বারেক তোমার দুয়ারে দাঁড়ায়ে
ফুকারিয়া ডাকো জননী!
প্রান্তরে তব সন্ধ্যা নামিছে,
আঁধারে ঘেরিছে ধরণী।
ডাকো, ‘চলে আয়, তোরা কোলে আয়।’
ডাকো সকরুণ আপন ভাষায়;
সে বাণী হৃদয়ে করুণা জাগায়,
বেজে ওঠে শিরা ধমনী—
হেলায় খেলায় যে আছে যেথায়
সচকিয়া উঠে অমনি।
আমরা প্রভাতে নদী পার হনু,
ফিরিনু কিসের দুরাশে।
পরের উঞ্ছ অঞ্চলে লয়ে
ঢালিনু জঠরহুতাশে।
খেয়া বহে নাকো, চাহি ফিরিবারে,
তোমার তরণী পাঠাও এ পারে,
আপনার খেত গ্রামের কিনারে
পড়িয়া রহিল কোথা সে!
বিজন বিরাট শূন্য সে মাঠ
কাঁদিছে উতলা বাতাসে!
কাঁপিয়া কাঁপিয়া দীপখানি তব
নিবু‐নিবু করে পবনে—
জননী, তাহারে করিয়ো রক্ষা
আপন বক্ষোবসনে।
তুলি ধরো তারে দক্ষিণ করে—
তোমার ললাটে যেন আলো পড়ে,
চিনি দূর হতে, ফিরে আসি ঘরে
না ভুলি আলেয়া‐ছলনে।
এ পারে দুয়ার রুদ্ধ, জননী,
এ পরপুরীর ভবনে।
তোমার বনের ফুলের গন্ধ
আসিছে সন্ধ্যাসমীরে।
শেষ গান গাহে তোমার কোকিল
সুদূরকুঞ্জতিমিরে।
পথে কোনো লোক নাহি আর বাকি,
গহন কাননে জ্বলিছে জোনাকি,
আকুল অশ্রু ভরি দুই আঁখি
উচ্ছ্বসি উঠে অধীরে।
‘তোরা যে আমার’ ডাকো একবার
দাঁড়ায়ে দুয়ারবাহিরে।
নাগর-নদী। আত্রাই পথে
৭ আষাঢ় ১৩০৫