কপাল মন্দ হইলে তাহার ফলাফল ফিরাইতে কাহারো সাধ্য নাই। মুসাল নগরে আসিয়া হাসান কয়েকদিন থাকিলেন। জায়েদার ভয়ে গৃহ পরিত্যাগ করিলেন, কিন্তু অদৃষ্টলিপি যাহা, তাহাই রহিয়া গেল। যখন কপাল টলিয়া যায় দুঃখ-পথের পথিক হইতে হয়, তখন কিছুতেই আর নিস্তার থাকে না। এক জায়েদার ভয়ে গৃহ ত্যাগ করিয়া মুসাল নগরে আসিলেন, কিন্তু সেরূপ কত জায়েদা শত্রুতা সাধনের জন্য তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিল, তাহা কী তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন? এই বিশ্বসংসারে শত্রুসংখ্যা যদি আমরা জানিতে পারি, বাহ্যিক আকারে শত্রু মিত্র যদি চিনিতে পারি, তবে কি আর বিপদের সম্ভাবনা থাকে? চিনিতে পারিলে কি আর শত্রুরা শত্রুতা সাধন করিতে পারে? সতর্কতা কাহার জন্য? ইমাম হাসানের ভাগ্যে সুখ নাই। যেদিন জয়নাবকে তিনি বিবাহ করিয়াছেন, যেদিন জয়নাবকে নিজ পুরীমধ্যে আনিয়া জায়েদার সহিত একত্র রহিয়াছেন, সেই দিনই তাঁহার সুখস্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, সেই দিনই তাঁহার সুখসূর্য অস্তমিত হইয়াছে। জয়নাবের জন্যই জায়েদা আজ তাঁহার পরম শত্রু। সেই শত্রুর যন্ত্রণায় অস্থির হইয়াই হাসান গৃহত্যাগী। সেই গৃহত্যাগেই আর এক শত্রু শত্রুতা-সাধনে সুযোগ। সকল মূলই জয়নাব। আবার জয়নাবই জায়েদার সুখের সীমা।
মদিনার সংবাদ দামেস্কে যাইতেছে, দামেস্কের সংবাদ মদিনায় আসিতেছে। ইমাম হাসান মদিনা ছাড়িয়া মুসাল নগরে আসিয়াছেন, এ কথাও এজিদের কর্ণে উঠিয়াছে, অপর সাধারণেও শুনিয়াছে। ঐ নগরের একচক্ষুবিহীন জনৈক বৃদ্ধের প্রভু মোহাম্মদের প্রতি জাতক্রোধ ছিল; শেষে সেই ক্রোধ, সেই শত্রুতা তাঁহার সন্তানসন্ততি-পরিশেষে হাসান-হোসেনের প্রতি আসিয়াছিল। সেই বৃদ্ধ প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল যে, সুযোগ পাইলেই মোহাম্মদের বংশমধ্যে যাহাকে হাতে পাইবে, তাহারই প্রাণ সংহার করিবে। মদিনা পরিত্যাগ করিয়া হাসানের মুসাল নগরে আগমন বৃত্তান্ত শুনিয়া সেই ব্যক্তি বিশেষ যত্নে হলাহল সংযুক্ত এক সুতীক্ষ্ণ বর্শা প্রস্তুত করিয়া শত্রুতাসাধনোদ্দেশে মুসাল নগরে যাত্রা করিল। কয়েক দিন পর্যন্ত অবিশ্রান্ত গমনের পর মুসাল নগরে যাইয়া সন্ধানে জানিল যে, ইমাম হাসান ঐ নগরস্থ উপাসনা-মন্দিরে অবস্থান করিতেছেন এবং ঐ স্থানে আব্বাস প্রভৃতি কয়েকজন বন্ধু তাঁহার সমভিব্যাহারে রহিয়াছে। বৃদ্ধ উল্লিখিত উপাসনা-মন্দিরের সীমাবর্তী গুপ্তস্থানে বর্শা লুকাইয়া রাখিয়া একেবারে হাসানের নিকটস্থ হইল। ইমাম হাসানের দৃষ্টি পড়িবামাত্র ধূর্ত বৃদ্ধ তাঁহার পদতলে পতিত হইয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিতে লাগিল, “প্রভু! আমাকে রক্ষা করুন। আমি এতদিন শয়তানের কুহকে পড়িয়া পবিত্র মোহাম্মদীয় ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস করিয়াছি। এক্ষণে ঈশ্বর-কৃপায় আমার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইয়াছে। সত্যধর্মের জ্যোতিঃ-প্রভাবে মনের অন্ধকার দূর হইয়াছে। স্বপ্নে দেখিয়াছি যে, ইমাম হাসান মদিনা হইতে মুসাল নগরে আসিয়াছেন। সেই স্বপ্নেই কে যেন আমায় বলিল যে, ‘শীঘ্র ইমাম হাসানের নিকট যাইয়া সত্যধর্মে দীক্ষিত হও, পূর্ব পাপ স্বীকার করিয়া মার্জনার জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা কর। ভবিষ্যৎ পাপ হইতে বিরত থাকিবার জন্য ধর্মতঃ প্রতিজ্ঞা কর।’ এই মহার্থপূর্ণ স্বপ্ন দেখিয়া আমি ঐ শ্রীপাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করিতে আসিয়াছি, যাহা অভিমত হয়, আজ্ঞা করুন।”
দয়ার্দ্রচিত্ত হাসান আগন্তুক বৃদ্ধকে অনেক আশ্বাস দিয়া বলিলেন, “আমি তোমাকে মোহাম্মদীয় ধর্মে দীক্ষিত করিতে এখনি প্রস্তুত আছি।” এই কথা বলিয়াই ইমাম হাসান তৎক্ষণাৎ তাহার হস্ত স্পর্শ করিয়া তাহাকে ‘বায়েৎ’ (মুসলমান ধর্মে দীতি) করিলেন। বৃদ্ধও যথারীতি মোহাম্মদীয় ধর্মে ঈমান্ (মুখে স্বীকার এবং বিশ্বাস) আনিয়া হাসানের পদধূলি গ্রহণ করিল। বিধর্মীকে সৎপথে আনিলে মহাপুণ্য। বৃদ্ধও এই প্রাচীন বয়সে আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী-পুত্র সকলকে পরিত্যাগ করিয়া মুসলমান-ধর্ম গ্রহণ করাতে মাননীয় হাসানের বিশেষ অনুগৃহীত ও বিশ্বাসভাজন হইল।
দুষ্টবুদ্ধি, স্বার্থপর, নরপিশাচ কেবল কার্য উদ্ধারের নিমিত্তই-চিরমনোরথ পরিপূর্ণ করিবার আশয়েই, চিরবৈর-নির্যাতন মানসেই অকপট ভাবে হাসানের শরণাগত হইল, ইহা সরলস্বভাব হাসানের বুদ্ধির অগোচর। প্রকাশ্যে ভক্তি করিতে লাগিল, কিন্তু চিরাভিলাষ পূর্ণ করিবার অবসর ও সুযোগ অন্বেষণে সর্বদাই সমুৎসুক। আগন্তুককে বিশ্বাস করিতে নাই, এ কথা হাসান যে না জানিতেন, তাহা নহে; কিন্তু সেই মহাশক্তি-সুকৌশলসম্পন্ন ঈশ্বরের লীলা সম্পন্ন হইবার জন্যই অনেক সময়ে অনেক লোকে অনেক জানিয়াও ভুলিয়া যায়-চিনিয়াও অচেনা হয়।
উপাসনা-মন্দিরের সম্মুখে হাসান এবং ইবনে আব্বাস আছেন। নূতন শিষ্য কার্যান্তরে গিয়াছে। ইবনে আব্বাস বলিলেন, “এই যে দামেস্ক হইতে আগত একচক্ষুবিহীন পাপস্বীকারী বৃদ্ধ এবং আপনার বিশ্বাসভাজন নব শিষ্য, ইহার প্রতি আমার সন্দেহ হয়।”
“কী সন্দেহ?”
“আমি অনেক চিন্তা করিয়াছি, অনেক ভাবিয়া দেখিয়াছি, এই বৃদ্ধ শুধুমাত্র ধর্মে দীক্ষিত হইতে আসে নাই। আমার বোধ হয়, কোন দুরভিসন্ধি সাধনমানসে কিংবা কোন গুপ্ত সন্ধান লইবার জন্য আমাদের অনুসরণে আসিয়াছে।”
“অসম্ভব! তাহা হইলে ভক্তিভাবে মোহাম্মদীয় ধর্মে দীতি হইবে কেন? সাধারণ ভাবে এখানে অনায়াসেই থাকিতে পারিত, সন্ধানও লইতে পারিত?”
“পারিত সত্য-পারিয়াছেও তা। কিন্তু বিধর্মী, নারকী, দুষ্ট, খল, শত্রু কেবল কার্য উদ্ধারের জন্য ধর্মের ভাণ করিয়া গুরু-শিষ্যসম্বন্ধ বন্ধন করিতে আসিয়াছে, ইহাতে আশ্চর্যই-বা কী?”
“ভ্রাতঃ! ও কোন কথাই নয়। তিন কাল কাটাইয়া শেষে কী এই বৃদ্ধকালে বাহ্যিক ধর্ম-পরিচ্ছদে কপট বেশে পাপকার্যে লিপ্ত হইবে? জগৎ কি চিরস্থায়ী? শেষের দিনের ভাবনা বল তো কার না আছে? এই বৃদ্ধবয়সেও যদি উহার মনের মলিনতা দূর না হইয়া থাকে, পাপজনিত আত্মগ্লানি যদি এখনো উপস্থিত না হইয়া থাকে, কৃত পাপের জন্য এখনো যদি অনুতাপ না হইয়া থাকে, তবে আর কবে হইবে? চিরকাল পাপপঙ্কে জড়িত থাকিলে শেষদশায় অবশ্যই স্বকৃত পাপের জন্য বিশেষ অনুতাপিত হইতে হয়। অনেকেই গুপ্ত পাপ নিজ মুখে স্বীকার করে। যে পাপস্বীকারে প্রাণবিনাশ হইতে পারে, ঈশ্বরের এমন মহিমা যে, সে পাপও পাপী লোকে নিজ মুখে স্বীকার করিয়া আত্মবিসর্জন করিয়া থাকে। পাপ কিছুতেই গোপন থাকিবার নহে; আবার মন সরল না হইলেও ধর্মে মতি হয় না, ঈশ্বরেও ভক্তি হয় না! যে ব্যক্তি ধর্ম-সুধার পিপাসু হইয়া বৃদ্ধ বয়সেও কত পরিশ্রমে দামেস্ক হইতে মুসাল নগরে এতদূর আসিয়াছে, তাহার মনে কী চাতুরী থাকিতে পারে? মন যেদিকে ফিরাও সেই দিকেই যায়। ভাল কার্যকে মন্দ ভাবিয়া বুদ্ধি চালনা কর, চিন্তাশক্তির মতা বিচার কর, কি দেখিবে? পদে পদে দোষ-পদে পদে বিপদ! ঐ চিন্তা আবার ভাল দিকে ফিরাও, কী দেখিবে! সুফল, মঙ্গল এবং সৎ। এই আগন্তুক যদি সরলভাবে ধর্মপিপাসু হইয়া আসিয়া থাকে, তবে দেখ দেখি উহার মন কত প্রশস্ত? ধর্মের জন্য কত লালায়িত? বল দেখি স্বর্গ কাহার জন্য? এই ব্যক্তি জান্নাতের যথার্থ অধিকারী?”
ইবনে আব্বাস আর কোন উত্তর করিলেন না। অন্য কথার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইলেন। আগন্তুক বৃদ্ধও মন্দিরের অপর পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহার লুক্কায়িত বর্শার ফলকটি বিশেষ মনঃসংযোগে দেখিতেছে এবং মৃদু স্বরে বলিতেছে, “এই তো আমার সময়; এক আঘাতেই মারিয়া ফেলিতে পারিব। আর যে বিষ ইহাতে সংযুক্ত করিয়াছি, রক্তের সহিত একটু মিশ্রিত হইলে কাহার সাধ্য হাসানকে রক্ষা করে? উপাসনার সময়ই উপযুক্ত সময়। যেমন ‘সেজদা’ (দণ্ডবৎ হইয়া ঈশ্বরকে প্রণাম) দিবে আমিও সেই সময় বর্শার আঘাত করিব। পৃষ্ঠে আঘাত করিলে বক্ষঃস্থলে বিদ্ধ না হইলে আর ছাড়িব না। কিন্তু উপাসনা-মন্দিরে হাসানকে একা পাইবার সুযোগ অতি কম। দেখি, চেষ্টার অসাধ্য কী আছে?” ইবনে আব্বাসের অলক্ষিতে পাপিষ্ঠ অনেকক্ষণ দেখিতে লাগিল। কোনক্রমেই কোন সময়েই বর্শা নিক্ষেপের সময় পাইল না।
মন্দিরের দুই পার্শ্বে কয়েকবার বর্শাহস্তে ঘুরিয়া আসিল, কিন্তু একবারও লোকশূন্য দেখিল না। বৃদ্ধ পুনরায় মৃদুস্বরে বলিতে লাগিল, “কী ভ্রম! উপাসনার সময় তো আরো অধিক লোকের সমাগম হইবে। ইমামই সকলের অগ্রে থাকিবে। বর্শার আঘাত করিলেই শত্রু শেষ হইবে, কিন্তু নিজের জীবনও শেষ হইবে। এক্ষণে হাসান যেভাবে বসিয়া আছে, পৃষ্ঠে আঘাত করিলে বক্ষঃস্থল পার হইবে সন্দেহ নাই, কিন্তু ইব্নে আব্বাস আমাকে কখনোই ছাড়িবে না। সে যে চতুর, নিশ্চয়ই তাহার হাতে আমার প্রাণ যাইবে। আব্বাস বড়ই চতুর, এই তো হাসানের সহিত কথা কহিতেছে, কিন্তু দৃষ্টি চতুর্দিকেই আছে। কি করি, কতক্ষণ অপেক্ষা করিব, সুযোগ সময়ই বা কত খুঁজিব? বর্শার পশ্চাদ্ভাগ ধরিয়া সজোরে বিদ্ধ করিলে তো কথাই নাই, দূর হইতে পৃষ্ঠসন্ধানে নিক্ষেপ করিলেও যে একেবারে ব্যর্থ হইবে, ইহাই-বা কে বলিতে পারে?”
বৃদ্ধ মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া হাসানের পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিতেই বর্শা সন্ধান করিল। ইবনে আব্বাসের চক্ষু চারি দিকে। এক স্থানে বসিয়া কথা কহিতেন, অথচ মনে, চক্ষে চারিদিকে সন্ধান রাখিতে পারিতেন। হঠাৎ আগন্তুক বৃদ্ধের বর্শাসন্ধান তাঁহার চক্ষে পড়িল। হাসানের হস্ত ধরিয়া টানিয়া উঠাইলেন এবং ধূর্তের উদ্দেশে উচ্চ কণ্ঠে বলিতে লাগিলেন, “ওরে পিশাচ! তোর এই কীর্তি!”
এদিকে বর্শাও আসিয়া পড়িয়াছে। নিক্ষেপকারীর সন্ধান ব্যর্থ হইবার নহে। বর্শা-নিক্ষেপে সেই ব্যক্তি সবিশেষ শিক্ষিত ও সিদ্ধহস্ত; কেবল ইবনে আব্বাসের কৌশলেই হাসানের পরিত্রাণ-বর্শাটা পৃষ্ঠে না লাগিয়া হাসানের পদতল বিদ্ধ করিল। ইবনে আব্বাস কী করেন, দুরাত্মাকে ধরিতে যান, কী এদিকে আঘাতিত হাসানকে ধরেন। ইমাম হাসান বর্শার আঘাতে ভূতলে পড়িয়া গেলেন; ইবনে আব্বাস সে দিকে লক্ষ্য না করিয়া অতি ত্রস্তে যাইয়া বৃদ্ধকে ধরিলেন। বর্শার নিকটে টানিয়া আনিয়া ঐ বর্শা দ্বারা সেই বৃদ্ধর বক্ষে আঘাত করিতে উদ্যত, এমন সময়ে ইমাম হাসান অনুনয়-বিনয় করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভাই! প্রিয় আব্বাস! যাহা হইবার হইয়াছে, ক্ষমা কর। ভাই! বিচারের ভার হস্তে লইয়ো না। সর্ববিচারকের প্রতি বিশ্বাস করিয়া তাঁহাকে বিচারের ভার দিয়া বৃদ্ধকে ছাড়িয়া দাও, এই আমার প্রার্থনা।”
হাসানের কথায় ইবনে আব্বাস বৃদ্ধকে ছাড়িয়া দিয়া হাসানকে বলিলেন, “আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য; কিন্তু সর্বদা স্মরণ রাখিবেন, আগন্তুকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের এই ফল।” শোণিতের ধারা বহিতেছে। উপাসনা-মন্দির রক্তে রঞ্জিত হইয়া লিখিয়া যাইতেছে-“আগন্তুককে কখন বিশ্বাস করিয়ো না। প্রকৃত ধার্মিক জগতে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায় না।” বর্শার আঘাতে হাসান অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়িলেন। তথাচ বলিতে লাগিলেন, “আব্বাস! তোমার বুদ্ধিকে ধন্যবাদ! তোমার চক্ষুরও সহস্র প্রশংসা! মানুষের বাহ্যিক আকৃতি দর্শন করিয়াই অস্থি-মাংস ভেদ করিয়া মর্ম পর্যন্ত দেখিবার শক্তি, ভাই! আমি তো আর কাহারো দেখি নাই! আমার অদৃষ্টে কী আছে জানি না! আমি কাহারো মন্দ করি নাই, তথাচ আমার শত্রুর শেষ নাই! পদে পদে, স্থানে স্থানে, নগরে নগরে আমার শত্রু আছে, ইহা আগে জানিতাম না। কী আশ্চর্য! সকলেই আমার প্রাণবধে অগ্রসর, সকলেই সেই অবসরের প্রত্যাশী! এখন কোথায় যাই? যেদিকে তাকাই, সেই দিকেই হন্তা, সেই দিকেই আমার প্রাণনাশক শত্রু! যে প্রাণের দায়ে মদিনা পরিত্যাগ করিলাম, এখানেও সেই প্রাণ সঙ্কটাপন্ন! কিছুতেই শত্রুহস্ত হইতে নিস্তার পাইলাম না! আমি ভাবিয়াছিলাম, জায়েদাই আমার পরম শত্রু; এখন দেখি, জগৎময় আমার চিরশত্রু।”
হাসান ক্রমশঃই অস্থির হইতে লাগিলেন। অস্ত্রের আঘাত, তৎসহ বিষের যন্ত্রণা তাঁহাকে বড়ই কাতর করিয়া তুলিল। কাতরস্বরে ইবনে আব্বাসকে বলিলেন, “আব্বাস! যত শীঘ্র পার, আমাকে মাতামহের ‘রওজা শরীফে’ লইয়া চল। যদি বাঁচি, তবে আর কখনোই ‘রওজা মোবারক’ হইতে অন্য স্থানে যাইব না। ভ্রমেই লোকের সর্বনাশ হয়, ভ্রমেই লোকে মহাবিপদ্গ্রস্ত হয়, ভ্রমে পড়িয়াই লোকে কষ্ট ভোগ করে, প্রাণও হারায়। ইচ্ছা করিয়া কেহই বিপদ্ভার মাথায় তুলিয়া লয় না, দুঃখী হইতেও চাহে না। আমি মুসাল নগরে না আসিয়া যদি মাতামহের রওজা শরীফে থাকিতাম, তাহা হইলে কোন বিপদেই পতিত হইতাম না। কপট ধর্মপিপাসুর কথায় ভুলিয়া বর্শাঘাতে আহতও হইতাম না। ভাই! যে উপায়ে হউক, শীঘ্রই আমাকে মদিনায় লইয়া চল। অতি অল্প সময়ের জন্যও আর মুসাল নগরে থাকিতে ইচ্ছা হইতেছে না। যদি এই আঘাতেই প্রাণ যায়, কী করিব, কোন উপায় নাই। কিন্তু মাতামহের পবিত্র সমাধিক্ষেত্রে প্রাণবিয়োগ হইবে, তাঁহার পদপ্রান্তেই পড়িয়া থাকিব, এই আমার ইচ্ছা। আর ভাই! সেই পবিত্র স্থানে প্রাণ বাহির হইলে সেই সময়ের নিদারুণ মৃত্যুযন্ত্রণা হইতে রক্ষা পাইব। আজরাইলের (যমদূতের) কঠিন ব্যবহার হইতে বাঁচিতে পারিব।”
এই পর্যন্ত বলিয়া হাসান পুনরায় ক্ষীণস্বরে কহিতে লাগিলেন, “ভাই! অবশ্যই আমার আশা-ভরসা সকলই শেষ হইয়াছে। পদে পদে ভ্রম, পদে পদে বিপদ্, ঘরে-বাহিরে শত্রু-সকলেই প্রাণ লইতে উদ্যত! আমার শরীর অবশ হইয়া আসিল। কথা কহিতে কষ্ট হইতেছে। যত শীঘ্র হয়, আমাকে মদিনায় লইয়া চল।”
মুসাল নগরবাসীরা অনেকেই হাসানের দুঃখে দুঃখিত হইয়া কহিতে লাগিলেন, “মদিনায় পাঠাইয়া দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত।” ইবনে আব্বাস হাসানকে লইয়া মদিনায় যাত্রা করিলেন। যেখানে যমদূতের দৌরাত্ম্য নাই, হিংসাবৃত্তিতে হিংস্র লোকের ও হিংস্র জন্তুর প্রবৃত্তি নাই, খাদ্যখাদকের বৈরীভাব নাই, নিয়মিত সময়ে হাসান সেই মহাপবিত্র ‘রওজা মোবারকে’ আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং সর্বাঙ্গে রওজা মোবারকের ধুলা মাখিয়া ঈশ্বরের নিকট আরোগ্য প্রার্থনা করিলেন। ঈশ্বরানুগ্রহে বিষের যন্ত্রণা অনেক লাঘব হইল। কিন্তু আঘাতের বেদনা-যাতনা তেমনই রহিয়া গেল। ইহার অর্থ কে বুঝিবে? সেই পরম কারুণিক পরমেশ্বর ভিন্ন আর কাহারো বুঝিবার সাধ্য নাই। ক্ষতস্থান দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। জ্বালা-যন্ত্রণাও বাড়িতে লাগিল। ইমাম হাসান শেষে উত্থানশক্তি রহিত হইয়া পড়িলেন। একদিন হোসেন আসিয়া ভ্রাতাকে বলিলেন, “ভ্রাতঃ! এই ‘মোবারকে রওজায়’ কোন প্রকার বিপদের সম্ভাবনা নাই। কিন্তু মানুষের শরীর অপবিত্র; বিশেষ আপনার যে ব্যাধি, তাহাতে আরো সন্দেহ। পবিত্র স্থানে পবিত্র অবস্থায় না থাকিতে পারিলে স্থানের অবমাননা করা হয়। ক্ষতস্থান কেমন ভয়ানক রূপ ধারণ করিয়াছে, বাটীতে চলুন, আমরা সকলেই আপনার সেবা-শুশ্রূষা করিব। জগতে জননীর স্নেহ নিঃস্বার্থ। সন্তানের সাংঘাতিক পীড়ায় মায়ের অন্তরে যেরূপ বেদনা লাগে, এমন আর কাহারো লাগে না। যদিও ভাগ্যদোষে সে স্নেহ-মমতা হইতে বঞ্চিত হইয়াছেন, তথাপি আজ্ঞাবহ কিঙ্কর বর্তমান আছে। সেই মাতার গর্ভে আমিও জন্মগ্রহণ করিয়াছি। আমার সাধ্যমত আমি আপনার সেবা করিব।”
ইমাম হাসান আর বাক্যব্যয় করিলেন না। হোসেন এবং আবুল কাসেমের স্কন্ধোপরি হস্ত রাখিয়া অতি কষ্টে বাটীতে আসিয়া পৌঁছিলেন। হাসনেবানু, জয়নাব অথবা জায়েদা -এই তিন স্ত্রীর মধ্যে কোন স্ত্রীর ঘরেই গেলেন না। প্রিয় ভ্রাতা হোসেনের গৃহেই আবাস গ্রহণ করিলেন। সকলেই তাঁহার সেবা-শুশ্রূষায় রত হইল।
এক জায়েদার প্রতি সন্দেহ করিয়া হাসান যেন সকলের প্রতিই সন্দেহ করিলেন। কিন্তু সেই আন্তরিক ভাব প্রকাশ্যে কাহাকেও কিছু বলিলেন না। তবে ভাবগতিক দেখিয়া বাহ্যিক ব্যবহারে সকলেই বুঝিয়াছিলেন যে, পরিজনবর্গের-বিশেষতঃ স্ত্রীগণের প্রতি হাসান মহাবিরক্ত। হাসনেবানু ও জয়নাবের প্রতি কেবল একটু বিরক্তিভাব প্রকাশ পাইত, কিন্তু জায়েদাকে দেখিয়া ভয় করিতেন।
হাসনেবানুর সেবা-শুশ্রূষায় ইমাম হাসানের বিরক্তিভাব কেহই দেখিতে পায় নাই। জয়নাব আসিয়া নিকটে বসিলে কিছু বলিতেন না, কিন্তু জায়েদাকে দেখিলেই চক্ষু বন্ধ করিয়া ফেলিতেন। দুই চারিদিনে সকলেই জানিলেন যে, ইমাম হাসান বোধ হয় জায়েদাকে দেখিতে ইচ্ছা করেন না। কারণ অনুসন্ধানেও ত্রুটি হইল না। শেষে সাব্যস্ত হইল যে, জায়েদার ঘরে গেলেই বিপদ্গ্রস্ত হন, অসহ্য বেদনায় আক্রান্ত হন। এই সকল কারণেই বোধ হয়, জায়েদার প্রতি কোনরূপ সন্দেহ হইয়া থাকিবে। কেহ এই প্রকার-কেহ অন্য প্রকার-কেহ কেহ-বা নানা প্রকার কথায় আন্দোলন করিতে লাগিলেন। কিন্তু কেহই কিছু স্থির করিতে পারিলেন না। ইমাম হাসানের ভাবগতিক কিছু কিছু বুঝিতে পারিয়া হোসেন তাঁহার আহারীয় সামগ্রীর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে লাগিলেন। ভ্রাতার মনের ভাব পরীক্ষা করিবার জন্য হাসনেবানুর সম্মুখে বলিলেন, “আপনারা ইহার আহারীয় দ্রব্যাদি বিশেষ যত্নে রক্ষা করিবেন।”
হাসনেবানু কহিলেন, “আমি সাহস করিয়া কিছু বলিতে পারি না। তবে এইমাত্র বলিতে পারি যে, যাহা হইবার তাহা হইয়া গিয়াছে। এক্ষণে খাদ্যসামগ্রীর কোন দোষে আর পীড়া বৃদ্ধি হইবে না। আমি বিশেষ সতর্ক হইয়াছি। আমি অগ্রে না খাইয়া ইহাকে আর কিছুই খাইতে দিই না। যত পীড়া-যত অপকার, সকলই আমি মাথায় করিয়া লইয়াছি। খোদা এক্ষণে আরোগ্য করিলেই সকল কথা বলিব।”
হাসনেবানুর প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগপূর্বক ইমাম হাসান বলিলেন, “অদৃষ্টের লেখা খণ্ডাইতে কাহারো সাধ্য নাই। তোমার যাহাতে সন্দেহ দূর হয়, তুমি সেই প্রকারে আমার আহারীয় ও পানীয় সমুদয় দ্রব্য সাবধানে ও যত্নে রাখিয়ো।”
হাসনেবানু পূর্ব হইতেই সতর্কিত ছিলেন, স্বামীর কথায় একটু আভাস পাইয়া আরো যথাসাধ্য সাবধান ও সতর্ক হইলেন। আহারীয় সামগ্রী বিশেষ যত্নে রক্ষিত হইতে লাগিল। বিশেষ পরীক্ষা করিয়া হাসনেবানু রোগীর পথ্য ইত্যাদি প্রদান করিতে লাগিলেন। জলের সুরাহীর উপর পরিষ্কার বস্ত্র আবৃত করিয়া একেবারে শীলমোহর বন্ধ করিলেন। অপর কেহ হাসানের ব্যাধিগৃহে আসিতে না পারে, কৌশলে তাহারও ব্যবস্থা করিলেন; প্রকাশ্যে কাহাকে বারণ করিলেন না। হোসেনও সতর্ক রহিলেন। হাসনেবানুও সদাসর্বদা সাবধানে থাকিতে লাগিলেন।
জায়েদা মাঝে মাঝে স্বামীকে দেখিতে আসিতেন, কিন্তু জয়নাবকে স্বামীর নিকটে বসিয়া থাকিতে দেখিলে আর ঘরেই প্রবেশ করিতেন না। জয়নাবের প্রতি দৃষ্টি পড়িলেই জায়েদার মুখের আকৃতি পরিবর্তন হইত, বিদ্বেষানল জ্বলিয়া উঠিত, সপত্নীহিংসা বলবতী হইত, সপত্নী সৃষ্টিকারীর প্রতি প্রতিহিংসা-আগুন দ্বিগুণভাবে জ্বলিয়া উঠিত। স্বামী-স্নেহ, স্বামী-মমতা অন্তর হইতে একেবারে সরিয়া যাইত। অধর্ম-আচরণে প্রবৃত্তি জন্মিত। কোমল হৃদয় পাষাণে পরিণত হইত। হাসানের আকৃতি বিষবৎ লক্ষিত হইত। ইচ্ছা হইত যে, তখনি-সেই মুহূর্তেই হয় নিজের প্রাণ নয় জয়নাবের, না হয় যিনি ইহার মূল তাঁহার- রোগীর রোগশয্যা দেখিতে কাহারো নিষেধ নাই। পীড়িত ব্যক্তির তত্ত্বাবধারণ ও সেবা-শুশ্রূষা করিতে কি দেখিতে আসিলে নিবারণ করা শাস্ত্র-বহির্ভূত। একদিন জায়েদার সহিত মায়মুনাও হজরত হাসানকে দেখিতে আসিল। শয্যার কিঞ্চিৎ ব্যবধানে জায়েদা, তৎপার্শ্বে মায়মুনা। তাঁহাদের নিকটে অপরাপর সকলে শয্যার প্রায় চতুষ্পার্শ্বে ঘেরিয়া বসিয়া আছেন। মায়মুনা প্রতিবেশিনী; আরো সকলেই জানিত যে, মায়মুনা ইমামদ্বয়ের বড়ই ভক্ত। বাল্যকাল হইতেই উভয়কে ভালবাসে। ইমামদ্বয়ের জন্মদিবসে মায়মুনা কতই আনন্দ প্রকাশ করিয়াছিল। জান্নাতবাসিনী জগজ্জননী বিবি ফাতেমাও মায়মুনাকে ভালবাসিতেন; মায়মুনাও তাঁহাকে ভক্তির সহিত ভালবাসিত। হাসান-হোসেনও মাতার ভালবাসা বলিয়া মায়মুনাকে বিশেষ ভক্তি করিতেন। মায়মুনা একাল পর্যন্ত তাঁহাদের সুখ-দুঃখের ভাগিনী বলিয়াই পরিচিতা আছে। মায়মুনার মন যে কালকূট বিষম বিষে পরিপূর্ণ, তাহা জায়েদা ভিন্ন আর কেহ জানিতে পারেন নাই। হাসনেবানু যে মায়মুনাকে দুই চক্ষে দেখিতে পারিতেন না, সেটি তাঁহার স্বভাব। মায়মুনাও হাসনেবানুর প্রতি কথায় কাঁদিয়া মাটি ভিজাইত না, সেটিও মায়মুনার স্বভাব। হাসনেবানু মুখ ফুটিয়া কোন দিন মায়মুনাকে কোন মন্দ কথা বলেন নাই, অথচ মায়মুনা তাঁহাকে দেখিয়া হাড়ে কাঁপিত।
ইমাম হাসানের পীড়িত অবস্থা দেখিয়া মায়মুনার চক্ষে জল আসিল। সকলেই বলিতে লাগিল, “আহা! কোলে-কাঁধে করিয়া মানুষ করিয়াছে, ও আর কাঁদিবে না?” মায়মুনার চক্ষের জল গণ্ড বাহিয়া পড়িতে লাগিল। মায়মুনা গৃহমধ্যস্থিত সকলের দিকেই এক একবার তাকাইয়া চক্ষের জল দেখাইল। মায়মুনা শুধু চক্ষের জলই সকলকে দেখাইতেছে তাহা নহে; আরো উদ্দেশ্য আছে। ঘরের মধ্যে যেখানে যেখানে যে জিনিস যে যে পাত্রে রক্ষিত আছে, তাহা সকলই মনঃসংযোগ করিয়া জলপূর্ণ-নয়নে বিশেষরূপে দেখিতে লাগিল।
হাসানের জলপিপাসা হইয়াছে। সঙ্কেতে হাসনেবানুকে জলপানেচ্ছা জানাইলেন। তিনি মহাব্যস্তে ‘আব্খোরা’ পরিষ্কার করিয়া সুরাহীর শীল ভগ্ন করিবেন এবং সুরাহীর জলে আব্খোরা পূর্ণ করিয়া হাসানের সম্মুখে ধরিলেন। জলপানে তৃপ্তিলাভ করিয়া হাসান পুনরায় শয্যাশায়ী হইলেন। হাসনেবানু আব্খোরা যথাস্থানে রাখিয়া, পূর্ববৎ বস্ত্র দ্বারা মুখ বন্ধ ও শীলমোহর করিয়া সুরাহীটিও যথাস্থানে রাখিয়া দিলেন।
যে যাহাকে দেখিতে ইচ্ছা করে না, সে তাহার নামও শুনিতে ভালবাসে না। জগতে এমন অনেক লোক আছে, যাহারা স্বভাবতঃই এক-একজনকে দেখিতে ভালবাসে না। অন্য পক্ষে-পরিচয় নাই, শত্রুতা, মিত্রতা নাই, আলাপ নাই, স্বার্থ নাই, কিছুই নাই, তথাপি মুখখানি দেখিতে ইচ্ছা করে। মনের সহিত ভালবাসিতেও ইচ্ছা করে। এমন মুখও জগতে অনেক আছে, পরিচয়ে পরিচিত না হইলেও সেই মুখখানি যতবার দেখিতে পাওয়া যায়, ততবারই সুখবোধ হয়।
হাসনেবানু জলের সুরাহী যথাস্থানে রাখিয়া ঈষৎ বিরক্তির সহিত মায়মুনার দিকে চাহিয়া চলিয়া গেলেন। রোগীর রোগশয্যার পার্শ্বে সকলেই নীরব! সকলের মুখাকৃতিই মলিন। মায়মুনার মুখ ফুটিল।
“আহা! এ নরাধম জাহান্নামী কে? আহা এমন সোনার শরীরে কে এমন নির্দয়রূপে আঘাত করিয়াছে। আহা! জান্নাতবাসিনী বিবি ফাতেমার হৃদয়ের ধন, নূরনবীর চক্ষের পুত্তলি যে হাসান সেই হাসানের প্রতি এতদূর নিষ্ঠুর অত্যাচার করিয়াছে? সে পাপীর পাপ-শরীরে রক্ত-মাংসের লেশমাত্রও নাই। নিশ্চয়ই সে হৃদয় দুর্জয় পাষাণে গঠিত। হায় হায়! চাঁদমুখখানি একেবারে মলিন হইয়া গিয়াছে।” এইরূপ কাঁদিয়া কাঁদিয়া মায়মুনা আরো কিছু বলিতে অগ্রসর হইতেছিল, হাসানের বিরক্তিভাব ও কাসেমের নিবারণে সে চেষ্টা থামিয়া গেল;-চরে জল অলক্ষিতে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়িয়া আপনাআপনিই আবার শুষ্ক হইল।
রোগীর পথ্য লইয়া জয়নাব সেই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। জায়েদা আড়নয়নে বিষদৃষ্টিতে দেখিয়াই উঠিয়া চলিয়া গেলেন। মায়মুনাও হাসনেবানুর আসিবার সাড়া পাইয়া আস্তে আস্তে গৃহ ত্যাগ করিল।