দীর্ঘ জীবনের পথ পরিক্রমায়
কি কি দেখলেন সবিস্তারে
উপস্হাপন করুন।
প্রথমে একটি রেল দেখেছিলাম, সঙ্গে
গাড়িও ছিল, সেই আমার প্রথম রেলগাড়ি দেখা,
ঠিক এর কিছুদিন পরে
হেমায়েতের দোকানে শুনেছিলাম আব্বাসউদ্দীনের গান।
এমন সময় রেললাইন আর আব্বাসউদ্দীনের গানের মাঝখানে
হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গায়, তছনছ মেজকাকা
কলিকাতা থেকে
পালিয়ে আসার সময় কানন বালার একখানা ছবি সঙ্গে নিয়ে
এসেছিলেন, পকেটে ছিলো রানী ভিক্টোরিয়ার মাথাওয়ালা টাকা।
লড়কে লেঙ্গের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বাবা যে কোথায়
হারিয়ে গেলেন, কেউ যখন কিছুতেই বলতে পারলো না
তখন মা বললেন,
ও আর ফিরবেনা কোনদিন।
মনে আছে, এদিক-সেদিক করে আমরা যেদিন এখানে এসে
পৌঁছালাম, সেদিন বেষপতিবার ছিলো, মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল,
সেই সঙ্গে মা কেঁদেছিলেন খুব, খুব সম্ভবত: বাবার স্মৃতি মনে করে।
এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরির পর একজন অনাত্নীয় একটি সরকারী
চাকরী জুটিয়ে দিয়েছিলেন, শর্ত তার মেয়েটিকে উদ্ধার করে দিতে হবে
দিয়েছিলামও তাই।
মাঝখানে অনেকখানি ফাঁক। তারপরে মুক্তিযুদ্ধের বছরে ছেলেমেয়ে নিয়ে
এলে-বেলে, বলে কয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম, ওপারে বেঁচে গিয়েছিল
মুক্তিযোদ্ধা ছেলেটিও।
পাড়ার অনেকে সে বছর খুব খাতির যত্নে রেখেছিল আমাদের, বিশেষত:
দেশ স্বাধীন হবার পরে। তারপরে আবার সেই ছেচল্লিশের দাঙ্গায়
যেভাবে মা সহ পথে নেমেছিলাম এবারও তাই, তবে মা ছিলো না
বলে বাবার প্রসঙ্গ ওঠেনি। শুধু প্রসঙ্গ উঠেছিল আমার মুক্তিযোদ্ধা
ছেলেটিকে নিয়ে,
যে আমার বাবার মত ঘর থেকে বের হয়ে ফিরে আসেনি আজো।
এতো দু:খ-কষ্টের পরেও আব্বাসউদ্দীনের গান, কাননবালার ছবি
এবং আমার জীবনের সমস্ত স্মৃতি আপনার সম্মুখে উপস্থাপন করলাম,
মহোদয়
যদি কোন অপরাধ করে থাকি , যেন ক্ষমার যোগ্য হই।
বিজ্ঞ মহোদয় বললেন,
সব শুনলাম, এবার আপনি নথিতে উপস্থাপন করুন
কেন আপনার ছেলে
মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলো ?