বন্দনা
আদিতে বন্দিতে গাই আনাদি ঈশ্বর |
দেবের মধ্যে বন্দি গাই ভোলা মহেশ্বর ||
দেবীর মধ্যে বন্দি গাই শ্রীদুর্গা ভবানী |
লক্ষ্মী সরস্বতী বন্দুম যুগল নন্দিনী ||
ধন সম্পদ মিলে লক্ষ্মীরে পূজিলে |
সরস্বতী বন্দি গাই বিদ্যা যাতে মিলে ||
কার্ত্তিক গণেশ বন্দুম যত দেবগণ |
আকাশ বন্দিয়া গাই গড়ুর পবন ||
চন্দ্র সূর্য বন্দিয়া গাই জগতের আখি |
সপ্ত পাতাল বন্দুম নাগান্ত বাসুকী ||
মনসা দেবীরে বন্দুম আস্তিকের মাতা |
যাহার বিষের তেজ ডরায় বিধাতা।।
ভক্ত মধ্যে বন্দিয়া গাই রাজা চন্দ্রধর।
তার সঙ্গে বন্দিয়া গাই বেউলা-লক্ষ্মীন্দর।।
নদীর মধ্যে বন্দিয়া গাই গঙ্গা ভাগীরথী।
নারীর মধ্যে বন্দিয়া গাই সীতা বড় সতী।।
বক্ষের মধ্যে বন্দিয়া গাই আদ্যের তুলসী।
তীর্থের মধ্যে বন্দিয়া গাই গয়া আর কাশী।।
সংসারের সার বন্দুম বাপ আর মায়ে।
অভাগীর জনম হইল যার পদ ছায়ে।।
মুনির মধ্যে বন্দিয়া গাই বাল্মীকি তপোধন।
তরুলতা বন্দিয়া গাই স্থাবর জঙ্গম।।
জল বন্দুম স্থল বন্দুম আকাশ পাতাল।
হর শিরে বন্দিয়া গাই কাল মহাকাল।।
তার পরে বন্দিলাম শ্রীগুরু চরণ।
সবার চরণ বন্দিয়া জানাই নিবেদন।।
চার কুনা পৃথিবী বন্দিয়া করিলাম ইতি।
সলাভ্য বন্দনা গীতি গায় চন্দ্রাবতী।।
জলপ্লাবন ও দুর্ভিক্ষ
মন্দ্যান্যা আইশনারে পানি ভাটি বাইয়া যায়।
চান্দ বিনোদে ডাক্যা কইছে তার মায়।।
“উঠ উঠ বিনোদ আরে ডাকে তোমায় মাও।
চান্দ মুখ পাখলিয়া মাঠের পানে যাও।।
মাঠের পানে যাওরে যাদু ভালা বান্দ আইল।
আগণ মাসেতে হইবে ক্ষেতে কার্তিকা সাইল।।
মেঘের ডাকে গুরু গুরু ডাক্যা তুলে পানি।
সকাল কইরা ক্ষেতে যাও আমার যাদুমণি।।
আশমান ছাইল কালা মেঘে দেওয়ায় ডাকে বইয়া।
আর কত কাল থাকবে যাদু ঘরের মাঝে শুইয়া||”
আইল আইশনারে পানি উভে কর্ ল তল|
ক্ষেতে কিশ্যি ডুবাইয়া দিল না রইল সম্বল।।
দেশে আইল দূর্গাপূজা জগত্ জননী।
কুলের ছাল্যা বান্ধ্যা দিয়া পূজে দূর্গা রাণী।।
এই মতে আশ্বিন গেল, আইল কার্ত্তিক মাস।
ষরু শস্য ক্ষেতে নাই হইল সর্ব্বনাশ।।
লাগিয়া কার্ত্তিকের উষ গায়ে হইল জ্বর।
বিনোদের মায়ে কান্দে হইয়া কাতর।।
জোড়া মইষ দিয়া মায় মানসিক করে।
মায়ত করিয়া কয় পুত্র বুঝি মরে।।
দোবের দোয়াতে পুত্র পরাণের বাচিল।
এমতে কার্ত্তিক গিয়া আগুণ পড়িল।।
উত্তরিয়া শীতে পরাণ কাঁপে থরথরি।
ছিড়া বসন দিয়া মায় অঙ্গ রাখে মুরি।।
ভালা হইল চান্দ বিনোদ দেবতার বরে।
ঘরে নাই সে লক্ষ্মীর দানা লক্ষ্মী পূজার তরে।।
ধারেতে কাচি আন্যা মায়ে তুল্যা দিল হাতে।
“ক্ষেতে যাওরে পুত্র আমার ধান্য যে কাটিতে।।”
পাঞ্চ গাছি বাতার ডুগল হাতেতে লইয়া।
মাঠের মাঝে যায় বিনোদ বারমাসী গাইয়া।।
আশ্বিনা পানিতে দেখে মাঠে নাইক ধান।
এরে দেখ্যা চান্দ বিনোদের কান্দিল পরাণ।।
চান্দ বিনোদ আসি কয় মায়ের কাছে।
“আইশনা পানিতে মাও সব শস্যি গেছে।।”
মায়ে কান্দে পুত্র কান্দে সিরে দিয়ে হাত।
সারা বছরের লাগ্যা গেছে ঘরের ভাত।।
টাকায় দেড় আড়া ধান পইড়াছে আকাল।
কি দিয়া পালিব মায় কুলের ছাওয়াল।।
পোষ মাসে পোষা আন্ধি বিনোদে ডাকিয়া।
মায় পুতে যুক্তি করে ঘরেতে বসিয়া।।
আছিল হালের গরু বেচিয়া খাইল।
পাঁচ গোটা ক্ষেত বিনোদ মাজনে দিল।।
খেত খোলা নাই তার, নাই হালের গরু।
না বুনায় ধান কালাই না বুনায় সরু।।
ভাবিয়া চিন্তিয়া বিনোদ কোন কাম করে।
মাঘ ফাল্গুন দুই মাস কাটাইল ঘরে।।
চৈত বৈশাখ মাস গেল এই মতে।
জৈষ্ঠ মাসেতে বিনোদ পিঁজরা লইল হাতে।।
মায়েরে ডাকিয়া কয় মধুরস বাণী।
“কুড়া শিগারে যাইতে বিদায় দাও মা জননী।।”
ঘুম থাক্যা উঠ্যা বিনোদ মায়েরে কহিল।
কুড়া শিগারে যাইতে বিদায় মাগিল।।
টিক্কা না জ্বালাইয়া বিনোদ হুক্কায় ভরে পানি।
ঘরে নাই বাসি ভাত কালা মুখখানি।।
ঘরে নাই খুদের অন্ন কি রান্ধিব মায়।
উপাস করিয়া পুত্র শিকারেতে যায়।।
মায়ের আক্ষির জলে বুক যায়রে ভাসি।
ঘরতন বাহির হইল বিনোদ বিলাতের উপাসী।।
জষ্ঠি মাসে রবির জ্বালা পরনের নাই বাও।
পুত্রেরে শিগার দিয়া পাগল হইল মাও।।
বাকি টা থাকলে ভালো হত