মধুরেণ – ১৯

১৯

সন্তান মাতৃগর্ভ থেকে বাইরে আসে ন’মাস পরে। ভ্রূণের যাত্রা সেইদিন শেষ হয়। যাত্রা শুরু হয় মানুষশাবকের। কিন্তু প্রাণের যাত্রা তো একটাই। জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানের সেই যাত্রাপথ নানা অধ্যায়ের সমষ্টি।

মধুরার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হল ক্যালকাটা ধাবার উদ্বোধনের ন’মাসের মাথায়। ন’মাসের মাথায় সে ব্রেক ইভন করল। দ্বিতীয় মাস থেকেই লাভ হচ্ছিল। কিন্তু পার্টনারশিপ ব্যবসায় লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যায়।

ডুঙ্গার আর মিস জোনাকি দিব্যি আছে। জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা জমছে। কলকাতায় ফেরার কোনও ইচ্ছেই আর নেই। মিস জোনাকি একটা সেকেন্ড হ্যান্ড জিপ কিনেছে। সেটা চালিয়ে সপ্তাহে একবার কলকাতায় গিয়ে নিজের কাজকর্ম সামলে আসে। কলকাতা শহরের সঙ্গে এত বছরের নাড়ির বন্ধন উপড়োতে সময় লাগে। ডুঙ্গার অবশ্য এই সব বিষয়ে ঝাড়া হাতপা। সারাদিন গায়েগতরে খাটে। সন্ধেবেলা বোতল নিয়ে বসে যায়। সান্ধ্যকালীন এই সেশনে তার সঙ্গী হয়েছে অর্জুন। ডুঙ্গার এই সেশানের একটা গালভরা নাম দিয়েছে। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।

কী নিয়ে রিসার্চ? প্রতিদিন সন্ধ্যায় নতুন নতুন ককটেল তৈরি করে। লিকার লাইসেন্স অনেক দিনই আগেই জোগাড় হয়েছে। ক্যালকাটা ধাবার একদিকে চালু হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বার বা মধুশালা, ‘বোট রাইড’।

ইন্টিরিয়র ডেকরেশানের জন্য একটা আস্ত নৌকা মধুশালার ভিতরে রাখা আছে। কাঁথির কাছাকাছি রামনগরে নৌকো তৈরি হয়। সেখান থেকে দশ হাজার টাকা দিয়ে নৌকোটা কিনেছে মধুরা।

জেমস গুপ্তর পরামর্শ মেনে মধুশালার ইন্টিরিয়রে বাঁশের ডিজাইন। টেবিলের মাথায় ঝোলানো হারিকেনে এলইডি বাল্‌ব লাগানো। রাতের বেলা দেখতে খুব সুন্দর লাগে।

আর অ্যান্ড ডি টিম রাত ন’টার সময়ে বোট রাইডের জন্য নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করতে বসে। প্রথম দিন ব্লাডি মেরি চেখে, দিশি মদ খাওয়া অর্জুন বলেছিল, “এত কুচ্ছিত মাল জীবনে খাইনি।”

দিনদশেকের মাথায় বলল, “মালটা খেতে খারাপ না। কিন্তু ওইসব ব্লাডি নাম চলবে না। দিশি নাম চাই।”

ডুঙ্গার বলল, “ব্লাডি মেরির খদ্দেরররা ব্লাডি মেরিই খুঁজবে। অন্য নাম দিয়ে লাভ নেই।”

একদিন মার্গারিটা, একদিন মোহিতো, একদিন লং আইল্যান্ড আইস্‌ড টি, একদিন মার্টিনি… এইভাবে চলেছে। অর্জুন ভীষণ ভাল ছাত্র। ককটেলের ব্যাপারে স্বাভাবিক ন্যাক আছে। ফটাফট পিকআপ করছে।

শীতের সকালে নতুন গাড়ি চড়ে ক্যালকাটা ধাবায় উপস্থিত হয়েছে মনোহর আর যূথিকা। ড্রাইভার অশোক। গাড়িটা বাবামাকে কিনে দিয়েছে মধুরা।

মনোহর এসেই অর্জুন, কুমার পিয়াল আর মিস জোনাকির সঙ্গে বসেছে ক্যালকাটা ধাবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে। যূথিকা ব্যস্ত গীতা আর মিতার সঙ্গে গল্প করতে। ডুঙ্গার আর অশোক ঘরে বসে আড্ডা মারছে। মধুরা ধাবার সুপারভিশন করছে।

শীতকালে উইকেন্ড এবং উইকডে সমান হয়ে যায়। ক্যালকাটা ধাবায় সব সময় ভিড় থাকে। একটানা কাজ করে দুপুর তিনটের সময় ছাড়া পেল মধুরা। বাবামা আর অশোকের সঙ্গে খেতে বসার পরে অশোক বিয়ের কথা পাড়ল। গত রাতেই মধুরার সঙ্গে এই নিয়ে তার ফোনে কথা হয়ে গেছে।

যূথিকা আর মনোহরের আপত্তি নেই। যূথিকা জিজ্ঞাসা করল “বিয়ের পরে তোরা কীভাবে থাকবি সেটা ভেবেছিস?”

দাম্পত্যের লজিস্টিক্স নিয়ে মধুরাও চিন্তিত। লাঞ্চপর্ব চুকিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে সে আর অশোক দোতলার ঘরে গেল। চেয়ার টেনে বসে অশোক বলল, “উইকেন্ডে বাড়ি ফেরা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। মঙ্গল আর বুধবার কলকাতায় থাকো। আমি চেষ্টা করব শুক্রবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত থেকে যেতে।”

“হুম!” অন্যমনষ্কভাবে বলে মধুরা। সে বিয়ে নিয়ে ভাবছে না। সে ভাবছে এই জীবনের কথা। নানা ওঠাপড়ার পরে জীবনে স্থিতি এসেছে। ভদ্রসভ্য রোজগার আছে। হেল্‌পফুল বাবামা আর কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ড আছে। বিয়ের পরে অশোক যে ডিপেন্ডেব্‌ল স্বামী হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ডোভার লেনে অশোকদের নিজের দোতলা বাড়ি। সেখানে মা ছাড়া আর কেউ নেই। নিজের জীবনের পরের তিরিশটা বছর চোখের সামনে ভাসছে মধুরার। সে তো এই জীবনই চেয়েছিল! সে কি এই জীবনই চেয়েছিল?

এই দ্বিধার মুহূর্তে মোবাইল বাজল। ডুঙ্গার ডাকছে।

ফোন না ধরে চেয়ার থেকে উঠে জানলা দিয়ে বাইরে তাকায় মধুরা। ক্যালকাটা ধাবায় এখন অনেক কাস্টমার। মধুরা অশোককে বলল, “নীচে এসো।”

মধুরা নীচে নামতে নামতে দেখল, টিপিকাল দিঘার ট্যুরিস্ট নয়। নানা ভাষা, নানা পরিধান পরা লোকেরা বোট রাইডের স্টক প্রায় খালি করে দিয়ে সত্তর হাজার টাকার মদ কিনল।

মধুরা ডুঙ্গারের কাছে গিয়ে বলল, “ডাকলে কেন?”

“আরে! আর বলিস না!” মুচকি হাসে ডুঙ্গার, “এরা মুম্বইয়ের ফিলিম পার্টি। ‘মিসেস দুর্গাদেবী অ্যান্ড হার ফ্যামিলি’ নামে একটা বই বানাচ্ছে। পটভূমি কলকাতা। একটা গানের শুটিং মন্দারমণিতে হবে। প্রোডিউসার ক্যালকাটা ধাবার নাম জানে। ও-ই এখানে ইউনিটের গাড়ি দাঁড় করিয়েছে। লোকটা আমাদের জমানায় হিরো ছিল…”

“করণ সিংহ?” জানতে চায় মধুরা।

“তুই চিনিস?”

“একবার দেখা হয়েছিল। কোথায় সে?” মধুরার সঙ্গে করণের দেখা হয়েছিল কলকাতা এয়ারপোর্টে। করণ মধুরাকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। মধুরা হারিয়ে ফেলেছে।

“আছে আশেপাশে। ও বলেছে মধুরার বানানো ভদকা বেস্‌ড ককটেল খাবে।”

মধুরা বিরক্ত হয়ে বলল, “ওঁকে বলে দাও, পারব না!”

“অতিথিদেব ভব।” পিছন থেকে চেনা গলা শুনতে পায় মধুরা। “কাস্টমার ইজ কিং। কাস্টমার একটা আবদার করেছে, আর সেটা তুমি উড়িয়ে দিচ্ছ? এটা কি ঠিক?”

করণ পরে আছে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর ফ্লোরাল প্রিন্টের ঢোলা শার্ট। চোখে গাঁধী ফ্রেমের চশমা। ট্রিম করা ফ্রেঞ্চকাট, শেভ করা মাথা আর এক গাল হাসি— সব মিলিয়ে ফ্যাবুলাস লাগছে! করমর্দনের জন্যে মধুরার দিকে হাত বাড়িয়ে করণ বলল, “তোমায় বলেছিলাম যে ‘তুঝ পে দিল কুরবান’ ছবির শুটিং-এ লন্ডনে গিয়ে তোমার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে স্ট্রিট ফুড খাব। আমি তোমার খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু ‘হাই’-এর অফিস তোমার হোয়্যারঅ্যাবাউটস বলতে পারেনি। কী হয়েছিল তোমার? কেমন আছ তুমি?”

“ভাল,” করণের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে মধুরা বলে, “আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!”

“আজ ইউনিট মন্দারমণি পৌঁছবে। কাল থেকে শুটিং শুরু। ইউনিটের সবাই রিল্যাক্সড মুডে আছে। আমার সঙ্গে এক ভিআইপি আছে। সে বলেছে ককটেল চাই। আমি তাকে বলেছি যে তুমি আমার চেনা। আমার মুখ রাখো। ককটেল বানিয়ে দাও। প্লিজ!”

“ট্যানট্রাম থ্রো করা হিরোইনটি কে?”

“সেটা জানা জরুরি নয়।”

“মোহিতো কিংবা মার্টিনি চলবে?”

“নতুন কিছু বানাও! এমন কিছু যাতে বাংলার মাটির গন্ধ আছে! লোকাল ফ্লেভার আছে। মিনিমাম চারটে বানাবে।” করণ হনহন করে চলে গেল। মধুরা ডুঙ্গারের দিকে তাকিয়ে ফরাসি কায়দায় ঘাড় ঝাঁকাল। ডুঙ্গার একই কায়দায় ঘাড় ঝাঁকিয়ে বোঝাল, সে অসহায়।

মধুরা টুকটুক করে হেঁটে রান্নাঘরে ঢুকল। রান্নাঘর এখন পুরোদস্তুর মডিউলার কিচেন। নারায়ণ বেরা নিজে এসে একে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কুকিং রেঞ্জ, মডিউলার স্টোরেজ সিস্টেম, ইলেকট্রিকাল গ্যাজেটস— কী নেই? তারই এক কোণে লিকারের স্টক এবং ককটেল বানানোর আনুষঙ্গিক।

ককটেলের অনেক দিক আছে। গ্লাসের শেপ; ককটেলের রং, গন্ধ, স্পর্শ এবং স্বাদ, ককটেলের আফটার টেস্ট, ককটেলের গার্নিশিং বা সাজানো। এই সবই হিসেবে রাখতে হয়। অ্যালকোহলের সঙ্গে অন্য লিকুইড মেশানোর সময় মাথায় রাখতে হয়, স্বাদের যেন যুগলবন্দি হয়। মশলা মেশানোর সময়েও একই সতর্কতা।

প্রথমে পাত্র। বাংলায় জন্ম যে ককটেলের সে কোন পাত্রে যাবে? মধুরা বেছে নেয় লম্বা ডাঁটিওয়ালা টিউলিপ গ্লাস। টিউলিপ বাংলার ফুল না হলেও, এই গ্লাসের মধ্যে নারীত্ব আছে। চোখ বুজে কাচের গায়ে হাত বোলালে নারীদেহের কার্ভেচারের অনুভব হয়। রাশিয়ান ভদকার বোতল টেনে নিয়ে মধুরা গ্লাসে এক পেগ সুরা ঢালে। এবার এতে বাঙালিয়ানা মেশাতে হবে। বাংলার অনুষঙ্গ কীভাবে আনা যাবে? বলিউডের কাছে বাংলার রং কী? নিজেকে প্রশ্ন করে মধুরা। উত্তরও পেয়ে যায়। লাল। রাজনীতির লাল। সিঁদুরের লাল। লালপেড়ে শাড়ির লাল। মধুরা মুচকি হাসে। ভদকার সঙ্গে যাওয়ার জন্য তরমুজ চমৎকার এক উপকরণ।

এবারে আসছে গন্ধ এবং স্বাদ। আর কী মেশাবে মধুরা? অনেক ভেবে সে বেছে নেয় মিষ্টি কিন্তু রংহীন একটা কোল্ডড্রিঙ্ক। ভদকার সঙ্গে এই কোল্ডড্রিঙ্কের ভাল মেলবন্ধন হয়। এরা মেড ফর ইচ আদার।

আর… আর… আর… এদিক ওদিক দেখে গার্নিশ করার জন্যে গন্ধরাজ লেবু বেছে নেয় মধুরা। ব্যস! সিলেকশান কমপ্লিট। এবার বানানোর পালা।

টিউলিপ গ্লাসে ভদকা ঢালাই ছিল। তাতে এক পেগ কোল্ড ড্রিঙ্ক মেশায় মধুরা। সবার ওপরে ঢালে গাঢ় লাল তরমুজের রস। গেলাসের মুখে বুলিয়ে দেয় বিটনুনের গুঁড়ো। যতবার চুমুক দেবে ততবার জিভে স্বাদের বিস্ফোরণ ঘটবে। সব শেষে গেলাসের মুখে বসিয়ে দিল গোল করে কাটা গন্ধরাজ লেবুর চাকতি। ব্যস! ড্রিঙ্ক তৈরি। এবার এর একটা জম্পেশ নাম দিতে হবে। বাকি তিনটে ড্রিঙ্ক বানানোর মধ্যে নাম ভেবে ফেলে মধুরা। ‘পুজো স্পেশাল।’

করণ ফেরত এসেছে। ট্রেতে গ্লাস রেখে মধুরা করণকে বলল, “কোথায় যেতে হবে?”

করণ বলল, “ভানিটি ভ্যানে এসো। সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।”

মধুরার প্রবল কৌতূহল হচ্ছে! কোন হিরোইন রে বাবা!

জীবনে প্রথম কোনও ভ্যানিটি ভ্যানে উঠল মধুরা। বাথরুম, স্লিপিং এরিয়া, বসার জায়গা, বিশাল টিভি, ডিভিডি লাইব্রেরি, বার কাউন্টার সব রয়েছে। সোফায় বসে রয়েছে বিখ্যাত চিত্রপরিচালক সুদীপ সরকার, এই মুহূর্তে বলিউডের এক নম্বর নায়িকা নম্রতা কপুর, এবং এক মাঝবয়সি মহিলা। একে মধুরা চেনে না।

একসঙ্গে এত সেলিব্রিটি দেখে তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কোনও রকমে সবাইকে নমষ্কার করে সে বলল, “মিস্টার সরকার, আই হ্যাভ সিন ইয়োর লাস্ট মুভি ‘বেশরমিয়া’, অ্যান্ড আই লাইকড ইট থরোলি!”

“ছবিটা একদম চলেনি।” হাত নাড়ে সুদীপ, “কী ড্রিঙ্ক বানিয়েছ, দেখি!”

মধুরা টেবিলে সাজিয়ে রাখল চারটে গ্লাস। অত্যন্ত দামি ক্যামেরায় পটাপট ছবি তোলে সুদীপ। মনিটরে দেখে বলে, “দেখতে খুব ভাল হয়েছে!”

“তুমি কি খালি চোখে দেখে বুঝতে পারো না যে কোন জিনিস সুন্দর আর কোন জিনিস নয়?” আওয়াজ দেয় করণ।

“খালি চোখে যা দেখা যায়, তাতে আমার আগ্রহ নেই।” টিউলিপ গ্লাসের স্টেম ধরে শোঁকে সুদীপ, “বেড়ে গন্ধ বেরিয়েছে। কী নাম, এই ককটেলের?”

“পুজো স্পেশাল!” লাজুক মুখে বলে মধুরা।

“নামেই তো কামাল করে দিয়েছ। ভেরি সেলেব্‌ল অ্যান্ড ইস্থেটিক নেম।” বলল মাঝবয়সি মহিলা। লাল তরলে চুমুক দিল সে আর সুদীপ। করণ ফিশফিশ করে মধুরাকে বলে, “ডু ইয়ু নো দ্যাট লেডি?”

“না।”

“আমার গিন্নি। মণিকা সিংহ বাগচী।”

এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে মধুরা। “গুডফুড প্রাইভেট লিমিটেডের মালকিন!”

মধুরার কথা শুনতে পেয়েছে মণিকা। ঘাড় নেড়ে সে বলে, “ডু ইউ নো দ্যাট আই ওয়াজ আ লিকুইড শেফ বিফোর আই মেট করণ?”

“হ্যাঁ।”

নম্রতা একটা গ্লাস তুলে নিয়ে সুদীপকে বলে, “দাদা, হাউ ইজ ইট?”

সুদীপ ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলল, “গুড। বাট উই হ্যাভ টু রিচ হোটেল বাই এইট।”

নম্রতা বলল, “আমি শুধু দেখব। খাব না!”

করণ গ্লাসে ছোট্ট সিপ দিয়ে বলে, “বাঃহ! ভালই হয়েছে।”

মণিকা আর একটা চুমুক দিয়েছে। ঠোঁটে লেগে থাকা বিটনুনের গুঁড়ো জিভ দিয়ে চেটে নিয়ে বলল, “নম্রতার গ্লাসে কেউ যেন হাত না দেয়। ওটা আমার!”

মধুরা কী আর বলবে! করণের দিকে তাকিয়ে হালকা ঘাড় নেড়ে ভ্যানিটি ভ্যান থেকে পালানোর ছক কষে।

তাকে আটকে দেয় করণ। “মধুরা, তুমি আমাদের সঙ্গে মন্দারমণি চলো।”

“ইমপসিব্‌ল!” আপত্তি করে মধুরা, “আপনারা যেমন কাজ করেন, আমিও তেমনই কাজ করি। ক্যালকাটা ধাবা আমার কাজের জায়গা। হুট বলতে এখান থেকে আমি ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারি না!”

মণিকা হঠাৎ বলল, “মধুরা, তুই হঠাৎ কোলাঘাটে ধাবা খুললি কেন?”

প্রথম সম্বোধনেই তুই! মণিকাকে কাছের মানুষ মনে হয় মধুরার।

“সে অনেক লম্বা গল্প। তোমার শোনার সময় হবে না।”

সবাইকে অবাক করে মণিকা বলে, “আমার সময় হবে। আমি এখানে থেকে যাচ্ছি। সুদীপ, তুমি তোমার ইউনিট নিয়ে শুট করে এসো। ফেরার সময়ে আমাকে পিক আপ কোরো।”

সুদীপ ককটেলে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “একবার জিজ্ঞাসা করে নাও, যে এখানে থাকার জায়গা আছে কি না!”

মধুরা বলল, “তিথি না মেনে যে উপস্থিত হয়, তাকে বলে অতিথি। যে অতিথিশালা চালায় তাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করতে নেই।”

মণিকা মধুরাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “বাইরে চল। তোর সঙ্গে কথা আছে।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *