মধুরেণ – ২০. এক বছর পরে

২০. এক বছর পরে

“আসুন, আসুন পায়ের ধুলো দিন!” হাত জোড় করে গুরুপদকে আপ্যায়ন করে মনোহর, “শুভ্র আসেনি?”

গুরুপদ মনোহরকে জড়িয়ে ধরে বলল, “প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়েতে আসতে চাইল না। আমার বউমা অবশ্য নির্লজ্জ। স্বামীর এক্স গার্লফ্রেন্ডের বিয়েতে নাচতে নাচতে চলে এসেছে।”

অ্যানি পরে আছে ময়ুরকন্ঠী রঙের শাড়ি। সে গয়না ঝমঝমিয়ে বলল, “মধুরা আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তারপরে আমার বরের এক্স গার্লফ্রেন্ড। আমি না এলে মধুর বিয়েই হবে না!” মধুরার থ্রোনের হাতলে বসে ফটাফট গোটাচারেক সেলফি তুলে বলল, “আটমাস আগে বিয়ে করেছিস। রিসেপশান এতদিন পরে করলি কেন?”

অশোক বরের পোশাক পরে, থ্রোনে বসেছিল। অ্যানিকে বলল, “এটায় যত না মধুরার দোষ তার থেকে বেশি দোষ ডুঙ্গারদা আর জোনাকিদির। ওরা ঠিক করেছিল, ফিফটি নাইন লং স্ট্রিটে ক্যালকাটা ধাবার সেকেন্ড ব্রাঞ্চ খুলে এখানেই রিসেপশান করবে।”

“উফ্‌! তোরা পারিসও বটে! কাকু আমাকে বলেছে, এখান থেকে পান্‌চকে কীভাবে তুলে দেওয়া হয়েছিল!”

মধুরা অবাক হয়ে বলল, “তুই শ্বশুরমশাইকে কাকু বলিস?”

“তা হলে কী বলব? গুরুপদবাবু?” ভেংচি কাটে অ্যানি, “কাকুকে আমি বাবা বলে ডাকতেই পারি। নো বিগ ডিল। আমার ড্যাড আগেই মারা গেছে। কিন্তু মা মারা যাওয়ার পরে, আমি আর কাউকে মা বলে ডাকতে পারব না। শাশুড়িকেও না। দু’জনের জন্য আলাদা সম্বোধন সম্ভব নয়। তাই কাকু-কাকিমা ইজ বেস্ট।”

অ্যানির কথার মধ্যে মধুরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মঞ্জুলিকা। অ্যানির শাশুড়ির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে মধুরা বলল, “মেরিমাসির কাজে যেতে পারিনি। ভেরি সরি।”

“সরির কিছু নেই রে!” মধুরার হাতে উপহার ধরিয়ে মঞ্জুলিকা বলে, “ভীষণ রোগা হয়ে গিয়েছিল। তিরিশ কেজি ওজন হয়ে গিয়েছিল। চলে গিয়ে ভালই হয়েছে।”

“কাকিমা, ওইসব কথা এখন থাক। তুমি জামাইয়ের সঙ্গে আলাপ করবে এসো।” অ্যানি মঞ্জুলিকাকে টানতে টানতে অশোকের কাছে নিয়ে যায়। পেঁয়াজখোসা রঙের বেনারসি পরে, কনের সাজে উজ্জ্বল মধুরা চোখ বন্ধ করে মেরি ডিকুনহার জন্যে প্রার্থনা করে। “ভাল থেকো মেরিমাসি। আমাদের ভাল রেখো।”

মধুরার হাতের ওপরে কারও হাত। মধুরা চোখ খোলে। সামনে দাঁড়িয়ে পারুল আর মন্টু। পারুল আর একটু বুড়ি হয়েছে, মন্টু আর একটু জোয়ান হয়েছে। মধুরা এক গাল হেসে পারুলকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আর তুমি পালাতে পারবে না। মন্টুকেও পালাতে দেব না। এখানে আমাদের লোকের দরকার।”

মধুরার হাতে উপহার ধরিয়ে পারুল বলল, “কত্তাবাবা তো ফোন করে করে পাগলা করে দিল। আচ্ছা, এত সহজে সব কিছু ছেড়েছুড়ে আসা যায়?”

“দিব্যি আসা যায়!” তেড়ে ওঠে মন্টু, “কত্তাবাবার ফোন আসা ইস্তক আমি বলছি, দিদির কাছে চলো। ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুমি শুনলে তো!”

“তুই আর বকিস না!” ঝামরে ওঠে পারুল, “পিলখানার মেয়েটার সঙ্গে পিরিত কচ্চিস, সেটা সোজাসুজি বললেই হয়!”

পারুলের কথায় হাসতে হাসতে মধুরা বলে, ‘ওমা! তাই? তা সেই ভাগ্যবতীটি কে? আলাপ করাবি না?”

“করাব।” লজ্জালজ্জা মুখে বলে মন্টু, “আগে কত্তাবাবার সঙ্গে দেখা করি। কবে থেকে এখানে জয়েন করতে হবে? আর আমরা থাকবই বা কোথায়?”

“ডুঙ্গার ওদিকে আছে,” অতিথিরা যেখানে বসে আছে, সেদিকে আঙুল দেখায় মধুরা। “খেতে খেতে ওর সঙ্গে কথা বলে নে।”

পারুল আর মন্টু চলে যেতে মোবাইলের দিকে তাকায় মধুরা। স্মার্টফোনে একের পর এক মেসেজ আর মেল জমা হচ্ছে। কিন্তু এখন সেসব দেখা যাবে না।

এক বছর আগের কথা মনে পড়ে যায় মধুরার। মনে পড়ে যায় মণিকার সঙ্গে দুটো রাত আর দুটো দিন একসঙ্গে কাটানোর কথা…

*

শুটিং ইউনিট মন্দারমণি চলে যাওয়ার পরে মণিকা আর মধুরা রূপনারায়ণের ধারে হাঁটতে বেরিয়েছিল। নদীর পাড়ে বসে মণিকা খুব মন দিয়ে শুনেছিল মধুরার জীবনের গল্প। বলেছিল, “এসব পাস্ট হিস্ট্রি। সামনে কী?”

মধুরা ইয়ারকি মেরে বলেছিল, “সামনে আর কিছু নেই। গল্প শেষ। এবার বিয়েথা করে ‘অ্যান্ড দে হ্যাপিলি লিভ্‌ড এভারআফটার…”’

তখনই মণিকা বোম ফাটিয়েছিল। “আমি ক্যালকাটা ধাবা কিনতে চাই। রাজি আছিস?”

“ক্যালকাটা ধাবা? কিনতে? তুমি? পাগল নাকি?” বিড়বিড় করেছিল মধুরা। মণিকার ওপরে খুব রাগ হয়েছিল। মনে হয়েছিল, এই টাকাওয়ালা ধান্দাবাজ এখান থেকে বিদেয় হোক।

সেই সন্ধে, সেই রাত, পরের দিন সকাল। মণিকা অবশেষে বিজনেস মডেলটা মধুরাকে বোঝাতে পেরেছিল। তার ‘গুডফুড প্রাইভেট লিমিটেড’ ক্যালকাটা ধাবা কিনে নিয়ে ন্যাশনাল ব্র্যান্ড হিসেবে এসট্যাবলিশ করবে। ফিনানশিয়াল, ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল এবং হিউম্যান রিসোর্স সংক্রান্ত দায়িত্ব নেবে মণিকার কোম্পানি। মধুরাকে প্রাথমিক ভাবে কোলাঘাটের পাশাপাশি কলকাতায় একটা আউটলেটের দায়িত্ব নিতে হবে। পরে ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার। বিনিময়ে মধুরা গুডফুড প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজমেন্টের একজন অংশীদার হবে।

মধুরা তর্ক করেছিল। বলেছিল, “কত টাকা দিতে পারবে? আমার ইয়ারলি টার্নওভার কত তুমি জানো?”

“মাসে চার লাখ টাকা পেলে চলবে? ইয়ারলি ষাট লাখ। ভেবে দেখ।” মধুরার সামনে অফার সাজিয়ে মণিকা উঠে গিয়েছিল।

সেদিন সন্ধেবেলা মধুরা বলেছিল, “সব ঠিক আছে। কিন্তু আমি আর চাকরি করতে চাই না। এটা আমার ব্যাবসা। এটা নিয়ে আমি সুখী।”

“তুই কিন্তু চাকরি করবি না। আমার কোম্পানির একজন অংশীদার হবি। তোর কথা শুনে মনে হয়েছিল, তুই লম্বা রেসের ঘোড়া। মফস্‌সলে ধাবা খুলে জীবন কাটানোর বান্দা নোস।”

মণিকার কথা মধুরাকে ভাবিয়েছিল। সে কি সত্যিই সুখী? না এঁড়ে তর্ক করে জিতবে বলে সুখের অভিনয় করছে? তার রক্তে এখনও পাগলামি খেলা করে। রাতে ঘুম ভেঙে যায় পাঁচফোড়ন রিয়্যালিটি শোয়ের স্বপ্ন দেখে, লন্ডনে মেল্টিং পটের শুটিং-এর স্বপ্ন দেখে, পান্‌চের উদ্বোধনের স্বপ্ন দেখে। আরও বড় পাগলামির স্বপ্ন তার সামনে।

একঘন্টা বাদে মণিকার কাছে গিয়ে মধুরা বলেছিল, “তোমার প্রস্তাবে আমি রাজি।”

“কার সঙ্গে কথা বলে মত বদল করলি? ভাবি বর? না ব্যাবসার পার্টনার?”

“নিজের সঙ্গে।”

মধুরাকে জড়িয়ে ধরে মণিকা বলেছিল, “আট্টাগার্ল! তোর হবে। এবার যা। বর আর পার্টনারদের তোর ডিসিশান শুনিয়ে আয়।”

ডুঙ্গারকে বোঝাতে সবচেয়ে কম সময় লেগেছিল। সব শুনে সে বলেছিল, “আমার একটাই কন্ডিশান। শীল ম্যানশন ফেরত চাই। ওখানে ক্যালকাটা ধাবার সেকেন্ড আউটলেট হবে।”

মিস জোনাকি বলেছিল, “আমি মণিকার সঙ্গে কথা বলব। লিগ্যাল অ্যাঙ্গলগুলো আমিই সবচেয়ে ভাল জানি।”

সেই রাতেই কথাবার্তা পাকা হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন সকালে অর্জুন, কুমার পিয়াল, গীতা আর মিতাকে বোঝাতে মণিকা পাঁচ মিনিট নিয়েছিল। ক্যালকাটা ধাবার অংশীদারি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, জমির মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মণিকা যে পরিমাণ টাকা অফার করেছিল, দু’জন্ম পরিশ্রম করলেও ওরা অত টাকা পাবে না। তা ছাড়া অর্জুন, গীতা এবং মিতা এই ধাবাতেই পেইড স্টাফ হিসেবে কাজ করবে। একটু দূরের জমি কিনে সেখানে বাড়ি বানানোর দায়িত্বও মণিকার।

করণ সিংএর শুটিং ইউনিটের গাড়িতে মণিকা যখন ফিরে গিয়েছিল, ক্যালকাটা ধাবার সবাই তখন উত্তেজনায় কাঁপছিল!

*

মধুরার সামনে এখন অর্জুন, গীতা আর মিতা আর বুলটি। ওদের রাতে থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু উপায় নেই। ক্যালকাটা ধাবায় এখন কুড়িজন লোক কাজ করে। কুমার পিয়ালের ওপরে সব ছেড়ে দেওয়া অসম্ভব।

অর্জুন বলল, “চললাম রে! অনেক দূর যেতে হবে!”

গীতা বলল, “তুমি ওদিকে কবে আসছ?”

মিতা বলল, “ভাই, এত রাতে হাইওয়ে দিয়ে ফিরব! ভাবতেই আমার বুক ধড়াস ধড়াস করছে! ক’দিন আগে ‘যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা’ সিরিয়ালে ঠিক এই জিনিস দেখিয়েছে। হাইওয়েতে দুটো গাড়ির মধ্যে মুখোমুখি ধাক্কা! ব্যস! ভাইটা কোমায় চলে গেল!”

গীতা বিরক্ত হয়ে বলল, “এই মেয়েটা আর বদলাল না। মা মারা যাওয়ার পরেও ছিঁচকাঁদুনে রয়ে গেল।”

মিনতিবালা মারা গেছে তিনমাস আগে। ঘুমের ভিতরে মৃত্যু। মারা যাওয়ার আগে দেখে গেছে যে তার স্বামীর সম্পত্তিতে ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনি জমিয়ে ব্যাবসা করছে। সুখের মৃত্যু।

বুলটি মধুরার হাত ধরে বলল, “জানো তো, কথিকা আর প্রিয়ঙ্কার আমার ওপরে কী হিংসে! কলকাতায় বিয়ে খেতে যাব শুনে কথাই বলছে না! কাল ওদের ছবি দেখাব। তখন তো জলবিছুটি লাগবে! না গো?”

“বাড়ি যা!” হাত নাড়ে মধুরা। চারজন মণ্ডপ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

একসঙ্গে এসে হাজির হল নিশিগন্ধা সেনগুপ্ত, মিজান চৌধুরী মনু, আব্রাহাম সেন আর মণিকা বাগচী। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্যে একতলায় বসার আয়োজন করা হলেও তিনতলার লাউঞ্জ ভিআইপিদের জন্যে সাজানো হয়েছে। অশোককে মোবাইল দিয়ে থ্রোন ছেড়ে ওঠে মধুরা। নতুন অতিথিদের আপ্যায়নের দায়িত্ব তার নিজের।

*

ক্যালকাটা ধাবার দ্বিতীয় আউটলেট তৈরি করতে লেগেছে মাত্র তিনমাস। আইনি ঝঞ্ঝাট টপকাতে লেগেছে ন’মাস।

নেহা পারেখ! দীর্ঘশ্বাস ফেলে মধুরা। মেয়েটার হাত থেকে জমি উদ্ধার করতে মণিকার প্রাণ বেরিয়ে গেছে। নেহাত মিস জোনাকির কাছে আইনি কাগজ ছিল, তাই কাজটা একটু হলেও সহজ হয়েছে। সৌমেনও খুব হেল্‌প করেছে। তা ছাড়া গুডফুডের নিজস্ব আইনজীবীরা ছিল। যে মামলা দু’-তিন বছর চলার কথা তার নিষ্পত্তি ন’মাসে হয়েছে।

বাকি কাজটা সোজা। নতুন বিল্ডিং-এর ডিজাইন আগে থেকেই তৈরি ছিল। মামলার রায় ঘোষণার পরদিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যায়। নতুন বিল্ডিং-এর নামও শীল ম্যানশন। ডুঙ্গার নাম বদলাতে দেয়নি। তার আর মিস জোনাকির জন্যে বিল্ডিং-এ একতলায়, পিছন দিকে, টু বেডরুম ফ্ল্যাট বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানে দিব্যি আছে।

*

তিনতলার অতিথিদের সঙ্গে একঘন্টা কাটিয়ে লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে আসে মধুরা। দোতলায় নেমে করিডর দিয়ে পিছনের ঘরে ঢোকে। শীল ম্যানশন নতুন করে বানানোর সময়ে বাড়ির পিছন দিকে, সব ফ্লোরেই একাধিক ঘর বানানো হয়েছে। এগুলো স্টোরেজ হিসেবে ব্যাবহার করা হবে। সেইরকম একটা ঘরে দিয়া আর কৃশানু মেয়েদের নিয়ে বসে আছে। পান্তুয়া হামাগুড়ি দিচ্ছে, রসগোল্লা কৃশানুর কোলে বসে দেয়ালা করছে।

অনেকদিন পরে দিয়া আজ সেজেছে। শিফনের আকাশি রঙের শাড়ি আর টারকোয়েজ ব্লু ব্লাউজে খুব সুন্দর লাগছে। চুলে ফ্রেঞ্চ রোল, কানে হিরের দুল, গলায় আর হাতে হালকা সোনার গয়না— দিয়াকে ভারমুক্ত লাগছে। যমজ বাচ্চার জন্ম দেওয়া, তাদের বড় করার মতো কঠিন পরিশ্রম আর হয় না। মেয়েরা এখন খানিক বড় হয়েছে। দিয়ার পরিশ্রম সামান্য হলেও কমেছে। নিয়মিত ব্যায়াম করে আর শরীরের যত্ন নিয়ে সে আবার আগের মতো ঝকঝকে। চোখের নীচের কালি উধাও, ঢুকে যাওয়া গালে মাংস বসেছে, কন্ঠার হাড় বেরিয়ে নেই। মেক আপ না করেই লাবণ্যময়ী।

মধুরাকে দেখে দিয়া বলল, “ফুলশয্যার ব্যবস্থা পাশের ঘরে হয়েছে। তোদের কোনও অসুবিধে হবে না তো?”

মধুরা বলল, “হলে হবে! আমি আর পারছি না। ক’টা বাজে বলো তো?”

“সাড়ে দশটা!” পাশ থেকে কৃশানু বলল, “এটাই লাস্ট ব্যাচ। এর পরে আমরা খাব। তুই এখানে না থেকে রিসেপশানে যা। সবাই তোকে খুঁজছে।”

“যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি!” বিরক্ত হয়ে বলে মধুরা, “বাই দ্য ওয়ে, বাবা মা কোথায়? সবিতাদি আর বিমলদাই বা কোথায়?”

মধুরার প্রশ্নে মুচকি হেসে কৃশানু বলে, “বাবা নীচে রয়েছে। কিন্তু বাকি তিনজন পাশের ঘরে। গিয়ে দেখ, কী করছে!”

কৌতূহলী মধুরা ঘর থেকে বেরিয়ে বাঁদিকে তাকায়। ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। নিচু গলায় গুজুরগুজুর শোনা যাচ্ছে। মধুরা দরজায় ধাক্কা দিল।

“কে?” যূথিকার গলার আওয়াজে বিরক্তি।

“আমি! দরজা খোলো!” দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে আবার দরজা ধাক্কায় মধুরা। খুট করে দরজা খুলে তাকে ভিতরে টেনে নেয় সবিতা। ঘরে ঢুকে মধুরা হাঁ!

ঘরের এক পাশে বিয়েতে পাওয়া উপহারের ডাঁই! নানান সাইজের এবং শেপের বাক্স আর পোঁটলা গিফ্‌ট র‌্যাপ করে রাখা রয়েছে। যূথিকা আর বিমল রঙিন কাগজের আবরণ ছিঁড়ে বাক্স বার করছে। বাক্স থেকে উপহার বার করে একদিকে সরিয়ে রাখছে। ঘরের অন্য কোণে রঙিন কাগজ আর বাক্স ডাঁই হয়ে আছে।

“একশো দশটা শাড়ি, বাইশটা বেড কভার, দশটা সালোয়ারের পিস, তিনটে মিক্সি, তেইশটা টি-সেট, সাতটা ডিনার সেট, বাইশটা শো পিস, তেত্রিশটা গিফ্‌ট ভাউচার, এক লাখ বাহান্ন হাজার টাকা— এখনও অবধি এইটুকু দেখে উঠতে পেরেছি। এখনও সত্তরটা প্যাকেট খোলা বাকি!” গর্বের সঙ্গে বলে যূথিকা।

মধুরা ভুরু কুঁচকে সবিতার দিকে তাকায়। সবিতা বলে, “ওভাবে কেন দেখছ? গয়না আলাদা করে রেখেছি। সেগুলো এই লিস্টে নেই।”

মধুরা কেটে কেটে বলে, “মা, অতিথিরা এখনও যায়নি। এই কাজ পরে করলে চলত না?”

“তুমি বাছা যাও এখেন থেকে! আমায় বিরক্ত কোরো না।” মাছি তাড়ায় যূথিকা। “চিরটা কাল তোমার বাবার খিদমত খেটে এলাম। তিনিই হুকুম করেছেন, এই সব কাজ রাতে সেরে রাখতে। কাল সকাল আটটায় আমরা ভৌমিক ভবনে ফিরে যাব। সে কথা মনে আছে?”

“আহ! ওর আজ ফুলশজ্জে! ওকে এই সব দরকারি কথা বোলোনি তো!” সবিতা এক গাল হেসে মধুরার দিকে তাকায়। “আগেকার দিন হলে, শিকিয়ে পড়িয়ে দিতুম। কিন্তু তোমরা সব শিকে পড়েই পরীক্ষেয় বসচ!”

মধুরা সবিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি নতুন দু’-একটা জিনিস শিখবে নাকি?”

“মধু! বাজে বকা বন্ধ রাখো!” যূথিকা হঠাৎ সিরিয়াস! “নীচে যাও।”

মায়ের বকুনি খেয়ে মধুরা ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নামল। অতিথির সংখ্যা কমে এসেছে। অশোকের পাশে বসে রয়েছে সৌমেন, নারায়ণ, নিম্বারাম, উমেদ আর সুমিত। মধুরা তাদের কাছে গিয়ে বলল, “খেয়েছেন ভাল করে?”

সুমিত মধুরাকে বলল, “অশোক একটা অন্যায় করেছে। আপনার প্রচুর ফোন, মেসেজ আর মেল আসছে। অশোক ফোনগুলো অ্যাটেন্ড করেছে। মেসেজ আর মেলও পড়েছে।”

অশোক মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, “রবার্ট বয়কট, রিচা চাড্‌ঢা, বাল্কি, করণ সিং সব্বার ফোন এসেছিল। তুমি নেই শুনে আমাকেই উইশ করল। বলেছে কাল সকালে আবার ফোন করবে।”

“দ্যাটস গুড!” অন্যমনস্ক ভাবে বলে মধুরা, হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সুমিত বলে, “আমি আর নারানদা এবার উঠব। অনেক দূর যেতে হবে।”

সুমিতকে ভাল করে দেখল মধুরা। গত এক বছরে সুমিত এক পোঁচ কালো হয়েছে। ভুঁড়ি কমিয়ে, টাক বাড়িয়ে আরও সেক্সি হয়েছে। মধুরা বলল, “এবার একটা বিয়ে করুন।”

ম্লান হেসে সুমিত বলল, “বিয়ে তো করাই যায়। কিন্তু যাকে পছন্দ করেছিলাম, সে অন্য একজনকে পছন্দ করেছে!”

মধুরা লজ্জা পেয়ে কথা ঘোরাল। নারায়ণ বেরাকে বলল, “সুমিতবাবুর সঙ্গে ফিরবেন?”

“হ্যাঁ,” জবাব দেয় নারায়ণ। অশোকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দু’জনে বেরিয়ে গেল।

উঠল নিম্বারাম আর উমেদও। ওদের পিলখানা ফিরতে হবে। নিম্বারাম বলল, “আমি জানতাম, সুলতানকে যে এত ভালবাসে, তার কখনও খারাপ হবে না।”

সুলতানের ক্লোজ আপ ছবির বিশাল প্রিন্ট রিসেপশানের একপাশের দেওয়াল থেকে ঝুলছে। সে দিকে তাকিয়ে উমেদ বলল, “চললাম দি’। আবার দেখা হবে।”

মধুরা বলল, “পূর্ণিমাকে আনলে না কেন?”

“বাচ্চার কাল পরীক্ষা আছে, তাই এল না। পরীক্ষা শেষ হলেই তোমাকে জ্বালাতে আসবে।” হাসতে হাসতে বলে উমেদ। বাপকে বাইকের পিছনে চড়িয়ে ডিকডিক করে চলে যায়। সৌমেনও গাড়ি চালিয়ে চলে গেল।

সাড়ে এগারোটা বাজে। ভিআইপিরা নেমে আসছে। মধুরার খুব টায়ার্ড লাগছে। নিশিগন্ধা এগিয়ে এসে বলল, “মধু, খুব আনন্দ হল। ভাল থেকো। বাই।”

সবাই এখন শীল ম্যানশনের গেটে। একের পর এক এসইউভি এসে দাঁড়াচ্ছে। যে যার গাড়ির দিকে এগোচ্ছে। সব অতিথি চলে যাওয়ার পরে মিস জোনাকি, ডুঙ্গার, মণিকা আর মধুরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ওহ! শান্তি!

সবাই শীল ম্যানশনের দিকে এগোচ্ছে। এমন সময়ে চেনা গলার আওয়াজ, “হাই মধু!”

মধুরা ঘুরে দাঁড়াল। বাকিরা শীল ম্যানশনের ভিতরে চলে যাচ্ছে।

অন্ধকার থেকে উদয় হল নেহা পারেখ।

“আমাকে এক্সপেক্ট করিসনি। তাই তো?” বলে নেহা।

“না,” সাফ উত্তর মধুরার, “তুই কেন এসেছিস?”

“বঙ্গালিদের দুর্গাপুজোর সময়ে বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা লাগে। বঙ্গালিদের বিয়ের সময়ে বেশ্যা আর বেশ্যার দালালও লাগে?” মিস জোনাকি আর ডুঙ্গারকে দেখিয়ে বলে নেহা।

“ঠাকুরদাকে বেশ্যার দালাল বলতে লজ্জা করে না?”

“বেশ্যাকে বেশ্যা বলতে লজ্জা না করলে দালালকে দালাল বলতে লজ্জা করবে কেন?”

“মুখ সামলে!” বিয়ের সাজ ভুলে গিয়ে গর্জে ওঠে মধুরা, “ডুঙ্গার আর মিস জোনাকির নামে একটা বাজে কথাও আমি বরদাস্ত করব না। ইয়ু জাস্ট গেট আউট অব হিয়ার!”

নেহা বলে, “বলেছিলাম যে কলকাতা শহরে ঢুকিস না। এটা আর তোদের শহর নেই। আমার কথা শুনলি না। মুম্বইয়ের বঙ্গালির কাছে টাকা ভিক্ষে করে এখানে নতুন রেন্ডিখানা খুলেছিস। ভেবেছিস আমাদের সঙ্গে পাঙ্গা নিবি?”

কথা কাটাকাটি শুনে মণিকা ফিরে এসেছে। সে অবাক হয়ে বলল, “কী হল মধু?”

নেহা মণিকার দিকে করমর্দনের হাত বাড়িয়ে বলল, “হাই! আমি নেহা পারেখ। লেমনগ্রাসের মালিক।”

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সূত্রে মণিকা নেহাকে চেনে। কোর্টে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। নেহার পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কেও তার পরিষ্কার ধারণা আছে। কিন্তু শুভদিনে ঝগড়াঝাঁটি করতে নেই। করমর্দন করে মণিকা বলল, “লেমনগ্রাস ফ্যান্টাস্টিক রেস্তোরাঁ। মুম্বইতে অনেকবার খেয়েছি। মনোজের সঙ্গে আমার আলাপও আছে। আপনি প্লিজ ভিতরে আসুন।”

“না ম্যাম! ভেতরে যাব না।” এক পা পিছোয় নেহা, “মধুরার জন্যে আমার তরফ থেকে সামান্য গিফ্‌ট। এই নে।” চকচকে লাল কাগজে মোড়া উপহার মধুরার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে নেহা।

মধুরা মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আমার চাই না।”

“অতিথির অসম্মান করতে নেই,” ধমক দেয় মণিকা, “হতে পারে ও ব্যাবসার প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু এখন ও অতিথি।”

মধুরা হাত পেতে উপহার নেয়। নেহা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। মণিকা চিৎকার করে বলে, “একটু মিষ্টিমুখ করে যান।”

অন্ধকার থেকে নেহার গলা শোনা যায়, “হমলোগ মিট-মচ্ছি খানেওয়ালা আদমিকো কন্ধা নেহি দেতা। উসকা ঘর মে খানা তো দূর কি বাত।”

মধুরা বিড়বিড় করে বলল, “নন-ভেজরা মরে গেলে শ্মশানযাত্রীও হবে না?”

মণিকা বলল, “শুভ দিনে ওসব কথা বাদ দে!”

মধুরা কাগজের মোড়ক খুলল। উপহার হিসেবে নেহা দিয়েছে গেরুয়া আর ফুশিয়া রঙে রাঙানো নুনদানি। ভাঙা!

থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে, মণিকার হাতে উপহার তুলে দিয়ে মধুরা বলল, “বাদ কী করে দেব মণিকাদি!”

মণিকা বলল, “এটা আবার কী?”

মধুরা বলল, “পান্‌চের নুনদানি। নেহা বলতে চাইছে, ক্যালকাটা ধাবার পরিণতি পান্‌চের মতই হবে!”

মধুরার হাত থেকে নুনদানি কেড়ে মণিকা বলল, “লেমনগ্রাস আর গুড ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের লড়াইয়ের এটা স্টার্টার ডিশ। এরপরে মেন ডিশ, সাইড ডিশ, ডেজার্ট। পুরো ডিনার বাকি রইল! এখন তুই ভেতরে চল।”

দু’জনে শীল ম্যানশনের দিকে এগোচ্ছে। মধুরার খোঁজ করতে ফিরে এসেছে ডুঙ্গার, মিস জোনাকি, অশোক। এমন সময়ে চেনা গলার আওয়াজ, “হাই মধু!”

মধুরা অশোককে বলল, “লিজের গলার আওয়াজ না?”

অশোক মুচকি হেসে বলল, “আমি কী করে জানব?”

মধুরা অশোকের হাত থেকে নিজের স্মার্টফোন কেড়ে নিয়ে বলল, “লিজ আমার মোবাইলে ফোন করেছিল? বলোনি কেন?”

অশোক বলল, “এলিজাবেথ টেলর বা কুইন এলিজাবেথ হলে বলতাম। হাই চ্যানেলের একজিকিউটিভ প্রোডিউসার ফোন করলে সেটা বলার মতো কোনও কথা নয়।”

মধুরার সামনে এখন লিজ। মধুরা নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। শেষ ফোনালাপের পরে লিজের এখানে আসার কথা নয়। তা হলে কেন?

“হাই লিজ!” কোনও মতে বলে মধুরা।

“আমাকে এক্সপেক্ট করোনি, তাই তো!”

মধুরা বলে, “আমার কাছে কেন? আমি তো তোমার প্রস্তাব রিফিউজ করেছিলাম।”

লিজ মণিকার দিকে তাকিয়ে বলল, “‘নমস্তে ইন্ডিয়া’ শোয়ের জন্যে মধুকে সঞ্জয় কপুরের কো-হোস্ট হতে বলা হয়েছিল। ও রিফিউজ করে। আমরা মধুকে বলেছিলাম, হাই চ্যানেলের পলিসি হল, আমাদের সঙ্গে কাজ করতে কেউ রাজি না হলে আমরা তাকে দ্বিতীয়বার ডাকি না। সেই কথাটা মধু মনে রেখেছে।”

“খুব কিছু ভুল মনে রেখেছি কি?” জানতে চায় মধুরা।

মণিকা বলল, “মধুকে আমি বলিনি যে তোমার আর সঞ্জয়ের সঙ্গে আমার রেগুলার মেল চালাচালি হয়। মধু জানে না, ‘টিম নমস্তে ইন্ডিয়া’ এখন কলকাতায় শুট করছে। মধু জানে না, কলকাতার যে পাঁচটা জায়গায় তোমরা শুট করবে তার মধ্যে একটা হল…”

মণিকা চুপ করে গেল। কেননা লিজ হাত নাড়ছে। তার ইশারায় এসইউভি থেকে নামছে সঞ্জয় কপুর। মধুরা চিৎকার করে বলল, “স্যার, আপনি?” তারপর সঞ্জয়কে জড়িয়ে ধরল।

লিজ বলল, “কলকাতার পাঁচটা ফুডজোন আমরা বেছেছি। ট্যাংরা। বিধান সরণি। সেক্টর ফাইভ। সাদার্ন অ্যাভিনিউ। লং স্ট্রিট। আমাদের রিসার্চ বলছে লেমনগ্রাস আর ক্যালকাটা ধাবার কারণে লং স্ট্রিট খুব দ্রুত কলকাতার ফুডম্যাপে জায়গা করে নিচ্ছে।”

সঞ্জয়কে ছেড়ে মধুরা লিজের দিকে তাকাল।

লিজ বলল, “হাই তার পলিসিতে স্টিক করে আছে। যারা অফার রিফিউজ করে, হাই তাদের ডাকে না। কিন্তু আমরা তোমার কাছে এসেছি ইন্টারভিউ নিতে, শুট করতে। পৃথিবীকে দেখাতে যে ক্যালকাটা ধাবার মালিক কী অমানুষিক পরিশ্রম করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। মণিকার মেল মারফত জানতাম যে আজ তোমার বিয়ে। আজ জাস্ট রেকি করতে এসেছি। অল্প শুটিংও করব। আসল কাজ কাল থেকে শুরু হবে।” মধুরার গলায় ডায়মন্ড পেনড্যান্ট পরিয়ে লিজ চ্যাঁচাল, “লাইট্‌স!”

মধুরাকে চমকে দিয়ে একগাদা আলো জ্বলে উঠে লং স্ট্রিটকে ধুইয়ে দিল। রিফ্লেকটরে বাউন্স করে আলো এসে পড়ল তার মুখে। মধুরা ভুরু কুঁচকে চোখে হাত চাপা দিল।

“ক্যামেরা!”

মধুরা হাত সরাল। চোখ খুলল। তার সামনে হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা নিয়ে বাল্কি দাঁড়িয়ে। সে বলল, “তোমার আসল জায়গা ক্যামেরার সামনে। ইয়ু আর ব্যাক টু হোয়্যার ইয়ু বিলং। অ্যাট দ্য টপ!”

“অ্যাকশান!”

সঞ্জয় তার বিখ্যাত ব্যারিটোনে বলল, “হ্যালো অ্যান্ড ওয়েলকাম টু নমস্তে ইন্ডিয়া। আজ আমরা এসে গেছি ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তে। কলকাতায়। খানাপিনার এই মক্কা থেকে আমরা আপাতত বেছে নিচ্ছি এক ফ্যামিলি রেস্তোরাঁ, যার নাম ক্যালকাটা ধাবা! শুটিং করতে এসে দেখলাম, এই ধাবার মালকিন এবং স্টার শেফ মধুরা ভৌমিকের আজ বিয়ে। ওঁকে না জানিয়ে আমরা চলে এসেছি বিয়ের রিসেপশানে। দেখি, ‘নমস্তে ইন্ডিয়া’ টিমের কুড়িজন মেম্বারকে মধুরা কী খাওয়ায়।”

মধুরা অশোকের দিকে তাকাল। ডুঙ্গারের দিকে তাকাল। মিস জোনাকির দিকে তাকাল।

অশোক ইশারায় বলল, “সব খাবার শেষ।” ডুঙ্গার শ্রাগ করল। তার মুখে একগাল হাসি। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। মিস জোনাকি বলল, “মিষ্টি ছাড়া কিছু পড়ে নেই।!”

মধুরা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, “ওয়েলকাম টু ক্যালকাটা। ওয়েলকাম টু ক্যালকাটা ধাবা। তিথি না মেনে যে উপস্থিত হয়, তাকেই বলে অতিথি। ভারতীয় সংস্কৃতিতে অতিথি মানে দেবতা। তার জন্য আমরা সব করতে পারি। কী খাবেন বলুন!”

“ট্র্যাডিশনাল বেঙ্গলি ওয়েডিং-এ যা খাওয়ানো হয়!” সরল মুখে বলে সঞ্জয়। অশোক, মিস জোনাকি আর ডুঙ্গার একসঙ্গে কপাল চাপড়াল।

মধুরা বলল, “রান্না করার সময়ে আমাকে হেল্‌প করবে আমার হাজব্যান্ড অশোক…”

“হাই!” হ্যান্ডশেক করছে সঞ্জয়, “গর্জাস ড্রেস! লুকিং লাইক আ মহারাজা!”

“আমার বন্ধু ডুঙ্গারমল পারেখ আর মিস জোনাকি।” বাকিদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় মধুরা, “এবং আমার বিজনেস পার্টনার, মণিকা! আপাতত মিষ্টি দিয়ে শুরু করা যাক।”

সবার সঙ্গে করমর্দন শেষ করে সঞ্জয় বলে, “আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করি মধুরা। রান্নাবান্নায় তোমার প্যাশান আছে আমি জানি। তোমার জীবনে নানা উত্থান এবং পতন ঘটেছে। সেসব নিয়ে পরে কথা বলব। তুমি আমাকে বলো, তোমার অনুপ্রেরণা কে? কার থেকে তুমি বেঁচে থাকার রশদ পাও?”

সঞ্জয়ের প্রশ্ন শুনে লং স্ট্রিটের দিকে তাকায় মধুরা। লেমনগ্রাসে এখনও আলো জ্বলছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেহা বাজপাখির চোখে দেখছে, এখানে কী হচ্ছে!

ক্যালকাটা ধাবার ভিতরে চোখ ফেরায় মধুরা। রিসেপশানের দেওয়ালে সুলতানের লার্জার দ্যান লাইফ ছবি। খোঁচাখোঁচা দাড়ি, এক গাল হাসি, ইগলের মতো দৃষ্টি— সুলতান তাকিয়ে রয়েছে মধুরার দিকে।

মধুরা সঞ্জয়ের দিকে তাকাল। বাল্কির ধরে থাকা ক্যামেরার দিকে তাকাল। অশোক এক প্লেট রসগোল্লা নিয়ে এসেছে। সেটা হাতে নিয়ে, একটা রসগোল্লা ক্যামেরার দিকে বাড়িয়ে বলল, “সব জিনিস জানতে নেই। আপাতত মিষ্টিমুখ করুন। বঁ আপেতিত। হ্যাপি ইটিং!”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *