মহিষাসুর

মহিষাসুর

একবার আমাদের গ্রামে একটা বাঘ এসেছিল। আসল বাঘ নয়, চিতাবাঘ। কিন্তু তখন তো আমি খুব ছোট, তাই সব জিনিসই বড়—বড় লাগত।

আমি অবশ্য বাঘটা চোখে দেখিনি, শুধু ডাক শুনেছিলুম একবার। সেই ডাক শুনেই মনে হয়েছিল, মস্ত বড় একটা বাঘ এসেছে, আমাদের গ্রামের সব মানুষকে খেয়ে ফেলবে।

প্রায় তিন দিন আমাদের বাড়ি থেকে বেরুতেই দেওয়া হয়নি। দরজা—জানলা সব বন্ধ। বাবা—কাকারা লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন বাইরে। মাঝে—মাঝে হই—হই চিৎকার, লোকজনের ছুটোছুটি, দাপাদাপি। আমরা জানলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করতুম।

আমার ছোটকাকার বয়েস তখন ষোলো। সে বড়দের দলে প্রমোশন পেয়ে গেছে। ছোটকাকা মাঝে মাঝে বাইরে যায়, আবার একেবারে ভেতরে এসে নানারকম রোমহর্ষক গল্প শোনায়। বাঘটা একটা গোরু মেরেছে, দুটো বাচ্চা ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আর মুসলমান পাড়া থেকে বাঘ এক গণ্ডা মুর্গি চুরি করে নিয়ে গেছে। মুর্গি—চুরির কথাটা শুনেই আমার একটু খটকা লেগেছিল। বাঘে কি মুর্গি খায়? শেয়ালরা তো মুর্গি চুরি করে!

তবে কি ওটা বাঘ নয়, শেয়াল?

ছোটকাকা বলেছিল, ”শেয়াল? হেঃ! ডাক শুনলে পিলে চমকে যাবে! অতুলকাকা তো বাঘের ডাক শুনে পুকুরে লাফিয়ে পড়েছিল।”

”কেন, বাঘ বুঝি সাঁতার জানে না?”

”যেমন তোর বুদ্ধি! এই বাঘটা তো সাঁতরেই এসেছে!”

আমাদের গ্রামে বাঘ আসা মোটেই স্বাভাবিক নয়। কাছাকাছি জঙ্গল তো নেই। পাহাড়ও নেই। তবে একটা নদী আছে। এই নদীর নাম ইছামতী। যশোর জেলার কাছে যে ইছামতী নামে নদী আছে, সেটা কিন্তু অন্য নদী।

আমাদের এই ইছামতী নদীটা বেশি বড় বা চওড়া না হলেও খুব স্রোত। এটা নদীটা নেমে এসেছে আসামের পাহাড় থেকে। মাঝে—মাঝেই এই নদীতে বড়—বড় গাছ ভাসতে ভাসতে আসে। আমাদের গ্রামের কাছেই নদীটা ‘এল’—এর মতন বাঁক নিয়েছে বলে এখানে অনেক কিছু আটকে যায়। একবার নাকি একজোড়া হরিণ আর হরিণী ভেসে এসেছিল।

এই বাঘটাও সেইরকম ভাবে আসাম থেকেই এসেছে।

আমাদের গ্রামে কারুর বন্ধুক ছিল না। শুধু লাঠিসোঁটা দিয়ে একটা বাঘ মারা সহজ কথা নয়। চিতাবাঘটাও মহা ধুরন্ধর। কখনও লোকের গোয়ালঘরে, কখনও রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। কোনও বয়স্ক মানুষের সঙ্গে চোখাচোখি হলেই চোখের নিমেষে সে অদৃশ্য হয়ে যায়।

তারপর একবার কুড়ি—পঁচিশজন মিলে একসঙ্গে তাড়া করায় চিতাবাঘটা সবার সামনে দিয়ে কয়েকটা লাফ মেরে ঝাঁপিয়ে পড়ল নদীতে। তারপর আর তাকে দেখা যায়নি।

দুটো বাচ্চা ছেলেকে সত্যি সে আহত করেছিল, একটা গোরুও মেরেছিল, তবে বাঘের মুর্গি চুরির ব্যাপারটা ঠিক প্রমাণিত হয়নি।

ওই চিতাবাঘ আসার চেয়েও আরও বেশি একটা রোমহর্ষক ব্যাপার ঘটেছিল আমাদের ওই গ্রামে।

সেটা ছিল দুর্গা পুজোর সময়। বাতাসে পুজো—পুজো গন্ধ। আকাশ একেবারে সমুদ্রের মতন নীল। নদীর ধারে ধারে কাশফুল ফুটে আছে অজস্র। পুজো যত কাছে আসছে, তত আমাদের উত্তেজনা বাড়ছে।

সেই দিনটা ছিল চতুর্থী কিংবা পঞ্চমী। আমাদের বাড়ির কাছেই মস্ত বড় মণ্ডপ বাঁধা হয়েছে, ঠাকুর এসে গেছে, সাজানোর পালা চলছে। প্রায় রাত বারোটা পর্যন্ত জেগে আমরা শুতে গেলুম।

ঘুম ভেঙে গেল রাত দুটো—আড়াইটের সময়। কিসের যেন চ্যাঁচামেচি হচ্ছে বাইরে। বাবা—কাকারা সবাই জেগে উঠেছেন। কী ব্যাপার?

নদীর ধারে নাকি একটা অস্বাভাবিক গর্জন শোনা গেছে কিছু আগে। সেরকম বিকট আওয়াজ আগে কেউ কখনও শোনেনি। একটু আগে সেটা থেমেছে।

এত রাতে কেউ নদীর ধারে যেতে সাহস করেনি। বাবা বললেন, ”এটা নিশ্চয় একটা গণ্ডার। আসাম থেকে ভেসে এসেছে।”

গণ্ডাদের মতন এত বড় একটা প্রাণী নদীর জল ভেসে আসতে পারে কি না সে—বিষয়ে কারুর মনেই কোন সন্দেহ দেখা দিল না। কিন্তু গণ্ডারের মতন একটা হিংস্র প্রাণীকে লাঠিসোঁটা দিয়ে কী করে আটকানো যাবে, সেই চিন্তাতেই সবাই ব্যাকুল। গণ্ডার তো সারা গ্রাম তছনছ করে দেবে।

এইসব কথা বলাবলি হচ্ছে, এমন সময় আবার শোনা গেল গর্জন। শুনে বুক কেঁপে ওঠে, রক্ত একেবারে জল হয়ে যায়। আমরা তো গণ্ডারের ডাক আগে কখনও শুনিনি, ছবিতে ছাড়া জলজ্যান্ত গণ্ডারও দেখিনি। সারারাত না ঘুমিয়েই কেটে গেল।

যথারীতি আমাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গেল। বাবা—কাকারাও দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলেন। রঘু কামার আমাদের গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী লোক। গায়ের জোরও খুব। পুজোর সময় সে—ই পাঁঠা বলি দেয়।

সবাই চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল, ”রঘু কোথায় গেল, রঘু?”

আমাদের খুব মন খারাপ লাগছে। পুজোর সময় বাড়ির মধ্যে বন্দী হয়ে থাকতে কারুর ভাল লাগে? এর চেয়ে গণ্ডারের শিং—এ পেট ফুটো হয়ে মরে যাওয়াই ভাল।

গণ্ডারটার আর কোনও সাড়া—শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না।

এর মধ্যে হল এক কাণ্ড। আমাদের বাড়িতে কুবের বলে একজন মাঝি ছিল সেই সময়। সে নৌকোও চালাত, বাড়ির অন্য সব কাজকর্মও করত। রোগা—পাতলা, কালো—কুচকুচে চেহারা। সে আমাদের উঠোনের পাশে একটা সুপুরিগাছে উঠে দেখবার চেষ্ট করছিল গণ্ডারটাকে। হঠাৎ সে চেঁচিয়ে উঠল, ”এই রে, সর্বনাশ হয়েছে!”

সবাই জিজ্ঞেস করল, ”কী হয়েছে, কী হয়েছে, কুবের?”

কুবের বলল, ”সর্বনাশ হয়েছে! মামাবাবুরা এসেছে!”

ভয়ে বাবা—কাকাদের মুখ শুকিয়ে গেল। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় বড়মামা আসেন আমাদের এখানে। বড়মামার আসাটা একটা আনন্দের ব্যাপার, মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারি। তা হলে সর্বনাশ কেন?

মামাবাবুরা আসছেন নৌকোয়। ঘাটে নেমে এতখানি হেঁটে আসবেন। যদি ওঁদের গণ্ডারে গুঁতিয়ে দেয়?

কুবের হাত—পা ছুঁড়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ”মামাবাবু, আসবেন না! আসবেন না! নৌকোয় বসে থাকুন!”

মামাবাবু সে—কথা ভাল করে বুঝতে পারলেন না। তিনি কী করেই বা কল্পনা করবেন যে, তাঁকে এ—বাড়িতে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে?

তিনি বরং হাতছানি দিয়ে কুবেরকে ডাকলেন দু’—একটা সুটকেস—টুসকেস বয়ে নিয়ে যাবার জন্য। তিনি যত হাতছানি দেন, কুবেরও তত না—না বলে হাত নাড়ে।

মামাবাবু ভাবলেন কুবেরের বোধহয় মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি হেলতে—দুলতে বাড়িতে এসে পৌঁছেই জিজ্ঞেস করবেন, ”কী ব্যাপার? সব এত চুপচাপ। কোনও খারাপ খবর আছে নাকি?

সড়াৎ করে সুপুরিগাছ থেকে নেমে এসে কুবের বলল, ”মামাবাবু, গণ্ডার!”

মামাবাবু কুঁকড়ে গেলেন। গণ্ডারের ভয়ে নয়, কুবেরের ভয়ে।

বেলা দশটা আন্দাজ পাকা খবর পাওয়া গেল, গণ্ডার নয়, মোষ। তবে সাধারণ মোষ নয়, এ নাকি হাতির মতন উঁচু, আর শিং দুটো দু’—তিন হাত লম্বা। শ্মশানের যে ঘাস—জঙ্গল আছে, সেখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে।

আসলে আমাদের গ্রামের দিকে মোষ বিশেষ ছিলই না। আমরা শুধু গোরুই দেখেছি। মোষের ডাকও শুনিনি আগে। রাত্তিরবেলা মোষের ডাক শুনে তাই অত ভয়ংকর মনে হয়েছে।

মোষ শুনেই সবার ভয় ভেঙে গেল, দলে—দলে সবাই ছুটল মোষ দেখতে। মামাবাব খুব সাহসী। তিনি বললেন, ”বুনো মোষ হলে তোমরা সামলাতে পারবে না, চলো, আমি গিয়ে দেখি!”

যত উৎসাহ নিয়ে সবাই দৌড়ে গিয়েছিল, ততটাই, ভয় নিয়ে সবাই আরও জোরে দৌড়ে ফিরে এল। শশ্মানের পাশের ঝোপের মধ্যে যেটা দাঁড়িয়ে আছে, সেটার চেহারা অনেকটা মোষের মতন হলেও আসলে বাইসন। পায়ের কাছে মোজার মতন সাদা—সাদা দাগ আছে। তা দেখেই মামাবাবু শনাক্ত করেছেন। বাইসন অতি হিংস্র প্রাণী, অনেক সময় বাঘকেও হারিয়ে দেয়।

আমাদের তখনও জলখাবার খাওয়া হয়নি বলে আমরা দেখতে যেতে পারিনি। আমাদের আর সেই বাইসন দেখা হল না। ছোটকাকা বললো, ”সেটা সত্যিই হাতির মতন প্রকাণ্ড, বুঝলি? আর নাক দিয়ে আগুনের হলকা বেরুচ্ছে!”

এই নাক দিয়ে আগুনের হলকা বেরুবার ব্যাপারটা ছোটকাকা নিশ্চয়ই বানিয়ে বলেছে, কিন্তু তাই শুনেই আমার মামাতে বোন পুতুল বলল, ”মহিষাসুর!”

কথাটা শুনে আমাদের সবারই মনে লাগল। অনেক দুর্গা—ঠাকুরের মূর্তিতেই তো আমরা মহিষাসুরের নাক দিয়ে আগুন বেরুতে দেখেছি। ছবিতেও সেরকম থাকে।

কথাটা মুখে—মুখে রটে গেল। দুর্গাপুজোর সময় একটা অচেনা, ভয়ংকর মোষ এসেছে, এটা নিশ্চয়ই মহিষাসুর। নতুন করে গল্প ছড়াতে লাগল। কেউ কেউ বলল, মোষটার গায়ের রং নাকি নীল।

যতই হিংস্র প্রাণী হোক, দিনের বেলা অতটা ভয় লাগে না। অনেকেই আবার বাড়ি থেকে খানিকটা এগিয়ে কিংবা গাছে চড়ে দেখবার চেষ্টা করতে লাগল জানোয়ারটাকে। শুধু আমাদের মতন ছোটদেরই যাওয়া বারণ। আমি চুপিচুপি একবার বেরিয়ে পড়েছিলুম রান্নাঘরের পেছন দিয়ে, বিশ্বাসঘাতক ছোটকাকাটাই ধরিয়ে দিল আমাকে।

ছোটকাকা বললো, ”জানিস, একটু আগে কী হয়েছে? চৌধুরীদের এত বড় কুকুরটা সাহষ করে তেড়ে গিয়েছিল মহিষাসুরকে। মহিষাসুর সেই কুকুরটাকে শিং দিয়ে তুলে একশো হাত দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। নেহাত কুকুর বলেই ও মরেনি, মানুষ হলে কি বাঁচত?”

ছোটকাকা এই কথা বলতে বলতেই বাইরে ‘পালা, পালা’, বলে তুমুল চিৎকার শোনা গেল। আমরা দুদ্দাড় করে ঢুকে পড়লুম ঘরেব মধ্যে। মহিষাসুর নাকি এই দিকেই তেড়ে এসেছে।

বড়মামা বললেন, ”ও যদি এইভাবে ঘুরে বেড়ায়, তা হলে তো পূজো ভন্ডুল হয়ে যাবে। ও ব্যাটা নিশ্চয়ই সেই মতলবেই এসেছে!”

বাবা বললেন, ”তা হলে কী হবে?”

বড়মামা বললেন, ”পুলিশে খবর দাও! পুলিশে খবর দাও! বন্ধুক ছাড়া ওকে ঘায়েল করা যাবে না।”

কিন্তু থানায় খবর দিতে হলে তো নদীর ঘাট পর্যন্ত যেতে হবে। থানা নদীর অন্য পারে, পাঁচ মাইল দূরে! কে যাবে সেখানে?

কুবেরের নাম ধরে ডাকতেই সে বলল উঠল, ”ওরে বাবা রে, আমি পারব না! আমি পারব না!”

আবার বাইরে একটা শোরগোল শোনা গেল।

বাবা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ”কী হয়েছে?”

তখন দু’রকম খবর পাওয়া গেল। রায়দের বাড়ি থেকে একজন বলল, সে—বাড়ির বুড়ি পিসিমাকে নাকি বাইসনটা গুঁতিয়ে পেট ফুটো করে দিয়েছে। বুড়ি পিসিমা কানে একদম শুনতে পান না, তিনি অন্যদের বারণ শুনতে পাননি, শিউলিগাছের পাতা পাড়তে বাইরে বেরিয়েছিলেন।

আর এ—পাশের চৌধুরীবাবুদের বাড়ি থেকে শোনা গেল, সর্বনাশ হয়েছে, বাইসনটা পুজো প্যাণ্ডেলে ঢুকে পড়েছে।

দ্বিতীয় খবরটাই অনেক বেশি রোহমর্ষক। আমরা শিউরে উঠলুম। তা হলে তো সত্যিই মহিষাসুর! মা দুর্গার সঙ্গে আবার লড়াই করতে এসেছে। কী হবে? কী হবে?

রায়দের বাড়ি, চৌধুরীদের বাড়ির সঙ্গে আমার বাবা—কাকারা চিৎকার করে পরামর্শ করতে লাগলেন। মা দুর্গার এই বিপদে তাঁদের সাহায্য করতে যাওয়া উচিত। এই সময়ে বাড়িতে বসে থাকা খুবই কাপুরুষতা। মোষটা যদি মূর্তি ভেঙে প্যান্ডেল লণ্ডভণ্ড করে দেয়, তা হলে আর লজ্জার শেষ থাকবে না!

সবাই একটা করে লাঠি বা শাবল, খন্তা যা পেলেন তাই নিয়ে হই—হই করে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা জানলা দিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলুম, এবারে বুঝি একটা তুমুল যুদ্ধ হবে!

তারপর কী যেন হল। বাবা—কাকারা সবাই ফিরে এলেন খানিকটা বাদে। রক্তারক্তি কিছুই হয়নি।

ছোটকাকা বললো, ”কী হয়েছে জানিস? নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মহিষাসুরটা মা দুর্গার মূর্তির পায়ের কাছে বসে পড়ল। দু’বার গাঁক—গাঁক করে ডাকল, তারপর ধোঁয়ার মতন মিলিয়ে গেল। বুঝলি, মা দুর্গার মূর্তির যে মোষ, তার মধ্যে মিলিয়ে গেল।”

ছোটকাকা সুযোগ পেলেই ডাহা গুল মারত। এখনও সেই অভ্যেস যায়নি। সেই মোষটা কি সত্যিই দুর্গাঠাকুরের মূর্তির মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছিল, না এমনিই অন্য কোথাও চলে গিয়েছিল, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি?

অনেক ছোটবেলার কথা তো, সেটা ঠিক মনে নেই!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *