উপন্যাস
বড়গল্প
ছোটগল্প
1 of 2

মহাপ্রস্থান

মহাপ্রস্থান

এক

খন দু’জনকেই সামলানো দায়। মাসিমা শ্বশুরবাড়িতে। দুই মামার পোয়া বারো। যখন যা প্রাণ চাইছে, তাই করছেন। আজ ভোর চারটেয় ঘুম ভাঙছে, তো কাল দশটায়। রোজ রাত বারোটার আগে কারো খাওয়ার ইচ্ছেই করে না। তারপর রাত দুটো-আড়াইটে পর্যন্ত গজর গজর। চোরেরা এই বাড়িটাকে তাদের লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।

দু’জনের এখন খুব ভাব। মাসিমা যখন ছিলেন, তখন কথায় কথায় লেগে যেত। এখন একেবারে হরি-হর আত্মা। এ বলছে মেজো, তো ও বলছে বড়। পরামর্শ ছাড়া কোনও কাজই হয় না। বাড়িতে যিনি রান্না করেন, বামুনদি, তিনি যদি জিগ্যেস করেন, বড়দা, আজ কী রান্না হবে! বড়দা অমনি বললেন, দাঁড়াও মেজোকে জিগ্যেস করি। এইবার বড়তে, মেজোতে আধঘণ্টা শলা-পরামর্শ হবে। দু’জনেরই পছন্দের খাবারের বিরাট লিস্ট হবে, দশ-বারোটা পদ। তারপরে দেখা যাবে, খাওয়ার সময় দু’জনেই বেপাত্তা। মেজো কলেজ স্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানে সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাসে মশগুল। বড় ডাক্তার, তিনি কোনও গোপ্পে গুরি বাড়ি, নাড়ি টিপে, মাছ ধরার গল্প করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন। ঘড়ি, সময়, দিন রাত, এ-সবের কোনও তোয়াক্কা নেই।

মেজোমামা যদি একবার ক্রশওয়ার্ড নিয়ে বসেন, হয়ে গেল। পাশে তিনখানা ডিকশনারি। বড়মামা যদি মেডিকেল জার্নাল নিয়ে বসেন, রাত কাবার।

মাসিমা থাকলে, এই সব চলত না। এতটা বাড়াবাড়ি তিনি সহ্য করতেন না। কাগজপত্র ছোড়াছুড়ি করে, চিৎকার-চেঁচামেচি করে, আলো নিবিয়ে দু’জনকেই মশারির মধ্যে। সবশেষে বলতেন, দেখি, কে ফার্স্ট হয়। মানে, কে আগে ঘুমোয়, বড় না ছোট। মেজোমামাই ফার্স্ট হতেন। বালিশে মাথা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাপরের মতো শ্বাস-প্রশ্বাস। বড়মামা সহজে ঘুমোতে পারেন না। এপাশ, ওপাশ, চিৎ, উপুড়। আমি বড়মামার পাশেই শুই। সবশেষে আমার সঙ্গে দুষ্টুমি। এই কাতুকুতু দিচ্ছেন। এই চিমটি কাটছেন। শেষে বিরক্ত হয়ে আমাকে বলতে হত, মাসিমাকে ডাকব?

মাসিমার ভয়ে বড়মামা লক্ষ্মীছেলের মতো ঘুমিয়ে পড়তেন।

এখন মাসিমা তো নেই। কাকে ডাকব শাসন করার জন্যে। বল্গাহীন উৎপাত রাত ঠিক একটা। আমাদের খাওয়া শেষ হল। পাড়ার লোকের এখন মাঝরাত্তির। খাওয়া মানে যে-সে খাওয়া নয়। চর্বচষ্য-লেহ্যপেয়। দু’জনেই এখন দোতলার দক্ষিণের বারান্দায়। ইজি চেয়ারে একটু বিশ্রাম করছেন। সামনে গাছ-পালা, ফাঁকা মাঠ, দূরে একটা ঝিল। ঝিলের কিছুটা দূরে রেল লাইনে। একটা ট্রান্সমিশান টাওয়ার। মাথার ওপর লাল আলো। আরও দূরে একটা বড় ফ্যাকট্রি—অন্নপূর্ণা রোলিং মিল। দিন রাত কাজ হয়। দক্ষিণের বাতাসে শব্দ ভেসে আসছে। লোহার রড তৈরির ঝড়াং ঝড়াং শব্দ। যে-সব নক্ষত্রমণ্ডলী আকাশের মাথায় ছিল, তারা সব পশ্চিমে ঢলতে শুরু করেছে। আমিও একপাশে বসে বসে ঢুলছিলুম।

হঠাৎ কানে এল বড়মামা বলছেন, ‘কাজটা ঠিক হচ্ছে না।’

মেজোমামা গম্ভীর গলায় অভিভাবকের মতো বললেন, ‘ঠিক করে করার চেষ্টা কর।’

বড়মামা জিগ্যেস করলেন, ‘কোন কাজের কথা বলছি বল তো।’

‘যে কোনও কাজ, এনি ওয়ার্ক, ঠিক করে করা উচিত। মনে নেই, সেই কোন ছেলেবেলার আমরা পড়েছি, কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার। পাঁচজনে পারে যাহা, তুমিও পারিবে তাহা।’ মেজোমামা হাঁউমাউ করে হাই তুললেন।

বড়মামা বললেন, ‘কিস্যু বোঝোনি। আমি বলছি, এত রাতে, এত খাওয়াটা ঠিক নয়। প্রথমত নটার মধ্যে খাওয়া উচিত।’

‘শিশুরা খাবে। বড়দের জন্যে সময় অনেকটা বাড়ানো আছে।’

‘দ্বিতীয় কথা, রাতের খাওয়া হবে লাইট। ভেরি লাইট।’

‘ইন্ডিয়ান নিয়ম। আমেরিকান নিয়ম উলটো। দিনে লাইট, রাতে হেভি। বেশ জমিয়ে গুছিয়ে, কবজি ডুবিয়ে খাওয়া।’

‘স্বাস্থ্যের তৃতীয় নিয়ম, আফটার সাপার ওয়াক এ মাইল।’

‘নিয়ম বদলে গেছে। এখন বলছে, খাওয়ার পরই অজগর হয়ে যাও। টেনে ঘুম।’

বড়মামা আক্ষেপের গলায় বললেন, ‘কিন্তু ভাই দিন দিন ভুঁড়ি বাড়ছে। এই রেটে বাড়লে, সবাই বলবে, কুমড়ো পটাশ।’

‘মোটার জন্যে তুমি স্কিপিং করতে পার।’

‘এই শরীরে স্কিপিং! একমাত্র চাঁদে গেলে আমার পক্ষে স্কিপিং সম্ভব। সেখানে গ্র্যাভিটি নেই।’

মেজোমামা বললেন, ‘খুব আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’

‘সে তো হচ্ছেই। অকারণে এত খাওয়া। এর হাফ খেলেই আমাদের হয়ে যায়!’

‘আমি সে-ক্ষতির কথা বলছি না। আমি বলছি, সমস্ত জামা-প্যান্ট ছোট হয়ে যাচ্ছে সপ্তাহে সপ্তাহে।

‘এ তো আমারও সমস্যা। আমি প্রবলেম সলভ করে ফেলেছি।’

‘কীভাবে করলে? ইলেকট্রনিকস দিয়ে?’

‘আরে না রে বাবা। মাদ্রাজি কায়দায়। ধুতি দু-ভাঁজ করে লুঙ্গির মতো করে পরছি। ভুঁড়ি তুই কত বাড়বি বাড়।’

মেজোমামা বললেন, ‘ওটা কোনও সলিউশান হল না। আমি কি ভাবছি জান, চলো আমরা পাহাড়ে যাই, একেবারে হিমালয়ে।’

বড়মামা লাফিয়ে উঠলেন, ‘আঃ, একেবারে আমার মনের কথা। ছেলেবেলা থেকেই আমার খুব ইচ্ছে, এভারেস্টে উঠব, সাউথ কল দিয়ে।’

‘আর আমার কী ইচ্ছে জান, মহাপ্রস্থানের পথ ধরে হিমালয়ে যাব। নো বাস, নো ট্রাম।’

‘বেশ, তাহলে চলো, বেরিয়ে পড়া যাক। আমি এভারেস্ট। তুই মহাপ্রস্থান।’

আমার ঘুম ছুটে গেল। রাত দুটোর সময় এরা বলে কী। আর এদের আমি চিনি। বলা মানেই করা। আমি বললুম, ‘আমাকে একা ফেলে রেখে তোমরা চলে যাবে?’

বড়মামা বললেন, ‘তুই এটা ভাবলি কী করে? তোকে ফেলে রেখে চলে যাব! তুইও যাবি আমাদের সঙ্গে।’

‘তোমার তিনটে জার্সি গরু, দশটা দশ জাতের কুকুর, তিন খাঁচা পাখি, তাদের কে খাওয়াবে?’

বড়মামা একগাল হেসে বললেন, ‘সে কি আর আমি ভাবিনি ভাগ্নে। অনেক ভেবে মাথা থেকে প্ল্যান বার করেছি। কোনও ক্যাটারিং কোম্পানিকে বলব, তারা এসে খাইয়ে যাবে। গরুদের দেবে জাবনা, কুকুরদের মাংস, ভাত। পাখিদের দানা।’

মেজোমামা সন্দেহ প্রকাশ করলেন, ‘এরকম কোনও ক্যাটারার আছে বলে মনে হয় না।’

বড়মামা বললেন, ‘খোঁজ নেব।’ আধুনিক পৃথিবীতে সবই থাকে।’

আমি বললুম, ‘মাসিমাকে রিকোয়েস্ট করলে কেমন হয়। যদি এসে কয়েকদিন থাকেন।’

বড়মামা, মেজোমামা, দু’জনেই হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘খবরদার, খবরদার। কোনওভাবে যেন জানতে না পারে, তাহলে সব ভণ্ডুল হয়ে যাবে।’

দুই

ভোরবেলা হরিদা এসে হাজির। আমাদের পুরনো কাজের লোক। কী কারণে যেন অনেকদিনের জন্যে দেশে চলে গিয়েছিলেন। আমরা তাঁর আসার আশা ছেড়ে দিয়েছিলুম। হঠাৎ বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে হাসতে হাসতে প্রভাতসূর্যের মতো উদয়। তাঁকে দেখে বড়মামা আর মেজোমামার কি উল্লাস। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে দু’জনের ধেই ধেই নৃত্য। সঙ্গে অসাধারণ গান।

 In you catch a chinchilla in chile

 And then cuto-ff its beard, willynilly.

 With a small rajor blade,

 You can say that youv’e made

 A chilean chinchila’s chinchilly.

এক রাউণ্ড নাচের পর বড়মামা হরিদাকে জড়িয়ে ধরলেন।

‘হরিদা! বাবা কেদারনাথ তোমাকে পাঠিয়েছেন। তুমি কোনও স্বপ্ন পেয়েছ?’

‘স্বপ্ন নয়, আদেশ পেয়েছি। আমাদের বুড়োশিবতলার বেলগাছের মাথা থেকে ভর সন্ধেবেলা কে যেন গম্ভীরগলায় হেঁকে বললেন, ‘হরে, ওরা বিপদে পড়েছে, শিগগির ছুটে যা ছেলে দুটোকে সেভ কর।’

‘বাবা মহাদেবের আদেশ। তবে ইংরিজিটা না বললেই পারতেন।’

‘উনি ইংরিজিটা বলেনিনি, ইংরিজিটা আমার।’

‘হ্যাঁ, তাই বলো।’

বেলার দিকে মেজোমামা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন, রেল অফিস। টিকিট কাটতে। দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার। হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ হয়ে হিমালয়। রুদ্রপ্রয়াগ, দেবপ্রয়াগ। রুট আমাদের তৈরি। দু’জনেই ঠিক করেছেন, মহাপ্রস্থানের পথ ধরেই এগোবেন। যতদূর যাওয়া যায়। পথের শেষে সত্যিই যদি দুর্গ থাকে, তাহলে দরজাটা ঠেলে দেখে আসবেন, ভেতরে কতবড় বাগান, ফোয়ারা, ইন্দ্রপুরী! স্বর্গে মানুষ কী খায়। বড়মামার ধারণা, সবাই সেখানে রকম রকম আইসক্রিম খায়, ট্রবোর, ভ্যানিলা, চকোলেট। বরফে গর্ত করে কামধেনুর দুধ আর চিনি ঢেলে দিলেই কুলফি মালাই।

সাতদিন পরেই আমরা তিনজন হরিদ্বার। হর-কি-পৌরিতে গঙ্গার ধারে ধারে তোফা বসে আছি। গঙ্গা বহে চলেছেন হর হর শব্দে। সত্যি কি জায়গা! বড়মামা প্রায় ধ্যানস্থ অবস্থায় ঘোষণা করলেন, ‘আমি আর মর্ত্যে ফিরব না।’

মেজোমামা বললেন, ‘এইটা তোমার স্বর্গ?’

‘এই-ই হল স্বর্গের চৌকাঠ। কাল আমার আরও আনন্দের দিন। লছমনঝুলা পেরিয়ে সোজা চলে যাব সেই জায়গায় যেখানে মৃত্যু নেই, দুঃখ নেই, ভোট নেই, বোমা নেই, হিন্দি সিনেমা নেই। সেখানে অনন্ত যৌবন। জলে জন্ডিস নেই, আন্ত্রিক নেই, অ্যান্টিবায়োটিক নেই।’

মেজোমামা বললেন, ‘ওখানে কাটলেট নেই, চিলি চিকেন নেই, ফ্রায়েড প্রন নেই।’

‘মেজো! তোর এখনো ভোগে এত মতি! ভোগই দুর্ভোগের কারণ। বিচার কর। কাটলেটে কী আছে! এক টুকরো মাংস। সেটা কি মাংস, কেউ জানে না, কুকুর হতে পারে, ধেড়ে ইঁদুর হতে পারে, সেটাকে কিমা করে, ময়দা দিয়ে বেঁধে, ডিম গোলায় চুবিয়ে লেড়ো বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে শূকরের চর্বিতে ভাজা। ভাবলেই পেটগুলোয়। চিলি চিকেনে কী আছে। দীন-হীন-অসহায় এটা মুরগিকে শুধু হত্যা করেনি, নৃশংস এক রাঁধুনী তাকে নুন আর লঙ্কায় চুবিয়েছে। আর ফ্রায়েড প্রন! চিংড়ি হল জলের পোকা। পচা চিংড়ির গন্ধে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাহলে বুঝলে ব্যাপারটা! ভোজ মানে হিংসা, হত্যা, বদহজম, দুর্ভোগ। আমাদের এই বয়েসে দুটো জিনিসের প্রয়োজন, ত্যাগ আর সংযম।’

মেজোমামা আমতা আমতা করে বললেন, ‘আমি তো তোমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট।’

‘আরে তাতে কী হয়েছে, যাঁহা বাহান্না, তাঁহা তিপান্না। পঁয়তাল্লিশ আর পঞ্চান্ন একই ব্যাপার। ফর্টি তো ক্রশ করেছে।’

তিন

আমার মামাদের থেকে থেকেই খুব খিদে পেয়ে যায়।

বেশ বসেছিলুম প্রবাহিনী গঙ্গার ধারে। যত রাত বাড়ছে চারপাশে তত লোক বাড়ছে—ভজন হচ্ছে। কথকতা হচ্ছে। কত আলো, কত ভক্তি। এরই মাঝে বড়মামা হঠাৎ বললেন।—

‘আর বসে থাকা যায় না। পেট চোঁ-চোঁ করছে।’

মেজোমামা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমারও একই অবস্থা। ছুঁচো ডন মারছে পেটে।’

বড়মামা আমাকে জিগ্যেস করলেন, ‘তোর কী অবস্থা?’

‘আমি খিদে টিদে ভুলে গেছি। মনে হচ্ছে, সারা রাত এইখানে বসে থাকি।’

বড়মামা বললেন, ‘আহা! অত কথা তোকে কে বলতে বলেছে? খিদে পেয়েছে কী না।’

‘অল্প, অল্প।’

‘তাহলে চলো। আর দেরি কেন?’

যে হোটেলে আমরা কদিন ধরে খাচ্ছি, তার সবই ভালো, বেশ পরিষ্কার, ধবধবে সাদা দেরাদুন চালের ভাত। সমস্যা একটাই, সেটা হল তরকারি। লাল রঙের বদখত একটা জিনিসটা। সবজিটা কী বোঝা মুশকিল—না আলু, না রাঙালু। মেজোমামা নাম রেখেছেন গজালুর তরকারি। ভাতকে গলায় চালান করার এইমাত্র সহায়, পাঁপড়।

মেজোমামা খুব অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ‘এ বেশ হয়েছে ভালো, সকালে গজালু, রাতে গজালু, শয়নে গজালু স্বপনে গজালু। সর্বং গজালুময়ং জগৎ।’

বড়মামা বললেন, ‘এই ভাবেই মানুষের বৈরাগ্য আসবে ভাই। চলো, শুয়ে পড়া যাক। কাল অতি ভোরে ঊষাকালে আমাদের মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা।’

আমাদের নিবাসের ঠিক তলা দিয়ে গঙ্গা বয়ে চলেছেন ‘হর হর’ শব্দে। সেই সঙ্গীত শুনতে শুনতে ঘুম এসে গেল এক সময়। স্বপ্ন দেখলুম, তুষারমৌলি হিমালয়। মাথার ওপর চিল উড়ছে।

সাতসকালে মালাই দেওয়া চা খেয়ে যাত্রা শুরু হল। আমরা যেন সন্ন্যাসী। হাতে কম্বল, কমণ্ডলু, লাঠি। মামাদের পরিধানে আলখাল্লা। মাথায় সন্ন্যাসীদের টুপি। একটু বাড়াবাড়ি হলেও, দেখাচ্ছে সুন্দর। দু’জনের চেহারাই তো খুব সুন্দর। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ মনে হয় শিষ্য হবার বাসনা করছেন মনে মনে।

লছমনঝুলায় এসে আমাদের হাঁটা শুরু হল। গীতাভবনে সেই রাতের মতো যাত্রাবিরতি। কলকাতায় বসে ভাবাই যায় না। পৃথিবীটা এত সুন্দর। পাহাড়ের পর পাহাড়। প্রবাহিত অলকানন্দা। শীত শীত বাতাস। ধুলো নেই, ধোঁয়া নেই, সন্ন্যাসীরা ঘুরছেন। আশ্রমের পর আশ্রম। কোথাও বেদগান, কোথাও রামনাম। এই তো স্বর্গ।

এক বাঙালি ভদ্রলোক সেই থেকে সমানে বক বক করছেন, হাঁটাপথে যাবেন না বাসে যাবেন। ভদ্রলোক হিমালয় বিশেষজ্ঞ। কলকাতায় ফিরে গিয়েই আবার ছুটে আসেন হিমালয়ে। মহা আকর্ষণ।

বড়মামা বললেন, ‘মশাই! বাস, ট্রাম তো জীবনে চাপলেন অনেক, পদযাত্রীদের পথে চলুন না একবার। সেটাও তো অ্যাডভেঞ্চার!’

‘গাইড ছাড়া পারবেন যেতে?’

‘পথই তো গাইড! পথই পথ দেখাবে।’

ভদ্রলোকের নাম, রবীন্দ্রচন্দ্র দত্ত। হাটখোলার জমিদার বংশের ছেলে। প্রচুর পয়সার মালিক কিন্তু অমায়িক। বিনয়ী। বিষ্ণুচরণ ঘোষের আখড়ায় ব্যায়াম করতেন। সুন্দর স্বাস্থ্য।

মেজোমামা একটু তাতিয়ে দিলেন, ‘এত সুন্দর চেহারা আপনার। আপনি ভয় পাচ্ছেন! বিপদই তো পদে পদে ভয় পাবে আপনাকে দেখে।’

রবীনবাবু বললেন, ‘ভয়ডর আমার নেই। আমি যৌবনে একবার সিদ্ধান্ত করেছিলুম বাঘের সঙ্গে লড়াই করব। মুখার্জিবাবুর সার্কাসের একটা বাঘও ঠিক করা হয়েছিল। লড়াইটা হবে পার্কসার্কাসের ময়দানে। শেষ পর্যন্ত ক্যানসেল হয়ে গেল?’

বড়মামার ছেলেমানুষের মতো আগ্রহ, ‘কেন, কেন, ক্যানসেল হল কেন? লাস্ট মোমেন্টে ভয় পেয়ে গেছেন!’

‘না না ভয় পাব কেন? টাকার জন্যে হল না। একটা বড় সাইজের বাঘের দাম দু’লক্ষ টাকা। প্রফেসর মুখার্জি বললেন, রবীনবাবু আপনার সঙ্গে লড়াই মানেই বাঘটার মৃত্যু। দু’লক্ষ টাকা চোট। আমি বললুম, প্রফেসর মুখার্জি, যদি আমি মারা যাই। ভদ্রলোক অম্লান বদনে বললেন, আপনার আর কীই বা দাম! আপনার ওজনের একটা ছাগল হলেও না হয় কথা ছিল। কেটে ঝুলিয়ে দিলেই ষাট টাকা কেজি। কথা শুনুন! অসভ্য, ইতর।’

মেজোমামা বললেন, ‘কথাটা অপ্রিয় হলেই অতিশয় সত্য। মানুষের কোনও মূল্য নেই।’

দত্তমশাই প্রতিবাদ করলেন, ‘মানতে পারলুম না আপনার কথা। আইনস্টাইন, ওপেনহাইমার, এডিসন ফ্লেমিং, রাসেল, সক্রেটিস, এঁদের দাম নেই!’

‘ওই রকম হতে পারলে দাম আছে, তা না হলে এক কানাকড়িও দাম নেই।’ দত্ত মশাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘ন্যায্য কথা। আসলে কি জানেন, একবার জন্মে গেলে মরতে ভীষণ ভয় করে। ওটা তো আমাদের কাছে বেপাড়া। ওপাড়ায় কী আছে কে জানে। বিশাল বিশাল উনুন, বিরাট বিরাট কড়া, সেই কড়ায় ফেলে হয়তো ফুলুরি ভাজার মতো ভাজবে।’ মেজোমামা এক ধমক লাগালেন, ‘থামুন মশাই, একটা শিক্ষিত লোক হয়ে এই সব ভাবেন কী করে। একটা বেলুনের ভেতর কী থাকে?’

‘হাওয়া।’

‘এক একটা মানুষ এক একটা বেলুন। হাওয়াটা বেরিয়ে গেলেই চুপসে গেল। হাওয়ার মানুষ হাওয়াতেই মিশে গেল। যা বলবেন বুঝেসুঝে বলবেন, আপনি এখন আর কচি খোকাটি নন। নিন উঠুন। অনেক কথা হয়েছে, এইবার এনার্জি স্টোর করে নিয়ে বেরোতে হবে।’

কিছুটা পথ আমরা বাসে এলুম। ভয়ঙ্কর পথ। স্টিয়ারিং সামান্য এদিক ওদিক হলেই হাজার ফুট খাদে ধপাস। আমরা একটা জায়গায় তিনজন নেমে পড়লুম। কন্ডাকটার জিগ্যেস করলেন, ‘এখানে নামছেন? যাবেন কোথায়? এখানে থাকার কোনও চটি নেই।’

মেজোমামা উত্তরে বিজ্ঞের মতো হাসলেন।

এই চটি শব্দটাই দত্তমশাইকে ভাবিয়ে তুলল। বাসটা চলে যেতেই দত্তমশাই শুরু করে দিলেন, ‘হ্যাঁ মশাই, কাজটা কি ভালো হচ্ছে। চলতে, চলতে রাত তো হবেই, তখন আমরা থাকব কোথায়! চটি নেই তো!’

বড়মামা দার্শনিকের মতো বললেন, ‘তিনি যেখানে রাখবেন সেইখানেই থাকব। তেমন হলে গাছতলা তো আছেই।’

দত্তমশাই বললেন, ‘বাঘও তো আছে।’

মেজোমামা বললেন, ‘থাকলেই বা, ভয় কী, আপনি তো আছেন। বেওয়ারিশ বাঘের সঙ্গে লড়ে যাবেন, লাখ টাকা লাগবে না।’

দত্তমশাই নিজের প্যাঁচে পড়ে ঢোঁক গিললেন।

কিছুদূর যাওয়ার পর এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা। বড়মামা তাঁর ভয়ঙ্কর হিন্দিতে জিগ্যেস করলেন, ‘মহাপ্রস্থানের পথ কোনটা!’

সন্ন্যাসী অবাক হয়ে কিছুক্ষণ থমকে থেকে পরিষ্কার বাঙলায় বললেন, ‘এখানে তো সবই মহাপ্রস্থানের পথ বাবা, একটু অসাবধান হলেই খাদে পতন ও সশরীরের স্বর্গে গমন। তবে হ্যাঁ, সেকালের তীর্থযাত্রীরা যে হাঁটাপথে কেদারে যেত, সেটা ওই বাঁ দিকে। ওপথে আজকাল আর কেউ যায় না। তোমরা যাবে না কি!’

মেজোমামা টপ করে একটা প্রণাম করে বললেন, ‘আশীর্বাদ করুন।’

সন্ন্যাসী একটু সন্দেহের চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের পথে চলে গেলেন।

দত্তমশাই বললেন, ‘ঠিক আছে, মরতে যদি হয় তো মরব। আর আমি ভাবতে পারছি না। চলুন তো মশাই। আমার এইবার রোখ চেপে গেছে।’

তিনি তরতর করে এগিয়ে চললেন, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ মানুষ। প্রায় ছ’ফুট লম্বা। টকটকে ফর্সা। ডানদিকে পাহাড়ের দেওয়াল, বাঁ দিকে সুঁড়ি পথ। ভাঙা-চোরা। বড়, ছোট পাথর ছড়ান। পাহাড়ের গা বেয়ে বৃষ্টির জল গড়াতে গড়াতে সরু সরু নালি তৈরি হয়েছে। বাঁ দিকে গভীর বন। দিনের বেলা, তাও ঝিঁঝির ডাকে কান পাতা যায় না।

আমি সবার আগে নাচতে নাচতে চলেছি। বেশ ঠান্ডা, তাই কোনও কষ্টই হচ্ছে না। ভয় তো হচ্ছেই না। দিনের বেলা আবার ভয় কীসের। রাত আসুক দেখা যাবে। আমার দুই মামা থেকে থেকেই বলছেন, ওয়ান্ডারফুল, একস্ট্রা অর্ডিনারি, জীবন ধন্য। মরি যদি সেও ভালো। দত্তমশাই নিজেকে সাহস দেওয়ার জন্যে গান ধরলেন—আমি ভয় করব না, ভয় করব না।

হঠাৎ আমাদের মনে হল ব্যাপারটা কী। আমরা চারজন ছাড়া কোথাও কোনও জনপ্রাণী নেই, এদিকে সন্ধে হয়ে আসছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। লোকালয় বলে কিছু নেই। তার ওপর বাঁ দিকের জঙ্গল হঠাৎ অনেকটা নীচে চলে গেল। তা প্রায় হাজার ফুট নীচে। সামনে ভাঙাচোরা পায়ে চলা পথ। খুবই সরু। একটু অসাবধান হলেই বাঁ দিকের গভীর খাদে। অন্ধকার ঘন হচ্ছে, পথের আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বড়মামার পাঁচ সেলের টর্চ এই বিশাল অন্ধকারের রাজত্বে দেশলাই।

বড়মামার চিন্তিত গলায় পাওয়া গেল, ‘মেজো আমরা এখন নো ম্যানস ল্যাণ্ডে। একেই বলে হর্নস অফ ডাইলেমা, এগোবো না পেছোবো।’

মেজোমামা বীরের মতো বললেন, ‘পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে ভীরুরা। আমরা সাহসী, করেঙ্গে ইয়ে…মেজোমামা অদৃশ্য। বহু নীচে থেকে শোনা গেল, ‘মরেঙ্গে’।

দত্তমশাই বললেন, ‘যাঃ আপনার মেজো ভাই গনফট। তলিয়ে গেছে।’ বড়মামা বললেন, ‘তলিয়ে গেছে মানে?’

‘মানে, সামনে আর তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন? তিনি মহাপ্রস্থানে গেলেন। সামনে আর রাস্তা নেই, বিশাল খাদ। তিনি আত্মবলিদান করে আমাদের বাঁচালেন।’

বড়মামা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘মেজো মারা গেল?’

আমি ভাঙা পথের ওপর শুয়ে পড়ে মুখ ঝুলিয়ে থকথকে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ডাক ছাড়লুম, ‘মেজোমামা?’

অনেকটা নীচে থেকে উত্তর এল, ‘ফাসক্লাস আছি, জায়গাটা বেশ মনোরম। অনেকটা নীচে একটা নদী বইছে মনে হয়। জলের আওয়াজ পাচ্ছি।’

বড়মামাও আমার পাশে শুয়ে পড়ে মুখ ঝুলিয়ে টর্চলাইট মারলেন। আলোর পথ অন্ধকারে কিছু দূর নেমে হারিয়ে গেল। বড়মামা চিৎকার করে বললেন, ‘মেজো! উঠে আসতে পারবি?’

মেজোমামার উত্তর এল, ‘অসম্ভব! আমার আশা তোমরা ছেড়ে দাও।’

দত্তমশাই অন্ধকারে আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বড়মামা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘মশাই! এ তো দেখছি ফায়ার ব্রিগেডে খবর দিতে হবে। তাঁরা শুনেছি হাওড়া ব্রিজের মাথা থেকে পাগল নামাতে পারেন। কুয়ো থেকে গরু তুলতে পারেন।

দত্তমশাই বললেন, ‘ভুল করছেন, এটা কলকাতা নয়।’

‘তা হলে কী হবে?’

‘এই রাতে আর কী হবে। উনি ওইখানে যেমন আছেন থাকুন, আমরা এইখানে থাকি। ভোর হলে দেখা যাবে।’

‘এই সরু জায়গায় আমরা থাকব কী করে? পাশ ফিরলেই তো পড়ে যাব!’

‘আপনি কি এটাকে খাট ভাবছেন! ঘুমোবেন না কী! পাহাড়ে পিঠ দিয়ে আমরা জেগে বসে থাকব। তা ছাড়া এই জায়গা ছেড়ে চলে গেলে আর খুঁজে পাব না। আমরা সারা রাত গান গাইব। আমি ভালো কীর্তন জানি, আসুন জমিয়ে বসা যাক। খাবারদাবার যা আছে বের করুন।’

বড়মামা বললেন, ‘খাবার তো মেজোর ঝুলিতে।’

দত্তমশাইও বললেন, ‘বাঃ তোফা। সারারাত আমাদের নিরম্বু উপবাস।’

‘আপনার খাওয়ার চিন্তা আসছে? একটা মানুষ হাজার ফিট নীচে ঝুলছে, আমরা একটা ছাদের কার্নিসে কোনও রকমে বসে আছি, কনকনে বাতাসে দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে, একটু পরেই ওপর পাহাড় থেকে ভাল্লুক নামবে, আপনি খাওয়ার কথা বলতে পারলেন?’

‘না খেলে কাল আপনার ভাইকে তুলব কী করে?’

উঃ রাতের মতো রাত! হাড়কাঁপানো বাতাস। ঘুরঘুট্টে অন্ধকার। মাঝে মাঝে অলৌকিক একটা আলো আকাশে খেলা করে যাচ্ছে। কিডর কিট, কিডর কিট আর একটা শব্দ অনবরতই হয়ে চলেছে। গুম গুম করে পিলে কাঁপানো একটা শব্দ মাঝে মাঝে কানে আসছে। দত্তমশাই বললেন, ‘পাহাড় ভেঙে পড়ার শব্দ।’ আপাদমস্তক কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে আছি আমরা তিনটে ভাল্লুক।

বসে থাকতে থাকতে দত্তমশাই হঠাৎ বললেন, ‘এই সময় যদি হঠাৎ পাহাড়ী বৃষ্টি নামে। সেই তোড়ে আমরা তিনজনেই নীচে নেমে যাব।’

বড়মামা জিগ্যেস করলেন, ‘বৃষ্টি কখন হবে?’

‘এনি মোমেন্ট, এনি টাইম’।

শীতকাঁপা গলায় বড়মামা বললেন, ‘তখন কী হবে?’

দত্তমশাই বেপরোয়া গলায় বললেন, ‘কী আর হবে! রাখে কেষ্ট মারে কে, মারে কেষ্ট রাখে কে?’

দূরে ভয়ঙ্কর একটা শব্দ হল গুম গুম করে। দত্তমশাই বললেন, ‘ওই শুনুন। ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে।’

কোনওরকমে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে রাতটা আমরা কাটালুম। অসাধারণ একটা ভোর। সোনার পাত মোড়া একটা আকাশ। ভগবানের খোদ দপ্তরের রকমসকমই আলাদা।

বড়মামা খাদের কিনারায় মুখ ঝুলিয়ে ডাকলেন, ‘মেজো’।

নীচ থেকে উত্তর এল, ‘গুড মরনিং। ব্রেকফাস্ট ড্রপ করে দাও।’

‘ব্রেক ফাস্ট! খাবারের ঝোলা তো তোর কাছে!’

সে তো কাঁধ থেকে স্লিপ করে, আমাকে ত্যাগ করে আমার চেয়ে নীচে চলে গেছে।’

‘তুই আছিস কোথায়?’

‘মনে হচ্ছে একটা বাড়ির চালে বসে আছি।’

‘সে কী রে?’

‘এটা একটা ফরেস্ট বাংলোর ছাত। নীচে অনেক ফরেনার ঘোরাঘুরি করছে। সুন্দর সুন্দর সব মেমসাহেব।’

বড়মামা ছোট ছেলে যে-রকম বায়না করে সেইরকম গলায় বললেন, ‘আমরাও তোর কাছে যাব ভাই।’ মেজোমামা অনেক নীচে থেকে হেঁকে বললেন, ‘আমার মতো হড়কে নেমে এসো।’

বড়মামা দত্তমশাইকে বললেন, ‘আসুন আমরা তাহলে হড়কাই।’

দত্তমশাই বললেন, উনি বাইচানস কপালের জোরে ওইখানে পড়েছেন। নিজের ইচ্ছেতে নয়। আমাদের বেলায় তা নাও হতে পারে। তালগোল পাকাতে পাকাতে সোজা নীচে, তারপর হাড়গোড় ভাঙা।’

‘তা হলে?’

‘আমার মনে হচ্ছে, রাস্তা একটা আছে।’

‘কোথায়?’

আমার আসার পথে অনেকটা পেছনে, বাঁদিকে একটা পথ দেখেছিলুম মনে আছে? সেই পথটাই নেমে অলকানন্দা।

বেলা দ্বিপ্রহরে আমরা তিনজন ধুঁকতে ধুঁকতে অলকানন্দার তীরে সেই সুন্দর ফরেস্ট বাংলোতে পৌঁছে গেলুম। মেজোমামা যে-জায়গাটায় এক মিনিটে পৌঁছেছিলেন আমাদের সেই জায়গায় আসতে সাত ঘণ্টা সময় লাগল।

সুপারিনটেন্ডেন্ট খাতা থেকে চোখ তুলে বললেন, ‘আপনারা ক’জন আছেন?’

বড়মামা বললেন, ‘চারজন।’

‘চারজন কোথায়? তিনজন তো!’

‘আর একজন চালে বসে আছে। আকাশ থেকে ল্যান্ড করেছে। আপনাদের মই আছে!’ ভদ্রলোক অবাক হলেন। বেরিয়ে এলেন বাইরের কম্পাউন্ডে। খাড়াখাড়া পাইন গাছ। তারই আড়ালে একটা কটেজের চালে মেজোমামা পা ছড়িয়ে বসে আছেন। মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ। চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে।

বড়মামা বললেন, ‘ওই যে, ওকে নামাতে পারলেই আমরা চারজন। জাস্ট একটা মই পেলেই হয়ে যায়। ব্রিং এ ল্যাডার।’

মেজোমামা ওদিকে, সেকালের জমিদাররা যে-কায়দায় তাকিয়ায় ঠেসান দিয়ে সেরেস্তায় বসে থাকতেন সেইভাবে আধশোয়া হয়ে চালে চালকুমড়োর মতো শোভা পাচ্ছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *