ভাতে মাছে বাঙালি
রাধাপ্রসাদ গুপ্ত তাঁর ‘মাছ আর বাঙালি’ বইতে বাঙালির মাছ খাবার ইতিহাসের এক দারুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। মধ্যযুগের রান্নার বর্ণনায় জিরে লবঙ্গ দিয়ে কই, মরিচ দিয়ে চিতল মাছ, মাগুর মাছের ঝোল, মানকচু দিয়ে শোল মাছ, সবজি দিয়ে রুই মাছের কথা পাই।
নীহাররঞ্জন তাঁর বইতে লিখছেন পাহাড়পুর আর ময়নামতীর পোড়ামাটির ফলকগুলোতে অবধি নাকি ‘মাছ কোটা এবং ঝুড়িতে মাছ ভরিয়া হাটে লইয়া যাওয়ার দুটি অতি বাস্তব চিত্র’ আঁকা আছে। বাঙালি বিয়ে মাছ ছাড়া হয় না। বিয়ের তত্ত্বে সিঁদুরমাখা জোড়া রুই যায়। মুখে তার পান গোঁজা। বিয়ের পর কনে বাড়িতে এলেই তার হাত দিয়ে পুকুরে ল্যাটা মাছ ছেড়ে দেওয়া হত। আবার সেই কনেই একদিন অন্তঃসত্ত্বা হলে রুই মাছের ল্যাজা দিয়ে তাকে পরমান্ন খাওয়ানো হয়। এমনকি মিষ্টির ছাঁচেও মাছের ছাপ। মাছ আছে আলপনাতেও। বাংলা প্রবাদে মাছ যে মেয়েদেরও হার মানিয়েছে, তার পাথুরে প্রমাণ দিয়েছিলেন ড. সুশীলকুমার দে, তাঁর ‘বাংলা প্রবাদ’ বইতে। বাংলার প্রচলিত ছড়াতেও পাই, ‘মাছ কাটলে মুড়ো দেব/ ধান ভানলে কুড়ো দেব।’
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৌদ্ধদের প্রভাবে বাংলায় মাছ খাওয়া বা প্রাণীহত্যা কিছুদিন থমকে ছিল। কিন্তু বাঙালিকে বেশিদিন ভেগান রাখবে এমন সাধ্য কার? ব্রাহ্মণরা নিদান দিলেন আমিষ খাওয়া দোষের না। শুধু দিন আর বার-তিথি মেনে কয়েকদিন না খাওয়াই ভালো। বৃহদ্ধর্মপুরাণে রুই, পুঁটি, শোল সহ আঁশযুক্ত মাছ খেতে বলা আছে।
বাংলা সাহিত্যে একেবারে শুরুর দিন থেকে মাছের রমরমা। চতুর্দশ শতাব্দীর দিকে সংকলিত অপভ্রংশ-অবহট্ট কবিতাসংকলন ‘প্রাকৃতপৈঙ্গল’-এ আছে—
ওগগর ভত্তা
রম্ভঅ পত্তা।
গায়িক ঘিত্তা
দুগ্ধ সজুত্তা।
মোইণি মচ্ছা
নালিচ গচ্ছা।
দিজ্জই কন্তা
খাই পুনবন্তা।।
মানে যে নারী স্বামীকে কলাপাতায় গাওয়া ঘি, গরম ভাত, মৌরলা মাছ আর নালিতা শাক পরিবেশন করেন তাঁর স্বামী পুণ্যবান (এটা তখনকার কথা। আজকের স্বামীরা পুণ্যবান হবার চক্করে এসব করাতে যাবেন না আবার!)(উৎস সুকুমার সেন)। নৈষধ কাব্যে নল আর দময়ন্তীর বিয়ের মেনুতে নানারকম মাছের কথা আছে। মঙ্গলকাব্যে তো মাছ রান্না রীতিমতো রেসিপি মেনে বলা হয়েছে। চণ্ডীমঙ্গলে ফুল্লরার মাছ রান্না নিয়ে লেখা আছে—
বড় বড় কৈ মৎস্য ঘন ঘন আঞ্জি
জিরা লঙ্গ মাখিয়া তুলিল তৈলে ভাজি।।
বেত আগ বালিয়া চুঁচুড়া মৎস্য দিয়া।
সুকৃত ব্যঞ্জন রান্ধে আদা বাটা দিয়া।
ধর্মকেতুর বউ নিদয়া অরুচি দূর করতে কুসুম বড়ি দিয়ে মাছের চচ্চড়ি খেতে চান। খুল্লনা ‘কই ভাজে গন্ডা দশ/ মরিচাদি দিয়া আদারসে’ বা ‘রোহিত মৎস্যের ঝোল/ মানকড়ি মরিচে ভূষিত।’ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন বাংলায় শেষদিকে বৌদ্ধরাও নাকি হিন্দুদের দেখাদেখি মাছ রান্নায় প্রবৃত্ত হন। মাছের তেলের বড়া, ছ্যাঁচড়া নাকি তাঁরাও তৃপ্তি করেই খেতেন। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল অবশ্য এ ব্যাপারে সেরা। সেখানে আঠেরো রকম মাছ রান্নার বিস্তারিত পদ্ধতি ধাপে ধাপে লেখা আছে। এর পরের আমলের কবি ঈশ্বর গুপ্ত। তিনি তো তোপসে মাছ নিয়ে এতটাই অবসেসড ছিলেন যে একটা গোটা কবিতা লিখে ফেলেছিলেন তোপসে নিয়ে—
কষিত-কনককান্তি কমনীয় কায়।
গালভরা গোঁফ-দাড়ি তপস্বীর প্রায়॥
মানুষের দৃশ্য নও বাস কর নীরে।
মোহন মণির প্রভা ননীর শরীরে॥
পাখি নও কিন্তু ধর মনোহর পাখা।
সুমধুর মিষ্ট রস সব-অঙ্গে মাখা॥
একবার রসনায় যে পেয়েছে তার।
আর কিছু মুখে নাহি ভালো লাগে তার॥
গলদা চিংড়ি নিয়েও কবির একটা খাসা কবিতা আছে। চিংড়ি নাকি মাছ না। জলের পোকা। ইংরাজিতে ব্রিটিশরা যাকে বলেন প্রন, মার্কিনরা তাঁকেই শ্রিম্প নামে ডাকেন। এ ছাড়াও আছে বড়ো বড়ো লবস্টার। বাংলায় অবশ্য পান্তা দিয়ে চিংড়ি মাছের ঝালচচ্চড়ি খাওয়ার রেওয়াজ অনেকদিনের। রামকানাইয়ের বড়ো ভাইয়ের শেষ অবস্থায় তাঁর স্ত্রী এই মেনুটাই খচ্ছিলেন, মনে করে দেখুন। গোপাল ভাঁড় সেই কিপটে পিসিকে জব্দ করতে লাউয়ের ঘণ্টে কেমন চিংড়ি ভাজা ফেলে দিয়েছিলেন, সে গল্প তো সবার জানা। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত তিন জাতের চিংড়ির চাষ হয়। বাগদা, গলদা ও চাপড়া। আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদা-চাপড়ার কদর সবচেয়ে বেশি। বিদেশের চাহিদা মেটাতে গিয়ে রাজ্যে চিংড়ি উৎপাদনও দিন দিন বেড়েছে। এখন রপ্তানি মার খাওয়ায় সেই উৎপাদন ‘বাড়তি’ হয়ে যাচ্ছে, ফলে ইদানীং খুচরো বাজারেও বাগদা-চাপড়ার ‘ঢল’ নেমেছে। বাঙালির অতীব প্রিয় খাদ্য চিংড়ির মালাইকারি। এই মালাইকারির ‘মালাই’ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে এই নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ মালাইকারিতে মালাই থাকে না। এ ব্যাপারে বিজনবিহারী ভট্টাচার্য বলেছিলেন— “…মালাই আসলে ফরাসি বালাহ থেকে এসেছে, যার অর্থ ঘন দুধ, ক্ষীর বা সর… কিন্তু চিংড়ির মালাইকারিতে মালাই তো থাকেই না। আসল কারণ অন্য। মালয় প্রদেশ থেকে আসা নারিকেল সমৃদ্ধ দক্ষিণী এই রান্নার প্রথম নাম ছিল ‘মালয় কারি’, যা ধীরে ধীরে মালাইকারি নাম নিয়েছে।” অনেকে আর-এক ধাপ এগিয়ে বলেন এই কারি নাকি কারিপাতা থেকে এসেছে। বিজয়গুপ্তের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে সনকার রান্নাঘরে উঁকি মারলে দেখা যায়—
‘ভিতরে মরিচ-গুঁড়া বাহিরে জড়ায় সূতা।
তৈলে পাক করি রান্ধে চিংড়ির মাথা।’
আবার দ্বিজ বংশীদাসের মনসামঙ্গলেও পাই ‘বড় বড় ইঁচা মৎস করিল তলিত।’ চণ্ডীমঙ্গলের খুলনা চিংড়ির বড়া বা অন্নদামঙ্গলের পদ্মমুখী ‘চিঙ্গরির ঝোল’ রান্না করছেন বলেও দেখতে পাই। বাঙালির কবিতায় চিংড়ি সেভাবে না দেখা গেলেও কালীঘাটের পটে চিংড়ি হাতে বাঙালি আর চিংড়ি মুখে বিড়াল তপস্বী চিংড়িকে অমর করেছে।
তবে বাঙালি এত কায়দায় না গিয়ে ভাত আর মাছের ঝোল পেলে আর কিছু চায় না। ফরাসি রান্নায় যেমন অমলেট বানানো এক কেতা, এখানে তেমনি কিছুদিন আগেও মেয়ে দেখতে গেলে সম্ভাব্য শ্বাশুড়িমাতার কমন প্রশ্নই ছিল মাছের ঝোল কীভাবে রাঁধতে হবে? বিধানচন্দ্র রায় নাকি বলতেন রোজ একবাটি মাছের ঝোল আর ভাত কেউ খেলে তার আর কোনও চিন্তা নেই। ‘চোখের বালি’তে বিহারী তার মাসিমা রাজলক্ষ্মীর রাঁধা মাছের ঝোলের কত যে গুণগান করেছে, তা বই না পড়লে বোঝা যায় না। ইলিশ নিয়ে বাঙালির বাড়াবাড়ি চিরকাল ছিল, আজও আছে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘ইলশে গুঁড়ি’ কবিতা লিখেছেন, বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন,
রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে
জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি-রাশি ইলিশের শব,
নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।
তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে
ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানির গিন্নির ভাঁড়ার
সরস সর্ষের ঝাঁজে। এল বর্ষা, ইলিশ-উৎসব।
যতীন্দ্রমোহন দত্তের লেখা ‘কালবোস মাছ’ নামের প্রবন্ধে আছে, বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত খণ্ডঘোষ গ্রামে কালী বসু নামে এক মেছো ভদ্রলোক বাস করতেন। তাঁর চার-পাঁচটা দিঘি ছিল, আর সেই দিঘিতে প্রচুর মাছ চাষ হত। শাজাহান বাদশার সময় এক মুসলমান রাজকর্মচারীর থেকে খবর পেয়ে তিনি গোদাবরীর তীর থেকে নতুন একধরনের মাছের ডিম নিয়ে এসে নিজের দিঘিতে ছাড়েন। সেই মাছ বড়ো হলে ‘যে চাহিত তাহাকেই বিলাইতেন।’ এই মাছ কালী বসুর মাছ বা কালবোস মাছ নামে খ্যাত হয়।
সব লেখা রবি ঠাকুরকে দিয়ে শেষ না করলে শুদ্ধ হয় না। তাই এই আলোচনার শেষটাও তাঁকে দিয়েই করি। তিনি যে ছোটোবেলায় ‘মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে’ লিখে মাছের গুণগান শুরু করেছিলেন, তা জীবনের শেষ অবধি বিদ্যমান ছিল। মাছ না ভালোবাসলে কে শুধু ছন্দ বোঝাতে লেখেন ‘পাৎলা করি কাটো প্রিয়ে কাৎলা মাছটিরে’!
জানি অতি অল্প হইল। কিন্তু এই বিষয়ে এখানেই ইতি টানি।
বোম্বের হাঁসফাঁস
শুঁটকি হিসেবে যত মাছ বিখ্যাত, তাদের একেবারে সামনের সারিতে থাকবে লটে মাছ। বাঙালরা যাকে আদর করে ডাকেন লইট্যা। উরচেস্টার সস মাখিয়ে এই শুঁটকি খাওয়া এখন পশ্চিমে এক অনন্য ডেলিকেসি। এখানেও তো ঝুরো থেকে চপ, টাটকা থেকে বাসি সবরকম শুঁটকি আমাদের প্রিয়। ইংরাজিতে এই মাছের নাম বোম্বে ডাক। কিন্তু এমন অদ্ভুত নাম কেন? এ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত। কেউ বলেন এই মাছ ভারতের পশ্চিমঘাটে পাওয়া যেত। সেখানে এর নাম বোম্বিল। বোম্বে নামটাও নাকি এই বোম্বিলেরই দান। হতে পারে। তবে ডাক কেন? হাঁসের সঙ্গে এর কীসের মিল?
ইদানীং অবশ্য একটা জবরদস্ত কারণ পাওয়া গেছে। এই ডাক হাঁসের ডাক না। বোম্বে থেকে মেল ট্রেনে চেপে সারা ভারতে এই শুঁটকি মাছ রপ্তানি করা হত। বোম্বের মেল ট্রেনকে বলা হত বোম্বে ডাক ( ডাকঘর অর্থে)। আর এই মাছের এমন সুবাস, যে সেই ট্রেনে আসা সব চিঠি, কাগজ, পত্রিকায় এই মাছের সৌরভ লেগে থাকত। ধীরে ধীরে সেই ট্রেনের নামেই এই মাছের নাম হয়ে গেল বোম্বে ডাক।
১৯৯৭ সালে শুধু ব্রিটেনে প্রতি বছর বারো টন লটে শুঁটকি রপ্তানি হত। এমন সময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আইন করে শুঁটকি রপ্তানি দিলেন বন্ধ করে। এ থেকে নাকি রোগ ছড়াতে পারে। ব্রিটেনে হাহাকার। শুরু হয়ে গেল ‘সেভ বোম্বে ডাক’ ক্যাম্পেন। মোমবাতি মিছিল হয়েছিল কি না জানি না অবশ্য। চাপে পড়ে কমিশন ছাড় দিলেন আর ব্রিটিশরাও শুঁটকি খেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
রেড হেরিং-এর আসল কথা
গোয়েন্দা গল্পের পাঠকদের নতুন করে বলার কিছু নেই, যারা জানেন না, বলি, রেড হেরিং মানে ভুল ক্লু দিয়ে গোয়েন্দা বা পুলিশ (এবং পাঠককেও) ভুল পথে চালিত করা। কিন্তু ইংরাজি শব্দবন্ধে এমন মেছো শব্দ এল কীভাবে? অষ্টাদশ আর উনিশ শতকে গোটা ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি ধরা হত হেরিং মাছ। সেই মাছ সংরক্ষণের জন্য মাছকে নুন মাখিয়ে ধোঁয়া দিয়ে রাখা হত, যাতে বেশ কয়েক হপ্তা পরেও তা খাওয়ার উপযোগী থাকে। এই ধোঁয়ার ফলে মাছে গাঢ় বাদামি-লাল একটা রং দেখা যেত আর মাছ দিয়ে তীব্র একটা গন্ধ বার হত যাতে অন্য গন্ধ আর নাকে আসত না।
১৮০০ সালের মাঝামাঝি গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে শিয়াল শিকারের মোচ্ছব লাগে। দলে দলে শিকারিরা তেজিয়ান সব কুকুর নিয়ে ফক্স হান্টিং করতে যেত। শৃগালপ্রেমী কিছু মানুষ আগেভাগেই বড়ো বড়ো হেরিং-এর টুকরো নিয়ে বনের নানা জায়গায় লুকিয়ে রাখত, ফলে কুকুররা শিয়ালের গন্ধ না পেয়ে সেই লাল হেরিং-এর দিকেই ছুট লাগাত। কত শিয়ালের প্রাণ যে এভাবে বেঁচেছে তার ইয়ত্তা নেই। ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডে আইন করে শিয়াল শিকার বন্ধ হয়ে গেল, কিন্তু শব্দটা রয়ে গেল।
শুশি মানে কি কাঁচা মাছ?
ইদানীং কলকাতাতেও বেশ কিছু জায়গায় শুশি পাওয়া যাচ্ছে। আর অনেকেকেই বলতে শুনছি তাঁরা কাঁচা মাছ খেতে পারবেন না, তাই শুশি তাঁদের নাপসন্দ। সবিনয়ে জানাই শুশি মানে কাঁচা মাছ না, সেটাকে বলে সাসিমি। জাপানি এই রান্নায় একেবারে সদ্য কাটা মাছের ফালি দেওয়া হয়। সাসি মানে ফুটো করা আর মি মানে মাংস। শুরুতে মাছের মাথায় একটা লোহার কাঁটা বিঁধিয়ে মারা হত, সেই থেকেই এই নাম। জাপানে লাইভ সাসিমি রেস্তোরাঁও আছে, যেখানে আপনি আঙুল দিয়ে ভেসে বেড়ানো মাছকে দেখিয়ে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে সেটা কেটে হাজির করবে। সেই মাছে সাদা মুলো, ওয়াসাবি পেস্ট আর সয়া সস মিশিয়ে দিব্যি খান জাপানের মানুষ।
শুশি অবশ্য কাঁচা না, গেঁজানো মাছ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাছকে সংরক্ষণের পদ্ধতি ছিল ভাতের মধ্যে রেখে দেওয়া। মাছ কেটেকুটে, নুন দিয়ে, পরিষ্কার করে, কাঁটা ছাড়িয়ে চটচটে ভাতের মধ্যে রেখে দেওয়া হত। শুশি মানে টক। খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেকদিন রেখে দেওয়ার পর সেই মাছে একটা টক টক স্বাদ আসতই। প্রথমদিকে খাবার সময় উপরের ভাতটা ফেলে দেওয়া হত। চতুর্দশ শতক থেকে জাপানিরা সেই ভাতটাও ফেলত না। ভাত মেশানো এই মাছ সেসি-শুশি নামে বিখ্যাত হয়ে যায়।
কিন্তু সেসি শুশির চেয়ে নিগিরি শুশি এখন অনেক বেশি চলে। ইয়োহি হানায়া নামে এক মুদির ছেলে ১৮১৮ সালে টোকিওতে গিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকান খোলেন। প্রচলিত সেসি শুশির ভাতকে চেপে আঙুলের মাপের রোলের আকার দেন তিনি (নিগিরি মানে চেপে দেওয়া)। তারপর প্রতি রোলের উপরে সাজিয়ে দেন এক টুকরো গেঁজানো, টক মাছ। এভাবে শুশি খাওয়া অনেক সহজ। একবারে মুখে পুরে নেওয়া যায়। খবর গোটা জাপানে ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায় এই নিগিরি শুশি বেচেই নাকি হানায়ার ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে।