চার
শীতে কাবু মানুষের দেশ গ্রিনল্যাণ্ড। সেখানেই রয়েছে দুর্গম, জনশূন্য সফেদ বরফের সমতল মাঠ ন্যাভিক আইস শিট। যেদিকে চোখ যায় কোথাও নেই তিলমাত্র সবুজের ছোঁয়া। ধূসর আলোয় ঘোলাটে কুয়াশা ঘিরে রেখেছে এ এলাকা। ভর দুপুরেও দূর দিগন্তের কোলে ঝুলছে দুর্বল, লালচে সূর্য।
ধীর পায়ে বরফের মাঠে হেঁটে চলেছে দু’জন, পরনে তাঁবুর মত ভারী, উজ্জ্বল লাল স্নোসুট। একেবারেই মানাচ্ছে না এই সাদার দেশে।
‘বুঝলাম না এত উত্তরে কেন দেখতে হবে,’ আপত্তির সুরে বলল মেয়েটা। ফারের হুডের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে একগোছা সোনালি চুল। ইংরেজিতে নর্ডিক টান। ‘আগের টেস্টে জেনেছি কী হবে রিডিং।’
মাথার হুড খুলে সানগ্লাস সরাল বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চৌকশ এজেন্ট মাসুদ রানা। কেউ দেখলে ভাববে, ওর বয়স কমপক্ষে বত্রিশ, অথচ বাস্তবে আটাশ। গত আড়াই মাস বরফে ছাওয়া দুর্গম অ্যান্টার্কটিকা ও আর্কটিক ঘুরে জরুরি তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন গাল ভরা কালো চাপ দাড়ি। মাথার চুল নেমে এসেছে ঘাড়ে। বরফের মাঠে থেমে দাঁড়াতেই ওর মনে পড়ল, আজ থেকে তিন মাস আগে নিজের অফিসে ওকে ডেকে নেন বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান। ও বসার পর ঠেলে দেন সরু একটা ফাইল। নীরবে ওটার ভেতরের লেখা পড়েছে রানা, তারপর চোখ তুলে চেয়েছে বসের চোখে।
জন্মদিনে রানার উপহার দেয়া রনসন লাইটার দিয়ে চুরুট জ্বেলে ছাতের দিকে ধোঁয়া ছেড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। ক’মুহূর্ত পর বলেছেন, ‘পড়লে তো। কী মনে হচ্ছে?’
‘অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটনের বক্তব্য আতঙ্কজনক।’
মাথা দোলালেন বিসিআই চিফ। ‘ঠিক।’ আবারও ডুবে গেলেন গভীর চিন্তায়।
অপেক্ষায় থাকল রানা। ভাবছে, একের পর এক বাঁধ তৈরি করে সবুজ শস্য ভরা এ দেশটাকে মমতার সঙ্গে মিলে মরুভূমি বানিয়ে দিচ্ছে ভারত সরকার। এদিকে থৈ-থৈ করে বঙ্গোপসাগরের পানি উঠে এলে? হবে ভয়ঙ্কর মহাপ্লাবন! তখন বিপদ হলেই টাকা বিদেশে পাচার করে উধাও হবে সম্পদশালী একদল নির্লজ্জ রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু… কোথায় ঠাঁই পাবে সাধারণ মানুষ? বাধ্য হয়ে পেরোবে সীমান্ত। তখন নাবালিকা ফেলানীর প্রতি যে নিষ্ঠুর অন্যায় করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই কোটি কোটি নারী-শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে হত্যা করে তারকাঁটায় ঝোলাবে বিএসএফ ও ভারতীয় সেনাবাহিনী। একাত্তরের হামলাকারী পশ্চিম পাকিস্তানী বর্বর খুনি সেনাবাহিনীর গণহত্যাকে তখন মনে হবে নিতান্তই মামুলি। সেক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বিবেকবান মানুষ মাথা নেড়ে বলবে: না, দাদা; এ কাজটা কিন্তু মোটেই সঠিক হয়নি। অথচ, সে-দেশের উচ্চ আদালতের গণ্যমান্য বিচারকরা রক্তমাখা লাল মখমল রুমালে বিবেক মুছে জানাবেন: না, নানান কারণ বিবেচনায় এনে দেখা যাচ্ছে, কোনও বিচার করা যাবে না কারও।
আর তারপর রক্ষা পাবে না ভারতও। ডুবে যাবে গোটা ভারতবর্ষ। পালে পালে মরবে মানুষ…
রানার দিকে তাকালেন বিসিআই চিফ। ‘হ্যামিলটনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। গবেষণার ওই কাজে তোমাকে চাইছে।’
চুপ করে থাকল রানা।
যেহেতু ওপরে উঠছে প্রতিটি মহাসাগর, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
‘জী, স্যর,’ বলল রানা। সামনে রাখা ফাইলের তথ্য গলা শুকিয়ে দিয়েছে ওর। জানতে চাইল, ‘অ্যাডমিরাল ঠিক কী বলেছেন, কী কারণে হঠাৎ এত দ্রুত উঠে আসছে সাগর?’
মাথা নাড়লেন রাহাত খান। ‘অমন হওয়ার কোনও কারণ নেই। অথচ হচ্ছে। আগামী বছর তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তাই মনে হচ্ছে, তোমার খোঁজ নিতে যাওয়াই ভাল।’
‘জী, স্যর।’
হাতের ইশারা করেছেন বিসিআই চিফ। এবার যেতে পারো।
বাস্তবে ফিরল রানা। হিম-মাঠে দাঁড়িয়ে তাকাল মেয়েটার চোখে। ‘শিয়োর হতে হবে ভুল করছি কি না, নইলে মোটেও বিশ্বাস করবে না কেউ।’
মাথায় হুড পরে নাকের ওপর সানগ্লাস বসাল মেয়েটা। ওর চোখ বরফের মত নীলচে। লাল ঠোঁটে ক্রিম। চুল সোনালি না বলে খড়ের মত বলাই ভাল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ভুরু কুঁচকে ফেলেছে সে। ‘একই গ্লেসিয়ারের সাতটা জায়গা থেকে রিডিং নিয়েও আরও প্রমাণ লাগবে?’
মেয়েটার ডাকনাম আলভিলডা। পুরো নাম এতই জটিল, রানার মনে হয়েছে, ওটার ভেতর আছে ‘এ’ থেকে শুরু করে ‘যেড’ পর্যন্ত। তাই ভুলেও যায়নি উচ্চারণ করতে। নুমার নিয়োগ করা নরওয়েইজিয়ান জিয়োলজিস্ট সে, আপাতত তার সহায়তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা খুব প্রয়োজন রানার।
‘ভাল হতো সাতটা রিডিং থেকে সব বুঝতে পারলে,’ বলল রানা। ‘গত আড়াই মাসে গেছি বিশটা গ্লেসিয়ারে। এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। ডেটার মাঝে কোনও ফাঁক থাকা চলবে না।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল আলভিলডা। ‘ও, তাই হেলিকপ্টারে ওই স্টেশনে পৌছে তারপর পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা? ভাল। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না, যেজন্যে আমরা এসেছি, সেটা তো এখন প্ৰমাণিত।’
‘সমস্যা ওখানেই,’ বলল রানা, ‘প্রমাণিত, কিন্তু কেউ জানে না কেন, কী হচ্ছে। কারণটা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের।’ নতুন কোনও তথ্য দিতে গেল না ও। পরে নিল সানগ্লাস। ‘খুঁজে নিতে হবে স্টেশন, ঝড় আসছে। ডেটা পাওয়ার পর রাতের জন্যে তৈরি করতে হবে ইগলু।’
বড় করে শ্বাস ফেলল আলভিলডা। নতুন করে বেয়ারিং চেক করল রানা। আবারও এগোল ওরা।
কিছুক্ষণ হেঁটে দেখল, ধবল মাঠে চকচক করছে কালো সোলার প্যানেল। মহাশূন্যে প্রচুর বিদ্যুৎ পেতে এ প্যানেল তৈরি করেছে নাসা। তাদের কাছ থেকেই পেয়েছে নুমা। প্রতি বর্গফুটের জন্যে ব্যয় হয়েছে এক মিলিয়ন ডলার। এক একর ভরা সাধারণ সোলার সেলের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ওগুলোর একেকটা।
সোলার প্যানেলের কাছে পৌঁছে বিদ্যুৎ লাইন অনুসরণ করে সাদা এক গম্বুজের কাছে পৌঁছুল রানা ও আলভিলডা। গম্বুজটা আছে সমতল মাঠের মাঝে সামান্য নিচু এলাকায়। দরজার পাশে কালো, বড় অক্ষরে স্টেনসিল করা: নুমা।
‘ন্যাশনাল আণ্ডারওঅটার অ্যাণ্ড মেরিন এজেন্সি,’ উচ্চারণ করল আলভিলডা, ‘বুঝি না প্রতিটা যন্ত্রপাতির নাম সংক্ষেপ করে কেন আমেরিকানরা!’
‘যাতে চুরি হলেও প্রমাণ করতে পারে ওটা ওদেরই,’ হাসল রানা।
সেজন্যে এই ফালতু বরফের চাঁইয়ের ওপরেও নাম লিখে রাখতে হবে?’
‘তাই তো দেখা যাচ্ছে,’ বলল রানা। ‘হঠাৎ ওদের দশ মিলিয়ন ডলারের ইকুইপমেন্ট বন্ধ হলে… বুঝতেই পারছ, ওদের ভাল লাগে না।’ অটোমেটেড মডিউলগুলোর ওপর থেকে তুষার সরাতে লাগল রানা। চুরি হয়নি, তবে খারাপ কিছু হয়েছে ওগুলোর। থাকার কথা সোজা, অথচ কাত হয়ে আছে বেকায়দাভাবে। ‘মনে হচ্ছে বরফ পড়ে ভেঙে গেছে প্রথম মডিউলের অ্যান্টেনা। তাই ডেটা পাঠাচ্ছে না।’
জ্যাকেটের অসংখ্য পকেটের একটা থেকে রানা বের করল প্যাড কমপিউটার। আকারে সেল ফোনের সমান। কাজ করতে পারে বরফের এলাকায়। সেন্ট্রাল মডিউলের ডেটা পোর্টের সঙ্গে প্যাড কমপিউটারের কেবল সংযুক্ত করল রানা। ‘সিপিইউ ঠিক আছে, তবে কয়েক মিনিট লাগবে ডেটা ডাউনলোড হতে।’
অপেক্ষায় থাকল রানা।
এদিকে স্টেশনের সামনের দিকে গেল আলভিলডা। ওখান থেকে বলল, ‘এখনও চালু আছে ড্রিল।’
এ স্টেশন হিট প্রোব ব্যবহার করে ড্রিল করছে গ্লেসিয়ারের বহু নিচে। এরপর গভীরতা, তাপ ও পানির গতি মেপে বের করবে, কবে গলবে এই বরফের চাঁই।
নতুন থিয়োরি অনুযায়ী গবেষকরা ভাবছেন: দক্ষিণ মেরুর বরফ গলে যাওয়ার তথ্য ভুল, বাস্তবে ভেতরে ভেতরে ফোঁপরা হচ্ছে গ্লেসিয়ার। কাজেই বাড়ছে সাগরের উচ্চতা। তবে এসব নিয়ে ভাবছে না রানা। ওর কাজ আলাদা। প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশ ডুবে গেলে ঠেকাতে পারবে না কেউ, কিন্তু একদল বদলোকের জন্যে এই বিপর্যয় ঘনিয়ে এলে, তা ঠেকাতে প্রাণ দিতেও দ্বিধা করবে না ও। কমপিউটারের ডাউনলোড বারের দিকে চেয়ে আছে রানা। গলা উঁচিয়ে জানতে চাইল, ‘হিট প্রোব এখন কত গভীরে?’
‘এগারো শ’ ফুট,’ জানাল আলভিলডা। ‘মনে হচ্ছে….
তখনই ওদের পায়ের নিচে ঝড়ে পড়া জাহাজের মত দুলে উঠল গোটা বরফের প্রকাণ্ড চাঁই। বজ্রপাতের মত প্রচণ্ড এক কড়াৎ আওয়াজ চাপা দিল মেয়েটার কণ্ঠ। বসে পড়ে তাল সামলে নিল রানা। বিশ ডিগ্রি কাত হয়ে পিছলে ডানে সরেছে মডিউল। চমকে গিয়ে লাফিয়ে পিছিয়ে গেল রানা। চারপাশের বরফ দেখল সন্দেহের চোখে। মনিটরিং স্টেশনের ওদিকে চিল চিৎকার জুড়েছে নরওয়েজিয়ান মহিলা জিয়োলজিস্ট।
মডিউল পাশ কাটিয়ে ছুটে গেল রানা।
মনিটরিং স্টেশনের নিচে হাঁ মেলেছে চওড়া এক কালো গর্ত। গভীরতা কমপক্ষে দু’ শ’ ফুট। নর্ডিক সায়েন্টিস্ট আর মনিটরিং ইউনিট ঝুলছে এদিকের ক’টা নোঙরে ভর করে। দৌড় থামিয়ে সাবধানে এগোল রানা। পায়ের নিচে পিছলে যাচ্ছে তুষার।
‘ফাটল!’ চেঁচিয়ে উঠে সতর্ক করল আলভিলডা।
বাড়িতে চোখদুটো রেখে আসেনি রানা। বেল্ট থেকে আইস পিক নিয়ে গায়ের জোরে ইঁটের মত শক্ত বরফে গাঁথল। চোখা টাংস্টেনের ফলা কাজ করবে নোঙরের মত। শক্ত হাতে পিক ধরে, অন্যহাতে স্ট্র্যাপ ধরল রানা, শুয়ে পড়ে ইঞ্চি ইঞ্চি করে চলল ঝুলন্ত আলভিলডার দিকে। আরও কয়েক ইঞ্চি যাওয়ার পর হাতের মুঠোয় পেল মোসুটের হুড। টেনে নিজের দিকে তুলতে চাইল মেয়েটাকে।
নোঙর থেকে হাত সরিয়ে খপ্ করে রানার বাহু ধরল আলভিলডা, দ্রুতগতি মাকড়সার মত বেয়ে উঠে এল বিসিআই এজেন্টের পিঠে। ওকে পেরিয়ে শক্ত জমি পেতেই উঠে দিল প্রাণপণ দৌড়। মরলে মরুক মাসুদ রানা, মরণ ফাটলের আশপাশে থাকবে না সে!
আলভিলডার মত একই অনুভূতি রানার মনে, তবে ডেটা ফেলে যেতে আপত্তি আছে ওর। ডেটা পোর্ট থেকে কর্ডের মাধ্যমে ঝুলছে প্যাড কমপিউটার। উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাঁচকা টানে আইস পিক তুলে ওটার দিকে এগোল রানা।
দুটো নোঙর উপড়ে যেতেই দুলে উঠল স্টেশন। উদ্যত চাবুকের মত তুষারে আছড়ে পড়ল শক্ত স্ট্র্যাপ। উড়ন্ত নোঙর থেকে বাঁচতে মাথা নিচু করেছে রানা। আবারও বরফে গাঁথল আইস পিক। শুয়ে হাত বাড়াল ফাটলের কিনারায়। আঙুলের ডগা স্পর্শ করল ঝুলন্ত কমপিউটার, তবে ভারী গ্লাভ পরা হাতে তুলতে পারবে না জিনিসটাকে।
দু’পাটি দাঁতে কামড়ে ডানহাতের গ্লাভ খুলল রানা। ওটা ছুঁড়ে ফেলল পেছনে। ভীষণ ঠাণ্ডা হাতে লাগতেই প্রায় কুঁকড়ে গেল ও। যন্ত্রণা পাত্তা না দিয়ে খালি হাতটা গুঁজল তুষারের ভেতর। খুবলে তুলে তৈরি করল ছোট্ট সাদা বল। হাতের তাপে গলিয়ে নিল তুষারটুকু। এবার আইস পিক ছেড়ে কোমর পর্যন্ত ঝুঁকল ফাটলের মধ্যে। ভেজা আঙুলে স্পর্শ করল কমপিউটারের স্ক্রিন। হাত সরাল না। শূন্যের পনেরো ডিগ্রি নিচের তাপমাত্রায় মাত্র এক সেকেণ্ডে জমাট বেঁধেছে হাতের পানি। তাতে আটকে গেছে প্যাড কমপিউটারের স্ক্রিন। পেছাতে শুরু করে ডেটা পোর্ট থেকে ডিভাইসটা খুলে নিল রানা। ধরেছে শক্তহাতে। কিন্তু ওর পেটের নিচে কড়-কড় আওয়াজে ফাটছে ধবল প্রান্তর। উঠে দাঁড়িয়ে নিরাপদ জায়গা লক্ষ্য করে ডাইভ দিল রানা। এক সেকেণ্ড পর ফাটলের মধ্যে সাঁই করে নেমে গেল গোটা স্টেশন। শক্ত মাঠে ধুপ্ করে পড়েছে রানা। ক’সেকেণ্ড পর শুনল বজ্রপাতের শব্দ তুলে বহু নিচে আছড়ে পড়েছে মিলিয়ন ডলারের স্টেশন।
রানার পাশে এসে থামল আলভিলডা, কুড়িয়ে এনেছে গ্লাভ। নরম সুরে বলল, ‘তুমি কি বদ্ধপাগল, রানা? জীবনের ঝুঁকি কেউ নেয় এভাবে?’
‘চাইনি, সুন্দরী সঙ্গিনী নিচে পড়ে যাক,’ বলল রানা।
‘হ্যাঁ, বাঁচিয়ে দিয়েছ আমাকে, কিন্তু ওই কমপিউটার?’ মাথা নাড়ল মেয়েটা। ‘ওটার মূল্য এতই বেশি?’
‘হয়তো তা-ই,’ বলল রানা। ‘ওটায় হয়তো আছে খুব জরুরি ডেটা। এমন কিছু, যেজন্যে রক্ষা পাবে আমার দেশ।’
‘নিজের দেশের জন্যে প্রাণ দিতেও আপত্তি নেই,’ বিড়বিড় করল আলভিলডা। ‘তোমার মত মানুষ যে-কোনও দেশের গর্ব।’
আঙুল ও তালুর ত্বক যতটা পারা যায় কম হারিয়ে প্যাড কমপিউটারটা ছুটিয়ে নিল রানা। হার্ড ডিস্কে চলে এসেছে কয়েক গিগাবাইট ডেটা। স্ক্রিনে ট্যাপ করল রানা। প্রথমেই এল ডেটার প্রথম পৃষ্ঠা। ক’সেকেণ্ড চোখ বুলিয়েই ও বুঝে গেল, যেজন্যে এত কষ্ট করা, পেয়ে গেছে সেই জরুরি তথ্য।
‘কী আছে ওসবে?’ জানতে চাইল আলভিলডা।
‘গত বছর যেভাবে গলেছে, তার চেয়ে বেশি গলছে না গ্লেসিয়ার।’
‘অর্থাৎ পরিবর্তন নেই,’ বলল মেয়েটা। সোজা হয়ে দু’হাত রাখল কোমরে। ‘এই গ্লেসিয়ার অন্যগুলোর মতই। ফোঁপরা হচ্ছে না। এটা তো ভাল খবর!
‘তা-ই ভাবছ?’ শুকনো গলায় বলল রানা। ‘কিন্তু খারাপ দিক হচ্ছে: গ্লেসিয়ার ফোঁপরা না হলে অন্য কোথাও আছে মস্তবড় সমস্যা। নইলে এত দ্রুত সাগরের পানি বাড়ছে কেন? এর কোনও জবাব নেই আমাদের কারও কাছে।’