আটচল্লিশ
পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া গাড়িঘোড়ার শব্দে ঘুম আসছে না তানিয়া রেজার। তা ছাড়া, মগজে গিজগিজ করছে অসংখ্য দুশ্চিন্তা। এত বড় বিপদে পড়েছে অথচ কিছুই করার নেই, ভাবতে গিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর। খুব রাগও হচ্ছে আসিফের ওপর। বেয়াক্কেলে নাকি মিনসেটা! আইএনএন প্রোডাকশন ভ্যানের মেঝেতে শুয়ে কী নিশ্চিন্তে নাক ডেকে চলেছে!
তানিয়ার মন চাইল ঠেলে তুলবে আসিফকে। কিন্তু কাজটা অন্যায়। কখনও কাউকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয় না। শ্বশুর আর নেই জানাতে গিয়ে হঠাৎ করেই নানাকে ডেকে তুলেছিলেন নানী। ওই দুঃসংবাদ শুনেই অজ্ঞান হন মানুষটা। পরে জ্ঞান ফিরলেও পাগল ছিলেন বহু দিন।
রাত এখন তিনটে। বাইরে ঘুটঘুটে আঁধার। তবে পার্কিং লটে জ্বলজ্বল করছে সিকিউরিটি বাতি। ভ্যানের ভেতর ভেজা, শীতার্ত পরিবেশ। উঠে এডিটিং স্টেশনের চেয়ারে বসল তানিয়া। চোখ পড়ল আসিফের মুখে। অসহায় দেখাচ্ছে মানুষটাকে, যেন কচি বাচ্চা। রাগ ও বিরক্তি মিলিয়ে যেতেই মৃদু হাসল তানিয়া। সত্যি, ওর কপাল ভাল, এত সুন্দর মনের একজন মানুষ পেয়েছে চলার পথে।
তানিয়ার মনে পড়ল, সাহস ছিল না বলে ওরা হোটেলে ওঠেনি। রাতে ভ্যানে থাকার অনুমতি নিয়েছে মহিলা সাংবাদিকের কাছ থেকে। তবে ভবিষ্যতে এভাবে চলবে না। চাইনি কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা না পড়লেও যখন তখন ভ্যান ব্যবহার করবে নেটওঅর্কের কেউ। হয়তো ফিউয়েল নিতে বা মেরামত করতে মেকানিকের কাছে নেবে ড্রাইভার।
এসব বাদ যাক, বদ্ধ এই ভ্যানে কয়েক দিন কাটাতে হলে স্রেফ পাগল হয়ে যাবে ওরা দু’জন।
অন্ধকারে চোখ মেলে চুপ করে বসে রইল তানিয়া। কিছুক্ষণ পর দেখল এগিয়ে আসছে কে যেন! এবার বাধ্য হয়ে আসিফের বাহুতে টোকা দিল ও।
‘অ্যা? ক্বী… কে!’ চমকে ধড়মড় করে উঠে বসল আসিফ।
‘কে যেন আসছে,’ চাপা স্বরে বলল তানিয়া।
‘কে?’
‘চেহারা দেখতে পাচ্ছি না তো!’
‘সিকিউরিটি গার্ড?’
চুপ করে থাকল তানিয়া। শুকিয়ে গেছে মুখ।
উঠে জানালা দিয়ে উঁকি দিল আসিফ। হাড্ডির মত মেঝেতে শুয়ে সারাশরীরে বড্ড ব্যথা, কুঁচকে ফেলেছে গাল। এদিক ওদিক তাকাল। অন্ধকারে দেখল না কাউকে। বড় একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে তানিয়ার দিকে তাকাল। আর তখনই টোকা পড়ল ভ্যানের পেছন দরজায়।
‘ঠক্-ঠক্-ঠক্!’
দরজার হ্যাণ্ডেলের দিকে আসিফ হাত বাড়াতেই ফিসফিস করে বলল তানিয়া, ‘আসিফ! সাবধান!’
‘কিছুই তো করার নেই,’ নিচু গলায় বলল আসিফ। ‘তা ছাড়া, যে এসেছে, সিক্রেট পুলিশ বলে মনে হয় না। হলে টোকা দিত না।’ হ্যাণ্ডেল আনলক করে আস্তে করে দরজা খুলল ও। পুলিশ বা মিলিটারির বদলে দেখতে পেল মহিলা সাংবাদিক মেরিয়ান হিউবার্টের হাসিমুখ।
ভ্যানে উঠে দরজা আটকে নিল সে।
‘হঠাৎ টোকা দিলেন যে?’ জানতে চাইল আসিফ।
‘নিজেকে ভদ্রমহিলা মনে করি, টোকা না দিয়ে কোথাও ঢুকি না। মা-র লক্ষ্মী মেয়ে ছিলাম।’ মেরিয়ানের হাতে ইনসুলেটেড কাপ। কফি। ভাগ করে খাবেন। দুটো আনা সম্ভব ছিল না। নইলে চোখে পড়লে যে কেউ সন্দেহ করত— একা মানুষ দু’কাপ কফি দিয়ে কী করবে?’
‘মাথা খেলে আপনার,’ বলল তানিয়া। ‘আসিফ কফির জন্যে পাগল। ওই জিনিস হাতে দিয়ে আমার কাছ থেকে ওকে কেড়ে নিতে পারবেন।’
গভীর মনোযোগে ঢ্যাঙা আসিফকে দেখল মেরিয়ান। তারপর মাথা নাড়ল। ‘আমি লম্বু লিটল জনকে চাই না। অপেক্ষা করব সত্যিকারের রবিন হুডের জন্যে।’
মৃদু হাসল তানিয়া।
কফির কাপ নিয়ে কালো তরলে চুমুক দিল আসিফ। ‘বাহ্, দারুণ জিনিস তো!’ তবে দ্বিতীয় চুমুক না নিয়ে কাপ ধরিয়ে দিল তানিয়ার হাতে।
ভ্যানের ভেতর কড়া কফির সুবাস। দু’চুমুক কফি পেটে চালান দিয়ে আসিফের হাতে কাপ ফেরত দিল তানিয়া। তাকাল মেরিয়ান হিউবার্টের চোখে। ‘আপনি বলেছিলেন ভোরে আসবেন। কিন্তু এখন তো মাত্র রাত তিনটে।
‘না এসে উপায় ছিল না,’ বলল মেরিয়ান। ‘ব্যুরো চিফ বলে দেন যেন তাড়াতাড়ি আসি। পরে ফোন করলেন, আমেরিকান সরকার থেকে এসেছে আরেকটা রিপোর্ট। আবারও হ্যাক হবে আমাদের নেটওঅর্ক।’
‘কিন্তু আপনারা তো আর হ্যাকড হননি?’ কী বলা হয়েছে বুঝে গেছে আসিফ।
মৃদু হাসল মেরিয়ান। কোটের পকেট থেকে বের করল যিপ ড্রাইভ। ‘এটা হাতে দিয়ে চিফ বললেন, ব্যবস্থা করুন। হনহন করে চলে যাওয়ার আগে জানালেন, বিমানের টিকেট বুক করতে যাচ্ছেন। বাধ্য হলে যাতে চলে যেতে পারেন চিন ছেড়ে। আমাকেও একই কাজ করতে বলেছেন।’
‘যিপ ড্রাইভে কী আছে?’ জানতে চাইল তানিয়া।
‘এখনও জানি না,’ বলল মেরিয়ান। ‘এনক্রিপ্ট করা। তবে হ্যাক করা হয়েছে আমেরিকা থেকে। তচনচ করে দেয়া হবে আমাদের নিউ ইয়র্ক অফিস। পুরো দুই মিনিটের জন্যে দখল করে নেবে স্যাটেলাইট। তারপর বার্তা প্রচারের পর আবারও ওটা ফিরে পাব। ওই স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই আপনাদের সিগনাল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছেন দুই-এ-দুই মিলে কী হয়। দেখতে চান ফাইলটা?’
ল্যাপটপ চালু করে মেরিয়ানের হাত থেকে যিপ ড্রাইভ নিয়ে স্লটে ভরল তানিয়া। কয়েক মুহূর্ত পর ওরা দেখল লগ- ইন উইণ্ডো। তানিয়ার নুমা পাসওঅর্ড দিতেই বেরোল ফাইলের একটা লিস্ট।
‘কমোডোর কার্কের তরফ থেকে পাঠানো,’ বলে প্রথম ফাইল খুলল তানিয়া। স্ক্রিনে ফুটে উঠল প্রেযেণ্টেশন।
চোখ বড় করল আসিফ। ‘উনি পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করে প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন? তার মানে নকল পাসওঅর্ড, গোপনীয়তা… সব বাদ?’
ফাইলের প্রথম পৃষ্ঠা পড়ল তানিয়া, তারপর বলল, ‘তোমার অবর্তমানে জিয়োলজি টিমের সঙ্গে কাজ করছে স্মিতা। আমাদের পাঠানো ডেটা দেখার পর ওরা বুঝে গেছে, কোথা থেকে আসছে সাগরে পানি। লো হুয়াং লিটনের মাইনিং অপারেশনের কারণে পৃথিবীর বুকে তৈরি হয়েছে অনেক গভীর ফাটল। ওই পরিবৃত্তি এলাকা থেকেই উঠছে লাখ-কোটি গ্যালন পানি।’
‘পরিবৃত্তি এলাকা দুই শ’ মাইলেরও গভীর, ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকল আসিফ।
‘ওই পানি আছে প্রচণ্ড চাপের ভেতর,’ তথ্য দেখে নিয়ে বলল তানিয়া। ‘যি-ওয়েভের কারণে রিংউডাইট নামের এক মিনারেল থেকে বেরোচ্ছে এত পানি।’
‘রিংউডাইট?’ বলল আসিফ।
‘উচ্চারণে ভুল করিনি তো?’
‘না, ঠিক আছে,’ দ্বিধা নিয়ে বলল আসিফ, ‘পড়তে থাকো।’
চোখে চোখ রেখে ওকে দেখল তানিয়া। যথেষ্ট তথ্য দিচ্ছে না আসিফ। তবে তাড়া দিল না। পড়ল পরের কয়েক লাইন। সংক্ষেপে জানাল, ‘এই ফাইলের সঙ্গে দেয়া হয়েছে আমাদের সংগ্রহ করা প্রমাণ এবং অঙ্কের হিসেব নিকেশ। এ ছাড়া, রয়েছে দুটি উপস্থাপনা। প্রথমটি অত্যন্ত প্রযুক্তিনির্ভর। অন্যটি সাধারণ মানুষের বোঝার জন্যে সহজ করে লেখা। যেহেতু বিশাল এলাকায় ফাটল ধরেছে রিংউডাইটে, আপাতত হিসাব কষে বের করা যাচ্ছে না কী পরিমাণের পানি উঠে আসছে। কিন্তু এভাবে নিজেদেরকে ভাগ্যের হাতে তুলে দিলে ফলাফল হবে ভয়াবহ। সেক্ষেত্রে আগামী দশ বছরে সাগর-সমতল হবে দু’হাজার ফুট ওপরে।’
‘দু’হাজার ফুট?’ চমকে গিয়ে বিড়বিড় করল মেরিয়ান।
ভুল পড়েছে কি না বুঝতে দ্বিতীয়বার পড়ল তানিয়া। মাথা নাড়ল। ‘তাই তো লেখা আছে দেখছি!’
‘পড়তে থাকো,’ শান্ত স্বরে বলল আসিফ।
‘অঙ্কের অন্য সব হিসেব অনুমান নির্ভর,’ বলল তানিয়া, ‘আরও লেখা হয়েছে, কীভাবে ধ্বংস হতে পারে আজকের মানব সভ্যতা। সামনে অন্তত পঞ্চাশ বছরের জন্যে ডুবে যাবে পৃথিবীর বেশিরভাগ জমি। এটা অসম্ভব বলে মনে হলেও সম্ভাবনা বেশি যে সেটাই ঘটছে। ক্রমেই অসংখ্য ফাটল হচ্ছে রিংউডাইটের গায়ে। প্রতিটি ফাটল থেকে উঠছে বিপুল পরিমাণের পানি। সেজন্যে আবার তৈরি হচ্ছে নতুন আরও কাটল।’
কমপিউটার স্ক্রিন দেখছে তানিয়া, আসিফ ও মেরিয়ান। ‘আর আমি ভেবেছি পাগলামি ভরা সব খবর দিই,’ বিড়বিড় করল মেয়েটা, ‘আসলে প্রলয় হবে পানির কারণে!’
‘শুনলে অযৌক্তিক মনে হয়,’ বলল আসিফ, ‘কিন্তু এত পানি ভূগর্ভ থেকে উঠে এলে, ঠেকাতে পারবে না কেউ। সাত মহাসাগরের সব পানির অন্তত তিনগুণ বেশি পানি রয়েছে নিচের পাথরের স্তরে। প্রচণ্ড চাপে আটকা পড়েছে নানান মিনারেলের মাঝে। কিন্তু একবার পথ করে বেরোতে পারলে সোজা উঠে আসবে ওপরে।’
‘এসব আগেই জানতে?’ স্বামীর দিকে তাকাল তানিয়া।
মাথা দোলাল আসিফ। ‘ডিপ আর্থ জিয়োলজি।’
‘নুমা হেডকোয়ার্টারে যখন আলাপ করলাম, তখন তো বলোনি কী কারণে উঠে আসছে সাগর-সমতল?’
কাঁধ ঝাঁকাল আসিফ। ‘আগে ভাবলেও পরে অন্যান্য সম্ভাবনা ভেবে বাতিল করে দিয়েছি এই চিন্তা। তা ছাড়া, এভাবে এত পানি উঠবে শুধু আগ্নেয় উদগীরণে। কিন্তু গত বছর থেকে অনেক কমে গেছে আগ্নেয়গিরির উৎপাত।’
স্মিতা ও পার্কারের পাঠানো ডেটা দেখল তানিয়া। একটা গ্রাফে দেখানো হয়েছে, সাগরের নিচে চিনাদের খনি থেকে উত্তোলনের ফলে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফাটল। ‘সরাসরি নিচে গেছে এসব। বোঝার উপায় নেই কত ক্ষতি হচ্ছে ওখানে। তবে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে রিংউডাইটের ফাটল।’
‘ওখান থেকেই আসছে উষ্ণপ্রস্রবণ,’ বলল আসিফ, ‘পুরো এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ পাইনি। জানা নেই কতগুলো ঢিবি। হয়তো এক শ’র বেশি। বা হাজার খানেক। পানি উঠছে শত মাইল গভীর থেকে।’
নিজেও বিজ্ঞানী, গলা শুকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল তানিয়া। চট করে দেখতে লাগল অন্যান্য ফাইল।
‘জরুরি কিছু খুঁজছ?’ জানতে চাইল আসিফ।
‘হ্যাঁ, জানতে চাই এ দেশ থেকে আমাদের বের করতে কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না নুমা,’ বলল তানিয়া। নির্দেশনা নামের একটা ফাইল পেয়ে খুলল। আমাদের জন্যে একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছেন নুমা চিফ জর্জ হ্যামিলটন। তাঁর হয়ে চাইনিয সিক্রেট সার্ভিসের এক এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন রানার বস বিসিআই চিফ মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান।’
‘তা হলে ওটা হয়তো সেফ হাউস,’ বলল আসিফ।
কমপিউটারে লোকেশন টাইপ করল তানিয়া। ‘এখনও জানি না।’
ম্যাপ দেখল মেরিয়ান। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ‘ওটা কোনও সেফ হাউস নয়। ওখানে আছে মিনিস্ট্রি ফর স্টেট সিকিউরিটির শাংহাই ব্যুরোর অফিস। সাধারণ মানুষ বলে, ওটা সিক্রেট পুলিশের স্থানীয় হেডকোয়ার্টার।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনে হেলান দিল আসিফ। ‘অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করি রানাকে। ওর বসকে সম্মান করি। নইলে ভাবতাম আমাদেরকে সরাসরি ছুঁড়ে দিচ্ছেন ক্ষুধার্ত বাঘের খাঁচার ভেতর।’
‘উনি হয়তো ভেবেছেন, আপনারা ওখানে গেলেই ভাল করবেন,’ বলল মেরিয়ান। ‘কেউ খুঁজতে যাবে না সিক্রেট সার্ভিসের অফিসে।’
‘ওখানে লুকিয়ে থাকতে বলেননি মেজর জেনারেল,’ বলল তানিয়া। আবারও পড়ছে। কয়েক মুহূর্ত পর জানাল, ‘আমরা যেন ওখানে গিয়ে আত্মসমর্পণ করি। কিন্তু সেটা করতে হবে মাত্র একজনের কাছে। এজেন্টের নাম লিউ ফু-চুং। তিনি নাকি পরিচয় করিয়ে দেবেন তাঁর বস জেনারেল ফং মিং-এর সঙ্গে।’
বড় করে শ্বাস ফেলল আসিফ। ‘শেষে যদি মরতেই হয়, তো ফায়ারিং স্কোয়াডই চাইব। চট্ করে শেষ হবে সব ঝামেলা।’
বিরক্ত হয়ে বলল তানিয়া, ‘মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান কিন্তু রানার বস, কথাটা মাথায় রেখো। চিন্তাভাবনা না করে আমাদেরকে মহাবিপদে ঠেলবেন ভেবে থাকলে ভুল করছ।’
একবার স্ত্রীকে দেখে নিয়ে মেরিয়ানের দিকে তাকাল আসিফ। ‘আমরা কি আপনার ভ্যানটা ধার নিতে পারি?’
মাথা নাড়ল মেরিয়ান। ‘পাগল নাকি? আমিও তো যাব! জীবনের সেরা কাহিনী হারিয়ে মরি আর কী! আপনারা দু’জন কফি ভাগ করে খান, ড্রাইভ করব আমি।’