মহেশের মহাযাত্রা – পরশুরাম
কেদার চাটুজ্যে মহাশয় বলিলেন, ‘আজকাল তোমরা সামান্য একটু বিদ্যে শিখে নাস্তিক হয়েছ, কিছুই মানতে চাও না। যখন আরও একটু শিখবে তখন বুঝবে যে আত্মা আছেন। ভূত, পেতনী—এঁরাও আছেন। বেম্মদত্যি, কন্ধকাটা—এঁয়ারাও আছেন।’
বংশলোচনবাবুর বৈঠকখানায় গল্প চলিতেছিল। তাঁহার শালা নগেন বলিল—‘আচ্ছা বিনোদ-দা, আপনি ভূত বিশ্বাস করেন?’
বিনোদ বলিল—‘যখন প্রত্যক্ষ দেখব তখন বিশ্বাস করব। তার আগে হাঁ-না কিছুই বলতে পারি না।’
চাটুজ্যে বলিলেন,—‘এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি ওকালতি কর! বলি, তোমার প্রপিতামহকে প্রত্যক্ষ করেছ? ম্যাকডোনাল্ড, চার্চিল আর বালডুইনকে দেখেছ? তবে তাদের কথা নিয়ে অত মাতামাতি কর কেন?’
‘আচ্ছা, আচ্ছা, হার মানছি চাটুজ্যেমশায়।’
‘আপ্তবাক্য মানতে হয়। আরে, প্রত্যক্ষ করা কি যার তার কম্ম? শ্রীভগবান কখনও কখনও তাঁর ভক্তদের বলেন—দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ। সেই দিব্যদৃষ্টি পেলে তবে সব দেখতে পাওয়া যায়।’
নগেন জিজ্ঞাসা করিল,—‘আপনি দেখতে পেয়েছেন চাটুজ্যেমশায়?’
‘জ্যাঠামি করিসনি। এই কলকাতা শহরে রাস্তায় যারা চলাফেরা করে—কেউ কেরানী, কেউ দোকানী, কেউ মজুর, কেউ আর কিছু—তোমরা ভাব সবাই বুঝি মানুষ। তা মোটেই নয়। তাদের ভেতর সর্বদাই দু-দশটা ভূত পাওয়া যায়। তবে চিনতে পারা দুষ্কর। এই রকম ভূতের পাল্লায় পড়েছিলেন মহেশ মিত্তির।’
‘কে তিনি?’
‘জান না? আমাদের মজিলপুরের চরণ ঘোষের মামার শালা। এককালে তিনি কিছু মানতেন না, কিন্তু শেষ দশায় তাঁকেও স্বীকার করতে হয়েছিল।’
সকলে একবাক্যে বলিলেন—‘কি হয়েছিল বলুন না চাটুজ্যেমশায!’
চাটুজ্যে মহাশয় হুঁকাটি হাতে তুলিয়া বলিতে আরম্ভ করিলেন।
ত্রিশ-চল্লিশ বৎসর আগেকার কথা। মহেশ মিত্তির তখন শ্যামবাজারের শিবচন্দ্র কলেজে প্রফেসরি করতেন। অঙ্কের প্রফেসর, অসাধারণ বিদ্যে, কিন্তু প্রচণ্ড নাস্তিক। ভগবান আত্মা পরলোক কিছুই মানতেন না। এমন কি, স্ত্রী মারা গেলে আর বিবাহ পর্যন্ত করেননি। খাদ্যাখাদ্যের বিচার ছিল না, বলতেন—শুয়োর না খেলে হিঁদুর উন্নতির আশা নেই, ওটা বাদ দিয়ে কোনও জাত বড় হতে পারেনি। মহেশের চালচলনের জন্য আত্মীয়স্বজন তাঁকে একঘরে করেছিল। কিন্তু যতই অনাচার করুন তাঁর স্বভাবটা ছিল অকপট, পারতপক্ষে মিথ্যা কথা কইতেন না। তাঁর পরমবন্ধু ছিলেন হরিনাথ কুণ্ডু, তিনিও ঐ কলেজের প্রফেসর, ফিলসফি পড়াতেন। কিন্তু বন্ধু হলে কি হয়, দুজনে হরদম ঝগড়া হত, কারণ হরিনাথ আর কিছু মানুন না মানুন ভূত মানতেন। তাছাড়া মহেশবাবু অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, কেউ তাঁকে হাসতে দেখেনি, আর হরিনাথ ছিলেন আমুদে লোক, কথায় কথায় ঠাট্টা করে বন্ধুকে উদ্ব্যস্ত করতেন। তবু মোটের ওপর তাঁদের পরস্পরের প্রতি খুব একটা টান ছিল।
তখন রাজনীতি চর্চার এত রেওয়াজ ছিল না, আর ভদ্রলোকের ছেলের অন্নচিন্তাও এমন চমৎকারা হয়নি, দু-একটা পাস করতে পারলে যেমন-তেমন চাকরি জুটে যেত। লোকের তাই উঁচুদরের বিষয় আলোচনা করবার সময় ছিল। ছোকরারা চিন্তা করত—বউ ভালবাসে কি বাসে না। যাদের সে সন্দেহ মিটে গেছে, তারা মাথা ঘামাত—ভগবান আছেন কি নেই। একদিন কলেজে কাজ ছিল না, অধ্যাপকেরা সকলে মিলে গল্প করছিলেন। গল্পের আরম্ভ যা নিয়েই হ’ক, মহেশ আর হরিনাথ কথাটা টেনে নিয়ে ভূতে আর ভগবানে হাজির করতেন, কারণ এই নিয়ে তর্ক করাই তাঁদের অভ্যাস। এদিনও তাই হয়েছিল।
আলোচনা শুরু হয় ঝি-চাকরের মাইনে নিয়ে। কলেজের পণ্ডিত দীনবন্ধু বাচস্পতিমশায় দুঃখ করছিলেন—‘ছোটলোকের লোভ এত বেড়ে গেছে যে আর পেরে ওঠা যায় না।’ মহেশবাবু বললেন—‘লোভ সকলেরই বেড়েছে, আর বাড়াই উচিত, নইলে মনুষ্যত্বের বিকাশ হবে কিসে। পণ্ডিতমশায় উত্তর দিলেন—‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।’ মহেশবাবু পালটা জবাব দিলেন—‘লোভ ত্যাগ করলেও মৃত্যুকে ঠেকানো যায় না।’
তর্কটা তেমন জুতসই হচ্ছে না দেখে হরিনাথবাবু একটু উসকে দেবার জন্য বললেন—‘আমাদের মতন লোকের লোভ হওয়া উচিত মৃত্যুর পর। মাইনে তো পাই মোটে পৌনে দু-শ, তাতে ইহলোকের কটা শখই বা মিটবে, তাইতো পরকালের আশায় বসে আছি, আত্মাটা যদি স্বর্গে গিয়ে একটু ফুর্তি করতে পারে।’
দীনবন্ধু পণ্ডিত বললেন—‘কে বললে তুমি স্বর্গে যাবে? আর স্বর্গের তুমি জানই বা কি?’
‘সমস্তই জানি পণ্ডিতমশাই। খাসা জায়গা, না গরম না ঠাণ্ডা। মন্দাকিনী কুলুকুলু বইছে, তার ধারে ধারে পারিজাতের ঝোপ। সবুজ মাঠের মধ্যিখানে কল্পতরু গাছে আঙ্গুর বেদানা আম রসগোল্লা কাটলেট সব রকম ফলে আছে ছেঁড় আর খাও। জন-কতক ছোকরা-দেবদূত গোলাপী উড়নি গায়ে দিয়ে সুধার বোতল সাজিয়ে বসে রয়েছে, চাইলেই ফটাফট খুলে দেবে। ওই হোথা কুঞ্জবনে ঝাঁকে ঝাঁকে অপ্সরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, দুদণ্ড রসালাপ কর, কেউ কিছু বলবে না। যত খুশি নাচ দেখ, গান শোন। আর কোলোয়াতি চাও তো নারদ মুনির আস্তানায় যাও।’
মহেশবাবু বললেন—‘সমস্ত গাঁজা। পরলোক আত্মা ভূত ভগবান কিছুই নেই। ক্ষমতা থাকে প্রমাণ কর।’
তর্ক জমে উঠল। প্রফেসররা কেউ এক পক্ষে কেউ অপর পক্ষে দাঁড়ালেন। পণ্ডিতমশায় দারুণ অবজ্ঞায় ঠোঁট উলটে বসে রইলেন। বৃদ্ধ প্রিনসিপাল যদু সান্ডেল রফা করে বললেন—‘ভূতের তেমন দরকার দেখি না, কিন্তু আত্মা আর ভগবান বাদ দিলে চলে না।’ মহেশ মিত্তির বললেন—‘কেউ-উ নেই, আমি দশ মিনিটের মধ্যে প্রমাণ করে দিচ্ছি।’ হরিনাথ কুণ্ডু মহা উৎসাহে বন্ধুর পিঠ চাপড়ে বললেন—‘লেগে যাও।’
তারপর মহেশবাবু ফুলস্কাপ কাগজ আর পেনসিল নিয়ে একটি বিরাট অঙ্ক কষতে লেগে গেলেন। ঈশ্বর আত্মা আর ভূত—এই তিন রাশি নিয়ে অতি জটিল অঙ্ক, তার গতি বোঝে কার সাধ্য। বিস্তর যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করে হাতির শুঁড়ের মতন বড় বড় চিহ্ন টেনে অবশেষে সমাধান করলেন—ঈশ্বর=°, আত্মা=ভূত=√°।
বাচস্পতি বললেন—‘বদ্ধ উন্মাদ।’
মহেশবাবু বললেন—‘উন্মাদ বললেই হয় না। এ হল গিয়ে দস্তুরমত ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলস। সাধ্য থাকে তো আমার অঙ্কের ভুল বার করুন।’
হরিনাথ বললেন—‘অঙ্ক-টঙ্ক আমার আসে না। বাচস্পতিমশায় যদি ভগবান দেখাবার ভার নেন তো আমি মহেশকে ভূত দেখাতে পারি।’
বাচস্পতি বললেন—‘আমার বয়ে গেছে।’
মহেশবাবু বললেন—‘বেশ তো হরিনাথ, তুমি ভূতই দেখাও না। একটার প্রমাণ পেলে আর সমস্তই মেনে নিতে রাজী আছি।’
হরিনাথবাবু বললেন—‘এই কথা? আচ্ছা, আসছে হপ্তায় শিব-চতুর্দশী পড়ছে। সেদিন তুমি আমার সঙ্গে রাত বারোটায় মানিকতলায় নতুন খালের ধারে চল, পষ্টাপষ্টি ভূত দেখিয়ে দেব। কিন্তু যদি কোন বিপদ ঘটে তো আমাকে দুষতে পারবে না।’
‘যদি দেখাতে না পার?’
‘আমার নাক কান কেটে দিও। আর যদি দেখাতে পারি তো তোমার নাক কাটব।’
প্রিনসিপাল যদু সাণ্ডেল বললেন—‘কাটাকাটির দরকার কি, সত্যের নির্ণয় হলেই হল।’
শিব-চতুর্দশীর রাত্রে মহেশ মিত্তির আর হরিনাথ কুণ্ডু মানিকতলায় গেলেন। জায়গাটা তখন বড়ই ভীষণ ছিল, রাস্তায় আলো নেই, দুধারে বাবলা গাছে আরও অন্ধকার করেছে। সমস্ত নিস্তব্ধ, কেবল মাঝে মাঝে প্যাঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে। হোঁচট খেতে খেতে দুজনে নতুন খালের ধারে পৌঁছলেন। বছর-দুই আগে ওখানে প্লেগের হাসপাতাল ছিল, এখনও তার গোটাকতক খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে।
মহেশ মিত্তির অবিশ্বাসী সাহসী লোক, কিন্তু তাঁরও গা ছমছম করতে লাগল। হরিনাথ সারা রাস্তা কেবল ভূতের কথাই কয়েছেন—তারা দেখতে কেমন, মেজাজ কেমন, কি খায়, কি পরে। দেবতারা হচ্ছেন উদার প্রকৃতি দিলদরিয়া, কেউ তাঁদের না মানলেও বড় একটা কেয়ার করেন না। কিন্তু অপদেবতারা পদবীতে খাটো বলে তাঁদের আত্মসম্মানবোধ বড়ই উগ্র, না মানলে ঘাড় ধরে তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা আদায় করেন। এই সব কথা।
হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ শোনা গেল, যেন কোনও অশরীরী বেরাল তার পলাতকা প্রণয়িনীকে আকুল আহ্বান করছে। একটু পরেই মহেশবাবু রোমাঞ্চিত হয়ে দেখলেন, একটা লম্বা রোগা কুচকুচে কাল মূর্তি দু-হাত তুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনে একটু দূরে ঐ রকম আরও দুটো।
হরিনাথবাবু থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললেন—‘রাম রাম সীতারাম! ও মহেশ, দেখছ কি, তুমিও বল না।’
আর একটু হলেই মহেশবাবু রামনাম উচ্চারণ করে ফেলতেন, কিন্তু তাঁর কনশেন্স্ বাধা দিয়ে বললে—‘উঁহুঁ, একটু সবুর কর, যদি ঘাড় মটকাবার লক্ষণ দেখ তখন না-হয় রামনাম করা যাবে।’
এঁরা একটা পাকুড় গাছের নিচে ছিলেন। হঠাৎ ওপর থেকে খানিকটা কাদাগোলা জল মহেশের মাথায় এসে পড়ল।
তখন সামনের সেই কাল মূর্তিটা নাকী সূরে বললে—‘মহেশবাবু, আপনি নাকি ভূত মানেন না?’
এ অবস্থায় বুদ্ধিমান ব্যক্তি মাত্রেই বলে থাকেন—আজ্ঞে হাঁ, মানি বই কি। কিন্তু মহেশ মিত্তির বেয়াড়া লোক, হঠাৎ তাঁর কেমন একটা খেয়াল হল, ধাঁ করে এগিয়ে গিয়ে ভূতের কাঁধ খামচে ধরে জিজ্ঞাসা করলেন—‘কোন্ ক্লাস?’
ভূত থতমত খেয়ে জবাব দিলে—‘সেকেন্ড ইয়ার সার!’
‘রোল নম্বর কত?’
ভূত করুণ নয়নে হরিনাথের দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলে—‘বলি সার?’
হরিনাথের মুখে রাম রাম ভিন্ন কথা নেই। পিছনের দুটো ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল। পাকুড় গাছে যে ছিল সে টুপ করে নেমে এসে পালিয়ে গেল। তখন বেগতিক দেখে সামনের ভূতটি ঝাঁকুনি দিয়ে মহেশের হাত ঘড়িয়ে চোঁচা দৌড় মারলে।
মহেশ মিত্তির হরিনাথের পিঠে একটা প্রচণ্ড কিল মেরে বললেন—‘জোচ্চোর!’
হরিনাথও পালটা কিল মেরে বললেন—‘আহম্মক!’
নিজের নিজের পিঠে হাত বুলতে বুলতে দুই বন্ধু বাড়ি-মুখো হলেন। আসল ভূত যারা আশেপাশে লুকিয়ে ছিল তারা মনে মনে বললেন—আজি রজনীতে হয়নি সময়।
পরদিন কলেজে হুলস্থূল বেধে গেল। সমস্ত ব্যাপার শুনে প্রিনসিপাল ভয়ংকর রাগ করে বললেন—‘অত্যন্ত শেমফুল কাণ্ড। দুজন নামজাদা অধ্যাপক, একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হাতাহাতি! হরিনাথ তোমার লজ্জা নেই?’
হরিনাথবাবু ঘাড় চুলকে বললেন—‘আজ্ঞে আমার উদ্দেশ্যটা ভালই ছিল। মহেশকে রিফর্ম করবার জন্য যদি একটু ইয়ে করেই থাকি তাতে দোষটা কি—হাজার হোক আমার বন্ধু তো?’
মহেশবাবু গর্জন করে বললেন—‘কে তোমার বন্ধু?’
প্রিনসিপাল বললেন—‘মহেশ তুমি চুপ কর। উদ্দেশ্য যাই হ’ক কলেজের ছেলেদের এর ভেতর জড়ানো একেবারে অমার্জনীয় অপরাধ। হরিনাথ তুমি বাড়ি যাও, তোমায় সাসপেন্ড করলুম। আর মহেশ তোমাকেও সাবধান করে দিচ্ছি—আমার কলেজে ভুতুড়ে তর্ক তুলতে পারবে না।’
মহেশবাবু উত্তর দিলেন—‘সে প্রতিশ্রুতি দেওয়া শক্ত। সকল রকম কুসংস্কার দূর করাই আমার জীবনের ব্রত।’
‘তবে তোমাকেও সাসপেন্ড করলুম।’
অন্যান্য অধ্যাপকরা চুপ করে সমস্ত শুনছিলেন। তাঁরা প্রিনসিপালের হুকুম শুনে কোনও প্রতিবাদ করলেন না, কারণ সকলেই জানতেন যে তাঁদের কর্তার রাগ বেশিদিন থাকে না।
মহেশবাবু তাঁর বাসায় ফিরে এলেন। হরিনাথের ওপর প্রচণ্ড রাগ—হতভাগা একটা গভীর তত্ত্বের মীমাংসা করতে চায় জুয়োচুরির দ্বারা! সে আবার ফিলসফি পড়ায়! এমন অপ্রত্যাশিত আঘাত মহেশ কখনও পাননি।
মানুষের মন যখন নিদারুণ ধাক্কা খায় তখন সে তার ভাব ব্যক্ত করবার জন্য উপায় খোঁজে। কেউ কাঁদে, কেউ তর্জন-গর্জন করে, কেউ কবিতা লেখে। একটা তুচ্ছ কোঁচবকের হত্যাকাণ্ড দেখে মহর্ষি বাল্মীকির মনে যে ঘা লেগেছিল তাই প্রকাশ করবার জন্য তিনি হঠাৎ দু-ছত্ৰ শ্লোক রচনা করে ফেলেন—মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বম্ ইত্যাদি। তার পর সাতকাণ্ড রামায়ণ লিখে তাঁর ভাবের বোঝা নামাতে পেরেছিলেন। আমাদের মহেশ মিত্তির চিরকাল নীরস অঙ্কশাস্ত্রের চর্চা করে এসেছেন, কাব্যের কিছুই জানতেন না। কিন্তু আজ তাঁরও মনে সহসা একটা কবিতার অঙ্কুর গজগজ করতে লাগল। তিনি আর বেগ সামলাতে পারলেন না, কলেজের পোশাক না ছেড়েই বড় একখানা আল্জেব্রা খুলে তার প্রথম পাতায় লিখলেন—
হরিনাথ কুণ্ডু,
খাই তার মুণ্ডু।
কবিতাটি লিখে বার বার ডাইনে বাঁয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে দেখে আদি কবি বাল্মীকির মতন ভাবলেন, হাঁ, উত্তম হয়েছে।
কিন্তু একটা খটকা বাধল। কুণ্ডুর সঙ্গে মণ্ডুর মিল আবহমান কাল থেকে চলে আসছে, এতে মহেশের কৃতিত্ব কোথায়? কালিদাসই হন, আর রবীন্দ্রনাথই হন, কুণ্ডুর সঙ্গে মুণ্ড মেলাতেই হবে—এ হল প্রকৃতির অলঅঙ্ঘনীয় নিয়ম। মহেশ একটু ভেবে ফের লিখলেন—
কুণ্ড হরিনাথ,
মুণ্ডু করি পাত।
হাঁ, এইবার মৌলিক রচনা বলা যেতে পারে। মহেশের মনটা একটু শান্ত হল। কিন্তু কাব্যসরস্বতী যদি একবার কাঁধে ভর করেন তবে সহজে নামতে চান না। মহেশবাবু লিখতে লাগলেন—
হরিনাথ ওরে,
হবি তুই মরে
নরকের পোকা
অতিশয় বোকা।
উঁহু, নরকই নেই তার আবার পোকা। মহেশবাবু, স্থির করলেন—কাব্যে কুসংস্কার নাম দিয়ে তিনি শীঘ্রই একটা প্রবন্ধ রচনা করবেন, তাতে মাইকেল রবীন্দ্রনাথ কাকেও রেহাই দেবেন না। তার পর তাঁর কবিতার শেষের চার লাইন কেটে দিয়ে ফের লিখলেন—
ওরে হরিনাথ,
তোরে করি কাত,
পিঠে মারি চড়—
এমন সময় মহেশের চাকরটা এসে বললে—‘বাবু চা হবে কি দিয়ে? দুধ তো ছিঁড়ে গেছে।’
মহেশবাবু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন—‘সেলাই করে নে।’
পিঠে মারি চড়,
মুখে গুঁজি খড়।
জ্বেলে দেশলাই
আগুন লাগাই।
কিন্তু আবার এক আপত্তি। হরিনাথকে পুড়িয়ে ফেললে জগতের কোন লাভ হবে না, অনর্থক খানিকটা জান্তব পদার্থ বরবাদ হবে। বরং তার চাইতে—
হরিনাথ ওরে
পোড়াব না তোরে।
নিয়ে যাব ধাপা।
দেব মাটি চাপা।
সার হয়ে যাবি।
ঢ্যাঁড়স ফলাবি।
মহেশবাবু আরও অনেক লাইন রচনা করেছিলেন, তা আমার মনে নাই। কবিতা লিখে খানিকটা উচ্ছ্বাস বেরিয়ে যাওয়ায় তাঁর হৃদয়টা বেশ হালকা হল, তিনি কাপড়-চোপড় ছেড়ে ইজি-চেয়ারে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।
তিন দিন যেতে না যেতে প্রিনসিপাল মহেশ আর হরিনাথকে ডেকে পাঠালেন। তাঁরা আবার নিজের নিজের কাজে বহাল হলেন, কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে গেল। সহকর্মীরা মিলনের অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু কোনও ফল হল না। হরিনাথ বরং একটু সন্ধির আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, কিন্তু মহেশ একেবারে পাথরের মতন শক্ত হয়ে রইলেন।
কিছুদিন পরে মহেশবাবুর খেয়াল হল—প্রেততত্ত্ব সম্বন্ধে এক তরফা বিচার করাটা ন্যায়সংগত নয়, এর অনুকূল প্রমাণ কে কি দিয়েছেন তাও জানা উচিত। তিনি দেশী বিলাতী বিস্তর বই সংগ্রহ করে পড়তে লাগলেন, কিন্তু তাতে তাঁর অবিশ্বাস আরও প্রবল হল। প্রত্যক্ষ প্রমাণ কিছুই নেই, কেবল আছে—অমুক ব্যক্তি কি বলেছেন আর কি দেখেছেন। বাঘের অস্তিত্বে মহেশের সন্দেহ নেই। কারণ জন্তুর বাগানে গেলেই দেখা যায়। ভূত যদি থাকেই তবে খাঁচায় পুরে দেখা না বাপু। তা নয়, শুধু ধাপ্পাবাজি। প্রেততত্ত্ব চর্চা করে মহেশবাবু বেজায় চটে উঠলেন। শেষটায় এমন হল যে ভূতের গুষ্ঠিকে গালাগাল না দিয়ে তিনি জলগ্রহণ করতেন না।
পড়ে পড়ে মহেশের মাথা গরম হয়ে উঠল। রাত্রে ঘুম হয় না, কেবল স্বপ্ন দেখেন ভূতে তাঁকে ভেংচাচ্ছে। এমন স্বপ্ন দেখেন বলে নিজের উপরও তাঁর রাগ হতে লাগল। ডাক্তার বললে—পড়াশুনা বন্ধ করুন, বিশেষ করে ঐ ভূতুড়ে বইগুলো—যা মানেন না তার চর্চা করেন কেন? কিন্তু ঐ সব বই পড়া মহেশের এখন একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়লেই রাগ হয়, আর সেই রাগেতেই তাঁর সুখ।
অবশেষে মহেশ মিত্তির কঠিন রোগে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। দিন দিন শরীর ক্ষয়ে যেতে লাগল, কিন্তু রোগটা ঠিক নির্ণয় হল না। সহকর্মীরা প্রায়ই এসে তাঁর খবর নিতেন। হরিনাথও একদিন এসেছিলেন, কিন্তু মহেশ তাঁর মুখদর্শন করলেন না।
সাত-আট মাস কেটে গেল। শীতকাল, রাত দশটা। হরিনাথবাবু শোবার উদ্যোগ করছেন এমন সময় মহেশের চাকর এসে খবর দিলে যে তার বাবু ডেকে পাঠিয়েছেন, অবস্থা বড় খারাপ। হরিনাথ তখনই হাতিবাগানে মহেশের বাসায় ছুটলেন।
মহেশের আর দেরি নাই, মৃত্যুর ভয়ও নেই। বললেন—‘হরিনাথ তোমায় ক্ষমা করলুম। কিন্তু ভেবো না যে আমার মত কিছুমাত্র বদলেছে। এই রইল আমার উইল, তোমাকেই অছি নিযুক্ত করেছি। আমার পৈতৃক দশ হাজার টাকার কাগজ ইউনির্ভাসিটিকে দান করেছি, তার সুদ থেকে প্রতি বৎসর একটা পুরস্কার দেওয়া হবে। যে ছাত্র ভূতের অনস্তিত্ব সম্বন্ধে শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ লিখবে সে ঐ পুরস্কার পাবে। আর দেখ—খবরদার, শ্রাদ্ধ-টাদ্ধ করো না। ফুলের মালা চন্দন-কাঠ ঘি এসব দিও না, একদম বাজে খরচ। তবে হাঁ, দু-চার বোতল কেরোসিন ঢালতে পার। দেড় সের গন্ধক আর পাঁচ সের সোরা আনানো আছে, তাও দিতে পার, চটপট কাজ শেষ হয়ে যাবে। আচ্ছা, চললুম তা হলে।’
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। মহেশের আত্মীয়স্বজন কেউ কলকাতায় নেই, থাকলেও বোধ হয় তারা আসত না। বড়দিনের বন্ধ, কলেজের সহকর্মীরা প্রায় সকলেই অন্যত্র গেছে। হরিনাথ মহা বিপদে পড়লেন। মহেশবাবুর চাকরকে বললেন পাড়ার জনকতক লোক ডেকে আনতে।
অনেকক্ষণ পরে দুজন মাতব্বর প্রতিবেশী এলেন। ঘরে ঢুকলেন না, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন—‘চুপ করে বসে আছেন যে বড়? সৎকারের ব্যবস্থা কি করলেন?’
হরিনাথ বললেন, ‘আমি একলা মানুষ, আপনাদের ওপরেই ভরসা।’
‘ওই বেলাল্লা হতভাগার লাশ আমরা বইব? ইয়ারকি পেয়েছেন নাকি!’ এই কথা বলেই তাঁরা সরে পড়লেন।
হরিনাথের তখন মনে পড়ল, বড় রাস্তার মোড়ে একটা মাটকোঠায় সাইনবোর্ড দেখেছেন—বৈতরণী সমিতি, ভদ্রমহোদয়গণের দিবারাত্র সস্তায় সৎকার। চাকরকে বসিয়ে রেখে তখনই সেই সমিতির খোঁজে গেলেন।
অনেক চেষ্টায় সমিতি থেকে তিনজন লোক যোগাড় হল। পনর টাকা পারিশ্রমিক, আর শীতের ওষুধ বাবদ ন-সিকে। সমস্ত আয়োজন শেষ হলে হরিনাথ আর তাঁর তিন সঙ্গী খাট কাঁধে নিয়ে রাত আড়াইটার সময় নিমতলায় রওনা হলেন।
অমাবস্যার রাত্রি, তার ওপর আবার কুয়াশা। হরিনাথের দল কর্নওয়ালিস স্ট্রীট দিয়ে চললেন। গ্যাসের আলো মিটমিট করছে, পথে জনমানব নেই। কাঁধের বোঝা ক্রমেই ভারী বোধ হতে লাগল, হরিনাথ হাঁপিয়ে পড়লেন। বৈতরণী সমিতির সর্দার ত্রিলোচন পাকড়াশী বুঝিয়ে দিলেন—এমন হয়েই থাকে, মানুষ মরে গেলে তার ওপর জননী বসুন্ধরার টান বাড়ে।
হরিনাথ একলা নয়, তাঁর সঙ্গীরা সকলেই সেই শীতে গলদ্ঘর্ম হয়ে উঠল। খাট নামিয়ে খানিক জিরিয়ে আবার যাত্রা।
কিন্তু মহেশ মিত্তিরের ভার ক্রমশই বাড়ছে, পা আর এগোয় না। পাকড়াশী বললেন—‘ঢের ঢের বয়েছি মশাই, কিন্তু এমন জগদ্দল মড়া কখনও কাঁধে করিনি। দেহটা তো শুকনো, লোহা খেতেন বুঝি? পনেরো টাকায় হবে না মশায়, আরো পাঁচ টাকা চাই।’
হরিনাথ তাতেই রাজী, কিন্তু সকলে এমন কাবু হয়ে পড়েছে যে দু-পা গিয়ে আবার খাট নামাতে হল। হরিনাথ ফুটপাতে এলিয়ে পড়লেন, বৈতরণীর তিন জন হাঁপাতে হাঁপাতে তামাক টানতে লাগল।
ওঠবার উপক্রম করছেন এমন সময় হরিনাথের নজর পড়ল—কুয়াশার ভেতর দিয়ে একটা আবছায়া তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এলে দেখলেন—কাল র্যাপার মুড়ি দেওয়া একটা লোক। লোকটি বললে—‘এঃ, আপনারা হাঁপিয়ে পড়েছেন দেখছি। বলেন তো আমি কাঁধ দিই।’
হরিনাথ ভদ্রতার খাতিরে দু-একবার আপত্তি জানালেন কিন্তু শেষটায় রাজী হলেন। লোকটি কোন্ জাত তা আর জিজ্ঞাসা করলেন না, কারণ মহেশ মিত্তির ও বিষয়ে চিরকাল সমদর্শী, এখন তো কথাই নেই। তা ছাড়া যে লোক উপযাচক হয়ে শ্মশানযাত্রার সঙ্গী হয় সে তো বান্ধব বটেই।
ত্রিলোচন পাকড়াশী বললেন,—‘কাঁধ দিতে চাও দাও, কিন্তু বখরা পাবে না, তা বলে রাখছি।’
আগন্তুক বললে—‘বখরা চাই না।’
এবার হরিনাথকে কাঁধ দিতে হল না, তাঁর জায়গায় নতুন লোকটি দাঁড়াল। আগের চেয়ে যাত্রাটা একটু দ্রুত হল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আর পা চলে না, ফের নামিয়ে বিশ্রাম।
পাকড়াশী বললেন—‘কুড়ি টাকার কাজ নয় বাবু, এ হল মোষের গাড়ির বোঝা। আরও পাঁচ টাকা চাই।’
এমন সময় আবার একজন পথিক এসে উপস্থিত—ঠিক প্রথম লোকটির মতন কাল র্যাপার গায়ে। এও খাট বইতে প্রস্তুত। হরিনাথ দ্বিরুক্তি না করে তার সাহায্য নিলেন। এবার পাকড়াশী রেহাই পেলেন।
খাট চলেছে, আর একটু জোরে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার ক্লান্তি। মহেশের ভার অসহ্য হয়ে উঠেছে, তার দেহে কিছু ঢোকেনি তো? খাট নামিয়ে আবার সবাই দম নিতে লাগল।
কে বলে শহুরে লোক স্বার্থপর? আবার একজন সহায় এসে হাজির, সেই কাল র্যাপার গায়ে। হরিনাথের ভাববার অবসর নেই, বললেন, ‘চল, চল।’
আবার যাত্রা, আরও একটু জোরে, তারপর ফের খাট নামাতে হল। এই যে, চতুর্থ বাহক এসে হাজির, সেই কাল র্যাপার। এরা কি মহেশকে বইবার জন্য এই তিন পহর রাতে পথে বেরিয়েছে। হরিনাথের আশ্চর্য হবার শক্তি নেই, বললেন—‘ওঠাও খাট, চল জলদি।’
চারজন অচেনা বাহকের কাঁধে মহেশের খাট চলেছে, পিছনে হরিনাথ। আর বৈতরণী সমিতির তিন জন। এইবার গতি বাড়ছে, খাট হনহন করে চলছে। হরিনাথ আর তাঁর সঙ্গীদের ছুটতে হল।
আরে অত তাড়াতাড়ি কেন, একটু আস্তে চল। কেই বা কথা শোনে! ছুট-ছুট। ‘আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ, থাম থাম, বীডন্ স্ট্রীট ছাড়িয়ে গেলে যে। লোকগুলো কি শুনতে পায় না? ওহে পাকড়াশী, থামাও না ওদের?’ কোথায় পাকড়াশী? তিনি বিচক্ষণ লোক, ব্যাপারটা বুঝে টাকার মায়া ত্যাগ করে সদলে পালিয়েছেন।
মহেশের খাট তখন তীর বেগে ছুটছে, হরিনাথ পাগলের মতন পিছু পিছু দৌড়চ্ছেন। কর্নওয়ালিস স্ট্রীট, গোলদিঘি, বউবাজারের মোড়—সব পার হয়ে গেল। কুয়াশা ভেদ করে সামনের সমস্ত পথ ফুটে উঠেছে—এ পথের কি শেষ নেই? রাস্তা কি ওপরে উঠেছে না নিচে নেমেছে? এ কি আলো না অন্ধকার? দূরে ও কি দেখা যাচ্ছে—সমুদ্রের ঢেউ, না চোখের ভুল?
হরিনাথ ছুটতে ছুটতে নিরন্তর চিৎকার করছেন—‘থাম, থাম।’ ও কি, খাটের ওপর উঠে বসেছে কে? মহেশ? মহেশই তো। কি ভয়ানক! দাঁড়িয়েছে, ছুটন্ত খাটের ওপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিছন ফিরে লেকচারের ভঙ্গিতে হাত নেড়ে কি বলছে?
দূর দূরান্তর থেকে মহেশের গলার আওয়াজ এল—‘হরিনাথ—ও হরিনাথ—ওহে হরিনাথ—’
‘কি, কি? এই যে আমি।’
‘ও হরিনাথ—আছে, আছে, সব আছে, সব সত্যি—’
মহেশের খাট অগোচর হয়ে এল, তখনও তাঁর ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে—‘আছে আছে—’
হরিনাথ মুর্ছিত হয়ে পড়লেন। পরদিন সকালে ওয়েলেস্লি স্ট্রীটের পুলিশ তাঁকে দেখতে পেয়ে মাতাল বলে চালান দিলে। তাঁর স্ত্রী খবর পেয়ে বহু কষ্টে তাঁকে উদ্ধার করেন।
বংশলোচনবাবু জিজ্ঞাসা করলেন—‘গয়ায় পিণ্ডি দেওয়া হয়েছিল কি?’
‘শুধু গয়ায়। পিণ্ডিদাদনখাঁএ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোন ফল হয়নি, পিণ্ডি ছিটকে ফিরে এল।’
‘তার মানে?’
‘মানে—মহেশ নিলেন না, কিংবা তাঁকে নিতে দিলে না।’
‘আশ্চর্য!—মহেশ মিত্তিরের টাকাটা?’
‘সেটা ইউনিভার্সিটিতে গচ্ছিত আছে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি, ভূতের বিপক্ষে প্রবন্ধ লিখতে ছাত্রের সাহস নেই। এখন সেই টাকা সুদে-আসলে প্রায় পঁচিশ হাজার হয়েছে। একবার সেনেটে প্রস্তাব ওঠে টাকাটা প্রত্নবিভাগের জন্য খরচ হ’ক। কিন্তু কোন ছাত্রের ওপর এমন এমন দুপদাপ শব্দ শুরু হল যে সব্বাই ভয়ে পালালেন। সেই থেকে মহেশফাণ্ডের নাম কেউ করে না।’