বাইশ
পেনিলোপী প্রেমের সম্বন্ধে একটা বক্তৃতা দিচ্ছিল :
বাপ-মা গাঁই-গোত্র মিলিয়ে একটা কনে দেখে দিলে, ছেলে চোখ-কান বুজে বিয়ে করে ফেললে, তারপর বাড়ীর আরও পাঁচজনের সঙ্গে তারাও খাটে-খোটে, কাজ করে, ছেলে-পুলে হয়,— আমাদের দেশে বিবাহিত জীবন এমন নিস্তরঙ্গ নয়।
মহেন্দ্র বললে, তাতে তরঙ্গটা কি?
—আছে। মনের মানুষকে আমাদের খুঁজে নিতে হয়।
—কিন্তু খুঁজে নেওয়ার পরে তো, আমাদেরও যে অবস্থা তোমাদেরও সেই অবস্থা? পেনিলোপী হেসে বললে, সম্ভবত। কিন্তু ওই খুঁজে নেওয়াটাই একটা মস্ত ব্যাপার। তোমাদের কাছে বড় হল দেহের শুচিতা, আমাদের কাছে বড় হল প্রেম।
—দেহের শুচিতার মানে বুঝি। কিন্তু প্রেম বস্তুটা কি?
—সে মুখে বলবার নয়, অনুভব করবার। সহস্র লোকের মধ্যে একটি লোককে দেখলে চোখমুখ প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে, বুকের মধ্যে জ্বলে ওঠে আগুন,—সেই হল প্রেম। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি! তেমন হয় তোমাদের?
–বোধ হয় না। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের লোক আমরা, আগুনের দরকার কম।
এ পরিহাস পেনিলোপী গায়েও মাখলে না। দীপ্ত কণ্ঠে বলে চললো :
—সেই প্রেম, যার প্রেরণায় মানুষ অবহেলায় পাহাড় পার হয়, সাগর ডিঙিয়ে যায়, কোনো বাধাকেই বাধা বলে মনে করে না।
তোমার গায়ত্রী খুব ভালো মেয়ে, তোমাদের শাস্ত্রমতে যাকে সতী বলে তাই। সে অশেষ দুঃখ-কষ্ট-অবহেলা স্বীকার করবে, তবু দেহের শুচিতার বিনিময়ে তোমার ঘরে রাজরাণী হয়ে আসতেও প্রস্তুত নয়। এমন মেয়ে আমাদের সমাজে তুমি পাবে না। কিন্তু প্রেমের জন্যে ঐশ্বর্যশালী স্বামীকে ছেড়ে ভিক্ষুকের কুটিরে এল, এমন মেয়ে আমি নিজেই দেখেছি।
বসন্ত এক কোণে চোখ বুজে বসে চুরুট টানছিল। এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি। এখন বললে, গায়ত্রীর ওটা শুধু দেহের শুচিতা নাও হতে পারে। হয়তো সংস্কার।
পেনিলোপী চমকে গেল। বিচিত্র নয়, সংস্কারও হতে পারে। সংস্কারের শক্তিও সামান্য নয়।
মহেন্দ্রের দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তোমার কি মনে হয়?
নিস্পৃহভাবে মহেন্দ্র বললে, কিছুই মনে হয় না। শোনো, সিনেমায় যাবে? একটা ফিল্ম এসেছে ‘The Lily of the Lake’ শুনছি নাকি অদ্ভুত হয়েছে। যাবে?
পেনিলোপীর মন উসখুস করে উঠলো। বললে, এখন ক’টা বাজে? ভালো ফিল্ম হলে আর কি টিকিট পাওয়া যাবে?
—দেখতে পারি টেলিফোন করে, অবশ্য যদি যাও।
বসন্তর দিকে চেয়ে পেনিলোপী জিজ্ঞাসা করলে, যাবে?
বসন্ত স্রেফ ঘাড় নাড়লে। বললে, না। আমি যা ঘুরেছি, এই সোফাটা ছেড়ে এক পাও আর নড়ছি না।
—তাহলে আজ থাক মহিন। কাল যাওয়া যাবে বরং। কিন্তু এখানে তোমরা সন্ধ্যাটা কাটাও কি করে? না ক্লাব, না কিছু। কি করে কাটাও?
মহেন্দ্র বললে, ভূতের গল্প বলে।
ওরা হাসতে লাগলো।
মহেন্দ্র বললে, তোমাদের অসুবিধাটা আমি বুঝতে পারছি পেনিলোপী, ‘Two is company, three is none.’ তোমরা একটু বিশ্রাম কর। কিংবা ভূতের গল্পও করতে পার। আমার কতকগুলো জরুরী চিঠি এসেছে, তার উত্তর আজ দিতেই হবে। আমি চললাম, আবার কাল সকালে দেখা হবে।
কেউ বাধা দেবার পূর্বেই মহেন্দ্র নিচে নেমে গেল।
.
অনেকগুলো জরুরী চিঠি এসে জমেছে সত্য। মহেন্দ্র সেগুলোর জবাব লেখবার জন্যে বসলো।
এবারে দেশ থেকে ফেরবার পর থেকে বাড়ীর চিঠি আসাটা অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। সুবর্ণ মহেন্দ্রকে কালে-ভদ্রে চিঠি দিত। এবারে অত্যন্ত ঘন ঘন দিচ্ছে, মহেন্দ্রকেও, পেনিলোপীকেও। গায়ত্রীও চিঠি দিচ্ছে পেনিলোপীকে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সুবর্ণর চিঠির জবাব দেওয়া মহেন্দ্রের পক্ষে অসম্ভব। চিঠি লেখার বিষয়ে সে আবাল্য অলস। সুবর্ণর চিঠিখানি সে একপাশে সরিয়ে রেখে দিলে। তুলে নিলে নরেনের চিঠিটা।
চিঠিটা জরুরী। এর একটা উত্তর আজকেই দিতে হয়।
কিন্তু কি উত্তর দেবে?
বিরাজমোহিনী আর দেশে থাকতে চান না, কাশী যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শেষ বয়সটা সেইখানেই যদি তিনি কাটাতে চান, স্বচ্ছন্দেই কাটাতে পারেন। তার জন্যে মহেন্দ্রের অনুমতির অপেক্ষা করে না। কিন্তু সঙ্গে কে থাকবে? দাদা লিখেছেন, গায়ত্রীর খুব ইচ্ছা সে সঙ্গে যায়। সে গেলে মায়ের যত্ন হবে। তবে আর কি? পাঠিয়ে দিন তাদের। না, তাও হবে না। নরেনের বিশ্বাস, তাকে ছেড়ে মা একদিনও কোথাও থাকতে পারবেন না। তাহলে কাশী পাঠিয়ে কাজ কি? দাদা নিজের কাছেই মাকে রেখে দিতে পারেন। কিন্তু মা থাকতে কিছুতেই রাজি নন। তাহলে আর কি করা যায়? সে চিঠিখানাও মহেন্দ্ৰ তখনকার মতো সরিয়ে রেখে দিলে।
মহেন্দ্র ঘরের মধ্যে পায়চারী করতে লাগলো। কিছুই যেন ভালো লাগছে না তার। এবারে দেশ থেকে এসে পর্যন্তই তার এই অবস্থা। কাজে মন বসে না।
একবার মনে হল, নরেনকে লিখে দেয়, মাকে কাশীই পাঠিয়ে দেওয়া হোক। মহেন্দ্ৰ নিজেই থাকবে মায়ের কাছে। ধর্মে তার মতি নেই সত্য, জননী জাহ্নবীর মহিমাও হয়তো উপলব্ধি করতে পারবে না। তবু সমস্ত কিছু থেকে দূরে, সমস্ত কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেশ কাটিয়ে দেবে বাকী জীবনটা।
কিন্তু জানে তা সম্ভব নয়। তার মতো অনাচারীর সঙ্গে এক বাড়ীতে থাকতে হবে জানলে বিরাজমোহিনী কাশী কেন, বৈকুণ্ঠে যেতেও রাজি হবেন না।
সংসারের সঙ্গে দীর্ঘ ত্রিশ বৎসরের আচরণে এই সম্পর্ক সে গড়ে তুলেছে। পায়চারী করতে করতে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে একদৃষ্টে সে চেয়ে রইলো। যেন তার সামনের সুদীর্ঘ পথটাকে সে দেখতে চায়। সুদীর্ঘ পথ। এঁকে-বেঁকে দিগন্তের কোলে গিয়ে অদৃশ্য হয়েছে। কল্পনার দৃষ্টিতে পথের দু’ধারে কোথাও এতটুকু ছায়াও সে দেখতে পেলে না। চারিদিক শুধু ধু-ধু করছে!
এই পথ পার হয়ে যেতে হবে তাকে।
কিন্তু কোথায়? .
কোথায় তা কেউ জানে না। তবু যায়, তবু যেতে হয়। মহাকালের আহ্বান অমোঘ, তাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।
এমন সময় একখানা ফাইল হাতে বসন্ত এলো।
বললে, শোনো। এই যন্ত্রপাতিগুলোর অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। আজ চিঠি এসেছে এগুলো তৈরি। কাল-পরশু নিয়ে আসি, কি বল? কিন্তু রাখি কোথায়? ঘরটা ভাড়া নেওয়ার লেখাপড়া করতেই তো এত সময় কেটে গেল। এখন ওটাকে ডিস্টেম্পার করতে হবে। ফার্নিচার এনে সাজাতে হবে। তোমার ও দিশী মিস্ত্রীর কাজ নয় হে! আমি চীনে- মিস্ত্রীকে খবর দেব ভাবছি। তারপরে,
মহেন্দ্ৰ অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে শুনছিল, এই বার হাত জোড় করলে। বললে, তারপরে আর নয় ভাই। আমাকে এইবার রেহাই দাও।
বিস্মিতভাবে বসন্ত বললে, তার মানে?
—তার মানে আমার আর ভালো লাগছে না। আর আমি পারছি না। কোন একটা কাজে অধ্যবসায়ের সঙ্গে লেগে থাকবার শক্তি আমি হারিয়েছি।
বসন্ত যেন আকাশ থেকে পড়লো। বললে, কি আবোল-তাবোল বকছ তুমি!
মহেন্দ্ৰ বসন্তকে নিয়ে পাশের একটা সোফায় বসলো। এবং বলতে লাগলো :
-–তোমাকে সব কথাই বলি বসন্ত। ক্লিনিক খোলায় আমি আর উৎসাহ পাচ্ছি না। আমি ওর মধ্যে রইলাম, কিন্তু আমার উপর নির্ভর কোরো না। তুমিই যা হয় কোরো। মাঝে মাঝে আমি আসব, যতটুকু পারি তোমায় সাহায্য করব, তারপর আবার যখন ভালো লাগবে না, তখন চলে যাব।
—কি করবে তুমি?
—কিছুই করব না। তুমি বুঝতে পারছ না বসন্ত, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি, আমার কিছুই করার শক্তি নেই। আমার উপর নির্ভর করা ব্যবসার পক্ষে নিরাপদও হবে না।
—তাহলে একেবারে কিছুই করবে না তুমি?
—না, একেবারে চুপচাপ থাকতেও বোধ হয় পারব না। কিছু কিছু করতে হবে, এলোমেলো ভাবে। যেমন ধর, দেশের কাজ। বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, ডাক এলে দুর্গতদের সেবার জন্যে যেখানে দরকার যাব, যতখানি পারব করব। যখন পারব না এইখানটিতে এসে লুকিয়ে পড়ব। নয় তো বাইরে কোথাও ঘুরে ঘুরে বেড়াব।
—আচ্ছা, তাই হবে।—বলে বসন্ত হাসলে। বললে,—আজ মনটা তোমার, যে কারণেই হোক, ভালো নেই। আমি চললাম। তুমিও বরং একটু ঘুমুবার চেষ্টা করগে।
মহেন্দ্রের পিঠে দুটো চাপড় দিয়ে বসন্ত শিস দিতে দিতে উপরে চলে গেল।
.
এরই দিনকয়েক পরে।
সন্ধ্যাবেলায় মহেন্দ্ৰ লেপ মুড়ি দিয়ে খাটে শুয়ে ছিল। এমন সে করত না। শোয়া দূরে থাক্, এক জায়গায় দীর্ঘকাল বসে থাকাই তার পক্ষে অসম্ভব ছিল। কোনো কাজ না থাকলে বসে কিংবা শুয়ে থাকার চেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোই সে পছন্দ করত। কিন্তু ক’দিন থেকে কি যে তার হয়েছে, শুয়েই সে বেশিক্ষণ থাকে। ঘুমায় না, ঘুমুনো সম্ভবও নয়, শুধু আকণ্ঠ লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে থাকে।
সেদিনও তাই ছিল। ঘরে জ্বলছিলো শুধু নীল বেড-লাইটটা। অন্য লাইটটা তার চোখে লাগে।
এমন সময় পেনিলোপী এলো ধীরে ধীরে।
—আমাকে তোমার ঘরে একটু আশ্রয় দেবে মহিন?
মহেন্দ্র খাটের উপর উঠে বসলো। সকৌতুকে জিজ্ঞাসা করলে, কি ব্যাপার! তুমিই হলে আমাদের আশ্রয়দাত্রী! আর তুমিই বেরুলে আশ্রয়ের খোঁজে! ‘ভিখারিণী হল আজি কমল-আসনা!’ ব্যাপারটা কি পেনিলোপী? বসন্ত তাড়িয়ে দিলে বুঝি?
ভূরু বেঁকিয়ে, চোখ টেনে, ঠোট কুঁচকে পেনিলোপী ফোঁস করে উঠলো। বললে, ইস, আমাকে কি বাঙালীর ঘরের মেয়ে পেয়েছ যে কখনও মাথায় রাখবে, কখনও পায়ে থেঁৎলাবে?
মহেন্দ্র হেসে বললে, তাহলে তুমি বাঙালী মেয়েদের কিছুই চেননি। তারা বাইরে যেমন অবলা, ভিতরে তেমনি সবলা।
পেনিলোপী হেসে বললে, ও কথা আমাকে আর বোলো না, আমি দেখে এসেছি সব।
—কিছুই দেখে আসনি। এই বাড়ীতে মাস দুই আগে এলে দেখতে পেতে বাঙালী মেয়ের প্রতাপ।
—কি রকম?
পাশের একটা বাড়ী দেখিয়ে দিয়ে মহেন্দ্র বললে, ওই যে বাড়ীটা দেখছ না, মাস দুই আগে পর্যন্ত ও বাড়ীতে একটি পরিবার ছিল। গৃহিণীটির যেমন দশাসই কলেবর, তেমনি কণ্ঠ! কী একটা কাজ করত বোধ হয়। সকালে চুল বেঁধে, কুঁচিয়ে কাপড় পরে, বেঁটে ছাতাটি হাতে করে কোথায় বেরিয়ে যেত। ফিরতো কোনোদিন সূর্য ডোববার আগেই, কোনোদিন সন্ধ্যার পরে, এক একদিন রাত এগারোটাও হত। এলেই পাড়ার লোক বুঝতে পারতো, তিনি এলেন। দেখতাম, চক্ষুর পলকে স্বামী থেকে আরম্ভ করে ছেলেমেয়ে পর্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠতো। বোধ করি মেয়েটার একটু শুচিবাই ছিল। রবিবার কিংবা ছুটির দিন হলে ঘর ধোয়ার পালা পড়ে যেতো। মহিলাটি নিজেই একখানা গামছা পরে ঝাড় হাতে লেগে যেতেন ঘর পরিষ্কার করতে। আর একটা গামছা পরে কর্তা জল তুলতেন, বিছানা-পত্তর রোদে দিতেন। সমস্ত দিনের মধ্যে ভদ্রলোক আর কাপড় পরবার সুযোগ পেতেন না।
—কেন?
—ঠিক জানি না। বোধ হয় ছোঁয়াছুঁয়ির ভয়ে। শনিবারেও দেখতাম অফিস থেকে ফিরে সারা বিকেল ভদ্রলোক একটা গামছা পরেই ছাদে ঘুরে বেড়াতেন। আর সব সময় যেন চোর। এত কাছে থেকেও কোনো দিন তাঁর গলা শুনি নি। দেখনি তো সে মেয়েকে?
—এরকম জাঁদরেল মেয়ে সব দেশেই আছে মহিন!
—নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু বাংলা দেশেও যে আছে, এ তো তুমি ভাবোনি পেনিলোপী। গৃহিণীরা সব দেশেই মোটামুটি এক,—কখনও নরম, কখনও গরম। স্বামীরাও সব দেশেই পারতপক্ষে গৃহিণীদের ঘাঁটায় না। যাতে সংসারে অশান্তি বাড়ে। কে সহজে অশান্তি বাড়ায় বল? অশান্তিকে কে ভয় করে না?
—তা ঠিক!
—তবে হ্যাঁ। সুদিন ছিলো আগে।
—কি রকম?
—এই আমরা, জানো তো আমরা কুলীন ব্ৰাহ্মণ?
—না, জানি না। তবে স্বীকার করছি।
মহেন্দ্র বললে, আমরা কুলীন ব্রাহ্মণ। আগে আমরা ইচ্ছে করলে তিনশো পঁয়ষট্টিটাও বিয়ে করতে পারতাম।
—সে আবার কি!
—হ্যাঁ, পারতাম। কল্পনা কর সে কী আনন্দ! তিনশো পঁয়ষট্টিটি শ্বশুরালয়ে বিভিন্ন বয়সের তিনশো পঁয়ষট্টিটি গৃহিণী, বছরের তিনশো পঁয়ষট্টিটি দিন আমারই প্রতীক্ষায় রয়েছেন। আমি একটি করে দিন একটি করে শ্বশুরালয়ে অতিবাহিত করি। খাই-দাই- রাত্রিবাস করি, এবং প্রভাতে দক্ষিণান্তে অন্য শ্বশুরালয়ের দিকে যাত্রা করি। ভাবো তো কী অবাধ মুক্তি! আমার বাড়ীঘর করার দরকার নেই, ঝি-চাকর, বাবুর্চি-বেয়ারার দরকার নেই। সমস্ত জীবন শুধু এক শ্বশুরবাড়ী থেকে আর এক শ্বশুরবাড়ী যাওয়া।
—কি হল তার?
—উঠে গেল! পশ্চিম থেকে তোমরা এলে আমাদের সভ্য করতে। এসে শুধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই কেড়ে নিলে না, বৈবাহিক আনন্দ থেকেও বঞ্চিত করলে!
—কিন্তু সেই মেয়েগুলির কি হত ভেবেছ?
—ভাববার তো দরকার নেই পেনিলোপী। নিজের চেয়ে বড় সংসারে কিছুই নয়। আমরা কি হারালাম সেইটেই ভাবি, আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
বলে মহেন্দ্ৰ সশব্দে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললে।