এক তপস্বী,যিনি পুত্রহীন হওয়ায় মৃত্যুর পর পিতৃলোকে স্থান পান নি। যাতে শীঘ্র পুত্রলাভ হয় এই জন্য তিনি শার্ঙ্গক পক্ষীর রূপধারণ করে খাণ্ডব বনে এসে জারিতা নাম্নী এক শার্ঙ্গিকার গর্ভে চারটি পুত্র উত্পাদন করেন। তারপর তরুণী পত্নী লপিতার কাছে ফিরে যান। জরিতা মহর্ষি কর্তৃক পরিত্যক্ত অণ্ডস্থ ঋষিপুত্রদের পরিত্যাগ করতে না পেরে প্রাণপনে তাঁদের পোষণ করে খাণ্ডব বনেই বাস করতে লাগলেন। খাণ্ডবদাহনের সময়ে মন্দপাল লপিতাকে নিয়ে খাণ্ডব বনে বিচরণ করছিলেন। অগ্নির অভিপ্রায় বুঝে ও আপনার পুত্রদের বাল্যবস্থার কথা স্মরণ করে মন্দপাল অগ্নিকে স্তব করে প্রার্থনা জানালেন,ওঁর পুত্রদের দগ্ধ না করতে। অগ্নি তাতে সন্মত হলেন। কিন্তু তা সত্বেও মন্দপালের নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না দেখে লপিতা অসূয়াগ্রস্থ হয়ে বললেন যে,পুত্রের জন্য নয় মন্দপাল তাঁর শার্ঙ্গিকা পত্নী জারিতার জন্যই উদ্বিগ্ন হয়েছেন। অতএব মন্দপাল জারিতার কাছে গিয়েই থাকুন, লপিতা একাকিনী জীবন কাটাবেন। মন্দপাল লপিতাকে বললেন যে, তিনি কামান্ধ নন,শুধু পুত্রের জন্যেই জারিকার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। সুতরাং লপিতা তাঁর যা ইচ্ছা তাই করুন, তিনি পুত্ররা নিরাপদে আছে কিনা দেখতে যাবে। এই বলে মন্দপাল লপিতাকে ত্যাগ করে পুত্রদের খোঁজে বার হলেন। মন্দপালের অনুরোধে অগ্নি ওঁর পুত্রদের দগ্ধ করেন নি। তাই মন্দপাল এসে সবাইকে জীবিত দেখে অত্যন্ত প্রীত হলেন। কিন্তু মন্দপালকে দেখে জরিতা বা পুত্ররা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন না। মন্দপাল জারিতা ও পুত্রদের বললেন যে, মন্দপাল ওঁদের পরিত্যাগ করেছিলেন সত্য, কিন্তু ওঁদের জন্য সব সময়ে ওঁর মন অস্থির ছিল। জারিতার কাছে তিনি জানতে চাইলেন,পুত্রদের মধ্যে কে জ্যেষ্ঠ, কে কনিষ্ঠ, ইত্যাদি। জারিকা তখন অভিমানভরে মন্দপালকে বললেন,মন্দপাল কেন এখন ওঁদের খোঁজ করছেন? তিনি জারিকাকে পরিত্যাগ করে যাঁর কাছে গিয়েছিলেন – সেই সুন্দরী লপিতার কাছেই ফিরে যান! মন্দপাল বললেন যে, উনি পুত্রদের দেখবার জন্য এসেছেন, কিন্তু জারিকা ওঁকে অপমান করছেন। তারপর দুঃখ করলেন যে, পতিপরায়ন স্বামীরাও পুত্রবতী হলে পতিদের প্রতি আর অনুরক্তা থাকে না। এই কথা শুনে মন্দপালের পুত্ররা পিতাকে তাঁদের পুত্রভক্তি প্রদর্শন করলেন। মন্দপাল জারিকাকে বললেন যে, সপত্নীর সঙ্গে বিবাদ করলে পরলোকের ক্ষতি হয়।