একুশ
একগাদা চিপ্ নিয়ে চেয়ার ছাড়ল রানা। টেবিল ঘুরে চলে গেল বিজ্ঞানী শিমের তরুণী বডিগার্ড হিনার পেছনে। নিচু গলায় বলল, ‘বলো তো, তোমার মত লক্ষ্মী একটা মেয়ে এখানে কী করছে? নাকি জিজ্ঞেস করে দোষ করে ফেললাম?’
ওর কথা শুনে আড়ষ্ট হয়েছে মেয়েটার পিঠ।
‘কার্ড দেব?’ জানতে চাইল ডিলার।
জবাব দিল না হিনা।
‘কার্ড দেব, মিস?’
‘তোমার হাতে ষোলো,’ বলল রানা।
ব্ল্যাকজ্যাক খেলছে হিনা। মন দিল খেলায়। হাতের ইশারায় জানাল আরেকটা কার্ড চাই। লাল রাজার কারণে ওর হলো সব মিলিয়ে ছাব্বিশ।
চিগুলো আদায় করে নিল ডিলার।
‘খেলা বাদ দাও,’ বলল রানা, ‘কথা আছে।’
উঠে রানাকে ঘেঁষে রওনা হলো হিনা। একবারের জন্যে চোখে চোখ রাখেনি।
ওর পাশে হাঁটছে রানা। ‘আমরা কি আড়ি নিয়েছি?’
‘আপনি কিন্তু আমার কাজে বাধা দিচ্ছেন,’ বলল হিনা।
‘কীভাবে?’
কড়া চোখে ওকে দেখল মেয়েটা। ‘আপনি কীভাবে জানলেন আমি এখানে আছি?’
‘ছোট্ট একটা পাখি বলেছে। …কী করছ এখানে?’
‘এটা আমার বাড়ি,’ বলল হিনা। ‘আবার বলতে পারেন আমার জেলখানা।’
মেয়েটার কনুই ধরে নিজের দিকে ঘোরাল রানা। ‘আসলে কী বলতে চাইছ?’
‘ছোটবেলায় আমাকে কিনে নিয়েছে ইয়াকুয়া সিণ্ডিকেট, ‘ স্পষ্ট উত্তর দিল হিনা। ‘জাপানে এটা অবাক হওয়ার মত কিছু নয়। বহু মানুষ আছে, যারা আসলে ক্রীতদাস। আমি নাগিনোর দাসী, কাজেই যা বলবে, তাই করতে হবে। তবে আমার আছে লড়াই করার ন্যাক। সাত বছর বয়স থেকেই শিখেছি সামুরাই যোদ্ধাদের মার্শাল আর্ট। সুযোগ পেয়ে যোগ দিয়েছিলাম মহান বিজ্ঞানী শিমেযুর দলে। আমাকে মানুষের সম্মান দেন তিনি। তাই ওই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সোজা ফিরেছি এখানে।’
‘দুর্গে হামলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এদের?’ জানতে চাইল রানা।
‘হয়তো গোখারো নাগিনো জেনে গিয়েছিল নতুন পরিবার বেছে নিয়েছি,’ বলল হিনা, ‘তাই চরম শাস্তি দিয়েছে। সত্যিকারের গুরু ছিলেন মহান বিজ্ঞানী, আমার থেকেই আমাকে আড়াল করেছিলেন। আজ তিনি নেই, তাই নেব শত্রুদের ওপর প্রতিশোধ। সেজন্যে মরতেও আপত্তি নেই আমার।’
সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট হিমুরার কাহিনীর সঙ্গে এর কথায় মিল নেই। ওকে পুরো বিশ্বাস করল না রানা। তবে দেখল, মেয়েটার চোখে সত্যিকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা
‘গোখারো নাগিনো ক্যাসিনো চালায়?’ নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বলল রানা।
মাথা দোলাল হিনা। ‘সম্পত্তি হারালে বা কেউ কিছু কেড়ে নিলে খেপে ওঠে এরা, প্রতিশোধ নেয়। ভেবেছিলাম আমি মুক্ত মানুষ। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, কখনও স্বাধীন হব না। তাই ঠিক করেছি, শত্রু খতম করেই শেষ হোক জীবন।’ মাথা নাড়ল মেয়েটা। ‘আপনার ঠিক হচ্ছে না আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। এরপর যা করব, সেজন্যে আপনাকেও খুন করতে পারে ওরা।’
কাছেই হাজির হয়েছে একদল অতিথি
এরইমধ্যে দেরি করেছে সোহেলের সঙ্গে দেখা করতে, তাই আরেকটু পর গেলেও ক্ষতি নেই, হিনাকে নিয়ে ওপরতলায় যাওয়ার র্যাম্পে উঠল রানা। চাপা স্বরে বলল, ‘মন দিয়ে শোনো, তুমি কিন্তু মস্ত ভুল করছ। গতকাল পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুর্গে যারা হামলা করেছে, তারা আগে ছিল ইয়াকুযা, কিন্তু পরে দলত্যাগ করেছে। তোমাকে ফেরত পেতে, বা প্রতিশোধ নিতে খুন করা হয়নি বিজ্ঞানী শিমেযুকে। ওখানে গিয়েছিল, যাতে দরকারি কিছু তথ্য না পাই আমরা।’
রানার চোখে চেয়ে কথাগুলো নিয়ে ভাবছে হিনা।
‘মিথ্যা বলছি না,’ বলল রানা, ‘তোমার দোষে খুন হননি বিজ্ঞানী। সাগরের এক সমস্যার কারণে তাঁর সঙ্গে দেখা করি আমরা। ফলে হামলা হয় দুর্গে। জরুরি ওই তথ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ভূমিকম্প আর যি-ওয়েভের।’
চোখ সরু করল হিনা। ‘ক্যাসিনোর লোকদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছি। জানি সব গোপন খবর, সেগুলো প্রকাশ পাবে সেটা চায় না এরা।
মাথা নাড়ল রানা। ‘তোমাকে চিনলে প্রথম সুযোগেই খুন করত। খামোকা নিজের ঘাড়ে দোষ টেনে নিচ্ছ।’
‘আপনার কথা বিশ্বাস করব, কি করব না, বুঝতে পারছি না।’
‘ট্যাক্সিতে চেপে যাওয়ার পথে কথাগুলো ভেবে দেখো,’ বলল রানা। ‘এবার সোজা বেরিয়ে যাও ক্যাসিনো ছেড়ে।’
‘কিন্তু যাব কেন?’
‘নইলে হয়তো তোমাকে চিনে ফেলবে এরা।’
ওপরতলায় পৌছে গেছে ওরা। একটু দূরেই লবিতে পিয়ানোর অ্যালকোভ। কোথাও নেই সোহেল। বাজনা বাদ দিয়ে সটকে পড়েছে বাদকরা। ব্যস্ত হয়ে মেঝে পরিষ্কার করছে ক’জন স্টাফ। চেয়ার সোজা করছে একজন। রানা বুঝে গেল, হাতাহাতি হয়েছে এখানে। ইয়ারবাড কানে গুঁজে ক’জন অতিথির সঙ্গে কথা বলছে সিকিউরিটির চারজন লোক।
‘সোজা হাঁটো,’ হিনার হাত ধরে অ্যালকোভ পেরিয়ে উল্টো দিকে চলল রানা।
‘আমার না চলে যাওয়ার কথা?’ বলল মেয়েটা।
পেছন ফিরে তাকাল না রানা। ‘আপাতত কোথাও যাচ্ছ না। বেরোতে গেলেই ধরা পড়বে।’
হল ধরে হনহন করে হেঁটে চলল ওরা। একতলা নিচে নেমে মিশে গেল ক্যাসিনোর অতিথিদের মাঝে। নানান স্ক্রিনে রানা দেখল, আপডেট হচ্ছে লড়াইয়ের লিস্ট। অতিথিরা বেছে নেবে কার ওপর বাজি ধরবে।
মোখলেসুর রহমান নামটা দপ-দপ করে জ্বলছে স্ক্রিনে। পাশেই সোহেলের মুখ। নিচে লেখা: ফাইট ওয়ান, ফার্স্ট বাউট অভ ইভেনিং। নিচে ফুটে আছে কয়েকটা সিম্বল।
বিকেলের প্রথম লড়াই শুরু হবে সোহেলকে দিয়েই!
‘এসব সিম্বল কীসের?’ জানতে চাইল রানা।
‘বুঝিয়ে দিচ্ছে, লড়াই অস্ত্র হাতে,’ বলল হিনা, ‘নানচাক্কু, লাঠি, হাফ-স্টাফ এসব। তিন মিনিট করে হবে সাতটা বাউট। অথবা, যতক্ষণ পড়ে না যায় কেউ। হাল ছেড়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ নেই।’
একটু আগেও রানা ভাবছিল, কীভাবে ওরে চিচিওয়াকে খুঁজে তার পকেটে রাখবে কয়েন। এখন ভীষণ শুকিয়ে গেছে ওর গলা। নিচু গলায় বলল, ‘তুমি কি জরুরি একটা কাজে আমাকে সাহায্য করতে পারবে?’
‘কী করতে হবে?’
‘ওরে চিচিওয়ার হাতে খুন হওয়ার আগেই সরিয়ে নিতে হবে আমার বন্ধু সোহেলকে।’