাঁ! খেয়ার ওপারে যদি আবার দেখা হয়—

হঠাৎ আগমনীর সুর উঠিল রেকর্ডেই। ওরা রেগুলেটার ঘুরাইয়া লয়টা বিলম্বিত করিয়া দিয়াছে। টানিয়া টানিয়া আনন্দে কারুণ্যে মেশা সুরটা ধীরে ধীরে জাগিয়া উঠিল। যুগযুগ ধরিয়া প্রবাহিত কি যে অদ্ভুত একটা সুর! যন্ত্রপীড়িত হইলেও যেন একেবারে প্রাণে গিয়া স্পর্শ করে। পূজার আর একুশটি দিন দেরি। চক্ষু দুইটি সিক্ত হইয়া উঠিতেছে,—সত্যই কি তবে আর একবার মাকে দেখাটা ঘটিল? মা; আর মাত্র একুশটি দিনের পরমায়ু ভিক্ষা, এই তো শেষ দেখা

চিন্তাস্রোতে বাধা পড়িল। কয়েকটি ছোকরা বারান্দায় সিঁড়ি দিয়া উঠিয়া আগে-পিছে হইয়া বৃদ্ধের চারিদিকে দাঁড়াইল। সবাই যুক্তকর কপালে ঠেকাইয়া অভিবাদন করিল, একটি ছোকরা ভক্তিভরে পদধূলি গ্রহণ করিয়া বৃদ্ধের শ্রুতির উপযোগী করিয়া একটু উচ্চকণ্ঠে বলিল, আজকাল আছেন কেমন আপনি?

বৃদ্ধ ইষৎ হাসিয়া উত্তর করিলেন, কি রকম থাকা আশা কর আর? তাহার পর একটু ঠাহর করিয়া বলিলেন, অমরের নাতি না তুমি? সব বড় হয়ে উঠছে, বেরুতে তো আর পারি না, অনেককে আর চিনবই না বোধ হয়। তা ব’স। দাঁড়িয়ে রইলে কেন সব?

পাশের একটি ছোকরা চাপা গলায় বলিল, আমরা সবাই বড় হয়েছি বলছে, এই তালে আসল কথাটা তোল না হীরেলাল।

হীরালাল বলিল, এই বলছি। বসার জন্যে তাড়াতাড়ি কি? ইয়ে, আমরা এসেছিলাম এবারের পুজোর সম্বন্ধে—

বৃদ্ধ উৎফুল্ল হইয়া বলিলেন, বেশ করেছ। পুজোর কথাই ভাবছিলাম, আর তো দেরি নেই। যতীন আর অনুপম এসেছিল সেদিন, বলছিল, এবার মাকে চার দিন পাওয়া যাবে, একটু ভাল করে পুজোটা করবার ইচ্ছে। অনুপম তার কোন্ মক্কেলকে ধরে প্রতিমার জন্যে একটা মোটা টাকা আদায় করেছে, বলে, কেষ্টনগর থেকে কুমোর আনাব দাদামশাই, ঠিকানা পাচ্ছি না। ওরা তো গলদঘর্ম হচ্ছে। পেলে ঠিকানাটা?

আগন্তুকদের মধ্যে মুখ-চাওয়াচাওয়ি হইতেছিল, একটু গা-টেপাটেপি হওয়ার পর হীরালাল বলিল, আমরা ও-কথা নিয়ে ঠিক আসি নি। মানে, আমরা ভেবে দেখলাম, পুজোটা আরম্ভ হওয়া অবধি ঠিক ডেমোক্র্যাটিক মেথডে হচ্ছে না। যাঁরা খাটছেন, তাঁরা এমন ভাবে খাটছেন, এমন ভাবে চালাচ্ছেন, যেন—যেন—

হীরালাল বোধ হয় সাহায্যের জন্য একবার পিছন দিকে চাহিল। সকলে সামনে একটু জায়গা করিয়া দিয়া এবং পিছন হইতে একটু একটু ঠেলিয়া একটি যুবককে সামনে আগাইয়া দিল।

ঠিক যুবক নয়, বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ হইবে। যুবকদের সঙ্গে রহিয়াছে বলিয়া এবং ক্ষৌরশিল্প ও বেশভূষায় যুবকত্বের একটা প্রয়াস থাকায় যুবক বলিয়া প্রথমটা ভ্রম হয়,.. সামনে আসিয়া বেশ ঘটা করিয়া বৃদ্ধের পদধূলি গ্রহণ করিল।

বৃদ্ধ মুখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া বলিলেন, কই, তোমায় তো চিনতে পারলাম না বাপু। আর বছর দুই থেকে তো বেরুতেই পারি না এক রকম

হীরালাল বলিল, উনি এখানে নতুন এসেছেন, বছর দেড়েক হবে, সাধনবাবুর ভাগ্নীজামাই, গালা আর মধুর ব্যবসা করবেন।

বৃদ্ধ কানের পিছনে হাতের আড়াল করিয়া প্রশ্ন করিলেন, কেমন চলছে ব্যবসা?

ভাগ্নী-জামাই বলিল, এখনও করি নি আরম্ভ, এইবার বসব ভাবছি। পুজোর ব্যবস্থা নিয়ে সব এসেছি আপনার কাছে। গত বৎসর দেখলাম, এ বছরও দেখছি, শহরে যে পুজো হচ্ছে দুদিন পরে, বাইরে দেখেশুনে তো কিছুই বোধ হয় না। ওই যে হীরালালবাবু বলছিলেন, যাঁরা খাটছেন তাঁরা এমন তদগত হয়ে লেগে পড়েছেন যে, দেখলে মনে হয় পুজোটা তাঁদের ঘরের। গত বৎসরেও দেখলাম, এ বছরেও দেখে যাচ্ছি, না আছে একটা মিটিং, না আছে ভোট, না আছে অফিস-বেয়ারার ইলেকশন, কেন ওরা খাটছেন, কে ওঁদের খাটবার অধিকার দিয়েছে, কিছুই বুঝতে পারি না, তাই এঁদের বলছিলাম—

বৃদ্ধ পাকা ভূ কপালে তুলিয়া প্রশ্ন করিলেন, ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না বাপু, মায়ের পুজো, মাকে ঘরে আনছ, আহ্লাদ করে খাটবে না? অধিকার আর কে দেয় বাপু? যিনি মা হয়ে আসবেন, তিনিই দেন অধিকার, শক্তি দেন, প্রাণ দেন। তা সত্যিই, ওদের দুজনের মেহনতটা বড্ড বেশি হয়ে পড়ে। তা হোক, মায়ের কাজ আর তোমরাও তো রয়েছ, সামলে-সুমলে দাও।

হীরালালের পাশে একটি ছোকরা, কিছু বলিবার জন্য ক্রমাগত হাঁ করিয়া আবার মুখ বন্ধ করিতেছিল, এ সুযোগটা আর ছাড়িল না। মুখটা বাড়াইয়া প্রশ্ন করিল, কিন্তু সেটা কি অনধিকার চর্চা হবে না?—বলিয়া সমর্থনের জন্য ভাগ্নী-জামাইয়ের পানে চাহিল।

সে গম্ভীর হইয়া বলিল, ঠিক তো, একদিকে যেমন অনধিকারচর্চা, অন্যদিকে আবার তেমনিই আত্মসম্মানও তো আছে লোকের?

বৃদ্ধ একটু বিমূঢ় এবং ব্যাকুল হইয়া বলিলেন, যতি ডাকে না তোমাদের কাউকে?

হীরালাল বলিল, ডাকেন; কিন্তু ওসব আন্-কন্‌স্টিটিউশনাল ডাক আমরা শুনব কেন? যতীনকাকাকে, অনুপমদাকে একজন প্রাইভেট লোক হিসেবে আমরা যথেষ্ট সম্মান করি; কিন্তু কথা হচ্ছে, পাব্লিক কাজে তো আর তাঁরা কাকা আর দাদা নন, তখন আমাদের দেখতে হবে, তিনি যে আমাদের আহ্বান দিচ্ছেন তার পেছনে জনমত রয়েছে কি না!

ভাগ্নী-জামাই বলিল, আমি এঁদের বললাম, এখানে এই জনমত নেই বলেই পুজোটা যেন নিঃঝুমের ব্যাপার। দুটো লোক, কি চারটে লোক, কি দশটা লোক পুরুষানুক্রমে মুরুব্বীয়ানা করবে, যেন মৌরূসী পাট্টা নিয়েছে, ছেলেছোকরারা মাথাটি নীচু করে গাধার খাটুনি খাটবে। ব্যস, হয়ে গেল পুজো, কাক-কোকিলে টের পেলে না।

বৃদ্ধ বেশ একটু অধৈর্য হইয়া আঙুলে মাথার চুল আঁচড়াইতে ছিলেন। শান্ত কণ্ঠেই বলিলেন, বাপু, পুজোর হৈ-চৈ, হাঁকডাক, সে সব পুজোর কটা দিনই হবে। আর আগে যতটা সুশৃঙ্খলায়, যতটা কম গোলমালে কাজ হয় ততই ভাল নয় কি? আজ চল্লিশ বছর মাকে আনছি, আমরা তো এই জানি। সে যাক, কিন্তু এখন তোমরা কি চাও বল দিকিন, শুনি?

প্রায় সমস্ত দলটাই সমস্বরে বলিয়া উঠিল, আমরা চাই ডেমোক্র্যাটিক মেথড।

ভাগ্নী-জামাই আর একটু টানিয়া বলিল, পার্লামেন্টে ওরা এ মেথডটা চালাচ্ছে।

বৃদ্ধ স্তিমিত দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন, ওরাও দুর্গাপূজা ধরেছে নাকি?

হীরালালের পাশের ছোকরাটি বলিল, আমরা চাই একটা জেনারেল মিটিং। সেইজন্যেই আপনার কাছে এসেছিলাম। আমরা সবার সামনে জানতে চাই, যতিকাকা আর অনুপমদা কার হুকুমে কাজ করছেন!

তারা কাজ করছে বলে তাদের অপমান করাটা কি ঠিক হবে? তা ছাড়া গোড়াতেই তো আমরা সব পরামর্শ করেছি একসঙ্গে বসে, সব বুড়োরাই ছিল—রামসদয়, হরিবিলাস, হালদার, মন্মথ, যতীন, আর-বছরের সব খরচপত্র দেখিয়ে শুনিয়ে, কি করতে হবে না-হবে ঠিক করে নিলে—

পিছন হইতে একটি লম্বা-গোছের যুবক ডিঙি মারিয়া গলাটা আরও উঁচু করিয়া প্রশ্ন করিল, কিন্তু আপনারা কি পরামর্শ দিতে অথরাইজ্ড হয়েছিলেন?

কয়েকজন একটু উগ্রভাবে ফিরিয়া চাহিতে ছেলেটি খপ করিয়া ভিড়ের মধ্যে মাথা ডুবাইয়া লইল।

বৃদ্ধ শুনিতে পান নাই। একটু অন্যমনস্ক হইয়া পড়িয়াছিলেন, বলিলেন, মিটিং জিনিসটাকে আমি ভয় করি বাপু, অন্য জায়গায় যা দু-একবার ওর রূপ দেখেছি। তা বেশ, পরের বছর থেকে—

একটু ঠেলাঠেলি, টেপাটেপি পড়িয়া গিয়াছিল। হীরালাল বলিল, আজ্ঞে, পরের বছরের জন্যে আমরা আর রাখতে পারলাম না, আমরা একটা মিটিঙের বন্দোবস্ত করে ফেলেছি আপনার নাম করে।

বৃদ্ধ অতিমাত্র বিস্ময়ে আরাম-চেয়ারে সোজা হইয়া বসিলেন, বলিলেন, আমার নাম করে! কিন্তু আমি তো বলি নি বাপু, তোমরা এ মিথ্যেটুকু কেন বলতে গেলে?

সবাই একটু চুপ করিয়া রহিল। ভাগ্নী-জামাই বলিল, ওরা সব ধরে নিয়েছে, আপনার মত হবেই। যাক, গতস্য শোচনা নাস্তি, আমরা তা হলে এখন আসি; মিটিংটা পরশু রবিবার সন্ধ্যে সাতটার সময় হবে রসময়বাবুর বাড়িতে। আপনাকে যেতেই হবে।

যে ছেলেটি অনধিকার চর্চার কথা তুলিয়াছিল, বলিল, মিথ্যে কথা যে বললেন, ন্যায় আর ধর্মের জন্যে একটু মিথ্যে—

পাশের একটি যুবক হাতটা টানিয়া ইশারা করিতে থামিয়া গেল।

যাইবার সময় প্রায় সকলেই কাড়াকাড়ি করিয়া পায়ের ধূলা লইল।

.

সান্যাল মহাশয় ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলেন, পরদিন বৈকালে যতীন, অনুপম, আরও দুই-তিনজন আসিয়া উপস্থিত হইল। যতীন বলিল, কুমোরের ঠিকানা যোগাড় করেছি দাদামশাই, এনে দিলাম। এবার এখানে বসেই বাংলা দেশের প্রতিমা আপনাকে দেখাব।— মুখটা উৎসাহে দীপ্ত।

সান্যাল মহাশয়েরও মুখটা হাসিতে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, গড়গড়ার নলে দুইটা টান দিয়া বলিলেন, দেখলাম বোধ হয়, তোমাদের কল্যাণে আর কুড়িটা দিনও কি বাঁচব না? কিন্তু ভাল কথা, ডেমোক্র্যাটিক পুজোটা কি বলতে পার? কথাটা অনেক কষ্টে মনে করে রেখেছি, এক রকম জপমন্ত্র করে। আন্দাজে মোটামুটি এক রকম বুঝলেও পুরো মানে ধরতে পারছি না।

যতীন হো-হো করিয়া হাসিয়া উঠিল, বলিল, আপনার কাছেও পৌঁছেছে কথাটা? ও ওই সাধনকাকার ভাগ্নী-জামাইয়ের কাণ্ড। আজ দেড় বছর থেকে মামাশ্বশুরের অন্ন ধ্বংস করছে। জিজ্ঞেস করলেই বলবে, মধু আর গালা নিয়ে বসব এবার। কাজকর্ম নেই, খালি ছেলেগুলোর মাথা খাচ্ছে, কথায় কথায় পার্লামেন্ট, কস্টিটিউশন; সেদিন আমার কাছে এসেছিল, ভাগিয়ে দিলাম। ঠোঁট-কাটা মানুষ তো। বললাম ছেলেগুলোকে হুজুগে ন। মাতিয়ে একটু কাজ করতে দিন তো। সবাই তো আর চওড়া কাঁধওয়ালা মামাশ্বশুর পাবে না। সেই থেকে ভয়ানক চটে আছে আমার ওপর। শুনছি, খুব দল পাকাচ্ছে।

অনুপম বলিল, পাকাচ্ছে বইকি, সঙ্গে আবার রসময়বাবু যোগ দিয়েছেন, ওই যে সাধনকাকার অন্ন ধ্বংস করছে, রসময়বাবুর আনন্দ রাখতে আর জায়গা নেই, ক্রমাগত পিঠ ঠুকছে আর কুপরামর্শ দিচ্ছে, অমন কুচুটে লোক তো আর নেই। যখনই জামাইটা যাবার কথা তোলে, জঙ্গলে গালা আর মধুর ঠিকের সুবিধে করে দেবে বলে আটকে রাখে।

সান্যাল মহাশয় বলিলেন, তাই বুঝি রসময়ের বাড়িতেই কাল মিটিং করছে! আবার মিটিংটা করছে আমার নাম করে, অথচ আমায় জানায়ও নি আগে। কি অন্যায় দেখ!

বলতে একটা ছেলে ঝট করে মুখের ওপর বললে, ন্যায় আর ধর্মের জন্যে মিথ্যা বলতে দোষ নেই।

কি হল গো কালে কালে! অথচ তোমরা এখনও মুখের ওপর একটা কথার জবাব দাও না।

সান্যাল মহাশয় ক্লান্তভাবে ঘাড়টা ইজিচেয়ারে এলাইয়া ধীরে ধীরে গড়গড়া টানিতে লাগিলেন। সকলেই চুপ করিয়া রহিল। কথাটা সাধারণভাবে বলিলেও সান্যাল মহাশয়ের প্রাণে যে খুব লাগিয়াছে, সেটা সকলে বুঝিতে পারিল। একটু পরে তিনিই বলিলেন, যাক, তোমাদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম, যাতে পুজোটা ভালয় ভালয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখো একটু। মিটিং করছে, একটু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলো সবাইকে, আমি তো আর যেতে পারছি না। আর তোমরা এই বছরটা কাটিয়ে দাও কোনরকমে বাপু, ঝগড়া বিবাদ দেখে যেন না যেতে হয়। চল্লিশ বছর একভাবে করে আসছি সবাই পুজোটা মিলেমিশে—

কাজ করা অভ্যাস বলিয়া যতীনের চরিত্রই দাঁড়াইয়া গিয়াছে ছোট কথাগুলোকে আমল না দেওয়া। কর্মপ্রেরণায়, আশায় আর সফলতার একটা উজ্জ্বল ছবিতে তাহার মনটা সর্বদাই কানায় কানায় ভরিয়া থাকে। বলিল, ওর জন্যে আপনি ভাবছেন কেন দাদামশাই? ওই ব্যাটা ভাগ্নী-জামাইকে কষে একটা দাবড়ি দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ছেলেগুলো তো এখানকার খুবই ভাল, একটু গায়ে হাত দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, মাথাটি নীচু করে নিজেদের ভুল মেনে নেবে। দিনকতক বেশ চলল, প্রাণ দিয়ে কাজে মেতে উঠল সব, তারপর আবার কি যে ভুজুংভাজং দেয়, আবার দেখি ওই বুলি আওড়াচ্ছে,–ডেমোক্র্যাসি, কস্টিটিউশন, ভোট, ইলেক্‌শন। ওটাকে না তাড়ালে আর ভদ্রস্থ নেই। ‘গালা গালা’ করছে, জতুগৃহদাহ করতে পারতাম ওটাকে ভেতরে পুরে তো কতকটা ঝাল মিটত গায়ের।

অনুপম বলিল, এদিকেও কতকগুলো ছেলে বড় বেঁকে দাঁড়িয়েছে। আজ আমাকে অনাদি হঠাৎ বললে, কাল রসময়বাবুর বাড়িতে সব মিটিং করছে অনুপমদা, আপনারা যেন যাবেন না। জিজ্ঞেস করলাম, কেন রে? বললে ওই মামাশ্বশুরের ঘরজামাইকে একচোট তুড়ব আমরা মিটিঙে, আপনারা গেলে মুখ খুলতে পারব না। দম ফুলে মরব। অনেক করে তো বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠাণ্ডা করেছি। বললাম পরের বাড়ি অনাদি, সেখানে একটা গোলমাল করা ভাল হয় না, তোরা বরং যাসই না। নিজেদের দু-চারজন নিয়ে মিটিং করে আর কি করবে? তোরা এই দিকে মাতলে আবার এদিককার কাজ পণ্ড হবে। বললে তো যাবে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সব যেন চটে আছে দেখলাম।

.

সোমবার সকালে অনাদি অনুপমের সঙ্গে দেখা করিল, হাসিয়া বলিল, অনুপমদা, সত্যি মা এবার দোলায়ই আসছেন, দুলিয়ে দিয়ে যাবেন।

অনুপম জিজ্ঞাসু নেত্রে চাহিতে অনাদি বলিল, কাল মিটিঙে ক্যাবিনেট ফর্ম হয়েছে, রসময়বাবু প্রেসিডেন্ট, মোতিগঞ্জের সারদাবাবু ভাইস-প্রেসিডেন্ট করেছে।

অনুপম আশ্চর্য হইয়া বলিল, সারদাবাবুকে কি করে পাকড়াও করলে?

অনাদি বলিল, রসময় তাঁকে ভাগ্নী-জামাইয়ের সঙ্গে গালা আর মধু দিয়ে জুড়বে ঠিক বুঝলাম না!

বলেছে, ভাগ্নী-জামাই ব্যবসা শুরু করলেই সারদাবাবুকে সাবকন্ট্রাক্ট দেওয়াবে। ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ভাগ্নী-জামাই সেক্রেটারি, হীরালাল অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি—ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকগুলো লোক জুটিয়েছে। রসময়বাবুর ছেলে খবর দিলে—বুড়ো গোবিন্দ আচার্যি পেটুক লোক, তাকে বলেছে, আপনি ভোগের চার্জে থাকবেন। সে রোগা হাতের ঘঁষি নেড়ে মিটিঙে এন্তার ‘ডেমোক্রেসি ডেমোক্রেসি’ করে চেঁচাচ্ছিল—ওই রকম করে অনেককে হাত করেছে। এটা ফ্যাসাদ বাধাবে।

অনুপম একটু উগ্র দৃষ্টিতে অন্যমনস্ক হইয়া কি ভাবিতেছিল, ঘাড়ে একটা ঝাঁকানি দিয়া প্রশ্ন করিল, কি করে?

তা বলতে পারি না, তবে যতীনদার অতটা অসাবধান হওয়া ভাল হয় নি।

দুই-তিন দিনের মধ্যে শহরের বাঙালি-সমাজে বেশ একটা চঞ্চলতা লক্ষিত হইল, এবং আরও দিন-দুয়েকের মধ্যে সত্তর-আশি ঘরের ক্ষুদ্র সমাজটি মাঝখানে একটা বেশ স্পষ্ট রেখা টানিয়া পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া বসিল। এত তাড়াতাড়ি কি করিয়া ব্যাপারটা হইল, অর্ধশতাব্দীর বাঁধন দুই দিনে কি করিয়া ছিন্ন হইল—বোঝা গেল না, তবে হইল, বেশ নিঃসন্দেহ ভাবেই হইল। সেখানে পরস্পরের সম্বন্ধের আর কোন আলগা আবছায়া ভাব রহিল না! ভাবটা এই রকম—এপক্ষে, কি ওপক্ষে? নাও, চটপট ঠিক করে সিদ্ধান্ত করে নিয়ে পেছোও বা পা বাড়াও চটপট—মা আসতে আর মাত্র দিন পনেরো বাকি, দোলায় আসবেন—জাতীয় চরিত্রের অঞ্জলি দিয়ে তাঁকে আবাহন করতে হবে।

খোলার চালের চণ্ডীমণ্ডপ-মাঝে একটি বড় হল-গোছের, পাশে দুইটি ছোট ছোট কামরা। মাঝের হলে কৃষ্ণনগরের কুমোর প্রতিমা গড়িতেছিল, কয়েকজন কুলি চালচিত্রের কাঠামো সমেত একটা প্রতিমা গড়ার চৌকি ধরাধরি করিয়া আনিয়া পাশে রাখিল। বৈকালে খড়, সুতলি, বাখারি লইয়া দুইজন এদেশীয় কুমোর আসিয়া হাজির হইল। কৃষ্ণনগরের ভবানী পাল আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, ব্যাপার কি?

মাইকা মূর্তি গোড়া হোবে।

মূর্তি গড়া হবে! কেন?

পূজা হোবে।

আর এ মূর্তি?

যে মূর্তিকা বেশি ক্ষমতা হোবে, তারই পূজা হোবে। হাম তোম্হার থেকে এক ফুট বড়া মূর্তি বানাবে। বাবুরা বলিয়েছে—জবরদস্ত্ এ রকোম মূর্তি। হাত দুইটা বাঁকাইয়া শরীরে একটা দোলা দিয়া মূর্তির জবরদস্ত-পনার একটা ধারণা দিবার চেষ্টা করিল।

কথাটা রাষ্ট্র হইতে দেরি হইল না। জবরদস্ত মূর্তি খড়-কাঠে রূপে পরিগ্রহ করিবার পূর্বেই তাহার কতকগুলি বাখারি তাহার স্রষ্টা দুইটির পিঠে ভাঙিল।

রসময়-ভাগ্নী জামাইয়ের দল পরীক্ষা হিসাবে কুমোরদের আগাইয়া দিয়াছিল। নিজেরা আসে নাই। পুলিশে ডায়েরি করাইয়া দিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া তদন্ত করিয়া গেল। মকদ্দমার বন্দোবস্ত চলিতে লাগিল। পুজোর দিন যতই অগ্রসর হইয়া আসিতে লাগিল, ব্যাপার ততই ঘোরালো হইয়া উঠিতে লাগিল।

রমেশ পণ্ডিতের খুড়ো অন্নদা ঝগড়া জিনিসটা বড় ভালবাসিতেন। মাঝখানে নির্লিপ্ত থাকিবার ভান করিয়া দুই দিকেরই পিঠ ঠুকিয়া বেশ চালাইয়া আসিতেছিলেন, হঠাৎ মারা গেলেন। কিন্তু বসিয়া রহিলেন না। তাঁহার শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কাজ আরও অগ্রসর হইল। বড়দের মধ্যে প্রায় হাতাহাতি হইতে হইতে থামিয়া গেল। ঠিক থামিয়া গেল বলিলে ভুল হয়, বড়দের ছোট সংস্করণেরা একদিন সেটা ইস্কুলে সাধ মিটাইয়া পুরা করিয়া লইল।

এদিকে আবার একটা গুজব রটিয়াছে। অনাদি আসিয়া বলিল, শুনছি প্রতিমা ওরা গড়াচ্ছে অনুপমদা, কিন্তু কোথায় তা বুঝতে পারছি না।

অনুপম বলিল, খোঁজ নাও।

চেষ্টা করছি। কাল মার একটা ব্রত আছে, একটি বামুন খাওয়াবেন। ভাবছি গোবিন্দ আচার্যিকে নেমন্তন্ন করব। লুচি সন্দেশ ঢুকছে জানলে ওর পেটের কথাগুলো জায়গা ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসবেই।

অনাদির চালটা কিন্তু খাটিল না। নিমন্ত্রণ পাইয়া আচার্যি শ্যামা কবিরাজের কাছে অসুস্থতার অজুহাত করিয়া একটা হজমি চাহিতে গিয়াছিল। শ্যামা কবিরাজ জামাইয়ের দলের লোক, কি করিয়া নিমন্ত্রণের রহস্যটা টের পাইয়া কড়া করিয়া জোলাপ ঠুকিয়া দিয়াছে। অন্যদিকে শেষ মুহূর্তে একজন এদেশী ব্রাহ্মণ ডাকিয়া মায়ের ব্রতরক্ষা করিতে হইল। সে একা পাঁচটি ব্রাহ্মণভোজনের পুণ্যের অধিকারী করিয়া গিয়াছে। কথাটা লইয়া ওদিকে খুব হাসি পড়িয়া গিয়াছে।

প্রতিমার কথাটা সত্য নয়, কোন কুমোরই আর ঘেঁষিতে চাহিতেছে না। তবে এদিকে যেমন থিয়েটার হইবে, ওদিকের তরফ হইতে তেমনই একটা যাত্রাপার্টিকেও বায়না দেওয়া হইয়াছে; পাঁঠা কেনাও হইয়াছে। জামাই সবাইকে স্তোক দিয়াছে—পুজোর আসল অংশ তো এইগুলোই, প্রতিমা তো ভক্তের মনেই রয়েছে।

স্যানাল মহাশয় কপালের উপরের চুলগুলো মুঠায় করিয়া ধীরে ধীরে টান দিতে দিতে বলিলেন, কি করে সম্ভব হল এটা, তাই ভাবছি যতীন। সোনার জায়গা ছিল, এই কটা দিনে চেহারা বদলে দিলে একেবারে!

পূজা আরম্ভ হইয়া গিয়াছে ঘটস্থাপন করিয়া। মূর্তি শেষ হয় নাই। মুণ্ড বসাইবার পূর্বেই ভবানী পালের বাড়ি হইতে জরুরি টেলিগ্রাম আসিল, তাহার স্ত্রীর ওলাউঠা। সে রাতারাতি তাহার ছেলেকে লইয়া যতীন প্রভৃতিকে না বলিয়া পালাইল। সেখানে গিয়া ভয়ে মৃতকল্প হইয়া বাড়ি ঢুকিয়া দেখিল, স্ত্রী দাওয়ায় বসিয়া একখোরা পান্তাভাতের সদ্‌গতি করিতেছে। বিদেশে অমন শাঁসালো কাজটা অসমাপ্ত রাখিয়া চলিয়া আসায় সে ভবানীর ওলাউঠার ব্যবস্থা করিতে লাগিল। ব্যাপারটা ভবানী বুঝিল, কিন্তু যা কাণ্ডকারখানা দেখিয়া আসিয়াছে, আর ফিরিবার প্রবৃত্তি বা সাহস হইল না।

স্থানীয় কোনও কুমোর ভিড়িল না, তাহাদের একজন ‘জবরদস্ত’ মূর্তি গড়িতে গিয়া যা দক্ষিণা লইয়া ফিরিয়াছে, তাহাতে তাহারা সবাই অতিরিক্ত সচেতন হইয়া উঠিয়াছে।

এখন কাঠামোসুদ্ধ মুণ্ডহীন প্রতিমা চণ্ডীমণ্ডপের এক কোণে ঠেলিয়া রাখা হইয়াছে, পূজা সম্বন্ধে সবাই এত উদাসীন যে, কাঠামোটাকে যে বাহিরে রাখিয়া দেওয়া দরকার, সে কথাটাও কেহ ভাবে নাই। তাহারই সামনে ঘটস্থাপন করা হইয়াছে; রেকর্ডের সঙ্গীতের মত একটা প্রাণহীন যান্ত্রিক পূজা হইতেছে।

যতীন আসে নাই। তাহার অত্যন্ত বেশি আশা লইয়া কাজ করা অভ্যাস বলিয়া একেবারে মুষড়াইয়া গিয়াছে। অনুপম আসিয়াছে, তাহার প্রকৃতিটা ঠিক উল্টা, উৎসাহের মুখ অযথা বাধা পাইলে সে দপ করিয়া জ্বলিয়া উঠে। ক্ষতিবৃদ্ধি খতাইয়া দেখিতে পারে না, আরব্ধ কর্মের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিতে পারে না, ধ্বংসলীলায় মাতিয়া উঠে।

অনুপম আসিয়াছে; কিন্তু পূজা ভুলিয়া সে এখন অন্য দিকে। অন্য দিকের দৃশ্যটাও অন্য রকম।

দুই দল রোশনচৌকি বসিয়াছে। যাহারা এখানকার বাঁধা বাজিয়ে অর্থাৎ যাহারা যতীন অনুপমের ফরমাশে আসিয়াছে, তাহারা একটা করুণ ভৈরবীর সুর তুলিয়াছে। ভিতরের দিকে বসিয়াছে রসময়-ভাগ্নী জামাইয়ের আহুত রোশনচৌকি—কতকগুলি ছেলে তাহাদের উসকাইয়া দিয়াছে, তোরা বেহাগ ধর্, এমন বেহাগ ধরবি যেন ওদের ভৈরবীকে টুকরো টুকরো করে ছেড়ে দেয়। খুব আনাড়ী রোশনচৌকি, এরা বেহাগকেও টুকরো টুকরো করিতেছে, ভৈরবীর তো কথাই নাই। সমস্ত জায়গাটা সঙ্গীতের মৃত্যু-বিষাদে বীভৎস হইয়া উঠিয়াছে।

চণ্ডীমণ্ডপের সামনে একদলের চেষ্টা ও পরিশ্রম আর দলের টিটকারির মধ্যে থিয়েটারের স্টেজ উঠিতেছে, বাঁধিবার দড়ি হারাইতেছে। বচসা, গালাগালি, হুমকি–হাতের আঙুল বজ্রমুষ্টিতে কুণ্ডলিত হইয়া উঠিতেছে, উদ্যত মুষ্টি তীরের মত আগাইয়া ছুটিতেছে কিন্তু ওই পর্যন্ত। তাহার কারণ, প্রচুর লালপাগড়ি ঘোরাঘুরি করিতেছে। এটা প্রেসিডেন্ট রসময়ের বন্দোবস্ত। বলিতেছে, এই তো বাহার! তা নয় তো বুকে কাপড়ের এক-একটা করে ফুল এঁটে সব ডিগডিগে ভলান্টিয়ার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! আরে ছ্যাঃ! এইসব হইল নগ্ন গুণ্ডামি। ওদিকে ভদ্রতাও হইয়াছে মারাত্মক, নিমন্ত্রিতেরা বেশির ভাগই এদেশী ভদ্রলোক, উভয় পক্ষের অভ্যর্থনার টানাটানিতে নাজেহাল হইয়া উঠিতেছে।

শুধু পুজোর কাছটাই নিষ্প্রভ, কেননা পূজা আজ অবান্তর। বাকি সমস্ত জায়গাটা গমগম করিতেছে। ছেলে যুবা সভার মুখেই একটা উল্লাসের দীপ্তি। ভাঙনের মধ্যেও একটা উল্লাস আছে তো।

সকলে বিস্ময় মানিতেছে—শান্ত, সৌম্য, স্নিগ্ধ মাতৃপূজার মধ্যে এ উন্মাদনা কোথায় লুকানো ছিল এতদিন? এ যেন আগাগোড়াই পাঁঠা-বলির একটা ভৈরব আনন্দ। পূজাই যে আজ যূপকাষ্ঠে উঠিয়াছে এ কথা ভাবিয়া দেখিবার ফুরসত কোথায়!

একটু দূরে রসময় হুঁকা হাতে, সস্মিত বদনে নিজের কীর্তি উপভোগ করিতেছিল; ভাগ্নী-জামাই ব্যস্ততার মধ্য হইতে ছিটকাইয়া পড়িয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইল, বলিল, বলুন তো, মনে হচ্ছে না যে সবার পুজো, সবাই মায়ের সমান ছেলে? তা নয় তো একদিকে যতীন অনুপম ফপরদালালি করছে, আর ছেলেগুলো ভেড়ার মত নিঃশব্দে খেটে যাচ্ছে। আরে ছ্যাঃ! এই ডেমোক্র্যাসির যুগে—

চণ্ডীমণ্ডপের এক কোণটিতে, বিধবা আর অন্যান্য মেয়েদের লইয়া যেখানে একটু ভিড় হইয়াছে, তাহার পিছনে ছোট নাতিটির কাঁধে লঘু ভর দিয়া বৃদ্ধ সান্যাল মহাশয় আসিয়া দাঁড়াইলেন। চারিদিকে উন্মাদনা। তাহার রজতশুভ্র কেশ, আবক্ষ শ্মশ্রু, আয়ু-ন্যুব্জ দেহ আজ কাহারও দৃষ্টি আকর্ষণ করিল না। ললাটে ভূমিস্পর্শ করিয়া উঠিয়া মগ্নস্বরে বলিলেন, বড় মুখ করে একুশটা দিনের আয়ু চেয়েছিলাম মা তা এমনই করেই কি দিতে হয়? আরও বলিবার ছিল, কিন্তু ওষ্ঠাধর স্ফূরিত হইয়া উঠায় আর বাক্যস্ফূর্তি হইল না।

আরও একজন একটু অনুযোগ করিল।

অম্বিকা গাঙ্গুলি। নেশাখোর মানুষ, কোনও দলের সঙ্গে সম্বন্ধ নাই। টলিতে টলিতে আসিয়া চণ্ডীমণ্ডপের খুঁটি ধরিয়া দাঁড়াইল। তারপর ঘূর্ণমান চক্ষু দুইটাকে সাধ্যমত অসমাপ্ত মূর্তির উপর নিবদ্ধ করিয়া জড়িতকণ্ঠে বলিল, মুণ্ড নেই, তাই দেখতে পেলে না মা, দোলায় এসে কি অনর্থটাই করে গেলে।

অম্বিকা গাঙুলীর কথা কেহ বড় গ্রাহ্য করে না, তবুও আজিকার এই কথাটুকুতে কি একটা ছিল, সকলে একবার ফিরিয়া চাহিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *